পোল্ট্রির বসন্ত বা ফাউল পক্স (ঋড়ষি চড়ী) একটি ভাইরাসজনিত অত্যন্ত ছোঁয়াচে রোগ। সব বয়সের
ও সব প্রজাতির পোল্ট্রি এতে আক্রান্ত হতে পারে। পোল্ট্রির বসন্ত একটি মারাত্মক রোগ। প্রাচীনকাল
থেকেই মানুষ এ রোগের সঙ্গে পরিচিত। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে এ রোগের প্রাদুর্ভাব ব্যাপকতা লাভ
করে। তখন মৃত্যুহার অত্যন্ত বেড়ে যায়। যদিও ফাউল পক্স বলতে সব পোল্ট্রির বসন্ত রেগকেই
বুঝায় তথাপি বর্তমানে আলাদা নামেও, যেমন− পিজিয়ন পক্স, টার্কি পক্স, ক্যানারি পক্স প্রভৃতি ডাকা
হয়। পৃথিবীর প্রায় সব পোল্ট্রি উৎপাদনকারী দেশেই বসন্ত রোগ দেখা যায়। এ রোগে পাখির দেহের
বিভিন্ন স্থানে, বিশেষত উন্মুক্ত স্থানে এবং অভ্যন্তরীণ অঙ্গে, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র লালচে নডিউল (ঘড়ফঁষব) সৃষ্টি
হয় যা বসন্তের গুটি নামে পরিচিত।
পোল্ট্রির বসন্ত ভাইরাসজনিত
অত্যন্ত ছোঁয়াচে রোগ। সব
বয়স ও প্রজাতির পাখি এতে
আক্রান্ত হতে পারে।
রোগের কারণ
পক্সভিরিডি (চড়ীারৎরফধব) পরিবারের ফাউল পক্স ভাইরাস (ঋড়ষি চড়ী ঠরৎঁং) নামক ভাইরাস বসন্ত
রোগের কারণ।
সংক্রমণ
নিম্নলিখিতভাবে এ রোগ সংক্রমিত হতে পারে। যথা− রোগাক্রান্ত পাখির সংস্পর্শ,
ত্বকের ক্ষত,
মশা এবং অন্যান্য কীটপতঙ্গের
কামড়ের মাধ্যমে বসন্ত রোগ
সংক্রমিত হয়।
ক্স রোগাক্রান্ত পাখির প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সংস্পর্শে সুস্থ পাখিতে এ রোগ ছড়াতে পারে।
ক্স ত্বকের ক্ষত বা কাটা ছেঁড়ার মাধ্যমে।
ক্স ঈঁষবী (কিউলেক্স) ও অবফবং (অ্যাডিস) মশা এবং দংশনকারী কীটপতঙ্গের মাধ্যমে।
ক্স তাছাড়া কখনো কখনো রক্তশোষক মাছি, ফ্লি ও আটালির মাধ্যমেও ছড়াতে পারে।
রোগের লক্ষণ
বসন্ত রোগ পধানত ্র ত্বকীয় ও বসন্ত রোগ প্রধানত দু’প্রকৃতিতে দেখা যায়। যথা−
ডিপথেরিটিক প্রকৃতিতে দেখা
যায়। এগুলো আবার মৃদু ও
তীব্র আকারে রোগলক্ষণ
প্রকাশ পেতে পারে।
ক. ত্বকীয় বা হেড ফর্ম এ প্রকৃতিতে আক্রান্ত পাখির মুখমন্ডলে
বসন্তের গুটি দেখা যায়। আক্রান্ত পাখির ক্ষুধামন্দা, দৈহিক ওজন হ্রাস ও ডিম উৎপাদন কমে যাওয়া
প্রধান বৈশিষ্ট্য। এটিকে শুষ্ক বসন্তও (উৎু চড়ী) বলা হয়।
খ. ডিপথেরিটিক প্রকৃতি ঃ এ প্রকৃতিতে প্রথমে আক্রান্ত পাখির জিহŸায় ক্ষত
দেখা যায়। এ ক্ষত পরে শ্বাসনালি ও ফুসফুসে বিস্তারলাভ করে। অপ্রধান জীবাণুর জটিলতায় অর্থাৎ
ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমিক সংক্রমণে অবশেষে পাখির মৃত্যু ঘটে। এ প্রকৃতির বসন্ত আর্দ্র বসন্ত (ডবঃ
চড়ী) নামেও পরিচিত।
ক− ত্বকীয় প্রকৃতির বসন্ত খ− ডিপথেরিটিক প্রকৃতির বসন্ত
চিত্র ৯ (ক, খ) ঃ ত্বকীয় ও ডিপথেরিটিক প্রকৃতির বসন্তে আক্রান্ত মুরগির ক্ষত
এ দু’প্রকৃতির বসন্ত আবার পাখিতে মৃদু ও তীব্র আকারে রোগলক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে। যেমন−
মৃদু প্রকৃতির বসন্তে−
ক্স পাখির উন্মুক্ত ত্বকে বসন্তের ফোস্কা দেখা যায়। এটিই এ প্রকৃতির প্রধান বৈশিষ্ট্য।
ক্স মুরগির ঝুঁটি, গলকম্বল, পা, পায়ের আঙ্গুল ও পায়ুর চারপাশে বসন্তের গুটি বা ফুসকুঁড়ি দেখা
যায়। এগুলো কিছুটা কালচে বাদামি রঙের হয়।
ক্স চোখের চারপাশে বসন্তের ফুসকুঁড়ির ফলে চোখ বন্ধ হয়ে যায়।
তীব্র প্রকৃতির বসন্তে−
ক্স দেহের মুখগহŸর, স্বরযন্ত্র, শ্বাসনালি ও অন্ত্রের দেয়ালেও বসন্তের ক্ষত দেখা দিতে পারে।
ক্স শ্বাসনালি আক্রান্তের ফলে পাখির শ্বাসকষ্ট হয় ও পাখি শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যায়।
ক্স এতে ডিমপাড়া মুরগির ডিম উৎপাদন কমে যায়।
ক্স এতে পাখির মৃত্যুহার ৫০% পর্যন্ত হতে পারে।
রোগ নির্ণয়
নিম্নলিখিতভাবে পাখিতে বসন্ত রোগ নির্ণয় করা যায়। যথা− ইতিহাস, বৈশিষ্ট্যপূর্ণ লক্ষণ,
প্যাথলজিক্যাল পরিবর্তন
ইত্যাদির মাধ্যমে বসন্ত রোগ
নির্ণয় করা যায়।
ক্স রোগের ইতিহাস ও বৈশিষ্ট্যপূর্ণ লক্ষণ দেখে।
ক্স মুরগির আক্রান্ত স্থানের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ প্যাথলজিক্যাল পরিবর্তন দেখে। এতে নিম্নলিখিত পরিবর্তন
দেখা যায়। যথা−
♦ আক্রান্ত স্থানে প্রথমে ছোট ছোট লাল দাগ হয়।
♦ পরবর্তীতে যা বড় হয়ে পুঁজপূর্ণ হয় ও পেঁকে ঘা সৃষ্টি করে। এ ঘায়ে শেষে মামড়ি সৃষ্টি হয়
ও তা পরবর্তীতে খসে পড়ে।
ক্স আক্রান্ত পাখির ক্ষতের নমুনা সুস্থ পাখির ঝুঁটি বা পালকের ফলিকুলে আঁচড়িয়ে প্রবেশ করিয়ে
উৎপন্ন বৈশিষ্ট্যপূর্ণ গুটি দেখে।
চিকিৎসা বসন্ত রোগের কোনো কার্যকরী
চিকিৎসা নেই। এ রোগের কোনো কার্যকরী চিকিৎসা নেই। তবে আক্রান্ত ক্ষত জীবাণুনাশক ওষুধ (যেমন−
মারকিউরিকক্রোম) দিয়ে পরিষ্কার করে তাতে সকেটিল, সালফানিলামাইড বা অন্য কোনো
বাংলাদেশ উš§ুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ২৬
পোল্ট্রির ভাইরাসজনিত রোগ
জীবাণুনাশক পাউডার লাগালে সুফল পাওয়া যায়। এছাড়াও ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমিক সংক্রমণ রোধ
করতে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা যেতে পারে।
রোগ প্রতিরোধ
রোগপ্রতিরোধের জন্য যথাসময়ে পোল্ট্রির টিকা প্রদান করতে হবে। স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশের সৃষ্টি এবং
মশা নিয়ন্ত্রণও জরুরি। রোগ থেকে আরোগ্য লাভকারী পাখিতে আজীবনের জন্য রোগপ্রতিরোধ
ক্ষমতা জন্মে। বসন্ত প্রতিরোধের জন্য এ দেশে দু’ধরনের টিকা প্রয়োগ করা হয়। যথা−
বসন্ত রোগ প্রতিরোধের জন্য
যথাসময়ে পোল্ট্রির টিকা প্রদান
করতে হবে। স্বাস্থ্যসম্মত
পরিবেশের সষ্টি ৃ এবং মশা
নিয়ন্ত্রণও জরুরি। ১. পিজিয়ন পক্স টিকা ঃ এটি ৩ মি.লি. পরিশ্রæত পানির সাথে মিশিয়ে দু’সপ্তাহের বাচ্চার ডানার
পালকবিহীন অংশে বাইফর্কড প্রিকিং নিডল (বা সুচ দিয়ে খোঁচা মেরে
প্রয়োগ করা হয়।
২. ফাউল পক্স টিকা ঃ এ টিকা হিমশুষ্ক অবস্থায় ০.৩ মি.লি. মাত্রায় কাচের অ্যাম্পুলে থাকে। এ
পরিমাণ টিকা পরিস্রুত পানিতে মিশিয়ে দু’শ পাখিতে প্রয়োগ করা যায়। পিজিয়ন পক্স টিকার মতো এ
টিকাও একই পদ্ধতিতে বাইফর্কড প্রিকিং নিডল দিয়ে পাখির ডানার পালকবিহীন স্থানে তিনবার বিদ্ধ
করতে হবে। প্রতিবারই পরিস্রুত পানিতে গুলানো টিকায় নিডল চুবিয়ে নিতে হবে। এ টিকা প্রয়োগের
৫, ৭ ও ১০তম দিনে টিকাবিদ্ধ ¯ানে বসন্তের গুটি ’ দেখা গেলে এর কার্যকারিতা প্রমাণ হবে। এ টিকা
একমাসের বেশি বয়সের পাখিতে প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়াও বিদেশে প্রস্তুত বসন্ত রোগের টিকা
পাওয়া যায়। যেমন− ওভোডিপথেরিন ফোর্ট (ইন্টারভেট) যা কোম্পানির নির্দেশমতো মাত্রায় প্রয়োগ
করা হয়। বছরে একবার পাখিতে এ টিকা প্রয়োগ করা হয়।
অনুশীলন (অপঃরারঃু) ঃ মুরগির রাণীক্ষেত ও বসন্তের লক্ষণগুলোর মধ্যকার পার্থক্য ছক আকারে
লিখুন।
সারমর্ম ঃ পোল্ট্রির বসন্ত বা ফাউল পক্স একটি ভাইরাসজনিত অত্যন্ত ছোঁয়াচে রোগ। সব বয়স ও
প্রজাতির পোল্ট্রি এতে আক্রান্ত হতে পারে। এ রোগে ৫০% পর্যন্ত মৃত্যুহার হতে পারে। এ রোগে
পোল্ট্রির দেহের বিভিন্ন স্থানে, বিশেষ করে পালকবিহীন স্থানে এবং মুখগহŸর, স্বরযন্ত্র, শ্বাসনালি, অন্ত্র
প্রভৃতিতে বসন্তের গুটি দেখা যায়। রোগাক্রান্ত পাখি স্পর্শে, ত্বকের ক্ষতের মাধ্যমে এবং কীটপতঙ্গ,
যেমন− মশা, মাছি, ফ্লি, আটালি ইত্যদির মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায়। বসন্ত রোগ ত্বকীয় ও ডিপথেরিটিক
প্রকৃতির হতে পারে। এ রোগের লক্ষণ মৃদু এবং তীব্রভাবে প্রকাশ পেতে পারে। ইতিহাস, বৈশিষ্ট্যপূর্ণ
লক্ষণ, প্যাথলজিক্যাল পরিবর্তন ইত্যাদির মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করা যায়। এ রোগের কোনো চিকিৎসা
নেই। স্বাস্থ্যসম্মত ব্যবস্থা, মশামাছি ধ্বংস ও টিকা প্রদানের মাধ্যমে এ রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
বসন্তের বিরুদ্ধে এদেশে পিজিয়ন পক্স ও ফাউল পক্স টিকা ব্যবহার করা হয়। তাছাড়াও বাজারে
বিদেশে প্রস্তুত টিকা পাওয়া যায়।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন ২.২"
১। সঠিক উত্তরের পাশে টিক চিহ্ন (৩) দিন।
ক. কোন্ কোন্ প্রজাতির মশার মাধ্যমে পোল্ট্রির বসন্ত রোগ ছড়ায়?
র) ঈঁষবী ও অহড়ঢ়যবষবং
রর) অবফবং ও অহড়ঢ়যবষবং
ররর) ঈঁষবী ও অবফবং
রা) কোনোটিই নয়
খ. তীব্র প্রকৃতির বসন্তে কত % পর্যন্ত পোল্ট্রি মারা যেতে পারে?
র) ৩০%
রর) ৩৮%
ররর) ৪৫%
রা) ৫০%
২। সত্য হলে ‘স’ এবং মিথ্যা হলে ‘মি’ লিখুন।
ক. শ্বাসনালি আক্রান্ত হলে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে পোল্ট্রি মারা যেতে পারে।
খ. বসন্তের গুটি প্রথমে ছোট লাল দাগ হিসেবে আবির্ভূত হয়।
৩। শূন্যস্থান পূরণ করুন।
ক. থথথথথথথথ প্রিকিং নিডলের মাধ্যমে বসন্তের টিকা দেয়া হয়।
খ. ফাউল পক্স টিকা থথথথথ অধিক বয়সের মুরগিতে দিতে হয়।
৪। এক কথা বা বাক্যে উত্তর দিন।
ক. বসন্ত রোগ কয় প্রকৃতির হতে পারে? নাম লিখুন।
খ. এদেশে ব্যবহৃত বসন্ত রোগের প্রতিষেধক টিকাগুলোর নাম লিখুন।