গামবোরো রোগ কী গামবোরো রোগের কারণ, সংক্রমণ ও লক্ষণ লিখ গামবোরো রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা ও প্রতিরোধ

গামবোরো বাচ্চা মুরগির মারাত্মক সংক্রামক রোগ। পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই এর প্রাদুর্ভার রয়েছে।
এ রোগে পোল্ট্রির রোগপ্রতিরোধক অঙ্গ অর্থাৎ বার্সা অভ্ ফ্যাব্রিসিয়াস (ইঁৎংধ ড়ভ ঋধনৎরপরঁং) আক্রান্ত
হয় বলে রোগপ্রতিরোধক ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। তখন এরা সহজেই অন্য যে কোনো রোগে আক্রান্ত
হয়ে পড়ে। তাই এ রোগকে বার্ড এইডস বা পোল্ট্রি এইডসও (ইরৎফ অওউঝ ড়ৎ চড়ঁষঃৎু অওউঝ) বলা
হয়। এ রোগটি সর্বপ্রথম যুক্তরাষ্ট্রের দেলওয়ার অঙ্গরাজ্যের গামবোরো জেলায় শণাক্ত করা হয় বলে
একে গামবোরো রোগ বলে। কিন্তু এর মূল নাম ইনফেকশাস বার্সাইটিস
ইনফেকশাস বার্সাল ডিজিজ । এ রোগে সাধারণত ২−৬ সপ্তাহ
বয়সের বাচ্চা বেশি আক্রান্ত হয়। আক্রান্তের হার খুব বেশি (১০০% পর্যন্ত), তবে মৃত্যুহার কম
(৫−১৫%)। তবে, কোনো কোনো সময় আক্রান্ত বাচ্চার ৫০%ও মারা যেতে পারে। এ রোগ থেকে সেরে ওঠা মুরগির উৎপাদন ক্ষমতা অত্যন্ত কমে যায়। গামবোরো বাচ্চা মুরগির মারাত্মক সংক্রামক রোগ। এতে পাখির রোগপ্রতিরোধক অঙ্গ আক্রান্ত হয় বলে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। একে বার্ড এইডসও বলে।
রোগের কারণ
বিরনাভিরিডি পরিবারের অর্ন্তগত বিরনা ভাইরাসের সেরোটাইপ ১ এ রোগের জন্য
দায়ী। এ ভাইরাসের দু’টো স্ট্রেইন রয়েছে। যেমন− ক্ল্যাসিক্যাল ও ভ্যারিয়্যান্ট স্ট্রেইন।
সংক্রমণ
নিম্নলিখিতভাবে এ রোগটি সুস্থ পাখিতে সংক্রমিত হতে পারে। যেমন− আক্রান্ত পাখির সংস্পশ,র্
বাতাস, কলুষিত লিটার,
যন্ত্রপাতি, খাদ্য, পরির্চযাকারীর
জামা-জুতো প্রভৃতির মাধ্যমে
গামবোরো রোগ ছড়ায়।
ক্স একই ঘরে রাখা অসুস্থ বাচ্চার সংস্পর্শে সুস্থ বাচ্চা এলে।
ক্স বাতাসের মাধ্যমে।
ক্স কলুষিত লিটার, যন্ত্রপাতি ইত্যাদির মাধ্যমে।
ক্স খাদ্য এবং লিটারের পোকামাকড়ের মাধ্যমে।
ক্স পরিচর্যাকারী বা দর্শণার্থীর জামা, জুতো ইত্যাদির মাধ্যমে।
লক্ষণ
গামবোরো রোগে আক্রান্ত পোল্ট্রিতে নিম্নলিখিত লক্ষণ দেখা যায়। যথা− গামবোরো রোগে আক্রান্ত
পোল্ট্রিতে ক্ষুধামন্দা, পালক
উসকোখুশকো হওয়া, সাদা ও
আঠালো পাতলা পায়খানা হওয়া
যা মলদ্বারের চারদিকে লেগে
থাকে, পানিশূন্যতা, শুকিয়ে
যাওয়া, দুর্বলতা ইত্যাদি লক্ষণ
দেখা যায়।
ক্স ক্ষুধামন্দা।
ক্স পালক উসকোখুশকো হয়ে যায়।
ক্স সাদা রঙের শে−ষ্মাযুক্ত মল ত্যাগ করে, মলে রক্ত থাকতে পারে। এ মল মলদ্বারের চারপাশে
আঠার মতো লেগে থাকতে পারে।
ক্স প্রথমে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায় ও পরে তা স্বাভাবিকের চেয়ে নিচে নেমে আসে।
ক্স পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়ার কারণে পানিশূন্যতা দেখা দেয়।
ক্স পাখি ধীরে ধীরে শুকিয়ে যায় ও দুর্বল হয়ে পড়ে।
ক্স শরীরের সতেজতা নষ্ট হয়।
ক্স তীব্র রোগে পোল্ট্রির শরীরে কাঁপুনি হয় ও অবশেষে পোল্ট্রি মারা যায়।
কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন স্কুল ২৯
পোল্ট্রির রোগ ও প্রতিরোধ
ক্স বেঁচে যাওয়া পাখির দৈহিক বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়।
ক্স বাচ্চাগুলো একসঙ্গে ব্রæডার বা ঘরের এককোণে জড়ো হয়ে থাকে।
রোগ নির্ণয়
নিম্নলিখিতভাবে এ রোগ নির্ণয় করা যায়। যেমন− রোগের ইতিহাস, বৈশিষ্ট্যপূর্ণ
লক্ষণ ও প্যাথলজিক্যাল
পরিবর্তন দেখে গামবোরো
রোগ শণাক্ত করা যায়।
ক্স রোগের ইতিহাস ও বৈশিষ্ট্যপূর্ণ লক্ষণ দেখে।
ক্স মৃত বাচ্চার ময়না তদন্তে প্যাথলজিক্যাল পরিবর্তন দেখে। এতে−
♦ থাইমাস এবং বার্সা ফুলে যায় ও তাতে রক্তের ছিটা পাওয়া যায়।
♦ পা এবং উরুর মাংসে রক্তের বড় বড় ছিটা দেখা দেয়।
চিকিৎসা
এ রোগের কোনো চিকিৎসা নেই। তবে, আক্রান্ত পোল্ট্রিগুলোকে ৩−৫ দিন স্যালাইন পানি (৫ লিটার
পানি + ২৫০ গ্রাম আঁখের গুড় + ১০০ গ্রাম লবণ) পান করালে এদের পানিশূন্যতা রোধ হয়। এরা
গায়ে শক্তি পায় এবং রক্তপড়া বন্ধ হতে পারে। তাছাড়া ৫০০ মি.গ্রা. অক্সিটেট্রাসাইক্লিন প্রতি ৫ লিটার
পানিতে মিশিয়ে পরপর ৩ দিন খাওয়ালে সুফল পাওয়া যেতে পারে।
আক্রান্ত পোল্ট্রিগুলোকে ৩−৫
দিন স্যালাইন পানি পান
করালে পানিশূন্যতা রোধ হয়।
রোগপতিরোধ ্র
প্রতিরোধই এ রোগ নিয়ন্ত্রণের একমাত্র পন্থা। এজন্য খামারে সবসময় স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ বজায়
রাখতে হবে। ঘরদোর, খাঁচা ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি জীবাণুনাশক, যেমন− ফরমালিন (ফরমালিন ঃ পানি
= ১ ঃ ৯), আয়োসান বা সুপারসেপ্ট দিয়ে ধৌত করতে হবে। এতে গামবোরোর জীবাণু মারা
পড়বে। এদেশে গামবোরের বেশ কয়েক ধরনের টিকা আমদানি করা হয়। যেমন− নবিলিস
গামবোরো ডি ৭৮ (ঘড়নরষরং এঁসনড়ৎড় উ ৭৮), ঠও বার্সা জি (ঠও ইঁৎংধ এ), বার ৭০৬ (ইঁৎ
৭০৬), গামবোরাল সিটি (এঁসনড়ৎধষ ঈঞ) ইত্যাদি। এগুলো প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের নির্দেশিত মাত্রায়
নির্দিষ্ট বয়সে পাখিতে প্রয়োগ করতে হবে। তবে, ১৪−১৮ দিন বয়সে প্রথমবার ও ২৪−২৮ দিন
বয়সে বুস্টার হিসেবে চোখে ড্রপ বা মুখের মাধ্যমে পান করিয়ে এ টিকা প্রয়োগ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
গামবোরা রোগ প্রতিরোধের
জন্য বাজারে বিভিন্ন ধরনের
টিকা পাওয়া যায়।
অনুশীলন (অপঃরারঃু) ঃ পোল্ট্রি খামারে গামবোরো রোগ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য খামারীকে আপনি কী
পরামর্শ দেবেন?
সারমর্ম ঃ গামবোরো বা ইনফেকশাস বার্সাইটিস বাচ্চা মুরগির একটি ভাইরাসজনিত মারাত্মক
সংক্রামক রোগ। এ রোগে পোল্ট্রির রোগপ্রতিরোধক অঙ্গ আক্রান্ত হওয়ায় রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট
হয়ে যায়। তাই এ রোগকে পোল্ট্রি এইডস বলে। এ রোগে আক্রান্তের হার অত্যন্ত বেশি (১০০%),
কিন্তু মৃত্যু হার কম (৫−১৫%)। গামবোরো রোগে আক্রান্ত পোল্ট্রিতে ক্ষুধামন্দা, পালক
উসকোখুশকো হওয়া, সাদা ও আঠালো পাতলা হওয়া পায়খানা হওয়া (যা মলদ্বারের চারদিকে লেগে
থাকে), পানিশূন্যতা, শুকিয়ে যাওয়া, দুর্বলতা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যায়। তীব্র অবস্থায় কাঁপুনি দিয়ে
পাখি মারা যায়। রোগের ইতিহাস, লক্ষণ ও ময়না তদন্তে প্যাথলজিক্যাল পরিবর্তন দেখে রোগ নির্ণয়
করা হয়। এ রোগের কোনো চিকিৎসা নেই। তবে, আক্রান্ত পাখিকে ৩−৫ দিন স্যালাইন পানি পান
করালে পানিশূন্যতা রোধ হয়। এ রোগ প্রতিরোধের জন্য বাজারে বিভিন্ন ধরনের টিকা পাওয়া যায়।
সাধারণত ১৪−১৮ দিন বয়সে প্রথমবার ও ২৪−২৫ দিন বয়সে বুস্টার ডোজ হিসেবে টিকা প্রদান করা হয়।
" পাঠোত্তর মূল্যায়ন ২.৩ ১। সঠিক উত্তরের পাশে টিক চিহ্ন (৩) দিন। ক. গামবোরো রোগের ভাইরাস কোন্ পরিবারের অন্তভ‚র্ক্ত? র) বিরনাভিরিডি রর) পক্সভিরিডি ররর) প্যারামিক্সোভিরিডি রা) রেট্রোভিরিডি খ. কোন্টি গামবোরো রোগের টিকা? র) গামবোরাল সিটি রর) বার ৭০৬ ররর) ডি ৭৮ রা) উপরের সবগুলোই ২। সত্য হলে ‘স’ এবং মিথ্যা হলে ‘মি’ লিখুন। ক. গামবোরো রোগকে বার্ড এইডস বলে। খ. গামবোরো আক্রান্ত পাখিকে স্যালাইন পান করানো নিষেধ। ৩। শূণ্যস্থান পূরণ করুন। ক. গামবোরো রোগ সর্বপ্রথম যুক্তরাষ্ট্রের থথথথথথথথ অঙ্গরাজ্যে শণাক্ত করা হয়। খ. গামাবোরো রোগাক্রান্ত পাখির বার্সা থথথথথথ যায়। ৪। এক কথা বা বাক্যে উত্তর দিন। ক. পাখির রোগপ্রতিরোধক অঙ্গের নাম কী? খ. গামবোরো রোগের টিকা কীভাবে প্রয়োগ করা হয়?

FOR MORE CLICK HERE

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]