গলাফোলা রোগ কী গলাফোলা রোগের জীবাণুর বিভিন্ন সিরোটাইপের নামগলাফোলা রোগ সংক্রমণ, এর বিকাশ ও লক্ষণ

গলাফোলা রোগ কী?
পৃথিবীতে গরু ও মহিষের যতগুলো মারত্মক সংক্রামক রোগ রয়েছে গলাফোলা তাদের মধ্যে অন্যতম। রক্তদুষ্টি বা সেন্টিসেমিয়া, জ্বর, গলা ও গলকম্বল পানি বা ইডিমার জন্য ফুলে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট হওয়া, নাকমুখ দিয়ে পানির মতো তরল পদার্থ বের হওয়া এবং উচ্চ মৃত্যুহার এ রোগের প্রধান বৈশিষ্ট্য। রক্তদুষ্টি ও দেহের সকল সিরাম ও মিউকাস পর্দার নিচে অবস্থিত কৈশিকনালিসমূহ থেকে রক্তপাত হয় বলে একে হিমোরেজিক সেপ্টিসেমিয়া বলে। এ রোগে গলা ও গলকম্বল ফুলে যায় বলে স্থানীয় ভাষায় একে গলাফোলা, ঘটু, গলাবেরা বা গলাফাঁস নামে ডাকা হয়। এছাড়াও এ রোগকে বারবোন বলা হয়। বর্ষাকালীন বৃষ্টিপাত এবং শীতকালীন বৃষ্টির সময় এ রোগের প্রাদুর্ভাব সাধারণত মড়ক আকারে দেখা দেয়। তবে, অন্যান্য সময়ও এ রোগ হতে পারে। পৃথিবীতে গরু ও মহিষের যতগুলো মারত্মক সংক্রামক রোগ রয়েছে গলাফোলা তাদের মধ্যে অন্যতম। রোগের কারণ
ব্যাকটেরিয়ার কয়েক প্রকার সিরোটাইপ গলাফোলা রোগ সৃষ্টির জন্য দায়ী। (পাস্চুরেলা মালটুসিডা) নামক গ্রাম নেগেটিভ, বাইপোলার ও ক্ষুদ্র কক্কোয়েড আকৃতির ব্যাকটেরিয়ার কয়েক প্রকার সিরোটাইপ এ রোগ সৃষ্টির জন্য দায়ী। রোগ সংক্রমণ
অনেক সুস্থ গরু ও মহিষের ন্যাসোফ্যারিংসে জীবাণু বাস করে। তবে, এসব পশু ও জীবাণর মধ্যে ু একটা সমতা থাকায় এরা রোগে আক্রাš হয় না Í । অনেক সুস্থ গরু ও মহিষের ন্যাসো-ফ্যারিংসে জীবাণু বাস করে। তবে, এসব পশু ও জীবাণুর মধ্যে একটা সমতা থাকায় এরা রোগে আক্রান্ত হয় না। অর্থাৎ রোগজীবাণু যতটুকু ক্ষতিসাধন করে, পশুদেহ তা পুষিয়ে নেয়। কিন্তু এসব পশুর দেহে
কোনো কারণে স্ট্রেস বা চাপ পড়লে জীবাণু দ্রæত বংশবিস্তার করে এবং রক্তে প্রথমে ব্যাকটেরিয়া ও পরে এন্ডোটক্সিন সৃষ্টি করে সেন্টিসেমিয়া ঘটায়। এছাড়াও নিম্নলিখিতভাবে এ রোগটি সুস্থ পশুতে সংক্রমিত হতে পারে। যেমন− ♦ রোগাক্রান্ত পশুর লালা, নাক নিঃসৃত পদার্থ ও মলমূত্রাদিরস্নারা দুষিত খাদ্য ও পানির মাধ্যমে (তবে, অবশ্যই ২৪ ঘন্টার মধ্যে। কারণ, এরপর জীবাণু মারা যায়)। ♦ ব্যাকটেরিমিয়া অবস্থায় রক্তচোষক কীটপতঙ্গ ও আটালির মাধ্যমে। রোগের বিকাশ নিউমোনিক এবং ইন্টেস্টিনাল পাস্তুরেলোসিসের সৃষ্টি করে। স্ট্রেস অবস্থায় জীবাণু ন্যাসো-ফ্যারিংস থেকে ফুসফুসে গিয়ে বংশবিস্তার করে এবং রক্তে মিশে। ফলে নিউমোনিক পাস্চুরেলোসিসের সৃষ্টি হয়। এছাড়াও রোগাক্রান্ত পশুর লালা, নাক নিঃসৃত পদার্থ, মল ইত্যাদিস্নারা দুষিত খাদ্য ও পানির সাহায্যে দেহে প্রবেশ করে রক্তে মিশে ব্যাকটেরিমিয়ার সৃষ্টি করে। রক্তে জীবাণু মরে গিয়ে যে এন্ডোটক্সিনের সৃষ্টি করে তার কারণেই সেপ্টিসেমিয়া হয়। এ এন্ডোটক্সিন রক্তের কৈশিকনালি ও অন্যান্য টিস্যু বিনষ্ট করে। ফলে দেহে হিস্টামিনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় ও ইডিমা হয় বা পানি জমে। সে কারণে এ রোগে আক্রান্ত পশুর গলা ইডিমায় ফুলে যায় ও রক্তে সেপ্টিসেমিয়া হয়। কখনও কখনও এ রোগে পাকান্ত প্রদাহের সৃষ্টি হয়। ফলে ডায়রিয়া দেখা দেয়। এ প্রকৃতির রোগকে ইনটেস্টিনাল পাস্চুরেলোসিস ) বলে।
রোগের লক্ষণ
গলাফোলা রোগ অতিতীব্র ও তীব্র দুপ্রকৃতির হতে পারে। গলাফোলা রোগ অতিতীব্র ও তীব্র দুপ্রকৃতির হতে পারে। অতিতীব্র প্রকৃতির রোগ ঃ এ প্রকৃতির রোগে তড়কা রোগের মতো পশু হঠাৎ করে পড়ে গিয়ে মারা যেতে পারে। কোনো কোনো পশু ৬−১২ ঘন্টা পর মারা যেতে পারে। এক্ষেত্রে জ্বর, ক্ষুধামন্দা, নাক ও মুখ দিয়ে তরল পদার্থ পড়া, নিস্তেজ হওয়া, পাতলা পায়খানা করা প্রভৃতি দেখা যায়। অবশেষে পশু মারা যায়। তীব্র প্রকৃতির রোগে আক্রান্ত পশুতে ৪০.৬ক্ক−৪১.৭ক্ক সে. জর ওঠে। ¡ তীব্র প্রকৃতির রোগ ঃ তীব্র প্রকৃতির রোগে আক্রান্ত পশুতে নিম্নলিখিত লক্ষণ দেখা যায়। যেমন− ♦ দেহে ৪০.৬ক্ক−৪১.৭ক্ক সে. (১০৫ক্ক−১০৭ক্ক ফা.) জ্বর ওঠে। ♦ পশু ক্রমে ক্রমে নিস্তেজ হয়ে পড়ে। ঝিম মেরে দাঁড়িয়ে বা শুয়ে থাকে। ♦ নাক দিয়ে পানি ও মুখ দিয়ে তরল পদার্থ পড়ে। ♦ ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়। ♦ এভাবে ২৪ ঘন্টা পার হলেই গলার নিচে ফুলতে থাকে। এ ফোলা ক্রমশ বুক এবং পেট পর্যন্ত যেতে পারে। কখনও কখনও চোয়াল ও কানের অংশও ফুলতে পারে। ♦ অনেক সময় পশুর জিহŸা ফুলে যায় এবং তা লাল হয়। এ সময় এরা মুখ হা করে রাখে বা জিহŸা বের হয়ে পড়ে। এসব ফোলা জায়গা শক্ত ও গরম থাকে, টিপলে পশু ব্যাথা পায়, সুচ দিয়ে ছিদ্র করলে হলুদ বর্ণের তরল পদার্থ বের হয়। ♦ গলার এ স্ফীত অংশ স্বরযন্ত ও গলবিলের উপর চাপ দেয় বলে পশুর শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। তাই মুখ হা করে শ্বাস নেয়। শ্বাস ত্যাগের সময় গলার ভেতর ঘড় ঘড় শব্দ হয়, যা বেশ দূর থেকে শোনা যায়। ♦ পশুতে ফাইব্রিনাস ব্রঙ্কোনিউমোনিয়ার সৃষ্টি হয়। চিত্র ২৯ ঃ গলাফোলা রোগে আক্রান্ত গরুর ফুসফুসে ফাইব্রিনাস ব্রঙ্কোনিউমোনিয়ার চিহ্ন কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন স্কুল ৫৭ গবাদিপশুর রোগ ও প্রতিরোধ
♦ পশু ধীরে ধীরে দুর্বল হতে থাকে।
♦ জ্বর কমতে থাকে।
♦ যেসব পশুর অন্তপ্রদাহ হয় তাদের পেটে ব্যথা হয় ও রক্তমিশ্রিত পাতলা পায়খানা করে।
♦ শেষের দিকে পশু শুয়ে পড়ে।
♦ নাক এবং মুখ দিয়ে পানির মতো তরল পদার্থ বের হয়।
♦ তাপমাত্রা স্বাভাবিক হয়ে আসে ও পশু মারা যায়।
রোগ নির্ণয়
নিম্নলিখিতভাবে গরুমহিষের গলাফোলা রোগ নির্ণয় করা যায়। যেমন− ♦ হঠাৎ আবহাওয়ার পরিবর্তন, বর্ষা ও শীতকালীন বৃষ্টি, একটানা পরিশ্রম করানোর ইতিহাস এবং বৈশিষ্ট্যপূর্ণ লক্ষণ, যেমন− জ্বর, লালা ক্ষরণ, গলায় গরম ব্যাথাযুক্ত পানিপূর্ণ স্ফীতি ও শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি। ♦ মৃত পশুর শরীরের ইডিমাযুক্ত অংশগুলো কাটলে হলুদ বর্ণের জেলির মতো তরল পদার্থ পাওয়া যায়। এ অংশের ত্বক লাল হতে পারে এবং অধঃত্বকে বিন্দু বিন্দু ও ইকাইমোটিক প্রকৃতির রক্তপাত দেখা যায়। ফুসফুস ও লসিকাগ্রন্থিতে ইডিমা ও পাকান্ত প্রদাহ থাকে। ♦ সুনির্দিষ্টভাবে রোগ নিরূপণের জন্য মৃত পশুর হৃৎপিন্ডের রক্ত, ফুসফুস ও প−ীহার নমুনা এবং জীবিত রোগাক্রান্ত পশুর লালা ও রক্ত গ্রামস স্টেইন ও মিথাইলিন ব−ু দিয়ে স্টেইন করে গ্রাম নেগেটিভ, বাইপোলার দন্ডাকৃতির ব্যাকটেরিয়া শণাক্ত করে এ রোগ নির্ণয় করা যায়। চিকিৎসা
আক্রান্ত পশুর চিকিৎসা বিলম্বে হলে কোনো ওষুধে সুফল পাওয়া যায় না। তাই রোগলক্ষণ দেখা দেয়ার সাথে সাথে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হয়। এ রোগের চিকিৎসার জন্য সালফোনেমাইড, যেমন− সালফাডিমিডিন, ট্রাইমেথোপ্রিম-মেথোক্সোজল অথবা অ্যান্টিবায়োটিক, যেমন− অক্সিটেট্রাসাইক্লিন ইত্যাদি ব্যাবহারে সুফল পাওয়া যায়। রোগপতিরোধ ্র
এ রোগ নির্মূল করা প্রায় অসম্ভব বললেই চলে। কারণ, এ রোগের জীবাণু স্বাভাবিক অবস্থায় পশুর দেহে থাকে। তবে, নিম্নলিখিত বিধিব্যবস্থা অবলম্বন করে এ রোগ প্রতিরোধ করা যায়। যথা− ♦ অসুস্থ পশুকে সুস্থ পশু থেকে পৃথক করে চিকিৎসা করাতে হবে। ♦ অসুস্থ পশুর সংস্পর্শে যেগুলো ছিল তাদেরকে অ্যান্টিসিরাম বা দীর্ঘস্থায়ী টেট্রাসাইক্লিন দিয়ে চিকিৎসা করতে হবে।
♦ অন্যান্য পশুকে টিকা দিতে হবে। ♦ মড়কের সময় পশুর চলাচল নিয়ন্তণ করতে হবে। ♦ পশুকে একস্থান থেকে অন্যস্থান বা একদেশ থেকে অন্যদেশে স্থানান্তরের সময় পর্যাপ্ত খাদ্য ও পানি সরবরাহ করতে হবে। ♦ হঠাৎ আবহাওয়া পরিবর্তনের ক্ষেত্রে পশুর পরিচর্যার ব্যবস্থা সেভাবে করতে হয়। ♦ শুষ্ক ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন অবস্থায় পশু পালন করতে হবে। ♦ মৃত পশুকে মাটিতে পুতে ফেলতে হবে বা পোড়াতে হবে। মাঠে ফেলে দেয়া চলবে না বা মুচি দিয়ে চামড়া ছাড়ানো উচিত হবে না। ♦ বছরে কমপক্ষে একবার গরুমহিষকে গলাফোলা রোগের টিকা নির্ধারিত মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে।
গলাফোলা রোগ নির্মূল করা প্রায় অসম্ভব বললেই চলে। কারণ, এ রোগের জীবাণু স্বাভাবিক অবস্থায় পশুর দেহে রোগলক্ষণ দেখা দেয়ার সাথে সাথে গলাফোলা রোগের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হয়। অনুশীলন নিউমোনিক পাস্চুরেলোসিস ও ইনটেস্টিনাল পাস্চুরেলোসিসের মধ্যকার পার্থক্য লিপিবদ্ধ করুন। সারমর্ম ঃ গরু ও মহিষের মারত্মক রোগের মধ্যে গলাফোলা বা হিমোরেজিক সেপ্টিসেমিয়া অন্যতম। গলা ও গলকম্বল ফোলা এবং সেপ্টিসেমিয়ার কারণে এ রোগের এ নামকরণ। গলাফোলা রোগ নামক ব্যাকটেরিয়ার কয়েক প্রকার সিরোটাইপস্নারা সংঘটিত হয়। এ রোগ অতিতীব্র এবং তীব্র প্রকৃতির হতে পারে। সেপ্টিসেমিয়া, জ্বর, গলা ও গলকম্বল পানি বা ইডিমার জন্য ফুলে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট হওয়া, নাকমুখ দিয়ে পানির মতো তরল পদার্থ বের হওয়া এবং উচ্চ মৃত্যুহার এ রোগের প্রধান বৈশিষ্ট্য। দ্রæত চিকিৎসা না করলে আক্রান্ত পশুকে বাঁচানো অসম্ভব হয়ে পড়ে। এ রোগের চিকিৎসার জন্য সালফোনেমাইড বা অক্সিটেট্রাসাইক্লিনজাতীয় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে সুফল পাওয়া যায়। রোগপ্রতিরোধের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত বিধিব্যবস্থায় পশু পালন অপরিহার্য। তাছাড়া সুস্থ পশুকে বছরে কমপক্ষে একবার গলাফোলা রোগের টিকা দিতে হবে। পাঠোত্তর মূল্যায়ন ৩.৩ ১। সঠিক উত্তরের পাশে টিক চিহ্ন (৩) দিন।"
ক. গলাফোলা রোগে গলা কেন ফুলে?
র) ইডিমার জন্য
রর) পুঁজ জমার জন্য
ররর) গ্যাসের জন্য
রা) কোনোটিই নয়
খ. চধংঃবঁৎবষষধ সঁষঃড়পরফধ ংবৎড়ঃুঢ়ব ঊ এর নাম কী?
র) জড়নবৎঃং
রর) ঈধৎঃবৎ
ররর) গঁৎধঃধ
রা) ঘধসরবশড়
২। সত্য হলে ‘স’ এবং মিথ্যা হলে ‘মি’ লিখন।ু
ক. গলাফোলা রোগে ৪০.৬ক্ক−৪১.৭ক্ক সে. জ্বর উঠে।
খ. গলাফোলা রোগের টিকা বছরে দুবার দিতে হয়।
৩। শূণ্যস্থান পূরণ করুন।
ক. গলার স্ফীতি অংশ থথথথথ ও গলবিলের উপর চাপ দেয়।
খ. রক্তে চধংঃবঁৎবষষধ গঁষঃড়পরফধ মরে থথথথথথথথথথ সৃষ্টি করে।
৪। এক কথা বা বাক্যে উত্তর দিন।
ক. গলাফোলা রোগে কী কী প্রকৃতির লক্ষণ দেখা দেয়?
খ. পশুর ইডিমাযুক্ত অংশগুলো কাটলে কেমন পদার্থ বের হয়?

FOR MORE CLICK HERE

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]