‘এ জীবনটা না দৈরঘ্যের হিসাবে বড়ো, না গুণের হিসাবে।’-গল্পের কথক চরিত্র অনুপমের আত্মসমালোচনা। পরিমাণ ও গুণ উভয় দিক দিয়েই যে তার জীবনটি নিতান্তই তুচ্ছ সেকথাই এখানে ব্যক্ত হয়েছে।
ফলের মতো গুটি-গুটি এক সময় পূর্ণ ফলে পরিণত হয়। কিন্তু গুটিই যদি ফলের মতো হয় তাহলে তার অসম্পূর্ণ সারবত্তা প্রকট হয়ে ওঠে। নিজের নিষ্ফল জীবনকে বোঝাতে অনুপমের ব্যবহৃত উপমা।
মাকাল ফল-দেখতে সুন্দর অথচ ভেতরে দুর্গন্ধ ও শাঁসযুক্ত খাওয়ার অনুপযোগী ফল। বিশেষ অর্থে গুণহীন।
অন্নপূর্ণা-অন্নে পরিপূর্ণা। দেবী দুর্গা।
গজানন- গজ আনন যার। গণেশ।
‘আজও আমাকে দেখিলে মনে হইবে, আমি অন্নপূর্ণার কোলে গজাননের ছোট ভাইটি-দেবী দুর্গার দুই পুত্র; অগ্রজ গণেশ ও অনুজ কার্তিকেয়। মা দরগার কোলে থাকা দেব-সেনাপতি কারতিকেয়কে বোঝানো হয়েছে। ব্যঙ্গার্থে প্রয়োগ।
ফল্গু-ভারতের গয়া অঞ্চলের অন্তঃসলিল নদী। নদীটির ওপরের অংশে বালির আস্তরণ কিন্তু ভেতরে জলস্রোত প্রবাহিত।
ফল্গুর বালির মতো তিনি আমাদের সমস্ত সংসারটাকে নিজের অন্তরের মধ্যে শুষিয়া লইয়াছেন।’-অনুপম তার মামার চরিত্র-বৈশিষ্ট্য প্রসঙ্গে কথাটি বলেছে। সংসারের সমস্ত দায়-দায়িত্ব পালনে তার ভূমিকা এখানে উপমার মাধ্যমে ব্যক্ত করা হয়েছে।
গূণ্ডষ - একমুখ বা এককোষ জল।
অন্তঃপুর-অন্দরমহল। ভেতরবাড়ি
স্বয়ংবরা-যে মেয়ে নিজেই স্বামী নির্বাচন করে। গুড়গুড়ি-আলবোলা। ফরসি। দীর্ঘ নলযুক্ত হুঁকাবিশেষ
বাঁধা হুঁকা- সাধারণ মানুষের ব্যবহার্য নারকেল-খোলা তৈরি ধূমপানের যন্ত্রবিশেষ।
উমেদারি-প্রার্থনা। চাকরির আশায় অন্যের কাছে ধরনা দেওয়া।
অবকাশের মরুভূমি এক কালে ইহাদের বংশে লক্ষ্মীর মঙ্গলঘট ভরা ছিল।-লক্ষ্মী ধন ও ঐশ্বর্যের দেবী। মঙ্গলঘট তাঁর প্রতীক। কল্যাণীদের বংশে একসময় লক্ষ্মীর কৃপায় ঐশ্বর্যের ঘট পূর্ণ ছিল।
পশ্চিমে-এখানে ভারতের পশ্চিম অঞ্চলকে বোঝানো হয়েছে। আন্দামান দ্বীপ-ভারতীয় সীমানাভূক্ত বঙ্গোপসাগরের দ্বীপবিশেষ। স্বদেশী আন্দোলনের যুগে রাজবন্দিদের নির্বাসন শাস্তি দিয়ে আন্দামান বা অন্দামাসে পাঠানো হতো।
কোন্নাগর-কলকাতার নিকটস্থ একটি স্থান।
মনু-বিধানকর্তা বা শাস্ত্রপ্রণেতা মুনবিশেষ।
মনু-সংহিতা-মনু-প্রণীত মানুষের আচরণবিধি সংক্রান্ত গ্রন্থ।
প্রজাপতি-জীবের স্রষ্টা। ব্রহ্মা। ইনি বিয়ের দেবতা।
পঞ্চশর-মদনদেবের ব্যবহার্য পাঁচ ধরনের বাণ।
কন্সর্ট-নানা রকম বাদ্যযন্ত্রের ঐকতান।
‘বর্বর কোলাহলের মত্ত হস্তী দ্বারা সংগীতেসরস্বতীর পদ্মবান দলিত বিদলিত করিয়া আমি তো বিবাহ-বাড়িতে গিয়া উঠিলাম’-অনুপম নিজের বিবাহযাত্রার পরিস্থিতি বর্ণনায় সুরশূন্য বিকট কোলাহলের সঙ্গে সংগীত সরস্বতীর পদ্মবন দলিত হওয়ার তুলনা করেছে।
অভিষিক্ত-অভিষেক করা হয়েছে এমন।
সওগাদ-উপঢৌকন। ভেট।
লোক-বিদায়-পাওনা পরিশোধ, এখানে অনুষ্ঠানের শেষে পাওনাদারদের পাওনা পরিশোধের কথা বলা হয়েছে।
দেওয়া-থোওয়া-বিয়ের যৌতুক ও আনুসঙ্গিক খরচ বোঝাতে কথাটি বলা হয়েছে।
কষ্টিপাথর-যে পাথরে ঘষে সোনার খাঁটিত্বে যাচাই পরীক্ষা করা হয়েছে।
মকরমুখো-মকর বা কুমিরের মুখের অনুরূপ।
মকরমুখো মোটা একখানা বালা-মকরের মুখাকৃতিযুক্ত হাতে পরিধেয় অলংকারবিশেষ
এয়ারিং-কানের দুল।
দক্ষযজ্ঞ-প্রজাপতি দক্ষ করতৃক অনুষ্ঠিত যজ্ঞ। এ যজ্ঞে পতিনিন্দা শুনে সতী দেহত্যাগ করেন। স্ত্রীর মৃত্যুসংবাদ শুনে শিব অনুচরসহ যজ্ঞস্থলে পৌঁছে যজ্ঞ ধ্বংস করে দেন এবং সতীর শব কাঁধে তুলে নিয়ে প্রলয় নৃত্যে মত্ত হন। এখানে প্রলয়কাণ্ড বা হট্টগোল বোঝায়।
রসনচৌকি-শানাই, ঢোল ও কাঁসি-এই তিন বাদ্যযন্ত্র সৃষ্ট ঐকতানবাদন।
অভ্র-এক ধরনের খনিজ ধাতু।
মহানিরবাণ : সব রকমের বন্ধন তেকে মুক্তি
ভ্রের ঝাড়-অভ্রের তৈরি ঝাড়বাতি।
কলি-পুরাণে বর্ণিত শেষ যুগ। কলিযুগ। কলিকাল।
কলি যে চারপোয়া হইয়া আসিল!-কলিকাল পরিপূর্ণরূপে আত্মপ্রকাশ করল।
পাকযন্ত্র-পাকস্থলী
প্রদোষ-সন্ধ্যা।
একচক্ষু লণ্ঠন-একদিক খোলা তিনদিক ঢাকা বিশেষ ধরনের লণ্ঠন যা রেলপথের সংকেত দেখানোর কাজে ব্যবহৃত হয়।
মৃদঙ্গ-মাটির খোলের দুপাশে চামড়া লাগানো এক ধরনের বাদ্যযন্ত্র।
গাড়ি লোহার মৃদঙ্গে তাল দিতে দিতে চলিল-চলন্ত রেলগাড়ির অবিরাম ধাতব ধ্বনি বোঝানো হয়েছে।
ধুয়া-গানের যে অংশ দোহাররা বারবার পরিবেশন করে
জড়িমা-আড়ষ্টতা। জড়ত্ব
মঞ্জরী -কিশলয়যুক্ত কচি ডাল। কুমুল
একপত্তন-একপ্রস্থ।
কানপুর-ভারতের একটি শহর।
তার পরে বুঝিলাম, মরুভূমি আছে।-কল্যাণী যে দেশমাতৃকার সেবায় আত্মনিয়োগ করেছে, অনুপমের এই আত্মোপলব্ধি এখানে প্রকাশিত।