মুরগির টাইফয়েড রোগ কী মুরগির টাইফয়েড রোগের কারণ ও সংক্রমণ টাইফয়েডের লক্ষণ বর্ণনা ও রোগ নির্ণয় কর

মুরগির টাইফয়েড (ঋড়ষি ঞুঢ়যড়রফ) মুরগি ও অন্যান্য গৃহপালিত পাখির একটি সেপ্টিসেমিক রোগ। এ তীব্র প্রকৃতির সংক্রামক রোগে সাধারণত বাড়ন্ত বয়স্ক মুরগি (৩ মাস থেকে ডিমপাড়া পর্যন্ত) বেশি আক্রান্ত হয়। তবে, সব বয়সের পাখিই আক্রান্ত হতে পারে। এ রোগে মৃত্যু হার ২০−৮০% পর্যন্ত হতে পারে। এ রোগ মড়ক আকারে দেখা দিতে পারে। পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই এ রোগ হয়। ফাউল টাইফয়েড মুরগি ও অন্যান্য পাখির সেপ্টিসেমিক রোগ। এতে ৩ মাসের বেশি বয়সের মুরগি আক্রান্ত হয়। কারণ (সালমোনেলা গ্যালিনেরাম) নামক এক ধরনের গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়া এ রোগের জন্য দায়ী। রোগ সংক্রমণ
বাহক ও আক্রান্ত পাখির মল ও নিম্নলিখিতভাবে এ রোগের সংক্রমণ ঘটে। যথা− অন্যান্য নিঃসরণের মাধ্যমে দুষিত খাদ্য, লিটার, পানি, বাতাস ইত্যাদি; ডিম; বন্যপ্রাণী ও কীটপতঙ্গ এবং মানুষের মাধ্যমে টাইফয়েডের সংক্রমণ ঘটে। ক্স বাহক ও আক্রান্ত পাখির মল ও অন্যান্য নিঃসরণের মাধ্যমে লিটার, খাদ্য, পানি ও বাতাস দুষিত হয়ে এ রোগ ছড়ায়।
ক্স বাহক ও আক্রান্ত পাখির ডিমের মাধ্যমে বাচ্চায় এ রোগের জীবাণুর সংক্রমণ ঘটে। ক্স বন্যপ্রাণী ও কীটপতঙ্গ এ রোগের জীবাণু ছড়াতে পারে। ক্স খামারে পোল্ট্রির পরিচর্যায় নিয়োজিত লোক ও পোল্ট্রি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত অন্যান্য লোকের মাধ্যমে এ রোগের জীবাণু এক ঘর থেকে অন্য ঘরে, এক খামার থেকে অন্য খামারে ছড়ায়। রোগলক্ষণ এ রোগ বাচ্চা এবং বড় মুরগিতে ভিন্ন ভিন্ন লক্ষণ প্রকাশ করে থাকে। নিম্নে এগুলো বর্ণনা করা হলো− টাইফয়েড রোগে বাচ্চা ও বড় মুরগিতে ভিন ভি œ ন্ন লক্ষণ প্রকাশ পায়।
বাচ্চা পাখিতে লক্ষণ ঃ বাচ্চা পাখিতে নিম্নলিখিত লক্ষণ দেখা যায়। যথা− ক্স ডিমের মাধ্যমে সংক্রমিত হলে পুলোরাম রোগের ন্যায় লক্ষণ দেখা যায়। ডিমের ভিতরে বাচ্চা মারা যেতে পারে অথবা মৃতপ্রায় অবস্থায় বাচ্চা ফোটে। ক্স আক্রান্ত বাচ্চায় নিদ্রালু ভাব থাকে। ক্স ক্ষুধামন্দা ও দুর্বলতা দেখা যায়। ক্স রোগ থেকে সেরে ওঠা বাচ্চার স্বাস্থ্যের উন্নতি সহজে হয় না। বাড়ন্ত ও বয়স্ক পাখিতে লক্ষণ ঃ বাড়ন্ত ও বয়স্ক পাখিতে অতিতীব্র, তীব্র ও দীর্ঘস্থায়ী প্রকৃতির রোগলক্ষণ দেখা যায়। টাইফয়েড রোগে বাড়ন্ত ও বয়স্ক পাখিতে অতিতীব্র, তীব্র ও দীর্ঘস্থায়ী প্রকৃতির
রোগলক্ষণ দেখা যায়। অতিতীব্র প্রকৃতির ক্ষেত্রে− ক্স হঠাৎ করে আক্রান্ত পাখি মারা যায়। ক্স কিছু পাখি অল্প ক’ঘন্টা বেঁচে থাকে। ক্স এসব পাখিতে জ্বর ও উত্তেজনা দেখা যায়। ক্স শেষে পাখি নিস্তেজ হয়ে মারা যায়। তীব্র প্রকৃতির ক্ষেত্রে− ক্স প্রথমে জ্বর দেখা যায়। তীব্র প্রকৃতির টাইফয়েড রোগে সবুজ বা হলুদ রঙের ডায়রিয়া দেখা যায়। ক্স এরপর খাদ্য গ্রহণে অনীহা দেখা যায় ও পাখি নিস্তেজ হয়ে পড়ে। ক্স মাথার ফুল বিবর্ণ ও সংকুচিত হয়। ক্স সবুজ বা হলুদ রঙের ডায়রিয়া দেখা দেয়। এ ডায়রিয়া পাখির মলদ্বারের আশেপাশের পালকে লেগে থাকে। ক্স এ অবস্থায় অনেক পাখি মারা যায়। দীর্ঘস্থায়ী প্রকৃতির ক্ষেত্রে− ক্স তীব্র প্রকৃতির রোগ থেকে সেরে ওঠা পাখি সাধারণত এ প্রকৃতির রোগলক্ষণ প্রকাশ করে। এরা এ অবস্থায় সাধারণত বাহকে পরিণত হয়। ক্স এসব পাখির মাথা ও গলার ফুল ফ্যাকাশে হয়ে যায়। ক্স এদের ডিম উৎপাদন হ্রাস পায়। চিত্র ২৩ ঃ ফাউল টাইফয়েডে আক্রান্ত মুরগির বাচ্চা রোগ নির্ণয়
নিম্নলিখিতভাবে এ রোগ নির্ণয় করা যায়। যথা− রোগের ইতিহাস, লক্ষণ, প্যাথলজিক্যাল পরিবর্তন ইত্যাদির মাধ্যমে ফাউল টাইফয়েড নিণয় করা হয়।র্ ক্স রোগের ইতিহাস, যেমন− আক্রান্ত পাখির বয়স থেকে। ক্স বৈশিষ্ট্যপূর্ণ রোগলক্ষণ থেকে। ক্স ময়না তদন্তে প্রাপ্ত প্যাথলজিক্যাল পরিবর্তন থেকে। এতে নিম্নলিখিত পরিবর্তন দেখা যায়। যথা− ♦ তীব্র প্রকৃতির রোগে পাখির যকৃত, প−ীহা ও বৃক্ক আয়তনে বেড়ে যায় ও লালচে রঙ ধারণ করে। ♦ কম তীব্র ও দীর্ঘ মেয়াদী রোগের ক্ষেত্রে যকৃতের বর্ণ পরিবর্তিত হয়। পোল্ট্রির ব্যাকটেরিয়া ও মাইকোপ−াজমাজনিত রোগ চিকিৎসা এ রোগের চিকিৎসা পুলোরাম রোগেই মতোই। তবে, নিমলিখিত ওষুধ এ রো œ গ নিরাময়ে ভালো ভ‚মিকা রাখে। যথা− টাইফয়েড রোগের চিকিৎসা পুলোরাম রোগেই মতোই। ক্স ফুরালটাডোন ৩০% সবচেয়ে ভালো ওষুধ। এ ওষুধ ১ গ্রাম/২ লিটার মাত্রায় পানির সঙ্গে মিশিয়ে ৩−৫ দিন আক্রান্ত পাখিকে পান করাতে হবে। ক্স এছাড়া অন্যান্য উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। রোগপ্রতিরোধ ও দমন এ রোগের প্রতিরোধ ও দমন ব্যবস্থা পুলোরাম রোগের মতোই। তবে, এ রোগ প্রতিরোধে বিভিন্ন ধরনের টিকা পাওয়া যায়। যেমন− টাইফয়েড রোগের প্রতিরোধ ও দমন ব্যবস্থা পুলোরাম রোগের মতোই। এ রোগ প্রতিরোধে সালমোনেলা লাইভ ও ইনঅ্যাকটিভেটেড টিকা ব্যবহার করা যায়।
ক্স সালমোনেলা লাইভ টিকাবীজ− হল্যান্ডের ইন্টারভেট কোম্পানির তৈরি নবিলিস এসজি ৯ আর (ঘড়নরষরং ঝএ ৯জ) নামের এ জীবিত টিকাবীজ খুবই কার্যকর। ৬ ও ১৬ সপ্তাহ বয়সে এ টিকা প্রয়োগ করতে হয়। এ টিকা ০.২ মি.লি. মাত্রায় রানের মাংসে ইনজেকশন দিতে হয়। ক্স সালমোনেলা ইনঅ্যাকটিভেটেউ টিকাবীজ− মহাখালীস্থ প্রাণিসম্পদ গবেষণাগারে প্রস্তুত এ নির্জীব টিকা ১ মি.লি. মাত্রায় পাখির চামড়ার নিচে ইনজেকশন দিতে হয়। অনুশীলন (অপঃরারঃু) ঃ পুলোরাম ও ফাউল টাইফয়েড রোগের মধ্যকার পার্থক্যসমূহ ছক আকারে লিপিবদ্ধ করুন।
সারমর্ম ঃ ফাউল টাইফয়েড মুরগি ও অন্যান্য পাখির একটি সেপ্টিসেমিক রোগ। এ রোগে সাধারণত ৩ মাস থেকে ডিমপাড়া পর্যন্ত বয়সের মুরগি আক্রান্ত হয়। এ রোগে মৃত্যুহার প্রায় ২০−৮০%। নামক গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়া এ রোগের কারণ। বাহক ও আক্রান্ত পাখির মল, অন্যান্য নিঃসরণের মাধ্যমে দুষিত খাদ্য, লিটার, পানি, বাতাস দুষণের মাধ্যমে, ডিমের মাধ্যমে, বন্যপ্রাণী ও কীটপতঙ্গ এবং মানুষের মাধ্যমে এ রোগের সংক্রমণ ঘটে। ডিমের মধ্যে বাচ্চার মৃত্যু ঘটতে পারে। বাড়ন্ত ও বয়স্ক মুরগিতে অতিতীব্র, তীব্র ও দীর্ঘস্থায়ী প্রকৃতির লক্ষণ দেখা যায়। এ রোগে আক্রান্ত পাখি সবুজ বা হলুদ রঙের পায়খানা করে যা মলদ্বারের আশেপাশের পালকে লেগে থাকে। রোগের ইতিহাস, লক্ষণ, প্যাথলজিক্যাল পরিবর্তন ইত্যাদির মাধ্যমে এ রোগ নির্ণয় করা হয়। পুলোরাম রোগের ন্যায় এ রোগের চিকিৎসা করা যায়। তবে, এ রোগে ফুরালটাডোন ৩০% ভালো কাজ করে। রোগপ্রতিরোধের জন্য কার্যকর টিকা রয়েছে।
পাঠোত্তর মূল্যায়ন ৩.৩"
১। সঠিক উত্তরের পাশে টিক চিহ্ন (৩) দিন।
ক. ফাউল টাইফয়েডে আক্রান্ত মুরগিতে কী রঙের ডায়রিয়া হয়?
র) সাদা
রর) সবুজ
ররর) হলুদ
রা) সবুজ বা হলুদ
খ. ফাউল টাইফয়েডে আক্রান্ত পাখিতে মৃত্যুহার কত হতে পারে?
র) ১০−৫০%
রর) ১৫−২৫%
ররর) ২৫−৬০%
রা) ২০−৮০%
২। সত্য হলে ‘স’ এবং মিথ্যা হলে ‘মি’ লিখুন।
ক. ফাউল টাইফয়েডের জীবাণুর নাম ঝধষসড়হবষষধ মধষষরহধঃঁস।
খ. ফাউল টাইফয়েড রোগ ডিমবাহিত।
৩। শূণ্যস্থান পূরণ করুন।
ক. থথথথথথথথ প্রকৃতির ফাউল টাইফয়েডে পাখি হঠাৎ মারা যায়।
খ. সালমোনেলা লাইভ টিকাবীজ থথথথথথ মাত্রায় প্রয়োগ করতে হয়।
৪। এক কথা বা বাক্যে উত্তর দিন।
ক. তীব্র প্রকৃতির ফাউল টাইফয়েড রোগে মুরগির যকৃত ও প−ীহা কেমন দেখায়?
খ. ফাউল টাইফয়েডের দু’টো টিকার নাম লিখুন?

FOR MORE CLICK HERE

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]