মেয়ের বিবাহে অভিভাবকত্ব মেয়ের অভিভাবক ব্যতীত কি বিয়ে ইসলামে বৈধ?

হযরত আবূ মূসা আনসারী হইতে বর্ণিত হইয়াছে, তিনি বলিয়াছেন, রাসূলে করীম (স) ইরশাদ করিয়াছেন, অভিভাবক ছাড়া বিবাহ নাই। (তিরমিযী)

 

ব্যাখ্যাঃ ‘অভিভাবক ছাড়া বিবাহ নাই’ এই মর্মে বহু কয়জন সাহাবী হইতে বহু সংখ্যক হাদীস হাদীসের গ্রন্হাবলীতে উদ্ধৃত হইয়াছে। এই পর্যায়ে হযরত আয়েশা বর্ণিত হাদীস আবূ দাউদ, তিরমিযী, ইবনে খুজাইমা, ইবনে হাবান ও হাকেম কর্তৃক উদ্ধত হইয়াছে। হযরত ইবনে আব্বাস বর্ণিত হাদীস তাবারানী ও জামে’ সুফিয়ানে উদ্ধৃত হইয়াছে। হযরত হুরায়রা বর্ণিত হাদীস ইবনে মাজাহ, দারে কুতনী ও বায়হাকী গ্রন্হে উর্দ্ধথ হইয়াছে। হযরত হুরাইরা বর্ণিত হাদীস ইবনে মাজাহ, দারে কুতনী ও বায়হাকী গ্রন্হে উদ্ধৃত হইয়াছেঠ। হযরত ইমরান ইবনে হুসাইন বর্ণিত হাদীস মুসনাদে আহমদ, দারে কুতনী, তাবারানী, বায়হাকী, মুসনাদে শাফেয়ী গ্রন্হে উদ্ধৃত হইয়াছে। হযরত আনাস বর্ণিত হাদীস ইবনে আদী, নাসায়ী কর্তৃক উদ্ধৃত হইয়াছে । ইহা হইতে বুঝিতে পারা যায়, আলোচ্য হাদীসটির বর্ণনা ও উদ্ধৃতি অত্যন্ত ব্যাপক।

 

তিরমিযী আবূ দায়ূদ- এ হযরত আয়েশা (রা) হইতে বর্ণিত হাদীসটি এইঃ

 

****************************************

 

যে মেয়েই তাহার অভিভাবক ব্যতীতই বিবাহিত হইবে, তাহার বিবাহ বাতিল, তাহার বিবাহ বাতিল, তাহার বিবাহ বাতিল।

 

কিন্তু ইহা তিরমিযীর ভাষা। আর আবূ দায়ূদের ভাষায় হাদীসটি এইঃ

 

****************************************

 

যে মেয়ই তাহার মুরব্বীর অনুমতি ব্যতীত বিবাহ করিবে, তাহার বিবাহ বাতিল- ইহা তিনবার।

 

আর হযরত আব্বাস বর্ণিত হাদীসের ভাষা এইরূপঃ

 

****************************************

 

অভিভাবক-মুরব্বী ব্যতিরেকে কোন বিবাহ নাই। আর যাহার অভিভাবক-মুরব্বী নাই, রাষ্ট্র সরকারই তাহার অভিভাবক ও মুরব্বী।

 

মেয়ের অভিভাবক ছাড়া মেয়ের বিবাহ হইতে পারে না এবং যে মেয়েই তাহার অভিভাবক ছাড়া বিবাহিতা হইবে বা বিবাহ করিবে; তাহার সে বিবাহই বাতিল হইয়া যাইবে। এই প্রসঙ্গের সমস্ত হাদীসের মূল বক্তব্য ইহাই। ফিকাহবিদগণ এই হাদীসের ভিত্তিতে এ সম্পর্কে বিভিন্ন অভিমত প্রকাশ করিয়াছেন। সাহাবীগণের মধ্যে হযরত আলী, উমর ইবনে আব্বাস, ইবনে উমর ও আবূ হুরাইরা, আয়েশা (রা) এবং হাসান বছরী ও ইবনুল মাসাইয়্যিব প্রমুখ তাবেয়ীগণ এই মতই প্রকাশ করিয়াছেন। ইবনুল মুনযির তো দাবি করিয়া বলিয়াছেনঃ

 

****************************************

 

কোন একজন সাহাবী হইতেও ইহার বিপরীত মত জানা যায় নাই।

 

ইমাম শাফেয়ী বলিয়াছেন ************** অভিভাবক-মুরব্বী ব্যতিরেকে বিবাহের মূল আকদ- ঈজাব-কবুলই সহীহ হয় না। তিনি বরং এ পর্যায়ের অন্যান্য হাদীসের ভিত্তিতে এই মত ব্যক্ত করিয়াছেন। তাহার একটি দলীল হইল এই হাদীসঃ

 

****************************************

 

পূর্বে স্বামী প্রাপ্তা- অন্য বর্ণনানুযায়ী- বর্তমানে স্বামীহারা মেয়ে তাহার নিজের বিবাহের ব্যাপারে তাহার অভিভাবক অপেক্ষা অধিক অধিকার সম্পন্ন।

 

মুল্লা আলী আল-কারী লিখিয়াছেন, ইমাম শাফেয়ী ও ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল বলিয়াছেনঃ

 

****************************************

 

মেয়েদের কথা ও উদ্যোগেই বিবাহ মূলতই সংঘটিত হয় না- সে নিজেরই হউক কি অন্য কাহারও প্রতিনিধি হইয়া হউক।

 

ইমাম আবূ ইউসূফ ও ইমাম মুহাম্মদ বলিয়াছেনঃ

 

‘কুফু’ ছাড়া বিবাহ করার ব্যাপারেই শুধু অভিভাবকের মতামত দেওয়ার ইখতিয়ার রহিয়াছে। আর কুফু’তে বিবাহ হইলে তাহাতেও অভিভাবকের অনুমতির প্রয়োজন রহিয়াছে।

 

ইমাম মালিক এর মত উদ্ধৃত হইয়াছেঃ উচ্চতর মানের ছেলের সহিত নিম্ন বংশের মেয়ের বিবাহ দিতে হইলে অভিভাবকের অনুমতির প্রয়োজন হইবে। পক্ষান্তরে নিম্ন মানের ছেলের সহিত নিম্ন বংশের বোঝা বিবাহে ইহার প্রয়োজন হইবে না।

 

অবশ্য এই সব কয়টি মতেরই বিপরীত মতও প্রকাশ করা হইয়াছে। আবূ সওর বলিয়াছেনঃ অভিভাবকের অনুমতি লইয়া মেয়ে নিজেই নিজের বিবাহের ব্যবস্থা করিলে তাহা জায়েয হইবে।

 

মওলানা খলীল আহমাদ লিখিয়াছেন, কেবলমাত্র অল্প বয়স্কা নাবালেগা ও পাগল মেয়ের বিবাহ অভিভাবক ছাড়া হয় না। ইমাম সয়ূতী লিখিয়াছেন, উপরোল্লিখিত  হাদীসটি হইতে জমহুর ফিকাহবিদগণ এইমত গ্রহণ করিয়াছেন যে, অভিভাবক ছাড়া বিবাহ আদতেই সহীহ হয় না।

 

(*********************)

 

আর ইমাম আবূ হানীফা (র) অভিভাবক ছাড়া বিবাহ অসম্পূর্ণ হয় বলিয়া মনে করিয়াছেন। ইমাম মালিক বলিয়াছেনঃ মেয়েটি যদি চরিত্রহীনা হয়, আর সে নিজেই নিজের বিবাহ সম্পন্ন করে; কিংবা নিজেই অন্য কাহকেও দায়িত্ব দেয় তাহাকে বিবাহ দেওয়ার জন্য, তবে তাহার বিবাহ বৈধ হইতে পারে; কিন্তু যে মেয়ে ভদ্র সচ্চরিত্রবতী তাহার জন্য অভিভাবক অপরিহার্য।

 

ইবনুল হুম্মাম উল্লেখ করিয়াছেন, মেয়েদের বিবাহ অভিভাবকের প্রয়োজন-অপ্রয়োজন পর্যায়ে হাদীস ও ফিকাহবিদদের সাতটি মত উদ্ধৃত হইয়াছ, ইমাম আবূ হানীফার দুইটি মতের একটি এই যে, পূর্ণবয়স্কা ও সুস্থ স্বাভাবিক মেয়ের পক্ষে নিজের ও অন্য মেয়ের বিবাহ পরিচালনা করা মোটামুটিভাবে জায়েয। তবে উহা নিশ্চয়ই পছন্দনীয় এবং বাঞ্ছিত নয়ঙ আর দ্বিতীয় মতটি এই যে, কোন মেয়ে যদি তাহার জন্য ‘উপযুক্ত’ ও মানানসই (*******) কোন বিবাহই করিয়া বসে তবে তাহা জায়েয হইবে। আর যদি ইহার বিপরীত হয়, তবে তাহা জায়েয হইবে না।

 

এই সব হাদীস বাহ্যত মুসলিম ও মুয়াত্তা মালিক উদ্ধৃত এই হাদীসটির বিপরীতঃ ************** ‘স্বামীহীনা মেয়ে তাহার নিজের  বিবাহের ব্যাপারে তাহার অভিভাবক-মুরব্বী অপেক্ষা অধিক অধিকার সম্পন্না। কিন্তু প্রকৃতভাবে ইহা উহার সহিত সাংঘর্ষিক নয়। কেননা শেষোক্ত হাদীস মেয়ের অভিভাবকের অধিকারকে সম্পূর্ণ কাড়িয়া বা হরণ করিয়া লওয়া নাই। বরং উহাতে অভিভাবকেরও কিছু না কিছু অধিকার আছে একথা বলিষ্ঠ ভাবেই বুঝাইতেছে- যদিও তাহাতে পূর্ণ বয়স্কা মেয়ের অধিকারকে প্রাধান্য ও অগ্রাধিকার দেওয়া হইয়াছে।  এই হাদীস অনুযায়ীও মেয়ের অনুমতি ও সন্তোষ জানিতে পারার পর সমস্ত বিবাহ অনুষ্ঠানের আয়োজন ব্যবস্থা করার ব্যাপারে অভিভাবকের অধিকার অনস্বীকার্য। এই দিক দিয়া ‘অভিভাবক ছাড়া বিবাহ নাই’ হাদীসটির তাৎপর্য ও ব্যবহারিকতা স্পষ্ট হইয়া উঠে এবং ইমাম আবূ হানীফার মত- অভিভাবক ছাড়া মেয়ের বিবাহ সম্পূর্ণ হয় না- এই কথার যৌক্তিকতা প্রতিভাত হয়। উপরন্তু এই দই ধরনের হাদীসের মধ্যে তেমন কোন বৈপরীত্যও প্রকট হইয়া উঠিতে পারে না।

 

এতদ্ব্যতীত এই কথাও কম গুরুত্বপূর্ণ নয় যে, ‘অভীভাবক ছাড়া বিবাহ নাই’ অর্থের হাদীস সমূহের সনদ দুর্বল- যয়ীফ, মুজতারিব ( কথার অসামাঞ্জস্যতা ও সনদের আউল-ঝাউল) খুব বেশী। কাহারও মতে ইহার সনদ নবী করীম (স) পর্যন্ত ‘মুত্তালিক’, তাহারও মতে মুত্তাসিল নয়- মুনকাতা, ছিন্ন-ভিন্ন। আবার কেহ কেহ বলিয়াছেন, মুরসাল- পরবর্তী বর্ণনাকারী তাহার পূর্বের বর্ণনাকারীর উল্লেখ না করিয়া তাহার উপরের বর্ণনাকারীর নামে বর্ণনা করা হাদীস। হযরত আয়েশা হইতে বর্ণিত হাদীসটির সত্যতা ও যথার্থতা অস্বীকার করিয়াছেন। ইমাম তাহাভী লিখিয়াছেন, ইবনে জুরাইন ইবনে হিশাব জুহরীর নিকট এই হাদীসটি পেশ করিলে তিনি ইহা বর্ণনা করিয়াছেন তাহা মানিয়অ লইতেও অস্বীকার করিলেন।

 

হাফেয ইবনে হাজার আল-আসকালানী লিখিয়াছেন, বিবাহ অভিভাবকের শর্ত সম্পর্কে আলেমগণের মতভেদ রহিয়াছে। জমহুর ফিকাহবিদ এই শর্তের যথার্থতা মানিয়া লইয়াছেন এবং বলিয়াছেনঃ *************** ‘কোন মেয়েই নিজেকে বিবাহ দিবে না- একেবারেই না’। ‘অভিভাবক ছাড়া বিবাহ হয় না’। এই পর্যায়েল হাদীস সমূহকেই তাঁহারা দলীল বানাইয়াছেন। সেই সঙ্গে কুরআনের একটি আয়াতকেও তাঁহারা দলীলরূপে পেশ করিয়াছেন। হযরত মা’কাল ইবনে ইয়াসার (রা) বলিয়াছেনঃ আমার বোনকে আমি এক ব্যক্তির নিকট বিবাহ দিলাম। পরে সে তাহাকে (বাঈন নয় (রা) এমন) তালাক দেয়। অতঃপর তাহার ইদ্দত শেষ হইয়া গেলে সেই লোকটিই আবার তাহাকে বিবাহ করার প্রস্তাব দেয়। আমি লোকটিকে বলিলামঃ আমার বোন তোমার নিকট কখনও ফিরিয়া যাইবে না। কিন্তু বোনটি তাহার নিকটই ফিরিয়া যাইতে ইচ্ছুক ছিল। তখন এই প্রসঙ্গে কুরআন মজীদের এই আয়াতটি পেশ করা হয়ঃ

 

****************************************

 

তোমরা মেয়েদিগকে তাহাদের স্বামীর সহিত নূতন বিবাহ করা হইতে বিরত রাখিতে চেষ্টা করিও না- যদি তাহারা ভালভাবে ও প্রচলিত নিয়মে পারস্পরিক পুনঃবিবাহে সম্মত হয়।

 

ইহারা এই আয়াতটিকে ভিত্তি করিয়া বলিয়াছেন, যেহেতু বিবাহের অভিভাবকের কর্তৃত্ব রহিয়াছে, সেই কর্তৃত্ব চালাইয়া মেয়েদিগকে তাহাদের আগের স্বামীকে পুনরায় গ্রহণ করিতে এ আয়াতে নিষেধ করা হইয়াছে। যদি অভীভাবকের কোনই কর্তৃত্ব না থাকিত এবং মেয়েরা নিজেদের ইচ্ছাতেই বিবাহ করিতে পারিত, তাহা হইলে এই আয়াতের কোন তাৎপর্য থাকে না। কেননা যাহার আদৌ কর্তৃত্ব নাই, তাহাদের নিষেধ কে শুনে!

 

কিন্তু ইমাম আবূ হানীফা এই মত সমর্থন করেন নাই। তিনি বলিয়াছেন, বিবাহে অভিভাবকের অনুমতির কোনই শর্ত নাই এবং বয়স্কা মেয়েরা নিজেরাই নিজেদের বিবাহ সম্পন্ন করিবার পূর্ণ অধিকারী। যদি কোন মেয়ে উপযুক্ত ও মানান সই বিবাহ করে অভিভাবকের অনুমতি ব্যতীতও, তবুও তাহা জায়েয হইবে।

 

বলা হয়, তিনি প্রধানতঃ ক্রয়-বিক্রয়ে মেয়ের স্বাধীন অধিকারের উপর কিয়াস করিয়াই বিবাহের ক্ষেত্রে ও এই স্বাধীন অধিকারের পক্ষে এই মত রচনা করিয়াছেন। আর অভিভাবকের শর্তের হাদীস সমূহ সম্পর্কে বলিয়াছেন, ইহা কেবল অল্প বয়স্কা মেয়েরদের ব্যাপারেই প্রযোজ্য, বড়দের ও একবার স্বামী প্রাপ্তাদের ক্ষেত্রে নয়। কিন্তু এই কথা ঠিক নয়। ইহা ইমাম আবূ হানীফার উপর মিথ্যা দোষারোপ মাত্র।

 

বস্তুত ইমাম আবূ হানীফা (র) কেবলমাত্র কিয়াসের উপর নির্ভর করিয়া এই ব্যাপারে একবড় মত দিয়অছেন, এই কথা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আসলে ইমাম আবূ হানীফার মতটি সাধারণ বিকে বুদ্ধি প্রসূত। উপরন্তু তিনি কুরআনের আয়াত ও প্রমাণিত হাদীসের ভিত্তিতেই এই মত গ্রহণ করিয়াছেন। প্রথমত কুরআনের আয়াতঃ

 

****************************************

 

কোন মু’মিন স্ত্রীলোক যদি নিজেকে নবীর জন্য উৎসর্গ করে…. নবী যদি তাহাকে বিবাহ করিতে চাহেন….।

 

এই আয়াত হইতে একথা স্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে, একটি পূণৃ বয়স্কা মেয়ের তাহার মনোনিত পুরুষের নিকট নিজের বিবাহের প্রস্তাব নিজ থেকেই পেশ করার অধিকার আছে এবং পুরুষটি সে প্রস্তাব গ্রহণ করিয়া লইলে বিবাহও হইয়া যাইতে পারে। ইহাতে অভিভাবকের মত-অমত বা মঞ্জুরী-না মঞ্জুরীর কোন শর্ত করা হয় নাই।

 

কুরআনে দ্বিতীয় আয়াত হইলঃ

 

****************************************

 

স্বামী যদি স্ত্রীকে (তিন) তালাক দিয়া দেয়, তাহা হইলে অতঃপর সে এই (তালাকদাতা) স্বামীর জন্য হালাল হইবে না যতক্ষণ না সে তাহাকে ছাড়া অন্য কোন স্বামী গ্রহন করিবে।

 

এই আয়াত সম্পর্কে প্রথম কথা হইল, ইহাতে বিবাহ করা বা স্বামী গ্রহণ করার কাজটি স্ত্রীলোকের  বলা হইয়াছে, কোন অভিভাবকের কাজ বলা হয় নাই। কাজেই বয়স্কা মেয়ের নিজের ইচ্ছানুক্রমে বিবাহ সংগত হইবেনা কেন? আর দ্বিতীয় কথা হইল, আয়াতটিতে মেয়ে লোকের বিবাহকে হারাম হওয়ার চরম লক্ষ্য বলা হইয়াছে। অতএব তাহার নিজের বিবাহেই সে হারাম হওয়ার অবসানও হইতে হইবে। এতদ্ব্যতীত ************ ‘তাহাদের (স্ত্রী ও পুরুষ) দুইজনই যদি পরস্পরের নিকট প্রত্যাবর্তনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তবে তাহাতে কোন দোষ হইবে না’। ইহাতেও বিবাহ ও পুনবিবাহের সমস্ত কাজ স্ত্রী ও পুরুষের বলা হইয়াছে। এই মূল ব্যাপারে অভিভাবকের কিছু করার আছে একথা বলা হয় নাই। অতএব মেয়েদের নিজেদের ইচ্ছা ও সিদ্ধান্তক্রমেই বিবাহ হইতে পারে। তাহাতে অভিভাবকের অনুমতির কোন শর্ত নাই। দ্বিতীয়তঃ উপরোক্ত আয়াতে মেয়েদের নিজেদের অনুমতিক্রমে স্বামী গ্রহণ হইতে বিরত রাখার চেষ্টা করিতে অভিভাবককে স্পষ্ট ভাষায় নিষেধ করা হইয়াছে। আর অভিভাবককে এইরূপ নিষেধ করায় স্বতঃহ প্রমাণিত হয় যে, মেয়েদের এই কাজ করার স্বাধীন অধিকার রহিয়াছে।

 

অতঃপর হাদীসের দলীল হইল, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) হইতে বর্ণিত হইয়াছে, তিনি নবী করীম (স) হইতে বর্ণনা করিয়াছেন, নবী করীম (স) বলিয়াছেনঃ ******************** ‘পূর্ণ বয়স্কা কুমারী অকুমারী মেয়ের বিবাহের ব্যাপারে অভিভাবকের কোনই কর্তৃত্ব নাই’।

 

এই হাদীস অভিভাবকের কর্তৃত্ব হরণ করিয়াছে।

 

দ্বিতীয় হাদীসঃ

 

****************************************

 

স্বামীহীনা পূর্ণ বয়স্কা মেয়ে তাহার নিজের বিবাহের ব্যাপারে তাহার অভিভাবক অপেক্ষা অধিক অধিকার সম্পন্না।

 

অর্থাৎ কোন মেয়ে যখন পূর্ণ বয়স্কতা লাভ করে এবং তাহার বুদ্ধি-বিবেচনা শক্তি সুস্থ বিকশিত হয়, তখন তাহার বিবাহের অভিভাবকত্ব সে নিজেই অধিকার করিয়া বসে। তখন তাহার বিবাহের চূড়ান্ত মঞ্জুরী দানের কর্তৃত্ব অন্য কাহারও হাতে থাকে না, এই দিক দিয়া কেহ তাহার অভিভাবক হয় না। ইহা কেবর মহিলাদের ক্ষেত্রেই সত্য নয়, এইরূপ কর্তৃত্বের অধিকারই লাভ করিয়া থাকে একটা বালকও যখন সে পূর্ণ বয়স্কতা লাভ করে।

 

মোট কথা, পিতা তাহার অল্পবয়স্কা ও নাবালিকা মেয়ের অভিভাবক হয় মেয়ের প্রতিনিধি হিসাবে মাত্র এবং তাহার ততদিন যতদিন সে মেয়ে পূর্ণ বয়স্কা হয় না। ইহাই শরীয়াতের সিদ্ধান্ত। কেননা বিবাহ একটি সামাজিক বৈষয়িক ও দ্বীনী কল্যাণ মূলক কর্মতৎপরতা। ইহার প্রয়োজন বর্তমান ও ভবিষ্যৎ উভয় দিকদিয়াই অত্যাধিক গুরুত্বপূর্ণ। বাল্য বয়সে এই কাজে মেয়ে অক্ষম থাকে বলিয়াই পিতার অভিভাবকত্বের প্রয়োজন হয়। কিন্তু পূর্ণবয়স্কতা লাভ হইলে এই কাজে মেয়ে অক্ষমতা দূর হইয়া যায় এবং নিজের বিবাহের ব্যাপারে ভাল-মন্দ নিজেই বিবেচনা করিতে পারে বলিয়া সমস্ত ইখতিয়ার তাহার একার হইয়া যায়। তখন তাহার উপর অন্য কাহারও অভিভাবকত্বের কর্তৃত্ব চালাবার সুযোগ থাকে না।

 

কুরআন মজীদের আয়াতঃ

 

****************************************

 

তোমরা  তোমাদের স্বামীহীনা মেয়েদিগকে বিবাহ দাও।

 

এই কথাটি অভিভাবকদিগকে লক্ষ্য করিয়া বলা হইয়াছে, একথা ঠিক। কিন্তু এই কথা বলিয়া এ কথা বুঝানো হয় নাই যে, অভিভাবকরা বিবাহ দিলেই বিবাহ জায়েয ও শুদ্ধ হইবে, নতুবা নয়। সমাজের সাধারণ অবস্থা ও প্রচলন প্রথার দিকে লক্ষ্য রাখিয়াই এই কথাটি বলা হইয়াছে। কেননা বিবাহ সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ- খবরাখবর লওয়া, উপযুক্ত বর সন্ধান, কথাবার্তা ঠিক করা, বিবাহের উদ্যোগ আয়োজন করা প্রভৃতি মেয়েরা নিজেরা কখনও করে না। কারণ, এই জন্য বাহিরে দৌড়া-দৌড়ি, যাতায়াত ও পুরুষদের সঙ্গে অনেক যোগাযোগ করার প্রয়োজন হয়। মেয়ের মঞ্জুরী লইয়া পুরুষরাই এই সব কাজ করিবে ইহাই নিয়ম।

 

এই প্রেক্ষিতে রাসূলে করীম (স)- এর বাণী ****************** ‘মেয়েদিগকে কেবল অভিভাবকরাই বিবাহ দিবে কথাটিও বুঝিতে হইবে। ইহাতে সেই সাধারণ নিয়ম ও প্রচলেন কথাই ধ্বনিত হইয়াছে। ইহার অর্থ কক্ষণই ইহা নয় যে, মেয়েদের বিবাহের চূড়ান্ত কর্তৃত্ব বুঝি অভিভাবকদের হাতে। নবী করীম (স)- এর বাণী **************** ‘অভিভাবক ছাড়া বিবাহ নাই’ কথাটিও পুরাপুরিভাবে এই পর্যায়ের ও এই ধরনের। সেই সঙ্গে স্মরণীয়, মুহাদ্দিস সনদ বিশারদগণ বলিয়াছেনঃ তিনটি হাদীস রাসূলে করীম (স) হইতে প্রমাণিত নয়। তন্মধ্যে ইহাও একটি। এ কারণেই বুখারী ও মুসলিম গ্রন্হে এই হাদীসটি স্থান পায় নাই। আর হযরত আয়েশা বর্ণিত হাদীসটির একজন বর্ণনাকারী জহুরী ইহাকে অস্বীকার করিয়াছেন যেমন, তেমন হযরত আয়েশার নিজের আমল ছিল ইহার বিপরীত। অভিভাবক ছাড়াও মেয়ের বিবাহ হয় এবং তাহা বৈধ, ইহাই ছিল তাঁহার ফিকহী মত। কাজেই হাদীসের মূল বর্ণনাকারীর নিজের আমলের (কাজ) বিপরীত মত জ্ঞাপক এই হাদীস গ্রহণযোগ্য নয়। কিন্তু সেই সঙ্গে একথাও ভুলিলে চলিবে না যে, অভিভাবকদের এড়াইয়া ডিঙাইয়া ও তাহাদিগকে সঙ্গে না লইয়া কেবল মাত্র নিজের ইচ্ছা ও একান্ত নিজস্ব উদ্যোগে বিবাহ করাও কোন শরীফ-শালীন চরিত্রবান মেয়ের কাজ হইতে পারে না।

FOR MORE CLICK HERE

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]