হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা) হইতে বর্ণিত হইয়াছে, সাকাফী বংশের গাইলান ইবনে সালামাতা ইসলাম গ্রহণ করিল। এই ব্যক্তির ইসলামপূর্ব জাহিলিয়াতের সময়ে দশজন স্ত্রী ছিল। তাহারা ও তাহার সঙ্গে ইসলাম গ্রহণ করিল। তখন নবী করীম (স) তাহাকে স্ত্রীদের মধ্য হইতে মাত্র চারজন বাছিয়া লইবার জন্য নির্দেশ দিলেন।
(তিরমিযী, মুসনাদে আহমাদ, ইবনে মাজাহ, দারে কুতনী, বায়হাকী)
ব্যাখ্যাঃ ইসলামে এক সঙ্গে কয়জন স্ত্রী রাখা জায়েয, এই বিষয়ে ইহা একটি গুরুত্বপূর্ণ হাদীস। এই হাদীস হইতে স্পষ্ট জানা যায়, জাহিলিয়াতের যুগে গাইলান সাকাফী দশজন স্ত্রীর স্বামীত্ব গ্রহণ করিয়াছিলেন। পরে তিনি ইসলাম কবুল করিলে তাঁহার এই স্ত্রীরাও তাঁহার সঙ্গে ইসলাম গ্রহণ করেন। ইহার পর নবী করীম (স) তাঁহাকে নির্দেশ দিলেন যে, ইহাদের মধ্য হইতে মাত্র চারজন স্ত্রী বাছিয়া লও এবং স্বীয় স্ত্রীরূপে রাখ। অবশিষ্ট ছয়জন স্ত্রী তোমার স্ত্রী রূপে থাকিতে পারিবে না। কেননা ইসলামে একই সময়ে মাত্র চারজন স্ত্রী রাখা যাইতে পারে, তাহার অধিক একজনও নহে।
নাসায়ী গ্রন্হে এই হাদীসটির শেষাংশের ভাষা এইরূপঃ
****************************************
নবী করীম (স) তাহাকে স্ত্রীদের মধ্য হইতে চারজন পছন্দ করিয়া রাখার জন্য আদেশ করিলেন।
অপর এক বর্ণনায় এই হাদীসটির ভাষা হইলঃ
****************************************
ইহাদের মধ্য হইতে মাত্র চারজন বাছিয়া লও।
আর একটি বর্ণনার ভাষা এইঃ
****************************************
ইহাদের মধ্য হইতে মাত্র চারজনকে রাখিয়া দাও। আর অবশিষ্ট সকলকে বিচ্ছিন্ন করিয়া দাও।
এই পর্যায়ের আর একটি হাদীস হইলঃ
****************************************
উমাইরাতুল আসাদী বলিয়াছেন, আমি যখন ইসলাম কবুল করি, তখন আমার আটজন স্ত্রী ছিল। আমি এই কথা নবী করীম (স)- এর নিকট উল্লেখ করিলে তিনি বলিলেন, ইহাদের মধ্য হইতে মাত্র চারজন বাছিয়া লও। (আবূ দায়ূদ)
মুকাতিল বলিয়াছেন, কাইস ইবনে হারেসের আটজন স্ত্রী ছিল। এ বিষয়ে কুরআনের আয়াত নাযিল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নবী করীম (স) তাহাকে চারজন রাখিয়া অপর চারজনকে ত্যাগ করিতে আদেশ করিলেন। (আবূ দায়ুদ) এই পর্যায়ে আর একটি হাদীস এইরূপঃ
****************************************
নওফল ইবনে মুয়াবীয়া হইতে বর্ণিত হইয়াছে, তিনি বলিয়াছেনঃ আমি যখন ইসলাম কবুল করি, তখন আমার পাঁচজন স্ত্রী ছিল। তখন নবী করীম (স) আমাকে বলিলেনঃ তোমার স্ত্রীদের মধ্যে হইতে তুমি তোমার ইচ্ছামত যে কোন চারজনকে বাচাই করিয়া লও এবং অবশিষ্টকে বিচ্ছিন্ন কর।
(মুসনাদে শাফেয়ী)
এইসব কয়টি হাদীস একত্রে পাঠ করিলে একসেঙ্গে রাখা স্ত্রীদের সংখ্যা সম্পর্কে ইসলামী শরীয়াতের বিধান স্পষ্টভাবে জানা যায়। এই ব্যাপারে ইসলামী শরীয়অতের অকাট্য বিধান হইল, এক সয়্গে চারজনের অধিক স্ত্রী রাখার সম্পূর্ণ হারাম। ইহা কেবলমাত্র কাফির থাকা অবস্থায়ই সম্ভব, মুসলমান থাকা অবস্থায় নয়। কোন কাফির যদি একসঙ্গে চারজনের অধিক স্ত্রীর স্বামী হইয়া থাকে, আর এই অবস্থায় সে নিজে এবং তাহার সবকয়জন স্ত্রীও ইসলাম গ্রহণ করেন, তবে স্বামীকে এই স্ত্রীদের মধ্য হইতে মাত্র চারজন বাছঅই করিয়া লইতে হইবে। কেননা একসঙ্গে চারজনের অধিক স্ত্রী রাখা যদি ইসলামে জায়েয হইতো, তাহা হইলে- উপরোদ্ধৃত হাদীস সমূহে যেমন বলা হইয়াছে- চারজন মাত্র স্ত্রী রাখিয়া অবশিষ্টদিগকে বিচ্ছিন্ন ও বিদায় করিয়অ দিবার জন্য রাসূলে করীম (স) কাহারকেও নির্দেশ দিতেন না। বিশেষত তাঁহারাও যখন স্বামীর সঙ্গে সঙ্গে ইসলাম গ্রহণ করিয়া ছিলেন তখন সাধারণ বিবেক বুদ্ধিতে তাহাদের সকলকেই স্ত্রীরূপে থাকিতে দেওয়াই বাঞ্ছনীয় ছিল। কিন্তু ইসলামী শরীয়াতের অকাট্য বিধানে এক সঙ্গে চারজনের অধিক স্ত্রী রাখার কোন অবস্থাতেই একবিন্দু অবকাশ নাই। এই কারণে চারজনকে রাখিয়া অবশিষ্টদিগতে ত্যাগ করার নির্দেশ দিয়াছেন।
এক সঙ্গে অনধিক চারজন স্ত্রী রাখার অনুমতি মূলত কুরআন মজীদে দেওয়া হইয়াছে। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করিয়াছেনঃ
****************************************
তোমরা বিবাহ কর যত সংখ্যকই তোমাদের মন চাহে- দুইজন, তিনজন, চারজন।
নবী করীম (স) কোন সাহাবী- কোন মুসলমানকেই এক সঙ্গে চারজনের অধিক স্ত্রী রাখার অনুমতি দেন নাই। কোন মুসলমানই তাঁহার সময়ে চারজনের অধিক স্ত্রীর স্বামী ছিলেন না। ইহা হইতে একথাও অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয় যে, এক সময়ে চারজন পর্যন্ত স্ত্রী রাখার জায়েয হওয়া সম্পর্কে এবং ইহার অধিক সংখ্যক স্ত্রী একসঙ্গে রাখার নাজায়েয হওয়া সম্পর্কে মুসলিম মিল্লাতে কোন কালেই কোন দ্বিমত ছিল না। ইহার উপর ইজমা অনুষ্ঠিত হইয়াছে। এই বিষয়ে বর্ণিত ও এখানে উদ্ধৃত সব কয়টি হাদীসের সনদ সম্পর্কে কঠিন প্রশ্ন উঠিয়অছে এবং তাহা তুলিয়াছেন প্রখ্যাত ও বিশেষভাবে পারদর্শী হাদীস বিশেষজ্ঞগণ; ইহা অস্বীকার করার উপায় নাই। কিন্তু তাহা সত্ত্বেও এই হাদীস সমূহ পরস্পর সম্পূরক। পরস্পর সমার্থক, কুরআনের স্পষ্ট ঘোষণায় সমর্থিত এবং রাসূলে করীম (স) কর্তক কার্যতঃ প্রতিষ্ঠিত, এই কারণে এক সঙ্গে ও এক সময়ে চারজনের অধিক স্ত্রী রাখার নাজায়েয- বরং হারাম হওয়া সম্পর্কে কোনই সন্দেহ নাই।