কনের বাঞ্ছিত গুণাবলী বিবাহ

হযরত আবূ হুরায়রা (রা) হইতে বর্ণিত হইয়াছে, তিনি নবী করীম (স) হইতে বর্ণনা করিয়াছেন, হযরত রাসূলে করীম (স) বলিয়াছেনঃ কনে বাছাই করার সময় চারটি বিষয়ে গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা হইয়া থাকে। কোন মেয়েকে বিবাহ করা হয় তাহার ধান-সম্পত্তির জন্য, তাহার বিশেষ বংশীয় মর্যাদা ও বিশেষত্বের জন্য, তাহার রূপ ও সৌন্দর্যের জন্য এবং তাহার ধার্মিকতা ও ধর্মপালন প্রবণতার জন্য। অতএব তুমি অন্য সবদিক বাদ দিয়া কেবলমাত্র ধার্মিকতা ও দ্বীন-পালনকারী মেয়েকে গ্রহণ করিয়াই সাফল্য মণ্ডিত হও। …. তোমার দুই হাত মাটিতে মিশ্রিত হউক….।

 

ব্যাখ্যাঃ এই হাদীসটিতে চারটি গুণ ও বৈশিষ্ট্যের উল্লেখ করা হইয়াছে, লোকেরা সাধারণত কনে বাছাই করার সময় এই চার গুণের দিকেই গুরুত্ব দিয়া থাকে এবং এই গুণগুলি কিংবা ইহার কোন একটি গুণ যে মেয়ের মধ্যে দেখিতে পাওয়া যায়, সেই মেয়েকে বিবাহ করার সিদ্ধান্ত করা হয়। ইহা যেমন মানব সমাজের চিরকালের সাধারণ নিয়ম, তেমনি ইহা মানুষের রুটি ও পছন্দ বাছাইয়ের যুক্তিসম্মত মানও বটে। যে কোন ধরনের একটা মেয়ে পাওয়া গেলেই মানুষ তাহাকে বিবাহ করার জন্য আগ্রহী ও উৎসাহী হইয়া উঠে না।

 

এই গুণ কয়টির মধ্যে প্রথম হইতেছে ধন-সম্পত্তির অধিকারী হওয়া। মেয়ে নিজে ধন-সম্পত্তির অধিকারী হইবে; কিংবা সে কন্যা হইবে কোন ধন-সম্পত্তির অধিকারী ব্যক্তির। প্রায়ই দেখা যায়, বিবাহেচ্ছু যুবক ধন-সম্পত্তির অধিকারী কোন পরিবারের মেয়ে বিবাহ করিতে চায়। ইহার পিছনে যে কাজ করে, তাহা হইল, স্ত্রী অর্থ- সম্পদে সুখী জীবন যাত্রার ভাবনা-চিন্তাহীণ সুযোগ লাভ। উপরন্তু স্ত্রী নিজে ধন-সম্পত্তির মালিক হইলে স্বামীর উপর স্ত্রীর দাবি- দাওয়া কিংবা পরিবার পরিচালনার ব্যয় নির্বাহ করার দায়িত্ব অনেক কম চাপিবে। অথবা শ্বশুরের মৃত্যুর পর অনেক সম্পত্তি মীরাসী সূত্রে পাওয়ার আশা মানসলোকে প্রবল হইয়া থাকে। আর শ্বশুরের জীবদ্দশায় ও শ্বশুর বাড়ীর উপঢৌকনে সুখের বন্যা প্রবাহিত হইবে।

 

মুহাল্লাব বলিয়াছেন, হাদীসের এই কথাটি প্রমাণ করে যে, স্ত্রীর ধন-সম্পদে স্বামীর ভোগাধিকার আছে। স্ত্রী যদি নিজ খুশীতে স্বামীকে টাকা-পয়সা দেয় তবে তাহা ভোগ- ব্যবহার করা তাহার জন্য সম্পূর্ণ জায়েয। কিন্তু স্ত্রীকে স্বামীর ইচ্ছামত নিজের টাকা পয়সা ব্যয় করিতে বাধ্য করার কোন অধিকার স্বামীর নাই। ইমাম আবূ হানীফা, সওরী ও ইমাম শাফেয়ী বলিয়াছেনঃ

 

****************************************

 

স্ত্রী যাহা ক্রয় করিতে ইচ্ছুক নয়, তাহার অর্থ দ্বারা তাহাকে সেই জিনিস ক্রয় করিতে বাধ্য করা যাইবে না।

 

আর স্বামীর দেওয়া মহরানার নিরংকুশ মালিক স্ত্রী। মহরানা বাবত পাওয়া অর্থ বা সম্পদ লইয়া সে যাহা ইচ্ছা করিতে পারিবে। সে ব্যাপারে স্বামীর ইচ্ছা স্ত্রীর উপর প্রাধান্য বা অধিক প্রভাবশালী হওয়ার অধিকারী নয়।

 

দ্বিতীয় যে গুণটির জন্য একটি মেয়েকে বিবাহ করার আগ্রহ একনজ বিবাহেচ্ছু যুবকের মনে সাধারণত জাগে তাহা হইর মেয়ের বিশেষ বিশেষত্ব। মূল আরবী শব্দ হইলঃ ***** হইল সেই জিনিস যাহা মানুষ সাধারণত পৈতৃক বা বংশীয় গৌরবের বিষয় রূপে গণ্য করে। এই জন্য ইহার অর্থ হইল ********* পিতৃ পুরুষ বা বংশীয় ও নিকটাত্ময়দের সূত্রে প্রাপ্ত সামাজিক মান-মর্যাদা ও বিশেষত্ব। এই কথাটিও সাধারণ  সামাজিক প্রথার দৃষ্টিতে বলা হইয়াছে। কেননা কোন লোক বা পরিবার যদি বংশীয় মর্যাদা লইয়া গৌরব করে- গৌরব করার মত বংশ মর্যাদা থাকে, তখন লোকেরা ইহাকে একটা বিশেষ গুণ ও বেশেষত্ব রূপে গণ করে। অনেক ক্ষেত্রে বেশী সংখ্যক লোক সম্পন্ন পরিবার বা বংশ বিশেষ সামাজিক মর্যাদার অধিকারী হইয়া থাকে। অনেকে মনে করিয়াছেন, এখানে *********বলিতে উত্তম ও ভাল ভাল কাজ বুঝাইয়াছে। অর্থাৎ পরিবারিক উচ্চতর ঐতিহ্য।

 

তৃতীয় বিষয় হইল, মেয়ের রূপ ও সৌন্দর্য। কনের রূপ ও সৌন্দর্য সাধারণভাবে প্রায় সকলের নিকটই অধিক আকর্ষণীয়। আর সব জিনিসেই রূপ ও সৌন্দর্য প্রত্যেক মানুষেরই প্রার্থিত ও কাঙ্খিত। বিশেষ করিয়া স্ত্রীর সুন্দরী ও রূপসী হওয়াটা সব বিবাহেচ্ছু যুবকের নিকটই কাম্য। কেননা স্ত্রীই হয় স্বামীর জীবন-সঙ্গিনী, চির সহচর। স্ত্রীর সুখ ও অবয়বের উপর স্বামীর দৃষ্টি সব সময়ই আকর্ষিত ও আপতিত হইয়া থাকে। কাজেই স্ত্রীর সুন্দরী রূপসী হওয়ার কামনা প্রত্যেক বিবাহেচ্ছুর মধ্যে অতি স্বাভাবিকভাবেই বর্তমান থাকে। ইহা চিরকালই মনস্তাত্বিক সত্য ও শাশ্বতরূপে বিবেচিত।

 

চতুর্থ বিষয় হইল, মেয়েটির ধার্মিক ও সচ্চরিত্রশীলা হওয়া। বস্তুত বিবাহেচ্ছু যুবক যদি ধর্ম বিশ্বাসী ও চরিত্রবাদী হয়, তাহা হইলে তাহার অর্ধাঙ্গিনী ও চিরসহচরীরও ধার্মিকা ও চরিত্রশীলা হওয়া স্বাভাবিক ভাবেই তাহার নিকট কাম্য হইয়া থাকে। এমন যুবক নিশ্চয়ই এমন মেয়েকে স্ত্ররূপে গ্রহণ করিতে রাযী হয় না, যে-মেয়ে ধর্মবিশ্বাসী ও ধর্মানুসারী নয়। আর ধর্মের সাথে চরিত্রের ওতোপ্রোত সম্পর্ক। যে লোক প্রকৃতপক্ষে ধর্ম বিশ্বাসী ও ধর্মানুসারী, সে অবশ্যই আদর্শ চরিত্রের অধিকারী। আর যে লোক কোন ধর্মে বিশ্বাসী নয়, তাহার চরিত্র বলিতেও কিছু নাই। কেননা ‘চরিত্র’ বলিতে যাহা বুঝায়, তাহা ধর্ম হইতেই নিঃসৃত ও উৎসারিত। এক কথায়, ধর্মই চরিত্রের উৎস। এই কারণে যে মেয়ে ধর্ম মানে না, ধর্মানুসারী নয়, তাহার চরিত্রের নিষ্কুলষতা বিশ্বোস্য নয়, নির্ভরযোগ্যও নয়। ইহা সাধারণত সমস্ত ধার্মিক সমাজেরই রুচি, প্রবণতা ও রেওয়াজ। কেননা প্রকৃত পক্ষে ইহকাল ও পরকাল- উভয় জীবনের সমস্ত কল্যাণ কেবল মাত্র দ্বীন পালনের মাধ্যমেই পাওয়া সম্ভব। তাই দুনিয়ার দ্বীনদার আত্মমর্যাদাবোধ ও সুরুচিসম্পন্ন সব লোকের দৃষ্টি সাধারণতঃ মেয়ের ধার্মিকতা- অতএব চরিত্রবতী হওয়ার উপরই অধিক গুরুত্ব নিবদ্ধ হইয়া থাকে। বিশেষত ইহা চির জীবনকালেরও বংশানুক্রমিক ব্যাপার।

 

আর এই কারণেই নবী করীম (স) কনের এই গুণটির উপর সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করিয়াছেন এবং কথার শেষ ভাগে বলিয়াছেনঃ ************* অতএব তুমি- বিবাহেচ্ছু প্রত্যেক যুবকই- দ্বীন বিশ্বাসী ও দ্বীন পালনকারী কনে গ্রহণ করিয়া সাফল্য মণ্ডিত হও।

 

বস্তুত কনে বাছাই করার ব্যাপারটি অত্যন্ত দুরূহ। কনের সন্ধানে বাহির হইয়া এত বিচিত্র ধনের মেয়ের সন্ধান পাওয়া যায় যে, তন্মেধ্য কাহাকে গ্রহণ করিবে, কাহাকে অগ্রাহ্য করিবে, তাহা চূড়ান্তভাবে সিদ্ধান্ত করা খুবই কঠিন হইয়া পড়ে। তাই জীবন- সমস্যার সমাধান উপস্থাপক ও বিশ্বমানবতার শাশ্বত দিশারী হযরত মুহাম্মদ (স) এই সমস্যাটিরও নির্ভুল সমাধান পেশ করিয়াছেন। আর তাহা হইল, একটি ধার্মিকা ও দ্বীন পালনকারী মেয়ে খোঁজ করিয়া লওয়া ও তাহাকেই বিবাহ করা বাঞ্ছনীয়। কেননা, স্ত্রী যদি দ্বীন পালনকারী হয়, তাহা হইলে ইহকাল ও পরকলের সার্বিক কল্যাণ ও মঙ্গল লাভ করা সম্ভব হইবে। অবশ্য এই কথার অর্থ এই নয় যে, ধার্মিকা হইলে তাহার সুন্দরী, সম্ভ্রান্ত বংশীয়া ও ধনী কন্যা বা ধনশালিনী হওয়া চলিবে না। রাসূলের কথার আসল তাৎপর্য হইল সব কয়টি গুণের উপর এই গুণটির অগ্রাধিকার রহিয়াছে, অতএব এই গুণটির উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করতে হইবে, অন্য গুণ ইহার করে কাম্য, প্রথমেই নয়। মেয়েটি যদি দ্বীন-পালনকারী না হয়, আর হয় রূপে অপসরা, ধনে- মানে অতুলনীয়, তবে সে এমন কনে নয়, যাহাকে খুব আগ্রহ উৎসাহ ভরে গ্রহণ করতে হইবে। পক্ষান্তরে মেয়েটি যদি দ্বীনদার হয় এবং অন্যান্য কোন একটি গুণও না থাকে তবে তাহাকে বিবাহ করাই বাঞ্ছনীয়।

 

হাদীসের শেষ কথাটি হইলঃ ******* ‘ইহার শাব্দিক অর্থঃ তোমার হস্তদ্বয় মাটিযুক্ত হউক’। কিন্তু এই অর্থ এখানে লক্ষ্য নয়। এখানে ইহার অর্থ সম্পূর্ণ বাক্যরূপ হইল, ************** আমি তোমাকে এই যে আদেশ করিলাম, তুমি যদি তাহা কাজে পরিণত না কর, তাহা হইলে তোমার হস্তদ্বয় মাটি যুক্ত হউক। - অর্থাৎ তোমার দারিদ্র্য অবশ্যম্ভাবী। মুহাদ্দিস কিরমানী রাসূলে করীম (স)- এর মূল কথার শেষ বাক্যটির অর্থ করিয়াছেনঃ তোমার নিকট যখন সমস্ত ব্যাপার সবিস্তারে বলা হইল, তখন ইহার  মধ্যে সর্বোত্তম কাজটি- দ্বীনদার কনে বিবাহ অবশ্যই করিবে। আর এই কথা দ্বারা জীবনের সর্বক্ষেত্রে দ্বীনদার লোকদের সাহচর্য গ্রহণের উপর সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করা হইয়াছে। বস্তুত জীবন-সংগ্রামে সাফল্যের মূল চাবিকাঠি ইহাই।

 

এই পর্যায়ের আর একটি হাদীস এইঃ

 

****************************************

 

হযরত আবূ সায়ীদ খুদরী (রা) হইতে বর্ণিত হইয়াছে, তিনি বলিয়াছেন, হযরত রাসূলে করীম (স) ইরশাদ করিয়াছেনঃ তিনটি বিশেষত্বের যে কোন একটির কারণে একটি মেয়েকে বিবাহ করা হয়। একটি মেয়েকে বিবাহ করা হয় তাহার ধন ও ঐশ্বর্যের কারণে, একটি মেয়েকে বিবাহ করা হয়, তাহার রূপ ও সৌন্দর্য দেখিয়া, আর একটি মেয়েকে বিবাহ করা হয়, তাহার দ্বীনদারী ও ধর্মপরায়নতা দেখিয়া। কিন্তু তুমি গ্রহণ কর দ্বীনদার ধার্মিকা ও চরিত্রবতী মেয়ে। তোমার ডান হাত মাটি মুক্ত হউক।

 

(মুসনাদে আহমাদ, ইবনে হাবান, আবূ ইয়া’লী, বাজ্জার)

 

ব্যাখ্যাঃ এই হাদীসটিতেও বিবাহ ও কনে বাছাই করার ব্যাপারে সমাজে সাধারণ প্রচলিত রেওয়াজেরই উল্লেখ করা হইয়াছে। কথার ধরন এই যে, সমাজে সাধারণত এই সব দৃষ্টিকোণ ও মানদণ্ডে কনে বাছাই করা হয়। কিন্তু রাসূলে করীম (স)- এর আদর্শবাদী ও অনুসারী ব্যক্তির পক্ষে ইহার মধ্যে কোন দৃষ্টিকোন অবলম্বন করা উচিত এবং কোন ধরনের মেয়েকে জীবন সঙ্গিনীরূপে গ্রহণ করা কল্যাণকর, তাহা জানাইয়া দেওয়াই এই পর্যায়ের হাদীস সমূহের মূল ও চূড়ান্ত লক্ষ্য। সেই সঙ্গে কনে বাছাই করার ক্ষেত্রে সাধারণ প্রচলিত রেওয়াজের অসারতা দেখানোও এই লক্ষ্যের অন্তর্ভুক্ত।

 

স্ত্রী গ্রহণের সময় লোকেরা সাধারণত নিজ নিজ রুচি ও দৃষ্টিভংগী অনুযায়ী বিশেষ গুণ সম্পন্না মেয়ের সন্ধান করিয়া থাকে। যাহারা অর্থলোভী, তাহারা কোন মেয়ে বা কাহার মেয়ে বিবাহ করিলে ধন-সম্পত্তি লাভ করা যাইবে, তাহারই সন্ধান করিয়া বেড়ায়। অন্য কোন গুণ থাকুক আর নাই থাকুক, সেদিকে লক্ষ্য দেওয়ার তাহারা কোন প্রয়োজন বোধ করে না। তাহাদের দৃষ্টিতে ধন-সম্পত্তির মূল্য ও মর্যাদা সর্বাধিক ও সর্বোচ্চ। উহা পাইলেই অন্য সব বিষয়ে একেবারে অন্ধকার হইলেও আপত্তি বা অনিচ্ছার কোন কারণ নাই।

 

যাহারা কেবল রূপ ও সৌন্দর্যের পিপাসু, তাহারা শ্রেষ্ঠ সুন্দরী ও অপসরা তুল্য রূপসী কন্যার খোঁজ করে। তাহাদের মতে কন্যার চোখ ঝলসানো রূপ ও সৌন্দর্য থাকাই অধিক কাম্য। তাহা মাকাল ফলের ন্যায় লাল খোসার তলায় মলিন অভ্যন্তর হইলেও তাহাদের জন্য তাহা ক্ষতির বা অপছন্দের কারণ হয় না। রূপই তাহাদের নিকট সর্বাধিক গুরুত্বের অধিকারী। চরিত্র পশুর অপেক্ষাও খারাপ হইলে তাহাদের কিছুই আসিয়া যায় না।

 

অনেকে আবার উচ্চ ও অভিজাত বংশের মেয়ে বিবাহ করিয়া জাতে উঠিতে চায়। কিন্তু সে উচ্চ ও অভিজাত বংশীয় মেয়েটি নিজে কি পদার্থ, তাহার বিচার ও বিবেচনা ইহাদের নিকট নিষ্প্রয়োজন।

 

অবশ্য ইহার ব্যতিক্রমও লক্ষ্য করা যায়। এমন লোকও আছে, যাহারা প্রধানত দ্বীনদার চরিত্রবতী মেয়েই পাইতে চায়। অন্যান্য দিক না হইলেও ক্ষতি নাই।

 

ইহা যেমন সমাজের সাধারণ প্রচলন, তেমনি সমাজের লোকদের বিভিন্ন রুচি, দৃষ্টিভঙ্গী ও মূল্যমানের পার্থক্যেরও ফসল। কিন্তু রাসূলে করীম (স) তাঁহার অনুসারী আদর্শবাদী লোকদের জন্য কনে বাছাই করার একটা বিশেষ মানদণ্ড দিতে চাহিয়াছেন। তিনি বলিয়াছেন, আলোচ্য তিনটি দৃষ্টিকোন ও মূল্যমানের মধ্যে প্রথম দুইটি শুধু-সম্পত্তির কারণে বা রূপ ও সূন্দর্য বা বংশ গৌরবের দৃষ্টিতে অন্ধভাবে কোন মেয়েকে জীবন সঙ্গিনী বানানো কেন মতেই উচিত হইতে পারে না। কেননা এই কয়টি বিশেষত্ব নিতান্তই বাহ্যিক, বস্তুনিষ্ঠ ও ক্ষণস্থায়ী। ধন-সম্পত্তি যায় এবং আসে। শ্রেষ্ঠা সুন্দরীও অরূপা ও কুৎসিত হইয়া যায়। যে কোন কারণে তাহা হইতে পারে। কাজেই যে গুণ ও বিশেষত্ব স্থায়ী ও চিরন্তন, সেই বিশেষত্ব যে মেয়ের আছে, সেই মেয়েকেই বিবাহ করা রাসূলের আদর্শবাদী ও অনুসারী লোকের কর্তব্য। বিশেষত যাহার সহিত দীর্ঘ জীবন অতিবাহিত করিতে হইবে, তাহার গুণ-বিশেষত্ব ও স্থায়ী হওয়াই বাঞ্ছনীয়।

 

উপরে উদ্ধৃত হাদীস দুইটতে এ বিষয়ে ইতিবাচক কথাই বলা হইয়াছে। কিন্তু নবী করীম (স) এ সম্বন্ধে কেবল ইতিবাচক কথা বলিয়াই শেষ করেন নাই। তিনি এ বিষয়ে স্পষ্ট নিষেধবাণীও উচ্চারণ করিয়াছেন। হযরত ইবনে উমর (রা) হইতে বর্ণিত হইয়াছে, রাসূলে করীম (স) বলিয়াছেনঃ

 

****************************************

 

তোমরা কোন মেয়েকে কেবল তাহার বাহ্যিক রূপ ও সৌন্দর্য দেখিয়াই বিবাহ করিও না। কেননা ইহা অসম্ভব নয় যে, তাহার রূপ ও সৌন্দর্য তাহাদিগকে ধ্বংসের মুখে পৌছাইয়া দিবে। তোমরা কোন মেয়েকে এই উদ্দেশ্যেও বিবাহ করিও না যে, তাহার ফলে ধন-সম্পত্তি লাভ করা যাইবে। কেননা ইহার সম্ভাবনা অনেক বেশী যে, তাহার ধন-সম্পত্তি তাহাকে বিদ্রোহী অনমনীয়া বানাইয়া দিবে। বরং তোমরা একটি মেয়েকে বিবাহ কর তাহার দ্বীনদারীর চরিত্র দেখিয়া। বস্তুত একটি দ্বীনদার কানকাটা, নাককাটা, কৃষ্ণাঙ্গী ক্রতদাসীও উত্তম।

 

রাসূলে করীম (স) –এর এই বাণীটি হইতেও অধিক স্পষ্ট হইয়া উঠিয়াছে যে, কেবল রূপ ও সৌন্দর্য এবং ধন-সম্পত্তির অধিকারীণী, তবে সেত সোনায় সোহাগা। কনে বাছাই করার ব্যাপারে ইসলামের এই দৃষ্টিকোন ও মানদণ্ড বৈষয়িক ও বস্তুনিষ্ট নয়। ইহা একান্তভাবে আদর্শভিত্তিক এবং ইসলামী আদর্শবাদী লোকদের নিকট এই দৃষ্টিভঙ্গীই অধিক প্রিয় ও অগ্রাধিকার পাওয়ার  যোগ্য। (****************************)

 

হাদীসের এই সব দ্ব্যর্থহীন ঘোষণার ভিত্তিতে আল্লামা ইবনুল হুম্মাম লিখিয়াছেন, কেহ যখন কোন মেয়ের মান- মর্যাদার জন্য, কিংবা তাহার ধনমাল পাওয়ার আশায় অথবা তাহার বংশ গৌরনের কারণে তাহাকে বিবাহ করে, তখন সে শরীয়াতের দৃষ্টিতে একটা নিষিদ্ধ কাজ করে। কেননা নবী করীম (স) বলিয়াছেনঃ

 

****************************************

 

(********************)

 

যে ব্যক্তি কোন নারীর সম্মান দেখিয়া তাহাকে বিবাহ করে, আল্লাহ তাহার লাঞ্ছনাই বৃদ্ধি করেন; যে তাহার সম্পদের জন্য তাহাকে বিবাহ করে, তিনি তাহার দারিদ্র্যই দৃদ্ধি করেন আর যে তাহার আভিজাত্যের কারণে তাহাকে বিবাহ করে, তিনি তাহার নীচতাই বৃদ্ধি করেন। পক্ষান্তরে, যে ব্যক্তি কোন নারীকে বিবাহ করার সময় তাহার মধ্যে এইসব চায় না; বরং সে নিজের দৃষ্টি অবনত রাখে, নিজের গুপ্তাঙ্গের পবিত্রতা রক্ষা করে ও নিজের আত্মীয়তা-সম্পর্ক বজায় রাখে, আল্লাহ তাহার কারণে ঐ নারীরও কল্যাণ করেন এবং ঐ নারীর কারণে তাহারও কল্যাণ করেন।

 

****************************************

 

(***********)

 

হযতর মা’কাল ইবনে ইয়াসার (রা) হইতে বর্ণিত হইয়াছে, তিনি বলিয়াছেন, রাসূলে করীম (স)-এর নিকট একব্যক্তি আসিল এবং বলিলঃ আমি একটি সুন্দরী মেয়ে পাইয়াছি। আমার ধারণা হয়, সে সন্তান প্রসব করিবে না। এমতাবস্থায় আমি কি তাহাকে বিবাহ করিব? রাসূলে করীম (স) বলিলেন, না। লোকটি আবার আসিয়া এই প্রশ্ন করিল। এই দ্বিতীয়বারেও রাসূলে করীম (স) তাহাকে নিষেধ করিলেন। লোকটি তৃতীয়বারও আসিল এবং পূর্বরূপ প্রশ্ন পেশ করিল। তখন নবী করীম (স) বলিলেনঃ তোমরা বিবাহ কর এমন মেয়ে, যে স্বামীকে খুব বেশী ভালবাসিবে, যে বেশী সংখ্যক সন্তান প্রসব করিবে। কেননা আমি তোমাদের সংখ্যাধিক্য লইয়া অন্যান্য জাতির তুলনায় বেশী অগ্রবর্তী হইয়া যাইব। (আবূ দাউদ, নাসায়ী, মুসনাদে আহমাদ)

 

ব্যাখ্যাঃ হাদীসটিতে মোট তিনটি আলোচনাযোগ্য বিষয় রহিয়াছে। প্রথম, একটি লোকের বার  রাসুলে করীম (স)- এর নিকট উপস্থিত হইয়া তাহার নিজের বিবাহ সংক্রান্ত জটিলতায় তাঁহার পথ-নির্দেশ প্রার্থনা করা। দ্বিতীয়, লোকটির এই আশংকা প্রকাশ করা যে, মেয়েটি হয়ত সন্তান প্রসব করিবে না এবং তৃতীয় হইল, রাসূলে করীম (স)-এর সর্বশেষে দেওয়া নীতিগত নির্দেশ।

 

রাসূলে করীম (স) এর নিকট একটি লোক পর পর তিনবার তাহার নিজের বিবাহ সংক্রান্ত একটি সমস্যার মীমাংসা পাওয়ার উদ্দেশ্যে আসে। লোকটি কে তাহা হাদীসের মূল ভাষায় বলা হয় নাই। হাদীস বর্ণনাকারী হযরত মা’কারের কথার ধরন হইতে বুঝা যায়, তিনি লোকটিকে চিনিতে পারেন নাই এবং তাহার নামও তাঁহার জানা নাই। তবে লোকটি মুসলমান এবং রাসূলে করীমের সাহাবীদের মধ্যের কেহ, তাহা নিঃসন্দেহ। লোকটি তাহার যে সমস্যার কথা রাসূলে করীম (স)-এর নিকট প্রকাশ করে তাহা তাহার বিবাহ সংক্রান্ত ব্যাপার। সে একটি সুন্দরী মেয়ে পাইয়াছে, ইচ্ছা করিলেই সে তাহাকে বিবাহ করিয়া জীবন-সঙ্গিনী রূপে ঘরে লইয়া আসিতে পারে। কিন্তু মেয়েটি সম্পর্কে তাহার মনে ধারণা জন্মিয়াছে যে, সে হয়ত বন্ধ্যা, সন্তান প্রসব করিবে না। এখন এই বন্ধ্যা মেয়েটিকে সে বিবাহ করিবে কিনা তাহাই তাহার মনে জিজ্ঞাসা এবং ইহাই তাহার সমস্যা।

 

ইহার অর্থ এই দাঁড়ায় যে, রাসূলে করীম (স) তাঁহার গঠন করা সমাজে এই মর্যাদার অধিকারী যে, এই সমাজের প্রত্যেক ব্যক্তি তাহার একান্ত ব্যক্তিগত- এমনকি কোন ধরনের মেয়ে বিবাহ করিবে, আর কেন ধরনের নয়- তাহাও রাসূলে করীমের নিকট জিজ্ঞাসা করিয়া ও তাঁহার মত ও পরামর্শ লইয়া সিদ্ধান্ত করার প্রয়োজন মনে করিত। বস্তুত প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ইহাই শাশ্বত কর্মনীতি।

 

লোকটি বলল, ************** আমি মনে করি, মেয়েটি সন্তান প্রসব করিবে না। অর্থাৎ মেয়েটি বন্ধ্যা। কিন্তু সে ইহা কি ভাবে জানিতে পারিল? সম্ভবত মেয়েটি ইতিপূর্বে বিবাহিতা ছিল এবং স্বামীর সহিত যথেষ্ট সময় থাকা সত্ত্বেও তাহার কোন সন্তান জন্মায় নাই। ফলে মেয়টির বন্ধা হওয়া সম্পর্কে প্রবল আশংকা হওয়া খুবই স্বাভাবিক। অথবা সে হয়ত জানিতে পারিয়াছে যে, মেয়েটির মাসিত ঋতু আসে না। আর যাহার ঋতু হয় না, তাহাকে বন্ধ্যা বলিয়া সন্দেহ করা কোনক্রমেই অমূলক নয়। এতদ্ব্যতীত আরও একটি নিদর্শন আছে। হয়ত দেখা গিয়াছে, মেয়েটির পূর্ণ বয়স্খা হওয়া সত্ত্বেও হয়ত তাহার স্তনদ্বয় উদ্ধত হইয়া উঠে নাই। আর যে মেয়ের বয়স হওয়া সত্ত্বেও স্তনদ্বয় উদ্ধত হইয়া উঠে নাই, সে মেয়ে সন্তানবতী নাও হইতে পারে, এরূপ সংশয় উদ্রেক হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। মেয়েটি সম্পর্কে লোকটির উপরোক্ত উক্তির ইহাই অন্তর্নিহিত তাৎপর্য।

 

রাসূলে করীম (স) উপরোক্ত ধরনের একটি মেয়েকে বিবাহ করিতে ও জীবন সঙ্গিনী বানাইতে নিষেধ করিলেন এইজন্য যে, যে মেয়ে সন্তান জন্ম দিবে না, সে মেয়ের জীবন নিস্ফল ও অর্থহীন। তাহার দ্বারা কোন অধঃস্তন বংশের উদ্ভব হইবে না; বরং তাহার নিজের বংশধারা এইখানে নিঃশেষ হইয়া যাইবে। সে হইবে নির্বংশ। আর নির্বংশ হওয়ার মত দুর্ভাগ্য আর কিছুই হইতে পারে না। রাসূলে করীম (স) লোকটিকে- যিনি একজন সাহাবীই হইবেন- এই দুর্ভাগ্য হইতে রক্ষা করিতে চাহিয়াছেন। বস্তুত নির্বংশ হইতে, অধঃস্তন বংশ হইতে বঞ্চিত হ ইতে দুনিয়ার কোন মানুষই স্বাভাবিকভাবেই রাযী হইতে পারে না।

 

তৃতীয় প্রসঙ্গে রাসূলে করীম (স) যে কথাটি বলিয়াছেন, তাহার দুইটি অংশ প্রথমাংশে বলিয়াছেনঃ

 

****************************************

 

‘যে মেয়ে তাহার স্বামীকে গভীর তীব্র ও দৃঢ়ভাবে ভালবাসে’।

 

আর ****** অর্থ *********** যে মেয়ে বেশী বেশী সন্তান প্রসব করে। স্বামীকে বেশী ভালবাসে ও খুব বেশী সংখ্যায় সন্তান প্রসব করে এমন মেয়েকে বিবাহ করার জন্য রাসূলে করীমের (স) এই নির্দেশ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। স্ত্রী লোকের এই দুইটি গুণ পরস্পর সম্পর্কযুক্ত, পরস্পর পরিপূরক, পরিপোষক। যে স্ত্রী স্বামীকে অধিক মাত্রায় ভালবাসিতে পারে না, সে স্বামীসঙ্গ ও সঙ্গম বেশী লাভ করিতে পারে না। স্বামীও তাহার প্রতি বেশী আকৃষ্ট ও ঐকান্তিক হয় না। আর স্বামীর প্রতি অধিক মাত্রায় ভালবাসা পোষণকারী স্ব্রী যদি অধিক সংখ্যক সন্তানবতী না হয়, তাহা হইলে দাম্পত্য জীবনের আসল লক্ষ্য অর্জিত হইতে পারে না। সে আসল লক্ষ্য হইল বেশী সংখ্যক সন্তান জন্মদানের ফলে রাসূলে করীম (স)-এর উম্মতের সংখ্যা বিপুলভাবে বৃদ্ধি করা।

 

এই কথাটি পূর্ব কতার কারণ স্বরূপ বলা হইয়াছে হাদীসের শেষ বাক্যেঃ ************ কেননা আমি তোমাদের লইয়া অন্যান্য জাতি ও নবীর উম্মতের তুলনায় অধিক সংখ্যক উম্মতশালী হওয়ার গৌরব করিব।

 

মুসনাদে আহমাদ গ্রন্হে হযরত আনাস (রা) বর্ণিত হাদীসে এই বাক্যটির ভাষা এইরূপঃ

 

****************************************

 

(**********)

 

কেননা কিয়ামতের দিন আমি তোমাদের সংখ্যাধিক্য লইয়াই অন্যান্য নবীগনের তুলনায় বেশী অগ্রবর্তী হইব।

 

মুসনাদে আহমদ গ্রন্হে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা) বর্ণিত অপর একটি বর্ণনার ভাষা এই রূপঃ

 

****************************************

 

তোমরা সকলে ‘সন্তানের মা বিবাহ কর। কেননা আমি তোমাদের লইয়া কিয়ামতের দিন গৌরব করিব।

 

‘সন্তানের মা বিবাহ কর’ অর্থ, সন্তানের মা বানাইবার উদ্দেশ্যে এবং সন্তানের মা হইতে ইচ্ছুক ও প্রস্তত, সন্তাতেনর মা হওয়ার যোগ্য- সন্তান গর্ভধারণে ও প্রজননে সক্ষম মহিলা বিবাহ কর। কেবল বিলাস-সঙ্গিনী ও ও অংকশায়িনী ও যৌন স্পৃহা পরিতৃস্তকারিনী বানাইবার উদ্দেশ্যে বিবাহ করিবে না। যে স্ত্রী সন্তান গর্ভে ধারণ করিতে, সন্তান প্রসব করিতে ও সন্তান লালন পালন করিতে প্রস্তুত না, সে জীবন-সঙ্গিনী হইতে পারে, সন্তানের মা হইতে পারে না। আর যে সন্তানের মা হয় না, হইতে প্রস্তুত বা ইচ্ছুক নয়, তাকে বিবাহ করা অর্থহীন। ইমাম ইবনে হাজার আল-আসকালানী লিখিয়াছেনঃ এই পর্যায়ে যতগুলি হাদীসই উদ্ধৃত হইয়াছে তাহা সবই প্রমাণ করে যে, এই হাদীসসমূহে যদিও মূলত বিবাহ করার জন্য উৎসাহদান করা হইয়াছে; কিন্তু আসল গুরুত্ব আরোপ করা হইয়াছে অধিক সন্তানাদায়িনী ও বংশ রক্ষা ও বৃদ্ধির সহায়ক স্ত্রী গ্রহণের উপর।

 

এই পর্যায়ের সব কয়টি কথা উপরোক্ত গুণের মেয়ে বিবাহ করার আদেশ দানের যুক্তি হিসাবে বলা হইয়াছে। এই কথাটি দ্বারা স্পষ্ট হইয়া উঠিয়াছে যে, প্রশ্নকারী ব্যক্তিকে নবী করীম (স) বন্ধা মেয়ে বিবাহ করিতে নিষেধ করিয়াছেন। এ কারণে নয় যে, বন্ধ্যা মেয়ে বিবাহ করা বুঝি হারাম। বরং এই নিষেধের একমাত্র কারণ হইল, স্ত্রী বন্ধ্যা হইলে ও সন্তান জন্ম না হইলে দুনিয়ায় মুসলমানদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাইবে না এবং কিয়ামতের দিন নবী করীমের উম্মত অন্যান্য নবী রাসূলগণের উম্মতের তুলনায় অধিক সংখ্যক হওয়ার লক্ষ্য অনর্জিত থাকিয়া যাইবে। আর তাহা কোনক্রমেই বাঞ্ছনীয় নয়। দ্বিতীয়তঃ কোন স্ত্রীর অধিক সন্তান হওয়া তাহার কোন দোষ নয়, ইহার দরুন লজ্জিত হওয়ারও কোন কারণ নাই। ইসলামের দৃষ্টিতে ইহা নারীত্বের বৈশিষ্ট্য, একটি বিশেষ প্রশংসাযোগ্য গুণ এবং এই গুণ নারী জীবনেই নয়, সামাজিক জীবনেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে ‘বিস্ফোরণ’ বলিয়া বিদ্রুপ করা হইলেও এবং ইহাকে একালের আনবিক বোমা বিস্ফোরণের তুলনায়ও অধিক ধ্বংসাত্মক বলিয়া অভিহিত করা হইলেও রাসূলে করীম (স)- এর এই কথাটির গুরুত্ব ও মূল্য কিছূমাত্র ব্যাহত হয় না। অধিক সন্তান হওয়া বা লোক-সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া প্রকৃত পক্ষে বিশ্বমানবতার পক্ষে কখনই অকল্যাণের কারণ হইতে পারে না। মানুষ শুধু পেট লইয়াই জন্মায় না, কাজ করিতে ও উপার্জন-উৎপাদন বৃদ্ধি করিতে সক্ষম মন-মগজ ও দুই খানি হাতও সে তাহার সঙ্গে লইয়া আসে। অতীতের দিকে তাকাইলে দেখা যাইবে, বিশ্বে জনসংখ্যা যতই বৃদ্ধি পাইয়া আসিয়াছে, খাদ্য সম্ভারও খাদ্যোপযোগী দ্রব্যাদির বিপুলতাও সেই সঙ্গে তাল মিলাইয়া চলিয়া আসিয়াছে। লোক সংখ্যা বাড়ে; কিন্তু জমির পরিমাণ বাড়ে না, ফলে লোকসংখ্যা বৃদ্ধি দারিদ্র্য ও অর্ধাশন-অনশনের কারণ হইয়া দেখা দেয় বলিয়া যুক্তি দেখানো সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। জমি বাড়ে না একথা ঠিক নয়। বহু দেশে সমুদ্রগর্ভ হইতে বিশাল বিশাল এলাকা মাথা তুলিয়া উঠিতেছে। সল্প জমিতে বিশাল বিশাল ইমারত গড়িয়া উঠিতেছে। আর বিজ্ঞানের বিকাশ ও উৎকর্ষ এবং বিভিন্ন দিকে উহার কার্যকরতা মানুষকে নিছক জমি নির্ভর করিয়া রাখে নাই। জীবন-মান উন্নয়নের আধুনিক শ্লোগান যতই প্রবল ব্যাপক ও চিত্তাকর্ষক হউক না কেন, রাসূলে করীম (স)-এর আলোচ্য বাণীটি বিন্দু মাত্র মূল্যহীন হইতে পারে না। তাঁহার এই কথাটির গুরুত্ব কেবলমাত্র অতীত কালের স্বল্প জনসংখ্যা সম্পন্ন পৃথিবীর প্রেক্ষিতে কিংবা একালের কোন স্বল্প সংখ্যা সমন্বিত দেশের প্রেক্ষিতে স্বীকৃতব্য নয়। ইহা সর্বকালের ও সকল দেশের জন্য শাশ্বত মূল্য ও তাৎপর্যের অধিকারী। বেশী ফলন ও বেশী ফসল সকলেরই কাম্য। যে লোক হাঁস-মুরগী, গরু-ছাগল-ভেড়া পালে, সেও এসবের বেশী বেশী সন্তান কামনা করে। সেই হিসাবে মানব সংখ্যা বৃদ্ধিও কাম্য ও উৎসাহব্যঞ্জক হওয়া বাঞ্ছনীয়। অবশ্য আটকুরে ব্যক্তিদের কথা আলাদা। সংখ্যা বিপুলতাকে জাতীয় সম্পদের প্রবৃদ্ধি ও অংশীদার মনে করা হইলে এবং জাতীয় উৎপাদনকে মুষ্টিমেয় লোকদের বিলাস-সামগ্রীর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা না হইলে জন সংখ্যা বৃদ্ধি কোন দিনই ‘বিপজ্জনক’ প্রতীত হইবে না। পৃথিবীতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও জীবিকা সামগ্রীর বিপুলতা সমান্তরালভাবে ও পাশাপাশি চলিতেছে। অনেক সময় বরং খাদ্যোৎপাদন পরিমাণ জন-সংখ্যা বৃদ্ধির হারকেও ছাড়াইয়া যায়। এ দুইটিকেই সমান উৎফুল্লতা সহকারে গ্রহণ করাই বাঞ্ছনীয়। আল্লাহর প্রতি ঈমানদার লোকেরা উভয়টিকে আল্লাহর দান বলিয়া মনে করে।

FOR MORE CLICK HERE

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]