মারেক’স রোগ কী ও এর কারণমারেক’স রোগ সংক্রমণ, রোগের লক্ষণ ও রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা

মারেক’স রোগ পোল্ট্রির স্নায়ুতন্ত্রের টিউমার সৃষ্টিকারী মারাত্মক ধরনের ভাইরাসজনিত সংক্রামক রোগ। এটি লিম্ফোপ্রলিফারেটিভ রোগ যা পাখির ক্যানসার। এ রোগে পাখির প্রান্তীয় স্নায়ুতন্ত্র, যৌন গ্রন্থি, চোখের আইরিস, পেশি ও ত্বক আক্রান্ত হয়। সাধারণত ৬−১০ সপ্তাহ বয়সের বাচ্চা মুরগি এবং বাচ্চা কোয়েল এ রোগে আক্রান্ত হয়। ১৯০৭ সালে সর্বপ্রথম হাঙ্গেরিতে মারেক (গধৎবশ) নামে এক ব্যক্তি এ রোগটি আবিষ্কার করেন বলে তার নামানুসারে এ রোগের এরূপ নামকরণ করা হয়। অবশতা এ রোগের প্রধান বৈশিষ্ট্য বলে একে ফাউল প্যারালাইসিসও ) বলে। মারেক’স পোল্ট্রির সায়œ ুতন্ত্রের ক্যানসার সৃষ্টিকারী ভাইরাসজনিত মারাত্মক সংক্রামক রোগ।
রোগের কারণ
হারপেসভিরিডি পরিবারের অন্তর্গত হারপেস ভাইরাস ২ বা মারেক’স ডিজিজ ভাইরাস (গউঠ) নামক ভাইরাস এ রোগের কারণ। রোগ সংক্রমণ বাতাস, খাদ্যের ব্যাগ, আক্রান্ত নিম্নলিখিতভাবে এ রোগ সুস্থ পাখিতে সংক্রমিত হতে পারে। যেমন− পাখির লালা, শে−ষ্মা, মল, পাখার ফলিকুল ইত্যাদির মাধ্যমে মারেক’স রোগ ক্স বাতাসের সাহায্যে জীবাণু দেহে প্রবেশ করলে। ক্স খাদ্যের ব্যাগ বা বস্তা, যন্ত্রপাতি, জামা-জুতা ইত্যাদির মাধ্যমে। ক্স আক্রান্ত পাখির লালা, শে−ষ্মা, মল, পাখার ফলিকুল বা গোড়া ইত্যাদির মাধ্যমে। ক্স কীটপতঙ্গ, বিশেষ করে, ডার্কলিং বিটলের (উধৎশষরহম ইববঃষব) মাধ্যমে। রোগের লক্ষণ অবশতা মারেক’স রোগের প্রধান বৈশিষ্ট্য। পাখির জাত, বয়স ও ভাইরাসের স্ট্রেইনের ওপর লক্ষণ নির্ভরশীল। অবশতা এ রোগের প্রধান বৈশিষ্ট্য। আক্রান্ত পাখির জাত, বয়স ও ভাইরাসের স্ট্রেইনের ওপর এ রোগের লক্ষণ নির্ভর করে। সাধারণভাবে নিম্নলিখিত লক্ষণ দেখা যায়। যেমন− ক্স প্রান্তীয় স্নায়ু আক্রান্তের ফলে এক পা, এক ডানা বা দুই পা, দুই ডানা অবশ হয়ে ঝুলে পড়ে। চিত্র ১২ ঃ মারেক’স রোগে আক্রান্ত মুরগি
ক্স ঘাড়ের মাংসপেশি আক্রান্ত হলে মাথা নিচের দিকে ঝুলে পড়ে। ক্স আইরিস বা চোখের উপতারা আক্রান্ত হলে পাখিতে অন্ধত্ব দেখা দেয়। দীর্ঘস্থায়ী প্রকৃতির হলে− ক্স ক্ষুধামন্দা দেখা যায়।
ক্স ফ্যাকাশে দেখায়।
ক্স পাতলা পায়খানা হয়।
ক্স ডিম উৎপাদন কমে যায়।
ক্স পাখি খোঁড়ায় ও পা, ডানা ইত্যাদি অবশ হয়ে যায়।
ক্স হা করে নিঃশ্বাস নেয়।
ক্স অনাহার ও পানিশূন্যতার কারণে পাখি মারা যায়।
রোগ নির্ণয়
নিম্নলিখিতভাবে এ রোগ নির্ণয় করা যায়। যেমন− ইতিহাস, বৈশিষ্ট্যপূর্ণ লক্ষণ ও প্যাথলজিক্যাল পরিবর্তনের মাধ্যমে মারেক’স রোগ নিণয়র্ করা হয়। ক্স রোগের ইতিহাস ও বৈশিষ্ট্যপূর্ণ লক্ষণ দেখে। ক্স ময়না তদন্তে প্যাথলজিক্যাল পরিবর্তন দেখে। যেমন− আক্রান্ত পাখির− ♦ বার্সা ও থাইমাস ছোট হয়ে যাবে। ♦ প্রান্তীয় স্নায়ু, যেমন− সায়াটিক স্নায়ু মোটা হবে। ♦ যে কোনো অভ্যন্তরীণ অঙ্গে এবং পাখার ফলিফুল বা গোড়ায় টিউমার হবে। ♦ চোখের আইরিসের বর্ণের বিকৃতি ঘটবে। ক− সায়াটিক স্নায়ুতে টিউমার খ− ডিম্বাশয়ে টিউমার চিত্র ১৩ (ক, খ) ঃ মারেক’স রোগে আক্রান্ত পাখির সায়াটিক স্নায়ু ও ডিম্বাশয়ে টিউমার চিকিৎসা এ রোগের কোনো চিকিৎসা নেই। রোগ নিয়ন্ত্রণ ও রোগপ্রতিরোধ
নিম্নলিখিতভাবে এ রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। যেমন− ক্স স্বাস্থ্যসম্মত বিধি ব্যবস্থায় খামার পরিচালনা করা। মারেক’স রোগ নিয়ন্ত্রণে খামারে স্বাস্থ্যসম্মত ব্যবস্থা মেনে চলতে হবে।
ক্স বিভিন্ন বয়সের মুরগি বা কোয়েল আলাদা আলাদা পালন করা। ক্স আক্রান্ত পাখি সুস্থ পাখি থেকে দূরে রাখা। ক্স খামারে দর্শনার্থীদের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করা। ক্স সুস্থ মুরগির বাচ্চাকে টিকা প্রদান করা। মারেক’স রোগ প্রতিরোধের হচ্ছে বাচ্চা মরগি ু তে টিকা প্রয়োগে করা সর্বোত্তম পন্থা। মারেক’স রোগ প্রতিরোধের জন্য বাচ্চা মুরগিতে টিকা প্রয়োগ করা সর্বোত্তম পন্থা। যে কোনো ধরনের সংহারী টিউমার বা ক্যানসারের বিরুদ্ধে এটি প্রথম উদ্ভাবিত টিকা। বাংলাদেশে মারেক’স রোগের টিকা প্রস্তুত হয় না। তবে, বাজারে আমদানি করা টিকা কিনতে পাওয়া যায়। মারেক’স রোগের বিভিন্ন ধরনের টিকা রয়েছে। তবে, এগুলোর মধ্যে এইচ.টি.ভি.−১২৬ (ঐঞঠ−১২৬) অর্থাৎ মারেক্সিন সি এ ভালো কাজ করে। এ টিকা একদিন বয়সের বাচ্চা মুরগিতে ০.২ মি.লি. মাত্রায় মাংসপেশি বা ত্বকের নিচে প্রয়োগ করা হয়। অনুশীলন (অপঃরারঃু) ঃ আপনার এলাকায় কোনো পোল্ট্রি খামারে মারেক’স রোগ হলে আপনি খামারীকে কী পরামর্শ দেবেন? যুক্তি সহকারে লিখুন। সারমর্ম ঃ মারেক’স রোগ পোল্ট্রির স্নায়ুতন্ত্রের সংহারী টিউমার বা ক্যানসার সৃষ্টিকারী ভাইরাসজনিত সংক্রামক রোগ । হারপেস ভাইরাস ২ পাখিতে এ রোগের কারণ। সাধারণত ৬−১০ সপ্তাহ বয়সের মুরগি এবং বাচ্চা কোয়েল এতে আক্রান্ত হয়। বাতাস, খাদ্যের বস্তা, যন্ত্রপাতি, পরির্চযাকারীর জামাজুতো, আক্রান্ত পাখির মল, শে−ষ্মা, পাখার গোড়া, ডানা, ঘাড় ইত্যাদিতে অবশতা এ রোগের প্রধান বৈশিষ্ট্য। তাছাড়া রোগের তীব্রতা, পাখির জাত, বয়স ইত্যাদির ওপর নির্ভর করে রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। এ রোগের কোনো চিকিৎসা নেই। খামারে স্বাস্ব্যসম্মত ব্যবস্থা অবলম্বন ও টিকা প্রদান এ রোগ নিয়ন্ত্রণের প্রধান উপায়।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন ২.৪"
১। সঠিক উত্তরের পাশে টিক চিহ্ন (৩) দিন।
ক. মারেক’স রোগের প্রধান বৈশিষ্ট্য কী?
র) প্রান্তীয় স্নায়ুতন্ত্রের অবশতা
রর) কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের অবশতা
ররর) মাংসপেশির অবশতা
রা) প্রজননতন্ত্রের অবশতা
খ. কত সপ্তাহ বয়সের মুরগি মারেক’স রোগে আক্রান্ত হয়?
র) ১−২ সপ্তাহ
রর) ২−৪ সপ্তাহ
ররর) ৪−৬ সপ্তাহ
রা) ৬−১০ সপ্তাহ
২। সত্য হলে ‘স’ এবং মিথ্যা হলে ‘মি’ লিখুন।
ক. মারেক’স রোগকে ফাউল প্যারালাইসিসও বলা হয়।
খ. মারেক’স রোগে মৃত পাখির বার্সা ও থাইমাস ফোলা থাকে।
৩। শূন্যস্থান পূরণ করুন।
ক. মারেক’স রোগের টিকার নাম থথথথথথথথ ।
খ. থথথথথ বিটলের মাধ্যমে মারেক’স রোগ ছড়াতে পারে।
৪। এক কথা বা বাক্যে উত্তর দিন।
ক. মারেক’স রোগের ভাইরাসের নাম কী?
খ. মারেক’স রোগের টিকা কী পরিমাণে একটি মুরগিতে প্রয়োগ করা হয়?

FOR MORE CLICK HERE

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]