হযরত আবূ হুরাইরা (রা) হইতে বর্ণিত হইয়াছে, তিনি বলিয়াছেন, আমি একদিন নবী করীমের নিকট উপস্থিত ছিলাম। তখন তাহার নিকট এক ব্যক্তি আসিল। সে রাসূলে করীম (স)-কে জানাইল যে, সে আনসার বংশের একটি মেয়ে বিবাহ করিয়াছে। এই কথা শুনিয়া নবী করীম (স) তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, তুমি কি তাহাকে দেখিয়াছ? লোকটি বলিল, না। রাসূলে করীম (স) বলিলেনঃ তাহা হইলে এখনই চলিয়া যাও এবং তাহাকে দেখ। কেননা আনসার বংশের লোকদের চক্ষুতে একটা কিছু আছে। (মুসলিম)
ব্যাখ্যাঃ হাদীসটি হইতে মোট দুইটি কথা জানা যায়। একটি এই যে, নবী করীম (স) আনসার বংশের লোকদের চোখে একটা কিছু থাকার কথা বলিলেন এমন ব্যক্তিকে যে সেই বংশের একটি মেয়েকে বিবাহ করিয়াছে।
আর দ্বিতীয় কথা এই যে, রাসূলে করীম (স) আনসার বংশের মেয়ের স্বামীকে জিজ্ঞাসা করিলেন, তুমি সেই মেয়েটিকে দেখিয়াছ কিনা? সে যখন দেখে নাই বলিয়া জানাইল, তখন নবী করীম (স) মেয়েটিকে দেখার জন্য তাহাকে নির্দেশ দিলেন।
প্রথম কথাটি সম্পর্কে হাদীস ব্যাখ্যাকারগণ বলিয়াছেনঃ এই রূপে বলা কল্যাণকামী ব্যক্তির জন্য সম্পূর্ণ জায়েয। ইহা কোন গীবত নয়, নয় তাহারও বিষয়ে মিথ্যা দুর্নাম রটানো বা কোন রূপ বিদ্বেষ ছড়ানো বরং একটা প্রকৃত ব্যাপারের সহিত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে পরিচিত করা মাত্র। কেননা আনসার বংশের মেয়েদের চোখে যদি এমন কিছু থাকে যা অন্য লোকদের পছন্দনীয় নাও হইতে পারে, তাহা হইলে সেই মেয়েকে লইয়া দাম্পত্য জীবন সুখের নাও হইতে পারে। তাই পূর্বাহ্নেই সে বিষয়ে জানাইয়া দেওয়া কল্যাণকামী ব্যক্তির দায়িত্বও বটে।
কিন্তু আনসার বংশের লোকদের চোখে কি জিনিস থাকার কথা রাসূলে করীম (স) বলিয়াছিলেন? কেহ কেহ বলিয়াছেন, আনসার বংশের লোকদের চক্ষু আকারে ক্ষুদ্র হইত। আর ক্ষুদ্র চোখ অনেকেই স্বাভাবিকভাবেই পছন্দ করে না। কেহ কেহ বলিয়াছেন, তাহাদের চক্ষু নীল বর্ণের হইত, যাহা অনেক লোকেরই অপছন্দ। রাসূলে করীম (স) এই দিতেই ইঙ্গিত করিয়াছেন। মোট কথা, ইহা কোন বিশেষ বংশ বা শ্রেণীর বিরুদ্ধে বিদ্বেষ প্রচারণাও নহে।
রাসূলে করীম (স)- এর দ্বিতীয় কথাটি হইতে জানা যায়, যে মেয়েকে বিবাহ করা হইবে, তাহাকে দেখিয়া লওয়া বাঞ্ছনীয়। বিবাহ করার পর স্বামীকে জিজ্ঞাসা করা যে, সে বিয়ে-করা-মেয়েটিকে দেখিয়াছে কিনা, ইহার দুইটি তাৎপর্য হইতে পারে? হয় ইহা হইবে যে, বিবাহ করার পূর্বে তাহাকে দেখিয়াছ কিনা। নতুবা এই হইবে যে, বিয়ে করার পর-পরই তাহাকে দেখিয়াছ কিনা। আলোচ্য লোকটি বিবাহ করিয়াছে, এই সংবাদ দেওয়ার পর নবী করীম (স) তাহাকে চলিয়া যাইতে ও তাহাকে দেখিতে বলিলেন- দেখিতে হুকুম করিলেন। কিন্তু মুহাদ্দিসগণ এই ঘটনা হইতে যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিয়াছেন, তাহা হইলঃ
****************************************
যে মেয়েকে বিবাহ করতে ইচ্ছা বা সংকল্প করা হইয়াছে বিবাহের প্রস্তাব দেওয়ার পূর্বেই তাহার মুখাবয়ব ও হস্তদ্বয় দেখিয়া লওয়া মুস্তাহাব- পছন্দীয় ও বাঞ্ছনীয়।
ইহা মুসলিম শরীফে এতদসংক্রান্ত হাদীস সমূহের শিরোনামা। কিন্তু এই শিরোনামার অধীন মাত্র দুইটি হাদীস উদ্ধৃত হইয়াছে। উহার একটি এখানে উদ্ধৃত করিয়াছি। আর দ্বিতীয়টিও হযরত আবু হুরায়রা হইতে বর্ণিত এবং তাহাতেও আনসার বংশের একটি মেয়ে বিবাহ করা সংক্রান্ত একটি ঘটনার বিবরণ বলা হইয়াছে। তবে এই দ্বিতীয় হাদীসটির ঘটনা কতকটা ভিন্নতর। তাহাতে বলা হইয়াছে, এক ব্যক্তি আসিয়া রাসূলে করীম (স) কে জানাইল, সে আনসার বংশের একটি মেয়ে বিবাহ করিয়াছে। নবী করীম (স) জিজ্ঞাসা করিলেনঃ **************************************** ‘তুমি কি সে মেয়েটিকে দেখিয়াছ?’ কেননা, আনসারদের চোখে কিছু একটা আছে? লোকটি বলিল, ***************** ‘হ্যাঁ, আমি তাহাকে দেখিয়াছি’।
কিন্তু এই দুইটি হাদীসের কোন একটিতেও একথার উল্লেখ নাই যে, বিবাহ করার পূর্বে মেয়েটিকে দেখিয়াছে কিনা, নবী করীম (স) এই কথাই জানিতে চাহিয়াছিলেন। হইতে পারে বিবাহের পর দেখিয়াছে কিনা, তাহাই তিনি জানিতে চাহিয়াছিলেন। হইতে পারে, বিবাহের পূর্বে দেখার কথা জানিতে চাহিয়াছিলেন। রাসূলের জিজ্ঞাসার জওয়াবে প্রথমোদ্ধৃত হাদীসের লোকটি জানাইল, সে মেয়েটিকে দেখে নাই। আর দ্বিতীয় হাদীসের লোকটি বলল, সে দেখিয়াছে। কিন্তু এই দেখার ব্যাপারে কি বিবাহের পূর্বের সঙ্গে জড়িত, না বিবাহের পরে দেখার সহিত এবং প্রথম ব্যক্তি না দেখার কথা বলিয়াছে তাহা কি বিবাহের পূর্বের ব্যাপার? এ সম্পর্কে স্পষ্ট কিছুই উল্লেখ করা হয় নাই?
কিন্তু তাহা সত্ত্বেও হাদীস ও ফিকাহবিদগণ এই সব ও এই সংক্রান্ত অন্যান্য হাদীসের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিয়াছেন, যে, মেয়েকে বিবাহ করার ইচ্ছা বা সিদ্ধান্ত করা হইয়াছে, তাহাকে বিবাহ করার পূর্বে এমনকি বিবাহের প্রস্তাব দেওয়ারও পূর্বে দেখিয়া লওয়া বাঞ্ছনীয়। হানাফী, শাফেয়ী, মালিকী, মাযহাবের ইহাই মত। সমস্ত কুফী ফিকাহবিশারদ, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল ও জমহুর হাদীসবিদগণও এই মতই সমর্থন করিয়াছেন। কাযী ইয়ায বলিয়াছেন, কোন কোন লোক বিবাহের পূর্বে কনেকে দেখা বিবাহেচ্ছু পুরুষের জন্য মকরূহ। কিন্তু ইমাম নবব লিখিয়াছেন, ইহা সঠিক মত নয়। কেননা এই মত এই হাদীসের ও সমস্ত উম্মতের ইজমা’র পরিপন্হী। বিশেষতঃ সামাজিক ও অর্থনৈতিক সর্বপ্রকার লেন-দেন কালে মূল জিনিসটিকে পূর্বেই দেখিয়া ও যাচাই পরখ করিয়া লওয়া সম্পূর্ণ জায়েয এবং ইসলামে ইহার উপর গুরুত্ব আরোপ করা হইয়াছে। বিবাহও অনুরূপ একটি সামাজিক ব্যাপার। বিবাহে সাধারণতঃ ভিন্ন এক পরিবারের আদেখা-অচেনা-অজানা একটি মেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক পরিবারের অতীব আদব ও মর্যাদা সম্পন্ন সদস্য হইয়া যায়। মেয়েটিকে লইয়া একটি পুরুষের জীবন অতিবাহিত করিতে হইবে। তাহাকে কেন্দ্র করিয়াই ছেলেটির বংশের ধারা সম্মুখে অগ্রসর হইবে, সে হইবে তাহার সন্তানের মা- পরবর্তী বংশদরের উৎস কেন্দ্রে। কাজেই সে মেয়েটি সর্বদিক দিয়া পছন্দমত কিনা তাহা ছেলেটির ভাল ভাবে দেখিয়া লওয়া বাঞ্ছনীয়। ইহা অতীব যুক্তিপূর্ণ কথা।
বিবাহের পূর্বে কনে দেখা বাঞ্ছনীয়; কিন্তু সেই দেখার মাত্রা কতখানি? ইমাম নববী লিখিয়াছেনঃ
****************************************
মেয়েটির শুধু মুখমণ্ডল ও হস্তদ্বয় দেখাই ছেলেটির জন্য জায়েয।
ইহার কারণ বলা হইয়াছে, মুখমণ্ডল ও হস্তদ্বয় যেহেতু মেয়ের ‘সতর’ বা অবশ্য আচ্ছাদনীয় অঙ্গ’ নয়, কাজেই তাহার দিকে দৃষ্টিপাত করা বা দেখা একজন ভিন পুরুষের জন্য নাজায়েয নয়। দ্বিতীয়তঃ মুখমণ্ডল দেখিলেই তাহার রূপ ও সৌন্দর্য সম্পর্কে- মেয়েটি সুন্দরী-রূপসী, সুদর্শনা না কৃষ্ণ-কুৎসিত, তাহা বুঝিতে পারা যায়। আর হস্তদ্বয় দেখিলে সমস্ত দেহের গঠন-সংস্থা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা করা সম্ভব। সমস্ত ফিকাহবিদের ইহাই অভিমত। ইমাম আওজায়ী বলিয়াছেন, মেয়েদের দেহের মাংসল স্থান সমূহ দেখিবে। আর দায়ূদ যাহেরী বলিয়াছেন, ******************* মেয়েটির সমস্ত দেহ ও অংগ-প্রতঙ্গ দেখিবে। কিন্তু এই দুইটি মত সম্পর্কে ইমাম নববী লিখিয়াছেন, এই মত সুন্নাত ও ইমজার মূল নীতির পরিপন্হী।
কনেকে দেখার ব্যাপারে তাহার পূর্বানুমতি গ্রহণের প্রয়োজন আছে কি? এই বিষয়ে ইমাম নববী লিখিয়াছেন, সকল মাযহাব ও জমহুর ফিকাহবিদদের মতে বিবাহের উদ্দেশ্যে মেয়েকে দেখার ব্যাপারে তাহার পূর্বানুমতির বা পূর্ব সম্মতির কোন প্রয়োজন নাই। বরং মেয়ের অজ্ঞাতসারেই তাহার অসতর্ক থাকা অবস্থায় এবং পূর্ব জানান ব্যতিরেকেই তাহাকে দেখার অধিকার বিবাহেচ্ছু ছেলের রহিয়াছে। তবে ইমাম মালিক বলিয়ানে, মেয়ের অসতর্কতাবস্থায় তাহাকে দেখা আমি পছন্দ করি না। কেননা তাহাতে মেয়ের ‘সতর- অবশ্য আচ্ছাদনীয় অংদের উপর দৃষ্টি পড়ার আশংকা রহিয়াছে। মেয়ের অনুমতিক্রমে মেয়েকে দেখিতে হইবে। এ মতও যথার্থ নয়। কেননা নবী করীম (স) দেখার অনুমতি দিয়াছেন বিনা শর্তে। তাহার পূর্বানুমতি বা সম্মতি গ্রহণ করিতে হইবে, এমন কথা রাসূলে করীম (স) বলেন নাই। আর অনুমতি চাওয়া হইলে সে হয়ত লজ্জায় অনুমতি দিবে না, ইহার আশংকা রহিয়াছে। উপরন্তু সেরূপ দেখায় প্রতারিত হওয়ারও আশংকা রহিয়াছে। অনেক সময় এমনও হয় যে, মেয়েকে রীতিমত জানান দিয়া ছেলে তাহাকে দেখিল, কিন্তু সে মেয়েকে পছন্দ করিতে পারিল না। ফলে তাহাকে বিবাহ করিতে রাযী হইতে পারিল না, তাহাকে বিবাহ করিতে অস্বীকার করিয়া বসিল। ইহাতে মেয়েটির কি পরিণতি হইতে পারে তাহা সহজেই বুঝা যায়। ইহার ফলে মেয়েটি সমাজে অবাঞ্ছিতা ও পরিত্যক্তা হইয়া যাইতে পারে। আর শেষ পর্যন্ত ইহা যে এক নিদারুণ কষ্টের কারণ হইয়া দাঁড়াইবে, তাহাতে আর সন্দেহ কি?
এই কারণেই শরীয়াত বিশেষজ্ঞগণ মত দিয়াছেন যে, কোন মেয়েকে বিবাহের আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেওয়ার পূর্বেই তাহাকে ছেলের দেখিয়া লওয়া বাঞ্ছনীয়। তখন যদি পছন্দ না হয়, ও বিবাহ করিতে অরাযী হয়, তাহা হইলে তাহাতে কাহারও কোন লজ্জা ও অপমান বা মনোকষ্টের কারণ ঘটিবে না।
বিশেষজ্ঞগণ আরও বলিয়াছেন, ছেলের নিজের পক্ষে কাঙ্খিতা মেয়েকে দেখা যদি সম্ভবই না হয়, তাহা হইলে সে আপনজনের মধ্য হইতে কোন এক মেয়ে লোককে পাঠাইয়া মেয়ে সম্পর্কে যাবতীয় খবরাখবর লইবে। কিন্তু এই সবই আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেওয়ার পূর্বে হওয়া উচিত, পরে নয়।
একালে মেয়ের ছবি দেখার একটা সাধারণ প্রচলন- বিশেষ করিয়া শহরাঞ্চলে ও আধুনিক আলোকপ্রাপ্ত ভদ্র সমাজে রহিয়াছে। তবে ছবিদ্বারা মুখ ও অবয়ব সম্পর্কে একটা ভাষা-ভাষা ও অস্পষ্ট ধারণা করা যায় বটে; কিন্তু সে সত্যই মনপুত কিনা, সে বিষয়ে নিশ্চিন্ত হওয়া যায় না। তাই কেবল মাত্র ছবি দেখিয়াই সিদ্ধান্ত গ্রহণ উচিত হইবে না।
(*****************)
****************************************
হযরত মুগীরা ইবনে শু’বা (রা) হইতে বর্ণিত হইয়াছে, তিনি একজন মেয়েলোককে বিবাহ করার জন্য প্রস্তাব দিলেন। তখন নবী করীম (স) বলিলেন, তুমি মেয়েটিকে (আগেই) দেখিয়া লও। কেননা এই দর্শন তোমাদের মধ্যে সম্পর্কের স্থায়িত্ব আনিয়া দেওয়ার জন্য অধিকতর কার্যকর ও অনুকূল হইবে। (তিরমিযী
ব্যাখ্যাঃ এই হাদীসটিতে বিবাহ করার পূর্বে কনেকে দেখার জন্য নবী করীম (স)- এর স্পষ্ট নির্দেশ উচ্চারিত হইয়াছে। এই দেখার উদ্দেশ্য ও যৌক্তিকতা নবী করীম (স) নিজেই বলিয়া দিয়াছেন। আর তাহা হইল, এই দর্শন তোমাদের দুইজনের মনে ঐকান্তিকতা, আন্তরিকতা, মনের আকর্ষণ, সংগিত, সহমর্মিতাও সংহতি জাগাইয়া দিবে। দুই জনের মধ্যে আনূকূল্য ও পারস্পরিক কল্যাণ কামনার সৃষ্টি করিবে। আর ইহার ফলে তোমাদের দাম্পত্য জীবন সুদৃঢ় ও স্থায়ী হইবে। তোমাদের স্বামী-স্ত্রী সম্পর্ক প্রেম-প্রীতি ও ভালবাসার মাধুর্যে মাদকতায় ভরপুর ও সুদৃঢ় হইয়া থাকিবে। কখনই মনোমালিন্য ও ছাড়াছাড়ির কারৰণ ঘটিবে না। কেননা পারস্পরিক পরিচিতি ও ভালবাসার ফলে বিবাহ অনুষ্ঠিত হইলে পরবর্তীকালে কোনরূপ ক্ষোভ বা অনুশোচনার কারণ দেখা দিবে না বলিয়া বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই আশা করা যায়।
ইমাম তিরমিযী হাদীসটি উদ্ধৃত করার পর ইহার অর্থ লিখিয়াছেনঃ
****************************************
তোমাদের দুইজনের মধ্যে প্রেম-প্রীতি ও ভালবাসা ইহার (বিবাহ পূর্বে দেখার) ফলে স্থায়ী হইয়া থাকিবে।
অতঃপর ইমাম তিরমিযী লিখিয়াছেনঃ
****************************************
বিশেষজ্ঞগণ বলিয়াছেনঃ যে মেয়ের বিবাহের প্রস্তাব দেওয়া হইয়াছে, প্রস্তাবক পুরুষ বিবাহের পূর্বে তাহাকে দেখিলে- অবশ্য তাহার দেহের হারাম অঙ্গ না দেখিলে- কোনই দোষ হইবে না।
এই পর্যায়ের্আর একটি হাদীস হযরত মুহাম্মদ ইবনে মুসলিমাতা (রা) হইতে বর্ণিত হইয়াছে। রাসূলে করীম (স) বলিয়াছেনঃ
****************************************
আল্লাহ তা’আলা যখন কোন পুরুষের দিলে কোন মেয়েকে বিবাহ করার জন্য প্রস্তাব দেয়ার ইচ্ছা জাগাইয়া দেন, তখন সে মেয়েটিকে দেখিবে তাহাতে কোনই দোষ নাই।
(ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমাদ, ইবনে হাব্বান, হাকেম)
অনুরূপভাবে হযরত জাবির (রা) হইতে বর্ণিত হইয়াছে, তিনি বলিয়াছেন, আমি রাসূলে করীম (স)- কে বলিতে শুনিয়াছিঃ
****************************************
তোমাদের কেহ যখন কোন মেয়েকে বিবাহ করার প্রস্তাব দিবে, তখন সেই মেয়ের দেহের এমন কোন অংশ দেখা যদি সেই পুরুষের পক্ষে সম্ভব হয় যাহা তাহাকে বিবাহ করিতে সেই পুরুষকে উদ্বুদ্ধ ও উৎসাহী করিবে, তবে তাহা তাহার এইকাজ অবশ্যই করা উচিত।
(আবূ দায়ূদ, মুসনাদে আহমাদ)
এই হাদীসটির শেষাংশে হযরত জাবির (রা) বলিয়াছেন, রাসূলে করীমের (স) এই কথা শুনার পর আমি বনু সালমা বংশের একটি মেয়েকে বিবাহ করার প্রস্তাব দিলাম। অতঃপর আমি তাহার এমন কিছু দেখার জন্য চেষ্টা করিতে লাগিলাম যাহা তাহাকে বিবাহ করার জন্য আমাকে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করিতে পারে। এই উদ্দেশ্যে ******** আমি তাহাকে দেখিবার জন্য খেজুর গাছের ডালের আড়ালে দাঁড়াইয়া থাকিতে লাগিলাম। পরে সেই রকম কিছু দেখিতে পাওয়ায় আমি সেই মেয়েকেই বিবাহ করিলাম। (********)
রাসূলে করীম (স)-এর উপরোক্ত কথাটি আবূ হুহমাইদ এই ভাষায় বর্ণনা করিয়াছেনঃ
****************************************
তোমাদের কেহ যখন কোন মেয়েকে বিবাহ করার প্রস্তাব দিবে, তখন এই প্রস্তাব দেওয়ার উদ্দেশ্যে সেই মেয়ের দেহের কোন অংশ যদি সে দেখে- এরূপ অবস্থায় যে, সে মেয়ে তাহা টেরই পায় না, তবে তাহাতে কোনই দোষ হইবে না।
বিবাহের প্রস্তাব দেওয়ার উদ্দেশ্যে মেয়েকে দেখার জন্য ইসলামী শরীয়াতে এই যে উৎসাহ দান কর হইয়াছে- নবী করীম (স) স্পষ্ট ভাষায় নির্দেশ দিয়াছেন, ইহার মূলে একটি কারণ হইল, ইসলামী সমাজে মেয়ে পুরুষে অবাধ মেলা-মেশার কোন সুযোগ থাকিতে পারে না। তথায় সহশিক্ষার ব্যবস্থা হয় না। ছেলেরা অবাধে মেয়েদিগকে দেখার কোনই সুযোগ পাইতে পারে না। গোপন বন্ধুতা, প্রেম-ভালবাসা, সহঅভিনয় ও হোটেল-রেস্তোঁরা-পার্কে-খেলার মাঠে-ক্লাসে-সভা-সম্মেলনে পরস্পরকে প্রকাশ্যভাবে দেখার, কথাবলার, পারস্পরিক জানা-জানির কোন সুযোগ হয় না। এই কারণেই বিবাহের প্রস্তাব দেওয়ার সময় যাহাতে পরস্পরকে দেখিতে ও পছন্দ করিতে পারে এবং পারস্পরিক বুঝা-শুনার পরই বিবাহিত হইতে পারে, এই জন্যই ইসলামে এই সুযোগ রাখা হইয়াছে। বর্তমান নগ্নতা ও অবাধ মেলা-মেশার যুগেও যে সব পরিবারে শরীয়াত মুতাবিক পর্দা পালিত হয়, সে সব ক্ষেত্রে বিবাহের প্রস্তাব পূর্বে এইরূপ কনে দেখারও প্রচলন রহিয়াছে। ইহা মূলত ইসলাম প্রবর্তিত অতীব কল্যাণকর প্রচলন, তাহাতে কোনই সন্দেহ নাই।