বিবাহে উকীল নিয়োগ বিয়ের উকিল কে হতে পারে উকিল বাবার দায়িত্ব

হযরত উকবা ইবনে আমের ( রা) হইতে বর্ণিত হইয়াছে, নবী করীম (স) এক ব্যক্তিকে বলিলেনঃ আমি তোমার সহিত অমুক মেয়ে লোকটির বিবাহ দিব, তুমি কি রাযী আছ? সে বলিলঃ হ্যাঁ। তিনি মেয়ে লোকটিকে বলিলেনঃ আমি তোমাকে অমুক ব্যক্তির নিকট বিবাহ দিব, তুমি রাযী আছ? সে বলিলঃ হ্যাঁ। অতঃপর তিনি একজনের সহিত অপরজনকে বিবাহ দিলেন। পরে সে তাহার সহিত মিলিত হইলঃ কিন্তু তাহার জন্য কোন মহরানা ধার্য করা হয় না, কোন জিনিসও সে তাহাকে দেয় নাই। এই লোকটি হুদাইবিয়ার সন্ধি অভিযানে শরীক ছিল। আর হুদাইবিয়ার সন্ধি অভিযানে শরীক হওয়া লোকদিগকে খায়বারের জমি দেওয়া হইয়াছিল। শেষে লোকটির মৃত্যু মুহূর্ত উপস্থিত হইলে সে বলিলঃ রাসূলে করীম (স) আমার সহিত অমুক মেয়ে লোকটিকে বিবাহ করাইয়া দিয়াছিলেন; কিন্তু আমি তাহার জন্য কোন মহরানা ধার্য করি নাই এবং তাহাকে কিচু দেইও নাই। এখন আমি তোমাদিগকে সাক্ষী বানাইয়া বলিতেছিঃ আমি আমার এই স্ত্রীকে তাহার মহরানা বাবদ আমার খায়বারে প্রাপ্ত অংশের জমি খন্ড দিলাম। পরে স্ত্রী লোকটি তাহার (স্বামীর) অংশটি গ্রহণ করিল ও একলক্ষ্য মুদ্রায় বিক্রয় করিয়া দিল। (আবূ দাউদ)

 

ব্যাখ্যাঃ হাদীসটি ব্যাপক তাৎপর্যবহ। প্রথমত ইহাতে বিবাহের উকীল নিয়োগ বা উকীলের সাহায্যে বিবাহ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা বলা হইয়াছে। দ্বিতীয়তঃ বিবাহকালে মহরানা ধার্য না হইলেও বিবাহ সহীহ হয় এবং স্ত্রীর সহিত একত্রে স্বামী-স্ত্রী হিসাবে জীবন যাপন ও সঙ্গম করা যায়। আর মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত মহরানা আদায় করাও নাজায়েয নয়।

 

উকীল দ্বারা বিবাহ অনুষ্ঠান পর্যায়ে হযরত উম্মে হাবীবা (রা)-এর বিবাহের ব্যাপারটি উল্লেখ্য। তিনিও অন্যান্য সাহাবীদের সঙ্গে হাবশায় হিজরত করিয়া গিয়াছিলেন। সেখানেই নাজাশী তাঁহাকে রাসূলে করীম (স)-এর সহিত বিবাহ দিয়াছিলেন। এই বিবাহে রাসূলে করীম (স)-এর পক্ষ হইতে উকীল হইয়াছিলেন হযরত আমের ইবনে উমাইয়্যাতা আজ-জামারী (রা)। রাসূলে করীম (স) নিজে তাঁহাকে এই জন্য উকীল বানাইয়াছিলেন। আর নাজাশী নিজে রাসূলে করীম (স)- এর পক্ষ হইতে চারশত দীনার মহরানা আদায় করিয়া দিয়াছিলেন।

 

(আবূ দায়ূদ)

 

‘অকালাত’ (*******) শব্দের অর্থ  কাহাকেও কোন কাজের জন্য নিজের পক্ষ হইতে দায়িত্বশীল বানানো। নির্দিষ্ট কোন কাজ সমাধা করার উদ্দেশ্যে একজনকে নিজের স্থলাভিষিক্ত করা। যাহাকে দায়িত্ব দেওয়া হয় বা নিজের স্থলাভিষিক্ত বানানো হয় তাহাকেই ‘উকীল’ বলে। ফিকাহবিদগণ বলিয়াছেন, যে কাজ কাহারও নিজের করা জায়েয সেই কাজের জন্য অপর কাহাকেও দায়িত্বশীল বা উকীল বানানোও সম্পূর্ণ জায়েয। ক্রয়-বিক্রয়, ইজারা, হক দাবি করা, কোন কিছু হাসিল করার জন্য চেষ্টা-প্রচেষ্টা চালানো ইত্যাদি সব কাজই ইহার মধ্যে গণ্য। স্বয়ং নবী করীম (স) তাঁহার কোন কোন সাহাবীর বিবাহ  কার্যে নিজে উকীল হইতেন ও বিবাহ সম্পন্ন করিতেন, তাহা উপরে উদ্ধৃত হাদীস হইতে স্পষ্ট ও অকাট্যরূপে জানা যাইতেছে। উপরোক্ত হাদীস হইতে একথাও জানা যায় যে, একই ব্যক্তি বিবাহের- বর পক্ষ ও কনে পক্ষ- উভয়ের উকীল হইতে পারে। যে কোন পূর্ণ বয়স্ক- বালেগ- সুস্থ বিবেক বুদ্ধিমান স্বাধীন ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে  উকীল বানাইতে পারে। তাহার পক্ষ হইতে এই গুণের কাহাকেও উকীল বানানো যাইতে পারে, নিজে নিজের বা অপর কাহারও উকীল হইতে পারে। যে লোক এই গুণ সম্পন্ন নয়, সে উকীল হইতেও পারে না, বানাইতেও পারে না। যেমন পাগল, নাবালেগ, ক্রীতদাস, দিশাহারা ব্যক্তি।

 

পূর্ণ বয়স্ক ও সুস্থ বিবেকবুদ্দি সম্পন্ন স্ত্রী লোক নিজের পক্ষ হইতে নিজের ইচ্ছামত কাহাকেও উকীল বানাইতে পারে কিনা এই বিষয়ে ফিকাহবিগণ বিভিন্ন মত প্রকাশ করিয়াছেন। এই মত-বিরোধের ভিত্তি হইতেছে এই বিষয়ের মতবিরোধ যে, সে নিজের বিবাহ নিজেই সম্পন্ন করিতে কারে কিনা।

 

ইমাম আবূ হানীফা (র)- এর মতে পুরুষ যেমন উকীল বানাইতে পারে, একজন স্ত্রী লোকও তেমনিই উকীল নিযুক্ত করিতে পারে। কেননা মেয়ে লোক যে কোন চুক্তি করার অধিকার রাখে। এই অধিকার যখন রহিয়াছে, তখন সে নিজের কাজ করার জন্য অপর কাহাকেও দায়িত্বশীল বানাইতে পারে। তাহা সম্পূর্ণ জায়েয। শাফেয়ী মাযহাবের আলেমগণ পিতা ও দাদা এবং তাহাদের ছাড়া অন্যান্য ‘ওলী’ (অভিভাবক) দের মধ্যে স্ত্রীলোকের উকীল বানাইবার ব্যাপারে পার্থক্য করিয়াছেন। তাঁহারা বলিয়াছেন, পিতা ও দাদাকে নূতন করিয়া উকীল বানাইবার প্রয়োজন নাই। কেননা তাহারা স্বাভাবিকভাবেই অভিভাবক ও উকীল। অন্যদের ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে উকীল বানাইতে হইবে। যদি বানানো হয় তবেই সে তাহার পক্ষ হইতে দায়িত্ব পালন করিতে পারিবে।

 

উকীল বানানোর কাজ দুইভাবে হইতে পারেঃ শর্তহীন। শর্তহীন উকীল বানানোর অর্থ, কোন নির্দিষ্ট মেয়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ মহরানা ছাড়াই বিবাহ করাইয়া দেওয়ার জন্য কেহ কাহাকেও উকীল বানাইতে পারে। আবার কেহ নির্দিষ্ট মেয়ে ও নির্দিষ্ট পরিমাণের মহরানার ভিত্তিতে বিবাহ অনুষ্ঠানের জন্য উকীল বানাইতে পারে। ইমাম আবূ হানীফার মতে উকীলকে কোন শর্ত দেওয়া যাইতে পারে না। উকীল যদি তাহার মুয়াক্কিলকে কোন নির্দিষ্ট মেয়ের সহিত বিবাহ দেয়, আর তাহা কুফু ছাড়া ও অরিতিক্ত পরিমাণের মহরানায় হয়, তবে সে বিবাহ শুদ্ধ ও জায়েয হইবে। ইমাম আবূ ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মদ বলিয়াছেনঃ উকীল বানাইবার সময় মেয়েটির সুস্থ, কুফুর সামঞ্জস্য ও সমপরিমাণ মহরানার শর্ত করিয়া দেওয়া আবশ্যক।

 

আর শর্তাধীন উকীল বানানো হইলে উহার বিরুদ্ধতা করা জায়েয নয়। তবে যদি দেওয়া শর্তের নির্দিষ্ট পুরুষের সহিত বিবাহ ঘটাইবার জন্য উকীর বানাইয়া থাকে, তাহা হইলে তাহার পুরাপুরি শর্তাদি পূর্ণ হইলেই বিবাহ সংঘটিত হইবে ও মুয়াক্কিলার জ ন্য তাহা বাধ্যতামূলক হইবে- অন্যথায় নৰয়। আর অনির্দিষ্টভাবে যে কোন পুরুষের সহিত বিবাহ দেওয়াইবার আদেশ করিয়া থাকিলে বিবাহ হইয়া যাওয়ার পর উহার কার্যকারতা তাহার মঞ্জুরীর উপর নির্ভর করিবে।

 

বিবাহের উকীল মুয়াক্কিলের দূত বা প্রস্তাবক মাত্র। কাজেই তাহার সম্পন্ন করা বিবাহের বাধ্যবাধকতা তাহার উপর বর্তিবে না। তাহার নিকট হইতে মহরানারও দাবি করা যাইবে না। স্ত্রী স্বামীর অবাধ্য হইলে তাহারকে অনুগতা বানাইয়া দেওয়ার দায়িত্বও তাহার মাথায় চাপিবে না।

 

উকীল বানানো নীতিগত জায়েয হওয়া সত্ত্বেও বিবাহে কন্যার ক্ষেত্রে অপর একটি ব্যাপার রহিয়াছে। তাহা হইল বিবাহেচ্ছু নারীর উপর ********* বা অভিভাবকত্বের ব্যাপার। এই অভিভাবকত্ব দুই প্রকারের। একটি হইল জোর খাটাইতে সক্ষম অভিভাবকত্ব। যে নারীর নিজের বিবাহ নিজের করা অধিকার বা ক্ষমতা নাই, তাহার উপর অভিভাবকত্ব। ইহা জোর প্রয়োগের অভিভাবকত্ব ***************। যেমন নাবালেগা মেয়ে। তার বালেগা-পূর্বে বিবাহ হয় নাই, কুমারী মেয়ে। তাহার উপর এই অভিভাবকত্ব কাজ করিবে। বালেগা-পূর্ণ বয়স্কা-কুমারী ও অ-কুমারী ‘সাইয়্যেবা’। মেয়ের উপর তাহা কোন কাজ করিবে না। জমহুর ফিকাহবিদগণ এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ একমত যে, পূর্ণ বয়স্কা কুমারী ও অ-কুমারী উভয় ধরনের মেয়র বিবাহের ব্যাপারে তাহার নিজের মতই সর্বাগ্রগণ্য। কোন অভিভাবকই তাহার মতের বিরুদ্ধে তাহাকে বিবাহ দিতে পারিবে না।

 

দ্বিতীয় প্রকারের ****** বা অভিভাবকত্ব ইখতিয়ারী বা ইচ্ছামূলক। ইহা পূর্ণ বয়স্কা ও সুস্থ বিবেক-বুদ্ধি সম্পন্ন মেয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হইবে। এই প্রেক্সিতে ফিকহবিদগণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিয়াছেন যে, অপ্রাপ্তবয়স্কা মেয়ে নিজে সরাসরি বা উকীলের মাধ্যমে নিজের বিবাহ নিজে সম্পন্ন করাইতে পারে না।

 

পূর্ণ বয়স্কা সুস্থ বিবেক বুদ্ধির মেয়ের পিতাই তাহার বিবাহের ইখতিয়ারী অভিভাবক। তাহার পিতা নিজের কন্যার সহিত পরামর্শ করিয়া ও তাহার অনুমতি লইয়া নিজের কন্যাকে বিবাহ দিবে। তবে সে কন্যা নিজেই যেহেতু নিজের বিবাহের প্রকৃত অধিকারী, তাই পিতার অনুমতি ও উপস্থিতিতে যে কোন মুহাররম পুরুষকে উকীল বানাইতে পারে। স্বয়ং নবী করীম (স) কোন কোন সাহাবী মহিলার বিবাহের উকীল হিসাবে কাজ করিয়াছেন। আর বিবাহের উকীল বানানোর ইহাই অন্যতম একটি অকাট্য দলীল। হযরত আব্বাস (রা) তাঁহার স্ত্রীর ভগ্নি উম্মুল মু’মিনীন হযরত মায়মুনা বিতিল হারেস (রা)-কে রাসূলে করীম (স)-এর নিকট বিবাহ দেওয়ার জন্য স্বয়ং মায়মুনার অনুরোধক্রমেই উকীল হইয়াছিলেন। ইহা সপ্তম হিজরী সনের ঘটনা।

FOR MORE CLICK HERE

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]