কাজা নামাজ সম্পর্কে হাদিস কাজা নামাজের নিয়ত

কাজা নামজের নিয়ম ও নিয়ত
নামাজ
কাজা নামাজ আদায় করার নিয়ম ও নিয়ত । মাওলানা শরিফ আহমাদ
কাজা নামাজ আদায় করার নিয়ত ও নিয়ম
দেশ-বিদেশের সুপ্রিয় বন্ধুরা । আজকে আমার আলোচ্য বিষয় কাযা নামাজ আদায় করার নিয়ম । নির্ধারিত টপিকে আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ। আলোচনাটা আপনাদের বোঝা ও হৃদয়াঙ্গম করার লক্ষ্যে কয়েকটি শিরোনামে ভাগ করে নিচ্ছি । আগে শিরোনামগুলো পড়ুন । তারপর…. ।
১. কাযা নামাজ কি ? ২. কাযা নামাজের প্রকার ৩. কাযা নামাজের বিধান ৪. কাযা নামাজের দলীল ৫. কাযা নামাজ আদায় করার নিয়ম ৬. কাযা নামাজের কাফফারা । কাজা নামাজের নিষিদ্ধ সময়। সুন্নাত নামাজ কাজা। বিতর নামাজের কাজা পরার নিয়ম। কাজা নামাজের মাসআলা।
হ্যাঁ বন্ধুরা । এবার এক এক করে আলোচনা করছি । আপনারা পড়তে থাকুন । সঙ্গে থাকুন ।
কাজা নামাজ কি ?
নামাজ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত । ইসলামে ঈমানের পর নামাজের স্থান । পবিত্র কুরআনে প্রায় ৮২ আয়াতে নামাজের কথা বলা হয়েছে। শত শত হাদীসের মধ্যে নামাজের গুরুত্ব , ফজিলত ও বিধিবিধান সম্পর্কে নির্দেশনা এসেছে। তাই অন্যান্য শিক্ষার পাশাপাশি নামাজের বিষয়গুলো অর্থাৎ ফরজ , ওয়াজিব , সুন্নাত, নফল ইত্যাদি বিষয়ক শিক্ষা অর্জন করা ফরজ ।
আপনারা সেই শিক্ষা অর্জন করতে সচেষ্ট হবেন। আপনাদের জানিয়ে রাখছি নামাজ মূলত দুই প্রকার ।
১. আদা
২. কাযা
আদা নামাজ কাকে বলে?
যে নামাজ নিয়মিত আদায় করা হয় তাকে আদা নামাজ বলে ।
কাজা নামাজ কাকে বলে?
আর কাযা বলা হয় অনিচ্ছাকৃত ­ভুলবশত কিংবা অন্য কোন কারণে নামাজ ওয়াক্তের পড়তে না পারলে সেই নামাজ পরবর্তীতে আদায় করাকে কাজা বলে ।
কাজা নামাজ কয় প্রকার?
বন্ধুরা একটু আগে কাজা নামাজের পরিচয় পেয়েছেন । এবার জানুন কাজা নামাজের প্রকার । কাজা নামাজ হচ্ছে দুই প্রকার ।
১. ফাওয়ায়েতে কালীল ।
২. ফায়াওয়েতে কাসীর।
ফাওয়ায়েতে কালীলের পরিচয়ঃ
ফাওয়ায়েত অর্থ ছুটে যাওয়া । এক কথায় কাজা । কালীল অর্থ অল্প । দুই শব্দের মিলিত অর্থ অল্প কাজা।
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পুরো পাঁচ ওয়াক্ত কিংবা দু এক ওয়াক্ত নামাজ কাজা হলে তাকে ফাওয়ায়েতে কালীল বলা হয় ।
ফায়াওয়েতে কাসীরের পরিচয়ঃ
ফাওয়ায়েত অর্থ কাযা আর কাসীর অর্থ বেশি ।
দুই শব্দের মিলিত অর্থ হচ্ছে বেশি কাজা । পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের বেশি, এক সপ্তাহ, এক বছর বা আরো অনেক বছরের ছুটে যাওয়া নামাজকে ফাওয়ায়েতে কাসীর বলা হয়।
কাজা নামাজের মাসায়েল
বন্ধুরা এবার কাজা নামাজের বিধান এবং জরুরী মাসআলা মাসায়েল একত্রে উল্লেখ করছি । যেন আপনাদের বুঝতে সহজ হয় । এখানে একটু মনোযোগ সহকারে পড়ুন । কথাগুলো বুঝতে হবে আপনাদের।
* কারো কোন ফরজ নামাজ ছুটে গেলে স্মরণ হওয়া মাত্রই কাযা পড়া ওয়াজিব । বিনা ওজরে কাজা পড়তে বিলম্ব করা পাপ ।
* কাজা নামাজ পড়ার জন্য নির্দিষ্ট কোন সময় নেই । হারাম ও মাকরুহ ওয়াক্ত ছাড়া যে কোন সময় পড়া যায় ।
* কারো যদি এক, দুই ,তিন ,চার, বা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ কাজা হয় এবং এর পূর্বে তার কোন কাজ নেই তাহলে তাকে সাহেবে তারতীব বলে । তাকে দুই ধরনের তারতীব রক্ষা করতে হবে । যথা:
১. ওয়াক্তিয়া নামাজের পূর্বে এই কাজাগুলো পড়ে নিতে হবে । অন্যথায় ওয়াক্তিয়া নামাজ শুদ্ধ হবে না ।
২. এই কাজা নামাজগুলো ধারাবাহিকভাবে (আগেরটা আগে এবং পরেরটা পরে ) পড়তে হবে । সাহেবে তারতীবের জন্য এই ধরনের তারতীব করা ফরজ ।
* যদি কারো জিম্মায় ছয় বা আরো বেশি ওয়াক্তের কাজা থাকে তাহলে সে কাজা রেখে ওয়াক্তিয়া নামাজ পড়তে পারে এবং কাজা নামাজগুলোও তারতীব ছাড়া পড়তে পারে । তখন সে সাহেবে তারতীব থাকে না ।
* যদি কারো জিম্মায় ছয় বা ততোধিক নামাজ কাজা ছিল । সে কারণে সে সাহেবে তারতীব ছিল না । সেসব কাযা পড়ে ফেললে তাহলে সে এখন থেকে আবার সাহেবে তারতীব হবে । অতএব আবার যদি পাঁচ ওয়াক্ত পর্যন্ত কাজা হয়ে যায় তাহলে আবার তারতীবের হুকুম ফিরে আসবে । তারতীব রক্ষা করা ফরজ হবে ।
* বহুসংখ্যক নামাজের অল্প অল্প করে কাজা পড়তে পড়তে পাঁচ ওয়াক্ত বা তার কম চলে আসলেও তারতীব ওয়াজিব হবে না ।
কথাগুলো কি বুঝতে পেরেছেন ? বুঝলে তো ভালো। মাশাআল্লাহ । আপনাদের জ্ঞানের প্রশংসা করতে হয় । আর যদি না বুঝে থাকেন তাহলে আবার পড়ুন । বুঝে আসবে ইনশাআল্লাহ ।
এবার শুনুন তিন কারণে তারতীব মাফ হয়ে যায় ।
১. ওয়াক্ত যদি এত সংকীর্ণ হয় যে আগে কাজা পড়তে গেলে ওয়াক্তিয়া নামাজের সময় থাকে না তাহলে আগে ওয়াক্তিয়া নামাজ পড়ে নিবেন ।
২. কাজা নামাজ যদি পাঁচ ওয়াক্তের অধিক হয় । তাহলে তারতীব রক্ষা করতে হয় না ।
৩. যদি আগে কাজা পড়তে ভুলে যায় ।
শুধু ফরজ এবং বেতরের নামাজের কাযা পড়ার নিয়ম । নফল বা সুন্নাতের কাযা হয় না । তবে কোন নফল বা সুন্নাত শুরু করে পূর্ণ না করেই ছেড়ে দিলে তার কাযা করতে হবে।
যদি কোনো কারণবশত দল শুদ্ধ নামাজ কাজা হয়ে যায়, তাহলে তারা ওয়াক্তিয়া নামাজ যেমন জামাআতে পড়তো তেমনি কাজা নামাজ জামাতে পড়বে । সিররিয়া অর্থাৎ যে সকল নামাজের মধ্যে কেরাত চুপে চুপে পড়তে হয় , কাজা নামাজের ক্ষেত্রে কেরাত চুপে চুপে পড়বেন । আর জিহরিয়া অর্থাৎ যে সব নামাজের মধ্যে কেরাত জোরে পড়তে হয় কাজা নামাজের ক্ষেত্রে তখন কেরাত জোরে জোরে পড়বেন । ( আহকামে যিন্দেগী )
কাজা নামাজের দলীল
প্রিয় বন্ধুরা ! এবার দেখুন কাজা নামাজের দলীল ।
১ নং দলীলঃ
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- « إِذَا رَقَدَ أَحَدُكُمْ عَنِ الصَّلاَةِ أَوْ غَفَلَ عَنْهَا فَلْيُصَلِّهَا إِذَا ذَكَرَهَا فَإِنَّ اللَّهَ يَقُولُ أَقِمِ الصَّلاَةَ لِذِكْرِى.
অনুবাদ: যখন তোমাদের কেউ নামাজ ছেড়ে ঘুমিয়ে পড়ে , বা নামাজ থেকে গাফেল হয়ে যায় তাহলে তার যখন বোধোদয় হবে তখন সে যেন তা আদায় করে নেয় । কারণ আল্লাহ তাআলা বলেছেন, আমাকে স্মরণ হলে নামাজ আদায় করো ।
( সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৬০১ মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১২৯৩২,সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-৪১৮২)
কাজা নামাজ আদায়ের দলীলঃ

কাজা নামাজ আদায় করার দলীল

হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত । ওমর বিন খাত্তাব রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু খন্দকের দিন সূর্য ডুবার পর কুরাইশ কাফেরদের তিরস্কার করতে করতে এলেন। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন-“হে আল্লাহর নবী! আমি আসরের নামায পড়তে পারিনি এরই মাঝে সূর্য ডুবে গেছে”।

নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন-“হায় আল্লাহ! আমরাওতো পড়তে পারিনি! তারপর আমরা সমতল ভূমিতে দাঁড়ালাম। আর তিনি নামাযের জন্য অযু করলেন। আর আমরাও নামাযের জন্য অযু করলাম। তারপর সূর্য ডুবে গেলেও প্রথমে আমরা আসর পড়লাম। তারপর মাগরিব পড়লাম।(সহীহ বুখারী-হাদীস নং-৫৭১,৫৭৩,৬১৫,৯০৩,৩৮৮৬,)
কাজা নামাজের হাদীসঃ
হযরত আনাস বিন মালিক রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নামায রেখে ঘুমিয়ে যাওয়া ব্যক্তি ও নামায সম্পর্কে গাফেল ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন-এর কাফফারা হল যখনই নামাযের কথা স্মরণ হবে তখনই তা আদায় করে নিবে। ( সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-৯৯১ মুসনাদে আবী আওয়ানা, হাদীস নং-১০৪১ মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদীস নং-৩০৬৫মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৩২৬২
সুনানে নাসায়ী কুবরা, হাদীস নং-১৫৮৫ )
৪ নং দলীলঃ
হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহু বলতেন-যে ব্যক্তি নামাযের কথা ভুলে যায় তারপর তা স্মরণ হয় ইমামের সাথে জামাতে নামাযরত অব্স্থায়, তাহলে ইমাম সালাম ফিরানোর পর যে নামায ভুলে পড়েনি, তা আদায় করবে, তারপর অন্য নামায পড়বে। ( মু্য়াত্তা মালিক, হাদীস নং-৫৮৪ সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-৩০১২ )
কাজা নামাজ আদায় করার নিয়ম
প্রিয় বন্ধুরা । কাজা নামাজ আদায় করার জন্য বিশেষ কোনো নিয়ম নেই । অন্য সকল ফরজ নামাজ যে তরীকায় পড়তে হয় কাজা ফরজ নামাজ সেরকম পড়তে হয় ।
ওয়াক্তিয়া নামাজ ফজর, মাগরিব ও এশা এই নামাজের সময়ে উচ্চস্বরে কেরাত পড়তে হয় । ঠিক এই নামাজ গুলো কাজা হলে আদায় করার সময় কেরাত উচ্চস্বরে পড়তে হবে । আর জোহর-আসরে ওয়াক্তিয়া ফরজ নামাজের কেরাত আস্তে পড়তে হয় ।
এই দুই নামাজ কাজা আদায় করতে হলে তখন কেরাত আস্তে পড়তে হবে । আর বাকি নামাজের নিয়ম অন্যান্য নামাজের মত । এবার শুধু নিয়ত শিখুন।
কাজা নামাজের নিয়ত
প্রিয় বন্ধুরা । নামাজের আরবী নিয়তের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই । অন্তরে খেয়াল থাকলেই নিয়ত হয়ে যায় । যদিও বা মুখে উচ্চারণ করা উত্তম । বাজারে প্রচলিত বইগুলোতে আরবী নিয়তগুলো এক প্রকার বাড়াবাড়ি । এগুলো নির্ভরযোগ্য কোন কিতাবে আসেনি ।
তাছাড়া মানুষ এগুলো শিখতে গিয়ে ফরয-ওয়াজিব অনেক ক্ষেত্রে শিখতে পারে না । অতএব ঐগুলিকে এড়িয়ে যান । নিয়ত কেমন হতে পারে সহজে বোঝার জন্য কয়েকটি নমুনা দিচ্ছি। হুবহু এ ভাবে অথবা নিজের মতো করে নিয়ত করতে পারেন ।
ফজরের কাজা নামাজের নিয়ত:
আমি কিবলামুখী হয়ে ফজরের ফরজ দুই রাকাত কাজা নামাজ আদায় করছি আল্লাহর আকবার।
যোহরের কাজা নামাজের নিয়ত:
আমি কেবলামুখী হয়ে জোহরের চার রাকাত ফরজ কাযা নামাজ আদায় করছি আল্লাহু আকবার।
আসরের কাজা নামাজের নিয়ত:
আমি কেবলামুখী হয়ে আসরের চার রাকাত ফরজ কাযা নামাজ আদায় করছি আল্লাহর আকবার ।
মাগরিবের কাজা নামাজের নিয়ত:
আমি কেবলামুখী হয়ে মাগরিবের তিন রাকাত ফরজ কাযা নামায আদায় করছি আল্লাহু আকবার ।
এশার কাযা নামাজের নিয়ত:
আমি কেবলামুখী হয়ে ইশার চার রাকাত ফরজ কাযা নামায আদায় করছি আল্লাহু আকবার ।
বিতরের নামাযের নিয়ত:
আমি ভিতরে তিন রাকাত কাজা নামাজ আদায় করছি আল্লাহু আকবার ।
কাযা নামাযের কাফফারা
জীবিত ব্যক্তির জন্য কাযা নামাযের কাফফারা হলো কাজা নামাজ আদায় করে নেওয়া । আর যদি মৃত ব্যক্তি হয় যে তার সম্পত্তি থেকে কাফফারা দেওয়ার জন্য অসিয়ত করে গিয়েছে এবং সম্পদ রেখে যায়
তাহলে তার এক তৃতীয়াংশ সম্পত্তি থেকে কাফফারা আদায় করতে হবে।
আর যদি মৃত ব্যক্তির কোন সম্পত্তি না থাকে অথবা সম্পত্তি আছে কিন্তু অসিয়ত করে যায়নি তাহলে তার নামাযের কাফফারা দেওয়া আত্মীয়-স্বজনদের জন্য জরুরী নয়। তবে দিয়ে দিলে তার মৃত আত্মা শান্তি পাবে ।
কাজা নামাজের কাফফারা
কাফফারার পরিমাণ হল প্রতিদিন বিতরসহ ছয় ওয়াক্ত নামাজ হিসেব করে প্রত্যেকের জন্য পৌনে দুই সের গম বা আটা অথবা এর বাজার মূল্য গরীব মিসকীনকে দিতে হবে অথবা প্রতি ওয়াক্তের বদলে একজন গরীবকে দুই বেলাতৃপ্তি সহকারে খানা খাওয়াতে হবে ।
(ফতাওয়া শামী-২/৭২)
কাযা নামাযের নিষিদ্ধ সময়
সূর্য উদয় ও অস্ত যাওয়ার সময় আর ঠিক দ্বিপ্রহরের সময় এই তিন সময়ে শুধু কাযা নামাজ নয় বরং সব ধরনের নামাজ পড়া নিষেধ ।
আর একটু বুঝিয়ে বলি, সূর্যোদয় আরম্ভ হওয়ার পর থেকে নিয়ে সূর্য এক তীর পরিমাণ উপরে ওঠা পর্যন্ত যেকোনো ধরনের নামাজ পড়া নিষেধ । ( এমনকি ওই দিনের ফজরের নামাজও পড়া যাবে না) নির্ভরযোগ্য মত অনুযায়ী সূর্য এক তীর পরিমাণ উপরে উঠতে সময় লাগে ৯/ ১৫ মিনিট । অতএব ৯ মিনিট পর থেকে সব ধরনের নামাজ পড়া জায়েজ । ( তবে আমাদের দেশের ক্যালেন্ডারগুলোতে সতর্কতামূলক ২৩ মিনিটের কথা বলা হয়েছে )
অনুরূপভাবে সূর্য অস্ত যাওয়ার সময় সব ধরনের (নফল ও কাজা) নামাজ পড়া নিষেধ । তবে যদি কেউ আসরের নামাজ আদায় না করে থাকে তাহলে শুধুমাত্র ঐ দিনের আসরের নামাজ মাকরুহের সাথে আদায় করতে পারবে । ওই দিনের আসরের নামাজ ব্যতীত অন্য কোন নফল বা কাজা নামাজ পড়তে পারবে না ।
হাদীস থেকে দলীলঃ( ১)
হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, ফজরের পর সূর্য একটু উপরে না ওঠা পর্যন্ত এবং আসরের পর সূর্য অস্তমিত না হওয়া পর্যন্ত অন্য কোন নামাজ নেই । অর্থাৎ অন্য কোন নামাজ পড়া যাবে না ।
( সহীহ বুখারী ও মুসলিম , বুখারী হাদীস নং ৫৮৬)
হাদীস থেকে দলীলঃ (২)
হযরত ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন আমার কয়েকজন আস্থাভাজন ব্যক্তি যাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলেন হযরত ওমর রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু তিনি আমাকে বলেছেন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু সাল্লাম ফজরের পর সূর্য উজ্জ্বল হয়ে না উঠা পর্যন্ত এবং আসরের নামাজের পর সূর্য অস্তমিত না হওয়া পর্যন্ত নামাজ পড়তে নিষেধ করেছেন । ( বুখারী ও মুসলিম, হাদীস নং ৫৮১)
ঠিক দ্বিপ্রহরের সময় নামাজ পড়া নিষেধ
সূর্য যখন ঠিক মাথার ওপর ওঠে তখন সব ধরনের নামাজ পড়া নিষেধ । কেননা এই সময় জাহান্নামকে উত্তপ্ত করা হয় যেমন সহীহ মুসলিম শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে-
হযরত আমর ইবনে আবাসা রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু , আস সুলামী রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন একবার আমি আরজ করলেন ইয়া রসুলাল্লাহ । যেসব বিষয় আমি এবং আল্লাহ তা’আলা আপনাকে শিখিয়েছেন এমন বিষয় থেকে আমাকে কিছু শিক্ষা দিন । আমাকে নামাজ সম্পর্কে বলে দিন । নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন তুমি ফজরের নামাজ আদায় করবে । এরপর সূর্য পূর্ব আকাশে উঁচু হওয়া পর্যন্ত নামাজ পড়া থেকে বিরত থাকবে । কেননা সূর্য শয়তানের দুই সিংয়ের মাঝখানে উদিত হয় এবং ওই সময় কাফিররা সূর্যকে সিজদা করে । অতঃপর সূর্য যখন উঁচু হয় তখন নামাজ পড়বে । কেননা নামাজ আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয়। এরপর যখন বর্শার ছায়া সংক্ষিপ্ত হয় অর্থাৎ (সূর্য মধ্যগগনে উঠে আসে ) তখন নামাজ পড়বে না ।কেননা এ সময় জাহান্নাম উত্তপ্ত করা হয় ।এরপর ছায়া যখন দীর্ঘ হতে থাকে তখন নামাজ পড়বে । স্মরণ রাখবে সকল নামাজ আল্লাহর সমীপে পেশ করা হয় । আর আসরের নামাজ আদায় করার পর সূর্যাস্ত পর্যন্ত অন্য কোন নামাজ পড়বে না । কেননা সূর্য শয়তানের দুই সিংয়ের মাঝখানে অস্ত যায় এবং ওই সময়( সূর্যপূজারী) কাফেররা সুর্যকে সিজদা করে ।
( সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৯৬৭)
এই হাদীস থেকে বোঝা গেল সূর্যোদয়ের সময় বড় শয়তান ( সূর্যের সামনে) এমন ভাবে দাঁড়িয়ে যায় দেখতে মনে হয় যে সূর্য তার দুই সিংয়ের মাঝখান দিয়ে উদিত হচ্ছে । তখন সেই বড় শয়তান অন্যান্য জীন ও শয়তানের কাছে অহংকার করে বলে যে সূর্য পূজারীরা তাকে সিজদা করছে । এজন্য আলোচ্য হাদীসে সূর্যোদয়ের সময় নামাজ পড়তে নিষেধ করা হয়েছে ।
সুন্নাত নামাজ কাজা
প্রিয় বন্ধুরা । মূলত ফরজ এবং ওয়াজিব নামাজের কাজা করতে হয় অর্থাৎ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ এবং বিতর নামাজের কাজা পড়তে হয় । সুন্নাতের কোন কাজ হয়না । তবে ফজরের সুন্নাত একটু ব্যতিক্রম । ফজরের সুন্নাত সম্পর্কে নবীজি বলেছেন, দুনিয়া ও দুনিয়ার মধ্যে যা কিছু আছে তার থেকে উত্তম হচ্ছে ফজরের দুই রাকাত সুন্নাত । তাই ফজরের দুই রাকাত সুন্নাত সম্পর্কে একটু ভালোভাবে জেনে নেওয়া যাক।
ফজরের দুই রাকাত সুন্নাত নামাজে যে কোন সূরা/ কিরাত দিয়ে পড়া যায় । তবে প্রথম রাকাতে সুরা কাফিরুন ও দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ইখলাস পড়া মুস্তাহাব । অথবা প্রথম রাকাতে সূরা বাকারার ১৩৬ নং আয়াত থেকে ও দ্বিতীয় রাকাতে সূরা আলে ইমরানের ৬৪ নং আয়াত পড়া মুস্তাহাব । ( সুনানে নাসায়ী )
তবে মাঝে মধ্যে অন্য সূরা পড়বেন । বরং অন্য সূরা দিয়ে মাঝেমধ্যে পড়া হলে বুঝা যাবে ওই সূরা দুটি পড়া খুব বেশি জরুরি নয় । ( আহসানুল ফাতাওয়া)
ফজরের জামাত শুরু হয়ে গেলেও যদি আশা থাকে যে সুন্নাত পরে নিয়েও অন্তত শেষ বৈঠকে তাশাহুদে জামাতের সাথে শরীক হতে পারবেন তাহলে সুন্নাত পরে নিবেন। তবে এরূপ অবস্থায় সুন্নাত পড়তে হবে মসজিদের বাইরে, বারান্দায় অথবা কোন পিলারের আড়ালে ।
আর যদি শেষ বৈঠকে তাশাহুদও শরীক হতে পারার আশা না থাকে কিংবা সুন্নাত পড়ার মতো অনুরূপ স্থান না পায় তাহলে সুন্নাত ছেড়ে দিয়ে জামাতে শরীক হয়ে যাবে । আর এরূপ ছেড়ে দেওয়া সুন্নাত সূর্যোদয়ের পূর্বে পড়া জায়েজ নেই । সূর্যোদয়ের পর এবং সূর্য ঢলার পূর্বে পড়ে নেওয়া সর্বোত্তম । জরুরী নয় ।
( আহসানুল ফাতাওয়া, তৃতীয় খণ্ড )
আর যদি ফজরের ফরজসহ সুন্নাত কাজা হয়ে থাকে এবং সূর্য ঢলার পূর্বে কাজা আদায় করা হয় তাহলে সুন্নাতসহ কাজা করবেন । (আহসানুল ফাতাওয়া )
যদি কোনদিন কোন কারনে সুন্নাত পড়ার সময় না থাকে তাহলে শুধু ফরজ পড়ে নিবেন এবং শুধু মাত্র ফজরের দুই রাকাত সুন্নাত নামাজ উপরোক্ত নিয়মে পরবর্তীতে কাজা করে নিবেন ।
আর যদি কারো খুব বেশি কাযা নামায হয়ে থাকে তাহলে সুন্নাত না পরে শুধু ফরজগুলোর কাযা আদায় করলেও হয়ে যাবে ।
বিতর নামাজ কাযা পড়ার নিয়ম
বিতরের নামাজ কাজা হোক কিংবা আদা হোক পড়ার নিয়ম একই । শুধু নিয়তের সময় একটু কাযার কথা উল্লেখ করবেন ।
বিতর নামাজের প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতিহার পর অন্য সূরা মিলাতে হবে । এবং তৃতীয় রাকাতে রুকুতে যাওয়ার পূর্বে (তাকবীরে তাহরীমার ন্যায় দু হাত তুলে আবার বেধে ) দোয়ায়ে কুনুত পড়তে হবে । আর প্রথম বৈঠকে শুধু আত্তাহিয়াতুর পরে উঠে যেতে হবে এবং শেষ বৈঠকে আত্তাহিয়াতু , দরুদ শরীফ ও দোয়ায় মাসুরা সব পড়ে সালাম ফিরাবেন ।
কাজা নামাজে কি ইকামত দিতে হয় ?
শরীয়তের বিধান হলো যদি একাধিক কাজা নামাজ একত্রে আদায় করা হয় তাহলে প্রথমটার জন্য আযান ও ইকামাত উভয়টি আদায় করবে । এরপরের গুলোর জন্য আযান দেওয়া না দেওয়া তার ইচ্ছাধীন বিষয় ।
তবে প্রত্যেক কাজা নামাজের জন্য ইকামত দিবেন ।
وفی الدرالمختار(۳۹۰/۱):( و) یسن أن( یؤذن ویقیم لفائتۃ)…( وکذا) یسنان (لاولی الفوائت) لالفاسدۃ (ویخیر فیہ للباقی) لوفی مجلس وفعلہ اولی ویقیم للکل۔
আর কেউ যদি একাকী ওয়াক্তিয়া নামাজ আদায় করতে চায় আর মহল্লার মসজিদে আজান হয়ে থাকে । তাহলে সে শুধুই ইকামত দিয়ে নামের শুরু করবে । কেননা মসজিদে আযানের তার জন্য যথেষ্ট।
হযরত আলী রাদিআল্লাহু আনহু বলেন , যদি কোন ব্যক্তি নির্জন মরুভূমির দিকে যাত্রা করে এবং পথিমধ্যে নামাজের ওয়াক্ত হয়ে যায় তাহলে সে তাইলে আযান ও ইকামাত দিয়ে নামাজ পড়তে পারবে । আর সে চাইলে শুধুমাত্র ইকামাত দিয়ে ও নামাজ পড়তে পারবে । ( মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং ২২৮৪)
সুতরাং কাজা নামাজের জন্য ইকামত আস্তে আস্তে দিয়ে নামাজ পড়া উত্তম । ইকামাত না দিয়ে নামাজ আদায় করলেও হয়ে যাবে ।
কত বছর বয়স থেকে নামাজ ফরজ হয়
মানুষ বালেগ অর্থাৎ প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার সাথে সাথে নামাজ ফরজ হয় । পুরুষ ও মহিলার জন্য বালেগ হওয়ার যে সব আলামত রয়েছে সেসব আলামত থেকে কোন একটি প্রকাশ পেলেই (যেমন স্বপ্নদোষ কিংবা মাসিক হলে) বালেগ ধরা হবে এবং ওই সময় থেকে তার উপর নামাজ ফরজ হবে । আর যদি বালেগ হওয়ার কোনো আলামত
প্রকাশ না পায় তাহলে ১৫ বছর পূর্ণ হওয়ার সাথে সাথে বালেগ ধরা হবে এবং নামাজ ফরজ হবে । এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে আরবী তারিখ হিসেবে বছর গণনা করতে হবে । (ফাতাওয়ায়ে শামী খণ্ড ১ পৃষ্ঠা ২৫৮)
কত বছর বয়স থেকে নামাজ শিখাতে হবে ?
হযরত আমর ইবনে সুআইব তার পিতা থেকে, তিনি তার দাদা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন তোমরা নিজ সন্তানকে সাত বছর বয়স থেকে নামাজের নির্দেশ দাও আর দশ বছর বয়সে নামাজ না পড়লে তাদের প্রহার করো এবং বিছানা পৃথক করে দাও । ( সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৯৫ )
প্রিয় বন্ধুরা আলোচনার শেষ পর্যায়ে এসেছি । চেষ্টা করেছি শিরোনামে আলোকে লিখতে ও আপনাদের সঠিক তথ্য দিতে । কতটুকু পেরেছি জানি না । শেষ মুহূর্তে আপনাদের বলবো নামাজ নিয়মিত পড়ুন । নামাজ কাজা থাকলে আদায় করতে থাকুন । আর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল । সবাই ভাল থাকুন । সুস্থ থাকুন । শীর্ষবার্তার সঙ্গে থাকুন । আল্লাহ হাফেজ ।
কাজা নামাজ কি ? আদা নামাজ কাকে বলে?
কাজা নামাজ কাকে বলে? কাজা নামাজ কয় প্রকার?
ফাওয়ায়েতে কালীলের পরিচয়ঃ ফায়াওয়েতে কাসীরের পরিচয়ঃ
কাজা নামাজের মাসায়েল এবার শুনুন তিন কারণে তারতীব মাফ হয়ে যায় ।
কাজা নামাজের দলীল কাজা নামাজ আদায়ের দলীলঃ
কাজা নামাজের হাদীসঃ কাজা নামাজ আদায় করার নিয়ম
কাজা নামাজের নিয়ত ফজরের কাজা নামাজের নিয়ত:
যোহরের কাজা নামাজের নিয়ত: আসরের কাজা নামাজের নিয়ত:
মাগরিবের কাজা নামাজের নিয়ত:
এশার কাযা নামাজের নিয়ত: বিতরের নামাযের নিয়ত:
কাযা নামাযের কাফফারা
Source: Sirsobarta.com

FOR MORE CLICK HERE

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]