হযরত আলী (রা) হইতে বর্ণিত হইয়াছে, তিনি বলিয়াছেন, রাসূলে করীম (স) ইরশাদ করিয়াছেন, আল্লাহ তা’আলা দুগ্ধ পানের কারণে সেই সব পুরুষ-মেয়ের পারস্পরিক বিবাহ হারাম করিয়া দিয়াছেন, যাহা হারাম করিয়াছেন বংশ ও রক্ত সম্পর্কের কারণে। (তিরমিযী, মুসনাদে আহমদ)
ব্যাখ্যাঃ এখানে হযরত আলী (রা) বর্ণিত যে হাদীসটি উদ্ধৃত হইয়াছে, ইহা দশজন সাহাবী হইতে বর্ণিত। হযরত আলী (রা) ব্যতীত অপর নয় জন সাহাবী হইলেনঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস, আয়েশা, উম্মে সালমা, উম্মে হাবীবা, আবূ হুরায়রা, সওবান, আবূ আমামাতা, আনাস ইবনে মালিক এবং কায়াব ইবনে আজুজাতা (রা)। হযরত আয়েশা (রা) হইতে হাদীসটি বর্ণিত হইয়াছে এই ভাষায়ঃ
****************************************
জন্মসুত্রে যে বিবাহ হারাম, দুগ্ধপান সূত্রেও সেই বিবাহ হারাম।
ইহা হইতে স্পষ্ট হয় যে, এই হাদীসটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বস্তুত পারিবারিক জীবনের পবিত্রতা, বিশুদ্ধতা ও স্থায়ীত্বের নিরাপত্তা বিধানের উদ্দেশ্যে আল্লাহ তা’আলা সমাজে কতিপয় মেয়ে-পুরুষের পারস্পরিক বিবাহ সম্পূর্ণ এবং চিরকালের জন্য হারাম করিয়া দিয়াছেন। এই ব্যাপারটি মোট নয়টি বিভাগে বিভক্ত। তাহা হইল (১) নিকটবর্তীতার কারণে হারাম (২) বৈবাহিক সম্পর্কের কারণে হারাম (৩) দুগ্ধ পানের কারণে হারাম (৪) একত্রিত করণ হারাম (৫) স্বাধীনা মেয়ের উপর ক্রীতদাসী বিবাহ হারাম (৬) অন্য লোকের অধিকারের কারণে হারাম (৭) মালিকানার কারণে হারাম (৮) শিরক-এর কারণে হারাম এবং (৯) তিন তালাক দেওয়ার কারণে হারাম।
নিকটাত্মীয়তার কারণে সাত বিভাগের মেয়েরা হারামঃ মা, কন্যা, ভগ্নি, ফুফী, খালা, ভাইঝি, বোনঝি।
মা শাখায়ঃ ব্যক্তির নিজের মা, দাদী, নানী ইত্যাদি। আল্লাহ তা’আলা বলিয়াছেনঃ
****************************************
তোমাদের মাদেরকে তোমাদের প্রতি হারাম করিয়া দেওয়া হইয়াছে।
কন্যা শাখায়ঃ ব্যক্তির নিজের ঔরষজাত কন্যা, ছেলের মেয়ে- আরও নিচের দিকে।
বোন শাখায়ঃ তিনটি প্রশাখা। আপন বোন, পিতার দিকের বোন, মায়ের দিকের বোন।
ফুফি শাখায়ঃ তিনটি প্রশাখা। আপন ফুফি, বাবার দিক দিয়া ফুফি, মা’র দিক দিয়া ফুফি। পিতার ফুফি, দাদার ফুফি, মায়ের ফুফি, দাদীর ফুফি ইত্যাদি।
খালা পর্যায়েঃ আপন খালা, বাবার দিক দিয়া খালা, মা’র দিক দিয়া খালা ইত্যাদি।
ভাইঝি পর্যায়েঃ বোনঝি, ভাইঝির কন্যা, বোনঝির কন্যা, ভাইর ছেলেদের কন্যা, বোনের ছেলেদের কন্যা- নিচের দিকে…
বৈবাহিক সম্পর্কের কারণে চারটি শাখা হারামঃ
স্ত্রীর মা, স্ত্রীর পিতা-মাতার দিক দিয়া দাদী। কেহ যদি একটি মেয়ে বিবাহ করে, সেই স্ত্রীর সহিত তাহার সঙ্গম হউক কি না হউক, সর্বাবস্থায়ই এই স্ত্রীর মা এই পুরুষটির জন্য হারাম। আল্লাহ তা’আলা বলিয়াছেন, ******** এবং তোমাদের স্ত্রীদের মা’রাও….
স্ত্রীর কন্যা- যদি সে স্ত্রী সহিত ব্যক্তির সঙ্গম হইয়া থাকে। কুরআনে বলা হইয়াছেঃ
****************************************
তোমরা সঙ্গম করিয়াছে তোমাদের এমন স্ত্রীদের কোলে লইয়া আসা নিজ গর্ভজাত সন্তান যাহারা তোমাদের লালিতা-পালিতা- তাহারা তোমাদের জন্য হারাম।– স্ত্রীর কন্যার কন্যা এবং স্ত্রীর পুত্রের কন্যাও হারাম।
পুত্রের স্ত্রী- তাহার সহিত পুত্রের সঙ্গম হউক, কি না হউক। পৌত্রের স্ত্রীও হারাম। কুরআনে বলা হইয়াছেঃ
****************************************
তোমাদের ঔরসজাত পুত্রদের স্ত্রীরাও হারাম।
আলোচ্য হাদীসের ঘোষণা হইল, বংশ বা রক্ত সম্পর্কের কারণে যাহারা হারাম, দুগ্ধ পানের কারণেও সেই সব আত্মীয়ও হারাম হইয়া যায়। হযরত হামজার কন্যা রাসূলে করীম (স)- এর সহিত বিবাহের প্রস্তাব দেওয়া হইলে রাসূলে করীম (স) বলিলেনঃ
****************************************
হামজার কন্যা আমার জন্য হালাল নয়। কেননা সে তো আমার দুধ ভাইর কন্যা।
রাসূলে করীম (স) ও হযরত হামজা পরস্পর দুধ ভাই ছিলেন।
হযরত আয়েশা (রা) হইতে বর্ণিত হইয়াছে, তিনি বলিয়াছেন, আবুল কুয়াইসের ভাই আছলাহ আমার সহিত সাক্ষাত করিতে চাহিলে আমি বলিলামঃ
****************************************
আল্লাহর নামে শপথ, রাসূলে করীমের নিকট হইতে অনুমতি না পাওয়া পর্যন্ত আমি তাহাকে সাক্ষাতের অনুমতি দিব না। কেননা আবুল কুয়াইসের এই ভাইতো আমাকে দুধ খাওয়ায় নাই। আমাকে দুধ খাওয়াইয়াছে তাহার স্ত্রী।
পরে রাসূলে করীম (স) ইহা শুনিয়া বলিলেনঃ
****************************************
হ্যাঁ, তুমি তাহার সহিত দেখা করিতে পার। কেননা সে তোমার দুধ পানের কারণে চাচা।
কুরআন মজীদে বলা হইয়াছেঃ
****************************************
তোমাদের সেই সব মা-ও হারাম, যাহারা তোমাদিগকে দুধ খাওয়াইয়াছে এবং দুধের বোনেরাও।
ইহার কারণ এই যে, যে মেয়ে বা ছেলেকে যে স্ত্রীলোকটি দুধ পান করাইয়াছে, সে দুধ সে পাইয়াছে তাহার স্বামীর নিকট হইতে। অতএব এই দুধ স্ত্রী ও তাহার স্বামী এই দুইজনের মিলিত দেহাংশ। আর এই দেহাংশ পান করিয়া যে লালিত পালিত হইয়াছে, সে তাহাদেরই অংশ হইয়াছে। এই দিক দিয়া এই দুধপানকারী সন্তান তাহাদের ঔরসজাত সন্তানের মতই হারাম হইয়া গিয়াছে। ইহাই এই পর্যায়ের হাদীস সমূহের বক্তব্য।