সালাত মহান প্রতিপালকের সাথে বান্দার সর্বোচ্চ সংযোগ
এবং বান্দার একান্ত ‘মুনাজাত’। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরো
সময়টাই মূলত দু‘আর সময়। আল্লাহর প্রশংসা করা, স্তুতি
গাওয়া ও প্রার্থনা করা, এটাই তো সালাত। হাদীস শরীফে পুরো
সালাতকেই মুনাজাত বলা হয়েছে। সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম
ও অন্যান্য গ্রন্থে সংকলিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ বলেছেন-
“যখন কেউ নামাযে থাকে তখন সে তার প্রভুর সাথে
৪৫
‘মুনাজাতে’ (গোপন কথাবার্তায়) রত থাকে।” “কাজেই তার
ভেবে দেখা উচিত কীভাবে এবং কী বলে সে তাঁর সাথে মুনাজাত
বা আলাপ করছে।”[৪১]
অর্থাৎ, নামাযের সব কিছু হৃদয় দিয়ে অনুভব করে ও
বুঝে পাঠ করতে হবে; না বুঝে, আন্দাযে বা অমনোযোগিতার
সাথে নয়।
সালাতের পুরো সময়েই রাসূলুল্লাহ অত্যন্ত আবেগী
ও সুন্দর ভাষায় দু‘আ করতেন। সালাত শুরু করেই, তাকবীরে
তাহরীমার পরেই তিনি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বাক্য ব্যবহার করে
দু‘আ করতেন। সূরা ফাতিহা মানব ইতিহাসের মহোত্তম প্রার্থনা।
এরপর কুরআন তিলাওয়াতের সময় থেমে থেমে তিনি দু‘আ
করতেন। রুকুতে তাসবীহের পাশাপাশি দু‘আ করতেন মাঝে
মাঝে। সালাতের মধ্যে দু‘আর অন্যতম শ্রেষ্ঠ সময় সাজদার
সময়। সাজদা সালাতের মধ্যে মহান প্রভুর কাছে বান্দার
সমর্পণের চ‚ড়ান্ত পর্যায়। সাজদা আল্লাহর সাথে বান্দার চ‚ড়ান্ত
সংযোগ। মানব জীবনে দু‘আ কবুলের অন্যতম সময় সাজদার
সময়। রাসূলুল্লাহ আমাদেরকে এ কথাই শিখিয়েছেন। আবু
হুরাইরা বলেন: রাসূলুল্লাহ বলেছেন-
“বান্দা যখন সাজদায় রত থাকে তখন সে তার প্রভুর
সবচেয়ে নিকটবর্তী হয়, কাজেই তোমরা এ সময়ে বেশি বেশি
দু‘আ করবে।”[৪২]
[৪১]. বুখারী (১১-আবওয়াবুল মাসাজিদ, ১-বাব হাক্কিল বুযাক...) ১/১৫৯ (ভা. ১/১৬২);
মুসলিম (৫-কিতাবুল মাসাজিদ, ১৩-বাবুন নাহ্য়ি আনিল বুযাক...) ১/৩৯০ (ভা.
১/২০৭); হাকিম, আল-মুসতাদরাক ১/৩৬১।
[৪২]. মুসলিম (৪-কিতাবুস সালাত, ৪২-বাব মা ইউকালু ফির রুকু...) ১/৩৫০, নং ৪৮২ (ভা.
১/১৯১)
অন্য হাদীসে ইবনু আব্বাস বলেন, রাসূলুল্লাহ
(ওফাত দিবসের ফজরের সময়) তাঁর ঘরের পর্দা তুলে দেখলেন
সাহাবীগণ আবু বকরের পিছে কাতারবদ্ধ হয়ে সালাত আদায়
করছেন। তখন তিনি বলেন-
“হে মানুষেরা, নবুয়্যতের সুসংবাদগুলোর আর কিছুই বাকি
থাকল না, শুধুমাত্র নেক স্বপ্ন ছাড়া, যা মুসলিম দেখে বা তার
বিষয়ে দেখা হয়। শুনে রাখ, আমাকে রুকু ও সাজদা অবস্থায়
কুরআন পাঠ করতে নিষেধ করা হয়েছে। রুকু অবস্থায় তোমরা
তোমাদের মহান প্রভুর মর্যাদাবাচক স্তুতি পাঠ করবে। আর
সাজদারত অবস্থায় তোমরা খুব বেশি করে দু‘আ করবে, কারণ এ
সময়ে তোমাদের দু‘আ কবুল হওয়ার সম্ভাবনা খুবই বেশি।”[৪৩]
এভাবে আমরা দেখছি যে, সালাতের মধ্যে সানার সময়ে,
তিলাওয়াতের সময়ে এবং বিশেষ করে সাজদার সময়ে এবং
তাশাহ্হুদের পরে দু‘আ-মুনাজাত করা রাসূলুল্লাহ এর
আচরিত ও নির্দেশিত সুন্নাত।
এখানে একটি ভুল ধারণা অপনোদন করা অতীব প্রয়োজন।
কারণ অনেক সময় আমরা অজ্ঞতাবশত মাযহাবকে সুন্নাতের
বিপরীতে দাঁড় করাই এবং মাযহাবের অজুহাতে সুন্নাত পরিত্যাগ
করি বা অস্বীকার করি। এর একটি বড় নমুনা সালাতের মধ্যে
দু‘আ করা। অনেকে অজ্ঞতাবশত বলেন: আমাদের মাযহাবে
[৪৩]. মুসলিম (৪-কিতাবুস সালাত, ৪১-বাবুন নাহয়ি আন কিরাআতিল কুরআন...)১/৩৪৮ (ভা.
১/১৯১)
সালাতের মধ্যে বা ফরয সালাতের মধ্যে নির্ধারিত তাসবীহতাহলীল ও দু‘আ ছাড়া অন্য কোনো দু‘আ করা যায় না। ধারণাটি
অজ্ঞতার প্রমাণ ছাড়া কিছুই নয়।
হানাফী মাযহাবের মূল গ্রন্থ, ইমাম আবূ হানীফার অন্যতম
ছাত্র ইমাম মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান শাইবানীর ‘আল-মাবসূত’
গ্রন্থে তিনি বলেন:
باب الدعاء في الصالة: قلت أرأيت رجال قد صلى فدعا
هللا فسأله الرزق وسأله العافية هل يقطع ذلك الصالة
قال ال قلت وكذلك كل دعاء من القرآن وشبه القرآن فإنه
ال يقطع الصالة قال نعم قلت فإن قال اللهم اكسني ثوبا
اللهم زوجني فالنة قال هذا يقطع الصالة وما كان من الدعاء
مما يشبه هذا فهو كالم وهو يقطع الصالة. قلت فإن قال
اللهم أكرمني اللهم أنعم علي اللهم أدخلني الجنة وعافني
من النار اللهم أصلح لي أمري اللهم اغفر لي ولوالدي اللهم
وفقني وسددني اللهم اصرف عني شر كل ذي شر أعوذ باهلل
من شر الجن واإلنس أعوذ باهلل من الشيطان الرجيم أعوذ
باهلل من جهد البالء ودرك الشقاء ومن شماتة األعداء اللهم
ارزقني حج بيتك وجهادا في سبيلك اللهم استعملني في
طاعتك وطاعة رسولك اللهم اجعلنا صادقين اللهم اجعلنا
حامدين عابدين شاكرين اللهم ارزقنا وأنت خير الرازقين
قال هذا كله حسن وليس �شيء من هذا يقطع الصالة وهذا
من القرآن وما يشبه القرآن وإنما يقطع الصالة ما يشبه
حديث الناس.
قلت أرأيت الرجل يمر باآلية فيها ذكر النار فيقف
عندها ويتعوذ باهلل ويستغفر هللا وذلك في التطوع وهو
وحده قال هذا حسن قلت فإن كان اإلمام قال أكره له ذلك
قلت فإن فعل قال صالته تامة قلت أرأيت الرجل يكون
خلف اإلمام فيقرأ اإلمام بسورة فيها ذكر الجنة وذكر النار
أو ذكر املوت أينبغي ملن خلفه أن يتعوذ باهلل من النار
ويسأل هللا الجنة قال يسمعون وينصتون أحب إلي قلت
أرأيت الرجل يكون خلف اإلمام فيفرغ اإلمام من السورة
أتكره للرجل أن يقول صدق هللا وبلغت رسله قال أحب إلي
أن ينصت ويستمع قلت فإن فعل هل يقطع ذلك صالته
قال ال صالته تامة ولكن أفضل ذلك أن ينصت قلت أرأيت
اإلمام يقرأ اآلية فيها ذكر قول الكفار أينبغي ملن خلفه أن
يقولوا ال إله إال هللا قال أحب ذلك إلي أن يستمعوا وينصتوا
قلت فإن فعلوا قال صالتهم تامة.
“সালাতের মধ্যে দু‘আর অধ্যায়: আমি (ইমাম আবূ
হানীফাকে) বললাম: বলুন তো, যদি কোনো মানুষ সালাতের মধ্যে
দু‘আ করে, আর দু‘আয় আল্লাহর কাছে রিযক চায় বা সুস্থতানিরাপত্তা চায় তাহলে কি তার সালাত ভেঙে যাবে? তিনি (ইমাম
আবূ হানীফা) বলেন: না, সালাত ভাঙ্গবে না। আমি বললাম:
কুরআনের সকল দু‘আ ও কুরআনের দু‘আর মত সকল দু‘আই
কি এরূপ (এ ধরনের কোনো দু‘আতেই কি সালাত ভাঙবে না?)
তিনি বলেন, হ্যাঁ। আমি বললাম, যদি লোকটি বলে: আল্লাহ
আমাকে একটি কাপড় পরিয়ে দিন, আমাকে অমুক মহিলার সাথে
বিবাহ দিন- তাহলে কী হবে? তিনি বলেন: এগুলো মানুষের সাথে
কথাবার্তা, এরূপ কথা বললে সালাত ভেঙে যাবে।
আমি বললাম: যদি সে বলে: হে আল্লাহ, আমাকে সম্মানিত
করুন; হে আল্লাহ, আমাকে নি‘আমত প্রদান করুন; হে আল্লাহ,
আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করান; আমাকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা
করুন; হে আল্লাহ, আমার কর্মকাÐ সঠিক করে দিন; হে আল্লাহ,
আমাকে এবং আমার পিতামাতাকে ক্ষমা করুন; হে আল্লাহ,
আমাকে তাওফিক দিন এবং সঠিক পথে পরিচালিত করুন; হে
আল্লাহ, সকল ক্ষতি-অমঙ্গলকে আমার থেকে সরিয়ে নিন; আমি
মানুষ ও জিনের ক্ষতি থেকে আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ করছি; আমি
বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ করছি; আমি কঠিন
বিপদ, ভাগ্যের বিপর্যয়, আমার বিপদে শত্রæদের আনন্দলাভের
অবস্থা থেকে আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ করছি; হে আল্লাহ, আমাকে
আপনার ঘরের হজ্জ করার এবং আপনার রাস্তায় জিহাদ করার
ক্ষমতা প্রদান করুন; হে আল্লাহ, আমাকে আপনার ও আপনার
রাসূলের () আনুগত্যের কাজে ব্যবহার করুন; হে আল্লাহ,
আমাদেরকে সত্যবাদী বানিয়ে দিন; হে আল্লাহ, আমাদেরকে
প্রশংসাকারী, ইবাদতকারী ও কৃতজ্ঞ বানিয়ে দিন; হে আল্লাহ,
আমাদেরকে রিযক প্রদান করুন এবং আপনিই শ্রেষ্ঠ রিযকদাতাসালাতের মধ্যে এ সকল দু‘আ করার বিধান কী? তিনি বলেন:
এগুলো সবই সুন্দর। এগুলোর কোনো কিছুতেই সালাত নষ্ট হবে
না। এগুলো সবই তো কুরআনের দু‘আ বা কুরআনের দু‘আর
সাথে মিলসম্পন্ন দু‘আ। সালাত তো নষ্ট হয় মানুষের কথাবার্তার
মত কথা বললে।
আমি বললাম: আপনি বলুন তো, একজন মানুষ একাকী
সুন্নাত-নফল সালাত আদায়ের সময় জাহান্নামের কথা আছে
এমন একটি আয়াত অতিক্রম (পাঠ) করল, তখন সে সেখানে
থেমে গেল এবং আল্লাহর কাছে আশ্রয় এবং ক্ষমা প্রার্থনা করলতার বিধান কী? তিনি বলেন: এ তো সুন্দর কর্ম। আমি বললাম:
যদি জামা‘আতে সালাতে ইমামতি করার সময় এরূপ করে?
তিনি বলেন: ইমামের জন্য এরূপ করা আমি অপছন্দ করি।
আমি বললাম: যদি কোনো ইমাম এরূপ করে তাহলে কী হবে?
তিনি বলেন: তার সালাত পরিপূর্ণ হবে (এরূপ করা অপছন্দনীয়
হলেও তাতে সালাতের কোনো ক্ষতি হবে না)। আমি বললাম:
বলুন তো, কোনো ব্যক্তি ইমামের পিছনে সালাত আদায় করছে
এমতাবস্থায় ইমাম জান্নাত, জাহান্নাম বা মৃত্যু বিষয়ক কোনো
সূরা পাঠ করেন, তখন মুক্তাদীর জন্য জাহান্নাম থেকে আল্লাহর
আশ্রয় চাওয়া এবং আল্লাহর কাছে জান্নাত প্রার্থনা করা কি উচিত
হবে? তিনি বলেন: মুক্তাদীদের জন্য চুপ করে শ্রবণ করাই আমি
অধিক পছন্দ করি। আমি বললাম: যদি কেউ ইমামের পিছনে
সালাত আদায় করে তাহলে ইমামের সূরা পাঠ শেষ হলে
‘সাদাকাল্লাহ ও বাল্লাগাত রুসুলুহু’ ‘আল্লাহ সত্য বলেছেন এবং
রাসূলগণ প্রচার করেছেন’ বলা কি তার জন্য অপছন্দনীয়? তিনি
বলেন: নীরবে শ্রবণ করাই আমার বেশি পছন্দ। আমি বললাম:
মুক্তাদী যদি এরূপ বলে তাহলে কী সালাত ভেঙে যাবে? তিনি
বলেন: না, তার সালাত পরিপূর্ণ হবে, তবে এরূপ না বলে নীরবে
শ্রবণ করাই অধিক ফযীলত বা উত্তম। আমি বললাম: ইমাম যদি
কাফিরদের আলোচনা বিষয়ক কোনো আয়াত পাঠ করেন তাহলে
মুক্তাদীগণের জন্য “লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু” বলা কি উচিত?
তিনি বলেন: নীরবে শ্রবণ করা আমার কাছে অধিক পছন্দনীয়।
আমি বললাম: যদি তারা এরূপ বলে তাহলে কী হবে? তিনি
বলেন: তাদের সালাত পরিপূর্ণ বা শুদ্ধ হবে।”[৪৪]
এ দীর্ঘ উদ্ধৃতির মাধ্যমে আমরা এ বিষয়ে ইমাম আযমের
প্রকৃত মত বুঝতে পারছি। ফরয সালাত যেহেতু জামা‘আতে
আদায় করতে হয় এজন্য যথাসম্ভব নির্ধারিত যিক্র আযকার
ও দু‘আর মাধ্যমে আদায় করাই উত্তম। এরপরও কুরআন
তিলাওয়াতের সময় যদি ইমাম বা মুক্তাদী দু‘আ বা যিক্রমুনাজাত করেন তাহলে তা অবৈধ বা নিষিদ্ধ নয়। পাশাপাশি
[৪৪] . মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান, আল-মাবসূত ১/২০২-২০৫।
ফরয-নফল সকল সালাতের মধ্যে কুরআনের দু‘আ বা কুরআনের
অর্থবোধক দু‘আ পাঠ করাকে ইমাম আবূ হানীফা সুন্দর বা উত্তম
বলেছেন। সুন্নাত, নফল, তাহাজ্জুদ ইত্যাদি সালাতের শুরুতে,
তিলাওয়াতের সময়ে, রুকুতে, সাজদায় ও শেষে তাশাহহুদের
পরে বেশি বেশি করে দু‘আ করতে হবে। তাঁর এ মতটি সুন্নাতের
আলোকে জোরদার। কারণ আমরা অধিকাংশ হাদীসেই দেখতে
পাই যে, রাসূলুল্লাহ অতিরিক্ত দু‘আ সাধারণত তাহাজ্জুদ
ইত্যাদি সুন্নাত বা নফল সালাতের মধ্যে বলতেন। প্রত্যেক
মুমিনের জন্য তাঁর মনের সকল আবেগ, আকুতি, বেদনা ও প্রার্থনা
মহান প্রভুর দরবারে পেশের সর্বোত্তম সুযোগ সালাত, বিশেষত
সাজদার অবস্থায়। পৃথিবীর কোনো নেতা যদি আমাদের বলতেন,
অমুক সময় আমার কাছে আবেদন করলে আমি তা কবুল করব,
তাহলে আমরা সে সময়টিকে সদ্ব্যবহার করতে প্রাণপণে চেষ্টা
করতাম। কিন্তু আফসোস! মহান রাব্বুল আলামীনের এ মহান
সুযোগ আমরা অবহেলা করে এড়িয়ে চলছি। আমাদের সকলেরই
উচিত, যথাসম্ভব মাসনূন দু‘আ মুখস্থ করে সেগুলো দিয়ে সাজদায়
দু‘আ করা।
আমরা এখানে সালাতের মধ্যে সাজদায় ও তাশাহ্হুদের
পরের কয়েকটি মাসনূন দু‘আ উল্লেখ করব। এছাড়া আমার লেখা
‘মুনাজাত ও নামায’ বইটিতে পাঠক আরো অনেক মাসনূন দু‘আ
দেখতে পাবেন।
১. ৩. সালাতের পূর্বে ও সালাতের জন্য
ইসতিঞ্জা, অযূ, গোসল, আযান, ইকামত বিষয়গুলো
সালাতের সাথে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত, তাই এ সংক্রান্ত
যিক্রগুলো উল্লেখ করছি।
১. ৩. ১. ইস্তিঞ্জার যিক্র
উচ্চারণ: বিসমিল্লা-হ, আল্লা-হুম্মা, ইন্নী আ‘ঊযু বিকা
মিনাল খুবুসি ওয়াল খাবা-ইসি।
অর্থ: “আল্লাহর নামে। হে আল্লাহ, আমি আপনার আশ্রয়
গ্রহণ করছিÑ অপবিত্রতা ও অকল্যাণ থেকে বা পুরুষ ও নারী
শয়তান থেকে।”
আনাস বলেন, রাসূলুল্লাহ ইস্তিঞ্জার জন্য গমন
করলে এ দু‘আটি পাঠ করতেন। সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম
ও অন্যান্য হাদীসের গ্রন্থের ‘বিসমিল্লাহ’ ছাড়া দু‘আটি বর্ণিত
হয়েছে। মুসান্নাফ ইবনু আবী শাইবা গ্রন্থে সংকলিত অন্য হাদীসে
দু‘আটির শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ উল্লেখ করা হয়েছে।[৪৫]
কোনো কোনো বর্ণনায় এ দু‘আর শেষে “ওয়াশ শাইত্বানির
রাজীম” (এবং বিতাড়িত শয়তান থেকে) কথাটুকু সংযুক্ত। এ
সংযুক্তির সনদে দুর্বলতা রয়েছে।[৪৬]
এছাড়া অন্য হাদীসে আলী বলেন, রাসূলুল্লাহ
বলেন:
“তোমাদের কেউ যখন প্রকৃতির ডাকে নির্জনস্থানে গমন
করে তখন জিন-দের চক্ষু থেকে আদম-সন্তানদের গুপ্তাঙ্গের
[৪৫]. বুখারী (৪-কিতাবুল অযু, ৯-বাব মা ইয়াকুলু ইনদাল খালা) ১/৬৬, নং ১৪২ (ভা. ১/২৬);
মুসলিম (৩-কিতাবুল হায়েয, ৩২-বাব... দুখূলাল খালা) ১/২৮৩, নং ৩৭৫ (ভা. ১/১৬৩),
মুসান্নাফু ইবনু আবী শাইব ১/১১, সুনান ইবন মাজাহ ১/১০৯, সহীহুল জামিয়িস সাগীর
২/৮৬০, নং ৪৭১৪।
[৪৬] . ইবনু আবী শাইবা, আল-মুসান্নাফ ১/১ ও ১০/৪৫৩; আল-উকাইলী, আদ-দু‘আফা আলকাবীর ৭/১১; আলবানী, যায়ীফাহ ১১/৭০-৭১।
আবরণ হলো “বিসমিল্লাহ” বলা।”[৪৭]
ইস্তিঞ্জার সময় মুখের যিক্র অনুচিত
আমরা দেখেছি যে, সর্বাবস্থায় মুখে আল্লাহর যিক্র করাই
সুন্নাত। তবে দু’টি অবস্থায় মুখে যিক্র না করাই উচিত বলে
ফকীহগণ মত প্রকাশ করেছেন। প্রথমত, ইস্তিঞ্জায় রত থাকা
অবস্থা। অধিকাংশ ফকীহ এ অবস্থায় মুখে যিক্র মাকরুহ তানযিহী
বা অনুচিত বলে মত প্রকাশ করেছেন। ইমাম নববী লিখেছেন:
প্রাকৃতিক প্রয়োজন সারার সময় কোনো প্রকার আল্লাহর যিক্র
করা মাকরুহ। তাসবীহ, তাহলীল, সালামের উত্তর প্রদান, হাঁচির
উত্তর প্রদান, হাঁচি দিয়ে ‘আল-হামদু লিল্লাহ’ বলা, আযানের
জবাব দেওয়া ইত্যাদি কোনো প্রকারের যিক্র মুমিন এ অবস্থায়
এবং স্বামী-স্ত্রীর মিলন অবস্থায় করবেন না। যদি তিনি হাঁচি দেন
তাহলে জিহŸা না নেড়ে মনে মনে ‘আল-হামদু লিল্লাহ’ বলবেন।
এছাড়া প্রয়োজন ছাড়া কথাবার্তা বলাও এ সময়ে মাকরুহ। এ দু
অবস্থায় কথাবার্তা বা যিক্র মাকরুহ তাহরিমী বা হারাম পর্যায়ের
মাকরুহ নয়, বরং মাকরুহ তানযিহী বা “অনুচিত” পর্যায়ের
মাকরুহ। এ অবস্থায় যিক্র করলে গুনাহ হবে না, তবে যিক্র
না করাই উচিত। ইস্তিঞ্জায় রত ব্যক্তিকে সালাম প্রদান করাও
মাকরুহ। অধিকাংশ ইমাম ও ফকীহের এ মত। ইবনু সীরীন,
ইবরাহীম নাখয়ী প্রমুখ এ মতের বিরোধিতা করেছেন। তারা
এ অবস্থায় যিক্র, তাসবীহ-তাহলীল, সালামের উত্তর ইত্যাদি
জায়েয বলেছেন।[৪৮]
[৪৭] . তিরমিযী (আবওয়াবুস সালাত, বাব মা যুকিরা মিনাস তাসমিয়াতি...) ২/৫০৩-৫০৪
(ভা. ১/১৩২); আলবানী, ইরওয়াউল গালীল ১/৮৭-৯০। আলবানী হাদীসটিকে সহীহ
বলেছেন।
[৪৮]. নাবাবী, শারহু সহীহ মুসলিম ৪/৬৫, আল-আযকার, পৃ. ৫৩, ৫৪।
ইস্তিঞ্জার পরের যিক্র:
উচ্চারণ: গুফরা-নাকা। অর্থ: “আপনার ক্ষমা প্রার্থনা
করি।”
আয়েশা বলেন, রাসূলুল্লাহ ইস্তিঞ্জা শেষে বেরিয়ে
আসলে এ দু‘আটি বলতেন। হাদীসটি হাসান। কোনো কোনো
যয়ীফ সূত্রে এ বাক্যটির পরে অতিরিক্ত কিছু বাক্য বলা হয়েছে।[৪৯]