বীর্যপাত, দাম্পত্য মিলন, মহিলাদের নিয়মিত অপবিত্রতা
ও সন্তান প্রসব পরবর্তী অপবিত্রতার জন্য গোসল করা ফরয হয়।
গোসল অর্থ সম্পূর্ণ শরীর পরিপূর্ণরূপে ধৌত করা। রাসূলুল্লাহ
এর গোসলের পদ্ধতি নি¤œরূপ:
মনে মনে আল্লাহর নির্দেশানুসারে পবিত্রতা অর্জনের জন্য
গোসলের নিয়্যাত করুন। এরপর বিসমিল্লাহ বলে দুই হাত কব্জি
পর্যন্ত ধৌত করুন। শরীরের কোন স্থানে নাপাকী লেগে থাকলে বা
থাকার অনুভূতি হলে তা ভাল করে ধুয়ে ফেলুন। এরপর মাসনূন
পদ্ধতিতে অযু করুন। অযুর পরে মাথায়, ডানকাঁধে ও বামকাঁধে
পানি ঢালুন ও সমস্ত শরীরে ভালভাবে ঢেলে ধুয়ে ফেলুন।
১. ১. ৭. তায়াম্মুমের বিধান
পানির অবর্তমানে বা পানি ব্যবহারে ক্ষতি হলে পবিত্রতার
জন্য মাটি ব্যবহার করে তায়াম্মুম করতে হয়। যদি মুসল্লীর কাছে
অযুর পানি না থাকে বা পানির দাম খুব বেশী হয়, বা পানি সংগ্রহ
করতে গেলে বিপদের ভয় থাকে অথবা পানি ব্যবহার করলে
রোগব্যধি হওয়ার বা বৃদ্ধি পাওয়ার নিশ্চিত ভয় থাকে তাহলে
অযুর গোসল উভয়ের পরিবর্তে তায়াম্মুম করতে হবে।
সংক্ষেপে তায়াম্মুম করার নিয়ম হলো মনেমনে নিয়্যাত
করে বিসমিল্লাহ বলে দুই হাত মাটি, পাথর, ধুলা বা মাটি জাতীয়
কিছুর উপর রাখতে হবে। এরপর দুই হাত দিয়ে সমস্ত মুখে
হাত বুলাতে হবে। দ্বিতীয়বার দুই হাত মাটিতে রেখে এরপর দুই
হাত কনুই পর্যন্ত মুছতে হবে। হাদীস ও ফিকহের গ্রন্থে এবিষয়ক
বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে।
(৬) সতর আবৃত করা
“সতর” বলতে বুঝানো হয় “শরীরের গোপনাংশ
(ঢ়ৎধরাধঃব ঢ়ধৎঃং), বা শরীরের যে অংশ আবৃত করা মুসলিম
নারী পুরুষের জন্য ফরয বা অত্যাবশ্যকীয়। ইসলামের নির্দেশনা
অনুসারে মুসলিম নর-নারীর জন্য শরীরের বিশেষ কিছু অংশ সদা
সর্বদা অন্য মানুষের দৃষ্টি থেকে আবৃত করে রাখা অত্যাবশ্যক।
এই অংশগুলি সালাতের মধ্যে আবৃত করে রাখা ফরয। এছাড়া
আরো কিছু অংশ আবৃত করা উত্তম। পুরুষ ও নারীদের জন্য এ
বিষয়ে পৃথক বিধান রয়েছে।
“পুরুষদের জন্য সদাসর্বদা নাভী থেকে হাঁটু পর্যন্ত শরীর
অন্য মানুষের দৃষ্টি থেকে আবৃত করে রাখা ফরয। এই অংশটুকু
স্ত্রী ছাড়া অন্য কাউকে দেখানো হারাম। সালাতের মধ্যে এই
অংশটুকু আবৃত করে রাখা ফরয। কেউ দেখুক বা না দেখুক
শরীরের এই অংশের মধ্যে কোন স্থান অনাবৃত হলে নামায নষ্ট
হয়ে যাবে। তবে কাপড় না থাকলে উলঙ্গ হয়েই সালাত আদায়
করতে হবে। এছাড়া কাঁধ ও শরীরের উপরিভাগ আবৃত করা
সুন্নাত। মুমিনের উচিত মহান রবের সামনে দাঁড়ানোর জন্য
মর্যাদাময়, মহান আল্লাহ ও তাঁর মহান রাসূল পছন্দনীয়,
পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি পোষাক পরিধান করা।
মহিলাদের পোষাকের মূলত ৪টি স্তর রয়েছে। স্বামী-
স্ত্রীর মধ্যে কোন পোষাকের বাধ্যবাধকতা নেই। অন্য মুসলিম
মহিলাদের দৃষ্টি থেকে নাভী থেকে হাঁটু পর্যন্ত স্থান আবৃত করে
রাখা মুসলিম মহিলার জন্য ফরয। পিতা, আপন চাচা, মামা,
ভাতিজা, ভাগিনেয়, শ্বশুর প্রমুখ মাহরাম (বিবাহ সম্ভব নয়)
আত্মীয়দের সামনে মোটামুটি কাঁধ থেকে হাঁটু পর্যন্ত শরীর
আবৃত করতে হবে। বাকী সকল পুরুষের দৃষ্টি থেকে মুসলিম
মহিলা মাথার চুলসহ মাথা ও পুরো শরীর আবৃত করে রাখবেন।
এগুলি তাদের সামনে অনাবৃত করা হারাম ও কঠিন গোনাহের
কারণ। সালাতের মধ্যেও এই অংশটুকু আবৃত করতে হবে।
শুধুমাত্র মুখমÐল ও কব্জি পর্যন্ত দুই হাত বাদে পুরো শরীর
আবৃত করতে হবে।
সালাতের মধ্যে যদি কোন মহিলার কান, চুল, মাথা,
গলা, কাঁধ, পেট, পায়ের নলা ইত্যাদি অনাবৃত হয়ে যায়
তাহলে সালাত নষ্ট হয়ে যাবে। সাধারণভাবে শাড়ী মুসলিম
মহিলার জন্য অসুবিধাজনক পোষাক। ঢিলেঢালা পুরো হাতা
সেলোয়ার-কামিজ বা ম্যাক্সি মুসলিম মহিলার জন্য উত্তম ও
আদর্শ পোশাক। সর্বাবস্থায় সাধারণ পোশাকের উপর অতিরিক্ত
বড় চাদর দিয়ে ভালভাবে নিজেকে আবৃত করে সালাত আদায়
করতে হবে। মাথার চুল, কান গলা ইত্যাদি ভালভাবে আবৃত
রাখার দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।