পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট নমুনা পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট যাচাই পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট কিভাবে পাবো

রোজকার চলার পথে অনেকসময় আমাদের পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট এর প্রয়োজন পড়ে। বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য দেয়া বাংলাদেশ পুলিশ প্রশাসনের অন্যতম সেবা হচ্ছে পুলিশ ভেরিফিকেশন। কিন্তু এই পুলিশ ভেরিফিকেশন নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন ও দুর্বোধ্যতা এর ফলে পোহাতেও হয় নানা দুর্ভোগ।

পুলিশ ক্লিয়ারেন্স কি?

পুলিশ ক্লিয়ারেন্স বা পুলিশ ভেরিফিকেশন এমন একটি প্রক্রিয়া যাতে একটি নাগরিকের দাপ্তরিক ক্ষেত্রে দেয়া সকল তথ্য সঠিক কিনা যাচাই করা হয়। জীবনের প্রতিটি ধাপে বিভিন্ন জায়গায় একজন নাগরিকের নিজের তথ্য দিতে হয়। 

অনেক সময়ই সেসকল তথ্য সঠিক কিনা তা যাচাই করার দরকার পড়ে। তখন পুলিশ ভেরিফিকেশন এর মাধ্যমে এসব তথ্য পুরোপুরি সত্য এবং নির্ভুল কিনা যাচাই করা হয়। আর এই যাচাই সম্পন্ন করে থাকে বাংলাদেশ  পুলিশ। 

অর্থাৎ, একজন মানুষের সকল তথ্য নিশ্চিত হওয়া, সামাজিক অবস্থান এবং পূর্বের ইতিহাস যাচাই করাই মূলত পুলিশ ভেরিফিকেশন বা পুলিশ ক্লিয়ারেন্স।

পুলিশ ক্লিয়ারেন্স যেসকল ক্ষেত্রে দরকার

বর্তমান সময়ে যেকোনো সময়ে প্রয়োজন পড়তে পারে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট। এটি না থাকলে অনেক সময়ই ভোগান্তিতে পড়তে হতে পারে। 

অফিসিয়াল প্রায় সব কাজেই পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট দেখতে চাওয়া হয়ে থাকে। যেমন –

চাকরি
লাইসেন্স
পাসপোর্ট

চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে

সরকারি, আধাসরকারি, কিংবা স্বায়ত্তশাসিত যেকোনো চাকরির ক্ষেত্রে সাধারণত পুলিশ ভেরিফিকেশন করা হয়ে থাকে। সরকারি চাকরির একটা বড় অংশ বিসিএস দিয়ে চাকরিতে যোগদান করেন। 

এক্ষেত্রে একজন বিসিএস ক্যাডার হিসেবে গেজেটভুক্ত হবার আগে, অবশ্যই তার বর্তমান এবং অতীত এর সকল তথ্য যাচাই করে নেয়া হয়। 

এছাড়াও নন-ক্যাডার ভুক্ত সরকারি চাকরি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান যেমন বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি কিংবা আধা-সরকারি চাকরিতেও পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রয়োজন পড়ে। নিরাপত্তা জনিত কারণে যেকোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও আজকাল পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট চাওয়া হয়ে থাকে।

লাইসেন্স পেতে

সরকার থেকে বিভিন্ন ধরনের লাইসেন্স ইস্যু করে নেয়ার পূর্বে অবশ্যই পুলিশ ভেরিফিকেশন করে নিতে হয়। এতে করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত হবেন যে এই লাইসেন্স ব্যাবহার আপনি অন্যায় কিছু করবেন না।

যেসকল লাইসেন্স এর জন্য প্রয়োজন পড়ে-

ড্রাইভিং লাইসেন্স
অস্ত্রের লাইসেন্স

পাসপোর্ট পেতে

পাসপোর্ট পেতে পুলিশ ভেরিফিকেশন খুবই জরুরী ভূমিকা পালন করে। পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট ছাড়া পাসপোর্ট পাওয়া অসম্ভব। 

পাসপোর্টের আবেদন করলে পুলিশ প্রশাসনের মাধ্যমে ভেরিফিকেশন করে দেখা হয় তথ্য সঠিক কিনা এবং যাচাই বাছাই করে নিশ্চিত হওয়া হয়। পুলিশ ভেরিফিকেশনের অন্যতম প্রধান কারণও এটি।

পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট পাওয়ার শর্তাবলী

পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট পাওয়ার জন্য যেকোনো বাংলাদেশী নাগরিককে কিছু নির্দিষ্ট শর্তাবলী পূরণ করতে হয়।

প্রার্থীর বর্তমান ও স্থায়ী দুটি ঠিকানাই বাংলাদেশ পুলিশের আওতাধীন হতে হবে। অর্থাৎ যেকোনো জেলা কিংবা মেট্রোপলিটন পুলিশের এক্তিয়ার ভুক্ত অঞ্চলে প্রার্থীর বারি হলে তবেই শুধু তিনি পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট পেতে পারেন।
MRP বা মেশিন রিডেবল পাসপোর্টে যদি ঠিকানা উল্লেখ না থাকে তবে ঠিকানা প্রমানের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র/ জন্ম নিবন্ধন সনদ/ ওয়ার্ড কাউন্সিলর এর সনদপত্রের একটি ফটোকপি দাখিল করতে হবে। এবং তা প্রথম শ্রেণীর সরকারি গেজেট কর্মকর্তা দ্বারা সত্যায়িত থাকতে হবে।
পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য যে পাসপোর্ট নাম্বার দিয়ে আবেদন করা হয় তা অবশ্যই অব্যবহৃত হতে হয়। একই নাম্বার দিয়ে পূর্বে ভেরিফিকেশনের আবেদন করে থাকলে আবেদন গৃহীত হয় না। এছাড়া আগের আবেদনের ড্রাফট কপি থাকলে আবেদনটি ডিলিট করে নতুন আবেদন করতে হবে।
বিদেশে থেকেও পুলিশ ভেরিফিকেশন করা সম্ভব। এক্ষেত্রে যেদেশে থাকেন সেই দেশের দূতাবাস বা কমিশনের সাহায্যে নিজের পাসপোর্টের তথ্য পাতার সত্যায়িত কপি দাখিল করতে হয়।

পুলিশ ক্লিয়ারেন্স এর জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

সঠিক ভাবে পূরণকৃত অনলাইন আবেদনপত্র।
প্রথম শ্রেণীর(গ্রেড ১ থেকে ৯) গেজেটেড কর্মকর্তা থেকে সত্যায়িত পাসপোর্ট এর তথ্য পাতার স্ক্যান করা কপি। 
বিদেশে অবস্থানকারী বাংলাদেশী পাসপোর্ট ধারী হলে সে দেশের বাংলাদেশ দূতাবাস দ্বারা পাসপোর্ট এর তথ্য পাতার স্ক্যান করা সত্যায়িত কপি। 
বিদেশি নাগরিকের ক্ষেত্রে তাদের দেশের জাস্টিস অব পিস দ্বারা সত্যায়িত তথ্য পাতার স্ক্যানড কপি।
ঠিকানা যাচাইয়ের জন্য বাংলাদেশী নাগরিকদের স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানার বিদ্যুৎ বিল/ পানির বিল/ ফোন বিল ইত্যাদি কাগজের প্রয়োজন হতে পারে।

পুলিশ ক্লিয়ারেন্স আবেদন ফরম

পুলিশ ক্লিয়ারেন্স আবেদন ফরম পূরণের আগে দেখে নিলে অনেক ক্ষেত্রেই পরিস্কার থাকা যায়। 

পুলিশ ভেরিফিকেশন আবেদনের নিয়মাবলী 

পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেটের আবেদন করতে হলে কিছু নিয়ম অনুসরণ করতে হয়। নিচে ধাপগুলো দেয়া হলো –

একাউন্ট খোলা

পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট পাওয়ার ক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশন সংক্রান্ত সাইটে গিয়ে একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। রেজিস্ট্রেশনের পাতা নিচের ছবির মতো আসে।

এখানে আপনার নাম, ই-মেইল, মোবাইল নাম্বার, ভোটার আইডি কার্ড নাম্বার, এবং একটি নতুন পাসওয়ার্ড দিয়ে একাউন্ট রেজিস্টার করতে হবে। 

আবেদনকারী বিদেশী কিংবা বাচ্চা হলে পাশের foreign/child বক্স এ ক্লিক করতে হবে।

আরো পড়ুন – পাসপোর্ট রিনিউ/রি-ইস্যু/তথ্য পরিবর্তন/সংশোধন-এর নিয়মাবলী

একাউন্ট নিশ্চিতকরণ

একাউন্ট খোলার পর অবশ্যই একাউন্ট নিশ্চিত করতে হবে। না করলে এই একাউন্ট দিয়ে কোনো কাজ করতে পারবেন না। 

একাউন্ট ভেরিফাই করতে ফোনের ম্যাসেজ অপশনে গিয়ে “২৬৯৬৯” নাম্বারে ম্যাসেজ পাঠিয়ে ফোন নাম্বারটি ভেরিফাই করতে পারবেন। 


তবে ইমেইল এড্রেসের সাহায্যে একাউন্ট ভেরিফাই করা ভালো। কারণ ইমেইলে সরাসরি ইমেইল ভেরিফিকেশনের লিঙ্ক আসে। যাতে ক্লিক করলে অটোমেটিকেলি ভেরিফাই হয়ে যায়।

পার্সোনাল ইনফরমেশন :  এই ধাপে ব্যাক্তিগত সকল তথ্য পুলিশ ডাটাবেজে প্রবেশ করাতে হয়। 
পার্সোনাল এড্রেস : এই ধাপে স্থায়ী এবং বর্তমান দুই এড্রেসই দিতে হয়। তবে পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় বর্তমান ঠিকানায়।
ডকুমেন্ট/ কাগজপত্র : প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র সব স্ক্যানড কপি আপলোড করতে হয়। এক্ষেত্রে ফাইল সাইজ ১৫০ কিলোবাইটের কম হতে হয়।
কনফার্মেশন : এই ধাপে যেসকল তথ্য দিয়েছেন সব সামনে দেখানো হয়। সব তথ্য ঠিক আছে কিনা দেখে কনফার্ম/সাবমিট করতে হয়।
পেমেন্ট : আবেদন সাবমিট এর পরবর্তী ধাপ পেমেন্ট করা। এক্ষেত্রে আপনি ব্যাংক কিংবা কার্ডেও পেমেন্ট করতে পারবেন। পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট আবেদনের পেমেন্ট মাত্র ৫০০ টাকা। 

পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট স্ট্যাটাস অনলাইন যাচাই

পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য আবেদন করার পর তা কোন অবস্থায় আছে তা দেখতে পাবেন অনলাইনেই। সেজন্য অনলাইনে লগিন করলেই বর্তমান স্ট্যাটাস দেখতে পাবেন।

যেসকল ধাপ অতিক্রম করার পর সার্টিফিকেট হাতে পাবেন

আবেদনের ধাপগুলো শেষ করার পর পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে আরো কিছু ধাপ অতিক্রম করতে হয়। ধাপগুলো হলো –

Pending for Payment Verification 
Payment Received 
Under Verification 
Ready for Print 
Certificate Printed 
Signed by OC 
Signed by DC/SP 
Ready to Deliver 

পুলিশ ভেরিফিকেশন এর সময় যেসব বিষয়ে তদন্ত করা হয় 

আবেদন করার পর প্রার্থীর বেশ কিছু বিষয়ে তদন্ত করে সঠিকতা যাচাই করা হয়। তা হলো –

পুরো নাম
জাতীয়তা
পিতার পুরো নাম ও জাতীয়তা
প্রার্থীর স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা
বৈবাহিক অবস্থা
বিগত ৫ বছরে যেসব জায়গায় বাস করেছে সেগুলোর ঠিকানা
জন্মসনদ
১৫ বছর বয়স হতে যেসকল প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেছে তার সকল তথ্য।
সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, বেসরকারি যেকোনো যায়গায় চাকুরী করে থাকলে তার তথ্য।
প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধার সন্তান/নাতি/নাতনি কিনা
কোনো কোটাধারী কিনা 
কোন মামলায় অভিযুক্ত বা দণ্ডিত কিনা। কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে বহিষ্কৃত কিনা।
প্রার্থীর নিকট আত্মীয়-স্বজন কেউ বাংলাদেশ সরকারের কোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানে চাকুরীরত থাকলে তাদের তথ্য।
প্রার্থীর চারিত্রিক ও সামাজিক অবস্থান।
রাষ্ট্রদ্রোহী বা নাশকতা মূলক কোনো কাজে নিয়োজিত ছিলেন /আছেন কিনা
আবেদনের ধরণ অনুযায়ী প্রাসঙ্গিক ও প্রয়োজনীয় যেকোনো বিষয়ে তদন্ত হতে পারে।

পুলিশ ভেরিফিকেশন ব্যার্থতার কারণ 

পুলিশ ভেরিফিকেশন ব্যার্থ হওয়ার কারণ অনেক। তার মধ্যে –

বর্তমান ঠিকানার ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কাছ থেকে আনা সনদ না থাকিলে।
পাসপোর্টের জন্য পুলিশ ক্লিয়ারেন্সে পাসপোর্টের ঠিকানা এবং আবেদনের ঠিকানার মিল না থাকলে।
পাসপোর্টের ফটোকপি এবং অন্যান্য কাগগপত্র প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা দ্বারা সত্যায়িত না করা।
অনলাইন আবেদনে আপলোডকৃত কাগজ ঝাপসা হলে।
কোনো রকম ভুল বা অসত্য তথ্য দিলে।
আবেদনকারীর নামে কোনো মামলা থাকা কিংবা চলমান হলে।

পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট একটি গুরুত্তপূর্ণ বিষয়। জীবনের যেকোনো ধাপে এর প্রয়োজন পড়তে পারে। তাই এ সম্পর্কে পরিস্কার ধারনা রাখা অতি জরুরী। এতে মূলত একজন নাগরিকের নৈতিক ও সামাজিক অবস্থান দেখা হয়ে থাকে। তাই পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট পাওয়ার সহজ উপায় সুনাগরিক হিসেবে জীবন-যাপন করা। 

FOR MORE CLICK HERE

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]