সালাতের সংক্ষিপ্ত পদ্ধতি সালাত আদায়ের নিয়ম সালাতে প্রথমে কি করতে হয় সালাতের রুকন কয়টি

কুরআন-হাদীসের আলোকে আমরা জানি যে, আল্লাহকে
খুশি করার জন্য কোন ইবাদত করা হলে তা কবুল হওয়ার
জন্য কয়েকটি শর্ত রয়েছে। সেগুলোর অন্যতম হলো যে, উক্ত
ইবাদত রাসূলুল্লাহ  এর সুন্নাত বা শিক্ষা ও পদ্ধতি অনুসারে
পালন করতে হবে। তাঁর শিক্ষার বাইরে ইবাদত করলে তা
গ্রহণযোগ্য হবে না। কাজেই আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ  এর
শেখানো পদ্ধতিতে সালাত আদায় করতে হবে। তিনি বলেছেন:
“আমাকে যেভাবে সালাত আদায় করতে দেখ, সেভাবে তোমরা
সালাত আদায় করবে।”[২০] হাদীসের আলোকে মুসলিম উম্মাহর
প্রাজ্ঞ ইমাম ও ফকীহগণ সালাত আদায়ের নিয়মাবলি বিস্তারিত
লিপিবদ্ধ করেছেন। সামান্য কয়েকটি বিষয়ে হাদীসের বর্ণনা
বিভিন্ন প্রকারের হওয়ার কারণে ফকীহগণ মতভেদ করেছেন।
এখানে সংক্ষেপে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো আলোচনা করছি।
১. অযূ, গোসল বা তায়াম্মুম করে পবিত্র হয়ে, পবিত্র কাপড়
পরে সতর আবৃত করে, বিনম্র ও শান্ত মনে কিবলামুখী হয়ে
নামাযে দাঁড়ান।
২. সামনে সুতরা বা আড়াল রাখুন। দেয়াল, খুঁটি, পিলার বা
যে কোন কিছুকে সামনে আড়াল হিসেবে রাখুন। না হলে
অন্তত একহাত বা আধাহাত লম্বা সরু কোন লাঠি, কাঠ
[২০] . বুখারী (১৪-কিতাবুল আযান, ১৮-বাবুল আযান লিলমুসাফির...) ১/২২৬, নং ৬০৫ (ভা. ১/৮৮)।
ইত্যাদি সামনে রাখলেও সুতরার সুন্নাত আদায় হবে।
যথাসম্ভব সুতরার কাছে দাঁড়াতে হবে, যেন সাজদা করলে
সুতরার নিকটে হয়। রাসূলুল্লাহ  সুতরার তিন হাতের
মধ্যে দাঁড়াতেন।
রাসূলুল্লাহ  বলেন:
“আড়াল বা সুতরা ছাড়া সালাত আদায় করবে না, আর
কাউকে তোমার সামনে দিয়ে (সুতরার ভিতর দিয়ে) যেতে দিবে
না। যদি সে জোর করে তাহলে তার সঙ্গে মারামারি করবে, কারণ
তার সাথে শয়তান রয়েছে।”
“যখন তোমাদের কেউ সালাত আদায় করবে সে যেন
সুতরা বা আড়াল সামনে রেখে সালাত আদায় করে এবং সুতরার
নিকটবর্তী হয়ে দাঁড়ায়।”[২১]
জামা‘আতে মুক্তাদির জন্য পৃথক সুতরা লাগে না।
ইমামের সুতরাই যথেষ্ট। তবে জামা‘আতে সালাতের আগে ও
পরে সুন্নাত-নফল সালাত আদায়ের সময় বা বাড়িতে, মাসজিদে,
মাঠে যে কোনো স্থানে আমাদের এই সুন্নাতে নববী পালনের
চেষ্টা করতে হবে। অনেকেই জামা‘আতে সালাতের আগে ও
পরে মাসজিদের মধ্যে সুতরা ছাড়া সালাতে দাঁড়িয়ে অন্যান্য
মুসল্লীর অসুবিধার সৃষ্টি করেন। রাসূলুল্লাহ  এর এই নির্দেশটি
পালন করলে আমরা সাওয়াব পাব, গোনাহ থেকে বাঁচতে পারব
[২১]. আবূ দাউদ (কিতাবুস সালাত, বাবুদ্ দুনওয়ি মিনাস সুতরাতি) ১/১৮২-১৮৩, নং ৬৯৭-
৬৯৮ (ভা. ১/১০১); ইবনু মাজাহ (৫-কিতাব ইকামাতিস সালাত, ৩৯-বাব ইদরা
মাসতাতা’তা) ১/৩০৬-৩০৭, নং ৯৫৪-৯৫৫ (ভা. ১/৬৭); সহীহ ইবনু খুযাইমা ২/৯, ১৭, ২৬-২৭; সহীহ ইবনু হিব্বান ৬/১২৬। ও অন্যদেরও বাঁচাতে পারব।
ইসলামের প্রথম যুগে সুতরার এত গুরুত্ব প্রদান করা হতো
যে, প্রয়োজনে মাথার টুপি খুলে সুতরা বানিয়ে সালাত আদায়
করা হতো। ইবনু আব্বাস  থেকে বর্ণিত একটি হাদীসে
বলা হয়েছে, “রাসূলুল্লাহ  অনেক সময় সালাত আদায়ের
জন্য মাথা থেকে টুপি খুলে টুপিটাকে নিজের সামনে সুতরা বা
আড়াল হিসেবে ব্যবহার করতেন।”[২২] প্রখ্যাত তাবে-তাবেয়ী
সুফিয়ান ইবনু উয়াইনাহ [১৯৮ হি.] বলেন, “আমি শারীক ইবনু
আব্দিল্লাহ ইবনু আবী নামিরকে [১৪০ হি.] দেখলাম, তিনি একটি
জানাযায় উপস্থিত হয়ে আসরের সময় হলে আমাদেরকে নিয়ে
জামা‘আতে আসরের সালাত আদায় করেন। তখন তিনি তাঁর
টুপিটি তার সামনে রেখে (টুপিটিকে সুতরা বানিয়ে) সালাত আদায় করলেন।”[২৩]
৩. মনে মনে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও সাওয়াবের জন্য সালাত
আদায়ের নিয়ত করুন। মুখে নাওয়াইতুআন... ইত্যাদি
বলা সুন্নাতের খেলাফ।
৪. তাকবীর (আল্লাহু আকবার) বলে দু হাত কাঁধ পর্যন্ত অথবা কান
পর্যন্ত উঠান। এ সময়ে হাতের আঙুলগুলো স্বাভাবিকভাবে
সোজা থাকবে। একেবারে মিলিত থাকবে না, আবার
বিচ্ছিন্নও থাকবে না। হাতের তালু কিবলার দিকে থাকবে।
৫. বাঁ হাতের পিঠ, কব্জি ও বাজুর উপর ডান হাত রাখুন, অথবা
ডান হাত দিয়ে বাঁ হাত ধরুন। এভাবে হাত দুটি নাভী বা
পেটের উপরে রাখুন।
৬. নামাযের মধ্যে সবিনয়ে সাজদার স্থানে দৃষ্টি রাখুন। এদিক-
[২২]. সুয়ূতী, আল-জামি‘য়ুস সাগীর ২/৩৯৪, নং ৭১৬৮, মুনাবী, ফয়যুল কাদীর ১/৩৬৭,
আলবানী, যয়ীফুল জামিয়িস সাগীর, পৃ. ৬৬৫, নং ৪৬১৯।
[২৩] . আবূ দাউদ (কিতাবুস সালাত, বাবুল খাত্তি ইযা লাম ইয়াজিদ আসা) ১/১৮১, নং ৬৯১ (ভা. ১/১০০)। সেদিক দৃষ্টিপাত করবেন না, উপরের দিকে তাকাবেন না।
হাদীসে বলা হয়েছে, “যারা সালাত রত অবস্থায় উপর দিকে
তাকায়, তাদের অবশ্যই তা থেকে বিরত হতে হবে, অন্যথায়
তাদের দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হতে পারে।[২৪]
৭. তাকবীরে তাহরীমার পরে সানা বা শুরুর দু‘আ পাঠ করুন।
৮. এরপর অনুচ্চস্বরে (মনে মনে) বলুন:
(আ‘ঊযু বিল্লা-হি মিনাশ শায়ত্বা-নির রাজীম) আমি
বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করছি। অথবা
বলুন: “আ‘ঊযু বিল্লা-হিস সামী‘িয়ল ‘আলীমি মিনাশ শায়ত্বানির রাজীম, মিন হাম্যিহী, ওয়া নাফ্খিহী ওয়া নাফ্সিহী: ‘আমি
বিতাড়িত শয়তান থেকে, তার প্রবঞ্চনা, জ্ঞান নষ্টকারী ও অহংকার
সৃষ্টিকারী প্ররোচনা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।”
আবূ সায়ীদ খুদরী  বলেন, রাসূলুল্লাহ  সালাতের ‘সানা’
পাঠের পর বলতেন: “আ‘ঊযু...মিন হাম্যিহী, ওয়া নাফ্খিহী
ওয়া নাফ্সিহী।” হাদীসটি সহীহ।[২৫]
৯. এরপর অনুচ্চস্বরে (মনে মনে) বলুন: “বিসমিল্লা-হির
রাহমানির রাহীম।” অর্থাৎ (পরম করুণাময় অতি দয়ালু
আল্লাহর নামে শুরু করছি।)
১০. এরপর অর্থের দিকে লক্ষ রেখে প্রার্থনার আবেগে প্রতিটি
আয়াতে থেমে থেমে সূরা ফাতিহা পাঠ করুন। সূরা ফাতিহা
পাঠ করা সালাতের জন্য অতীব প্রয়োজনীয়। তবে যদি
কেউ সূরা ফাতিহা না জানেন, তাহলে তা শিখতে থাকবেন।
[২৪]. বুখারী (১৬-কিতাবু সিফাতিস সালাত, ১০-বাব রাফয়িল বাসার) ১/২৬১, নং ৭১৭ (ভা. ১/১০৩-১০৪)।
[২৫] . তিরমিযী (আবওয়াবুস সালাত, বাব মা ইয়াক‚লু ইনদা ইফতিতাহ...) ২/১০, (ভা. ১/৫৭)
যতদিন শেখা না হবে ততদিন সূরা পাঠের পরিবর্তে তাসবীহ
তাহলীল বলবেন: (সুব‘হা-নাল্লা-হ), (আল‘হামদু লিল্লা-হ),
(লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ), আল্লা-হু আকবার), (লা- ‘হাওলা
ওয়ালা- ক্বুওয়াতা ইল্লা- বিল্লাহ)[২৬]
ধীরস্থিরভাবে কিরাআত পাঠ
সালাতের মধ্যে ধীরে ধীরে শান্তভাবে প্রত্যেক আয়াতে
থেমে থেমে সূরা ফাতিহা ও অন্য সূরা পাঠ করা রাসূলুল্লাহ 
-এর গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত। উম্মুল মুমিনীন হযরত উম্মু সালামাহকে
 রাসূলুল্লাহ -এর কিরাআত পদ্ধতি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়। তিনি বলেন:
“রাসূলুল্লাহ  প্রত্যেক আয়াতে থেমে থেমে কুরআন পাঠ
করতেন। তিনি পড়তেন: ‘আল-হামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন’।
এরপর থামতেন। এরপর বলতেন: ‘আর-রাহমানির রাহীম’।
এরপর থামতেন। এরপর বলতেন: মালিকি ইয়াওমিদ্দীন’।
এরপর থামতেন। এভাবেই শেষ পর্যন্ত।
হাফসা -কে রাসূলুল্লাহ -এর কিরাআত পদ্ধতি
সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন: “তোমরা তাঁর মতো
তিলাওয়াত করতে পারবে না।” প্রশ্নকারীরা তবুও একটু
শোনাতে অনুরোধ করেন। তখন তিনি খুব ধীরে ধীরে তিলাওয়াত
করেন। আনাস -কে রাসূলুল্লাহর () তিলাওয়াত পদ্ধতি
সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়। তিনি বলেন: (مدا كانت (“তাঁর
[২৬] . ইবন খুযাইমাহ ১/২৭৩, ৩৬৮, সুনানুন নাসাঈ (ইফতিতাহ, ৩২-মা ইউজযিউ...) ২/৪৮১ (ভা. ১/১০৭) কিরাআত ছিল টেনে টেনে।”
১১. সূরা ফাতিহা পাঠ শেষ হলে “আমীন” বলবেন। “আমীন”
শব্দের অর্থ “হে আল্লাহ আমাদের প্রার্থনা কবুল করুন।”
এরপর কুরআনের অন্য কোন সূরা বা কিছু আয়াত পাঠ
করুন। তিলাওয়াত শেষে সামান্য একটু থামুন। এরপর
“আল্লাহু আকবার” বলে রুকু করুন। রুকু অবস্থায় দুহাত
দুহাঁটুর উপর দৃঢ়ভাবে রাখুন। হাতের আঙুল ফাঁক করে হাঁটু
আঁকড়ে ধরুন। দুবাহুকে ও দুহাতের কুনুইকে দেহ থেকে
সরিয়ে রাখুন। এ অবস্থায় পিঠ লম্বা করে দিতে হবে, পিঠ
কোমর ও মাথা এমনভাবে সোজা ও সমান্তরাল থাকবে যে
পিঠের উপর পানি ঢেলে দিলে তা গড়িয়ে পড়বে না।
রুকুর মধ্যে পিঠ ধনুকের মত বাকা নয়, বরং তীরের মত
সোজা রাখাই রাসূলুল্লাহ -এর নির্দেশ ও কর্ম। তিনি সালাতের
পদ্ধতি শিক্ষা দিয়ে বলেন:
“যখন তুমি রুকু করবে তখন তোমার দুই হাত দুই হাটুর
উপর রাখবে এবং তোমার পিঠ সোজা লম্বা করে দেবে।[২৭]
রাসূলুল্লাহ  যখন রুকু করতেন তখন দুই হাত হাঁটুর
উপর দৃঢ়ভাবে রাখতেন (বুখারী, মুসলিম), হাতের আঙ্গুল ফাঁক
করে রাখতেন (হাকিম, তায়ালিসী), মনে হত তিনি হাঁটু আঁকড়ে
ধরে রেখেছেন (বুখারী, আবূ দাউদ)। তিনি তাঁর দুই বাহু ও
কনুইকে দেহ থেকে সরিয়ে রাখতেন (তিরমিযী, ইবনু খুযাইমা),
এ অবস্থায় তিনি তাঁর পিঠ লম্বা করে দিতেন এবং পিঠ, কোমর ও
মাথা এমনভাবে সোজা ও সমান্তরাল করতেন যে, এ সময়ে তাঁর
পিঠের উপর পানি ঢেলে দিলে তা গড়িয়ে পড়ত না (বাইহাকী,
[২৭]. আবূ দাউদ, আস-সুনান ১/২২৭; ইবনু হিব্বান, আস-সহীহ ৫/২০৬; আলবানী, সহীহুত তারগীব ২/১৭। হাদীসটি হাসান। তাবারানী, ইবনু মাজাহ)। ইবনু আব্বাস  বলেন:
“যখন রাসূলুল্লাহ  রুকু করতেন তখন তাঁর পিঠ
পুরোপুরি সোজা করে দিতেন। এমনকি যদি তার পিঠের উপর
পানি ঢালা হতো তবে পানি থেমে থাকত।”
এভাবে রুকুতে পুরোপুরি শান্ত ও স্থির হয়ে যেতে হবে।
রুকুর তাসবীহ পাঠ করুন।
১২. রুকু থেকে উঠে পরিপূর্ণ সোজা হয়ে দাঁড়ান এবং কয়েক
মহূর্ত দাঁড়িয়ে থাকুন। রুকু ও সাজদা থেকে উঠে কয়েক
মুহূর্ত পরিপূর্ণ সোজা থাকা সালাতের অন্যতম ওয়াজিব।
রুকু থেকে উঠে পুরোপুরি সোজা হয়ে না দাঁড়িয়ে সাজদায়
চলে গেলে সালাত নষ্ট হয়ে যাবে। এ অবস্থায় মাসনূন
যিক্রগুলো পালন করুন।
১৩. এরপর আলাহু আকবার বলতে বলতে শান্তভাবে সাজদা
করবেন। সাজদা করার সময় প্রথম দুহাঁটু এরপর
দুহাত অথবা প্রথম দুহাত এরপর দুহাঁটু মাটিতে রাখাউভয় প্রকার হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। সাজদা অবস্থায়
দুপা, দুহাঁটু, দুহাত, কপাল ও নাক মাটিতে দৃঢ়ভাবে
লেগে থাকবে। দুহাতের আঙুল মিলিত অবস্থায় সোজা
কিবলামুখী থাকবে। দুহাতের পাতা দু’কানের নিচে
অথবা দুকাঁধের নিচে থাকবে। দুহাতের বাজু ও কনুই
মাটি থেকে উপরে থাকবে এবং কোমর থেকে দূরে সরে
থাকবে। সাজদার সময়ে নাক মাটি থেকে উঠবে না।
হাদীসে বলা হয়েছে: “যতক্ষণ কপাল মাটিতে থাকবে,
ততক্ষণ নাকও মাটিতে থাকবে, অনথ্যায় সালাত শুদ্ধ হবে না।”[২৮]
সাজদার সময় পায়ের আঙুল কিবলামুখী থাকবে। অনেক
ফকীহ মত প্রকাশ করেছেন যে, দাঁড়ানো অবস্থায় যেমন দু পায়ের
মাঝে ৪ আঙুল বা এক বিঘত ফাঁক থাকে সাজদার সময়েও
একইভাবে পদদ্বয় পৃথক থাকবে। অন্যান্য ফকীহ বলেছেন,
সাজদার সময় দুপায়ের গোড়ালি একত্রিত থাকবে। প্রসিদ্ধ হানাফী
ফকীহ আল্লামা ইবনু আবিদীন শামী রুকুর নিয়ম প্রসঙ্গে বলেন:
)ويسن أن يلصق كعبيه( قال السيد أبو السعود
وكذا في السجود أيضا...
“সুন্নাত হলো মুসাল্লী তার পায়ের গোড়ালি দুটি একত্রিত করে
রাখবে। সাইয়েদ আবুস সাঊদ বলেন: সাজদার মধ্যেও এভাবে
পায়ের গোড়ালিদ্বয় একত্রিত রাখা সুন্নাত।”[২৯] এ মতটি সহীহ হাদীস
দ্বারা সমর্থিত। এক হাদীসে আয়েশা  বলেন: রাসূলুল্লাহ 
তাহাজ্জুদ আদায় করছিলেন। আমি অন্ধকারে হাত বাড়ালামافَ ِ
“আমি স্পর্শ করে দেখলাম তিনি সাজদায় রত, তাঁর পায়ের
গোড়ালিদ্বয় একত্রিত করে পায়ের আঙুলগুলির প্রান্ত কিবলামুখী
করে রেখেছেন।[৩০]
১৪. সাজদায় স্থির ও শান্ত হতে হবে। রাসূলুল্লাহ  বলেন:
“সাজদা করবে এবং সাজদায় এমনভাবে শান্ত হবে যেন
তোমার সকল অস্থি ও জোড় শান্ত ও শিথিল হয়ে যায়।”[৩১]
[২৮]. সুনানুদ দারাকুতনী ১/৩৪৮, তাবারানী, আল-মু‘জামুল কাবীর ২২/১০৫।
[২৯]. ইবন আবিদীন শামী, হাশিয়াত্ম ইবন আবিদীন (রাদ্দুল মুহতার) ১/৪৯৩, ১/৫০৪।
[৩০]. ইবন খুযাইমা, আস-সহীহ ১/৩২৮ (নং ৬৫৪); হাকিম, আল-মুসতাদরাক ১/৩৫২।
হাদীসটি সহীহ।
[৩১]. আব দাউদ (কিতাবুস সালাত, বাব... লা ইউকীমু সুলবাহ) ১/২২৪-২২৫, নং ৮৫৭ (ভা. ১/১২৪); মুসতাদরাক হাকিম ১/৩৬৮।
তিনি বলেন, “দৃঢ়ভাবে কপাল, নাক ও দুহাত মাটিতে রেখে
সাজদায় স্থির থাকবে, যেন তোমার দেহের সকল অস্থি নিজ
নিজ স্থানে থাকে।”[৩২] এ অবস্থায় সাজদার তাসবীহ পাঠ
এবং দু‘আ করুন।
সাজদা হলো সালাতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আল্লাহর
সবচেয়ে প্রিয় ইবাদত সাজদা। বান্দা সাজদার মাধ্যমে আল্লাহর
সবচেয়ে নৈকট্য লাভ করে। কাজেই সে অনুভুতি নিয়েই সাজদা
করতে হবে। ইবনু আব্বাস  বলেন:
“নবী () নির্দেশ দিয়েছেন ৭টি অঙ্গের উপর সাজদা
করার নির্দেশ দিয়েছেন: মুখমÐল, দুই হাত, দুই হাঁটু ও দুই পা।
তিনি আরো নির্দেশ দিয়েছেন যে, মুসল্লী তার চুল বা কাপড়
গোটাবে না।”[৩৩]
মুমিন যতক্ষণ সাজদায় থাকবে ততক্ষণ এ সাতটি অঙ্গ
মাটিতে লেগে থাকবে। মুখমÐল বলতে কপাল ও নাক উভয়কে
বুঝানো হয়েছে। যতক্ষণ কপাল মাটিতে থাকবে ততক্ষণ নাকও
মাটিতে থাকবে। রাসূলুল্লাহ  বলেন:
“কপাল যেভাবে মাটিতে থাকবে ঠিক সেভাবে যার নাক
মাটিতে না থাকবে তার সালাত হবে না।”[৩৪]
রাসূলুল্লাহ  তাঁর দুই হাত দুই কান বরাবর মাটিতে বা দুই
[৩২] . সহীহ ইবন খুযাইমা ১/৩২২।
[৩৩]. বুখারী, আস-সহীহ ১/২৮০।
[৩৪]. বাইহাকী, আস-সুনানুল কুবরা ২/১০৪; আলবানী, সিফাতুস সালাত, পৃ. ১৪২। হাদীসটি সহীহ। কাঁধ বরাবর মাটিতে রাখতেন। তিনি হাতের আঙ্গুলগুলি মিলিয়ে
কিবলামুখি করে রাখতেন। তিনি তাঁর দুই বাহু ও কনুই মাটি
থেকে উপরে রাখতেন। কনুই দুটি দেহের বাইরে বের করে দূরে
সরিয়ে রাখতেন। সাজদা অবস্থায় তাঁর হাত ও পেট এমনভাবে
উচু ও ফাঁকা থাকত যে, কোনো মেশ শাবক ইচ্ছা করলে সেখান
দিয়ে যাতায়াত করতে পারত। তিনি তাঁর দুই পায়ের আঙ্গুলগুলি
কিবলামুখি করতেন। দুই পা খাড়া রেখে দুই পায়ের গোড়ালি
একত্রে মিলিয়ে রাখতেন। দুই সাজদার মাঝে ও তাশাহ্হুদে
বসার সময় বাম পা বিছিয়ে দিতেন এবং ডান পা খাড়া রাখতেন।
ডান পায়ের আঙুলগুলি কিবলামুখি করে রাখতেন। এভাবে তিনি
আবেগের সাথে দীর্ঘ সময় সাজদায় থাকতেন। সাজদা রত
অবস্থায় ও দুই সাজদার মাঝে বসা অবস্থায় পরিপূর্ণ শান্ত হতে
ও তাড়াহুড়ো না করতে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন। দুই সাজদার
মাঝের বৈঠকে পরিপূর্ণ শান্তভাবে না বসলে তার সালাত হবে না
বলে তিনি জানিয়েছেন।
১৫. “আল্লাহু আকবার” বলতে বলতে সাজদা থেকে উঠে বসতে
হবে এবং সম্পূর্ণ স্থির হতে হবে যেন শরীরের সকল অস্থি
নিজ নিজ স্থানে স্থির হয়ে যায়। রাসূলুল্লাহ  বলেছেন,
সালাত শুদ্ধ হতে হলে দু সাজদার মাঝে অবশ্যই স্থির হয়ে
বসতে হবে।[৩৫] রাসূলুল্লাহ  যত সময় রুকু এবং সাজদায়
থাকতেন রুকু থেকে দাঁড়িয়ে ও দু সাজদার মাঝে বসে প্রায়
তত সময় কাটাতেন।[৩৬]
১৬. এ সময়ে বাম পা বিছিয়ে দিয়ে তার উপর শান্ত হয়ে
বসতে হবে। ডান পায়ের আঙ্গুলগুলোকে কিবলামুখী করে
[৩৫]. আবূ দাউদ (কিতাবুস সালাত, বাব... মান লা ইউকীমু সুলবাহু) ১/২২৪-২২৭ (ভা.
১/১২৪); মুসতাদরাক হাকিম ১/৩৬৮, সহীহ ইবনু খুযাইমা ১/৩২২।
[৩৬]. বুখারী (১৬-কিতাব সিফাতিস সালাত, ৩৯-বাব হাদ্দি ইতমামির রুকু) ১/২৭৩ (ভা. ১/১০৯); মুসলিম (৪-কিতাবুস সালাত, ৩৮-বাব ই‘তিদাল আরকান...) ১/৩৪৩ (ভা. ১/১৮৯)।
পা সোজা রাখতে হবে। দু হাত দু উরু ও হাঁটুর উপরে
থাকবে। আঙ্গুলগুলো স্বাভাবিক সামান্য ফাঁক অবস্থায়
কিবলামুখী থাকবে। এ সময়ে মাসনূন যিক্র পাঠ করুন।
১৭. এরপর “আল্লা-হু আকবার” বলে দ্বিতীয়বার সাজদা করতে
হবে। দ্বিতীয় সাজদাতে প্রথম সাজদার মত শান্ত ও স্থিরভাবে
অবস্থান করতে হবে এবং উপরে বর্ণিত যিক্র ও দু‘আ পাঠ
করতে হবে।
উল্লেখ্য যে রুকু, সাজদা, রুকু থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ও দুই
সাজদার মাঝে বসে শান্ত হওয়া এবং তাড়াহুড়া না করা নামাযের
জন্য অতীব গুরুত্বপুর্ণ এবং এতে অবহেলা করলে সালাত নষ্ট
হয়ে যাবে। কষ্ট করে সালাত পড়েও তা যদি নবীজির  শিক্ষার
বিরোধিতার কারণে আল্লাহ কবুল না করেন তাহলে তার চেয়ে
দুঃখের বিষয় আর কিছুই হতে পারে না। রাসূলুল্লাহ  বলেছেন,
“যে মুসল্লী পুরোপুরি শান্তভাবে রুকু সাজদা আদায় করে না,
তার সালাতের দিকে আল্লাহ তাকান না।[৩৭] তিনি এক ব্যক্তিকে
তাড়াতাড়ি অপূর্ণভাবে রুকু সাজদা করতে দেখে বলেন: “যদি
সে এ অবস্থায় মারা যায় তাহলে মুহাম্মাদের  ধর্মের উপর
তার মৃত্যু হবে না। কাক যেমন রক্তে ঠোকর দেয় তেমনি এরা
সালাতে ঠোকর দেয়। যে ব্যক্তি পরিপূর্ণভাবে রুকু করে না এবং
ঠুকরে ঠুকরে সাজদা করে তার অবস্থা হলো সেই ব্যক্তির মত যে
অত্যধিক ক্ষুধার্ত অবস্থায় একটি বা দু’টি খেজুর খেল, যাতে তার
কোন রকম ক্ষুধা মিটল না।[৩৮]
তিনি বলেন, “সবচেয়ে খারাপ চোর যে নিজের সালাত
চুরি করে।” সাহাবীরা প্রশ্ন করেন, “হে আল্লাহর রাসূল, নিজের
সালাত কীভাবে চুরি করে?” তিনি বলেন, “সালাতের রুকু ও
[৩৭] . মুসনাদ আহমদ ৪/২২,তাবারানী, আল-ম‘জামুল কাবীর ৮/৩৩৮।
[৩৮]. সহীহ ইবনু খুযাইমাহ ১/৩৩২; মুসনাদু আবী ইয়ালা ১৩/১৪০, ৩৩৩; তাবারানী, আলম‘জামুল কাবীর ৪/১১৫, হাইসামী, মাজমাউয যাওয়াইদ ২/১২১। সাজদা পুরোপুরি আদায় করে না।”[৩৯] তিনি একদিন সালাত
আদায় করতে করতে লক্ষ করেন যে একব্যক্তি রুকু ও সাজদা
করার সময় স্থির হচ্ছে না। তিনি সালাত শেষে বলেন, “হে
মুসলিমগণ, যে ব্যক্তি রুকুতে এবং সাজদায় পুরোপুরি স্থির ও
শান্ত না হবে, তার সালাত আদায় হবে না।”[৪০]
১৮. এরপর “আল্লা-হু আকবার” বলতে বলতে দ্বিতীয় রাক‘আতের
জন্য দাঁড়াতে হবে। সাজদা থেকে উঠে দাঁড়ানোর সময়
পরিপূর্ণ আদব ও ভক্তির সাথে শান্তভাবে প্রথমে দুই হাত,
তারপর দুই হাঁটু মাটি থেকে উপরে উঠাতে হবে। উপরের
নিয়মে দ্বিতীয় রাক‘আত আদায় করতে হবে।
১৯. দ্বিতীয় রাক‘আত পূর্ণ হলে তাশাহ্হুদের জন্য বসতে হবে।
দুই সাজদার মাঝে যেভাবে বসতে হয়, সেভাবে বাম পা
বিছিয়ে ডান পা খাড়া করে আঙুলগুলো কিবলামুখী করে
বসতে হবে। বাম হাত স্বাভাবিকভাবে বাম উরু বা হাঁটুর
উপর বিছানো থাকবে। ডান হাত ডান উরুর উপর থাকবে,
ডান হাতের আঙ্গুলগুলো মুঠি করে শাহাদাত আঙ্গুলী বা
তর্জনী দিয়ে তাশাহ্হুদ ও দু‘আর সময় কিবলার দিকে
ইঙ্গিত করা সুন্নাত। চোখের দৃষ্টি ইঙ্গিতরত তর্জনীর দিকে
থাকবে। দুরাক‘আত সালাত হলে তাশাহ্হুদের পর দরুদ ও
দু‘আ পাঠ করতে হবে। তিন বা চার রাক‘আত সালাত হলে
তাশাহ্হুদ পড়ে উঠে দাঁড়াতে হবে। শেষ বৈঠকে তাশাহ্হুদ,
দরুদ ও দু‘আ পাঠ করতে হবে।
২০. সালামের মাধ্যমে সালাত শেষ করতে হবে। ডান দিকে
মুখ ঘুরিয়ে বলতে হবে “আস্সালা-মু ‘আলাইকুম ওয়া
[৩৯]. মুসনাদ আহমদ ৩/৫৬, ৫/৩১০; সহীহ ইবনু খুযাইমাহ ১/৩৩১; সহীহ ইবনু হিব্বান
৫/২০৯; মুসতাদরাক হাকিম ১/৩৫৩; হাইসামী, মাজমাউয যাওয়াইদ ২/১২০।
[৪০]. ইবন মাজাহ (৫-কিতাব ইকামাতিস সালাত, ১৬-বাবুর রুকু...) ১/২৮২ (ভা. ১/৬২),
তিরমিযী (আবওয়াবুস সালাত, বাব... লা ইউকীমু সুলবাহু) ২/৫১-৫২, নং ২৬৫ (ভা. ১/৬১)। রাহমাতুল্লা-হ’ এরপর বাম দিকে মুখ ঘুরিয়ে বলতে হবে
“আস্সালা-মু ‘আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ”।
২১. সালামের সাথে সাথে সালাত শেষ হয়ে যায়। সালামের পরে
নামাযের আর কোন কর্ম- ফরয, ওয়াজিব, সুন্নাত, মুস্তাহাব
কিছুই বাকী থাকে না। সালামের পরে মাসনূন যিক্র ও
দু‘আ পৃথক ইবাদত, যা আমরা পরবর্তীতে আলোচনা করব,
ইনশা আল্লাহ।
১. ১. ৯. কয়েকটি ফিকহী মতভেদ ও বিদ“আত ঝগড়া
উপরের এবং পরবর্তী আলোচনা থেকে আমরা দেখব
যে, সালাতের জন্য ও সালাতের মধ্যে মুমিন সহস্রাধিক মাসনূন
ইবাদত পালন করেন। এগুলির অধিকাংশের ক্ষেত্রে কোনো
মতভেদ নেই। সামন্য কয়েকটি বিষয় নিয়ে ফকীহগণ মতভেদ
করেছেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে: (১) সালাতে দাঁড়ানো অবস্থায়
হস্তদ্বয় রাখার স্থান, (২) সূরা ফাতিহার পর “আমীন” বলার
ক্ষেত্রে আস্তে বা জোরে বলা, (৩) রুকুতে যাওয়ার, রুকু থেকে
উঠার এবং তৃতীয় রাক‘আতে উঠার সময় হস্তদ্বয় উত্তোলন করা,
(৪) সাজদা করার সময় এবং উঠে দাঁড়ানোর সময় হাঁটু অথবা
হাত আগে নামানো বা উঠানো, (৫) দ্বিতীয় ও চতুর্থ রাক‘আতে
দাঁড়ানোর আগে সামান্য বসা, (৬) শেষ বৈঠকে বসার সময় ডান
পায়ের বা নিতম্বের উপর বসা এবং (৭) নারী ও পুরুষের সালাতপদ্ধতির পার্থক্য। জামা‘আতে সালাতের ক্ষেত্রে ইমামের পিছনে
মুক্তাদীর কুরআন পাঠ, সালাতুল ঈদের অতিরিক্ত তাকবীর,
সালাতুল জানাযায় সূরা ফাতিহা পাঠ ও সালাতুল বিতর পদ্ধতি
ইত্যাদি বিষয়ে মতভেদ বিদ্যমান।
এ বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে লক্ষণীয়: (১) প্রতিটি বিষয়ে
উভয় মতের পক্ষে হাদীস বিদ্যমান, (২) সাহাবী-তাবিয়ীগণ ও ইমামগণ এগুলোর ক্ষেত্রে একটি কর্মকে উত্তম বলেছেন, কিন্তু
বিপরীত কর্মকে কখনোই নিষিদ্ধ বলেননি, (৩) তাঁরা এগুলো
নিয়ে মতভেদ করেছেন, নিজের পক্ষে প্রমাণ পেশ করেছেন, কিন্তু
কখনোই ভিন্ন মতের অনুসারীকে অবজ্ঞা করেননি (৪) মুক্তাদীর
সূরা ফাতিহা পাঠ ছাড়া অন্য সকল বিষয়ের মতভেদ নফলমুস্তাহাব বা উত্তম-অনুত্তম পর্যায়ের।
বর্তমানে ধার্মিক মুসলিমগণ একে অপরকে এ বিষয়গুলো
নিয়ে অবজ্ঞা, উপহাস, অবমূল্যায়ন ও ভয়ঙ্কর শত্রæতায় লিপ্ত হয়ে
পড়েন। এমনকি প্রকাশ্য পাপে লিপ্ত মুসলিমদের চেয়ে বিরোধী
মতের ধার্মিক মুসলিমদের অধিক অবজ্ঞা বা ঘৃণা করেন। মহান
আল্লাহ আমাদের শয়তানের খপ্পর থেকে রক্ষা করুন।
এ বইয়ে আমরা ফিকহী দলীলগুলো আলোচনা করতে
পারছি না। তবে আমরা দেখেছি, আল্লাহর বেলায়াত লাভের
অন্যতম বিষয় আল্লাহর জন্য মুমিনদেরকে ভালবাসা এবং অবজ্ঞা,
হিংসা-বিদ্বেষ, উপহাস ইত্যাদি পরিহার করা। এজন্য সম্মানিত
পাঠকের নিম্নের বিষয়গুলোর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি:
(১) সহস্রাধিক কর্মের মধ্যে মাত্র ৮/১০টি বিষয়ে মতভেদ
একেবারেই গুরুত্বহীন। যদি ৯৯০টি বিষয়ের মিল না দেখে
শুধু ৮/১০ বিষয়ের অমিল আপনার দৃষ্টি কাড়তে থাকে তবে
আপনাকে দৃষ্টিভঙ্গির চিকিৎসা করতে হবে।
(২) মতভেদীয় প্রতিটি বিষয়ে উভয় মতের পক্ষে সহীহ বা
গ্রহণযোগ্য দলীল বিদ্যমান। যারা অপর মতের দলীলকে
মানসূখ, রহিত বা দুর্বল বলে হৈচৈ করেন তারা অজ্ঞ অথবা
অন্ধ-অনুসারী। রাসূলুল্লাহ -এর পরে সাহাবী-তাবিয়ীগণ
থেকে এ সকল কর্ম প্রমাণিত। কাজেই এ সকল মতভেদীয়
বিষয়ে ভিন্ন মতকে বাতিল বললে অগণিত সাহাবী-তাবিয়ীকে বাতিল বলা হয়। (৩) আমরা অনেক সময় মনে করি যে, কোনো হানাফী মাযহাব
অনুসারী যদি আমীন জোরে বলে বা রাফউল ইয়াদাইন করে
তবে তার মাযহাব নষ্ট হবে বা গুনাহ হবে। হানাফী মাযহাবের
প্রথম ৫০০ বছরের কোনো ইমাম বা ফকীহ এরূপ বলেননি।
হানাফী মাযহাবের প্রথম যুগগুলোর অনেক ফকীহই রাফউল
ইয়াদাইন করতেন, ইমামের পিছনে সূরা পাঠ করতেন বা
অনুরূপ ভিন্নমত পালন করতেন। মাযহাবকে মান্য করার
পাশাপাশি বিশেষ কোনো মাসআলায় ভিন্নমত গ্রহণ করলে
বা কোনো সহীহ হাদীস পেয়ে আমল করলে মাযহাব নষ্ট
হয় না। “ইমাম আবূ হানীফা  রচিত “আল-ফিকহুল
আকবার”-এর অনুবাদ ও ব্যাখ্যা” গ্রন্থে আমি বিষয়টি আলোচনা করেছি।
(৪) যারা সহীহ হাদীস পালন করতে চান তাদের অন্তর সহীহ
হাদীস অনুসারে প্রশস্ত হওয়া জরুরি। যে সকল বিষয়ে
একাধিক সহীহ বা হাসান হাদীস বিদ্যমান সে সকল বিষয়ে
ভিন্নমতকে কটাক্ষ করার অর্থ রাসূলুল্লাহ  ও সাহাবীগণের
প্রমাণিত সুন্নাতকে কটাক্ষ করা।
(৫) সহীহ হাদীসকে সহীহভাবে পালন করা প্রয়োজন। যেমন
রুকু-সাজদা ও দাঁড়ানো-বসায় ধীরস্থিরতা বা ‘তা‘দীলুল
আরকান’ এবং ‘রাফউল ইয়াদাইন উভয় বিষয় সহীহ
হাদীসে বর্ণিত; তবে উভয়ের গুরুত্ব ভিন্ন। তা‘দীলুল
আরকান ত্যাগ করলে রাসূলুল্লাহ  আপত্তি করেছেন। কিন্তু
রাফউল ইয়াদাইন ত্যাগ করলে রাসূলুল্লাহ  বা সাহাবীগণ
কারো প্রতি আপত্তি বা কটাক্ষ করেছেন বলে কোনো সহীহ
হাদীসে বর্ণিত হয়নি। কাজেই এ বিষয়ে কটাক্ষ বা ঝগড়া
করলে সহীহ হাদীসের সঠিক আমল হয় না। রাসূলুল্লাহ 
যে কর্মকে যতটুকু গুরুত্ব দিয়েছেন তার চেয়ে বেশি বা কম গুরুত্ব দেওয়া বিদ‘আতের পথ।
(৬) এ সকল মতভেদীয় বিষয়ে সাহাবী-তাবিয়ীগণের আচরিত
সুন্নাত পদ্ধতি নিজের নিকট গ্রহণযোগ্য মতটি পালন করা
এবং অন্য মতকে সম্মান করা। যেমন, যে ব্যক্তি আস্তে
আমীন বলেন বা রুকু-সাজদার সময় হস্তদ্বয় উঠান না তিনি
তার মতের পক্ষের সহীহ হাদীসটির উপর নির্ভর করবেন
এবং যারা জোরে আমীন বলেন বা ‘রাফউল ইয়াদাইন’
করেন তাদের কর্মটিও সহীহ হাদীসে বর্ণিত বলে স্বীকার
করবেন এবং কর্মটির প্রতি শ্রদ্ধা পোষণ করবেন। কারণ
তা রাসূলুল্লাহ  ও সাহাবীগণ থেকে প্রমাণিত। অপর
পক্ষকেও একইরূপ নিজ মত পালন ও অপর মতের প্রতি
শ্রদ্ধাবোধ পোষণ করতে হবে। এতে আমরা এ বিষয়ক
সুন্নাত পালনের পাশাপাশি ‘আল্লাহর জন্য ভালবাসা’ নামক
মহান ইবাদত পালন করতে পারব এবং উম্মাতের মধ্যে
দলাদলি সৃষ্টির ভয়ঙ্কর পাপ থেকে বাঁচতে পারব। আল্লাহই
তাওফিক দাতা।

FOR MORE CLICK HERE

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]