সালাত শুরু করার পূর্বে প্রস্তুতিমূলকভাবে কিছু কাজ করতে
হয়। এগুলি সালাতের পূর্বশর্ত। এগুলি পূর্ণ না হলে সালাত আদায়
হবে না। তবে অক্ষমতার জন্য সবগুলিই রহিত হতে পারে।
মুমিন যে শর্ত পূরণে অক্ষম হবেন সেটি বাদ দিয়েই সালাত
আদায় করবেন। সালাতের শর্তগুলি হলো:
(১) ওয়াক্ত বা সময় হওয়া। পাঁচ ওয়াক্ত ফরয সালাতের
জন্য সময় নির্ধারিত রয়েছে। এ বিষয়ে হাদীস ও ফিকহের
গ্রন্থে বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। মূলত সকল মুসলিম এ বিষয়ে
কমবেশী জানেন। অতি সংক্ষেপে শুধুমাত্র সাধারণ ধারণা
হিসাবে বলতে পারি:
ফজর বা প্রভাতের সালাত ভোর থেকে সূর্যোদয়ের পূর্ব
পর্যন্ত প্রায় দেড় ঘণ্টা।
যোহর বা দ্বিপ্রহরের সালাতের সময় ঠিক দ্বিপ্রহরের পর
থেকে প্রায় ৪ ঘণ্টা।
আসরের বা বিকালের সালাত সূর্যাস্তের প্রায় দুই ঘণ্টা পূর্ব
থেকে সূর্যাস্তের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত।
মাগরিবের বা সন্ধ্যার সালাতের সময় সূর্যাস্তের পর থেকে
প্রায় সোয়া এক ঘন্টা।
ইশা বা রাতের সালাতের সময় সূর্যাস্তের সোয়া একঘণ্টা
পর থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত প্রায় ৪/৫ ঘণ্টা। তবে মধ্যরাতের
পর থেকে ফজরের ওয়াক্তের পূর্ব পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ইশার
সালাত আদায় করলে মাকরুহভাবে আদায় হবে। বিতরের
সালাতের সময় ঈশার সালাত আদায়ের পর থেকে ফজরের
ওয়াক্ত শুরুর পূর্ব পর্যন্ত।
নফল সালাত সাধারণভাবে সবসময় আদায় করা যায়।
কিছু সময়ে সালাত আদায় করা নিষিদ্ধ। সূর্যোদয়, ঠিক দ্বিপ্রহর
ও সূর্যাস্তের সময় সালাত আদায় নিষিদ্ধ। এছাড়া ফজরের ওয়াক্ত
শুরু হওয়ার পরে সূর্যোদয় পর্যন্ত ফজরের দুই রাক‘আত সুন্নাত
সালাত ব্যতীত অন্য কোন সুন্নাত-নফল সালাত আদায় করা
মাকরুহ। আসরের ফরয সালাত আদায়ের পরে সূর্যাস্ত পর্যন্ত
কোন নফল সালাত আদায় করা মাকরুহ।
আযান, ইকামত, আযানের জাওয়াব, দরুদ পাঠ ও দু‘আ
সালাতের ওয়াক্ত শুরু হলে আযান দেওয়া হয়। আযান
দেওয়া অত্যন্ত সাওয়াবের কাজ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে, আযানের শব্দের সাথে মুআযযিনকে
ক্ষমা করে দেওয়া হবে এবং জড়বস্তু, প্রাণী, জীবজানোয়ার বা
মানুষ যারাই আযানের শব্দ শুনতে পাবে সকলেই তাঁর জন্য
কেয়ামতে সাক্ষ্য প্রদান করবে।[১৫]
আমরা সকলেই আযান দেওয়ার সুযোগ পাই না। আমাদের
জন্যও আল্লাহ সাওয়াব অর্জনের পথ করে দিয়েছেন। তা হলো
আযানের জওয়াব দেওয়া, আযানের পরে দরুদ শরীফ পাঠ করা
ও রাসূলুল্লাহ এর জন্য ওসীলার দু‘আ করা।
আযানের জওয়াব অর্থ মুআযযিনের সাথে সাথে অর্থের
প্রতি দৃঢ় আস্থা ও বিশ্বাস নিয়ে তার কথাগুলি বলা। মুআযযিন
আযানের মধ্যে যা যা বলবেন মুমিন শ্রোতাও তাই বলবেন।
শুধুমাত্র একটি ব্যতিক্রম: তা হলো, মুআযযিন ‘হাইয়া আলাস
সালাহ’ ও ‘হাইয়া আলাল ফালাহ’ বললে, শ্রোতা ‘লা হাওলা
ওয়া লা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ বলবেন। রাসূলুল্লাহ এভাবে
আযানের জওয়াবের নির্দেশ দিয়েছে এবং বলেছেন, মুআযযিন যা
বলল, তা যদি কেউ দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে বলে তাহলে সে জান্নাতে
প্রবেশ করবে।[১৬]
আযানের পরে দরুদ (সালাত) পাঠ করতে ও ওসীলার
দু‘আ করতে নির্দেশ ও উৎসাহ দিয়েছেন রাসূলুল্লাহ । তিনি
বলেছেন: “যখন তোমরা মুআযযিনকে আযান দিতে শুনবে, তখন
সে যেরূপ বলে তদ্রæপ বলবে। এরপর আমার উপর সালাত পাঠ
করবে; কারণ যে ব্যক্তি আমার উপর একবার সালাত পাঠ করবে,
[১৫]. মুসনাদ আহমাদ, হাদীস-৬২০২।
[১৬]. সহীহ মুসলিম, হাদীস-৩৮৫।
আল্লাহ তাঁকে দশবার রহমত প্রদান করবেন। এরপর আমার জন্য
‘ওসীলা’ চাইবে; কারণ ‘ওসীলা’ হলো জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থান,
আল্লাহর একজন মাত্র বান্দাই এই মর্যাদা লাভ করবেন এবং
আমি আশা করি আমিই হব সেই বান্দা। যে ব্যক্তি আমার জন্য
‘ওসীলা’ চাইবে তাঁর জন্য শাফায়াত প্রাপ্য হয়ে যাবে।”[১৭]
‘ওসীলা’ শব্দের অর্থ হলোÑ নৈকট্য। জান্নাতের সর্বোচ্চ
স্তর যা আল্লাহর আরশের সবচেয়ে নিকটবর্তী তাকে ‘ওসীলা’
বলা হয়। এই স্থানটি আল্লাহর একজন বান্দার জন্যই নির্ধারিত,
তিনি হলেন নবীয়ে মুসতাফা মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ । অন্যান্য
হাদীসে ‘ওসীলা’ প্রার্থনার পদ্ধতি ও বাক্য তিনি শিখিয়ে দিয়েছেন।
দু‘আটি নি¤œরূপ:
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা, রাব্বা হা-যিহিদ দা‘অ্ওয়াতিত
তা-ম্মাতি ওয়াস স্বালা-তিল ক্বা-য়িমাতি, আ-তি মু‘হাম্মাদান
আল-ওয়াসীলাতা ওয়াল ফাদীলাতা, ওয়াব‘আসহু মাকা-মাম
মা‘হমুদানিল্লাযী ও‘য়াদতাহু।
অর্থ: “হে আল্লাহ, এই পরিপূর্ণ আহŸান এবং আগত
সালাতের প্রভু, আপনি প্রদান করুন মুহাম্মাদকে () ওসীলা
(নৈকট্য) এবং মহা মর্যাদা এবং তাঁকে উঠান সম্মানিত অবস্থানে,
যা আপনি তাঁকে ওয়াদা করেছেন।”[১৮]
(২) শরীর, পোশাক ও স্থানকে পবিত্র করা। মল, মূত্র, রক্ত ইত্যাদি
সকল প্রকার নাপাকি থেকে শরীয়ত সম্মতভাবে ধৌত করে
এগুলিকে পরিষ্কার ও পবিত্র করতে হবে।
[১৭]. সহীহ মুসলিম, হাদীস-৩৮৪; সুনান আবু দাউদ, হাদীস-৫২৩।
[১৮]. সহীহ বুখারি, হাদীস-৬১৪; সুনান নাসায়ি, হাদীস-৬৮০।