আঠারো বছর বয়স ,সুকান্ত ভট্টাচার্য


 পাঠ-পরিচিতি
সুকান্ত ভট্টাচার্যের “আঠারো বছর বয়স” কবিতাটি ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত তাঁর ‘ছাড়পত্র’ কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত হয়েছে। এ কবিতায় কবি নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে বয়ঃসন্ধিকালের বৈশিষ্ট্যকে তুলে ধরেছেন। কৈশোর থেকে যৌবনে পদার্পণের এ বয়সটি উত্তেজনার, প্রবল আবেগ ও উচ্ছ¡াসে জীবনের ঝুঁকি নেবার উপযোগী। এ বয়স অদম্য দুঃসাহসে সকল বাধা-বিপত্তিকে পেরিয়ে যাওয়ার এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার জন্য প্রস্তুত। এ বয়সের ধর্মই হলো আত্মত্যাগের মহান মন্ত্রে উজ্জীবিত হওয়া, আঘাত-সংঘাতের মধ্যে রক্তশপথ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়া। পাশাপাশি সমাজ জীবনের নানা বিকার, অসুস্থতা ও সর্বনাশের অভিঘাতে এ বয়স হয়ে উঠতে পারে ভয়ংকর।
কিন্তু এ বয়সের আছে সমস্ত দুর্যোগ আর দুর্বিপাক মোকাবিলা করার অদম্য প্রাণশক্তি। ফলে তারুণ্য ও যৌবনশক্তি দুর্বার বেগে এগিয়ে যায় প্রগতির পথে। যৌবনের উদ্দীপনা, সাহসিকতা, দুর্বার গতি, নতুন জীবন রচনার স্বপ্ন এবং কল্যাণব্রত এসব বৈশিষ্ট্যের জন্য কবি প্রত্যাশা করেছেন নানা সমস্যাপীড়িত দেশে তারুণ্য ও যৌবনশক্তি যেন জাতীয় জীবনের চালিকাশক্তি হয়ে দাঁড়ায়। ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতাটি মাত্রাবৃত্ত ছন্দে রচিত।
 কবি পরিচিত
নাম সুকান্ত ভট্টাচার্য।
জন্মপরিচয় জন্ম তারিখ : ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দ (৩০ শ্রাবণ, ১৩৩৩ বঙ্গাব্দ)।
জন্মস্থান : কালীঘাট, কলকাতা। পৈতৃক নিবাস- কোটালীপাড়া, গোপালগঞ্জ।
পিতৃ ও মাতৃ পরিচয় পিতার নাম : নিবারণচন্দ্র ভট্টাচার্য।
মাতার নাম : সুনীতি দেবী।
শিক্ষাজীবন মাধ্যমিক : ম্যাট্রিক (১৩৫২), অকৃতকার্য, বেলেঘাটা দেশবন্ধু স্কুল।
কর্মজীবন ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির সক্রিয় সদস্য। দৈনিক পত্রিকা ‘স্বাধীনতা’র কিশোর সভা অংশের প্রতিষ্ঠাতা ও আজীবন সম্পাদক।
সাহিত্যকর্ম ছাড়পত্র, ঘুম নেই, পূর্বাভাস, অভিযান, হরতাল, গীতিগুচ্ছ প্রভৃতি।
ফ্যাসিবাদবিরোধী লেখক ও শিল্পী সংঘের পক্ষে ‘আকাল’ (১৩৫১) নামক কাব্যগ্রন্থ সম্পাদনা।
বিশেষ কৃতিত্ব তাঁর কবিতায় অনাচার ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিবাদ পাঠকদেরকে সচকিত করে তোলে। গণমানুষের প্রতি গভীর মমতার প্রকাশ ঘটেছে তাঁর কবিতায়।
জীবনাবসান মৃত্যু তারিখ : ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দ (২৯ বৈশাখ, ১৩৫৪ বঙ্গাব্দ)।
 উৎস পরিচিতি
সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতাটি ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত তাঁর ‘ছাড়পত্র’ কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত হয়েছে।
 বস্তু সংক্ষেপ
‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতাটিতে কবির ব্যক্তিজীবনের ছায়াপাত লক্ষ্য করা যায়। সম্ভবত আঠারো বছর বয়সেই কবি এ কবিতাটি রচনা করেছিলেন। কবির নিজের জীবনেও তখন তারুণ্যের ঢেউ খেলা করছিল। কবির মতে, আঠারো বছর বয়সটা অত্যন্ত দুঃসাহসের সময়। এ সময় কেউ কারো নিকট বা কোনোকিছুতেই মাথা নত করে না; বরং দুঃসাহসের সাথে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পথ অতিক্রম করে থাকে। আঠারো বছর হলো নির্ভীক বয়স। এ বয়সে কেউ তাকে রুখতে পারে না। নির্ভয়ে তখন জীবনের সকল বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে। আঠারো বছর বয়সে থাকে ঝঞ্ঝার গতিবেগ। শপথের মাধ্যমে সে বয়স অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে জানে। এমনকি তখন তারা জীবনকেও তুচ্ছজ্ঞান করে থাকে। আঠারো বছর বয়স হৃদয়ধর্মে সংগ্রামের মন্ত্রে অনুপ্রাণিত হয়ে চলে। তাজা প্রাণের অসহ্য যন্ত্রণায় এ বয়স মারাত্মক আকার ধারণ করে।
ব্যক্তি ও সমাজ জীবনের যেকোনো দুর্যোগ মুহূর্তে আঠারো বছর বয়সের প্রাণ ক্ষতবিক্ষত হয়ে থাকে। ফলে তারা দুর্বার গতিতে দুর্যোগ মোকাবিলায় আত্মনিয়োগ করে থাকে। এ বয়সে আঘাত আসে অবিরাম। অনেক আঘাত আর বেদনায় জর্জরিত হয়েও দীর্ঘশ্বাস ফেলে। তবু এ বয়স দুর্যোগ ও অন্যান্য বিপদের মুখে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকে। নতুনের প্রত্যাশী বলে এ বয়সেরই জয় হয়। আঠারো বছর বয়সে কোনো ভীরুতা বা কাপুরুষতা স্থান পায় না। তাই এ বয়স কখনোই থেমে থাকে না; বরং বিশেষ চিত্ত নিয়ে এগিয়ে যায় জীবনের সর্বক্ষেত্রে। এজন্য কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের কামনা এদেশের মানুষ আঠারো বছরের তারুণ্যে উদ্ভাসিত হোক।
 নামকরণ
সাহিত্যের নামকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। সঙ্গত কারণেই যেকোনো রচনার নামকরণ অত্যাবশ্যক। নামকরণ ছাড়া কোনো রচনাই পূর্ণতা পায় না। সাহিত্যের নামকরণ একটি আর্ট বা কলা বিশেষ। পাশ্চাত্য মনীষী ক্যাভেন্ডিস বলেন, "অ নবধঁঃরভঁষ হধসব রং সড়ৎব াধষঁধনষব ঃযধহ ধ ষড়ঃ ড়ভ বিধষঃয." অর্থাৎ একটি সুন্দর নাম একগাদা সম্পদের চেয়েও উত্তম। সুতরাং নামকরণ যদি সার্থক ও যুক্তিযুক্ত না হয়, তবে লেখাটি পড়ার পর পাঠকের বিভ্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই যেকোনো সাহিত্যিক তাঁর রচনার নামকরণ করেন যথেষ্ট সতর্কতার সাথে। নামকরণের ক্ষেত্রে লেখককে কতগুলো দিকের প্রতি অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হয়। বিষয়বস্তুর অন্তর্নিহিত তাৎপর্য বক্তব্যের রূপক অর্থ কিংবা স্থান-কাল বা পাত্রপাত্রীর নামের ওপর নির্ভর করেও নামকরণ করা হয়।
‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতাটিতে কবির ব্যক্তিজীবনের ছায়াপাত লক্ষ্য করা যায়। সম্ভবত আঠারো বছর বয়সেই কবি এ কবিতাটি রচনা করেছিলেন। কবির নিজের জীবনেও তখন আঠারো বছরের তারুণ্যের ঢেউ খেলা করছিল। তাই কবি আঠারো বছর বয়সের কিছু বৈশিষ্ট্য এ কবিতায় প্রকাশ করেছেন। এগুলো হচ্ছেÑ
১. আবেগ ও উচ্ছ¡াস, ২. দুঃসাহস, ৩. নির্ভীক সময়, ৪. অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ৫. ত্যাগ স্বীকার, ৬. সেবাব্রত জীবন, ৭. দেশ ও জাতির কল্যাণের বয়স, ৮. বিপ্লবী চেতনা ইত্যাদি।
‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় কবি নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে বয়ঃসন্ধিকালের চিত্রাঙ্কন করেছেন। কবিতার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শুধু আঠারো বছর বয়স সম্পর্কেই বর্ণনা করা হয়েছে। আঠারো বছর বয়সের বৈশিষ্ট্য এবং এগুলোর বহিঃপ্রকাশ প্রভৃতি নিয়েই কবিতাটি জীবন্ত ও তাৎপর্যময় হয়ে উঠেছে। কবিতাটির ছত্রে ছত্রে আঠারো বছর বয়সের উলে­খ রয়েছে। এ বয়সের ধর্মই হলো আত্মত্যাগের মহান মন্ত্রে উজ্জীবিত হওয়া, আঘাত-সংঘাতের মধ্যে রক্তশপথ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়া। পাশাপাশি সমাজজীবনের নানা ধিক্কার ও সর্বনাশের অভিঘাতে এ বয়স আবার হয়ে উঠতে পারে ভয়ঙ্কর ও মারাত্মক।
সুতরাং একথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, আঠারো বছর বয়সকে নিয়েই কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য কবিতাটি রচনার প্রয়াস পেয়েছিলেন, যা তাঁর কবিতায় বিধৃত হয়েছে অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে। কাজেই কবিতার নামকরণ ‘আঠারো বছর বয়স’ অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত ও সার্থক হয়েছে।
 শব্দার্থ ও টীকা
আঠারো বছর বয়স কী দুঃসহ Ñ এ বয়স মানবজীবনের এক উত্তরণকালীন পর্যায়। কৈশোর থেকে যৌবনে পদার্পণ করে মানুষ এ বয়সে। অন্যদের ওপর নির্ভরশীলতা পরিহার করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি নিতে হয় তাকে। এদিন থেকে তাকে এক কঠিন সময়ের দুঃসহ অবস্থায় পড়তে হয়।
স্পর্ধায় নেয় মাথা তোলবার ঝুঁকি Ñ অন্যের ওপর নির্ভরশীলতা পরিহার করে মাথা উঁচু করে স্বাধীনভাবে চলার ঝুঁকি এ বয়সেই মানুষ নিয়ে থাকে।
বিরাট দুঃসাহসেরা দেয় যে উঁকি Ñ নানা দুঃসাহসী স্বপ্ন, কল্পনা ও উদ্যোগ এ বয়সের তরুণদের মনকে ঘিরে ধরে।
আঠারো বছর বয়স জানে না কাঁদা Ñ যৌবনে পদার্পণ করে এ বয়সে মানুষ আত্মপ্রত্যয়ী হয়। জীবনের মুখোমুখি দাঁড়ায় স্বাধীনভাবে। শৈশব-কৈশোরের পরনির্ভরতার দিনগুলোতে যে কান্না ছিল এ বয়সের স্বভাব-বৈশিষ্ট্য তাকে সচেতনভাবে মুছে ফেলতে উদ্যোগী হয়।
এ বয়স জানে রক্তদানের পুণ্য Ñ দেশ, জাতি ও মানবতার জন্য যুগে যুগে এ বয়সের মানুষই এগিয়ে গেছে সবচেয়ে বেশি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দাঁড়িয়েছে সমস্ত বিপদ মোকাবেলায়। প্রাণ দিয়েছে অজানাকে জানবার জন্য, দেশ ও জনগণের মুক্তি ও কল্যাণের সংগ্রামে। তাই এ বয়স সুন্দর, শুভ ও কল্যাণের জন্য রক্তমূল্য দিতে জানে।
সঁপে আত্মাকে শপথের কোলাহলে Ñ তারুণ্য স্বপ্ন দেখে নতুন জীবনের, নব নব অগ্রগতি সাধনের। তাই সেসব স্বপ্ন বাস্তবায়নে, নিত্য-নতুন করণীয় সম্পাদনের জন্য নব নব শপথে বলীয়ান হয়ে তরুণ-প্রাণ এগিয়ে যায় দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ।
তাজা তাজা প্রাণে অসহ্য যন্ত্রণা Ñ চারপাশের অন্যায়, অত্যাচার, শোষণ, পীড়ন, সামাজিক বৈষম্য ও ভেদাভেদ ইত্যাদি দেখে প্রাণবন্ত তরুণেরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।
এ বয়সের প্রাণ তীব্র আর প্রখর Ñ অনুভূতির তীব্রতা ও সুগভীর সংবেদনশীলতা এ বয়সেই মানুষের জীবনে বিশেষ তীব্র হয়ে দেখা দেয় এবং মনোজগতে তার প্রতিক্রিয়াও হয় গভীর।
এ বয়সে কানে আসে কত মন্ত্রণা Ñ ভালো-মন্দ, ইতিবাচক-নেতিবাচক নানা তত্ত¡, মতবাদ, ভাবধারার সঙ্গে পরিচিত হতে শুরু করে এ বয়সের তরুণরা।
দুর্যোগে হাল ঠিকমতো রাখা ভার Ñ জীবনের এ সন্ধিক্ষণে শারীরিক, মানসিক, সামাজিক, রাজনৈতিক নানা জটিলতাকে অতিক্রম করতে হয়। এ সময় সচেতন ও সচেষ্টভাবে নিজেকে পরিচালনা করতে না পারলে পদস্খলন হতে পারে। জীবনে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।
এ বয়স কালো লক্ষ দীর্ঘশ্বাসে Ñ সচেতন ও সচেষ্ট হয়ে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে জীবন পরিচালনা করতে না পারার অজস্র ব্যর্থতার দীর্ঘশ্বাস এ বয়স নেতিবাচক কালো অধ্যায় হয়ে উঠতে পারে।
পথ চলতে এ বয়স যায় না থেমে Ñ এ বয়স দেহ ও মনের স্থবিরতা, নিশ্চলতা, জরাজীর্ণতাকে অতিক্রম করে দুর্বার গতিতে। প্রগতি ও অগ্রগতির পথে নিরন্তর ধাবমানতাই এ বয়সের বৈশিষ্ট্য।
এ দেশের বুকে আঠারো
আসুক নেমে Ñ আঠারো বছর বয়স বহু ইতিবাচক বৈশিষ্ট্যে চিহ্নিত। জড় নিশ্চল প্রথাবদ্ধ জীবনকে পেছনে ফেলে নতুন জীবন রচনার স্বপ্ন, কল্যাণ ও সেবাব্রত, উদ্দীপনা, সাহসিকতা, চলার দুর্বার গতি এসবই আঠারো বছর বয়সের বৈশিষ্ট্য। কবি প্রার্থনা করেন, এসব বৈশিষ্ট্য যেন জাতীয় জীবনে চালিকাশক্তি হয়ে দাঁড়ায়।
 বানান সতর্কতা
অবিশ্রান্ত, আত্মা, একাত্মতা, উচ্চারণ, ক্ষতবিক্ষত, ক্ষুব্ধ, গোপালগঞ্জ, ভট্টাচার্য, বিদ্রোহী, তরুণ, তাণ্ডবলীলা, দীর্ঘশ্বাস, দুর্ভিক্ষ, ধ্বংস, নিশ্চল, পদস্খলন, পৈতৃক, প্রান্তর, প্রার্থনা, বঞ্চনা, ভয়ঙ্কর, মন্ত্রণা, যন্ত্রণা, রবীন্দ্র, শোষণ, সংগ্রাম, সন্ধিক্ষণ, সুকান্ত, স্টিমার, স্পর্ধা।

 অনুশীলন অংশ (চৎধপঃরপব)
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
সুজন ও সাধন সহপাঠী। দুজনেই লেখাপড়ায় বেশ ভালো। স্কুল জীবন পার হতে না হতেই সুজন মিশে যায় কিছু অসৎ বন্ধুর সাথে। লেখাপড়ার পাঠ চুকে যায় ওখানেই। তার নাম শুনলে মানুষ আঁতকে উঠে। অপর দিকে সাধন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। ভাষা আন্দোলন শুরু হলে সে তাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে, মিছিলে সে নেতৃত্ব দেয়। সংগঠিত করে সহপাঠীদের, আর প্রতিজ্ঞা করে  জীবন দিয়ে হলেও মাতৃভাষার মান রক্ষা করবেই।
ক. কোন বয়সে দুঃসাহসেরা উঁকি দেয়?
খ. ‘বাষ্পের বেগে স্টিমারের মতো চলো’ একথা দিয়ে সুকান্ত ভট্টাচার্য কী বোঝাতে চেয়েছেন?
গ. উদ্দীপকের সুজনের মাঝে “আঠারো বছর বয়স” কবিতার ফুটে ওঠা দিকটি ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘নানা সমস্যাপীড়িত আমাদের দেশে তারুণ্য ‘যৌবনশক্তি’ যেন জাতীয় জীবনের চালিকাশক্তি হয়ে দাঁড়ায়’ এ বক্তব্য উদ্দীপক ও “আঠারো বছর বয়স” কবিতায় যেভাবে ফুটে উঠেছে তা বিশ্লেষণ কর। ১



১ নং প্রশ্নের উত্তর

 আঠারো বছর বয়সে দুঃসাহসেরা উঁকি দেয়।

 ‘বাষ্পের বেগে স্টিমারের মতো চলে’ এ কথা দিয়ে আঠারো বছর বয়সের দুর্বার গতিশীলতাকেই কবি বোঝাতে চেয়েছেন।
 দেশ, জাতি ও মানবতার জন্য যুগে যুগে আঠার বছর বয়সের যৌবনপ্রাপ্ত তরুণরাই এগিয়ে গেছে সবচেয়ে বেশি। কেননা, তাদের গতি দুর্বার, তারা লক্ষ্যে অবিচল, প্রতিজ্ঞায় অটল। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে একটুও দ্বিধা করে না বিপদ মোকাবেলায়। দেশ ও জনগণের মুক্তি ও কল্যাণের জন্য বাষ্পের গতি নিয়ে স্টিমারের মতো এ বয়সীরা এগিয়ে যায়। জীবন উৎসর্গ করে হলেও তারা লক্ষে পৌঁছাতে সচেষ্ট হয়। দেহ ও মনের স্থবিরতা, নিশ্চলতা, জরাজীর্ণতাকে অতিক্রম করে প্রগতি ও অগ্রগতির পথে নিরন্তর ধাবমানতাই এ বয়সেই বৈশিষ্ট্য।

 উদ্দীপকের সুজনের মাঝে ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার ‘এ বয়স কালো লক্ষ দীর্ঘশ্বাসে/ এ বয়স কাঁপে বেদনায় থরোথরো’র দিকটি ফুটে উঠেছে।
 বয়ঃসন্ধিকাল মানুষের জীবনের এক চরম পরীক্ষার অধ্যায়। এ শারীরিক পরিবর্তনের সাথে সাথে মনোজগতেও তার তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়। এ প্রতিক্রিয়া ইতিবাচক বা নেতিবাচক দুটোই হতে পারে। ভালো-মন্দ নানা ধরনের মানুষের সাথে পরিচিত হয়ে নানা তত্ত¡, নানা মতবাদ, নানা পরামর্শে এ সময় বিভ্রান্তি ঘটতে পারে যার ফল ভয়াবহ।
 ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় যৌবনে পদার্পণের ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার কথা বলেছেন কবি। সমাজ জীবনের নানা বিকার, অসুস্থতা ও সর্বনাশের অভিঘাতে ভয়ংকর হয়ে ওঠার ইঙ্গিত দিয়েছেন। শারীরিক, মানসিক, সামাজিক, রাজনৈতিক নানা জটিলতায় এ সময় সচেতন ও সচেষ্টভাবে নিজেকে পরিচালনা করতে না পারলে পদস্খলন হতে পারে। জীবনে নেমে আসতে পারে ভয়াবহ বিপর্যয়। উদ্দীপকেও আমরা যৌবনে পদার্পণের ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার সুফল ও কুফল দেখতে পাই। সুজন ও সাধন দুজনেই লেখাপড়ায় বেশ ভালো। কিন্তু স্কুলজীবন পার না হতেই সুজন মিশে যায় কিছু অসৎ বন্ধুর সাথে। লেখাপড়ার পাট চুকিয়ে সে ভয়ংকর সন্ত্রাসী হয়ে ওঠে। তার নাম শুনলে মানুষ আঁতকে ওঠে। অন্যদিকে সাধন হয়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের তুখোর মেধাবী ছাত্র। এভাবে আমরা দেখি, ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার নেতিবাচক অর্থাৎ ক্ষতিকর দিকটি উদ্দীপকের সুজনের মাঝে ফুটে উঠেছে।

 ‘নানা সমস্যাপীড়িত আমাদের দেশে তারুণ্য ‘যৌবনশক্তি’ যেন জাতীয় জীবনের চালিকাশক্তি হয়ে দাঁড়ায়’ এ ইতিবাচক আশাবাদ দেশ ও জাতির জন্য অবশ্যই কল্যাণকর।
 দেশ, জাতি ও মানবতার জন্য যুগে যুগে তারুণ্যদীপ্ত মানুষই এগিয়ে গেছে সবচেয়ে বেশি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দাঁড়িয়েছে সমস্ত বিপদ মোকাবেলায়। পরনির্ভরতা পরিহার করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি নেয়। নতুন জীবনের, নিত্য নতুন করণীয় সম্পাদনের, নব নব অগ্রগতি সাধনের জন্য দৃপ্ত শপথে বলীয়ান হয়ে সুন্দর, শুভ ও কল্যাণের স্বপ্ন সফল করার দৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে যায়।
 ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় দেশ ও জাতির প্রগতি ও অগ্রগতিকে নিশ্চিত করার জন্য তারুণ্যশক্তির প্রত্যাশা করা হয়েছে। আমাদের দেশ নানা সমস্যাপীড়িত। মৌলিক সমস্যাগুলো এখনও প্রবলভাবে রয়ে গেছে। এছাড়া বন্যা, নদীভাঙন, ঝড়, জলোচ্ছ¡াসের কাছে এ দেশের মানুষ এখনও বিপন্ন। অথচ, আমাদের রয়েছে বিপুল তারুণ্যশক্তি। দুর্যোগ ও দুর্বিপাক মোকাবেলার জন্য তাদের রয়েছে অদম্য প্রাণশক্তি। তারা তাদের শক্তি, উদ্দীপনা, সাহসিকতা, দুর্বার গতি ও কল্যাণব্রত দিয়ে নতুন জীবন রচনার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারে। আমাদের সমস্যাপীড়িত দেশে তারা হয়ে উঠতে পারে জাতীয় জীবনের চালিকাশক্তি।
 উদ্দীপকের সাধনও ইতিবাচক তারুণ্যশক্তির প্রতীক হয়ে উঠেছে। সে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। ভাষা আন্দোলন শুরু হলে সে তাতে সক্রিয়ভাবে যোগ দেয়। মাতৃভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সহপাঠীদের সংগঠিত করে, নেতৃত্ব দেয় এবং প্রতিজ্ঞা করে  জীবন দিয়ে হলেও মাতৃভাষার মান রক্ষা করবে। সাধন নিজের দেশ ও মানুষের সমস্যার গুরুত্ব দিয়ে এবং মিছিলের নেতৃত্ব গ্রহণ করে জাতীয় জীবনের চালিকাশক্তি হওয়ার আকাক্সক্ষা প্রমাণ করেছে। সুতরাং উদ্বৃতিতে যে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে, আঠারো বছর বয়সী তরুণেরা তা সফল করবে।

 অতিরিক্ত অনুশীলন (সৃজনশীল) অংশ
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
তমালের বয়স আঠারো। নিজেকে আজকাল একটু তার বড় বড় মনে হচ্ছে। আগে কেউ কিছু বললে চুপ করে শুনত; আজকাল যেন কথা বলতে শিখেছে, আত্মসম্মানবোধ জেগেছে। এই তো সেদিন ছোট চাচার সামনে যা করল, রীতিমতো সারা বাড়ি তোলপাড় হয়ে গেছে। তমাল একান্নবর্তী পরিবারের ছেলে। ছোটচাচা প্রতিদিন সকালের নাস্তা সেরে খবরের কাগজ নিয়ে বসেন আজও তার ব্যতিক্রম ছিল না। তমাল চাচার কাছে আন্তর্জাতিক পাতাটি চাইতে গেলে চাচা জোরে এক ধমক বসালেন, “আদার ব্যাপারী জাহাজের খবর নিতে চায়, ভাগ এখান থেকে” বলে ছোটচাচা সিগারেটে আগুন ধরালেন। তমাল আর থাকতে পারল না, ‘‘চাচা, আপনিতো প্রথম পাতা পড়ছেন, তা হলে ভিতরের একটি পাতা দিতে আপত্তি করছেন কেন? আর এখানে ছোট বাচ্চারা খেলছে, আপনি সবার সামনে সিগারেট টানছেন কেন? জানেন, আপনার চেয়ে এতে ওদের ক্ষতি বেশি হবে?”
চাচা তো রেগে আগুন। যাচ্ছেতাই বলে ভর্ৎসনা করল তমালকে। কিন্তু আশ্চর্য! তমালের চোখ দিয়ে এক ফোটা জলও বের হলো না, বরং মনে হলো প্রতিবাদটাই শ্রেয়।
ক. কোন সময় বা বয়স বিপদের মুখে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে?
খ. “আঠারো বছর বয়স কী দুঃসহ” -কেন?
গ. এত ভর্ৎসনার পরও তমাল কাঁদলো না কেন? ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার আলোকে আলোচনা কর।
ঘ. “আঠারো বছর বয়স জানে না কাঁদা”- উক্তিটির মধ্যে আঠারো বছর বয়সের অশ্র“হীন প্রতিবাদশক্তির প্রকাশ ঘটেছে। - সত্যতা নিরূপণ কর। ১



২ নং প্রশ্নের উত্তর

 ‘আঠারো বছর বয়স’ বিপদের মুখে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।

 আঠারো বছর বয়স জীবনের জন্য এক যুগসন্ধিক্ষণ। এ সময় আসে বিভিন্ন বাধা-বিপত্তি ও নানা ধরনের ঝুঁকি। তাই কবি এ বয়সকে দুঃসহ বলেছেন।
 কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য তাঁর ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় মানবজীবনের আঠারো বছর বয়সটিকে দুঃসহ বলে অভিহিত করেছেন। কারণ এই বয়সে মানুষ কৈশোর থেকে যৌবনে পদার্পণ করে। অন্যের ওপর নির্ভরশীলতা পরিহার করে এই বয়সেই নিজের পায়ে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি নিতে হয় তরুণকে। আত্মনির্ভরশীলতার তাড়না তাকে এ সময় অস্থির করে তোলে। স্পর্ধিত সাহসে এই বয়সেই স্বাধীনভাবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার ঝুঁকি নেয় সে । এদিক থেকে তাকে এক কঠিন সময়ের দুঃসহ অবস্থায় পড়তে হয়। জীবনকে আর আগের মতো ধরাবাধা ছকে বেঁধে রাখা যায় না। বরং উন্মাতাল আবেগে সবকিছু ছাড়িয়ে যেতে ইচ্ছে করে। তাই বলা হয়েছে ‘আঠারো বছর বয়স কী দুঃসহ’।

 তমালের ছোটচাচা তাকে অনেক ভর্ৎসনা করল, কিন্তু তারপরও সে কাঁদল না, কেননা তার মনে হয়েছে সে যেটা করেছে সেটা সঠিক।
 এখানে চাচা শুধু ভুল বুঝে তাকে ভর্ৎসনা করেছে, গালমন্দ করেছে। এখানে অন্যায়টা চাচার, তার নয়। সুতরাং এ বিষয়ে তার কষ্ট পাওয়ার কিছু নেই। বরং এই কষ্টটুকু সহ্য করার সাহস ও প্রত্যয় নিয়েই সে প্রতিবাদ করেছিল।
 আঠারো বছর বয়সের ধর্মই অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা, ন্যায়ের পক্ষে সংগ্রাম করা। এ বয়সে অন্যায় দেখলে অবশ্যই প্রতিবাদ করবে, তাতে যতোই অবমাননা জুটুক কপালে। তা ছাড়া তার মধ্যে যে আত্মসম্মানবোধ জেগেছে তাতে ছোট চাচার রাগ ও কটু কথায় সে কাঁদতে পারে না। আঠারো বছর বয়স কবিতায় কবিও আঠারোর তরুণদের এই বৈশিষ্ট্যের কথা ব্যক্ত করেছেন। কারো কাছে মাথা নত না করে নিজের দুরন্ত প্রকাশ আঠারোর বৈশিষ্ট্য। আর এ প্রকাশের পথে সকল কষ্টই হাসিমুখে সহ্য করে আঠারোর তরুণ।

 “আঠারো বছর বয়স জানে না কাঁদা”- উক্তিটির মাধ্যমে কবি বুঝিয়েছেন যে, এ বয়সে মানুষ দুর্মর যৌবনের আলোকচ্ছটায় আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে ওঠে। স্বাধীনভাবে জীবনের মুখোমুখি দাঁড়ায়।
 ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় “আঠারো বছর বয়স জানে না কাঁদা” কথাটি এজন্য বলা হয়েছে যে শৈশব-কৈশোরের পরনির্ভরতার দিনগুলোতে যে কান্না ছিল, এই বয়সের স্বভাব বৈশিষ্ট্য তা মুছে ফেলে সচেতনভাবে। এ বয়সে নিজের মর্যাদা ও শক্তি সম্বন্ধে সচেতনতা একজন তরুণকে জীবনের সকল কষ্ট ও প্রতিবন্ধকতাকে অগ্রাহ্য করতে শেখায়।
 যৌবনের চির উন্মাদনায় এই বয়স কাঁদতে জানে না। শঙ্কাহীন উদ্দাম গতিতে নবসৃষ্টির আনন্দে সকল বাধা তুচ্ছ করে এগিয়ে চলে এ বয়সের তরুণ। জীবনের নানা কর্মে সংগ্রামে তার মন্ত্র হয়- উড় ড়ৎ ফরব. এমন অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষিত হবার পর তার কাঁদার অবকাশ নেই। তাই কবি বলেছেনÑ“আঠারো বছর বয়স জানে না কাঁদা”।
 ‘আঠারো বছর বয়স’ সকল বাধাবিপত্তি অগ্রাহ্য করে ক্রমাগত এগিয়ে যায় সাফল্যের দিকে। কোনো ব্যর্থতাই এ বয়সকে দমিয়ে রাখতে পারে না। এ বয়স মানুষকে দাঁড় করিয়ে দেয় তারুণ্যখচিত যৌবনের মুখোমুখি, যা কোমল করুণ কান্নার নয়, চির বিদ্রোহের। সুতরাং, বলা যায়, “আঠারো বছর বয়স জানে না কাঁদা”- উক্তিটির মধ্যে আঠারো বছর বয়সের অশ্র“হীন প্রতিবাদশক্তির প্রকাশ ঘটেছে।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
প্রতিদিনের মতো আজও কলেজে যাচ্ছিল রায়ান। রাস্তা পার হতে হবে, সিগনাল লাগাই ছিল। একটি ছোট বাচ্চা রাস্তা পার হবার জন্য দৌড় দিল, কাঁধে তার স্কুল ব্যাগ। এমন সময় সবুজ সিগনাল জ্বলে উঠল। রায়ান এ পাড়ে বসে দেখছিল। রায়ান একটি গাড়ি ওভারটেক করে দৌঁড়ে ছেলেটিকে কোলে তুলে নিল। পিছন থেকে একটি চলন্ত গাড়ি দ্রুত ব্রেক কষলেও রায়ানকে এসে আঘাত করে। বাচ্চাটা রক্ষা পেল বটে কিন্তু সে গাড়ির আঘাতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলল। জ্ঞান ফিরে পাওয়ার পর সে নিজেকে হাসপাতালের বিছানায় আবিষ্কার করল। চারদিকে সাংবাদিকেরা ঘিরে বসেছে, কেউ ফটো তুলছে আর সেই ছোট্ট ছেলেটি তার দিকে অপলক তাকিয়ে আছে। সাংবাদিকদের দেখে বিরক্ত হলেও ছোট্ট শিশুটিকে দেখে তার ঠোঁটে মুখে হাসি ফুটে উঠল।
ক. ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার রচয়িতার মৃত্যুসাল কত?
খ. ‘রক্তদানের পুণ্য’ কথাটির অর্থ লিখ।
গ. “প্রাণ দেওয়া-নেওয়া ঝুলিটা থাকে না শূন্য”- উক্তির আলোকে রায়ানের আত্মত্যাগের বিষয়টি মূল্যায়ন কর।
ঘ. ‘আঠারো বছর বয়সে তরুণরা কীসের শপথে আত্মাকে সঁপে দেয়’Ñ কবিতার ভাব অবলম্বনে আলোচনা কর। ১




৩ নং প্রশ্নের উত্তর

 ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার রচয়িতা সুকান্ত ভট্টাচার্য ১৯৪৭ সালে মাত্র ২১ বছর বয়সে প্রয়াণ লাভ করেন।

 ‘রক্তদানের পুণ্য’ কথাটির অর্থ হলো মানুষ ও সমাজের কল্যাণে জীবনদান। রক্তদান একটি মহাপুণ্যের কাজ। আঠারো বছর বয়স রক্ত দিয়ে পুণ্য আনতে জানে।
 অন্যের কল্যাণে যে নিজের জীবনকে তুচ্ছজ্ঞান করতে পারে, সেই প্রকৃত মানুষ। তরুণ বয়সে এটা সম্ভব হয়। এ বয়সে তরুণরা মানুষের কল্যাণে জীবন উৎসর্গ করে। জীবনের সার্থকতা খুঁজে নেয় অন্যের উপকার সাধনের মাঝে।

 উদ্দীপকে দেখা যায়, রায়ান নামের এক তরুণ নিজের জীবনকে ঝুঁকির মুখে ফেলে একটি শিশুর জীবন বাঁচিয়েছে। তার এই আত্মত্যাগের অনুপ্রেরণা তার মাঝে অপরের কল্যাণে নিজের জীবনকে বিলিয়ে দেবার উদার আকাক্সক্ষার প্রকাশ ঘটেছে।
 এখানে রায়ান নিজের কর্তব্যবোধ থেকেই সে ছেলেটিকে বাঁচানোর জন্য গিয়েছে। কেউ তাকে উদ্বুদ্ধ করে নি। সেও নিজের জীবনের কথা চিন্তা করেনি। আর তার এই মহৎ কাজের পেছনে প্রেরণা যুগিয়েছে তার বয়স। এই যে নিজের জীবন দিয়ে অন্যকে নতুন জীবন পাইয়ে দেবার প্রবণতা, এটা কেবল আঠারো বছর বয়সেই দেখানো সম্ভব।
 ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় কবি এ বিষয়টিকেই প্রকাশ করেছেন “প্রাণ দেওয়া-নেওয়া ঝুলিটা থাকে না শূন্য”- উক্তির মাধ্যমে। আঠারো বছর বয়স তারুণ্যের সুদীপ্ত সময়। এ সময় তরুণ নিজের জীবন নিয়ে চিন্তা করে না। অন্যের কল্যাণে নিজের জীবন আত্মাহুতি দেয়।

 আঠারো বছর বয়সে তরুণরা মানবতার কল্যাণ শপথে আত্মাকে সঁপে দেয়।
 আঠারো বছর বয়স নিজেকে পরের তরে বিলিয়ে দেয়ার সুবর্ণ সময়। এ বয়সে মানুষের মনে তারুণ্যের আগুন জ্বলজ্বল করে। এসময় প্রাণের মূল্য অতি তুচ্ছ মনে হয়। কর্তব্য এবং দায়িত্ববোধটাই সামনে বড় হয়ে দাঁড়ায়।
 আঠারো বছর বয়স অজয়কে জয় করতে মরিয়া হয়ে ওঠে। এ বয়সে যেমন প্রাণ দিতে দ্বিধান্বিত হয় না, তেমনি কল্যাণ চিন্তা করে অনাচার রোধে প্রাণ নিতেও পিছপা হয় না। এ বয়স পরের তরে নিজেকে উৎসর্গ করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
 প্রকৃতপক্ষে আঠারো বছর বয়স বলতে কবি এমন একটি অবস্থাকে নির্দেশ করেছেন যেটা শুধু বয়সের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এমন একটি মূল্যবোধ জাগ্রত হওয়া যেখানে কর্তব্যবোধ প্রাণের মায়াকে অতিক্রম করে যেতে পারে। নিজের স্বার্থচিন্তা পিছু ডাকলেও তা তুচ্ছ করা যায়। তাই এ বয়স পরকে আপন করা, নিজেকে পরের কল্যাণে সঁপে দেয়ার শপথ গ্রহণে উদ্দীপ্ত হয়।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
অনিক এসএসসিতে গোল্ডেন ফাইভ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। শহরে সেরা একটা কলেজে সে ভর্তি হয়। স্কুলে সে সেরা ছাত্র ছিল, কলেজেও সে অবশ্যই সেরা হবে।
এক রকম অহংকারবোধ থেকে সে পড়াশুনায় কিছুটা অমনোযোগী হলো। মিশুক প্রবৃত্তির কারণে অল্প দিনেই তার বেশকিছু বন্ধু জুটে গেল কলেজে। প্রথম সাময়িক পরীক্ষায় সে খুব একটা ভালো করতে পারল না। ভাবল তাতে কি, ফাইনালে সে-ই প্রথম হবে। বাসার সবাই দেখে ছেলে সারাদিন কম্পিউটারের সামনে বসে অনলাইনে পড়াশুনা করছে। কিন্তু মূলত অনিক সারাদিন ফেসবুকে বসে বন্ধুদের সাথে গল্প করে। কলেজের প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস ফাঁকি দিয়ে সে ইন্টারনেটের কুফলগুলোই আয়ত্ত করতে থাকে। প্রথম বর্ষ পরীক্ষার ফলাফল সে এতটাই খারাপ করল যে, বাসায় জানাতে সাহস পেল না। এভাবে দিনাতিপাত করার পর অনিক এইচএসসি পরীক্ষা দিল এবং যখন ফল প্রকাশিত হলো, তখন সকলে অনিকের আসল রূপ চিনল। সে কোনো উচ্চ প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারল না।
ক. কোন বয়স ভীরু আর কাপুরুষ নয়?
খ. আঠারো বছর বয়স ভয়ংকর কেন?
গ. অনিক পরীক্ষায় খারাপ ফল করল কেন? ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতা অবলম্বনে বর্ণনা কর।
ঘ. “দুর্যোগে হাল ঠিকমতো রাখা ভার”- উক্তিতে আঠারো বছর বয়সের কী নেতিবাচক দিকের প্রকাশ ঘটেছে? আলোচনা কর। ১



৪ নং প্রশ্নের উত্তর

 আঠারো বছর বয়স ভীরু আর কাপুরুষ নয়।

 আঠারো বছর বয়স ভয়ংকর, কেননা এ বয়সে সঠিক নির্দেশনা না পেলে বিপদে পড়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।
 আঠারোর মূলশক্তি হচ্ছে তার গতি, স্পর্ধা এবং ঝুঁকি নেবার মানসিকতা। কিন্তু এ ঝুঁকি যদি অবিবেচনাপ্রসূত হয়, তাহলে তা জীবনের জন্য কল্যাণকর ও সৃষ্টিশীল না হয়ে বরং অকল্যাণকর ও ধ্বংসাত্মক হয়। এ যেন তলোয়ারের ধার ধরে হাঁটার মতো বিষয়। এ কারণেই আঠারো বছর বয়সকে ভয়ংকর বলা হয়েছে।

 অনিক পরীক্ষায় আশানুরূপ ফল করতে ব্যর্থ হলো, কারণ সে নিয়মিত পড়াশুনা করেনি।
 উদ্দীপকে উলি­খিত অনিক বন্ধুদের সাথে আড্ডা আর গল্পগুজব করেই সে দিনাতিপাত করেছে। তার অভিভাবকগণও তাকে সঠিক নির্দেশনা দেয়া থেকে বিরত ছিল। অনিক বুঝে উঠতে পারেনি কোন কাজ তার জন্য শ্রেয়। তাই সে কালের স্রোতে গা ভাসিয়েছে এবং পরিণতিতে ফল খারাপ করেছে।
 ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় কবি এ বয়সের যে নেতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরেছেন তার মধ্যে অনিকের পরিণতির ইঙ্গিত রয়েছে। এ কবিতায় আঠারো বছর বয়সকে বলা হয়েছে ভয়ংকর। সুতরাং, যদি এ বয়সে একজন তরুণ সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হয়, তার তারুণ্য শক্তিকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে না পারে, তাহলে তার পরিণতি হতে পারে অত্যন্ত ধ্বংসাত্মক। অনিকের ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে। আঠারোর গঠনমূলক শক্তি নয়, বরং আঠারোর ভয়ংকর দিকটিই প্রতিফলিত হয়েছে তার জীবনে।

 আঠারো বছর বয়স মানুষের যৌবনের প্রারম্ভের কাল। এ সময় জীবনতরীর হাল শক্ত করে ধরতে হয় এবং সুচিন্তিত উপায়ে ভবনদীতে তরী বাইতে হয়।
 আঠারো বছর বয়স এমন একটি সময় যে সময় তরুণরা সঠিক নির্দেশনা পেলে সঠিক পথে চলতে পারে। আবার ভুল নির্দেশনা পেলে বিপথগামী হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। এ বয়সের উষ্ণ রক্তের তেজে ন্যায়-অন্যায় চিন্তা না করে ঝুঁকি গ্রহণকে শ্রেয় মনে হয়। ফলে যেকোনো সময় দুর্যোগ নেমে আসতে পারে জীবনে।
 আঠারো বছর বয়স জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। এ সময় যেভাবে বীজ বপন করা হবে, ভবিষ্যতে ঠিক তেমন ফল পাওয়া যাবে। অর্থাৎ এ সময় কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে সঠিক পথে জীবন পরিচালিত করতে না পারলে জীবন মাঝিবিহীন তরীতে পরিণত হবে।
 ‘আঠারো বছর বয়স’ জীবনের দুর্যোগময় মুহূর্ত। সে দুর্যোগে যেহেতু সুচিন্তিত বিবেচনাবোধের চেয়ে আবেগ আর শক্তিই প্রাধান্য পায়, সেহেতু জীবনের কঠিন বাস্তবতায় একজন তরুণের পক্ষে সঠিক দিকে জীবনতরী পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়ে। এটাই আঠারো বছর বয়সের অন্যতম নেতিবাচক দিক। কবি এ বিষয়টিই ফুটিয়ে তুলেছেন, “এ বয়সে দুর্যোগে হাল ঠিকমতো রাখা ভার”- পঙ্ক্তিটির মাধ্যমে। অর্থাৎ, এ বয়সে সঠিক পথে জীবন পরিচালিত করা খুবই কঠিন।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
মামুন বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন শিক্ষক হিসেব যোগদান করেছে। একসময় সে এই বিভাগের শ্রেষ্ঠ ছাত্র ছিল, আজ জনপ্রিয় শিক্ষক। ছাত্র অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের যে যে খারাপ দিকগুলো তাকে ব্যথিত করত, আজ শিক্ষক হবার পর সে খারাপ জিনিসগুলো দূর করার জন্য মরিয়া।
মামুন নতুন নতুন কাজে হাত দেয়, আর আস্তে আস্তে বুঝতে পারে এখানে সফল হওয়া কতটা কঠিন ব্যাপার। সবকিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের হাতে। ব্যর্থতার গ্লানি তাকে পেয়ে বসে। মামুন মনে মনে ভাবে, শুভ কাজের চিন্তা করা যতটা কঠিন, সে চিন্তাকে বাস্তবে রূপদান তার তুলনায় সহস্রগুণ বেশি কঠিন। তারপরও থেমে থাকে না মামুন। তার সাধ্য অনুযায়ী কাজ চালিয়ে যায়। নতুন কর্মোদ্দীপনায় ঝাঁপিয়ে পড়ে।
ক. কবি বাংলাদেশের কল্যাণ কামনায় কোন বয়সের আবির্ভাব প্রত্যাশা করেছেন?
খ. ‘আঠারো বছর বয়স’ বলতে কী শুধু বয়সকে বোঝানো হয়েছে?
গ. একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের কাছে জাতির প্রত্যাশা কী? আঠারো বছর বয়সের কোন চেতনা তাকে তাঁর উদ্দেশ্য সাধনে সহায়তা করতে পারে বলে মনে কর তুমি? কোন ভাবনাটি তাঁর থাকা আবশ্যক বলে তুমি মনে কর?
ঘ. ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতা অবলম্বনে তারুণ্যের ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিকগুলো সংক্ষেপে তুলে ধর। কোনটির ওপর কবি গুরুত্ব দিয়েছেন বেশি? ১



৫ নং প্রশ্নের উত্তর

 বাংলাদেশের কল্যাণ কামনায় কবি বাংলার বুকে আঠারো বছর বয়সের আবির্ভাব প্রত্যাশা করেছেন।

 ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় আঠারো বছর বলতে কেবল বয়সকেই বুঝানো হয়নি। বরং এই বয়সের চেতনা পুরো বয়সে প্রতিফলিত করে সফলতা লাভের প্রয়াসকে বোঝায়।
 না, আঠারো বছর বয়স বলতে এ কবিতায় শুধু বয়সকেই বুঝানো হয়নি। বরং একটি চেতনাকে বুঝানো হয়েছে। আঠারোর চেতনা আটাশিতেও মানুষ ধারণ করতে পারে যদি সে মুক্ত চেতনার মানুষ হয়। তাই কবিতায় ‘আঠারো বছর বয়স’ বলতে তারুণ্যকে নির্দেশ করা হয়েছে। এই তারুণ্য বয়সের ফ্রেমে সীমাবদ্ধ নয়।

 শিক্ষকেরা হলেন মানুষ গড়ার কারিগর, জাতির বিবেক। আর একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের ক্ষেত্রে এ কথাটি আরো সত্য। তাই তাঁর কাছে জাতির প্রত্যাশাও অনেক। জাতি তাঁর কাছে দেশ ও সমাজ পরিচালনার দিকনির্দেশনা প্রত্যাশা করে।
 ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় চিরযৌবনের প্রমুক্ত চেতনার যে রূপটি ফুটে উঠেছে, তা একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের মধ্যে থাকা বাঞ্ছনীয়। একজন শিক্ষক সকল ভয়-ভীতি রক্ত চক্ষু উপেক্ষা করে জাতিকে সামনে এগিয়ে নিতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
 শিক্ষকরা সর্বদা সমাজে ন্যায় ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় সত্যের পথে সংগ্রামে ব্রতী হন। মিথ্যাকে ভয় না করে তিনি সত্যকে প্রতিষ্ঠা করতে পারেন। তিনি জাতির আদর্শের ধারক। তাই এমন কোনো খারাপ গুণ তাঁর মাঝে থাকা উচিত নয়, যার জন্য জাতিকে কলঙ্কিত হতে হয়। তিনি সকল অশুভ চেতনার বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে মানবতার জয়গান করবেন, এটাই তাঁর কাছে সকলের প্রত্যাশা। তাই তাঁর কর্মজীবনে আসা সকল অনৈতিক বাধা অতিক্রম করতে আঠারোর চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছান।

 ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য তারুণ্যের ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরেছেন এবং ইতিবাচক দিকের প্রতি বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন।
 ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য তারুণ্যের ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয় দিক সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন। তাঁর কাছে ইতিবাচক দিকটিই বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। কেননা, এ দিকটিতে রয়েছে তারুণ্যের শুভ, সুন্দর ও মঙ্গলময় প্রতিচ্ছবি।
 ইতিবাচক দিক : আঠারো বছর বয়সের তারুণ্য পরনির্ভরশীলতা পরিহার করে মাথা উঁচু করে স্বাধীনভাবে চলার ঝুঁকি নেয়। এই বয়সেই মানুষ আত্মপ্রত্যয়ী হয়। দেশ, জাতি ও মানবতার জন্য এই বয়সেই অকাতরে জীবন বিলিয়ে দেয় উদ্ধত তরুণ। এ বয়সেই সুন্দর, শুভ কল্যাণের জন্য রক্তমূল্য দিতে শেখে দুর্মর তারুণ্য। চারপাশের অন্যায়-অত্যাচার, শোষণ-নিপীড়ন দেখে প্রাণবন্ত তারুণ্য ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে আঠারো বছর বয়সে।
নেতিবাচক দিক : আঠারো বছরের তারুণ্যকে শারীরিক, মানসিক, সামাজিক, রাজনৈতিক নানা জটিলতাকে অতিক্রম করতে হয়। এই সময় দক্ষতার সাথে নিজেকে পরিচালনা করতে না পারলে তার পদস্খলন ঘটে। জীবনে বিপর্যয় নেমে আসে। ফলে অজস্র ব্যর্থতা এসে তাকে গ্রাস করে।
 মূলত ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য আঠারোর জয়গান গেয়েছেন। তাঁর মতে ‘আঠারো’ জীবনের সর্বোৎকৃষ্ট সময়।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
হে মহাজীবন, আর এ কাব্য নয়
এবার কঠিন, কঠোর গদ্যে আনো,
পদ-লালিত্য ঝঙ্কার মুছে যাক
গদ্যের কড়া হাতুড়িকে আজ হানো!
প্রয়োজন নেই, কবিতার স্নিগ্ধতাÑ
কবিতা, তোমায় দিলাম আজকে ছুটি,
ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী-গদ্যময়!
পূর্ণিমা-চাঁদ যেন ঝল্সানো রুটি\
ক. সুকান্ত ভট্টাচার্যের জন্ম এবং মৃত্যু সাল লেখ।
খ. কবি আঠারো বছর বয়সকে দুঃসহ বলেছেন কেন?
গ. অনুচ্ছেদের ‘কঠোর গদ্য’ এবং ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার ‘আঠারো বছর বয়স’ এই দুইয়ের মাঝে সাদৃশ্য দেখাও।
ঘ. অনুচ্ছেদে ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার কোন ভাবটি প্রতিফলিত হয়েছে? Ñব্যাখ্যা কর। ১



৬ নং প্রশ্নের উত্তর

 সুকান্ত ভট্টাচার্য ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে মাত্র একুশ বছর বয়সে তাঁর অকালমৃত্যু হয়।

 আঠারো বছর বয়সে মানুষ কৈশোর থেকে যৌবনে পদার্পণ করে। এ সময় তাকে নানা বাধা ও ঝুঁকি অতিক্রম করতে হয়। তাই কবি আঠারো বছর বয়সকে দুঃসহ বলেছেন।
 তারুণ্যের কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য তাঁর অসাধারণ কবিতা ‘আঠারো বছর বয়স’ Ñএ তরুণদের আঠারো বছর বয়সটিকে দুঃসহ বলে আখ্যায়িত করেছেন। কেননা, আঠারো বছর বয়স মানবজীবনের এক উত্তরণকালীন সময়। এ সময়টি হলো কৈশোর থেকে যৌবনে পদার্পণের সিঁড়ি। কৈশোর থেকে যৌবনে পদার্পণের এ বয়সেই তাকে অন্যের ওপর নির্ভরশীলতা পরিহার করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি নিতে হয়। ফলে এ বয়সেই উত্তেজনার প্রবল আবেগ ও উচ্ছ¡াসে জীবনের ঝুঁকি নিতে হয়। এদিক থেকে তাকে এক কঠিন দুঃসহ অবস্থায় পড়তে হয়। তাই কবি আঠারো বছর বয়সকে দুঃসহ বলেছেন।

 অনুচ্ছেদে ‘কঠোর গদ্য’ বলতে কঠিন তীব্র সংগ্রামকে নির্দেশ করা হয়েছে, যেখানে কবিতার কোমলতার কোনো স্থান নেই। কবি ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় জড় নিশ্চল প্রথাবদ্ধ জীবনকে পিছনে ফেলে নতুন জীবন রচনার স্বপ্ন, কল্যাণ ও সেবাব্রত, উদ্দীপনা ও চলার দুর্বার গতিকে আহŸান করেছেন। এদিক থেকে অনুচ্ছেদে উদ্ধৃত কঠোর গদ্য ও আঠারো বছর বয়স কবিতার সাদৃশ্য রয়েছে।
 গদ্যের অভিব্যক্তির মধ্যে আছে কাঠিন্য, ছন্দহীন জীবনের রূপ, আবেগহীন ভাষা। কবি সেই কঠোর গদ্যকে প্রার্থনা করেছেন ঠিক যেমন প্রার্থনা করেছেন কবি আঠারো বছর বয়সকে ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায়। এ বয়স মানবজীবনের এক উত্তরণকালীন পর্যায়। কৈশোর থেকে যৌবনে পদার্পণ করে মানুষ এ বয়সে। এ বয়সেই অন্যের ওপর নির্ভরশীলতা পরিহার করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি নিতে হয় তাকে।
 এ বয়সের ধর্মই হলো আত্মাহুতির মহান মন্ত্রে উজ্জীবিত হওয়া ও আঘাত-সংগ্রামের মধ্যে রক্তশপথ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়া। যৌবনের উদ্দীপনা, সাহসিকতা, দুর্বার গতি নতুন জীবন রচনার স্বপ্ন ও কল্যাণব্রত এসব বৈশিষ্ট্যের জন্য কবি প্রত্যাশা করেছেন নানা সমস্যাপীড়িত আমাদের দেশে তারুণ্য ও যৌবনশক্তি যেন জাতীয় জীবনের চালিকাশক্তি হয়ে দাঁড়ায়। তাই বলা যায় ‘কঠোর গদ্য’ আর ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার ‘আঠারো বছর’ একই অর্থে ব্যবহৃত।

 ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় কবি তারুণ্যের জয়গান গেয়েছেন। তিনি তারুণ্যের কঠোর, সাহসী, উদ্দীপ্ত, দুর্বার রূপটি ফুটিয়ে তুলেছেন কবিতায়। অনুচ্ছেদেও এই ভাবটি ব্যক্ত হয়েছে।
 ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় কবি তারুণ্যের অনেক ইতিবাচক দিক তুলে ধরেছেন। এ বয়সে নানা দুঃসাহসী স্বপ্ন, কল্পনা ও উদ্যোগ মানুষের মনকে ঘিরে থাকে। এ বয়স মানুষকে অসীম সাহসী ও দুর্বিনীত করে তোলে। সকল অন্যায়-অত্যাচার আর জুলুম নির্যাতনের বিরুদ্ধে মানুষকে প্রতিবাদী করে তোলে। দুর্বিনীত যৌবনে পদার্পণ করে বলে এ বয়সে মানুষ আত্মপ্রত্যয়ী হয়। জীবনের মুখোমুখি দাঁড়ায় স্বাধীনভাবে, আর চারপাশের অন্যায়, অত্যাচার, শোষণ-পীড়ন, সামাজিক বৈষম্য ও ভেদাভেদ ইত্যাদি দেখে প্রাণবন্ত তরুণেরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।
 অনুচ্ছেদে কবি মহাজীবনে কবিতার কোমলতা, স্নিগ্ধতা, আবেগময়তাকে পরিহার করে, গদ্যের কঠোর রূপ প্রত্যাশা করেছেন । যেন গদ্যের কাঠিন্যের মতোই আঠারো বছর বয়স দেহ ও মনের স্থবিরতা, নিশ্চলতা, জরাজীর্ণতাকে অতিক্রম করে দুর্বার গতিতে পথ চলে। এ বয়সই ভাঙতে পারে প্রচলিত সমাজের সংকীর্ণতার দেয়াল, দূর করতে পারে ক্ষুধার গোঙানি।
 তারুণ্য চির-নতুনের বার্তাবাহক। এ বয়সে তরুণদের মনে উদয় হয় নানা দুঃসাহসী স্বপ্ন, কল্পনা ও উদ্যোগের। তাদের তাজা রক্ত উন্মুক্ত হয়ে ওঠে ছুটন্ত ঘোড়ার মতো। এ বয়সে কোনো বাধাকেই সে বাধা মনে করে না। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দাঁড়ায় সমস্ত বাধা মোকাবেলায়। পথের সকল জীর্ণতা ও শীর্ণতাকে পরিহার করে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়াই তার ধর্ম। পরাজয়ের বেদনায় অশ্র“ময় কান্না এ বয়সের ধর্ম নয়। অজানাকে জানবার জন্য সে প্রাণ দিতেও দ্বিধাবোধ করে না। দেশ ও জনগণের মুক্তি ও কল্যাণের সংগ্রামে সে হয়ে ওঠে প্রতিবাদী। এমন কি, প্রতিবাদের পদাঘাতে এ বয়স পাথর-পরিমাণ বাধা ভাঙতে উদ্যত হয়।
তাইতো কবির ভাষ্যÑ
“আঠারো বছর বয়সের নেই ভয়
পদাঘাতে চায় ভাঙতে পাথর বাধা।”
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
আমরা দুর্বল নিরীহ বাঙালি। এই বাঙালি শব্দে কেমন সুমধুর তরল-কোমল ভাব প্রকাশিত হয়। আহা! এই অমিয়াসিক্ত বাঙ্গালি কোন বিধাতা গড়িয়াছিলেন? কুসুমের সৌকুমার্য্য, চন্দ্রের চন্দ্রিকা, মধুর মাধুরী, যূথিকার সৌরভ, সুপ্তির নীরবতা, ভূধরের অচলতা, নবনীর কোমলতা, সলিলের তরলতা এক কথায় বিশ্বজগতের সমুদয় সৌন্দর্য এবং স্নিগ্ধতা লইয়া বাঙালি গঠিত হইয়াছে! আমাদের নামটি যেমন শ্র“তিমধুর তদ্রূপ আমাদের সমুদয় ক্রিয়াকলাপও সহজ-সরল।
ক. আঠারো বছর বয়স কবিতায় ‘আঠারো’ শব্দটি কতবার ব্যবহৃত হয়েছে?
খ. “এ বয়স জেনো ভীরু, কাপুরুষ নয়” Ñকথাটি দ্বারা কবি কী বুঝিয়েছেন?
গ. অনুচ্ছেদের ‘দুর্বল নিরীহ বাঙালি’র সাথে কবিতার ‘বিরাট দুঃসাহসেরা’র মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ কর।
ঘ. অনুচ্ছেদের ভাববস্তুর সাথে কবিতার ভাববস্তুর তুলনা কর। ১



৭ নং প্রশ্নের উত্তর

 ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় আঠারো শব্দটি নয় বার ব্যবহৃত হয়েছে।

 ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় কবি তারুণ্যের জয়গান গেয়েছেন। তরুণরা কখনো ভীরু বা কাপুরুষ হয় না। উত্তেজনার প্রবল ও দুরন্ত চঞ্চলতায় এ জীবন থাকে উজ্জ্বল। তারা কোনো বাধা বিপত্তিকেই ভয় পায় না। কবি সে কথা বোঝাতেই বলেছেন আঠারো বছর বয়স ভীরু, কাপুরুষ নয়।
 ‘আঠারো বছর বয়স’ ভীরু ও কাপুরুষ নয়। কারণ আঠারো বছর বয়সে মানুষ কৈশোর অতিক্রম করে যৌবনে প্রবেশ করে এবং এ সময় আত্মবলে বলিয়ান হয়ে ওঠে। তখন সে কোনো বাধাই মানতে চায় না। অজানাকে জানার জন্য সে প্রাণ দিতেও প্রস্তুত থাকে এবং সব বাধা বিপত্তিকে দুমড়ে-মুচড়ে ছুটন্ত ঘোড়ার মতো চলে সম্মুখপানে। সমাজের শোষণ ও নির্যাতন দেখে সে কাপুরুষের মতো ঘরে বসে থাকে না। তাই কবি আঠারো বছর বয়সকে ‘ভীরু ও কাপুরুষ নয়’ বলেছেন।

 অনুচ্ছেদে বাঙালি জাতিকে দুর্বল, ভীরু আর অলস বলা হয়েছে। কিন্তু ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় ‘বিরাট দুঃসাহসেরা’ বলতে নির্ভিক, অকুতোভয়, সাহসী তরুণদের নির্দেশ করা হয়েছে।
 কিশোর কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে বয়ঃসন্ধিকালের বৈশিষ্ট্যকে তুলে ধরেছেন। কৈশোর থেকে যৌবনে পদার্পণের এ বয়সটি উত্তেজনার, প্রবল আবেগ ও উচ্ছ¡াসে জীবনে ঝুঁকি নেয়ার। কবি আঠারো বছর বয়সকে দেশের স্বাধীনতা ও মানবকল্যাণে প্রাণ বিসর্জন দেয়ার উপযুক্ত সময় বলে মনে করেন। এ বয়সেই তরুণ স্বপ্ন দেখে নব নব অগ্রগতি সাধনের। পক্ষান্তরে বৃদ্ধ, ভীরু ও কাপুরুষেরা দুহাত গুটিয়ে ঘরের কোণে বসে থাকে। এমনকি, তারা সর্বক্ষণ প্রাণের ভয়ে থাকে শঙ্কিত।
 অনুচ্ছেদের ‘দুর্বল নিরীহ বাঙালি’ কথাটি শ্লেষ আর ব্যঙ্গাত্মক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। বাঙালিরা যে দুর্বল, ভীরু আর অলস সে কথাই এখানে বর্ণিত হয়েছে। পক্ষান্তরে ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার বিরাট দুঃসাহসেরা বলতে নির্ভীক, অকুতোভয়, সাহসী তরুণদের নির্দেশ করা হয়েছে, যারা অন্যের ওপর নির্ভরশীলতা পরিহার করে মাথা উঁচু করে স্বাধীনভাবে চলতে জানে, যারা দুঃসাহসী স্বপ্ন দেখতে জানে। এরাই দেশ, জাতি ও মানবতার জন্য যুগে যুগে এগিয়ে এসেছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দাঁড়িয়েছে সমস্ত বিপদ মোকাবেলায়। প্রাণ দিয়েছে অজানাকে জানবার জন্য, প্রাণ দিয়েছে দেশ ও জনগণের মুক্তি ও কল্যাণের সংগ্রামে। সুতরাং, অনুচ্ছেদের দুর্বল নিরীহ বাঙালি এবং কবিতার বিরাট দুঃসাহসেরা সম্পূর্ণ বিপরীত অর্থ প্রকাশ করে।

 বাঙালি জাতি যেমন দুর্বল ও নিরীহ, তেমনি তাদের ক্রিয়াকলাপও সহজসরল। অপরদিকে আঠারো বছর বয়সের তরুণেরা সকল জরাজীর্ণতাকে অতিক্রম করে দুর্বার গতিতে পথ চলে। প্রগতি ও অগ্রগতির পথে নিরন্তর ধাবমানতাই এ বয়সের বৈশিষ্ট্য।
 অনুচ্ছেদে বাঙালির নরম, কোমল, ভীরু, দুর্বল রূপটিকে ব্যঙ্গ করা হয়েছে। পক্ষান্তরে ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় তরুণ সমাজের কঠিন, কঠোর, সাহসী, শক্তিধর রূপের বর্ণনা করা হয়েছে। আঠারো বছর বয়স বহু ইতিবাচক বৈশিষ্ট্যে চিহ্নিত। তাঁরা জড় নিশ্চল প্রথাবদ্ধ জীবনকে পিছনে ফেলে নতুন জীবন রচনার স্বপ্ন দেখে। দেশ, জাতি ও মানবতার জন্য যুগে যুগে এ বয়সের মানুষই এগিয়ে আসে। তাঁরা ঝুঁকি নিয়ে জীবনের সমস্ত বিপদ মোকাবেলা করে। প্রাণ দেয় অজানাকে জানার জন্য।
 অনুচ্ছেদে বাঙালি জাতিকে কুসুমের সৌকুমার্য, যূথিকার সৌরভ ইত্যাদি উপমায় ব্যাখ্যা করা হয়েছে। কিন্তু কবি ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় তারুণ্যের জয়গান করেছেন। কবির মতে, এ বয়সের ধর্মই হলো আত্মত্যাগের মহান মন্ত্রে উজ্জীবিত হওয়া, আঘাত-সংঘাতের মধ্যে রক্তশপথ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়া। পাশাপাশি সমাজজীবনের নানা অবিচার, অসুস্থতা ও সর্বনাশের বিরুদ্ধে এ বয়স আবার হয়ে উঠতে পারে ভয়ংকর। বিকৃতি ও বিপর্যয়ের অজস্র আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত ও নিঃশেষিত হতে পারে সহস্র প্রাণ।
 অদম্য এ বয়সের আছে সমস্ত দুর্যোগ আর দুর্বিপাক মোকাবেলা করার অদম্য প্রাণশক্তি। ফলে তারুণ্য ও যৌবনশক্তি দুর্বার বেগে এগিয়ে যায় প্রগতির পথে, যা অনুচ্ছেদের সম্পূর্ণ বিপরীত ভাবকে নির্দেশ করে। কবির ভাষায়Ñ
“এ বয়স যেনো ভীরু, কাপুরুষ নয়
পথ চলতে এ বয়স যায় না থেমে।”
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
বল বীরÑ
বল উন্নত মম শির!
শির নেহারি আমারি নতশির ওই শিখর হিমাদ্রির।
..........................................................
আমি চিরদুর্দম, দুর্বিনীত, নৃশংস,
মহাপ্রলয়ের আমি নটরাজ, আমি সাইক্লোন, আমি ধ্বংস।
আমি মহাভয়, আমি অভিশাপ পৃথ্বির,
আমি দুর্বার,
আমি ভেঙে করি সব চুরমার!
ক. ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতাটির প্রকাশকাল কত?
খ. আঠারো বছর বয়স মাথা নোয়াবার নয় কেন?
গ. অনুচ্ছেদের ‘দুর্বিনীত’ এবং কবিতার ‘দুঃসাহস’ শব্দ দুটি দিয়ে কী বোঝানো হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার ভাববস্তু অনুচ্ছেদে প্রতিফলিত। Ñব্যাখ্যা কর। ১



৮ নং প্রশ্নের উত্তর

 ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতাটি ১৯৪৮ সালে প্রকাশিত হয়।

 আঠারো বছর বয়সে তরুণেরা ঝুঁকি নেয় স্বাধীনভাবে মাথা উঁচু করে বাঁচার। তাই আঠারো বছর বয়স মাথা নোয়াবার নয়।
 আঠারোর উদ্দামতায় ঋদ্ধ যুবকরা কখনো মাথা নত করে না। কারণ, এ বয়সে সে হয়ে ওঠে আত্মপ্রত্যয়ী। সে পথ চলে দুর্বার গতিতে। তাঁরা জড়-নিশ্চল প্রথাবদ্ধ জীবনকে পেছনে ফেলে নতুন জীবন রচনার স্বপ্ন দেখে। তাঁরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সমস্ত বাধা-বিপত্তি মোকাবেলা করে। সংকটকে উপড়ে ফেলে, সমস্যার পাহাড়কে তুচ্ছ ভেবে তরুণরা পা বাড়ায় সামনে। উদ্ধত ও দুর্বিনীত সত্যে তাঁরা মাথা উঁচু করে দাঁড়ায়। তাই আঠারো বছর বয়স মাথা নোয়াবার নয়।

 অনুচ্ছেদে ‘দুর্বিনীত’ অর্থ যে বিনীত নয় অর্থাৎ যে মাথা নোয়াবার নয়। আর কবিতার ‘দুঃসাহস’ বলতে তরুণদের অত্যধিক সাহস বা অন্যায় সাহসকে বোঝানো হয়েছে।
 অনুচ্ছেদে ‘দুর্বিনীত’ বলতে কোনো এক বীরের বিনীত না হওয়াকে বুঝিয়েছেন। আর ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় কবি ‘দুঃসাহস’ বলতে তরুণদের কারো কাছে মাথা নত না করে সাহসের সাথে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়াকে বুঝিয়েছেন। এ বয়সে থাকে ঝঞ্ঝার গতিবেগ। শপথের মাধ্যমে এ বয়স অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে দুঃসাহস নিয়ে।
 অনুচ্ছেদে কবি বিদ্রোহী কোনো বীরের বর্ণনা করেছেন। অন্যদিকে ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায়ও তরুণের বিদ্রোহী দুঃসাহসী রূপ অভিব্যক্তি পেয়েছে। এ বয়সে নানা দুঃসাহসী স্বপ্ন, কল্পনা ও উদ্যোগ তরুণদের মনকে ঘিরে ধরে। দুর্বিনীত যৌবনে পদার্পণ করে বলে এ বয়সে মানুষ আত্মপ্রত্যয়ী হয়। জীবনের মুখোমুখি দাঁড়ায় স্বাধীনভাবে। চারপাশের অন্যায়, অত্যাচার, শোষণ, পীড়ন, সামাজিক বৈষম্য ও ভেদাভেদ দেখে প্রাণবন্ত তরুণেরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। আর তাই দেশ, জাতি ও মানবতার জন্য যুগে যুগে এ বয়সের মানুষই এগিয়ে আসে সবচেয়ে বেশি। তাই কবি বলেছেনÑ
“এ বয়স জানে রক্তদানের পুণ্য
বাষ্পের বেগে স্টিমারের মতো চলে,
প্রাণ দেওয়া-নেওয়া ঝুলিটা থাকে না শূন্য
সঁপে আত্মাকে শপথের কোলাহলে।”

 অনুচ্ছেদে কবি কোনো এক বীরের বীরত্বপূর্ণ পথ চলা নির্দেশ করেছেন। ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় কবি উদ্দামতা ঋদ্ধ তরুণদের দুঃসাহসের সাথে পথ চলাকে নির্দেশ করেছেন।
 ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতাটিতে কবি তারুণ্যের অনেকগুলো ইতিবাচক বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেছেন। এ বয়সে মানুষ হয়ে ওঠে দুঃসাহসী ও দুর্বিনীত। এ বয়স মানুষকে সকল অন্যায়, অত্যাচার, শোষণ, পীড়ন ও সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী করে তোলা। এ বয়সে তরুণেরা আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে সমস্ত ভয়কে জয় করে। তারা জড় নিশ্চল ও প্রথাবদ্ধ জীবনকে পিছনে ফেলে নতুন জীবন রচনা করে।
 অনুচ্ছেদে কোনো এক বীরের দুঃসাহসিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন ঘটেছে। সে প্রচণ্ড সাহসিকতার সাথে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। কোনো বাধাকেই সে বাধা মনে করে না। পাহাড়সম অন্যায়-অত্যাচারের কাছেও সে মাথা নত করে না, মহাপ্রলয়ের সময়ও সে নটরাজ সাইক্লোনের মতো সমস্ত অন্যায়-অত্যাচারকে ধ্বংস করে দেয়। ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায়ও কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য তারুণ্যের জয়গান গেয়েছেন। তার মতে, নিঃসঙ্কোচ আত্মপ্রকাশই তারুণ্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য। তাই শত প্রতিক‚লতার মধ্যে আঠারো বছর বয়সের তরুণেরা মাথা নত করে না। এবং এ সময় পাথর সমান বাধা তারা পদাঘাতে ভেঙে চুরমার করে দেয়।
 ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় কবি বয়ঃসন্ধিকালের বৈশিষ্ট্যকে তুলে ধরেছেন; জয়গান করেছেন তারুণ্যের। কৈশোর থেকে যৌবনে পদার্পণের এ বয়সটি উত্তেজনার, প্রবল আবেগ ও উচ্ছ¡াসে জীবনের ঝুঁকি নেবার সময়। এ বয়স অদম্য দুঃসাহসে সকল বাধা-অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার। এ বয়সের ধর্মই হলো আত্মত্যাগের মহান মন্ত্রে উজ্জীবিত হওয়া, আঘাত-সংঘাতের মধ্যে রক্তশপথ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়া। অদম্য এ বয়সে আছে সমস্ত দুর্যোগ আর দুর্বিপাক মোকাবেলা করার অদম্য প্রাণশক্তি। ফলে তারুণ্য ও যৌবনশক্তি দুর্বার বেগে এগিয়ে যায় প্রগতির পথে।
অনুচ্ছেদটিতেও তারুণ্যের এই দীপ্ত-শক্তির প্রকাশ ঘটেছে। তাইতো কবি বলেছেনÑ
“আমি দুর্বার
আমি ভেঙে করি সব চুরমার।”

নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
যৌবনে মানুষের সমস্ত ইন্দ্রিয় সজাগ ও সবল হয়ে ওঠে এবং সৃষ্টির মূলে যে প্রেরণা আছে মানুষ সেই প্রেরণা তার সকল অঙ্গে সকল মনে অনুভব করে। দেহ ও মনের অবিচ্ছেদ্য সম্বন্ধের ওপর মানবজীবন প্রতিষ্ঠিত হলেও দেহমনের পার্থক্যের ওপরেই আমাদের চিন্তারাজ্য প্রতিষ্ঠিত। দেহের যৌবনের সঙ্গে মনের যৌবনের একটা যোগাযোগ থাকলেও দৈহিক যৌবন ও মানসিক যৌবন স্বতন্ত্র। এই মানসিক যৌবন লাভ করতে পারলেই আমরা তা সমাজে প্রতিষ্ঠা করতে পারব।
ক. ‘ঝড়’ শব্দটির ব্যুৎপত্তি নির্দেশ কর।
খ. “পথ চলতে এ বয়স যায় না থেমে” Ñলাইনটি দিয়ে ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় কী বোঝানো হয়েছে?
গ. অনুচ্ছেদে ‘সৃষ্টির মূলে প্রেরণা’ আর কবিতার ‘এ বয়স তবু নতুন কিছু তো করে’ এই দুইয়ের মাঝে সম্পর্ক নির্দেশ কর।
ঘ. ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় দেহের যৌবন, না মনের যৌবনের কথা বলা হয়েছে? অনুচ্ছেদ ও ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার আলোকে ব্যাখ্যা কর । ১



৯ নং প্রশ্নের উত্তর

 ‘ঝড়’ শব্দটি এসেছে ‘ঝঞ্ঝা’ থেকে। ঝড় < ঝঞ্ঝা।

 “পথ চলতে এ বয়স যায় না থেমে” Ñলাইনটি দিয়ে কবি মূলত অসীম দুঃসাহসের সাথে তরুণের পথ চলাকে নির্দেশ করেছেন। এ বয়সে তারা সকল প্রতিক‚লতা অতিক্রম করে এগিয়ে চলে সামনের দিকে।
 আঠারো বছর বয়স চলার পথে থেমে যায় না, দেহ ও মনের স্থবিরতা, নিশ্চলতা ও জরাজীর্ণতাকে অতিক্রম করে দুর্বার গতিতে পথ চলে। প্রগতি ও অগ্রগতির পথে নিরন্তর ধাবমানতাই এ বয়সের বৈশিষ্ট্য। এ বয়স দৈহিক ও মানসিক দিক দিয়ে অফুরন্ত প্রাণ শক্তির অধিকারী। তাই শত বাধা, বিপত্তি তাদের চলার পথকে রুদ্ধ করতে পারে না।

 কোনো কিছুর সৃষ্টির মূলে রয়েছে প্রেরণা। আর এই প্রেরণার উৎস হচ্ছে তারুণ্য। আঠারো বছর বয়সে মানুষ তারুণ্য শক্তির অধিকারী হয়ে ওঠে। ফলে এ সময়ই তারা নতুন নতুন আবিষ্কারে মেতে ওঠে।
 সৃষ্টি সব সময়ই নতুনত্বের প্রতীক, তারুণ্যের প্রতীক। যিনি সৃষ্টিশীল, তিনি চির-তরুণ। ভীরু, দুর্বল, সংকীর্ণমনারা কখনো সৃষ্টি নামক উজ্জ্বল পাতায় নাম লেখাতে পারে না। অনুচ্ছেদেও সে কথাই বলা হয়েছে। যৌবনে মানুষের সৃষ্টিশীল সত্তাটি জেগে ওঠে।
 ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতাতেও যৌবনের সম্ভাবনার দিকটি ব্যাখ্যা করা হয়েছে। তরুণ বয়স কোনো বাধা মানে না, অকুতোভয় এ বয়সটি সমস্ত প্রতিক‚লতা, প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে সাফল্যের পথে এগিয়ে যায়। পৃথিবী, সমাজ, রাষ্ট্রকে কল্যাণকর নতুন সৃষ্টি উপহার দেয়। তারুণ্য স্বপ্ন দেখে নতুন জীবনের, নব নব অগ্রগতি সাধনের। তাই সেইসব স্বপ্ন
বাস্তবায়নে, নিত্য নতুন কাজ সম্পাদনের জন্য নতুন শপথে বলীয়ান হয়ে সে এগিয়ে যায় দৃঢ় পদক্ষেপে। কবির ভাষায়Ñ
“বিপদের মুখে এ বয়স অগ্রণী
এ বয়স তবু নতুন কিছু তো করে।”

 ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় কবি মনের যৌবন নয়, দেহের যৌবনের কথাই ব্যক্ত করেছেন।
 ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় কবি নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে বয়ঃসন্ধিকালের বৈশিষ্ট্যকে তুলে ধরেছেন। কৈশোর থেকে যৌবনে পদার্পণের এ বয়সটি উত্তেজনার প্রবল আবেগ ও উচ্ছ¡াসে জীবনের ঝুঁকি নেবার সময়। এ বয়সের ধর্মই হলো আত্মত্যাগের মহান মন্ত্রে উজ্জীবিত হওয়া, আঘাত-সংঘাতের মধ্যে রক্ত-শপথ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়া।
 অনুচ্ছেদে লেখক বলেছেনÑ “দেহের যৌবনের সাথে মনের যৌবনের একটা যোগাযোগ থাকলেও দৈহিক যৌবন ও মানসিক যৌবন স্বতন্ত্র।” তার মতে মানসিক যৌবনের কোনো বয়স নাই। এটা যেকোনো বয়সে অর্জন করা যায় এবং এটা অর্জন করতে পারলে তখন দৈহিক যৌবনের মতোই নতুন নতুন আবিষ্কারে মেতে ওঠে মন। কিন্তু কিশোর কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য তাঁর ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় দৈহিক যৌবনের কথা ব্যক্ত করেছেন। তার মতে, এ বয়সের আছে সমস্ত দুর্যোগ আর দুর্বিপাক মোকাবেলা করার অদম্য শক্তি। ফলে তারুণ্য আর যৌবন-শক্তি এগিয়ে যায় প্রগতির পথে।
 দেহের যৌবনের সাথে মনের যৌবনের একটি সম্পর্ক রয়েছে। ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় কবি দেহের যৌবন অর্থাৎ আঠারো বছর বয়সের বৈশিষ্ট্যকে তুলে ধরেছেন। এ বয়সের ইতিবাচক, নেতিবাচক উভয় দিকই রয়েছে। কিন্তু কবির প্রত্যাশা ইতিবাচক। এ বয়স দেহ ও মনের স্থবিরতা, নিশ্চলতা, জরা-জীর্ণতাকে অতিক্রম করে দুর্বার গতিতে পথ চলে। প্রগতি ও অগ্রগতির পথে নিরন্তর ধাবমানতাই এ বয়সের বৈশিষ্ট্য, যা মানসিক যৌবনকেই নির্দেশ করে। জড় নিশ্চল প্রথাবদ্ধ জীবনকে পেছনে ফেলে নতুন জীবন রচনার স্বপ্ন দেখে। কল্যাণ, সেবাব্রত, উদ্দীপনা, সাহসিকতা, চলার দুর্বার গতি Ñএসবই দৈহিক যৌবনের বৈশিষ্ট্য। কবির তাই প্রার্থনাÑ
“এ দেশের বুকে আঠারো আসুক নেমে।”
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
হিমেল আঠারো বছরের এক দুর্দান্ত যুবক, সে সবেমাত্র কলেজে ভর্তি হয়েছে। নিজের মধ্যে সে কিছু পরিবর্তন লক্ষ করছে। ইদানিং তার মন অত্যন্ত অস্থির থাকে। সে কারও কথা মানতে চায় না। তার বাবাÑমা না চাওয়া সত্তে¡ও সে এখনই নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায়। তার বাবা চায় সে আর কিছুদিন পর তার ব্যবসা দেখুক। কিন্তু হিমেল তার বাবার কথা মানতে নারাজ। তাই প্রায়ই সে তার বাবার সাথে এ বিষয় নিয়ে দ্বিমত পোষণ করে। সে বাবার কাছ থেকে টাকা না নিয়ে নিজে আয় করতে চায়।
ক. দৈনিক পত্রিকা ‘স্বাধীনতা’র কিশোর সভা অংশের প্রতিষ্ঠাতা কে ছিলেন?
খ. এ বয়স তবু নতুন কিছু তো করে। কোন বয়স এবং কী করে?
গ. উদ্দীপকের হিমেল নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য দৃঢ় প্রত্যয়ী কেন? ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার আলোকে বিশ্লেষণ কর।
ঘ. উদ্দীপকে হিমেলের আত্মনির্ভরশীল হওয়ার যে ইঙ্গিত পরিলক্ষিত হয় তার স্বরূপ ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার আলোকে বিশ্লেষণ কর। ১



১০ নং প্রশ্নের উত্তর

দৈনিক পত্রিকা ‘স্বাধীনতা’র কিশোর সভা অংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য।

তারুণ্যের একটা স্বভাবগত বৈশিষ্ট্য হলোÑ তারা আপনার তালে মুক্ত জীবনানন্দে ছুটে বেড়ায়। পৃথিবীকে নতুন ছাঁচে ঢেলে সাজানোর জন্য জাতিÑধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই কুসংস্কারাচ্ছন্ন পৃথিবীর মিথ্যাকে, অসত্যকে পেছনে ঠেলে নব উদ্যমে উদ্বুদ্ধ হয় সত্যের সন্ধানে। কারণ একমাত্র তারুণ্যই পারে সমাজের গতানুগতিকতায় পরিবর্তন আনতে। তারা পারে বিশ্বসৃষ্টিকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করতে। সর্বোপরি, মুক্ত মানসিকতার স্বাক্ষর রাখতে। জীবনের গতিধারায় তরঙ্গসংকুল পথ পরিক্রমায় তারুণ্যই বীর বিক্রমে প্রথম এগিয়ে আসে। বিপদের মুখে এ বয়সই পালন করে অগ্রণী ভ‚মিকা। ত্যাগ ও মহিমার দ্বারা এ পৃথিবীকে মধুময় করে তোলা এ বয়সের পক্ষেই সম্ভব।

দীর্ঘদিনের পরনির্ভরশীলতার বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে এসে আত্মনির্ভশীলতার আলোয় নিজেকে আলোকিত করতে হিমেল দৃঢ় প্রত্যয়ী। কোনো তরুণই নিজেকে পরনির্ভরশীলতার বন্ধনে আবদ্ধ রাখতে চায় না। এটি তার স্বাধীনচেতা মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ। সুকান্ত ভট্টাচার্য তাঁর ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় খুব সুন্দরভাবে তরুণদের দুর্বিনীত এ বৈশিষ্ট্যটি উপস্থাপন করেছেন। এ সময় তরুণেরা আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে স্বাধীনভাবে জীবনের মুখোমুখি দাঁড়াতে চায়। শৈশব কৈশোরের পরনির্ভরতার অসহায় ক্রন্দন মুছে ফেলতে উদ্যোগী হয়। যার নিশ্চিত প্রতিফলন আমরা উদ্দীপকের হিমেলের মধ্যে দেখতে পাই। অন্যান্য তরুণদের মতোই সে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার অদম্য ইচ্ছা পোষণ করে। সে নিজে অর্থ উপার্জন করতে চায়। তারুণ্যের এ সময় হিমেল তার জীবনকে নিজের কষ্টের উপার্জন দিয়ে অতিবাহিত করার জন্য দৃঢ়প্রত্যয়ী। তার মধ্যে যৌবনের প্রাণশক্তি ও সাহসিকতার প্রতিফলন দেখা যায়, সে মাথা উচু করে বাঁচার আগ্রহ প্রকাশ করে। আর এ আগ্রহ প্রকাশের মূলমন্ত্র সে পায় তার বয়স থেকে কেননা আঠারো বছর অত্যন্ত দুর্দান্ত সময়। শৈশব থেকে কৈশোর পর্যন্ত তরুণদের মধ্যে কর্মক্ষম হওয়ার যোগ্যতা, স্পৃহা, সুযোগ কোনোটাই থাকে না। কিন্তু যখন সে জীবনের কয়েকটি ধাপ পেরিয়ে যৌবনের সিঁড়িতে আরোহণ করে তখন সে বিবেকের তাড়া অনুভব করে। তার মধ্যে কর্মক্ষম হওয়ার ইচ্ছা জাগে। অনুরূপ ইচ্ছা হিমেলের মধ্যেও জাগতে দেখা যায়। অন্যান্য তরুণদের মতো সেও তারুণ্যের স্বভাবসুলভ বৈশিষ্ট্য হৃদয়ে ধারণ করে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার জন্য সচেষ্ট হয়ে ওঠে। তাই সে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায়।

উদ্দীপকের হিমেলের আত্মনির্ভর হওয়ার যে ইঙ্গিত পরিলক্ষিত হয় তা তার তারুণ্যের স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য তথা আত্মা-প্রত্যয়ী হয়ে স্বাধীনভাবে জীবনের মুখোমুখি দাঁড়ানোর অভিপ্রায়েরই পরিণতি। কারণ সে আঠোরো বছর বয়সের কলেজ পড়–য়া এক দুরন্ত যুবক। সে সাহসী, আত্মপ্রত্যয়ী, দুর্বিনীত ও উদ্দমÑউচ্ছ¡ল এক তরুণ। সে তার নিজের জীবনকে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে গড়ে তুলতে চায়। হিমেল কর্মক্ষম হতে চায় তার নিজের জন্য, তার পরিবারের জন্য। তাই হিমেলের মতো তুরুণমনের এ ব্যাকুলতাকে কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য তাঁর ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় ‘স্পর্ধায় নেয় মাথা তোলবার ঝুঁকি’ চরণটি দ্বারা প্রকাশ করেছেন। এ বয়সেই তরুণরা অন্যের ওপর নির্ভরশীলতা পরিহার করে মাথা উঁচু করে স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার ঝুঁকি গ্রহণ করে। তরুণেরা স্বপ্ন দেখে নতুন জীবনের, নব নব অগ্রগতি সাধনের। তাই সেসব স্বপ্ন বাস্তবায়নে নিত্যÑনতুন কর্তব্য সম্পাদনের জন্য নব নব শপথে বলীয়ান হয়ে তারা এগিয়ে যায় সামনে। তেজোদীপ্ত দুঃসাহসে ভরা আঠারো বছর বয়সে হিমেলও দুর্বিনীত যৌবনে পর্দাপণ করে আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে ওঠেছে। সে কারও উপর আত্মনির্ভরশীল হতে রাজি নয়। শৈশব থেকে কৈশোর পর্যন্ত সে কর্মক্ষম হওয়ার যোগ্যতা অর্জন না করলেও এখন সে নিজেকে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার মতো যোগ্য মনে করে। সে আর তার বাবার আয় করা অর্থে নিজেকে পরিপুষ্ট করতে চায় না। সে জানে আত্মনির্ভরশীল হওয়া এত সহজ নয়। এজন্য তাকে নানা প্রতিক‚লকতার সম্মুখীন হতে হবে। কিন্তু তার মধ্যে এখন তারুণ্যের উদ্দীপনা, দেহ ও মনে দুরন্তপনা আছে। তাই সে সব বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে সামনে অগ্রসর হতে দৃঢ়প্রত্যয়ী। আত্মনির্ভরশীল হওয়ার যে সুখ তা হিমেল আস্বাদন করতে চায়। তার বিবেক তাকে তাড়া দেয় সামনে এগিয়ে যেতে। বাধা-বিপত্তি থাকবেই কিন্তু তার জন্য হাত পা গুটিয়ে বসে থাকতে হিমেল রাজি নয়। সে শত বিপর্যয় ডিঙিয়ে নিজেকে একজন কর্মক্ষম ব্যক্তিতে পরিণত করতে চায়। সে চায় আত্মনির্ভরশীল হয়ে মাথা উঁচু করে বাঁচতে। এভাবে হিমেল কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য রচিত ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় বর্ণিত তারুণ্যের বৈশিষ্ট্যকে নিজের মধ্যে প্রতিফলন ঘটাতে চায়।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
ঝাঁকড়া চুলের নজরুল স্যারকে সবাই যৌবনের অনুপম অভিযাত্রী বলে অভিহিত করেন। শিক্ষক লাউঞ্জে বসে কথা হয় তার সাথে। দৃপ্ত কণ্ঠে বললেন- যৌবন বা তারুণ্যের সময়টা জীবনের স্বর্ণসময়। ভীরুতা বা কাপুরুষতা এ সময়ে থাকে না মানুষের। উদ্দাম এর গতিÑসত্য ও সুন্দরের পক্ষে। চলার পথে থেমে যায় না এর বিজয়পথ। তরুণেরা তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে থাকে নিঃসংশয়। অতঃপর নিশ্চুপ নজরুল স্যার। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেনÑযৌবনের এই ধর্ম, তারুণ্যের এই গতি যদি থাকতো আমাদের এই দেশের সর্বত্র তাহলে বেশ হতো।
ক. আঠারো বছর বয়স বাঁচে কোন শক্তির সাথে মোকাবেলা করে?
খ. বিপদের মুখে এ বয়স অগ্রণীÑএ কথার অর্থ কী?
গ. উদ্দীপক অবলম্বনে তরুণ বয়সের রেখাচিত্র অঙ্কন কর।
ঘ. দেশের জন্য তারুণ্য আজ বড্ড বেশি প্রয়োজনÑএই মন্তব্যটির যথার্থতা বিচার কর। ১




১১ নং প্রশ্নের উত্তর

আঠারো বছর বয়স বাঁচে দুর্যোগে আর ঝড়ের সাথে মোকাবেলা করে।

জীর্ণ, পুরাতন, অনগ্রসর, অনালোকিত যা কিছুÑসবকিছুকে অপসারণ করে নতুনকে স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত করা তরুণের কাজ। এ কাজ করতে যেয়ে নানামুখী সমস্যা মোকাবেলা করতে হয় তাকে। নানা মন্দশক্তি এসে বাধা সৃষ্টি করে তাদের। অপশক্তি চায় তাদের অপপ্রয়াস অব্যাহত রাখতে। সেখানে বাধা সৃষ্টি করে শুভ, কল্যাণ, সত্য ও সুন্দরের পূজারী তরুণ। ফলে অসুন্দরের পৃষ্ঠপোষকের সাথে সুন্দরের প্রতিপালকের সংঘাত লাগে। সৃষ্টি হয় বিপদের পরিস্থিতি। প্রাণ-প্রাচুর্যে ভরপুর তরুণ, অসম সাহসী, দৃপ্ত পদক্ষেপে অসুন্দর অপসারণের জন্য অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। এইজন্য বলা হয়েছে- বিপদের মুখে এ বয়স অগ্রণী।

প্রদত্ত উদ্দীপকে নজরুল স্যারের মিতভাষণে তরুণ বয়সের বৈশিষ্ট্য উঠে এসেছে। কৈশোরের সীমা পার হলেই যে বয়সটা পায় মানুষ, সেটা তারুণ্য। কৈশোরে একজন মানুষ যে সম্পদ পায়Ñদেহ ও মনে, তার পবিত্র আমেজটুকু তরুণ বয়সেও বিদ্যমান থাকে। কৈশোরের নিয়ন্ত্রিত আবেগ তারুণ্যে এসে হয় বাধা বন্ধনহীন। প্রাণাবেগে তারুণ্য এগিয়ে যায় সামনের দিকে। প্রচণ্ড তার গতি, অপরিমেয় তার শক্তি। প্রখর তার দীপ্তি, প্রচণ্ড তার আবেগ। এ সময়টা জীবনের স্বর্গসময়। এ সময়ের সোনার ফসলের সুফল সারাজীবন ধরে ভোগ করে মানুষ। সারাজীবনের বাকি দিনগুলো পৌরুষ সহকারে চলতে গেলে যে প্রাণশক্তি প্রয়োজন হয় তার মূল নিহিত তারুণ্যে। এ বয়সে ভীরুতা বা কাপুরুষতা ভর করে না মন ও মননে, চেতনা ও চৈতন্যে। সাহসিকতার পুরস্কারস্বরূপ প্রশংসিত হয় বলে ভীরুতা ঠাঁই পায় না তাদের মনে। তারুণ্য কল্যাণকামী বলে তাদের পক্ষপাত সত্য ও সুন্দরের প্রতি। কোন প্রতিবন্ধকতা স্তব্ধ করে দিতে পারে না তরুণের চলার পথ। লক্ষ্য যেহেতু মহৎ, লক্ষ্য অর্জনের উপায়ও মহৎ; সুতরাং মলিনতা থাকে না চলার পথে। মহৎ কোনো উদ্দেশ্যের ফল কখনো অসুন্দর হতে পারে না। এত আত্মবিশ্বাস তাদের থাকে এজন্য লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য, প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি সম্পর্কে নিঃসংশয় তরুণেরা। এ রকম তারুণ্য জাতিসত্তার ভরসার স্থলÑ। দেশের জন্য এ রকম তারুণ্যই দরকার।

কিশোর কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য যখন ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতাটি রচনা করেন তখন ভারতবর্ষ পরাধীন। এত বড় একটা উপমহাদেশ। অথচ তাকে শাসন, শোষণ করছে বিদেশি বেনিয়া কয়েকজন তস্কর। পরাধীনতার এই বেদনা সহ্য করতে পারেননি রাজনৈতিক কবি সুকান্ত। এজন্য প্রত্যাশা করতেন এমন কিছু সেনানীর যারা পারবে দেশের জন্য আত্মোৎসর্গ করতে। রক্ত দানের পুণ্য প্রত্যাশী যে তরুণ, সে রকম ত্যাগী তরুণের প্রত্যাশা করেছেন কবি। যারা অসম সাহসিকতায় মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে, প্রাণ প্রাচুর্যে যারা ধনী, যারা কোন মন্দশক্তির কাছে মাথা নোয়ায় না, পথের বাধা যারা অনায়াসে পার হয়ে যায়Ñদুঃসময়ে যারা চোখের জল ফেলে নাÑ তারাই প্রত্যাশিত দেশের জন্য। তরুণ, প্রাণের স্বাভাবিক আবেগে শপথ দীপ্ত হয়, সত্য ও সুন্দরের জন্য আত্মবলি দেয়। এরকম তরুণ দেশের জন্য খুব বেশি দরকার। যারা অন্যতম এক সুন্দরÑএক অনন্য সত্য। দেশের জন্য তরুণরাই পারে আত্মোৎসর্গের মহিমায় ঋদ্ধ হয়ে কিছু করতে। কিছু নেতিবাচক দিক আছে তারুণ্যের। তবু একথাটা তো ঠিকÑতারুণ্য তবু নতুন কিছু করে। এই কিছু অন্তত করার জন্য দেশে এমন তরুণকে চায়। সুকান্তের সময় পার হয়েছে। অনেক তরুণের আত্মত্যাগের বিনিময়ে ভারতবর্ষ তথা বাংলাদেশ স্বাধীন। এখন আবার তরুণদের প্রত্যাশা করে বাংলাদেশ। চারদিকে অন্ধকার, অন্যায়, অসত্য, দুর্নীতির কালো থাবা। দেশের ভাবমূর্তি আজ বিপন্ন। দেশের চিরচেনা ঐতিহ্য বিলুপ্তির পথ ধরেছে। নানাবিধ সঙ্কীর্ণতা আজো বাংলাদেশের অলিন্দ নিলয়ে। এইসব ক্ষত দূর করার জন্যÑসত্য সুন্দরের প্রতিষ্ঠার জন্য দরকার ত্যাগ, দরকার শ্রম। দরকার মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা। সবার উপরে দরকার দেশপ্রেম। এসবের জন্য তরুণের দরকার আজ সবচেয়ে বেশি। কিছু তরুণ বিপথগামী, পথভ্রষ্ট। তাদেরকেও স্বাভাবিক জগতে ফিরিয়ে এনে দেশের জন্য উপযুক্ত করে তোলা দরকার। এজন্য দরকার তারুণ্যের জোর।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
আমাদের পাড়ায় একটা ক্লাব গড়ে উঠেছে। নাম ‘আমরা করব জয়’। আমার মেয়েটি ওর সদস্য। ভয় হচ্ছিল যেদিন ও ঐ ক্লাবের সদস্য হতে গিয়েছিল। আমাদের দেশের মেয়েরা এখনো সাহসিনী হতে পারেনি। কি জানি, পদস্খলন ঘটে যদিÑ। ক’দিন পরে বুঝলাম মেয়ে আমার ঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ওর সামনে চলার পথে যে বাধা আসবে তা ওকেই সরাতে হবে। ওর ভেতরে সত্যের যে তেজ দেখেছি, তাতে বুঝেছিÑমিথ্যার কাছে সে মাথা নোয়াবে না। দুঃখে সে কাঁদবে না। কান্নাকে জয় করার গৌরবদীপ্ত শপথ দেখেছি ওর অভিব্যক্তিতে। ব্রাভো!
ক. আঠারো বছর বয়স কবিতার উৎস কি?
খ. আঠারো বছর বয়স দুঃসহ কেন?
গ. আঠারো বছর বয়স এবং প্রদত্ত উদ্দীপক অবলম্বনে তারুণ্যের কাছে প্রত্যাশা সম্পর্কে আলোচনা কর।
ঘ. তারুণ্যের অবস্থান যে কোন সীমাবদ্ধতার ঊর্ধ্বে-উদ্দীপকের এই বক্তব্যটি যথার্থতা মনে কর কী? তোমার মতামত পেশ কর। ১



১২ নং প্রশ্নের উত্তর

১৯৪৮ সালে প্রকাশিত ‘ছাড়পত্র’ কাব্যগ্রন্থের কবিতা ‘আঠারো বছর বয়স।’

আঠারো বছর বয়স মানব জীবনের এক উত্তরকালীন পর্যায়। কৈশোর থেকে যৌবনে পদার্পণ করে মানুষ। অন্যের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি নিতে হয় তাকে। এদিক থেকে তাকে এক কঠিন সময়ের দুঃসহ অবস্থায় পড়তে হয়। এ বয়সেই উদ্দামতার এক দুঃসাহসী স্বপ্ন, কল্পনা ও উদ্যোগ তরুণদের মনকে ঘিরে রাখে। মাথা উঁচু করে স্বাধীনভাবে চলার ঝুঁকি এ বয়সেই নিয়ে থাকে মানুষ। তাই কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য ‘আঠারো বছর বয়স’কে দুঃসহ বলেছেন।

তারুণ্যের কাছে প্রত্যাশা অনেক। যাঁরা বৃদ্ধ, তারা সংস্কার আর শতাব্দী প্রাচীন ধ্যান-ধারণার কাছে দায়বদ্ধ। নতুনের আহŸানে কল্যাণকর কোনো কিছুর জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করে সামনে এগিয়ে যেতে পারে না বৃদ্ধ বা প্রবীণেরা। তরুণদেরই প্রয়োজন পড়ে দুঃসাধ্যকে সহজসাধ্য করতে। তারাই সৃষ্টির মূল হাতিয়ার- অগ্রগতির মূল নিয়ামক। দেশ জাতির অগ্রসরতায় তাদেরকে এগিয়ে আসতে হয় নির্ভীক চিত্তে। সেক্ষেত্রে তাকে উঠতে হয় ব্যক্তিগত সীমাবদ্ধতা বা হীনমন্যতার ঊর্ধ্বে। মানবতার এগিয়ে যাওয়ার পথে অনেক বাধা আসে। সমাজের দুর্বল অপোগণ্ড মানুষ যারা, তারা তাদের সামনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী শক্তিসমূহের মোকাবেলায় অক্ষম। সেক্ষেত্রে তারুণ্যের কাছে প্রত্যাশা মানবতার সামনে দণ্ডায়মান অপশক্তিগুলোকে যেন তারা প্রতিহত করে। যে পথের পাথর বাধা মানুষের চলার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। সে বাধা অপসারণে তরুণদের সাহস বড্ড বেশি প্রয়োজন। কখনো কোনো ভ্রান্ত মতাদর্শ, কোন অন্ধকার, ভুল দর্শন তাদেরকে পথভ্রষ্ট করবে। কোন জান্তব অপশক্তি তাদেরকে পদানত করে রাখতে চাইবে। আত্মসমর্পণ করতে বলবে অসত্যের কাছে। এভাবে সে শক্তি কায়েম করতে চাইবে অন্ধকারের রাজত্ব। এসব থেকে পরিত্রাণ পেতে দরকার অমিত শক্তি। সে শক্তি আছে তরুণের বাহুতে। এজন্য তাদের কাছে মানবতার প্রত্যাশা তারা যেন কোনো অন্ধকারের কাছে আত্মসমর্পণ না করে। তারা কাঁদবে না। কারণ কান্না মানে পরাজয়। তাদের পরাজয় চায় না মানুষ। তারা স্খলিত আদর্শের হোক, কোন সীমায় সীমাবদ্ধ হোক, মিথ্যার সাথে মন্দের সাথে আপোস করুকÑএটা কখনো প্রত্যাশিত নয়। তারা সত্য ও সুন্দরের স্বপ্ন দেখাবে, প্রগতি ও প্রাণের উৎসব করবে, শক্তি ও সাহসের সদ্ব্যবহার করবে- আলোকিত মানুষ হবে- এ প্রত্যাশা সকলের।

তারুণ্য মানে আলোয় স্নাত হওয়া, তারুণ্য মানে অনগ্রসরতার দেয়াল ডিঙোনো, তারুণ্য মানে দৃপ্ত পদক্ষেপÑতারুণ্য মানে সীমানা না মানা। প্রদত্ত উদ্দীপকে তারুণ্যের এই গুণাবলি অঙ্কিত হয়েছে। পথ চলতে তরুণের সামনে হাজার প্রলোভনের হাতছানি। অনেক আদর্শিক প্রলোভন তরুণদেরকে আটকে রাখতে চায় সীমাবদ্ধতার শামুকখোলেÑমানা না মানার ঘেরা টোপের মধ্যে। তারুণ্যের অপরিমেয় শক্তিকে কাজে লাগিয়ে কেউ হয়ত ব্যক্তিগত বা সীমাবদ্ধ গোষ্ঠী স্বার্থ রক্ষা করতে চাইবে। তরুণ কোনো একক সংঘের হতে পারে না। তরুণরা সকল দেশের, সকল কালের, সকল মানুষের। মানুষ যেখানে বড়, স¤প্রদায় যেখানে তুচ্ছ, তারুণ্যের অবস্থান সেখানে। সেক্ষেত্রে নরনারীর ভেদ বিবেচনাও অনুচিত। তারুণ্যের গতি যেখানে দুর্বার সেখানে সঙ্কীর্ণ গোষ্ঠী বা বর্ণচিন্তার সময় কোথায়? বরং এসব জড় চেতনার পাথরকেÑপথের ওপর থেকেÑসরানোর দায়িত্ব তরুণের। কোন সীমাবদ্ধ মানসিকতা তরুণের কাছে প্রত্যাশিত নয়। তারুণ্য কখনো সীমিত থাকতে পারে না। একটা সর্বমানবিক অনুভূতিÑসব সময় চনমনে করে রাখে তরুণের হৃদয়। মানবতার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয় এমন দর্শনের কাছে আত্মসমর্পণ করে না তারুণ্য। কোন সীমাবদ্ধ আদর্শের সাথে আপোস করে না বলে তারুণ্য ভাবাবেগ মুক্ত। কোন ব্যর্থতা নেই বিধায় হতোদ্যম হয় না তারুণ্য। এজন্য তারুণ্যের চোখে নেই নোনা জল। হৃদয় দৌর্বল্যকে অস্বীকার করে হৃদয় ধনে দরিদ্র না হয়ে মহৎ কোনো আদর্শে সামনে এগিয়ে চলে তারুণ্য। সীমায় সীমিত থাকা তারুণ্যের পক্ষে অসম্ভব। ধর্ম হোক, নীতি হোক, বর্ণ হোক, কোনো মন্দ প্রভাবকের কাছে দায়বদ্ধ নয় তারুণ্য। সহজ কথা তারুণ্য কোন সীমা মানে না- সীমিত হওয়া তারুণ্যের পক্ষে অসম্ভব।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
কলেজ থেকে ফেরার পথে রুহুল দেখল সে প্রায়ই যে রেস্টুরেন্টে বসে চা খায় সেখানকার মালিক ছোট ছেলেটিকে প্রচণ্ড মারছে। আর সেখানে উপস্থিত অন্যান্য সকলে যেন পরম তৃপ্তিসহকারে সেই মার উপভোগ করছে। রুহুল এগিয়ে গিয়ে জানতে পারল অসাবধানতাবশত: একটি কাপ ভেঙ্গে ফেলায় ছেলেটি এভাবে মার খাচ্ছে। রুহুল মালিককে থামানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। পরে শিশুশ্রম ও শিশু নির্যাতনের দায়ে পুলিশের হাতে তুলে দেয়ার ভয় দেখালে মালিক ছেলেটিকে ছেড়ে দেয়।
ক. ফ্যাসিবাদবিরোধী লেখক ও শিল্পী সংঘের পক্ষে সুকান্ত ভট্টাচার্য সম্পাদিত কাব্যগ্রন্থের নাম কী?
খ. এ বয়সে কেউ মাথা নোয়াবার নয় কোন বয়স এবং কেন?
গ. সামাজিক বৈষম্য ও ভেদাভেদ কীভাবে উদ্দীপকের রুহুলের মতো প্রাণবন্ত তরুণদের প্রতিক্রিয়াশীল করে তোলে? ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার আলোকে ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের রুহুলের বয়সের তরুণরাই সমাজ সচেতন হয়ে একটি সুন্দর সামাজিক ব্যবস্থা উপহার দিতে পারেÑ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতা অবলম্বনে বিশ্লেষণ কর। ১



১৩ নং প্রশ্নের উত্তর

ফ্যাসিবাদবিরোধী লেখক ও শিল্প সংঘের পক্ষে সুকান্ত ভট্টাচার্য সম্পাদিত কাব্যগ্রন্থের নাম ‘আকাল’।

মানুষের জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় আঠারো বছর বয়স। এ সময়ে মানুষ কৈশোর থেকে যৌবনে পদার্পণ করে বলে আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে উঠে। উত্তেজনার প্রবল আবেগ ও উচ্ছ¡াসে এ সময় জীবন থাকে ভরপুর। তারুণ্যের অপরাজেয় শক্তি কোনো বাধা মানতে চায় না, বরং নিজের দুঃসাহসিক কার্যক্রমের মাধ্যমে সে দিগি¦জয় করতে উদ্যত হয়। তারুণ্য স্বপ্ন দেখে নতুন জীবনের, নব নব অগ্রগতি সাধনের। তাই সে শঙ্কাহীন উদ্দাম গতিতে নব সৃষ্টির আনন্দে সকল বাধা তুচ্ছ করে এগিয়ে চলে। তার এই এগিয়ে চলার পথ কুসুমাস্তীর্ণ নয়, বরং অত্যন্ত বন্ধুর, কঠিন। চলার পথ রোধ করে দাঁড়িয়ে থাকে পাহাড়সম বাধা, ভয়ঙ্কর সংকট। এই উদ্দাম তারুণ্য এ সমস্ত বাধা-সংকটকে পদাঘাতে চ‚র্ণ-বিচ‚র্ণ করে এগিয়ে চলে। কোন বাধার কাছেই সে মাথানত করে না। মাথানত করে না শত অন্যায়, অত্যাচার আর কুসংস্কারের কাছে। জীবনকে জড়তাযুক্ত করা এসব তারুণ্যের মাঝে কখনোই বিরাজ করে না। ভয়ভীতিহীন বলেই তারুণ্যের সাহস সর্বদা থাকে উচ্চশির। নিজ কৃতকর্মের জন্য সে কখনোই মাথা নোয়াতে জানে না।

সামাজিক বৈষম্য ও ভেদাভেদ তথা অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে রুহুলের মতো প্রাণবন্ত তরুণদের হৃদয়ে ফুটে ওঠা ক্ষোভই তাদের প্রতিক্রিয়াশীল করে তোলে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা তারুণ্যের ধর্ম। যে কোনো অন্যায়Ñঅবিচার দেখলে তরুণরা ক্ষ্ব্ধু হয়ে ওঠে। সামাজিক বৈষম্য আর ভেদাভেদও তরুণদের প্রতিক্রিয়াশীল করে তোলে। তারুণ্যের এ সকল বৈশিষ্ট্য উপস্থাপিত হয়েছে কবি সুকান্ত ভট্টচার্যের ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায়। আর তারুণ্যের অনুুরূপ বৈশিষ্ট্যগুলো প্রতিফলন আমরা রুহুলের ক্ষেত্রেও দেখতে পাই। রুহুল একদিন কলেজ থেকে ফেরার সময় দেখতে পায় যে, রেস্টুরেন্টÑএর মালিক ছোট কাজের ছেলেটিকে প্রচণ্ড মারছে। রুহুল এগিয়ে গিয়ে জানতে পারল একটি সামান্য কাপ অসাবধানতাবশত: ভেঙ্গে ফেলার কারণে ছেলেটিকে এই শাস্তি দেয়া হচ্ছে। তখন রুহুলের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়, কারণ রেস্টুরেন্ট মালিক যা করছিলেন সেটি অমানবিক ব্যাপার। সামান্য একটি কাপের জন্য তিনি ছেলেটিকে যেভাবে মারছিলেন তা সামাজিক ভেদাভেদের আর বৈষম্যেরই প্রমাণ। তখন রুহুল শিশুশ্রম ও শিশু নির্যাতনের দায়ে পুলিশের হাতে তুলে দেয়ার ভয় দেখালে মালিক ছেলেটিকে ছেড়ে দেয়। এমনিভাবে রুহুলের মতো প্রাণবন্ত তরুণেরা সামাজিক বৈষম্যের আর ভেদাভেদের বিরুদ্ধে সব সময় রুখে দাঁড়ায়। অন্যায়কে মেনে নেয়াটা তারুণ্যের ধর্ম নয়। বরং অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে অদম্য সাহসে প্রতিরোধ গড়াটাই তরুণদের সহজাত স্বভাব। পুরাতনকে ভেঙ্গে নতুন কিছু সৃষ্টি করার ধৃষ্টতা তারুণ্যের বৈশিষ্ট্য। তাই এই তারুণ্য সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় ঝাঁপিয়ে পড়ে কর্তব্য কর্মে। এভাবে সকল অন্যায়Ñঅবিচার, সামাজিক বৈষম্য আর ভেদাভেদ উদ্দীপকের রুহুলের মতো প্রাণবন্ত তরুণদের প্রতিক্রিয়াশীল করে তোলে। পরিশেষে বলা যায়, উদ্দীপকের রুহুল অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার মূল আবেদনকে ফুটিয়ে তুলেছে।

উদ্দীপকে অফুরন্ত প্রাণশক্তির অধিকারী রুহুলের বয়সের যুবকরাই নিজেদের মুক্ত চিন্তাÑচেতনার জগতকে উন্মোচিত করে সমাজ সচেতন হয়ে একটি সুন্দর সামাজিক ব্যবস্থা উপহার দিতে পারে। ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য তরুণদের তারুণ্যদীপ্ত এ বৈশিষ্ট্যগুলো ফুটিয়ে তুলেছেন। অফুরন্ত প্রাণশক্তি আর অদম্য দুঃসাহসে এই তরুণেরা রুখে দেয় সকল অন্যায় আর অবিচার। চারপাশের অন্যায়Ñঅত্যাচার, শোষণÑপীড়ন, সামাজিক ভেদাভেদ আর বৈষম্য তাদের চিন্তাÑচেতনাকে প্রভাবিত করে। তারা প্রাণে যন্ত্রণা উপশম করার জন্য অস্থির হয়ে পড়ে এবং নতুন উদ্যমে উদ্ধত অভিমানে অন্যায়, অসত্য আর অসাম্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। এভাবে তরুণেরা সামাজিক ভেদাভেদ, বৈষম্য আর সকল শোষণ দূর করে ছিনিয়ে আনতে চায় ন্যায়ের বিজয়। তারুণ্যের এসব বৈশিষ্ট্যের প্রতিফলন ঘটেছে উদ্দীপকের রুহুলের জীবনেও। রুহুলকেও আমরা দেখতে পাই, সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে ওঠতে। সামান্য কাপ ভাঙ্গার কারণে রেস্টুরেন্ট মালিক তার কাজের ছেলেটিকে যখন প্রচণ্ডভাবে মারছিল তখন রুহুল এগিয়ে যায় অন্যায়ের প্রতিবাদ করার জন্য। কারণ সে মনে করে এভাবে একটি ছোট শিশুকে নির্যাতন করা যেমন অমানবিক তেমনি অপরাধও বটে। আর এটি তার মুক্ত চিন্তাÑচেতনার বহিঃপ্রকাশ। স্বভাবতই রুহুলের মতো তরুণের পক্ষে চোখের সামনে এ ধরনের অন্যায় দেখে নীরব থাকা সম্ভব নয়। তাই সে ভয়Ñভীতিকে উপেক্ষা করে হাতÑবাড়ায় শিশুটির দিকে। অবশেষে সে শিশুশ্রম ও শিশু নির্যাতনের ভয় দেখিয়ে মালিকের হাত থেকে শিশুটিকে রক্ষা করে। সে সমাজ সচেতন না হলে এ ঘটনার প্রতিবাদ করতে পারত না। কারণ সমাজে লোকদের মধ্যে সচেতনতা থাকলেই এ ঘটনার প্রতিক্রিয়া করতে পারে। এভাবে রুহুলের বয়সের তরুণেরাই সমাজের ইতিবাচকÑনেতিবাচক দিকগুলো সম্পর্কে অবহিত হয়ে নিজের চিন্তার জগতকে জাগ্রত করে এগিয়ে যায় অন্যায়ের প্রতিবাদে। এটিই তারুণ্যের মূলকথা। তাই আমাদের সামাজিক প্রেক্ষাপটে রুহুলের এই ভ‚মিকা যেমন তারুণ্যের জয় তেমন অত্যন্ত প্রশংসনীয়ও বটে।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
দেশ, এখন এক সঙ্কটময় সময় পার করছে। চারদিকে এত অন্ধকার। কে, কারা এই সংকটে এগিয়ে আসবে? দরকার ত্যাগ, দরকার গতি, দরকার দৃপ্ত শপথÑদেশ মাতৃকার জন্য। বললেন, ত্যাগী নেতা কমরেড ফাত্তিহুল কাদির। রশিদ স্যার পাশেই ছিলেন। তিনি বললেনÑএকথা বহুবার প্রমাণিত হয়েছে ত্যাগ, সেবা, আত্মবলিদান- যা কিছু করার তরুণেরা করে আপনার মত নেতারা তরুণদের রক্তদানের সুবিধাভোগী।
ক. আঠারো বছর বয়স কি জানে না?
খ. আঠারো বছর বয়সের ভয় নেই কেন?
গ. প্রদত্ত উদ্দীপকের সাথে এদেশের কোন ঐতিহাসিক ঘটনার সাদৃশ্য বিদ্যমান।
ঘ. প্রদত্ত উদ্দীপক অবলম্বনে শপথ দীপ্ত, ত্যাগী তরুণের চিত্র অঙ্কন কর। ১




১৪ নং প্রশ্নের উত্তর

আঠারো বছর বয়স জানে না কাঁদা।

ভয় আসে দুর্বলতা থেকে, অপূর্ণতা থেকে, অপ্রাপ্তি থেকে, অসততা থেকে, ভীরুতা থেকে, অন্ধকার থেকে, অস্পষ্টতা থেকে। তরুণের সে বয়স তাতে এসব ঋণাত্মক অনুঘটকগুলো পাত্তা পায় না। কোনো অন্ধকার, কোনো পাপ, কোনো মন্দ ইচ্ছা প্রভাব বিস্তার করে না যুব চিত্তে। শরীর ভরা থাকে তেজে আর মন ভরা থাকে নৈতিক বলে। চৈতন্যে থাকে বিশ্বাস, চোখে থাকে স্বপ্ন। কারো কাছে বা কোন ভ্রান্ত আদর্শের কাছে দায়বদ্ধ থাকতে হয় না বলে কাউকে ভয় করারও দরকার হয় না।

প্রদত্ত উদ্দীপকে এদেশের তরুণ সমাজের আত্মত্যাগের জন্য উদ্বুদ্ধ ও শপথ দৃপ্ত হওয়ার ইংগিত বিদ্যমান। দেশে যখন কোন বিজয় দরকার হয়েছে তখন তরুণরাই এসে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছে। বায়ান্ন, ঊনসত্তর, একাত্তর এমনকি ঊনিশশো নব্বইÑএসবের দিকে মনোযোগ দিলে এ বক্তব্যের যথার্থতা পাওয়া যায়। ভাষার মর্যাদা সমুন্নত রাখতে যেয়ে বায়ান্নর একুশে ফেব্র“য়ারিতে বুলেটের সামনে নিজেকে মেলে ধরেছিল তরুণ যুবা মানুষগুলো। তাঁদের সেই ত্যাগের সুফল আজকের বাংলাভাষার ঋদ্ধি। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে প্রাণ দিয়েছিলেন অনেক তাজা তরুণ। এ দেশের গণমানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে, এ দেশের জননেতাদের বিরুদ্ধে আনীত মিথ্যা অভিযোগ প্রত্যাহার ও তাদের মুক্তির দাবিতে, স্বাধিকারের জন্য জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে আহুত আন্দোলনে প্রাণ দিয়েছে তরুণ যুবারাই। এরপর একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মবলি দিয়েছিলেন অনেক তরুণ, অনেক যুবা। স্বাধীনতার লাল সূর্যকে তারা ছিনিয়ে এনেছে রক্তের বিনিময়ে। নব্বই-এর স্বৈরাচার বিরোধী গণঅভ্যুত্থানে তরুণরাই বিলিয়ে দিয়েছে প্রাণ। দেশকে করেছিল অগণতান্ত্রিক স্বৈরাচারী শাসনমুক্ত। এভাবে যখনই দেশে সঙ্কটজনক অধ্যায় সৃষ্টি হয়েছে তখনই জীবনের বিনিময়ে সে সঙ্কটকে কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করেছে তরুণ। উদ্দীপকে যে দৃশ্যকল্প বর্ণিত হয়েছে, তার সাথে আমাদের জাতীয় জীবনের গৌরবময় সোনালি দিনগুলোর সাদৃশ্য বিদ্যমান।

প্রদত্ত উদ্দীপকে একজন ত্যাগী নেতা ও একজন শিক্ষকের মিতভাষণের মধ্যদিয়ে আঠারো বছর বয়সী তরুণের প্রয়োগিকতা ও তাদের ত্যাগের চিত্র অঙ্কিত হয়েছে। আঠারো বছর বয়সে তারুণ্যের যে বিকাশ ঘটে তা উলে­খযোগ্য নানা বৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল, দীপ্তিমান। কৈশোর থেকে যৌবনে পা রাখার এই বয়সটি উত্তেজনায় প্রবল, আবেগ ও উচ্ছ¡াসে উন্নত। এ বয়সের তরুণেরা ঝুঁকি নেয় মনের দাবি মেটাতে গিয়ে। আঠারো বছর বয়স, অদম্য দুঃসাহসে সকল বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে যাওয়ার ও অন্যায় অসুন্দরের বিরুদ্ধে মাথা সমুন্নত করে দাঁড়াবার বয়স। তারুণ্য অকুতোভয়। সে প্রবল দুঃসাহসিকতার পরিচয় দেয়। দেশ, জাতি, মানবতার জন্য বিভিন্ন সময়ে তরুণরাই এগিয়ে গেছে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। মানবতার জন্য ক্ষতিকর অপশক্তিকে মোকাবেলা করেছে তারা। প্রাণ দিয়েছে দেশ জনগণের মুক্তি ও কল্যাণের জন্য। এ বয়স জানে রক্ত দানের পুণ্য। দিয়েছে অকাতরে। ছিনিয়ে এনেছে বিজয়। এ বয়সের গতি, বাষ্পের বেগে স্টিমার যেমন দ্রুত চলে, তেমন। তরুণ স্বপ্ন দেখে। সে স্বপ্ন নতুন জীবনের অগ্রগতি সাধনের। স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য দরকার সংগ্রামের। সংগ্রামে অবতীর্ণ হওয়ার জন্য দরকার শপথ। তারুণ্য বিনা দ্বিধায় কল্যাণের শপথ নিয়ে এগিয়ে চলে কর্মক্ষেত্রে। করণীয় নির্ধারণের পর নতুন শপথে বলীয়ান হয়ে সে এগিয়ে যায় দৃঢ়দীপ্ত পদক্ষেপে। শপথের মধ্যে সততা থাকায় সে শপথ ব্যর্থ হয় না বরং থাকে আত্মবিশ্বাসের দীপ্তি। দেশ, জাতি, মানুষের কল্যাণের জন্য সব পিছুটান পেছনে ফেলে আত্মোৎসর্গের জন্য শপথ দীপ্ত হয় তরুণ। তারপর অর্জন করে কাক্সিক্ষত বিজয়। বৃহত্তর মানবতা ভোগ করে তরুণের ত্যাগের ফসল।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
ভাই সাহেব, ছেলেটাকে একটু সামলে রাখবেন। ছেলেটা ভালো। তবে এ বয়সটা ঝুঁকিপূর্ণ। আবেগচালিত হয় বলে ভুল করে বসতেও পারে। ওর প্রাণশক্তি খুব বেশি, ওর চিন্তাশক্তি খুব প্রখর। একটা সমস্যা আছে। ওর আবেগকে সম্মোহিত করে কেউ ওকে বিপথগামী ও বিপদগামী করে। অনেক অশুভ শক্তি আছে যারা ওকে কুপরামর্শ দিয়ে ভ্রান্তির পথে নিয়ে যেতে পারে। তাইত বলছিলাম ওকে একটু সামলে রাখবেন।’
ক. তরুণের গতি সম্পর্কে আঠারো বছর বয়স কবিতার ভাষ্য কী?
খ. সঁপে আত্মাকে শপথের কোলাহলেÑএ কথার অর্থ কী?
গ. উদ্দীপকটি আঠারো বছর বয়স কবিতার কোন অংশের সাথে সাযুজ্যপূর্ণ আলোচনা কর।
ঘ. কোন নেতিবাচক শক্তি তারুণ্যকে কীভাবে প্রভাবিত করতে পারেÑআলোচনা কর। ১



১৫ নং প্রশ্নের উত্তর

তরুণ ‘বাষ্পের বেগে স্টিমারের মতো চলে।’

দেশ, জাতি ও মানবতার জন্য যুগে যুগে তরুণরাই এগিয়ে এসেছে বেশি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দাঁড়িয়েছে দেশ ও জনগণের মুক্তি ও কল্যাণের সংগ্রামে। তারুণ্য তাই সুন্দর, শুভ ও কল্যাণের জন্য রক্তমূল্য দিতে অভ্যস্ত। তারুণ্য স্বপ্ন দেখে নতুন জীবনের, নব নব অগ্রগতি সাধনের। তাই সেসব স্বপ্ন বাস্তবায়নে, নিত্য নতুন করণীয় সম্পাদনের জন্য নব নব শপথে বলীয়ান হয়ে সে এগিয়ে যায় দৃঢ় পদক্ষেপে। জাতির কল্যাণের জন্য প্রাণ দেয়া-নেয়ায় তার কোনো দ্বিধা থাকে না। তরুণ তার সংগ্রামী চরিত্রে সহজেই প্রাণ উৎসর্গ করার দুঃসাহস রাখে। সে শপথ নিয়ে তার আত্মাকে সমর্পণ করতে পারে। আত্মত্যাগের মন্ত্রে উজ্জীবিত তারুণ্যের গান গেয়েছেন কবি এখানে।

আঠারো বছর বয়স কবিতায় যেখানে তারুণ্যের নেতিবাচক দিক উন্মোচিত হয়েছে তার সাথে উদ্দীপকটির সাযুজ্য রয়েছে। কবিতায় বলা হয়েছে-
“আঠারো বছর বয়স ভয়ংকর
তাজা তাজা প্রাণে অসহ্য যন্ত্রণা;
এ বয়সে প্রাণ তীব্র আর প্রখর
এ বয়সে কানে আসে কত মন্ত্রণা।”
উদ্দীপকে আঠারো বছর বয়সের এই আপাত মন্দ দিকটি উন্মোচিত হয়েছে। আঠারো বছর বয়সটা ঝুঁকিপূর্ণ। কল্যাণের পথে ধাবিত হলে তো বিপদ নেই, কিন্তু ভুল নির্দেশনায় অন্ধকারের দিকে ধাবিত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। ঠিক পথেও আবেগতাড়িত হয়ে ভুল করে বসতে পারে। সহ্য শক্তি কম বলে গৃহীত সিদ্ধান্ত ও তার ফল ভয়ঙ্কর হতে পারে। তারুণ্যের প্রাণশক্তি বেশি, ফলে তার কর্মপরিধি থেকে অনেক পাওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়। চিন্তাশক্তি প্রখর বলে বিবেচনাপ্রসূত সুফল পেতে পারে মানুষ। আবেগপ্রবণ মানুষকে দিয়ে অনেক অসাধ্য সাধন করা যায়। তারুণ্যের আবেগকে পুঁজি করে কোন অপশক্তি তাকে দিয়ে মানবতাবিরোধী ধ্বংসাত্মক কাজও করতে পারে। সুপথে পরিচালিত হলে তো কল্যাণ। কুমন্ত্রণার শিকার হয়ে ভুল পথেও চলে যেতে পারে। নানাবিধ প্রলোভন থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে সত্য সুন্দরের পথে চালিত করলে প্রত্যাশিত ফল আশা করা যায়। প্রদত্ত উদ্দীপকে কোন এক তৃতীয় পক্ষের সামনে প্রথম পক্ষ, একটি একক যুবক বা তরুণকে উপস্থাপন করছেন। মূল কবিতায় এই বক্তব্যটি বিশ্বের সমস্ত তরুণের হৃদয়ের কথা বা প্রবণতা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। উদ্দীপকের ব্যক্তিক বিবরণ (চবৎংড়হধষ ফবংপৎরঢ়ঃরড়হ) মূল কবিতার নৈর্ব্যক্তিক উপস্থাপনা থেকে উৎসারিত হয়েছে।

আন্তর বৈশিষ্ট্যে তরুণরা আবেগপ্রবণ। তারা আবার প্রাণপ্রাচুর্যে ভরপুর। আবেগ বহিঃপ্রকাশের দিক দিয়ে তারা প্রখর চেতনা সমৃদ্ধ। গতি তাদের তীব্র। সবকিছুতে গতি, প্রখরতা, প্রাচুর্য ইত্যাদি থাকলেও এখানে তারা কোমল। সেটা হল তাদের হৃদয়বৃত্তি। হৃদয়বৃত্তি কোমল বলে কোন একটি অনুভবে খুব সহজেই আবিষ্ট হয়ে পড়ে তারা। এর নাম আবেগপ্রবণতা। আবেগপ্রবণ থাকে বলে কোন সদর্থক অনুপ্রেরণায় যেমন অনুপ্রাণিত হয় তরুণ, কোন নেতিবাচক উদ্দীপকও অনুপ্রাণিত করে তাদের। ফলে খুব সহজেই ক্ষতিকর সড়কে পা ফেলে তারা। মন্দ মতবাদীরা তরুণের প্রাণশক্তির এই দুর্বল দিককে কাজে লাগিয়ে তাদেরকে ভুল করতে অনুপ্রাণিত করে থাকে। কোনো বাহ্যিক স্বার্থকে বা ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগত স্বার্থকে তরুণের স্বার্থের সাথে একীভূত করে তরুণকে তার উদ্দেশ্য সাধনে প্ররোচিত করে। ধর্ম, নীতি, আদর্শ, মূল্যবোধ, প্রলোভন, ভীতিÑএসব অনুঘটকের বীজ তরুণের মনের মধ্যে অনুপ্রবেশ করিয়ে স্বীয় স্বার্থ রক্ষা করে সুযোগ সন্ধানী অপশক্তি। আবেগের প্রাবল্যে, প্রাণের চাহিদার আত্যন্তিকতায় ভারসাম্য হারিয়েও ভুল করতে পারে তরুণ। তরুণের এটি সহজাত প্রাণধর্ম। এই সহজাত প্রাণধর্মকে অনুচিত উদ্দেশ্যে কাজে লাগিয়ে সহজেই নঞর্থক উদ্দেশ্য সাধন করে অন্য কেউ। আবেগ যুক্তি মানে না। আবেগের চূড়ান্তে পৌঁছে মানুষ আর যুক্তির ধার ধারে না। মূল্যবোধ, ঔচিত্যবোধ, মানবতাবোধ এসব বিষয় তখন ফিকে হয়ে যায় তার কাছে। তরুণদের ক্ষেত্রে এই কাজটা করা খুবই সহজÑতাদের মনের গঠনের জন্য। এভাবে নেতিবাচক শক্তি তরুণকে প্রভাবিত করেÑতাদের মন্দ অভিপ্রায়ের বাস্তবায়ন ঘটায়।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
অর্নপ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস শেষ করে বাড়ি ফেরার পথে দেখল তাদের পাশের বস্তির রবিউল মিয়াকে কালোবাজারীর ছেলে মারধর করছে। এমন একটি অন্যায় হতে দেখেও অর্নপ প্রতিবাদ না করে ভয়ে পালিয়ে আসে। মার কাছে একথা বললে মা তাকে ধিক্কার দেয় এবং বলেন, নিপীড়িত ও শোষিত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রতিবাদ করতে না পারলে তোমার যৌবন বৃথা।
ক. ‘ছাড়পত্র’ কাব্যগ্রন্থের রচয়িতা কে?
খ. “আঠারো বছর বয়স জানে না কাঁদা” কথাটির মাধ্যমে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
গ. উদ্দীপকের’ অর্নপের আচরণ কীভাবে ‘ আঠারো বছর বয়স’ কবিতার তারুণ্যের বৈশিষ্ট্যের বিপরীতÑব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘এদেশের মঙ্গলের জন্য উদ্দীপকের অর্নপের মতো তরুণদের জেগে ওঠাটা একান্ত জরুরি’Ñ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতা অবলম্বনে বিশ্লেষণ কর। ১



১৬ নং প্রশ্নের উত্তর

‘ছাড়পত্র’ কাব্যগ্রন্থের রচয়িতা কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য।

কবি যা বোঝাতে চেয়েছেন : প্রশ্নোৎকলিত উক্তির মাধ্যমে কবি বুঝিয়েছেন যে, এ বয়সে মানুষ দুর্বিনীত যৌবনে পদার্পণ করে বলে আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে উঠে। সে স্বাধীনভাবে জীবনের মুখোমুখি দাঁড়ায়। শৈশব-কৈশোরের পরনির্ভরতার দিনগুলো ছিল কান্নামিশ্রিত। কিন্তু আঠারো বছর বয়সের স্বভাববৈশিষ্ট্য তা মুছে ফেলে সচেতনভাবে। এ বয়সের বৈশিষ্ট্য এমনই যে, এ বয়সে পরাজয় বরণ করার মতো মানসিকতা আর থাকে না ফলশ্র“তিতে অশ্র“পাত করার অবকাশও থাকে না। উত্তেজনার প্রবল আবেগ ও উচ্ছ¡াস থাকে বলেই এ বয়সে কারো কাছে মাথা নত করে পরাজয় বরণ করার প্রশ্ন আসে না। পদাঘাতে সমস্ত প্রতিক‚লতাকে অতিক্রম করে জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যায় সামনের দিকে। শঙ্কাহীন উদ্দাম গতিতে নবসৃষ্টির আনন্দে সকল বাধা তুচ্ছ করে এগিয়ে চলে এ বয়সের তারুণ্য। জড়নবৎঃ ইঁৎহং-এর মতো সে বলে, “খবঃ ঁং ফড় ড়ৎ ফরব." অর্থাৎ তার কাঁদার কোন অবকাশ থাকে না। তাই কবি বলেছেন
“আঠারো বছর বয়স জানে না কাঁদা।”

উদ্দীপকে অর্নপের আচরণে তারুণ্যের কোনো স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য ফুটে ওঠেনি বলে তার আচরণ ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার তারুণ্যের বৈশিষ্ট্যের বিপরীত। কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় তারুণ্যের বৈশিষ্ট্য অত্যন্ত সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলার প্রয়াস পেয়েছেন। কৈশোর পেরিয়ে যৌবনে উত্তীর্ণ হবার সময়ই হচ্ছে তারুণ্য। এসময় মানুষের মনে অপরিমেয় শক্তির উন্মেষ ঘটে। জীবনের মুখোমুখি দাঁড়ায় স্বাধীনভাবে। শৈশবÑকৈশোরের পরনির্ভরতার দিনগুলোতে যে কান্না ছিল এ বয়সের স্বভাববৈশিষ্ট্য তাকে সচেতনভাবে মুছে ফেলতে উদ্যোগী হয়। দেশ, জাতি ও মানবতার জন্য যুগে যুগে এ বয়সেই এগিয়ে গেছে সবচেয়ে বেশি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দাঁড়িয়েছে সমস্ত বিপদ মোকাবেলায়। এ সময় মানুষের অসহ্য যন্ত্রণা অনুভূত হয় হৃদয়ে। চারপাশের অন্যায়, অত্যাচার, শোষণ, পীড়ন, সামাজিক বৈষম্য ও ভেদাভেদ ইত্যাদি দেখে প্রাণবন্ত তরুণেরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তাদের প্রতিবাদী কণ্ঠ বেঁজে ওঠে অন্যায়ের বিরুদ্ধে। দেশ ও মানুষের মুক্তি ও কল্যাণের জন্য তারা রক্ত দিতে প্রস্তুত থাকে। কল্যাণ ও সেবাব্রত, উদ্দীপনা, সাহসিকতা, চলার দুর্বার গতি আঠারো বছর বয়সের তারুণ্যের বৈশিষ্ট্য। অন্যদিকে অর্নপ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়–য়া ছাত্র। তাদের পাশের বস্তির রবিউল মিয়াকে কালোবাজারীর ছেলে অন্যায়ভাবে মারধর করছে। সে এটা দেখেও কোনো প্রতিবাদ না করে ভয়ে বাড়ি চলে আসে। সে অন্যায় শক্তির বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পায় না। তার এ সমস্ত আচরণে তারুণ্যের কোনো স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য প্রকাশিত হয়নি বরং তার আচরণে বার্ধক্যের ছাপ হয়ে ওঠে, যা তারুণ্যের সম্পূর্ণ বিপরীত বৈশিষ্ট্য। কিন্তু ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় বর্ণিত তরুণেরা সকল অন্যায়Ñঅত্যাচারের বিরুদ্ধে সাহসী কণ্ঠে প্রতিবাদ করে। সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় ঝাঁপিয়ে পড়ে জীবন যুদ্ধে। তাই বলা যায়, অর্নপের আচরণ কবি বর্ণিত আঠার বছর বয়সের তারুণ্যের বৈশিষ্ট্যের বিপরীত।

উদ্দীপকের অর্নপের মতো প্রতিবাদে অক্ষম তরুণদের দেশের কল্যাণে জেগে ওঠা একান্ত জরুরি। তারুণ্যের কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় বয়ঃসন্ধিকালের বৈশিষ্ট্যকে তুলে ধরেছেন। কৈশোর থেকে যৌবনে পদার্পণের এ বয়সটি উত্তেজনার প্রবল আবেগ ও উচ্ছ¡াসের, জীবনের ঝুঁকি নেবার। এ বয়সে মানুষ সকল বাধাÑবিপত্তিকে জয় করে আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে ওঠে। সমাজের সকল অন্যায়, অত্যাচার, শোষণ, পীড়ন, সামাজিক বৈষম্য ও ভেদাভেদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়। তারা দেশ ও জাতির কল্যাণে সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়। প্রয়োজনে তারা দেশের জন্য রক্ত দিতেও প্রস্তুত থাকে। উদ্দীপকে অর্নপের চোখের সামনে কালোবাজারীর ছেলে রবিউল মিয়াকে অন্যায়ভাবে মারধর করলেও সে প্রতিবাদ করে না। নীরব দৃষ্টিতে অবলোকন করে বাড়ি ফিরে আসে। কিন্তু এদেশের অগ্রগতি ও মঙ্গলের জন্য অর্নপের মতো তরুণদের জেগে ওঠা দরকার। কারণ তারাই আগামী দিনে জাতির কর্ণধার। তারাই পারে দেশ থেকে অন্যায়, অত্যাচার, পীড়ন, সামাজিক বৈষম্য ও ভেদাভেদ দূর করে সুখী ও সমৃদ্ধ জাতি গড়তে। দেশের বিরুদ্ধে যেসব অপশক্তি রয়েছে তাদের প্রতিহত করার ক্ষমতা একমাত্র তাদেরই আছে। কারণ তারা অফুরন্ত প্রাণশক্তিতে ভরপুর। দেশের বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও দুর্বিপাকে তারা ত্রাণ নিয়ে দাঁড়াতে পারে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে। দেশে বিদ্যমান বিভিন্ন সমস্যা যেমন জনসংখ্যা বৃদ্ধি, দুর্নীতি, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ইত্যাদি ক্ষেত্রে তরুণেরাই এগিয়ে আসতে পারে। সমাজে যেসব সমস্যা বিদ্যমান তারা সেগুলো কমিয়ে আনতে পারে। যেমন অর্নপ যদি কালোবাজারীর ছেলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করত তাহলে সে আর অন্যায় করতে পারত না। এভাবে দেশের মঙ্গলের জন্য অর্নপের মতো তরুণদের জেগে ওঠাটা জরুরি।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
দেশ আজ চরম দুঃসময় পার করছে। চারদিকে জ্বলজ্বল করছে ঘন কালো অন্ধকার। গতিহীন, প্রাণহীন প্রতিটা প্রাত্যহিক। এদেশের যারা তরুণ যুবা, তারা আজ স্থবিরতায় আচ্ছন্ন। নানা মত পথ আজ তাদেরকে বিভ্রান্ত করে রেখেছে। তারা আজ বড্ড বেশি আত্মকেন্দ্রিকÑত্যাগী নয়। দেশের জন্য দরকার নতুন কর্মোদ্যম। দরকার দোষে গুণে গতিশীল তারুণ্য। সত্য সুন্দরের পক্ষে যে তারুণ্য, দুর্নিবার দুর্দম যে তারুণ্য, নিঃসংশয় নির্ভয় যে যৌবনÑতাকে আজ বড় বেশি প্রয়োজন দেশের জন্য। কিশোর কবির মত বলতে হয়Ñএদেশের বুকে আঠারো আসুক নেমে।
ক. আঠারো বছর বয়স কবিতায় আঠারো শব্দটি কতবার উচ্চারিত হয়েছে?
খ. তারুণ্যের ইতিবাচক দিক ও নেতিবাচক দিকগুলো তুলে ধর।
গ. আঠারো বছর বয়স কবিতার সাথে তোমার পঠিত অন্য কোন্ রচনার বক্তব্যগত সাদৃশ্য বিদ্যমান? উভয়ের তুলনামূলক আলোচনা কর।
ঘ. এদেশের বুকে আঠারো আসুক নেমে এ বক্তব্যটির অন্তর্নিহিত প্রত্যাশা বিশ্লেষণ কর। ১




১৭ নং প্রশ্নের উত্তর

আঠারো বছর বয়স কবিতায় আঠারো শব্দটি ৯ বার উচ্চারিত হয়েছে।

তারুণ্যের ইতিবাচক দিক :
(১) তারুণ্য স্বাধীনভাবে নিজের পায়ে দাঁড়াবার ঝুঁকি নেয়। সাহস, দুঃসাহসের ক্রীড়াক্ষেত্র তারুণ্য।
(২) তারুণ্য ভয়ে ভীত নয়। বাধা ডিঙিয়ে পৌঁছে যায় লক্ষ্যে, অসুন্দরের কাছে মাথা নোয়ায় না- কাঁদে না।
(৩) তারুণ্য ত্যাগের মহিমা বোঝে, রক্তমূল্য দিতে জানে। তারুণ্যের গতি দুর্বার।
(৪) এ বয়স অনুভূতিপ্রবণ এবং সংবেদনশীল।
(৫) তারুণ্যের গতি তীব্র। পথ চলতে থেমে যায় না এ বয়স।
(৬) তারুণ্যের মধ্যে ভীরুতা, কাপুরুষতা স্থান পায় না। তারুণ্য নিঃসংশয়।
তারুণ্যের নেতিবাচক দিক :
(১) তারুণ্য ভয়ংকর হয়ে থাকে মাঝে মাঝে, যন্ত্রণাকাতর দুঃসহ।
(২) নানা যন্ত্রণায় ক্ষতবিক্ষত হয়ে দিগভ্রষ্ট হয় তারুণ্য। ক্ষতবিক্ষত হয়Ñবিপথগামী হয়।
-৩ ভ্রান্তির ফলস্বরূপ দীর্ঘশ্বাসে ভরে যায় তারুণ্য কখনো কখনো।

‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার সাথে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত ‘যৌবনের গান’-এর সাযুজ্য বিদ্যমান। উভয় রচনার মধ্যে সাদৃশ্য বিদ্যমান। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভিন্ন প্রসঙ্গ এসেছে। ‘যৌবনের গান’-এ তারুণ্যের পরিচালকের ভূমিকায় প্রবীণকে পাওয়া যায়। তারা থাকে শক্তির পেছনে রুধির ধারার মতো গোপনে, কুসুমের মাঝে মাটির মমতা রসের মতো অলক্ষ্যে। ‘যৌবনের গান’ -এ নজরুল তারুণ্য ও বার্ধক্যের রেখাচিত্র অঙ্কন করেছেন। যারা পুরনোকে, মৃত্যুকে, মিথ্যাকে আঁকড়ে থাকেÑতারাই বৃদ্ধ, তাদের ধর্মই বার্ধক্য। যারা অলোকপিয়াসী, নিয়ত সম্মুখে অগ্রসরমান-তারাই তরুণ। তাদের ধর্ম তারুণ্য। ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় বার্ধক্য বা বৃদ্ধ সম্পর্কে কিছুই বলেননি কবি। এখানে শুধু তরুণের আলেখ্য রচিত হয়েছে। যারা নির্ভীক, নিঃসংশয়Ñশক্তি যাদের অমিত, সাহস যাদের আকাশছোঁয়াÑগতি যাদের উদ্দাম তারাই তরুণ। নজরুল যেখানে বার্ধক্যের সাথে তারুণ্যের ব্যবধান দেখিয়েছেনÑসুকান্ত সেখানে শুধু তারুণ্যের প্রত্যাশা করেছেন। নজরুল ধর্ম-অট্টালিকার কথা বলেছেন যা পড় পড়। ওর তলে চাপা পড়ে শেষ হতে পারে নিষ্পাপ প্রাণ। সুকান্ত ধর্মীয় আনুগত্যের দিকটা বলেননি; তবে প্রবল উদ্যমে পথের পাথর বাধা অতিক্রমণে তারুণ্যের শক্তির প্রশংসা করেছেন। যৌবনের গান এ নজরুল প্রবীণের প্রতিনিধি। বলেছেন- আমি কর্মী নই ধ্যানী। তবে তার পক্ষপাত তারুণ্যের দিকে। ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় কবি তরুণ। তাঁর পক্ষপাতও তরুণের দিকে। নজরুল দেশের জন্য তারুণ্যের বিজয় প্রত্যাশা করেছেন। সুকান্ত ভট্টাচার্যও প্রত্যাশা করেছেনÑ‘এদেশের বুকে আঠারো আসুক নেমে।’ মনন ধর্মে উভয় কবিই তারুণ্যের শক্তিতে আস্থাশীল।

তারুণ্য যা আঠারো বছর বয়সের দান, জীবনের সোনালি সোপান। বয়সটি উত্তেজনার, আবেগের, উচ্ছ¡াসের। সমস্ত অন্যায় অনিয়মকে প্রতিহত করে অসত্যের বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়াবার বয়স এটি। এ বয়সের ধর্মই হলো আত্মত্যাগের মহান মন্ত্রে উজ্জীবিত হওয়া। আঘাত সংঘাতের মধ্যে রক্ত শপথ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়া। সেই সঙ্গে দেশ-কাল সমাজে বিদ্যমান অসুস্থতা মোকাবেলায় এ বয়স হয়ে উঠতে পারে ভয়ংকর। বিপর্যয়ের অজস্র আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত ও নিঃশেষ হতে পারে অনেক প্রাণ। এ বয়সের থাকে দুর্যোগ ও দুঃসময় জয় করার অদম্য প্রাণশক্তি। ফলে তারুণ্য দুর্বার বেগে এগিয়ে যায় অগ্রযাত্রার পথে। যৌবনের উদ্দীপনা, সাহসিকতা, দুর্বার গতি, নতুন জীবন রচনার স্বপ্ন, কল্যাণব্রত ইত্যাদি নানা ইতিবাচক বৈশিষ্ট্যে আঠারো বছর বয়সটি শুভ্র, উজ্জ্বল এবং অম্লান জ্যোতিতে প্রোজ্জ্বল। কবি তাই এ বয়সের অধিকারীদের, নবজাগরণের তুর্যবাদকদেরকে আহŸান করেছেনÑপরিবর্তনের জন্য। তরুণেরা দেশব্যাপী অসত্য, অন্যায়, অত্যাচারকে দূর করে দিয়ে সকল দুঃখ-গ্লানি, হিংসা-দ্বেষ, বিভেদ-বৈষম্যকে মুছে দিয়ে দেশের বুকে শান্তিময় এক মিলনক্ষেত্র নির্মাণ করবে। স্বপ্নাতুর কবির স্বপ্ন ও সাধনাÑএসব বৈশিষ্ট্য যেন জাতীয় জীবনের চালিকাশক্তি হয়। মানুষের সর্বাঙ্গীন মঙ্গল ও মুক্তি কামনায় কবির সমস্ত অনুভূতিতে একটি সুরই ঝঙ্কৃতÑসেটা হল যৌবন প্রত্যাশা। সমস্ত প্রত্যাশা একটি বিন্দুতে কেন্দ্রীভূত হয়ে পড়েছে। তার নাম আঠারো বছর বয়স। কর্মতৎপরতার ব্যাপারে যাদের মধ্যে আলস্য বিলাস নেই, শৈথিল্য নেইÑউদ্যমের অভাব নেই, সেই তরুণকে কামনা করেছেন কবি। নিঃসংশয় অসন্দিগ্ধ যারা,Ñউদ্দেশ্য ও লক্ষ্যে নিষ্ঠাবান যতœবান যারা কর্ম সম্পাদনে দেশ আজ তাদের চায়। এবং তরুণরা যে দেশের এই প্রত্যাশা পূরণে সক্ষম সে ব্যাপারে কবি পরম আশাবাদী। পরম আশ্বাসে কবি তাই গেয়ে ওঠেনÑএ বয়সে তাই নেই কোনো সংশয়, এদেশের বুকে আঠারো আসুক নেমে।
তারুণ্যের ইতিবাচক দিকগুলোর অন্তর্লোক অবলোকন করে উচ্চারিত কবির এ প্রত্যাশা কবির আত্মমুকুর বটে।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
কান্তবাবুর ছেলেটা কলেজে পড়ে। টগবগে তরুণ। কলেজ, বাসা, ক্লাব, সমাজ- কোথাও কোনো অন্যায় দেখলে সহ্য করতে পারে না। সেদিন কলেজে ইভটিজিং বন্ধে আয়োজিত একটি সেমিনারে প্রধান অতিথি ‘কয়েকজন বিবেকবান সাহসী তরুণ চাই’ বলে আহŸান জানালে ঐ ছেলেটাই সবার আগে দৃপ্ত পায়ে এগিয়ে গিয়েছিল। কান্তবাবু ছেলের এই সাহসিকতায় খুশী। বললেন ‘ওকে ওরকম সাহসী পদক্ষেপ নিতে অনেকবার দেখেছি। আমার ভয় করে। কিন্তু এ ব্যাপারেও খুব নির্ভীক। ওর একটা কথা ভালো লাগে- তারুণ্য জীবনের সোনালি সোপান।’
ক. আঠারো বছর বয়স কবিতাটি মূলত কীসের জয়গান গায়?
খ. তরুণেরা ভীরু কাপুরুষ নয় কেন?
গ. আঠারো বছর বয়স কবিতা এবং প্রদত্ত উদ্দীপক অবলম্বনে তরুণের গুণাবলি লেখ।
ঘ. ‘তারুণ্য জীবনের সোনালি সোপান’Ñউদ্দীপকে বর্ণিত এ সত্যটির যথার্থতা বিচার কর। ১



১৮ নং প্রশ্নের উত্তর

আঠারো বছর বয়স মূলত তারুণ্যের জয়গান করে।

মানুষের শরীরে একটা শারীরবৃত্তীয় ঘটনা ঘটে একটা বিশেষ বয়স পর্যন্তÑযার নাম উপচিতি। এ সময়টা শরীর গঠনের সময়। তরুণরা সেই সময়টার সুফল ভোগ করে। শরীর জুড়ে থাকে শক্তির দাপট। মনোবল থাকে অটুট। শরীরের শক্তি আর মনোবলের সম্মিলনে উৎপন্ন হয় সাহস। সাহসের সমর্থনের কারণে ভীরুতা বা কাপুরুষতা স্থান পায় না তরুণের মনে। সাহসের ভূমিকায় যে কার্য সম্পাদিত হয় তা প্রায়শই প্রশংসিত হয়। কারণ তা কল্যাণকর হয়ে থাকে। এই প্রশংসা তাদের আত্মপ্রত্যয়ী করে। আরো সাহসী করে। ফলে ভীরুতা বা কাপুরুষতা প্রভাব বিস্তার করে না তরুণের মনে।

তারুণ্য বা যৌবন মানব জীবনের এক স্বর্ণসময়। বাল্যের অসহায় পরনির্ভরশীল অবস্থা কাটিয়ে এ সময় মানুষ আত্মমুকুরে নিজেকে দেখে। পরিমাপ করে নিজের শক্তি। শারীরিক উপচিতির ফলে শরীরে সঞ্চিত হয় শক্তি। আর আবেগের প্রাবল্যের কারণে অনেক সাহস জমা হয় বুকে। ঠিক নির্দেশনা পেলে ঠিক কাজটি করতে পারে তারা। এসময় তরুণের মনটা গ্রহণের জন্য ব্যাকুল থাকে। যে মূল্যবোধ তাদেরকে শিক্ষা দেয়া হবে, সেইভাবে গড়ে উঠবে তাদের পরবর্তী জীবন। ভালো বা মন্দ যাকে পাবে তাকেই অবলম্বন করবে তরুণ। ভীরুতা শিক্ষা পেলে লজ্জাজনক আত্মগোপন করে তরুণ, কিন্তু বীরত্ব শিক্ষা পেলে সাহসে ঋদ্ধ হয় তরুণের চৈতন্য। সমাজে, সংসারে অনেক সময় সাহসিকতার সাথে সমাধান করতে হয় অনেক সমস্যা। বলা যায়Ñসংসারের অনেক কাজ সম্পন্ন করার জন্য দরকার হয় সাহস। তরুণ সেই সাহসের আধার। নির্ভীক চিত্তে তারা এগিয়ে যায় সামনে, লক্ষ্য স্থানে। নিজেকে ব্যাপৃত রাখে শুভ ও কল্যাণকর কাজে। আবার ভুলভাবে পরিচালিত হলে অকল্যাণ উপহার দেবে সে। তরুণ বয়সে তাদের বিবেককে জাগ্রত করতে পারলে সমাজ ও সংসারকে তারা দিতে পারবে অনেক কিছু। অপশক্তিকে অপনোদনের জন্য তারুণ্যের সাহসের বিকল্প নেই। মন্দকে ধ্বংস বা প্রতিহত করে, সত্যের আকাশে মাথা তোলার সৎসাহস আছে, থাকেÑথাকা উচিত তরুণের।

তারুণ্য একটি আশীর্বাদ প্রত্যেকের জীবনে। কৈশোরের নির্মল পরিশ্র“ত হৃদয় তখনো তাদের বুকের গহীনে স্পন্দনমান। কোমল, শান্ত সংবেদনশীল চিত্তবৃত্তি নিয়ে কিশোর যখন তরুণ হয় তখন তার আত্মশক্তিতে যুক্ত হয় নতুন এক প্রকারÑমানসিক ঋদ্ধি। মনটা তখন স্বাধীনভাবে কোন কিছুকে গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত থাকে। এ সময়টা প্রবীণ বা অভিভাবকদের ভূমিকা থাকে তাদেরকে ঠিক পথে পরিচালনা করার। যে স্পর্ধার গর্বিত মালিক হয় তার সেটার যথাযথ ব্যবহার করা দরকার। ভুল পথে যেন ব্যয়িত না হয় স্পর্ধিত মনোবৃত্তি সে দিকটায় খেয়াল রাখতে হয়। এ বয়সে মানুষ মাথা তুলে দাঁড়ায়, গৌরব ঘোষণা করে ব্যক্তিত্বের। এ সময়টা ঝুঁকিপূর্ণ। প্রতি পদক্ষেপে সাবধানতা, সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। ভুল পদক্ষেপে ছন্দপতন ঘটতে পারে জীবনের, ঠিক পদক্ষেপে ঘটে থাকে উত্তরণ। পথ চলা অন্ধকার পথে হলেÑআদর্শিক মৃত্যু, পরিণামে অশ্রদ্ধেয়। পথচলা আলো ঝলমল পথে হলে আত্মউদ্বোধনÑপরিণামে শ্রদ্ধার্ঘ্য প্রাপ্তি। স্মর্তব্যÑতরুণদের মধ্যে এ সময় বিবেচনা শক্তি প্রত্যাশিত নয়। তাদের মধ্যে থাকে অমিত শক্তি ও সাহস, নৈতিক মনোবল। এই বলকে কাজে লাগিয়ে তাদেরকে পরিচালিত করা যায় সুপথে। পরিপার্শ্বের জঞ্জাল এড়িয়ে, অপশক্তিতে দুপায়ে মাড়িয়ে তরুণরা পারে সুন্দর আগামির পথে এগিয়ে যেতে। এটা একটা বহুমুখী মোড়। এ সময়ে সুন্দর অভিভাবকত্বে তরুণরা বেছে নিতে পারে অপেক্ষাকৃত ভালো পথটি। ক্রমোন্নতির সিঁড়ি বেয়ে উঠে যেতে পারে পরবর্তী জীবনের আলোকোজ্জ্বল পথের দিকে। এজন্য তারুণ্য বা তরুণ বয়সকে বলা হয় জীবনের সোনালি সোপান।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
‘তারুণ্য সব ধরনের মন্দ হতে দূরে। কোনো দুঃখ কষ্ট যৌবনকে প্রভাবিত করতে পারে না।’ সম্রাট স্যারের এ কথায় দ্বিমত পোষণ করলেন রশিদ স্যার। বললেন ‘যৌবন বিপদমুক্ত নয়, বরং বিপদযুক্ত। কারণ সকল অসুন্দরের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয় বলেÑতারুণ্যের পদে পদে বিপদ। এজন্য আঘাত আসে, দীর্ঘশ্বাস আসে। বেদনায় বেদনার্ত হয় তারুণ্য। এটা স্বাভাবিক ঘটনা।
ক. আঠারো বছর বয়সে প্রাণের প্রকৃতি লেখ।
খ. আঠারো বছর বয়স ভয়ংকর কেন?
গ. আঠারো বছর বয়স এবং উদ্দীপকে দেখা যায় তারুণ্যের পদে পদে বিপদ -এর কারণ বিশ্লেষণ কর।
ঘ. তারুণ্যের মাঝে বেদনা বিস্তারী অপশক্তির স্বরূপ সম্পর্কে আলোচনা কর। ১



১৯ নং প্রশ্নের উত্তর

আঠারো বছর বয়সে তাজা তাজা প্রাণে অসহ্য যন্ত্রণা।

আঠারো বছর বয়সে অনুভূতির গভীরতা, তীব্রতা ও সুগভীর সংবেদনশীলতা মানুষের জীবনে প্রকট হয়ে দেখা দেয়। পারিপার্শ্বের অন্যায়, অসাম্য, শোষণ-বঞ্চনা দেখে তরুণের মনোজগতে প্রতিক্রিয়া হয় গভীর। এসব দেখে প্রাণবন্ত তরুণেরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। মন্দ, ভালো নেতিবাচক ইতিবাচক নানা তত্ত¡, মতবাদ, দর্শন ইত্যাদির সাথে পরিচিত হতে শুরু করে তরুণেরা। সেই সাথে সমাজ জীবনে নানা অবিচার, অসুস্থতা ও সর্বনাশের অভিঘাতে এ বয়স হয়ে উঠতে পারে ভয়ঙ্কর। বিকৃতি, বিপথগামিতা ও বিপর্যয়ের অজস্র আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত ও নিঃশেষ হতে পারে অনেক তরুণ তাজা প্রাণ। ভুল নির্দেশনা বা সিদ্ধান্তহীনতা তাদের ঠেলে দিতে পারে সর্বনাশের দিকে। এর ফলে শক্তিমত্তায় ভরপুর দুর্বিনীত তারুণ্য জীবনের লক্ষ্যে পৌঁছতে নাও পারে। বয়োঃসন্ধিকালের এই জটিলতার কারণে তারা হয়ে ওঠে ভয়ংকর। এজন্য কবির যথার্থ উপলব্ধি আঠারো বছর বয়স ভয়ংকর।

তারুণ্য, সকল অসুন্দরের বিরুদ্ধে, অসত্যের বিরুদ্ধে, অসাম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামে লিপ্ত। এ সংগ্রামে তারুণ্যের গতি প্রচণ্ড। চলার পথে নানাবিধ বাধা এসে তরুণের গতিকে শ্লথ করে দিতে পারে। বিঘœ সৃষ্টি করতে পারে সৃষ্টিশীলতার পক্ষে। যারা মন্দ জগতের বাসিন্দা, যারা চায় না তরুণরা নতুন কিছু করুক, তারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তরুণের গতিকে মন্থর বা তার চলাকে স্তব্ধ করে দিতে পারে। আলো ঝলমল প্রলোভনের মাধ্যমে তাদেরকে টেনে নিয়ে যায় অন্ধকারের পথে। তাদের অমিত শক্তি, অফুরন্ত সম্ভাবনাকে অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয়িত হলেÑতাতে তরুণের শক্তিকে অশ্রদ্ধা করা হয়। তরুণের উদ্দেশ্যই মহত্তে¦ ঋদ্ধ। সেই উদ্দেশ্য যদি ভিন্নপথগামী হয় তাহলে তা হয় তারুণ্যকে হত্যা করার শামিল। যারা মানবতার কল্যাণ চায় না সমাজ বা দেশের সমৃদ্ধি চায় না, যারা হীন ব্যক্তিস্বার্থ বা গোষ্ঠীস্বার্থ রক্ষায় তৎপর তারা তরুণের সর্বজনীন ভূমিকাকে বাধাগ্রস্ত, বিতর্কিত বা বিকলাঙ্গ করতে চায়। তারাই নানা সুমিষ্ট বচনে তরুণকে নিরুৎসাহিত করতে চায়। তাদের আবেগপ্রবণতাকে কাজে লাগিয়ে অসৎ উদ্দেশ্য সফল করে। প্রতি পদক্ষেপে তরুণদেরকে এসব জঞ্জাল অপসারণ করে পথ চলতে হয়। পথের পাথর বাধা সরাতে যেয়ে মুখোমুখি হতে হয় নানা সমস্যার। চূড়ান্ত লক্ষ্যে না পৌঁছানো পর্যন্ত এভাবে প্রতিরোধের শিকার হতে হয় নানা অপশক্তির। প্রবীণ ও বৃদ্ধের রক্ষণশীলতা, প্রতিক্রিয়াশীলের অন্তর্ঘাত, লাভের লোভ, অন্ধকারের হাতছানিÑএসব প্রতিনিয়ত বিঘœ সৃষ্টি করে, তরুণের চলার পথে। এজন্য উদ্দীপকে বলা হয়েছেÑতরুণের পদে পদে বাধা।

তরুণরা উচ্ছল, উজ্জ্বল প্রাণবন্ত। তরুণ আনন্দের প্রতিনিধিত্ব করে। উদ্দীপ্ত তার গতি, উদ্দাম তার আবেগ। নতুন সৃষ্টির আনন্দে পল­বিত প্রফুল­ তরুণ। সত্য ও সুন্দরের জন্য নিবেদিত প্রতিটি তরুণ। তারা উচ্চাভিলাসী, তারা উদ্যোগী, তারা শপথ দৃপ্ত। গৃহীত শপথ বাস্তবায়নে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তারা সফল। তারুণ্যের এই সাফল্যে কেউ হয় উজ্জীবিত, কেউ হয় ঈর্ষান্বিত, কেউ পীড়িত। যারা উজ্জীবিত হয় তারা তরুণকে সমর্থন, সহযোগিতা করে- সামনে এগিয়ে যেতে সহায়তা করে। ভালো করলে প্রশংসা করে, মন্দ করলে সতর্ক করে, নিরুৎসাহ করে না। যারা তারুণ্যের কর্মকাণ্ডে উজ্জ¦ীবিত হয় তারা পেছন হতে নিয়ন্ত্রণ বা পরিচালনা করে তরুণকে। নিজেদের জীবনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে তরুণদেরকে সামনে ঠিক পথে পরিচালনা করে। কিন্তু যারা ঈর্ষান্বিত তারা তরুণদেরকে ভুল পথে পরিচালিত করে। তাদের পবিত্র প্রাণশক্তিকে অন্ধকার পথে পরিচালিত করে। যে তারুণ্য কল্যাণের ধারাবাহী, তাকে অকল্যাণের জন্য উৎসর্গ করে। তারুণ্যের প্রাণপ্রাচুর্যকে তারা নিন্দায় নীল করে দেয়। তরুণের মানসিকতাকে দূষিত-কলুষিত করে দেয়। বিভিন্ন আদর্শিক আবর্তে ফেলে তরুণকে বিভ্রাš, বিপথগামী ও বিপদগামী করে ঈর্ষান্বিত মহল। যারা পীড়িত হয়, তারুণ্যের সাফল্যে তারাও বিবিধ উপায়ে তরুণকে বাধাগ্রস্ত করে। তাদের আবেগকে পুঁজি করে ব্যক্তি বা গোষ্ঠীস্বার্থ হাসিল করে। তরুণের পরিশ্র“ত মননকে অবলম্বন করে নিজেদের নোংরা স্বার্থ চরিতার্থ করে।
তরুণকে ঘিরে যে মন্দের মিছিলÑতারা নিজেরাই ভালো কিছু করে না। একান্ত নিন্দিত তাদের দর্শন। তারুণ্যের শুভ শক্তিকে তাই তাদের ভয়। সেই ভয়কে জয় করতে তারা তরুণকে কাছে টানে নানা লাভের লোভ দেখিয়ে। তারা মানবতার শত্র“। তারা তারুণ্যের জন্য ক্ষতিকারক।
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
মৃত্যুঞ্জয় বাবু এবং রামমোহন বাবু দু’জনেই পণ্ডিত ব্যক্তি। কিন্তু মৃত্যুঞ্জয় বাবু নতুনকে, প্রগতিশীলতাকে, তারুণ্যকে খুব বেশি প্রশংসা করেন না। রামমোহন বাবু এ দিক দিয়ে প্রাগ্রসর। তিনি বলেন- ‘কিছু খারাপ দিক তারুণ্যের আছে; সব শক্তিরই থাকে। তারপরও তারুণ্যের বিজয় সর্বত্র। দেশে-বিদেশে যত দুর্যোগ দুঃসময় এসেছে সেখানেই তরুণরা এগিয়ে গেছে সাহস নিয়ে। যেখানে সবাই পুরনোকে আঁকড়ে ধরে পড়ে আছেনÑসেখানে তারুণ্যের অহঙ্কারÑতারা নতুন কিছুতো করে। আপনারা তো গ্রন্থকীট। নবীনের শৌর্য আপনাদের অসহ্য।’
ক. আঠারো বছর বয়সে আঘাত আসে কেমন ভাবে?
খ. এ বয়স কালো লক্ষ দীর্ঘশ্বাসÑকেন কালো?
গ. উদ্দীপক অবলম্বনে তারুণ্যের প্রশংসনীয় দিকগুলো আলোচনা কর।
ঘ. উদ্দীপকটি/অনুচ্ছেদটি মূলত কবির নিজস্ব মানসিকতার প্রতিফলনÑএ ব্যাপারে তোমার অভিমত লেখ। ১



২০ নং প্রশ্নের উত্তর

আঠারো বছর বয়সে আঘাত আসে অবিশ্রান্ত।

তারুণ্যের সামনে বিস্তর বাধা বিপত্তি এসে দাঁড়ায়। তাকে বিপর্যস্ত করে তোলে সেসব দুঃসময়। তাকে আঘাত করে এবং সে আঘাত বুক পেতে গ্রহণ করে সে। ফলে তরুণেরা সচেতন ও সচেষ্ট হয়ে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে জীবন পরিচালনা করতে না পারায় ফেলতে হয় দীর্ঘশ্বাস। অনেক জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় বলে কখনো কখনো বেদনা অনুভব করতে হয়। তারুণ্যের প্রবল তোড়ে মাঝে মাঝে ভুল সংঘটিত হয় বলে দীর্ঘশ্বাস ফেলতে হয়।

তারুণ্য, জীবনের সোনালি সোপান। জীবনে সফলতার জন্য দরকার কর্ম। কর্মের যে ফল তা থেকে আসে সমৃদ্ধি। যে বা যারা কর্মের সাথে এগিয়ে যায় সে বা তারা সাফল্যের ছোঁয়া পায়ই। কর্মের এই তাগিদ বা অনুপ্রেরণা অর্জন করতে হয় বাল্যকাল থেকেই। আর তা গতিপ্রাপ্ত হয় তারুণ্যে বা যৌবনে। যারা কাজের বেলায় খুব বেশি হিসেবী যারা লোকসানের ভয়ে কাজ করে নাÑযারা ফলের ব্যাপারে অনিশ্চিত হয়ে কর্মবিমুখ হয়, তরুণরা তাদের মধ্যে পড়ে না। ফল নিশ্চিত জেনে বা ফলের মান সম্পর্কে জেনে যেমন তারা কাজ করে, ফল সম্পর্কে অনিশ্চিত হয়েও তারা কাজ করে। একেবারে কর্মবিমুখতা তরুণদের পক্ষে অসম্ভব। ফল যাই হোক তারা নতুন কিছু করেÑএটাই বড়কথা। শুধু আত্মস্বার্থ মগ্ন কাজ নয়, বৈশ্বিক কাজেও তরুণের চরণ ক্লান্তিতে অবসন্ন নয়। দেশে বা বিদেশে যখন দুঃসময় এসেছে, দুর্যোগ এসেছে তরুণেরা নিঃস্বার্থ চিত্তে এগিয়ে গেছে। মানবতার জন্য উৎসর্গ করেছে নিজেকে। যেখানে বৃদ্ধ বা প্রবীণেরা নীতি-নিয়ম মূল্যবোধ নিয়ে সীমার মধ্যে আবদ্ধ সেখানে তরুণেরা সব সীমাবদ্ধতাকে পেছনে ফেলে সব মানুষের স্বজনরূপে আবির্ভূত। তরুণেরা কোন হীনমন্যতাকে প্রশ্রয় দেয় না। কাজ করে, সেবা দিয়ে নতুন কিছু করে তারা অন্যের অনুকরণীয়, অনুসরণীয়Ñভালো লাগার পাত্র হয়ে ওঠে।

কিশোর কবি হিসেবে সম্মানিত কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য। মাত্র একুশ বছর বয়সে মৃত্যু হয়েছিল তাঁর। অনেকে মনে করেন, তিনি যখন আঠারো বছর বয়সের তরুণ ছিলেন, তখনÑআত্মমুকুরে দেখা আঠারো বছর বয়সকে কবিতায় রূপদান করেছিলেন। আঠারো বয়স বয়সটা অনেকের জন্য বয়ঃসন্ধিকাল। নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে বয়ঃসন্ধিকালের দোষগুণকে তিনি তুলে ধরেছেন এ কবিতায়। কৈশোরের নাজুক চিত্তবৃত্তি থেকে যৌবনে পা রাখার এ বয়সটি আবেগের, উত্তেজনার, উচ্ছ¡াসের। অসম সাহসে ঝুঁকি নেয়ার সময় এটাই। এ বয়স অদম্য দুঃসাহসে সকল বাধা-বিপত্তিকে পেরিয়ে যাওয়া এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার বয়স। এ বয়সের ধর্মই হলো আত্মত্যাগের মহান আদর্শে উজ্জীবিত হওয়া। আঘাত-সংঘাত মোকাবেলা করে সামনে এগিয়ে যাওয়া। শপথ দীপ্ত হয়ে সাফল্যকে ধরার চেষ্টা করা। আবার পরিপার্শ্বের-সমাজ সংসারের নানা অবিচার, বৈষম্য, অনিয়ম, অমানবিকতা ইত্যাদির অভিঘাতে আবেগাশ্রয়ী এ বয়স হয়ে উঠতে পারে ভয়ঙ্কর। বিকৃতি ও বিপর্যয়ের অজস্র আঘাতে ক্ষতবিক্ষত ও নিঃশেষ হতে পারে উদ্দাম তারুণ্য। আবার এই বয়সেই থাকে সমস্ত দুর্যোগ আর দুঃসময় মোকাবেলা করার অদম্য শক্তি। এ সময় তারুণ্য ও যৌবনশক্তি সমন্বিত আবেগ নিয়ে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যায় অগ্রযাত্রার পথে। যৌবনের উদ্দীপনা, সাহসিকতা, গতি, জীবন প্রত্যাশা ও কল্যাণকামী চিত্তবৃত্তিÑএসব বৈশিষ্ট্যের জন্য কবির ঐকান্তিক প্রত্যাশা সমস্যা পীড়িত আমাদের দেশে তারুণ্য ও যৌবনশক্তি যেন জাতীয় জীবনের চালিকাশক্তি হয়। কবির এই প্রত্যাশা আঠারো বছর বয়স কবিতার দেহ ঘিরে। তরুণদের ঘিরে কবির যে প্রত্যাশা তা যেমন আছে, তেমনি আছে দেশপ্রেমিক কবির দেশাত্মবোধের পরিচয়। দেশের জন্য দরকার প্রাণশক্তি, তেজ, সাহস, ত্যাগ, আবেগ। এসব কিছু তরুণের মধ্যে আছে। তাই তারুণ্যশক্তির প্রতি কবির এই ঐকান্তিক পক্ষপাত। দেশ এই তারুণ্যে ভরে উঠুক এটাও কবির প্রত্যাশা। এজন্য উদ্দীপকে যে দাবি করা হয়েছেÑযে এটি কবির নিজস্ব মানসিকতার প্রতিফলনÑতা সর্বৈব সত্য।


অনুশীলনীর বহুনির্বাচনি প্রশ্নোত্তর
১ সুকান্ত ভট্টচার্য কত বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন?
ক ১৯ খ ২০ জ ২১ ঘ ২২
২ ‘এ দেশের বুকে আঠারো আসুক নেমে।’ Ñ কোন বৈশিষ্ট্যের কারণে কবি আঠারোর প্রত্যাশা করেছেন?
চ ইতিবাচক খ দুঃসাহস গ বয়স ঘ তারুণ্য
নিচের উদ্দীপকটি পড়ে ৩ ও ৪ সংখ্যক প্রশ্নের উত্তর দাও।
ব্রিটিশ শাসকদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ ভারতবাসী। ক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণে এগিয়ে আসেন তাঁর অনেক অনুসারী। এঁদেরই একজন প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। শেষ পর্যন্ত তিনি মৃত্যুকে বরণ করে নিয়েছেন কিন্তু আত্মসমর্পণ করেননি।
৩ উদ্দীপকের প্রীতিলতার মাঝে ফুটে ওঠা দিকটি “আঠার বছর বয়স” কবিতার যে দিকটিকে ইঙ্গিত করে তা হলো
র. তারুণ্য
রর. আত্মত্যাগ
ররর. সর্বনাশের অভিঘাত
নিচের কোনটি ঠিক?
চ র ও রর খ র ও ররর গ রর ও ররর ঘ র. রর ও ররর
৪ ইঙ্গিতপূর্ণ দিকটি নিচের কোন চরণযুগলে ফুটে উঠেছে?
চ এ বয়স জানে রক্তদানের পুণ্য
বাষ্পের বেগে স্টিমারের মতো চলে
খ আঠারো বছর বয়সে নেই ভয়
পাদাঘাতে চায় ভাঙতে পাথর বাধা
গ প্রাণ দেওয়া-নেওয়া ঝুলিটা থাকে না শূন্য
সঁপে আত্মাকে শপথের কোলাহলে
ঘ এ বয়স বাঁচে দুর্যোগে আর ঝড়ে,
বিপদের মুখে এ বয়স অগ্রণী
মাস্টার ট্রেইনার কর্তৃক যাচাইকৃত বহুনির্বাচনি প্রশ্নোত্তর
সাধারণ বহুনির্বাচনি প্রশ্নোত্তর
ক কবি পরিচিতি : (বোর্ড বই থেকে)
৫ সুকান্ত ভট্টাচার্যের পৈতৃক নিবাস কোথায়?
ক বিক্রমপুর খ কলকাতা গ মানিকগঞ্জ ঝ গোপালগঞ্জ
৬ সুকান্ত ভট্টাচার্যের পৈতৃক নিবাস কোন গ্রামে?
ক মধুপুর খ রফিকপুর
জ কোটালীপাড়ায় ঘ আটপাড়ায়
৭ সুকান্ত ভট্টাচার্য কোথায় জন্মগ্রহণ করেন?
ক মাদারীপুরে খ গোপালগঞ্জে
গ ঢাকায় ঝ কলকাতায়
৮ সুকান্ত ভট্টাচার্য কত খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন?
ক ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে খ ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে
জ ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে ঘ ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে
৯ সুকান্ত ভট্টাচার্য কত খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন?
চ ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে খ ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে
গ ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে ঘ ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে
১০ সুকান্ত ভট্টাচার্য কত বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন?
ক পঁচিশ বছর খ বিশ বছর
জ একুশ বছর ঘ ঊনত্রিশ বছর
১১ ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতাটির রচয়িতা কে?
ক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর খ সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত
গ জসীমউদ্দীন ঝ সুকান্ত ভট্টাচার্য
১২ সুকান্ত ভট্টাচার্য কোন যুগের বিদ্রোহী তরুণ কবি?
ক রবীন্দ্র-সুধীন্দ্রনাথোত্তর যুগের
খ রবীন্দ্র-জীবনানন্দত্তোর যুগের
গ রবীন্দ্র-সত্যেন্দ্রনাথোত্তর যুগের
ঝ রবীন্দ্র-নজরুলোত্তর যুগের
১৩ সুকান্ত ভট্টাচার্যের বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থের নাম কী?
ক সাত সাগরের মাঝি ছ ছাড়পত্র
গ ঘুম নেই ঘ বিধ্বস্ত নীলিমা
১৪ ‘হরতাল’ সুকান্ত ভট্টাচার্যের কী জাতীয় রচনা?
ক রম্য খ উপন্যাস জ কাব্য ঘ শিশুতোষ
১৫ ‘পূর্বাভাস’ কাব্যগ্রন্থটির রচয়িতার নাম কী?
ক শামসুর রাহমান খ সুফিয়া কামাল
গ জীবনানন্দ দাশ ঝ সুকান্ত ভট্টাচার্য
১৬ সুকান্ত ভট্টাচার্য ফ্যাসিবাদবিরোধী লেখক-শিল্পী সংঘের জন্যে কোন কাব্যগ্রন্থটি সম্পাদনা করেন?
চ আকাল খ অনেক আকাশ
গ এক ফোঁটা কেমন অনল ঘ হরতাল
খ মূল পাঠ : (বোর্ড বই থেকে)
১৭ ‘আঠারো বছর বয়স’ হলো-
ক ভীরু খ নির্ভয় গ সংশয়ী ঝ বিনয়ী
১৮ “তবুও থামে না যৌবন-বেগ, জীবনের উল­াসে”Ñএ চরণটির রচয়িতা কে?
ক কাজী নজরুল ইসলাম খ সুফিয়া কামাল
গ অমিয় চক্রবর্তী ঝ সুকান্ত ভট্টাচার্য
১৯ “প্রাণ দেওয়া-নেওয়া ঝুলিটা থাকে না শূন্য”-কোন কবিতার অংশ?
ক জীবন-বন্দনা ছ আঠারো বছর বয়স
গ পাঞ্জেরি ঘ কবর
২০ ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় ‘আঠারো বছর বয়স’ কতবার উলে­খ আছে?
ক ৬ বার খ ৮ বার জ ৭ বার ঘ ৯ বার
২১ ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় ‘আঠারো’ কত বার আছে?
ক ৭ বার খ ৮ বার জ ৯ বার ঘ ১০ বার
২২ ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় মোট কতটি লাইন আছে?
ক ৩৯টি খ ২৯টি জ ৩২টি ঘ ৪২টি
২৩ ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় এই বয়সকে প্রথমে কী বলে সম্বোধন করা হয়েছে?
ক নির্ভয় ছ দুঃসহ গ সংশয়ী ঘ বিনয়ী
২৪ ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় ২য় স্তবকে বয়সকে কী নামে সম্বোধন করা হয়েছে?
ক দুঃসহ খ বিনয়ী গ দুর্বার ঝ নির্ভয়
২৫ তোমার পাঠ্যসূচির কোন কবিতায় স্টিমারের কথা উলে­খ আছে?
ক জীবন-বন্দনা খ পাঞ্জেরি
জ আঠারো বছর বয়স ঘ সোনার তরী
২৬ ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার প্রথম লাইন কোনটি?
ক এ বয়স জানে রক্তদানের পুণ্য
খ আঠারো বছর বয়সের নেই ভয়
গ আঠারো বছর বয়স যে দুর্বার
ঝ আঠারো বছর বয়স কী দুঃসহ
২৭ ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় শেষ চরণটিতে কী আহŸান করা হয়েছে?
ক এ বয়স যেন না আসে খ এ বয়স যেন চলতে থাকে
গ এ বয়স যেন চলে যায় ঝ এ বয়স যেন চলে আসে
২৮ আঠারো বছর বয়সের ক্ষেত্রে কোনটি প্রযোজ্য
ক শৈশব থেকে কৈশোরে পদার্পণ
খ যৌবন থেকে বৃদ্ধে পদার্পণ
জ কৈশোর থেকে যৌবনে পদার্পণ
ঘ যৌবন থেকে কৈশোরে
২৯ ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় আঠারো বছর বয়সের কোন দিকটির কথা বলা হয়েছে?
ক ইতিবাচক খ নেতিবাচক
গ আত্মবাচক ঝ ক ও খ দুটিই
৩০ রবীন্দ্র-নজরুলোত্তর যুগের বিদ্রোহী তরুণ কবি কে?
ক ফররুখ আহমদ ছ সুকান্ত ভট্টাচার্য
গ সৈয়দ আলী আহসান ঘ অমিয় চক্রবর্তী
৩১ সুকান্তের বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থের নাম কী?
ক হরতাল ছ ছাড়পত্র
গ হাতেমতায়ী ঘ পূর্বাভাস
৩২ কাব্যিক বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে যে কবির সঙ্গে সুকান্তের মিল রয়েছে?
চ কাজী নজরুল ইসলাম খ জীবনানন্দ দাশ
গ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঘ ফররুখ আহমদ
৩৩ কোন বয়সকে কবি দুঃসহ বলেছেন?
ক ১৪ বছর বয়সকে ছ ১৮ বছর বয়সকে
গ ১৫ বছর বয়সকে ঘ ১৯ বছর বয়সকে
৩৪ আঠারো বছর বয়স কী জানে?
ক বিপ্ল¬ব খ ক্ষত-বিক্ষত হতে
জ রক্তদানের পুণ্য ঘ কাঁদা
৩৫ আঠারো বছর বয়সেই অহরহ কী উঁকি দেয়?
চ সাহস খ বিপ্ল¬ব গ মন্ত্রণা ঘ কোলাহল
৩৬ আঠারো বছর বয়সে কানে কী আসে?
চ যন্ত্রণা খ মন্ত্রণা গ গুজব ঘ সত্যের বাণী
৩৭ বিপদের মুখে আঠারো বছর বয়সের রূপ কেমন?
ক অগ্রণী খ সাহসী
জ কিংকর্তব্যবিমূঢ় ঘ পশ্চাৎমুখী
৩৮ নতুন কিছু করে কোন বয়সে?
ক কিশোর বয়সে খ ৪০ বছর বয়সে
গ বাল্য বয়সে ঝ আঠারো বছর বয়সে
৩৯ “আঠারো বছর বয়সের” নেতিবাচক দিক কোনটি?
ক কাঁদতে জানে না ছ ভয়ঙ্কর
গ হাসতে জানে না ঘ মাথা নোয়ায় না
৪০ ‘ছাড়পত্র’ কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হয় কত সালে?
ক ১৯৪৫ ছ ১৯৪৮ গ ১৯৪৬ ঘ ১৯৪৭
৪১ “এ বয়স জানে রক্তদানের পুণ্য”Ñএ চরণটির রচয়িতা কে?
ক অমিয় চক্রবর্তী খ কাজী নজরুল ইসলাম
গ সৈয়দ আলী আহসান ঝ সুকান্ত ভট্টাচার্য
৪২ সুকান্ত ভট্টাচার্য যে পত্রিকার কিশোর সভা অংশের প্রতিষ্ঠাতা ও আজীবন সম্পাদক ছিলেন?
ক আকাল খ সবুজপত্র জ স্বাধীনতা ঘ সওগাত
৪৩ ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির সক্রিয় সদস্য ছিলেন কোন কবি?
ক সৈয়দ আলী আহসান ছ সুকান্ত ভট্টাচার্য
গ আহসান হাবীব ঘ বিষ্ণু দে
৪৪ আঠারো বছর বয়স পথের বাধা কেমন করে ভাঙতে চায়?
ক যুদ্ধ করে খ কুঠারাঘাতে
জ চরণাঘাতে ঘ আগুন জ্বালিয়ে
৪৫ সুকান্ত কী ধরনের কবি?
ক বিদ্রোহের কবি খ শান্তির কবি
গ প্রেমের কবি ঝ বিপ্ল¬বের কবি
৪৬ আঠারো বছর বয়স কীসের মধ্যে বাঁচে?
ক ভালো ও মন্দে খ হাসি আর কান্নায়
জ দুর্যোগে আর ঝড়ে ঘ আশা আর হতাশায়
৪৭ আঠারো বছর বয়সে কী আসে?
ক শান্তি খ কান্না গ কল্যাণ ঝ আঘাত
৪৮ কারা ভীরু, কাপুরুষ নয়?
ক বুদ্ধিজীবীরা খ শিশুরা জ তরুণেরা ঘ বৃদ্ধরা
৪৯ এ দেশের বুকে আবার কী নেমে আসুক বলে সুকান্ত ভট্টাচার্য তাঁর ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় উলে­খ করেছেন?
ক বাইশ খ কল্যাণ গ শান্তি ঝ আঠারো
৫০ আঠারো বছর বয়স দুঃসহ কেন?
ক দুরন্ত বলে খ পড়াশোনার চাপ থাকে বলে
গ বয়ঃসন্ধিকাল বলে ঝ দুঃসাহসেরা উঁকি দেয় বলে
৫১ ‘রক্তদানের পুণ্য’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
ক রক্ত দানে পুণ্য অর্জন হয় খ রক্ত পোষণ করা হয়
গ রক্ত বিলিয়ে দেয়া হয় ঝ রক্ত দিতে জানা
৫২ আঠারো বছর বয়স ভয়ংকর হয়?
ক দুঃখ সহ্য করতে হয় বলে খ দুঃসহ বলে
জ কানে মন্ত্রণা আসে বলে ঘ ভয় থাকে বলে
৫৩ কেন আঠারো বছর বয়সে মানুষ আত্মপ্রত্যয়ী হয়?
ক দুঃসাহসী হয় বলে
খ এ বয়সে মানুষ বুদ্ধিমান থাকে বলে
জ দুর্বিনীত যৌবনে পদার্পণ করে বলে
ঘ বয়ঃসন্ধিকাল বলে
৫৪ কবি কেন আঠারো বছর বয়সকে আহŸান জানিয়েছেন?
ক দুর্দমনীয় বলে খ গম্ভীর বলে
গ আত্মপ্রত্যয়ী বলে
ঝ জাতীয় জীবনের চালিকাশক্তি বলে
৫৫ আঠারো বছর বয়স থরো থরো কাঁপে কেন?
ক রাগে খ দুঃখে জ বেদনায় ঘ উত্তেজনায়
৫৬ আঠারো বছর বয়সে বিপর্যয় নেমে আসার কারণ কী?
ক নিজেকে দুর্বল ভাবার কারণে
খ অতিরিক্ত মানসিক চাপে
জ নিজেকে ঠিকমতো পরিচালনা না করতে পারার কারণে
ঘ অসৎ বন্ধুদের সাথে মেলামেশার কারণে
৫৭ আঠারো বছর বয়সে দুঃসাহসেরা উঁকি দেয় কেন?
ক নিজেকে দুর্বল ভাবার কারণে
খ সাহসের অভাব বলে
জ কৈশোর থেকে যৌবনে পদার্পণ করে বলে
ঘ বন্ধুদের সাথে মেলামেশার কারণে
৫৮ প্রাণবন্ত তরুণেরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে কেন?
ক নিজেকে সাহসী ভাবার কারণে
খ সাহসের অভাব বলে
জ অত্যাচার-শোষণ দেখে
ঘ বিপদে পড়ে
৫৯ দেশ ও জাতির কল্যাণে তারুণ্য শক্তি এগিয়ে আসে কেন?
ক তারুণ্য শক্তি অপ্রতিরোধ্য বলে
খ তারুণ্য বন্ধনহীন বলে
গ তরুণদের প্রধান নীতিই তাই
ঝ এটাই তারুণ্যের ধর্ম বলে
৬০ সুকান্ত ভট্টাচার্যকে বিপ্ল¬বের কবি কেন বলা হয়?
ক তিনি কমিউনিস্ট পার্টির নেতা ছিলেন বলে
খ তিনি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে
গ তাঁর কবিতায় তরুণের জয়গান গাওয়া হয়েছে বলে
ঝ তাঁর কবিতা বিপ্ল¬বের রুদ্ররসে আপ্লুত ছিল বলে
৬১ কেন আঠারো বছর বয়স এত গুরুত্বপূর্ণ?
ক এ বয়স মাথা নত করতে জানে না
ছ এ বয়স মানবজীবনের এক উত্তরণকালীন পর্যায়ে
গ এ বয়স কাঁদতে জানে না
ঘ এ বয়স হাসতে পারে না
৬২ ‘তারুণ্যের ইতিবাচক দিক’ বলতে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
ক তরুণদের বিদ্রোহী সত্তাকে
খ তরুণদের খাম-খেয়ালিপনাকে
গ তরুণদের ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠাকে
ঝ দেশ ও জাতির কল্যাণে তরুণদের অগ্রণী ভ‚মিকাকে
৬৩ ‘তারুণ্যের নেতিবাচক দিক’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
ক তারুণ্যের সাহসকে
ছ তারুণ্যের যোগ্য নেতৃত্ব ও সঠিক পরিচালনার অভাবকে
গ তারুণ্যের নির্ভীক সত্তাকে
ঘ তারুণ্যের বিপ্ল¬বী মনোভাবকে
৬৪ “এ দেশের বুকে আঠারো আসুক নেমে”Ñকবি কেন এ প্রার্থনা করেছেন?
চ প্রগতির পথে এগিয়ে চলাই যৌবনের ধর্ম
খ কঠিন মনোভাবের জন্য
গ অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের জন্য
ঘ মাথা তুলে দাঁড়ানোর জন্য
৬৫ “এ বয়সে কানে আসে কত মন্ত্রণা” Ñএ চরণের মাধ্যমে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
ক তারুণ্যের স্বপ্নবিলাসিতাকে
খ তারুণ্যের নির্ভীকতাকে
গ তারুণ্যের দুর্বার গতিকে
ঝ তারুণ্যের ইতিবাচক নেতিবাচক নানা তত্ত¡ ও ভাবধারাকে
৬৬ আঠারো বছর বয়স কেন কাঁদতে জানে না?
ক এ বয়সে দুঃখ-কষ্ট স্পর্শ করতে পারে না বলে
ছ এ বয়সে দুর্বিনীত যৌবনে পদার্পণ করে আত্মপ্রত্যয়ী হয় বলে
গ এ বয়সে হাসতে নিষেধ আছে বলে
ঘ এ বয়সে কান্না ভালো নয় বলে
৬৭ ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় ‘দুর্যোগে হাল ঠিকমতো রাখা ভার’ বলতে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
ক যৌবনে পদার্পণের নানা অসুবিধাকে
খ তারুণ্যের বিদ্রোহী সত্তার পরিণতিকে
গ তারুণ্যের দুঃসাহসী অভিযানকে
ঝ জীবনের সন্ধিক্ষণে সচেতনতার অভাবে বিপর্যয়ের আভাসকে
৬৮ তাজা তাজা প্রাণে অসহ্য যন্ত্রণার কারণ কোনটি?
ক মানসিক বিপর্যয়
খ যৌবনে পদার্পণ
গ অর্থলোলুপ ব্যক্তিদের দৌরাত্ম্য
ঝ চারপাশের অন্যায়, সামাজিক বৈষম্য ও ভেদাভেদ
৬৯ এ বয়স কেন পথ চলতে থেমে যায় না?
চ এ বয়স প্রগতি ও অগ্রগতির
খ এ বয়সে চিত্ত অস্থির থাকে
গ এ বয়সে দুঃসাহস ভর করে
ঘ এ বয়সে দেহ ও মনে স্থবিরতা আসে
৭০ ‘এ বয়স কালো লক্ষ দীর্ঘশ্বাসে’Ñকেন?
ক এ বয়সে লক্ষ্যপথে অনেক বাধা
ছ এ বয়সে লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ার অজস্র ব্যর্থতার দীর্ঘশ্বাস
গ এ বয়সে খাম-খেয়ালি করা যায় না
ঘ এ বয়সে মনের অবস্থা দুর্বল থাকে বলে
৭১ আঠারো বছর বয়সে কেউ মাথা নোয়ায় না কেন?
ক এ বয়সীরা স্বপ্নে বিভোর থাকে
খ এ বয়সীরা মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে না
গ এ বয়সীরা বুদ্ধিদীপ্ত থাকে না
ঝ এ বয়সীরা আত্মবলে বলীয়ান থাকে
৭২ ‘শপথের কোলাহলে’ বলতে লেখক কী বোঝাতে চেয়েছেন?
চ নিত্যনতুন সৃষ্টির উল­াসে নব নব শপথে বলীয়ান হওয়াকে
খ বিপদের ঝুঁকি নিয়ে জীবনের প্রতি মমতা ত্যাগ করাকে
গ তারুণ্যের বিপদ শঙ্কাকে
ঘ তারুণ্যের অগ্রযাত্রাকে
৭৩ “স্পর্ধায় নেয় মাথা তোলবার ঝুঁকি”Ñএখানে কবি কী বুঝিয়েছেন?
চ আত্মনির্ভরশীল হয়ে স্বাধীনভাবে চলার ঝুঁকি
খ আত্মবলে বলীয়ান না হয়ে ওঠা
গ আত্মমর্যাদাবোধ বৃদ্ধি পায় বলে
ঘ পরনির্ভরশীল হয়ে বেঁচে থাকা
৭৪ “এ বয়সে প্রাণ তীব্র আর প্রখর”Ñএখানে ‘তীব্র আর প্রখর’ বলতে কী বোঝানো হয়েছেÑ
ক অনুভ‚তির সীমাবদ্ধতা খ বিরহ-বিষণœতা
গ বিদ্রোহী মনোভাবাপন্নতা
ঝ অনুভ‚তির তীব্রতা ও সুগভীর সংবেদনশীলতা
৭৫ আঠারো বছর বয়সকে নিয়ে কবিতা রচনার কারণ কী?
চ এ বয়স মানবজীবনের এক উত্তরণকালীন পর্যায়
খ এ বয়স বাধাহীন
গ এ বয়স যৌবনের উচ্ছ¦লতার ঘ এ বয়স স্থবির
৭৬ কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের সাথে কোন কবির সাদৃশ্য দেখা যায়?
ক গোলাম মোস্তফা ছ কাজী নজরুল ইসলাম
গ জসীমউদ্দীন ঘ শামসুর রাহমান
৭৭ কবিতার বিচারে সুকান্ত ভট্টাচার্যের সঙ্গে মিল খুঁজে পাওয়া যায় কোন কবির?
ক অমিয় চক্রবর্তী খ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
গ আহসান হাবিব ঝ কাজী নজরুল ইসলাম
৭৮ তারুণ্যের চঞ্চল ও কর্মমুখর প্রাণ স্পন্দনকে কবি কীসের সঙ্গে তুলনা করেছেন?
ক ট্রেনের সাথে খ জাহাজের সাথে
জ বাষ্পীয় স্টিমারের সাথে ঘ অটোরিকশার সাথে
৭৯ আঠারো বছর বয়স কীসের প্রতীক?
ক উচ্ছ¡লতার খ বিপ্ল¬বের জ যৌবনের ঘ মানবতার
৮০ ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার ইতিবাচক দিক কোনটি?
ক কাঁদতে জানা খ কষ্ট
গ ক্ষত-বিক্ষত ঝ দুঃসাহস
৮১ মানবজীবনের জন্য শুভ ও মঙ্গলজনক বলে মনে করা হয়েছেÑ
ক তারুণ্যের জয়ধ্বনিকে
খ তারুণ্যের ধর্মকে
গ তারুণ্যের নেতিবাচক বৈশিষ্ট্যকে
ঝ তারুণ্যের ইতিবাচক বৈশিষ্ট্যকে
৮২ তারুণ্যের নেতিবাচক দিক কোনটি?
চ কালো লক্ষ দীর্ঘশ্বাসে খ বিপ্ল¬ব
গ কাঁদতে জানে না ঘ বিরাট দুঃসাহস
৮৩ নিচের কোনটি তারুণ্যের দুর্বার চলার গতির সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ?
ক জরাজীর্ণতা খ দেহ ও মনের স্থবিরতা
গ সজীবতা ঝ প্রগতি ও অগ্রগতি
৮৪ “এ বয়সে কেউ মাথা নোয়াবার নয়”Ñএর আগের চরণটি কোনটি?
ক আঠারো বছর বয়স কী দুঃসহ
খ ক্ষত-বিক্ষত হয় সহস্র প্রাণ
গ আঠারো বছর বয়সের নেই ভয়
ঝ পদাঘাতে চায় ভাঙতে পাথর বাধা
৮৫ ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় কবির কী প্রকাশিত হয়েছে?
ক কবির বাল্য জীবনের অভিজ্ঞতা
খ কবির রাজনৈতিক জীবনের অভিজ্ঞতা
গ কবির শিক্ষা জীবনের অভিজ্ঞতা
ঝ কবির ব্যক্তিজীবনের অভিজ্ঞতা
৮৬ ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতাটি মূলত-
ক যৌবনের কবিতা খ প্রেমের কবিতা
জ বিপ্লবাত্মক কবিতা ঘ সচেতনতামূলক কবিতা
৮৭ ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার প্রথম স্তবকে কী প্রকাশিত হয়েছে?
ক তারুণ্যের দুর্বলতা খ তারুণ্যের শক্তিময়তা
গ তারুণ্যের নিস্পৃহতা ঝ তারুণ্যের ভয়াবহ রূপ
৮৮ ‘এ বয়স জানে রক্তদানের পুণ্য’Ñ কথাটির তাৎপর্য কী?
ক কল্যাণের জন্য রক্ত ঘোষণা করতে জানে
খ রক্ত ঝরাতে পারে
গ রক্তাক্ত ঘটনা ঘটাতে পারে
ঝ কল্যাণের জন্য রক্তমূল্য দিতে জানে
৮৯ ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতায় কোন কালের বৈশিষ্ট্যকে উলে­খ করা হয়েছে?
ক কৈশোরের খ যৌবনের
গ তারুণ্যের ঝ বয়ঃসন্ধিকালের
৯০ ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতার শেষ স্তবকে কী প্রকাশিত হয়েছে
ক যৌবনের প্রতি ধিক্কার ছ যৌবনের প্রতি আহŸান
গ যৌবনের স্তূতিগান ঘ যৌবনের প্রতি বিরক্তি প্রকাশ
৯১ সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতার বৈশিষ্ট্য কী?
ক প্রকৃতি ও নৈসর্গ প্রীতি
ছ অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও সংগ্রামের আহŸান
গ নাগরিক জীবনবোধ
ঘ সামাজিক নিপীড়ন

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]