বিবাহের ঘোষণা দেওয়া বিবাহের সুন্নত সমূহ

হযরত রুবাই বিনতে মুয়াওয়ায ইবনে আফরা (রা) হইতে বর্ণিত হইয়াছে, তিনি বলিয়াছেন, নবী করীম (স) আসিলেন এবং আমার ফুল শয্যার রাত্রে ঘরে প্রবেশ করিলেন। অতঃপর আমার শয্যার উপর বসিলেন যেমন তুমি আমার নিকট হইতে দূরত্ব রক্ষা করিয়া বসিয়াছ। তখন আমাদের কতকগুলি মেয়ে দফ বাজাইতে শুরু করিল এবং বদর যুদ্ধে আমার পিতৃবংশের যেসব লোক শহীদ হইয়াছিলেন তাঁহাদের জীবন ও কীর্তি সৌন্দর্যের উল্লেখ পূর্ণ গৌবরগীতি গাহিতে লাগিল। সহসা একটি মেয়ে বলিয়া উঠিলঃ আমাদের মধ্যে আছেন এমন নবী যিনি ভবিষ্যতের কথা জানেন। তখন নবী করীম (স) বলিলেনঃ তোমরা এই কথাটি বলা বন্ধ কর এবং তোমরা যাহা বলিতেছিলে তাহাই বলিতে থাক। (বুখারী)

 

ব্যাখ্যাঃ ফুর শয্যার রাত্রির একটি ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ এই হাদীসটিতে দেওয়া হইয়াছে। ঘটনার বর্ণনাকারী একজন মহিলা সাহাবী- আফরা পুত্র মুওয়াযের কন্যা হযরত রুবাই (রা)। তিনি বলিয়াছেন, তাঁহার যখন বিবাহ হইল ও তাঁহাকে লইয়া ঘর বাঁধার উদ্দেশ্যে বিবাহের উৎসব অনুষ্ঠিত হইতেছিল এবং তিনি রাত্রিকালে ফুল শয্যার ঘরে বসিয়াছিলেন, এই সময় রাসূলে করীম (স) সেই ঘরে উপস্থিত হইয়া হযরত রুবাই হইতে খানিকটা দূরে আসিয়া বসিয়া গেলেন। তখন বিবাহ উৎসবের একটি অংশ হিসাবে কতকগুলি অল্প বয়স্কা মেয়ে একত্রিত হইয়া গীত গাহিতে ছিল এবং ‘দফ’ বাজাইতেছিল। গীতের বক্তব্য ছিল বদর যুদ্ধে শাহাদাত প্রাপ্তা লোকদের জীবন ও কীর্তি সৌন্দর্যের গৌরব গাঁথা। গায়িকা মেয়েগুলির মধ্যে হইতে একটি মেয়ে নবী করীম (স) কে দেখিতে পাইয়া তাঁহার প্রশংসার উদ্দেশ্যে গীতের বাক্যসমুহের মধ্যে একটি বিচ্ছিন্ন বাক্য শামিল করিয়া দিল। তাঁহাতে সে বলিলঃ আমাদের মধ্য একজন নবী রহিয়াছেন, যিনি আগামীকারে অর্থাৎ ভবিষ্যতের কথা জানেন। নবী করীম (স) মেয়েটির এই কথা শুনিয়া তাহাকে সম্বোধন করিয়া বলিলেনঃ এইরূপ কথা বলিও না- ইহা বলা বন্ধ কর। ইহা ছাড়া যাহা বলিতে ছিলে তাহা বলিতে থাক। নবী করীম (স) সম্পর্কে যে বাক্যটি বলা হইয়াছিল তাহা যেহেতু প্রকৃত ব্যাপারের সহিত সঙ্গতিপূর্ণ নয়, তাহা ছিল অমূলক, ভিত্তিহীন ও মিথ্যা- উপরন্তু নবী করীম (স) নিজের প্রচারিত তওহীদী আকীদা-বিশ্বাসেরও পরিপন্হী, তাই তাহা বলিতে নিষেধ করিলেন। ইহার কারণ এই যে, নবী করীম (স) আগামীকালের, অর্থাৎ ভবিষ্যতের কথা জানেন ইহা সম্পূর্ণ শিরকী আকীদা। ভবিষ্যতের কথা আল্লাহ তা’আলা ছাড়া আর কেহই জানে না। কেননাঃ ******************* ‘গায়েব ও আদৃশ্য জগতের সব চাবিকাঠি একান্তভাবে আল্লাহর মুঠির মধ্যে। সে বিষয়ে আল্লাহ ছাড়া অন্য কেহই কিছু জানে না’। ইসলামের ইহাই আকীদা এবং এই আকীদারই প্রচারক ছিলেন স্বয়ং নবী করীম (স)। তাঁহারই সম্মুখে তাঁহারই প্রচারিত আকীদা পরিপন্হী ও শিরকী কথা বলা হইবে, তিনি উহার প্রতিবাদ করিবেন না বা ভূল শোধরাইয়া দিবেন না তাহা কিছুতেই হইতে পারে না। নবী করীম (স) সঙ্গে সঙ্গেই তাহা বলিতে নিষেধ করিলেন এবং এই বাক্যটি ব্যতীত তাহারা আর যাহা বলিতেছিল তাহা বলিবার অনুমতি দিলেন। তাঁহার এই অনুমতির তাৎপর্য ছিল, আল্লামা বদরুদ্দীন আইনীর ভাষায়ঃ

 

****************************************

 

বীরত্ব ও যুদ্ধ-বিগ্রহ ইত্যাদি বিষয়ে যে সব গীত সাহিতেছিলে তাহাই গাহিতে নিমগ্ন থাক।

 

আলোচ্য হাদীসটি হইতে কয়েকটি কথা জানা গেল।

 

প্রথম কতা, ইহাতে হযরত রুবাই’র বিশেষ সম্মান ও মর্যাদার কথা বলা হইয়াছে। আর তাহা হইল তাঁহার নিকট নবী করীম (স)- এর তাঁহার ঘরে উপস্থিতি এবং তাঁহার নিকটে আসন গ্রহণ। এখানে প্রশ্ন উঠে, রুবাই একজন ভিন মহিলা- গায়র মুহাররম, নবী করীম (স) তাঁহার ঘরে কি ভাবে গেলেন এবং তাঁহার সম্মুখেই বা আসন গ্রহণ করিলেন কেমন করিয়া? ইহার জওয়াবে বলা যায়, নবী করীম (স) হয়ত তাঁহার ঘরে পর্দার আড়ালে বসিয়াছিলেন। তাহা হইলে তো পর্দা নষ্ট হওয়ার কোন প্রশ্ন উঠিতে পারে না। কিংবা এই ঘটনা হয়ত তখনকার সময়ের যখন পর্দার বিধান নাযিল হয় নাই। অথবা বলা যাইতে পারে, বিশেষ প্রয়োজনের কারণে ভিহ মহিলার প্রতি দৃষি।ট দেওয়া তো সম্পূর্ণ না জায়েয নয়। ইহা ছাড়া কোনরূপ অঘটন ঘটিবার আশংকা না থাকিলে এইরূপ ঘরে প্রবেশ ও উপবেশন করা শরীয়াতের সম্পূর্ণ পরিপন্হী নয়। সর্বোপরি নবী করীম (স)- এর পক্ষে কোন ভিন মেয়ের ঘরে যাওয়া ও তাহার উপর দৃষ্টি দেওয়ার একটা বিশেষ অনুমতি থাকাও অসম্ভব নয়। কিন্তু মুল্লা আলী আল-কারীর মতে এইরূপ ব্যাখ্যা দেওয়া অদ্ভূত ও বিস্ময়কর। কেননা মূল হাদীসে একথা আদৌ বলা হয় নাই যে, হযরত রুবাই মুখ খুলিয়া রাসূলে করীম (স)-এর সম্মুখে উপস্থিত হইয়া ছিলেন এবং তাঁহার সহিত-নিভৃত একাকীত্বে মিলিত হইয়াছিলেন । বরং ইহার বিপরীত কথাই হাদীস হইতে বোঝা যায়। কেননা ইহা ছিল তাঁহার ******** ফূল শয্যার রাত্র বা মধু যামিনী। এই রাত্রে স্বামী ছাড়া অন্য কোন পুরুষের সহিত নিভৃত একাকীত্বে মিলিত হওয়ার কোন প্রশ্ন উঠিতে পারে না, তাহার কোন সুযোগ থাকাও স্বাভাবিক নয়।

 

আলোচ্য হাদীসে রুবাই বিবাহ ও ফুল শয্যার রাত্রিতে বিশেষ উৎসব অনুষ্ঠানের অংশ হিসাবে ‘দফ’ বাজানো ও ছোট ছোট মেয়েদের গীত গাওয়ার কথা স্পষ্ট ভাষায় বলা হইয়াছে। তাহাও আবার করা হইয়াছে শরীয়াতের বিধান প্রবর্তন স্বয়ং নবী করীম (স)-এর উপস্থিতিতে এবং তাঁহার বিশেষ সংশোধনীসহ অনুমোদনক্রমে। একতারা ঢোলকে দফ বলা হয়। ইহা বাজাইয়া বিবাহ অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেওয়া ও প্রচার করা হইতেছিল। বস্তুত ইহার বিশেষ প্রয়োজন রহিয়াছে। বিবাহ একটা সামাজিক অনুষ্ঠান। ইহাতে সমাজের অনুমোদনের যেমন প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন বিবাহ অনুষ্ঠানের কথা সমাজের সকল লোককে সাধারণভাবে জানাইয়া দেওয়া। বিবাহের পূর্বমুহূর্তে যে যুবক ও যুবতী পরস্পরের জন্য হারাম ছিল, এই দুইজনের নিভৃত নির্জনতার একত্রিত হওয়া ছিল অণনুমোদিত। বিবাহ হইয়া যাওয়ার মুহুর্ত হইতেই পরস্পরের জন্য হালাল হইয়া গেল। অতঃপর দুইজনের নিভৃত নিরালায় একত্রিত হওয়াটার উপর কাহারও আপত্তি থাকে না, কেহ তাহার প্রতি কটাক্ষ পর্যন্ত করিতে পারে না। ইহা সম্ভব সামাজিক সমর্থন ও সাধারণের অনুমতি ও অবগতির কারণে। এই কারণেই বলা হইয়াছে, সামাজিক সমর্থন ও সাধারণের অবগতি ব্যতীত যুবক-যুবতীর নিভৃতে মিল সুস্পষ্ট ব্যাভিচার ছাড়া কিছু নয়। বিবাহ ও ব্যভিচারের মধ্যে এখানেই পার্থক্য। বিবাহ হয় সমাজের সমর্থন অনুমোদনক্রমে এবং সকলকে প্রকাশ্যে জানাইয়া। আর ব্যাভিচার হয় গোপনে, লোকচক্ষুর অন্তরালে, সাধারণ্যের অজ্ঞাতসারে। মুহাম্মদ ইবতে হাতিব আল-জুমহা বর্ণনা করিয়াছেনঃ

 

****************************************

 

রাসূলে করীম (স) বলিয়াছেনঃ হালাল ও হারাম বিবাহের পার্থক্যকারী হইল বাদ্য ও শব্দ।

 

(তিরমিযী, বুখারী, মুসলিম, নিসায়ী, ইবনে মাযাহ)

 

হাদীসের ‘হালাল বিবাহ’ অর্থ বৈধভাবে স্ত্রীগ্রহণ এবং ‘হারাম বিবাহ’ বলিয়া বোঝানো হইয়াছে অবৈধভাবে নারী-পুরুষের দাম্পত্য জীবন যাপন। বাদ্য বাজাইয়া ও শব্দ ধ্বনি সহকারে সাধারণের অবগতির ভিত্তিতে বিবাহের মাধ্যমে নারী পুরুষের যে মিল, তাহা সম্পূর্ণ হালাল। পক্ষান্তরে যে নারী-পুরুষের মিলনে সাধ্যমত গোপণীয়তা রক্ষা করা হয়- লোকেরা জানুক, তাহা কিছুতেই চাওয়া হয় না, পূর্ণ শক্তিতে চেষ্টা করা হয় লোকদের অবগতি হইতে তাহা গোপন রাখার জন্য, তাহাই হারাম, তাহাই ব্যাভিচার। প্রসঙ্গত মনে রাখা আবশ্যক যে, এই সব হাদীসের মূল উদ্দেশ্যে হইল লোকদের জানাইয়া-শুনাইয়া বিবাহ অনুষ্ঠান করা, গোপনে গোপনে নয়। আর প্রচার মাধ্যমে যুগে যুগে পরিবর্তশীল। যে যুগে যে ধরনের প্রচারে উদ্দেশ্য সাধিত হয় সে যুগে তাহাই গ্রহনীয়। সব যুগে একই মাধ্যম গ্রহণের কোন বাধ্যবাধকতা নাই।

 

ইমাম তিরমিযী এই হাদীসটি উদ্ধৃত করিয়া এ সম্পর্কে মন্তব্য করিয়াছেন *********** ভাল হাদীস। ইবনে হাব্বান ও হাকেম এই হাদীসটিকে বলিয়াছেন ‘সহীহ’। দারে কুতনী ও মুসলিমের সূত্রে ইহাকে সহীহ বলিয়াছেন। ইমাম নাসায়ী মুজাহিদ ইবনে মুসা হইতে এবং ইবনে মাজাহ আমর ইবনে নাফের সূত্রে এই হাদীসটি নিজ নিজ গ্রন্হে উদ্ধৃত করিয়াছেন। এই পর্যায়ের আর একটি হাদীস হযরত আয়েশা (রা) হইতে বর্ণিত হইয়াছে। হযরত আয়েশা (রা) বলিয়াছেনঃ

 

****************************************

 

রাসূলে করীম (স) বলিয়াছেনঃ তোমরা এই বিবাহের ঘোষণা ও সাধারণ্যে জানান দাও। বিবাহের মূল্য অনুষ্ঠান মসজিদে কর এবং এই সময় দফ বাদ্য বাজাও।

 

ইবনে মাজাহ হাদীস গ্রন্হেও এই হাদীসটি উদ্ধৃত হইয়াছে। কিন্তু তাহাতে ***************** বাক্যটি নাই। উহার ভাষা এইঃ

 

****************************************

 

এই বিবাহ অনুষ্ঠানের প্রচার কর এবং এই উপলক্ষে বাদ্য বাজাও।

 

এই পর্যায়ে আর একটি বর্ণনা হইলঃ

 

****************************************

 

নবী করীম (স) গোপনে বিবাহ করাকে অপছন্দ করিতেন, যতক্ষণ না বাদ্য বাজানো হইবে।

 

বিবাহের প্রচার করার ও ঘোষণা দেওয়ার অর্থ, প্রথমতঃ বিবাহ হওয়ার প্রমাণ ও সাক্ষী রাখ। লোকদের উপস্থিতিতে বিবাহের ‘ইজাব কবুল’ করাও এবং বিবাহ যে হইল তাহার লিখিত প্রমাণ বা দলীল দস্তাবেজ তৈয়ার কর। রাসূলের এই আদেশটি পালন করা ওয়াজিব। অর্থাৎ ইহার অর্থ, প্রচার ও বিজ্ঞপ্তি কর। এই আদেশ মুস্তাহাব। মসজিদে বিবাহ অনুষ্ঠান করার নির্দেশ দেওয়া হইয়াছে এই কারণে যে, মসজিদে ইসলামী জনতা সদা সমপস্থিত থাকে এবং ইহাতে সমাজে বিবাহের সংবাদ সহজেই সর্বত্র ছড়াইয়া পড়িতে পারে, অনেকটা স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতেই সাধারণ্যে জানাজানি হইয়া যায়। অথবা এই নির্দেশ এজন্যও হইতে পারে যে, মসজিদ অত্যন্ত পবিত্র ও বরকতের স্থান। এখানে বিবাহ অনুষ্ঠিত হইলে উহা পবিত্র পরিমণ্ডলে সমাপ্ত হইবে এবং উহাতেও বরকত আসিবে। মসজিদে বিবাহ (অর্থাৎ আকদ *****) অনুষ্ঠিত হইলে বাদ্যবাজনা নিশ্চয়ই মসজিদে বাজানো যাইবে না। তাহা হইবে মসজিদের বাহিরে- নিজের ঘরে কিংবা অন্য কোন উম্মুক্ত স্থানে।

 

হাদীস সমূহে এই যে দফ (***) বাজাইবার  নির্দেশ  দেওয়া হইয়াছে, ইহা হইতে কি ধরনের বাধ্য বুঝায়? ফিকাহবিদগণ বলিয়াছেনঃ ***************** ‘দফ এমন বাদ্য যাহাতে ধ্বনি আছে কিন্তু ইহার ঝংকার নাই, যাহাতে সুরের মূর্ছনা বাজিয়া উঠে না’। ‘বাদ্য বাজাও’ এই নির্দেশে বাহ্যত সাধারণ এবং নারী-পুরুষ উভয়ই বাদ্য বাজাইবার কাজ করিতে পারে বলিয়া মনে হয়। অনেক ব্যাখ্যাকারী এই মতই দিয়াছেন। কিন্তু হাফেয ইবনে হাজার আল-আসকালানী লিখিয়াছেন, এই মতটি দুর্বল। বলিষ্ঠ হাদীসসমূহ হইতে প্রমাণিত হয় যে, বাদ্য বাজাইবার এই অনুমতি বিবাহের সহিত সংশ্লিষ্ট মহিলাদের জন্য। বাদ্য কেবল মেয়েরাই বাজাইবে। সেখানে পুরুষের উপস্থিতি অবাঞ্ছিত। কেননা সাধারণত নারী-পুরুষের সংমিশ্রণ নিষিদ্ধ। শুধু বাদ্যই নয়, শালীনতাপূর্ণ ও জায়েয ধরনের গীত গান গাওয়ার কাজটিও কেবলমাত্র মেয়েদেরই করণীয়। এই কাজ পুরুষদের জন্য নাজায়েয।

 

ইমাম তিরমিযী ও ইবনে হাজার আসকালানীর মতে তিরমিযী বর্ণিত উপরোক্ত হাদীসটি যয়ীফ। ইমাম তিরমিযী হাদীসটি উদ্ধৃত করিয়া বলিয়াছেনঃ এই হাদীসটির একজন বর্ণনাকারী ইসা ইবনে মায়মুন দুর্বল ব্যক্তি। ইবনে মাজাহ বর্ণিত হাদীসটির সনদে খালিদ ইবনে ইলিয়াস একজন বর্ণনাকারী, সে পরিত্যাক্ত- তাহার বর্ণনা গ্রহণযোগ্য নয়। অবশ্য ইমাম আহমাদ এই হাদীসটি আবদুল্লাহ ইবনুজ জুবাইর হইতে উদ্ধৃত করিয়াছেন। আর ইবনে হাব্বান ও হাকেম উহাকে সহীহ বলিয়াছেন। কিন্তু ইহাতে হাদীসের কথা শুধু এতটুকুঃ *********** ‘বিবাহের ঘোষণা দাও’। তাহাতে ************** ‘এবং উহাতে ‘দফ’ বাজাও’ কথাটুকুর উল্লেখ নাই।

 

(*********************)

 

বিবাহের আনন্দ উৎসব

 

****************************************

 

কুরাজা ইবনে কায়াব ও আবূ মাসউদ আনসারী হইতে বর্ণিত হইয়াছ, তাঁহার দুইজন একসঙ্গে বলিয়াছেনঃ বিবাহ উৎসবে আমাদিগকে খেলা-তামাসা ও আনন্দস্ফুর্তি করার অনুমতি দেওয়া হইয়াছে। (তিরমিযী)

 

হযরত সায়েব ইবনে ইয়াজিদ হইতে বর্ণিত হইয়াছেঃ

 

****************************************

 

রাসূলে করীম (স) কতিপয় মেয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করিলেন। তাহারা গীত গাহিতে ছিল এবং তাহাতে বলিতেছিলঃ ‘তোমরা আমাদিগকে বাঁচাও, আমরা তোমাদিগকে বাঁচাইব’। নবী করীম (স) বলিলেনঃ তোমরা এইরূপ কথা বলিও না। বরং তোমরা বল ‘(আল্লাহ) আমাদিগকে বাঁচাইয়াছেন, তিনি তোমাদিগকেও বাঁচাইবেন’। তখন একজন লোক বলিলঃ ইয়া রাসূল! আপনি কি বিবাহে লোকদিগকে এই সব কাজের অনুমতি দিতেছেন? রাসূলে করীম (স) বলিলেন, হ্যাঁ, নিশ্চয়ই। কেননা, ইহাতো বিবাহ, ব্যাভিচার নয়’।

 

(তিরমিযী)

 

ব্যাখ্যাঃ এই হাদীস দুইটি হইতে নিঃসন্দেহে জানা যাইতেছে যে, বিবাহ কার্যটি উৎসবের ব্যাপার এবং এই উৎসব অনুষ্ঠানে আনন্দ স্ফুর্তি ও গানবাদ্য করাটা শরীয়াতের দৃষ্টিতে নিষিদ্ধ নয়। বরং ইহার অনুমতি রহিয়াছে। তবে শর্ত এই যে, তাহা পুরাপুরিভাবে শালী‌নতাপূর্ণ ও শরীয়াতের আওতার মধ্যে হইতে হইবে। আর দ্বিতীয় কথা এই যে, উহাতে গান বাদ্য করিবে কেবল মাত্র মেয়েরা। কোন মেয়রা। যে কয়টি হাদীস গান-বাদ্য করার ঘটনার উল্লেখ আছে, তাহাতে বলা হইয়াছে যে, মেয়েরাই গান ও গীত গাহিতেছিল। এই পর্যায়ে ব্যবহৃত শব্দ হইল ****** অথবা ****** কিংবা ******* ইহা ******* শব্দ হইতে ছোটত্ব বুঝাইবার জন্য বানানো শব্দ। অর্থাৎ ইহারা ছিল ছোট ছোট মেয়ে। এই সব মেয়ে কাহারা ছিল? বলা হয় *************** ‘ইহারা ছিল আনসার বংশের ছোট ছোট মেয়েরা- দাসী-বান্দীরা নয়’। আবার অন্যরা বলিয়াছেনঃ ************* এই মেয়েরা পূর্ণ বয়স্কা ছিল না। তাহাদিগকে দেখিয়ে যৌনকামনা উত্তেজিত হইতে পারে না। ইহা হইতে স্পষ্ট হইয়া উঠে যে, বিবাহ উৎসবে বর-কনে পক্ষের ছোট ছোট মেয়েরা কিছুটা গান-বাদ্য করিয়অ যদি স্ফুর্তি আনন্দ প্রকাশ করে তাহা হইলে তাহা ইসলামী শরীয়াতের বিপরীত কাজ হইবে না। তবে সমাজের বড়দের সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখা আবশ্যক, যেন উহাতে কোন রূপ অশ্ললতা বা শিরক প্রবেশ করিতে না পারে এবং যে গীত গাওয়া হইতে, তাহাতে কোন অসত্য বা শিরকী কথা-বার্তা শামিল হইতে না পারে।

 

এই পর্যায়ে একটি বিশেষ হাদীস উল্লেখ্য। আমের ইবনে সায়াদ তাবেয়ী বলেন, আমি কুরাইজা ইবনে কায়অব ও আবূ মাসউদ আল-আনসারী (রা) এই সাহাবীদ্বয়ের সহিত এক বিবাহ অনুষ্ঠানে একত্রিত হইলাম। সেখানে কিছু সংখ্যক মেয়ে গীত গাহিতেছিল। আমি ইহা দেখিয়া তাঁহাদিগকে বলিলামঃ

 

****************************************

 

রাসুলে করীম (স)-এর সাহাবীদ্বয়, বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদ্বয়। আপনাদের উপস্থিতিতে এইরূপ করা হইততেছে, (অথচ আপনারা কিছুই বলিতেছেন না)?

 

তখন তাঁহারা দুইজন বলিলেনঃ

 

****************************************

 

তুমি ইচ্ছা হইলে বস ও আমাদের সঙ্গে থাকিয়া শুন। অন্যথায় এখান হইতে চলিয়া যাও। এখানে যে আনন্দ ও হাসিখুশী করা হইতেছে, বিবাহনুষ্ঠানে ইহার করার আমাদিগকে অনুমতি দেওয়া হইয়াছে।

 

ইমাম শাওকানী এই পর্যায়ের হাদীস সমূহ উদ্ধৃত করার পর লিখিয়াছেনঃ

 

****************************************

 

এইসব হাদীস হইতে প্রমাণিত হয় যে, বিবাহ অনুষ্ঠানে দফ একতারা বাদ্য বাজানো এবং উচ্চ শব্দে কোন কথা (গদ্য-পদ্য-গীত) পাঠ করিয়া প্রচার করা সম্পূর্ণ জায়েয।

 

তিনি আরও লিখিয়াছেনঃ

 

****************************************

 

অন্যায়, দুষ্কৃতি, চরিত্রহীনতার উদ্বোধন ও রূপ সৌন্দর্য বর্ণনা সম্বলিত গান এবং মদ্যপানের আসর জমানো বিবাহনুষ্ঠানেও হারাম, যেমন হারাম উহার বাহিরে।(*************)

 

****************************************

 

হযরত আয়েশা (রা) হইতে বর্ণিত হইয়াছে, তিন তাঁহার নিকটাত্মীয় আনসার বংশের একটি মেয়েকে বিবাহ দিয়াছিলেন। এই সময় রাসূলে করীম (স) তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলেনঃ তোমরা কি এই মেয়েটির সঙ্গে এমন কাহাকেও পাঠাইয়াছ, যে গীত গাহিবে, গান করিবে? হযরত আয়েশা (রা) বলেন, ইহার উত্তরে আমি বলিলামঃ না, তখন নবী করীম (স) বলিলেনঃ আনসার বংশের লোকেরা গান-গজল খুব পছন্দ করে। তোমরা যদি কনের সঙ্গে এমন কাহাকেও পাঠাইতে যে বলিতঃ ৱৱ আমরা আসিয়াছি, আমরা আসিয়াছি। আল্লাহ আমাদিগকে বাঁচাইয়া রাখুন, তোমাদিগকেও বাঁচাইয়া রাখুন! (তাহা হইলে খুবই ভাল হইত)

 

(ইবনে মাজাহ)

 

ব্যাখ্যাঃ আল্লাম বদরুদ্দীন আইনীর মতে এই হাদীসটি যায়ীফ। আর ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল বলিয়াছেনঃ ************* ইহা গ্রহণ অযোগ্য হাদীস। কিন্তু ইহা ইবনে মাজাহর বর্ণনার সনদ সম্পর্কে মন্তব্য। হাদীসের মূল প্রতিপাদ্য বা বক্তব্যই ভিন্নতর সনদ সূত্রে বুখারী, বায়হাকী, মুস্তাদরাক হাকেম এবং আহমদ ইবনে হাম্বল কর্তৃক তাঁহাদের নিজ নিজ গ্রন্হে উদ্ধৃত হইয়াছে এবং সে বর্ণনা সমূহের ভাষারও তেমন কোন মৌলিক পার্থক্য নাই। মুসনাদে আহমাদে উদ্ধৃত হাদীসটির ভাষা এইঃ

 

****************************************

 

নবী করীম (স)-এর বেগম হযরত আয়েশা (রা) হইতে বর্ণিত, তিনি বলিয়াছেনঃ আমার কোলে আনসার বংশের একটি মেয়েকে লালন-পালন করিয়অ বড় করিয়াছিলাম। পরে আমি সে মেয়েটিকে বিবাহ দিলাম। তিনি আরও বলিয়াছেন, এই সময় রাসূলে করীম (স) মেয়েটির বিবাহ (বা বাসর রাত্রির) দিনে আমার ঘরে উপস্থিত হইলেন। কিন্তু তিনি কোন খেল-তামাসা-স্ফূতির শব্দ শুনিতে পাইলেন না। তখন নবী করীম (স) বলিলেনঃ হে আয়েশা! আনসারদের এই লোকেরা অমুক অমুক কাজ খুব পছন্দ করে ও ভালবাসে……….।

 

এই হাদীসটি হইতে দুইটি কথা স্পষ্ট জানা গেল। একটি, মেয়েটির সঠিক পরিচয়। আর দ্বিতীয়, বিবাহ উৎসব অনুষ্ঠানে নবী করীম (স) স্বাভাবিকভাবেই কিসের আশা করিতেছিলেন।

 

মেয়েটির পরিচয় এই  জানা গেল যে, সে আনসার বংশের এক ইয়াতীম মেয়ে ছিল। হযরত আয়েশার আভিভাবকত্বে লালিতা পালিতা হইয়াছিল এবং হযরত আয়েশা (রা) নিজ দায়িত্বেই মেয়েটির বিবাহ দিয়াছিলেন।

 

আর দ্বিতীয় কথা এই যে, এই উৎসব উপলক্ষে বেশ আমোদ-স্ফুর্তি অনুষ্ঠিত হইবে। খেলা, তামাসা, গীত ও বাদ্য হইবে। যাহাতে বুঝা যাইবে ও চারিদিকে লোকেরাও টের পাইবে যে, এই বাড়ীতে বিবাহ অনুষ্ঠিত হইতেছে। কিন্তু তিনি হযরত আয়েশার ঘরে উপস্থিত হইয়া তেমন কিছুরই টের পাইলেন না। কোন বাদ্যের শব্দ শুনিতে পাইলেন না। গীত গানের ধ্বনি তাঁহার কর্ণ কুহরে প্রবেশ করিল না। ইহাতে তিনি বিস্মিত হইলেন এবং হযরত আয়েশা (রা) কে প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করিলেন। ইহা হইতে বুঝা যাইতেছে, আমোদ-স্ফূর্তিহীন, খেলা-তামাসা, গীত ও বাদ্য ধ্বনি শূণ্য-নিতান্ত সাদামাটা ধরনের বিবাহ অনুষ্ঠান তিনি পছন্দ করিতে পারেন নাই।

 

এই সব কথা অধিক স্পষ্ট ভাষায় উদ্ধৃত হইয়াছে হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা) বর্ণিত হাদীসে। উহার ভাষা এইঃ

 

****************************************

 

রাসূলে করীম (স) হযরত আয়েশা (রা) কে বলিলেনঃ সেই মেয়েটির শ্বশুরবাড়ী কোন মেয়েকে সঙ্গী করিয়া পাঠাইয়াছ কি? হযরত আয়েশা বলিলেনঃ হ্যাঁ। তখন নবী করীম (স) বলিলেন, তাহার সঙ্গে এমন কাহাকেও কেন পাঠাইলে না, যে তাহাদিগকে গান ও গীত গাহিয়া শুনাইবে?... কেননা আনসাররা এমন লোক যে, তাহাদের মধ্যে মেয়েদের পারস্পরিক গীত বিনিময় করার ব্যাপার প্রচলন করিয়াছে।

 

এই হাদীস হইতে প্রথমত জানা গেল, কনের সঙ্গে একটি স্বতন্ত্র মেয়ে পাঠাইয়অ দেওয়া বাঞ্ছনীয়। এই মেয়েটি কনের সঙ্গে থাকিবে। নতুন বাড়ীতে সম্পূর্ণ ভিন্নতম পরিবেশে আসিয়া কনে লজ্জায় ও অপরিচিতির কারণে সেখানকার লোকদের সাথে কথাবার্তা বলিতে সংকোছ বোধ করিবে। কাজেই তাহার পরিচিত সঙ্গী কোন মেয়ে থাকিলে তাহার সঙ্গে কথা বলিতে বা নিজে কোন প্রয়োজনের কথা জানাইতে পারিবে। ইহার প্রচলন বোধ হয় সকল দেশে ও সকল সমাজে আছে এবং সেকাল হইতে একাল পর্যন্ত ইহা পরিব্যাপ্ত।

 

দ্বিতীয় জানা গেল, কনের শ্বশুর বাড়ী গিয়া গীত ও গান গাহিয়া শুনাইবে এমন একজনও (বা সম্ভব হইলে একাধিক) মেয়ে পাঠানোও আবশ্যক। কেননা এই ভবে গান-গীতের বিনিময় করা- কনের পিতার বাড়ি হইতে যাওয়া মেয়ে এবং স্বামীর বাড়ীর মেয়েরা একের পর এক গান-গীত গাহিয়া বিবাহ বাড়ীটিকে আনন্দ মুখর করিয়া তুলিবে। এইরূপ কাহাকেও পাঠানো হইয়াছে কিনা তাহা নবী করীম (স) হযরত আয়েশার নিকট জানিতে চাহিয়াছেন। শুরাইক বর্ণিত হাদীসে এই কথাটির ভাষা এইরূপঃ

 

****************************************

 

তোমরা কি কনের সঙ্গে এমন একটি মেয়ে পাঠাইয়াছ, যে সেখানে বাদ্য বাজাইবে ও গান-গীত গাইবে?

 

আর হিশাম ইবনে ওরওয়া সূত্রে হযরত আয়েশা (রা) হইতে বর্ণিত এবং বুখারী মুস্তাদরাক হাকেম- এ উদ্ধৃত অপর একটি হাদীসে এই কথাটির ভাষা হইলঃ

 

****************************************

 

হে আয়েশা! তাহাদের সঙ্গে কি কোন আমোদ-স্ফুর্তির আয়োজন নাই? কেননা আনসার বংশের লোকেরা আমোদ ফূর্তি ও খেলা তামাসা খুব পছন্দ করে।

 

গান-গীত গাহিবার জন্য লোক সঙ্গে গিয়াছে কিনা? এই প্রশ্নের কারণ স্বরূপ (প্রত্যেকটি হাদীসের ভাষায়) নবী করীম (স) আনসারদের গান-গীত প্রিয়তার কথাই উল্লেখ করিয়াছেন। ইহা হইতে দুইটি কথা বুঝিতে পারা যায়। একটি হইল, মেয়েটি ছিল আনসার বংশের ইয়াতীম, হযরত আয়েশার অভিভাবকত্বে বিবাহিতা হইয়াছিল সেই আনসার বংশেরই কোন ছেলের সাথে। আর দ্বিতীয় এই যে, আনসার বংশের লোকেরা গান-গতি পছন্দ করে। অতএব বিবাহ উৎসব অনুষ্ঠানে তাহাদের এই রুচি ও পছন্দ রক্ষা করা ও তদনুযায়ী কাজ করা- উহার আয়োজন ব্যবস্থা করা- কনে পক্ষেরও কর্তব্য। অবশ্য তাহা যদি সুস্পষ্ট হারাম না হইয়া তাকে। তৃতীয় যে কথাটি জানা গেল তাহা এই যে, আনসার বংশের প্রাচীন কাল হইতে চলিয়া আসা এই রসমটি ইসলাম পরিপন্হী ছিল না বলিয়া উহাকে চালূ রাখা হইয়াছে।

 

আর এই পর্যায়ের সমস্ত উদ্ধৃত অনুদ্ধৃত হাদীস এবং হাদীসের মূল ভাষার পর্যালোচনা হইতে আরও দুইটি বড় বড় কথা জানা যায়। তাহার একটি হইল, নবী করীম (স)-এর বেগমদের নিজস্ব ইচ্ছা ও ইখতিয়ারে এমন অনেক কাজ হইত, যাহাতে তাঁহাদের পূর্ণ স্বাধীনতা ছিল। রাসূলে করীম (স) নিজে তাহাতে কিছুমাত্র হস্তক্ষেপ বা প্রভাব বিস্তার করিতেন না। আনসার বংশের এই মেয়েটির নবী করীম (স)-এর বেগম হযরত আয়েশার অভিভাবকত্বে লালিতা-পালিতা ও বিবাহিতা হওয়ার সমস্ত ব্যাপারটি আমাদের এই কথার জ্বলন্ত প্রমাণ। এই প্রসঙ্গে নবী করীম (স) হযরত আয়েশা (রা) কে ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে যাহা কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করিয়াছেন ও নীতিগত উপদেশ দিয়াছেন,  তাহা একচেটিয়া কর্তৃত্ব সম্পন্ন গৃহকর্তার মত নয়্ তাহা একজন কল্যাণকামী প্রতিবেশী বা সম্মানিত অতিথি কিংবা সামাজিক সুষ্ঠতা বিধানকারী কোন মুরব্বীর মত।

 

আর দ্বিতীয় কথা এই যে, বিবাহ কাজটি একটি সামাজিক সাংস্কৃতিক, আমোদ-প্রমোদ ও আনন্দ ফূর্তির সমন্বিত গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানকে নিরেট সাদামাটা ও যেন-তেন প্রকারের সম্পন্ন করিতে চেষ্টা করা উচিত নয়, উচিত নয় এই অনুষ্ঠানকে কিছুমাত্র তুচ্ছজ্ঞান করা। কেননা ইসলামী সমাজের প্রথম ইউনিট হইল পরিবার। আর পরিবারের ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয় বিবাহের মাধ্যমে। ইহার সহিত আরও দুইটি কথা আছে। একটি হইল, মানুষের প্রকৃতিতে স্বাভাবিকভাবেই আমোদ-উৎসব প্রিয়তা রহিয়াছে। সমীচীন পরিধি-পরিমন্ডলের মধ্যে ও সুরুচি-শালীনতা রক্ষা করিয়া যতটা সম্ভব, ইহার চরিতার্থতার সুযোগ ও ব্যবস্থা হওয়া বাঞ্ছণীয়। ইসলাম সে সুযোগ দিয়াছে। বস্তুত ইসলাম নিছক শুষ্ক-নিরস আনন্দ শূণ্য কোন ধর্মমাত্র নয় ইহা পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা বিধায় ইহাতে ব্যক্তি ও সমাজের সমস্ত স্বাভাবিক রুচি-প্রবণতার চরিতার্থতার সুষ্ঠু ব্যবস্থা রহিয়াছে। আর দ্বিতীয় কথা এই যে, বিবাহে দুইট ভিন্ন পরিবার জড়িত। এই উভয় পরিবারের উচিত অপর পরিবারের প্রচলিত বৈধ আচার রীতির সহিত আনুকূল্য ও সহযোগিতা করা। কেবল নিজের রুচিটি অপরের বা অপর পরিবারের উপর চাপাইয়া দিতে চেষ্টা করা কোনক্রমেই উচিত হইতে পারে না। আনসার বংশের এই ইয়াতীম মেয়েটির বিবাহকে কেন্দ্র করিয়া নবী করীম (স) এত গুরুত্বসহকারে এই কথাগুলি বলিয়াছিলেন এই কারণেই।

FOR MORE CLICK HERE

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]