মুসলিম বিবাহ পড়ানোর নিয়ম সুন্নাতি বিয়ের নিয়ম বিবাহের এক প্রস্তাবের উপর অন্য প্রস্তাব দেওয়া

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা) হইতে বর্ণিত হইয়াছে, তিনি রাসূলে করীম (ষ) হইতে বর্ণনা করিয়াছেন, নবী করীম (স) বলিয়াছেন, তোমাদের মধ্যে কেহ যেন একজনের ক্রয়-বিক্রয়ের উপর অন্যজন ক্রয়-বিক্রয় না করে এবং একজনের বিবাহ-প্রস্তাবের উপর অন্যজন বিবাহের প্রস্তাব না দেয়।

 

(মুসলিম)

 

ব্যাখ্যাঃ বিবাহের প্রস্তাবদান প্রসঙ্গে এই হাদীস। মুল শব্দ **** অর্থ *************** সমাজের লোকদের মধ্যে প্রচলিত ও – সকলের পরিচিত নিয়মে বিবাহের প্রস্তাব দান। এই প্রস্তাবদান বিবাহের পূর্বশর্ত। বিবাহকার্য সুষ্ঠুরূপে সম্পাদনের উদ্দেশ্যে বর ও কনে- উভয় পক্ষের লোকদের সহিত এই উদ্দেশ্যে পরিচিতি লাভের জন্য ইসলামী শরীয়াতে এই ব্যাবস্থা রাখা হইয়াছে। হাদীসটির মূল প্রতিপাদ্য ও বক্তব্য সুস্পষ্ট। নবী করীম (স) বিশ্ব মানবের জন্য যে সামাজিক নিয়ম বিধান ও আচার-রীতি প্রবর্তন করিয়াছেন, আলোচ্য হাদীসটি তাহারই একটি অংশ। এই হাদীসটিতে পারস্পরিক ক্রয়-বিক্রয় ও বিবাহের প্রস্তাব সংক্রান্ত দুইটি মৌীলক নিয়ম উদ্ধৃত হইয়াছে। ক্রয়-বিক্রয় সামাজিক-সামষ্টিক ক্রিয়া-কলাপের মধ্যে খুব বেশী ঘটিতব্য ব্যাপার। একজন বিক্রয় করে, অন্যজন ক্রয় করে। এই ক্রয়-বিক্রয়ের উপর মানুষের জৈবিক জীবন সম্পূর্ণ নির্ভরশীল। ক্রয়-বিক্রয়হীন কোন সমাজ-সংস্থার ধারণা পর্যন্ত করা যায় না। ক্রয়-বিক্রয় হইবে না এমন কোন সমাজ ব্যবস্থা আজ পর্যন্ত পেশ করা কাহারও পক্ষে সম্ভবপর হয় নাই। সেই ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে অনেক সময় দেখা যায়, একজন লোক কোন একটি বিশেষ জিনিস ক্রয় করার জন্য কথা-বার্তা বলিতে শুরু করিয়াছে ও দাম দস্তুর-লইয়া আলাপ করিতেছে, ঠিক এই সময় অপর একজনও ঠিক সেই জিনিসটি ক্রয় করার উদ্দেশ্যে আগাইয়অ আসিয়া দুই জনের কথার মধ্যে কথা বলিতে ও নিজের পছন্দসই দাম বলিতে শুরু করিয়অ দেয়। কথাবার্তার মাঝখঅনে এই দ্বিতীয় ক্রেতার অনুপ্রবেশের ফলে প্রথম ক্রেতা-বিক্রেতার বিরক্তির উদ্রেক হওয়া এবং অনেক ক্ষেত্রে তাহাদের কথাবার্তা ভাঙিয়া যাওয়ার উপক্রম হয়। ইহার ফলে দুই ক্রেতার পরস্পরের মধ্যে হিংসা ও বিদ্বেষের আগুন জ্বলিয়া উঠা ও পরম শক্রতার উদ্ভব হওয়া কিছুমাত্র অসম্ভব বা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু ইহা সুস্থ-শালীনতা পূর্ণ সমাজ পরিবেশের পক্ষে খুবই মারাত্মক। এই কারণে নবী করীম (স) ইহা করিতে নিষেধ করিয়াছেন।

 

এই ব্যাপারে সঠিক নিয়ম হইল একজনের ক্রয়-বিক্রয়ের কথাবার্তা শেষ হইয়া ও চূড়ান্তভাবে ভাঙিয়া গেলে অপর জন কথাবার্তা বলিতে শুরু করিবে, তাহার পূর্বে নয়।

 

বিবাহের প্রস্তাব দেওয়ার ব্যাপারটিও অনুরূপ। এরূপ প্রায়ই হইয়া থাকে যে, একটি ছেলের পক্ষ হইতে  মেয়ের বিবাহের কিংবা ইহার বিপরীত একটি মেয়ের পক্ষ হইতে একটি ছেলের বিবাহের প্রস্তাব দেওয়া হইয়াছে। এই প্রস্তাব কোন চূড়ান্ত পরিণতি পর্যন্ত পৌঁছার পূর্বেই অপর একটি ছেলে বা মেয়ের প্রস্তাব তাহাদের- ছেলে বা মেয়ের- জন্য দেওয়া হইল। ইহাতেও পূর্ববর্ণিত রূপ পরিস্থিতির উদ্ভব হইতে পারে এবং তাহাতে সমাজ সংস্থার ঐক্য সংহতিতে ফাঁটল ধরিতে পারে। কিন্তু তাহা কোনক্রমেই বাঞ্ছনীয় হইতে পারে না।

 

এই পর্যায়ে হযরত ইবনে উমর (রা) হইতে বর্ণিত অপর একটি হাদীসের ভাষা এইঃ

 

****************************************

 

এক ব্যক্তি তাহার ভাইয়ের ক্রয়-বিক্রয়ের উপর ক্রয়-বিক্রয় করিবে না এবং তাহার ভাইর দেওয়া বিবাহ-প্রস্তাবের উপর দ্বিতীয় প্রস্তাব দিবে না। তবে সে ভাই যদি অনুমতি দেয়, তবে ভিন্ন কথা।

 

হযরত উকবা ইবনে আমের হইতে তৃতীয় একটি বর্ণনায় বলা হইয়াছেঃ

 

****************************************

 

মু’মিন মু’মিনের ভাই। অতএব এক ভাইয়ের ক্রয়-বিক্রয়ের উপর অন্য মু’মিনের ক্রয়-বিক্রয় করিতে চাওয়া হালাল নয়। আর তাহারই এক ভাইয়েল দেওয়া বিবাহ-প্রস্তাবের উপর আর এক প্রস্তাব দিবে না। যতক্ষণ না সে তাহার প্রস্তাব প্রত্যাহার করে।

 

বুখারী ও নাসায়ী গ্রন্হে উদ্ধৃত হাদীসে এই কথার স্পষ্ট সমর্থন রহিয়াছে। হাদীসটি হযরত আবূ হুরায়রা (রা) হইতে বর্ণিত, রাসূলে করীম (স) বলিয়াছেনঃ

 

****************************************

 

এক ব্যক্তি কোন মেয়ের জন্য বিবাহের প্রস্তাব দিলে সে বিবাহ সম্পন্ন হইয়া যাইবে, অথবা প্রস্তাবদাতা কর্তৃক উহা প্রত্যাহৃত হইবে- এই চূড়ান্ত পরিণতি না দেখিয়া অপরকে আর একটি প্রস্তাব দিয়া বসিবে না।

 

আহমাদ, বুখারী ও নাসায়ী বর্ণিত অপর এক হাদীসের ভাষা এইঃ

 

****************************************

 

প্রথম প্রস্তাবদাতা প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান কিংবা নূতন প্রস্তাব দেওয়ার অনুমতি না দেওয়া পর্যন্ত দ্বিতীয় কোন ব্যক্তি প্রস্তাব দিবে না।

 

এই সব হাদীস হইতে একথা স্পষ্ট হইয়া উঠে যে, একজনের দেওয়া প্রস্তাব চূড়ান্ত পরিণতি পর্যন্ত পৌঁছার পূর্বেই আর একটা বিবাহ প্রস্তাব দেওয়া হারাম। এই কাজটির হারাম হওয়ার ব্যাপারে শরীয়তবিদদের পূর্ণ ঐকমত্য ও ইজমা রহিয়াছে। বিশেষত প্রথশ প্রস্তাবকারীকে ইতিবাচক জওয়াব দেওয়া হইলে ও দ্বিতীয় প্রস্তাবের পক্ষে কোন অনুমতি পাওয়া না গেলে ইহার হারাম হওয়ার ব্যাপারে কোনই প্রশ্ন উঠিতে পারে না। তবে যদি কেহ জোর পূর্বক প্রস্তাব দেয় এবং বিবাহ সম্পন্ন করিয়া ফেলে, তাহা হইলে বিবাহটা তো শুদ্ধ হইবে, উহা ভঙ্গ হইয়া যাইবে না; কিন্তু ইহার দরুণ তাহাকেও গুনাহগার হইতে হইবে। জমহুর ও শাফেয়ী ফিকাহবিদদের মত ইহাই। দায়ূদ যাহেরী বলিয়াছেনঃ এই রূপ বিবাহ ভঙ্গ হইয়া যাইবে। ইমাম মালিকের দুইট মত উদ্ধৃত হইয়াছে। তন্মধ্যে একটি মত শাফেয়ী মতের পক্ষে, আর অপর মতটি দায়ূদ যাহেরীর পক্ষে। মালিকী মাযহাবের অন্যান্য ফিকাহবিদরা মত প্রকাশ করিয়াছেন যে, এই রূপ বিবাহ সংঘটিত হওয়ার পর স্বামী-স্ত্রীর মিলন ঘটিয়া গেলে সে বিবাহ ভাঙ্গিবে না। তবে উহার পূর্বে আপত্তি উঠিলে এই বিবাহ ভাঙ্গিয়অ দেওয়া হইবে। মালিকী মাযহাবের অন্যান্য কিছু সংখ্যক ফিকাহবিদদের মত হইল, বিবাহ যদি উভয় পক্ষের মতের ভিত্তিতে হয়, উভয় পক্ষই বিবাহে সন্তুষ্ট হয় এবং উহাতে মহরানা সুনির্দিষ্ট হয়, তবে এই বিবাহ হারাম হইবে না। হযরত ফাতিমা বিনতে কায়স (রা) বলিয়াছেন, আবূ জহম ও মুয়াবিয়া উভয়ই আমাকে বিবাহ করার প্রস্তাব দেন। কিন্তু নবী করীম (স) একজনের প্রস্তাবের উপর আর একজনের এইরূপ প্রস্তাব দেওয়ার প্রতিবাদ করেন নাই। বরং তিনি হযরত উসামার জন্যও প্রস্তাব পাঠাইলেন। ইহা হইতে প্রমাণিত হয় যে, বিবাহের এক প্রস্তাবের উপর আর একটি প্রস্তাব দেওয়া বুঝি নিষিদ্ধ বা হারাম নয়। কিন্তু এইরূপ ধারণা ঠিক নহে। কেননা হযরত ফাতিমার উপরোক্ত বর্ণনার ভিন্নতর ব্যাখ্যা রহিয়াছে এবং তাহা এই যে, জহম ও মুয়াবিয়া দুইজনের কেহই হয়ত অন্যজনের প্রস্তাবের কথা জানিতেন না। আর নবী করীম (স) প্রস্তাব দিয়াছিলেন বলিয়া যাহা বলা হইয়াছে তাহা ঠিক নয়, এই জন্য যে, তিনি রীতিমত কোন প্রস্তাব দেন নাই, তিনি শুধু ইঙ্গিত করিয়াছিলেন মাত্র। কাজেই সাহাবীদ্বয় বা স্বয়ং নবী করীম (স) কোন নিষিদ্ধ কাজ করিয়াছেন, এমন কথা কিছুতেই বলা যায় না। তবে প্রথম প্রস্তাবদাতা যদি অপর পক্ষের অনীহা ও অনাগ্রহ হওয়ার দরুন প্রস্তাব প্রত্যাহার বা প্রত্যাখ্যান করে; কিংবা একটি প্রস্তাব থাকা অবস্থায় দ্বিতীয় প্রস্তাব দেওয়ার অনুমতি কোন পক্ষ দেয়, তবে সেখানে দ্বিতীয় প্রস্তাব দেওয়া হারাম হইবে না। এই ব্যাপারে ফিকাহবিদগণ সম্পূর্ণ একমত। পূর্বোদ্ধৃত হাদীসসমূহ হইতে এই কথাই সুস্পষ্টরূপে জানা যায়।

 

উপরে উদ্ধৃত দ্বিতীয় ও তৃতীয় হাদীসের ব্যাখ্যায় ইমাম খাত্তাবী লিখিয়াছেন, এই হাদীস দুইটির ভাষা হইতে স্পষ্ট বুঝা যায় যে, বিবাহের এক প্রস্তাবের উপর আর একটি (বিবাহের) প্রস্তাব দেওয়া হারাম হইবে কেবল তখন যদি প্রথম প্রস্তাবদাতা প্রকৃত ও নেককার মুলমান হয়। কিন্তু সে যদি ফাসেক-ফাজের ধরনের লোক হয়, তাহা হইলে ইহা হারাম হইবে না। ইবনুল কাসেম বলিয়াছেন ****************** প্রথম প্রস্তাব দাতা ফাসেক ব্যক্তি হইলে তাহার উপর দ্বিতীয় প্রস্তাব দেওয়া সম্পূর্ণ জায়েয।

 

ইমাম আওজায়ীও এই মত প্রকাশ করিয়াছেন। তাঁহার মনে এই নিষেধ ******* সামাজিক ও নৈতিক নিয়ম-শৃঙ্খলা রক্ষার জনগণকে শাসনে রাখার উদ্দেশ্যে। চূড়ান্ত ভাবে হারাম ঘোষণা ইহার লক্ষ্য নহে।

 

কিন্তু জমহুর মুহাদ্দিস ও ফিকাহবিদগণের মতে এইরূপ নির্ধারণও কাহারও জন্য জায়েয কাহারও জন্য জায়েয নয় বলার কোন যৌক্তিকতা থাকিতে পারে না। হাদীসে যে ‘ভাই’ বলা হইয়াছে, ইহা সাধারণ প্রচলন অনুযায়ীই বলা হইয়াছে। ইহার বিশেষ কোন অর্থ নাই। ইমাম নববী লিখিয়াছেন, এই পর্যায়ে যতগুলি হাদীস বর্ণিত হইয়াছে, তাহার ভিত্তিতে নেককার মুসলমান ও ফাসেক-ফাজের মুসলমানের মধ্যে এই ব্যাপারে কোন পার্থক্য করা চলে না।

 

আবু দাউদ বলিয়াছেনঃ

 

****************************************

 

দ্বিতীয় প্রস্তাবদাতা যদি বিবাহ করিয়া বসে, তাহা হইলে তাহার এই আকদ ভাঙিয়া দিতে হইবে- বিবাহের পর স্ত্রী সঙ্গম হওয়ার পূর্বে হইলেও এবং পরে হইলেও।

 

বিবাহের প্রস্তাব দেওয়া পর্যায়ে দুইটি শর্তের উল্লেখ করা হইয়াছেঃ

 

একটিঃ উপস্থিতভাবে বিবাহ সংঘটিত হওয়ার পথে শরীয়াতের দৃষ্টিতে কোন বাধা না থাকা।

 

দ্বিতীয়ঃ শরীয়াত মুতাবিক বিবাহের প্রস্তাব এখনও অপর কেহ দেয় নাই।

 

এই দুইটি দৃষ্টিতে যদি কোন প্রতিবন্ধকতা থাকে, তাহা হইলে তখন বিবাহের প্রস্তাব দেওয়া সঙ্গত কারণেই হারাম হইবে। ইদ্দত পালনরত মহিলাকে বিবাহের প্রস্তাব দেওয়া হারাম, সে ইদ্দত তালাক দেওয়ার কারণে হউক; কিংবা স্বামীর মৃত্যুর কারণে। আর তালাক রিজয়ী হউক, কি বায়েন। কেননা এই অবস্থাসমূহের মধ্যে কোন একটি অবস্থায়ও স্ত্রী লোকটি বিবাহের উপযুক্ত বিবেচিত হইবে পারে না।

FOR MORE CLICK HERE

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]