বিয়ে করলে রিজিক বাড়ে ইসলামের দৃষ্টিতে বিয়ের নিয়ম বিয়ে করা কি ফরজ বিয়ের বয়স নিয়ে হাদিস

হযরত আনাস ইবনে মালিক (রা) হইতে বর্ণিত হইয়াছে, তিনি বলিয়াছেন। একদিন তিন জন লোক নবী করীম (স)- এর বেগমগণের নিকট উপস্থিত হইলেন। তাঁহারা নবী করিমের দিনরাতের ইবাদত বন্দেগী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করিলেন ও জানিতে চাহিলেন। তাঁহাদিগকে যখন এই বিষয়ে প্রকৃত অবস্থা জানানো হইল তখন তাঁহারা যেন উহাকে খুব কম ও সামান্য মনে করিলেন। পরে তাঁহারা বলিলেনঃ নবী করীম (স)-এর তুলনায় আমরা কোথায়? তাঁহার তো পূর্বের ও পরের সব গুনাহ মাফ করিয়া দেওয়া হইয়াছে। তাঁহাদের একজন বলিলেনঃ আমি তো চিরকাল সারা রাত্র জাগিয়অ থাকিয়া নামায পড়িব। অপর একজন বলিলেনঃ আমি তো সমস্তকাল ধরিয়া রোযা রাখিব এবং কখনই রোযা ভাঙিত না। তৃতীয় একজন বলিলেনঃ আমি স্ত্রীলোকদের সহিত সম্পর্ক বর্জন করিব। অতঃপর আমি কখনই বিবাহ করিব না। এই সময় রাসূলে করীম (স) তাঁহাদের নিকট উপস্থিত হইলেন এবং বলিলেনঃ তোমরাই তো এই সব কথা-বার্তা বলিয়াছ? কিন্তু আল্লামর নামে শপথ! তোমাদের মধ্যে সকলের তুলনায় আল্লাহ তা’আলাকে আমি-ই অধিক ভয় করি। আল্লাহর ব্যাপারে তোমাদের তুলনায় আমি-ই অধিক তাকওয়া অবলম্বন করিয়া থাকি। অথচ তাহা সত্ত্বেও আমি রোযা থাকি, রোযা ভাঙিও। আমি রাত্রিকালে নামাযও পড়ি, আবার ঘুমাইও। আমি স্ত্রী গ্রহণও করি। (ইহাই আমার সুন্নত) অতএব যে লোক আমার সুন্নাতের প্রতি অনীহা পোষণ করিবে, সে আমার সহিত সম্পর্কিত নয়। (বুখারী, মুসলিম) [এই হাদীসটিই ‘হাদীস শরীফ’ ১ম খণ্ডেও সম্পূর্ণ দ্বীনদারীর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে উদ্ধৃত হইয়াছে। এখানে সেই একই হাদীস ভিন্নতর দৃষ্টিকোণে উদ্ধৃত হইয়াছে ও উহার ব্যাখ্যাও ভিন্ন দৃষ্টিতে করা হইয়াছে।]

 

ব্যাখ্যাঃ   হাদীসটি বিবাহ পর্যায়ে উদ্ধৃত হইলেও ইসলাম যে একটি বাস্তববাদী পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান, তাহা ইহা হইতে সঠিক রূপে স্পষ্ট হইয়া উঠিয়াছে। নবী করীম (স)-এর জীবনাদর্শ ও অনুসৃত নীতির বাস্তব ভূমিকা ইহা হইতে স্পষ্ট ভাবে জানা যাইতেছে এবং প্রকৃতপক্ষে তাহাই ইসলাম।

 

মূল হাদীসে বলা হইয়াছেঃ ************* কিন্তু মুসলিম শরীফের বর্ণনায় এই স্থানের ভাষা হইলঃ  ****************** ‘রাসূরের সাহাবীদের মধ্য হইতে কয়েকজন লোক’। ******* ও ****** শব্দদ্বয়ের ব্যবহারিক অর্থে সামান্য পার্থক্য রহিয়াছে। ***** শব্দটি তিন হইতে দশ সংখ্যক পর্যন্ত ব্যক্তিদের বুঝায়। আর **** শব্দটি বুঝায় তিন হইতে নয় জন লোক। মূলক শব্দ দুইটির তাৎর্যে কোনই বিরোধ বা মৌলিক পার্থক্য নাই।

 

এই তিনজন লোক কাহারা ছিলেন? সায়ীদ ইবনুল মুসাইয়্যিব হইতে আবদুর রাজ্জাক উদ্ধৃত বর্ণনা হইতে জানা যায়, এই তিনজন লোক ছিলেন (১) হযরত আলী (রা), (২) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আ’স (রা) এবং (৩) হযরত উসমান ইবনে মযয়ূন (রা)।

 

এই তিনজন সাহাবী রাসূলে করীমের বেগমদের নিকট হইতে রাসূলে করীম (স)-এর দিন রাত্রির ইবাদত-বন্দেগী সংক্রান্ত ব্যস্ততা সম্পর্কে সঠিক খবর জানিবার জন্য উপস্থিত হইয়াছিলেন। এইখানে মুসলিম শরীফের বর্ণনার ভাষা হইলঃ *********** রাসূলে করীম (স) গোপনে সকলের চোখের আড়ালে ও অজ্ঞাতে কি কি আমল করেন সেই বিষয়েই তাঁহারা জানিতে চাহিয়াছিলেন। কেননা তিনি প্রকাশ্যে যাহা যাহা করিতেন, তাহা তো এই সাহাবীদের কিছুমাত্র অজানা ছিল না। নবী (স)-এর বেগমগনের নিকট হইতে তাঁহরা জিজ্ঞাসিত বিষয়ে যাহা কিছু জানিতে পারিয়াছিলেন তাহাতে তাঁহারা খুব খুশী হইতে পারিলেন না। যাহা কিছু জানিতে পারিলেন, তাহা তাহাদের খুবই সামান্য ও নগণ্য মনে হইল। তাঁহারা মনে করিয়াছিলেন, নবী করীম (স) হয়ত দিন-রাত্রি ধরিয়া কেবল ইবাদতই করেন। ইবাদত ছাড়া অন্য কোন কাজই তিনি করেন না। কিন্তু বেগমগণের কথায় তাঁহাদের সে ধারণা অমূলক প্রমাণিত হইল। কিন্তু নবী করীম (স) সম্পর্কে তাঁহারা অন্য কোন ধরনের ধারণা তো করিতে পারেন না, এই জন্য তাঁহারা নিজেরাই নিজদিগকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য নবী করীম (স)-এর পূর্ব ও পরবর্তী কালের সমস্ত গুনাহ মাফ হইয়া যাওয়ার কথা স্মরণ করিলেন।এই প্রেক্ষিতে তাঁহারা মনে করিয়া লইলেন যে, এই কারণেই রাসূলে করীম (স) খুব বেশী ইবাদত করেন না। কিন্তু আমরা তো আর তাঁহার মত নহে, আমাদের পূর্ব ও পরের গুনাহ তো মাফ হইয়া যায় নাই। কাজেই আমাদের অত কম ইবাদাত করিলে চলিবে না। রাসূলে করীমের সাথে আমাদের কি তুলনা হইতে পারে। অতঃপর এক একজন লোক যাহা যাহা বলিয়াছেন তাহা হাদীসের মূল বর্ণনাতেই উদ্ধৃত হইয়াছে। [তাঁহাদের বলা কথাগুলির বর্ণনায় বুখারী মুসলিম গ্রন্হদ্বয়ের বর্ণনার মধ্যে ভাষার পার্থক্য হইয়াছে। উপরে যে হাদীস উদ্ধৃত হইয়াছে উহা বুখারী শরীফ হইতে গৃহীত। মুসলিম শরীফে উদ্ধৃত তাঁহাদের কথা গুলি এইরূপঃ একজন বলিলেনঃ ************ ‘আমি স্ত্রী গ্রহণ করিব না বা বিবাহ করিব না’। অন্যজন বলিলেনঃ ******** ‘আমি গোশত খাইব না’। তৃতীয় জন বলিলেনঃ *********** ‘আমি বিছানায় ঘুমাইব না’। এই শাব্দিক পার্থক্যের কারণ হইল, হাদীসের বর্ণনা সমূহ সাধারণতঃ ভাব ও মূল কথার বর্ণনা। মূল বক্তার ব্যবহৃত শব্দ ও ভাষার হুবহু উচ্চারণ নয় এবং উহা বিভিন্ন বর্ণনাসূত্রে পওয়া গেছে। তাই এই পার্থক্য স্বাভাবিক।] সম্ভবত এই সময় নবী করীম (স) ঘরের মধ্যে অবস্থিত ছিলেন এবং তাঁহাদের সব কথা-বার্তা তিনি নিজ কানেই শুনিতে পাইয়াছিলেন।

 

এই পর্যায়ে মুসলিম শরীফের বর্ণনায় উদ্ধৃত হইয়াছেঃ

 

*****************************************************************

 

সাহাবী তিনজনের উক্তরূপ কথা-বার্তার খবর নবী করীম (স)- এর নিকট পৌঁছিল। অতঃপর তিনি (এই প্রসঙ্গে লোকদের বিভ্রান্তি দূর করার উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে শুরু করিলেন) প্রথমে আল্লাহর হামদ ও সানা বলিলেন। পরে বলিলেনঃ লোকদের কি হইয়াছে, তাহারা এই ধরনের কথা-বার্তা বলিতে শুরু করিয়াছে….?

 

বস্তুত এই দুইটি বর্ণনার মধ্যে মূলত কোনই বিরোধ বা পার্থক্য নাই। রাসূলে করীম (স)-এর ভাষণের প্রথমাংশে লোকদের এই ভুল ধারণা দূর করা হইয়াছে যে, ‘যে লোক আল্লাহর নিকট মায়াফী পাইয়াছে তাহার অন্যান্যদের তুলনায় বেশী বেশী ইবাদত করার প্রয়োজন নাই’। তিনি জানাইয়া দিলেন যে, রাসূলে করীম (স) আল্লাহর নিকট হইতে সর্বকারে গুনাহ হইতে ক্ষমা প্রাপ্ত হওয়া সত্ত্বেও ইবাদাতের চরম ও কঠোর কৃচ্ছতা অবলম্বন করেন। কেননা তিনি অন্যদের অপেক্ষা আল্লাহকে বেশী ভয় করেন, অধিক তাকওয়া অবলম্বনকারী তিনি তাহাদের অপেক্ষাও, যাহারা ইবাদাতে খুব বেশী কঠোরতা ও কৃচ্ছতা করিয়া থাকে।

 

রাসূল (স)- এর কথাঃ ‘অথচ তাহা সত্ত্বেও’ …এইস্থানে একটি অংশ উহ্য রহিয়াছে। তাহা হইলঃ

 

*****************************************************************

 

বান্দাহ হওয়ার দিক দিয়া আমি ও তোমরা সম্পূর্ণ সমান। কিন্তু তাহা সত্ত্বেও আমি রোযা রাখি……

 

মূল হাদীসের শেষ ভাগে রাসূলে করীম (স)- এর উক্তিঃ

 

*****************************************************************

 

যে লোক আমার কর্মপন্হা ও জীবন-পদ্ধতি হইতে বিমুখ হইবে- উহা গ্রহণ ও অনুসরণের পরিবর্তে অন্য নিয়ম ও পদ্ধতিতে কাজ করিবে, সে আমার সহিত সম্পর্কিত নয়- অর্থাৎ সে আমার কর্মপন্হার অনুসারী নয়, সে আমার অনুসৃত পথে চলছে না।

 

ইহার আরও অর্থ হইলঃ সে আমার নিকটবর্তী নয়।

 

এই পর্যায়ে হযরত আয়েশা (রা) বর্ণিত হাদীসটির ভাষা হইলঃ

 

*****************************************************************

 

বিবাহ আমার সুন্নাত-নীতি-আদর্শ ও জীবন-পদ্ধতি। যে লোক আমার এই নীতি- আদর্শ ও জীবন পদ্ধতি অনুযায়ী আমল করিবে না- ইহাকে কাজে পরিণত করিবে না, সে আমার নীতি ও আদর্শানুসারী নয়।

 

(এই হাদীসটির সনদে ঈসা ইবনে মায়মূন একজন যয়ীফ বর্ণনাকারী)

 

মুসনাদে দারীমী গ্রন্হে হাদীসটি উদ্ধৃত হইয়াছে এই ভাষায়ঃ

 

*****************************************************************

 

যে লোক বিবাহ করার সামর্থ রাখে সে যদি বিবাহ না করে, তাহা হইলে সে আমাদের মধ্যের নয়।

 

আলোচ্য হাদীস হইতে স্পষ্ট প্রমাণিত হইতেছে যে, নিয়মিত নামায পড়া ও নিদ্রা যাওয়া, নফল রোযা রাখা- না-ও রাখা এবং বিবাহ করা- অন্য কথায়, আল্লাহর হক আদায় করার সঙ্গে সঙ্গে নিজের ও সমাজের হকও আদায় করা, এক কথায় আল্লাহর পূর্ণাঙ্গ দ্বীনের ভিত্তিতে দুনিয়ার সমস্ত কাজ করা, পূর্ণাঙ্গ জীবন যাপন করাই হইতেছে রাসূলে করীম (স)- এর আদর্শ ও জীবন পদ্ধতি। পক্ষান্তরে কেবলমাত্র ধর্মপালনকারী হওয়া ও দুনিয়ার দাবি-দাওয়া ও দায়-দায়িত্ব অস্বীকার করা, অথবা কেবল মাত্র দুনিয়াদারী করা ও দ্বীনী দায়-দায়িত্ব সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করা রাসূলে করীম (স)- এর কর্মপন্হা ও জীবন পদ্ধতি নয়। রাসূলে করীম (স)-এর উপস্থাপিত জীবন-পদ্ধতি পূর্ণাঙ্গ ও সর্বাত্মক। তাহা একদেশদর্শী নয়। এই হিসাবে বিবাহও- দাম্পত্য ও পারিবারিক জীবন যাপনও নবী করীম (স)-এর সুন্নাত। ইহা এই জীবন-পদ্ধতির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক, রাসূলে করীম (স)-এর উপস্থাপিত পূর্ণাঙ্গ জীবন ও সমাজ ব্যবস্থার ভিত্তি।

 

মুহাল্লাব বলিয়াছেন, বিবাহ ইসলাম প্রবর্তিত কর্মপদ্ধতির একটি। ইসলামে ‘রাহবানিয়াত’- বিবাহ না করিয়া চিরকুমার হইয়া থাকা- মাত্রই সমর্থিত নয়। যে লোক বিবাহ করিবে না, রাসূলে করীম (স)- এর সুন্নাতের বিপরীত পথে চলিবে, সে ঘৃণ্য বিদয়াতপন্হী। কেননা আল্লাহ তা’আলা কুরআন মজীদে নবী-রাসূলগণের জীবন-আদর্শ অনুসরণ করিয়া চলিবার জন্য স্পষ্ট অকাট্য নির্দেশ দিয়াছেন। বলিয়াছেন, *************** ‘অতএব তোমরা নবী-রাসূলগণের হেদায়েত-বিধান অনুসরণ করিয়া চল’।

 

দায়ূদ যাহেরী ও তাঁহার অনুসারী ফিকাহবিগণ মনে করিয়াছেন, বিবাহ করা ওয়াজিব। ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বলের মতে বিবাহ করা কর্তব্য। ইমাম আবু হানীফা (র) মত দিয়াছেন, আর্থিক দৈন্য থাকা সত্ত্বেও বিবাহ করা সম্পূর্ণ জায়েয। কেননা কবে আর্থিক স্বচ্ছলতা আসিবে সে জন্য অপেক্ষা করার কোন প্রয়োজন নাই।

 

প্রাসঙ্গিক আলোচনার অবশিষ্ট অংশে উল্লেখ করা যাইতে পারে যে, বিবাহ না করা, চিরকুমার হইয়া থাকা পুরুষ ও মেয়ে লোক উভয়ের পক্ষেই ইসলামী শরীয়াতের সম্পূর্ণ পরিপন্হী কাজ। যথা সময়ে বিবাহ করা উভয়ের পক্ষেরই কর্তব্য। ইহা কেবল নৈতিকতার সার্বিক সংরক্ষনই নয়, জৈবিক ও দৈহিক দাবিও। আল্লাহ প্রেরিত নবী-রাসূলগণ দাম্পত্য ও পারিবারিক জীবনই যাপন করিয়াছেন। কুরআন মাজীদে হযরত মুহাম্মদ (স)- কে সম্বোধন করিয়া বলা হইয়াছেঃ

 

*****************************************************************

 

আর আমরা তোমার পূর্বে বহু নবী-রাসূল পাঠাইয়াছি এবং তাহাদের জন্য আমরা স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি বানাইয়া দিয়াছি।

 

অর্থাৎ বিবাহ, পারিবারিক জীবন যাপন ও সন্তান জন্মদান নবী-রাসূলগণের জীবন পদ্ধতি। আর তাঁহারাই হইতেছেন দুনিয়ার সমগ্র মানুষের আদর্শ ও অনুসরণীয় নেতা। বিশেষভাবে বিশ্বমুসলিমের জন্য তাঁহারা অনুসরনীয়। অতএব তাঁহাদের অনুসৃত নীতি ও জীবন-পদ্ধতির বিনা কারণে বিরুদ্ধতা করা কোন মুসলমাননের ক্ষেত্রেই কল্পনীয় নয়।

 

সায়াদ ইবনে হিসাম (তাবেয়ী) হযরত আয়েশা (রা)- এর নিকট বিবাহ না করিয়া পরিবারহীন কুমার জীবন যাপন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করিলে তিনি বলিলেন, ************* ‘না, তুমি তাহা করিবে না’। অতঃপর তিনি তাঁহার এই কথার সমর্থনে উপরোক্ত আয়াতটি পাঠ করিলেন।

 

হযরত আবূ আইয়ূব আনসারী (রা) হইতে বর্ণিত হইয়াছে, রাসূলে করীম (স) ইরশাদ করিয়াছেনঃ

 

*****************************************************************

 

চারটি কাজ রাসূলগণের জীবন-নীতির অন্তর্ভুক্ত। তাহা হইলঃ সুগন্ধি ব্যবহার, বিবাহ করা, মিসওয়াক করা- দাঁত করিষ্কার ও নির্মল রাখা এবং খতনা করা।

 

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) হইতে বর্ণিত হইয়াছে, তিনি বলিয়াছেনঃ

 

*****************************************************************

 

নবী করীম (স) প্রায়ই বলিতেনঃ ইসলামে অবিবাহিত, কুমার-কুমারী- বৈরাগী জীবন যাপনের কোন অবকাশ নাই।

 

আল্লামা কাযী আয়ায বলিয়াছেনঃ ********* শব্দের আভিধানিক ও পারিভাষিক অর্থঃ

 

*****************************************************************

 

বিবাহ না করা- বিবাহ হইতে বিচ্ছিন্ন ও নিঃসম্পর্ক থাকা এবং বৈরাগ্যবাদীর পথে চলা। অবিবাহিত জীবন যাপন করা।

 

এই আলোচনা হইতে অকাট্যভাবে প্রমাণিত হইল যে, যে লোক বিবাহ করিতে সক্ষম এবং বিবাহ না করিলে যাহার পক্ষে পাপ কাজে আকৃষ্ট হইয়া পড়ার আশংকা রহিয়াছে তাহার পক্ষে বিবাহ করা ফরয। কেননা নিজের চারিত্রিক পবিত্রতা রক্ষা করা এবং নিজেকে হারাম কাজ হইতে বিরত ও পবিত্র রাখা ঈমানদার ব্যক্তি মাত্রেরই কর্তব্য। ইমাম কুরতুবী ইহাকে সর্বসম্মত মত বলিয়া উল্লেখ করিয়াছেন।

 

(****************)

 

বস্তুত বিবাহ পুরুষ-নারীর নৈতিক চরিত্রের রক্ষাকারী এবং মানব বংশের ধারা সুষ্ঠরূপে অব্যাহত রাখার একমাত্র উপায়। মানব সমাজ গঠিত হয় যে ব্যক্তিদের দ্বারা, তাহারা এই বিবাহেরই ফসল। পুরুষ ও নারীর উভয়েরই একটা নির্দিষ্ট বয়সকালে বিপরীত লিঙ্গের ব্যক্তির প্রত তীব্র আকর্ষণ হওয়া অত্যন্ত স্বাভাবিক। ইহা জন্মগত প্রবণতা।

 

বিবাহের ফলে এই আকর্ষণ ও জন্মগত প্রবণতার সুষ্ঠু ও পবিত্র পন্হায় চরিতার্থতা সম্ভব। ফলে মানব সমাজ নানাবিধ সংক্রকামক রোগ হইতেও রক্ষা পাইতে পারে। এই পথে পুরুষ ও নারীর যে দাম্পত্য জীবন লাভ হয়, তাহাতেই উভয়েরই হৃদয়-মন-অন্তরের পূর্ণ শান্তি, স্বস্তি ও পূর্ণ মাত্রার পরিতৃপ্তি লাভ হওয়া সম্ভব।

 

বস্তুত বিবাহ কেবল রাসূলে করীম (স) এবং নবী- রাসূলগণেরই সুন্নাত নয়, ইহা আল্লাহর সৃষ্টিধারা ও বিশ্ব প্রাকৃতিক ব্যবস্থার সহিত সামঞ্জস্য সম্পন্ন একটি স্বাভাবিক ব্যবস্থাও। ইহা যেমন মানব জগত সম্পর্কে সত্য, তেমনি সত্য জন্তু জানোয়ার ও উদ্ভিত জগত সম্পর্কেও। কুরআন মাজীদে আল্লাহ তা’আলা ঘোষণা করিয়াছেনঃ

 

*****************************************************************

 

প্রত্যেকটি জিনিসকেই আমরা জোড়ায়-জোড়ায় সৃষ্টি করিয়াছি।

 

বলিয়াছেনঃ

 

*****************************************************************

 

সেই মহান আল্লাহ বড়ই পবিত্র, যিনি সমস্ত জোড়াই সৃষ্টি করিয়াছেন মাটি যাহা উৎপাদন করে তাহা হইতে, তাহাদের নিজেদের হইতে এবং এমন সব জিনিস হইতে যাহা তাহারা জানেনা।

 

প্রত্যেকটি সৃষ্ট জীব ও প্রাণীকেই আল্লাহ তা’আলা নারী ও পুরুষ সমন্বিত জোড়া হিসাবে সৃষ্টি করিয়াছেন। জীবনকে রক্ষা করা ও উহার ধারাবাহিকতাকে অব্যাহত অক্ষুণ্ন রাখাই আল্লাহ তা’আলার উদ্দেশ্য এবং এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য তিনি বংশ জন্মের নিয়ম জারী করিয়াছেন। এই উপায়ে তিনি দুইজন হইতে বহু সৃষ্টি করিয়া থাকেন। তিনি মানব জাতিকে সম্বোধন করিয়া বলিয়াছেনঃ

 

*****************************************************************

 

হে মানুষ! আমরা তোমাদের একজন পুরুষ ও একজন নারী হইতে সৃষ্টি করিয়াছি।

 

সেই দুই জনও আসলে একজনই। বলিয়াছেনঃ

 

*****************************************************************

 

হে মানুষ! তোমরা তোমাদের সেই রবকে ভয় কর যিনি তোমাদিগকে মূলত একজন লোক হইতে সৃষ্টি করিয়াছেন। সেই একজন লোক হইতে সৃষ্টি করিয়াছেন তাহার জুড়ি। অতঃপর এই দুইজন হইতে বহু সংখ্যক পুরুষ ও নারী সৃষ্টি করিয়া পৃথিবীর দিকে দিকে ছড়াইয়া দিয়াছেন।

 

আল্লাহ তা’আলা প্রত্যেকটি সৃষ্টিকেই পুরুষ ও নারী এই উভয় লিঙ্গে সৃষ্টি করিয়াছেন। কিন্তু তিনি জীবন-বিধান নাযিল করিয়াছেন এবং নবী ও রাসূল পাঠাইয়াছেন কেবলমাত্র মানুষের জন্য। কেননা মানুষ সেরা সৃষ্টি, তাহাদের জীবন, নিয়ম-বিধান মুক্ত উচ্ছৃঙ্খলভাবে চলিবে, তাহা তিনি আদৌ পছন্দ করেন নাই। মানুষের মধ্যে যে পৌরুষ ও প্রজনন ক্ষমতা স্বাভাবিকভাবেই রহিয়াছে, তাহা উচ্ছৃঙ্খলভাবে ব্যবহৃত হউক, তাহাও তিনি পছন্দ করিতে পারেন নাই। এই কারণে মানুষের জন্য তাহার নিকট হইতে নাযিল করা জীবন বিধানে বিবাহের বিধানও পূর্ণাঙ্গ ভাবে অবতীর্ণ করিয়াছেন। ইহার মাধ্যমেই তিনি চাহিয়াছেন মানুষের মান-মর্যাদা সংরক্ষিত হউক এবং সম্মানজনকভাবে ও পূর্ণ পবিত্রতা সহকারেই হউক পুরুষ ও নারীর- যৌনমিলন।

 

এই প্রেক্ষিতেই বিবাহে পুরুষ ও নারীর ঈজাব- কবুল- প্রস্তাবনা ও মানিয়া লওয়ার ব্যবস্থা দেওয়া হইয়াছে। অর্থাৎ এক পক্ষ হইতে বিবাহের প্রস্তাব হইবে আর অপর পক্ষ হইতে উহা গ্রহণ করা ও মানিয়া লওয়া হইবে। উপরন্তু এই কাজ কেবল মাত্র বিবাহেচ্ছু পুরুষ ও নারীর মধ্যেই সাধিত হইবে না, ইহা সামাজিক ও আনুষ্ঠানিক ভাবে হইতে হইবে এবং উহাতে সাক্ষীও রাখিতে হইবে। অন্য কথায়, ইহা গোপনে ও সংশ্লিষ্ট লোকদের অজ্ঞাতসারে অগোচরে হইতে পারিবে না, ইহা হইতে হইবে সমাজ পরিবেশকে জানাইয়া শুনাইয়া ও প্রকাশ্য ভাবে।

 

এই ভাবেই মানুষের পৌরুষ ও জন্মদান ক্ষমতার সংরক্ষণ ও বংশের ধারার মর্যাদা বিধান সম্ভব। আর এই ভাবেই নারীর মান-মর্যাদা ও জীবন-ধারা সংরক্ষিত হইতে পারে। ঠিক এই কারণেই ইসলামে বিবাহের এত গুরুত্ব।

 

এই জন্যই নবী করীম (ষ) বলিয়াছেনঃ

 

*****************************************************************

 

যে লোক বিবাহ করার সাতর্থ্য প্রাপ্ত হইয়অও বিবাহ করিবে না, সে আমার মধ্যে গণ্য নয়?

 

বস্তুত বিবাহ হইতে বিরত থাকা- বিবাহ না করা ইসলামে সম্পূর্ণ হারাম। কেননা বিবাহ না করিয়া- অবিবাহিত থাকিয়া যে জীবন যাপন হয়, তাহা নিছক বৈরাগ্যবাদী জীবন। আর বৈরাগ্যবাদী জীবন ইসলামের পরিপন্হী। যাহা ইসলাম পরিপন্হী, তাহাই প্রকৃতি ও স্বভাব বিরোধী। আর স্বভাব পরিপন্হী জীবন ধারা কোনক্রমেই গ্রহণযোগ্য হইতে পারে না।

 

বিবাহ সামাজিক- সামষ্টিক কল্যাণের উৎস। মানব বংশের ধারা এই পন্হায়ই অব্যাহতভাবে চলিতে ও সমুখে অগ্রসর হইতে পারে।

 

বিবাহ পুরুষ- নারীর মন-মানসিকতার সান্ত্বনা, স্থিতি ও স্বস্থির উপায়।

 

বিবাহ মানবীয় চরিত্রের সংরক্ষক ও পবিত্রতা বিধায়ক।

 

আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করিয়াছেনঃ

 

*****************************************************************

 

আর আল্লাহই তোমাদের জন্য তোমাদের স্বজাতীয়দের মধ্য হইতেই জুড়ি বানাইয়াছে। এবং এই জুড়ি হইতেই তোমাদের জন্য পুত্র-পৌত্র বানাইয়া দিয়াছেন।

 

এবং

 

*****************************************************************

 

আল্লাহর একত্ব ও দয়া- অনুগ্রহের একটি অন্যতম নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের নিজেদের মধ্য হইতেই তোমাদের জন্য জুড়ি বানাইয়া দিয়াছেন, যেন তোমরা উহার নিকট মনের স্বস্তি শান্তি ও স্থিতি লাভ করিতে পার।

FOR MORE CLICK HERE

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]