মুহারিব (তাবেয়ী) আমাদের নিকট হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন, বলিয়াছেন, আমি রাসূলের সাহাবী হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা)-কে বলিতে শুনিয়াছি (তিনি বলিলেন) ‘আমি বিবাহ করিয়াছি’। এই কথা শুনিয়া নবী করীম (স) আমাকে বলিলেনঃ ‘তুমি কি ধরনের মেয়ে বিবাহ করিয়াছ?’ আমি বলিলামঃ আমি বিবাহ করিয়াছি স্বামী পরিত্যাক্তা (বা- অকুমারী Not virgin: Widow, or divorese)- বিধবা বা তালাক প্রাপ্তা) মেয়ে বিবাহ করিয়াছি। তখন নবী করীম (স) বলিলেন, তোমার কি হইয়াছে, অক্ষতা- পূর্বে বিবাহ হয় নাই এমন মেয়ে বিবাহ করিলে না কেন? তাহা করিলে তাহার সহিত তুমি খেলা করিতে?... পরে এই ঘটনাটি আমি আমর ইবনে দীনারের নিকট উল্লেখ করিলাম, তখন আমর বলিলেন, আমি হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা)-কে বলিতে শুনিয়াছি, তিনি বলিয়াছিলেন, রাসূলে করীম (স) আমাকে ব লিলেন, কেন তুমি এমন যুবতী কন্যা বিবাহ করিলে না যাহার সহিত তুমি খেলা করিতে এবং সেও তোমার সহিত খেলা করিত?
(বোখারী)
ব্যাখ্যাঃ হাদীসটি হযরত জাবির (রা)- এর বিবাহ সংক্রান্ত বিষয়ে রাসূলে করীম (স)- এর সহিত কথোপকথন সম্পর্কিত। বুখারী গ্রন্হে উপরোদ্ধৃত হাদীসের পূর্বে এই পর্যায়েরই অপর একটি হাদীস উল্লেখ করা হইয়াছে, তাহা হইতে এই কথোপকথনের একটা পটভূমি জানা যায়। তাহা এই যে, একটি যুদ্ধ হইতে ইসলামী কাফেলা মদীনায় প্রত্যাবর্তন করিতেছিল। মদীনার নিকটে পৌঁছার পর হযরত জাবির ( রা) খুব দ্রুত উষ্ট্র চালাইয়া অগ্রসর হইতে ছিলেন। তাহা দেখিয়া নবী করীম (স) তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন ****** তুমি খুব দ্রুত যাইতেছ কেন? জওয়াবে তিনি বলিলেন ************ আমি নতুন নতুন স্ত্রী সঙ্গম শুরু করিয়াছিলাম, (সেই অবস্থায়ই আমাকে এই যুদ্ধে যাইতে হইয়াছিল।) এই কারণে আমি যত শীঘ্র সম্ভব ঘরে ফিরিয়া যাইতে চাহি। এই পর্যায়ে মুসলিম শরীফে হযরত জাবির হইতে বর্ণিত হইয়াছে, মদীনার নিকটে পৌঁছার পর রাসূলে করীম (স) ঘোষণা করিলেনঃ
****************************************
যদি কেহ খুব তাড়াতাড়ি পরিবার বর্গের নিকট চলিয়া যাইতে চাহে, তবে সে যাইতে পারে।
এই সময়ই হযরত জাবিরের সহিত রাসূলে করীম (স)-এর উপরোক্ত কথা-বার্তা হইয়াছিল।
উপরোদ্ধৃত হাদীসে রাসূলে করীমের প্রশ্নের ভাষা হইলঃ *********** তুমি কি ধরনের মেয়ে বিবাহ করিয়াছ? আর মুসলিম- এ উদ্ধৃত হাদীসে ইহার ভাষা হইল *************** কুমারী মেয়ে বিবাহ করিয়া না পূর্বে স্বামী প্রাপ্তা? এই প্রশ্নের জওয়াবে হযরত জাবির (রা) বলিলেন, ‘সইয়্যেবাহ’- ‘কুমারী মেয়ে নয়, পূর্বে স্বামীপ্রাপ্তা মেয়ে’।
এই হযরত জাবির হইতে অন্যান্য সূত্রে বর্ণিত অপর একটি হাদীসে রাসূলে করীম (স)-এর প্রশ্ন উদ্ধৃত হইয়াছে? তুমি কি বিবাহ করিয়াছ? তিনি বলিলেনঃ হ্যাঁ ইয়া রাসূলূল্লাহ’! কি ধরনের মেয়ে বিবাহ করিয়াছ, কুমারী, না পূর্বে স্বামী প্রাপ্তা?.... এই প্রশ্ন ছিল সরাসরিভাবে। তখন নবী করীম (স) বলিলেন, ************ ‘তোমার কি হইয়াছে, একজন কুমারী মেয়ে বিবাহ করিলে না কেন? তাহা হইলে তাহার সহিত তুমি ‘খেলা’ বরিতে পারিতে?’
মুসলিমে- এ উদ্ধৃত হাদীসে এই কথাটির ভাষা হইলঃ
****************************************
তুমি কেন একটি কুমারী কন্যা বিবাহ করিলে না?... তাহা হইলে তুমি তাহার সহিত খেলা করিতে এবং সে তোমার সহিত খেলা করিত?
অপর একটি বর্ণনায় ইহার সহিত অতিরিক্ত দুইটি শব্দ যুক্ত হইয়াছে, তাহা হইলঃ *************** ‘তুমি তাহার সহিত হাসাহাসি করিতে এবং সেও তোমার সহিত হাসাহাসি করিত’। আর আবূ উবাইদের বর্ণনায় ইহার ভাষা হইলঃ ********************** ‘তুমি তাহার মিষ্টতা পান করিতে ও সে তোমার মিষ্টতা পান করিত’।
কুমারী কন্যা বিবাহ করিলে স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক শৃঙ্খলা পর্যায়ের বিভিন্ন কাজ বুঝাইবার জন্য উক্তরূপ বিভিন্ন শব্দ ব্যবহৃত হইয়াছে। বলা যাইতে পারে যে, ইহা সবই কাম্য ও লক্ষ্য। অর্থাৎ কুমারী কন্যা বিবাহ করিলে দাম্পত্য জীবনে যে আনন্দ সুখ ও স্ফুর্তি লাভ সম্ভব, অ-কুমারী- পূর্বে স্বামী সুখ প্রাপ্তা বা যৌনকর্মে অভ্যস্তা মেয়ে- বিবাহ করিলে তাহা পাওয়া সম্ভব নয়। রাসূলে করীম (স) তাহাই বুঝাইতে চাহিয়াছেন।
স্বামী-স্ত্রী পরস্পরে খেলা করা বুঝাইবার জন্য ব্যবহৃত হইয়াছে ****** শব্দটি। ইহার একটি রূপ ****** অর্থাৎ খেলা করা। আর ***** শব্দের সরাসরি অর্থ হইল ‘মুখের পানি’। অর্থাৎ স্বামী স্ত্রীর শৃংগায় পরস্পরের মুখের, ওষ্ঠের ও জিহিবার মিলন, চুম্বন ও চোষণ একটি জরুরী অংশ এবং ইহাও কাম্য। একটি বর্ণনায় উদ্ধৃত হইয়াছে, নবী করীম (স) বলিয়াছেনঃ
****************************************
তোমরা কুমারী মেয়ে বিবাহ কর। কেননা উহারাই অধিক মিষ্টমুখ ও গর্ভ ধারণে অধিক সক্ষম।
অপর একটি বর্ণনায় হযরত জাবিরের অ-কুমারী মেয়ে বিবাহ করার কারণ স্বরূপ কথিত উক্তি উদ্ধৃত হইয়াছে এই যে, আমার বাবা মরিয়া যাওয়ার সময় আমার কয়েকটি বোন রাখিয়া যায়।
****************************************
তখন আমি এমন একটি নারী বিবাহ করা পছন্দ করিলাম যে, আমার বোনদিগকে একত্রিত রাখিতে, তাহাদের চুল আচড়াইয়া দিতে ও সার্বিকভাবে তাদের খেদমত করিতে পারিবে।
অর্থাৎ আমার বোনদের দেখা-শুনা, লালন-পালন ও পরিচর্যা ইত্যাদি কাজ করার উদ্দেশ্যেই কুমারী মেয়ের পরিবর্তে পূর্বে স্বামীপ্রাপ্তা একটি নারীকে বিবাহ করিয়াছি।
এই কথা শুনিয়া নবী করীম (স) কি বলিলেন, তাহা উপরোক্ত বর্ণনায় উদ্ধৃত হয় নাই। মুসলিম এর বর্ণনায় উদ্ধৃত হইয়াছে, নবী করীম (স) এই কথা শুনিয়া বলিলেনঃ ************** ‘আল্লাহ তোমার এই কাজে বরকত দিন’। অথবা বলিলেন, বালই। কিতাবুল মাগাজীতে উদ্ধৃত হযরত আমর (রা)- এর কথাটির ভাষা এইঃ
****************************************
আমার পিতা ইন্তেকাল করিলে নয়টি কন্যা রাখিয়া যান, তাহারা ছিল আমারি নয়টি ভগ্নি। তখন আমি তাহাদেরই মত নিজের ও অপরের কল্যাণ সম্পর্কে অনভিজ্ঞ’ ও নিজ হাতে কাজ করিতে অক্ষম’। একটি মেয়ে বিবাহ করা অপছন্দ করিলাম। বরং একটি মহিলাকে স্ত্রী হিসাবে গ্রহণ করা পছন্দ করিলাম, যে উহাদের দেখা-শুনা পরিচর্যা ও খেদমত করিতে পারিবে এবং উহাদের মাথায় চিরুনী চালাইতে পারিবে। নবী করীম (স) ইহা শুনিয়া বলিলেন, তুমি ঠিকই করিয়াছ।
হাদীসটির মূল বর্ণনা হইতে ইসলামী সমাজে স্ত্রী গ্রহণে অনুসৃতব্য নীতি স্পষ্ট ভাষায় জানা যায়। প্রথম কথা, কুমারী কনেকেই বিবাহ করা বাঞ্ছনীয়। তাহা হইতে দাম্পত্য জীবন অধিকতর মধুময় সুখ-তৃপ্তি-স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ হইবে। দ্বিতীয়, দুইটি কল্যাণময় কাজ পরস্পর সাংঘর্ষিক হইলে তন্মধ্যে অধিক গুরুত্বপূর্ণ কল্যাণকেই অগ্রাধিকার দিতে হইবে। কেননা হযরত জাবির (রা) কুমারী কন্যার পরিবর্তে এক অভিজ্ঞা স্ত্রী গ্রহণ করিলে নবী করীম (স) তাঁহার কাজ সঠিক হইয়াছে বলিয়া বরকতের জন্য দোয়া করিয়াছেন। যেহেতু তিনি নিজের দাম্পত্য সুখের উপর অগ্রাধিকার দিয়েছেন তাঁহার ইয়াতীম ভগ্নিদের লালন-পালনের প্রয়োজনের দিকটিকে। তৃতীয়, নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের কর্তব্য সঙ্গী-সাথী অনুসারী কর্মীদের ব্যক্তিগত ও পারিবারিকি তথা দাম্পত্য জীবন সম্পর্কে খোঁজ খবর লওয়া। চতুর্থ, কেহ কোন ভাল কাজ করিয়া থাকিলে তাহার কাজের ন্যায্যতা স্বীকার করা ও সেই কাজে বরকত হওয়ার জন্য দোয়া করা কর্তব্য। নবী করীম (স) হযরত জাবির (লা)- এর এই তুলনাহীন স্বার্থ ত্যাগ ও ইয়াতীম ভগ্নিদের কল্যাণের দিকটিকে অধিকতর গুরুত্ব দানের ব্যাপারটিকে উচ্চতর মর্যাদা দিয়াছন। সেজন্য তিনি তাঁহার প্রশংসা করিয়াছেন। ইহা হইতে সাহাবীগণের উন্নত মানবিক গুণরাশি সম্পর্কে নিঃসন্দেহে জানা যাইতেছে। রাসূলে করীম (স) –এর জিজ্ঞাসা সংক্রান্ত বর্ণনা হইতে মনে হয় যে, হয়ত হযরত জাবিরের বিবাহের অব্যাহতি পরই তাঁহাকে এই প্রশ্ন করিয়াছিলেন ও এই কথোপকথন হইয়াছির। কিন্তু আসল ঘটনা এই যে, হযরত জাবির (রা)- এর বিবাহ ও রাসূলে করীম (স)-এর এই জিজ্ঞাসার মাঝে দীর্ঘ সময়ের ব্যবধান রহিয়াছে।
(**************)
কুমারী মেয়ে বিবাহ করাই একজন নব্য যুবকের জন্য পছন্দনীয়। নবী করীম (স) বলিয়াছেনঃ
****************************************
তোমার উচিত কুমারী কন্যা নিয়ে করা। কেননা তাহাদের সুখ অধিক সুমিষ্ট হয়। তাহাদের গর্ভ সন্তান ধারণে অধিক সক্ষম হয়। ধোকা-প্রতারণায় কম পটু হয় এবং অল্পতেই ও সহজেই খুশী হইয়া যায়।
এই বিষয়টি হযরত আয়েশা (রা) অধিক স্পষ্ট করিয়া তুলিয়াছেন একটি রূপকথার মাধ্যমে। তিনি নবী করীম (স)-কে জিজ্ঞাসা করিলেনঃ হে রাসূল! আপনিই বলূন, আপনি উটে সওয়ার হইয়া কোন উপত্যকায় উপনীত হইলেন। সেখানে একটি গাছ আছে যাহার পাতা সমূহ ইতিপূর্বে খাওয়া হইয়াছে। আর একটি গাছ পাতা খাইবার জন্য চরাইবেন? জওয়াবে নবী করীম (স) বলিলেন, সেই গাছটিতেই উঠ চরাইব যাহার পাতা ইতিপূর্বে খাওয়া হয় নাই। তখন হযরত আয়েশা (রা) বলিলেন, ******** আমিই হইতেছি সেই গাছটি’। (বুখারী)
বস্তুত নবী করীম (স) হযরত আয়েশা (রা) ছাড়া আর কোন কুমারী মেয়েকেই বিবাহ করেন নাই। তাঁহার স্ত্রীগণের মধ্যে একমাত্র তিনিই ছিলেন কুমারী।