বিবাহে সাক্ষী গ্রহণ চরিত্র রক্ষার জন্য বিয়ে আল্লাহকে সাক্ষী রেখে বিয়ে বিবাহের সাক্ষী কয়জন

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) হইতে বর্ণিত হইয়াছে, নবী করীম (স) ইরশাদ করিয়াছেনঃ স্বৈরিনী-ব্যভিচারিণীরাই নিজেদের বিবাহ কোনরূপ সাক্ষ্য-প্রমাণ ব্যতীত নিজেরাই সম্পন্ন করিয়া থাকে।

 

(তিরমিযী)

 

ব্যাখ্যাঃ ইমাম তিরমিযী এই হাদীসটি নিজ গ্রন্হে উদ্ধৃত করিয়া এ সম্পর্কে বক্তব্য প্রসঙ্গে লিখিয়াছেন, এই হাদীসটি বহু কয়টি সূত্রে বর্ণিত হইয়াছে। কিন্তু তাহার মধ্যে কেবলমাত্র একটি সূত্রই সহীহ। সায়ীদ ইবনে আরুব প্রমুখ এই হাদীসটি হযরত ইবনে আব্বাস (রা)-এর নিজের উক্তি ****** হিসাবে বর্ণনা করিয়াছেন, রাসূলে করীম (স)-এর কথা (****) হিসাবে নয়। তবে আবদুল আ’লা এই হাদীসটিকে রাসূলে করীমের কথা (********) হিসাবেই বর্ণনা করিয়াছেন এবং ইহাকে গ্রহণযোগ্য হাদীস মনে করিয়াছেন। কেননা আবদুল আ’লা সিক্কাহ বর্ণনাকারী। এতদ্ব্যতীত এই হাদীসটি ভিন্নতর ভাষায় হযরত ইমরান ইবনে হুসাইন, হযরত আনাস, হযরত মুয়ায ও হযরত আবু হুরায়রা (রা) হইতেও বর্ণিত হইয়াছে।

 

হযরত আবূ হুরাইরা (রা) বর্ণিত হাদীসটির ভাষা এইঃ

 

****************************************

 

কোন মেয়ে নিজের বিবাহ নিজেই সম্পন্ন করিবে না। কেননা কেবলমাত্র ব্যভিচারিনীই নিজের বিবাহ নিজে সম্পন্ন করে।

 

এই শেষ বাক্যটির অর্থ, যে মেয়ে নিজের বিবাহ নিজেই সম্পন্ন করে, সেই ব্যাভিচারীনী।

 

ইমাম তিরমিযী আরও লিখিয়াছেন, নবী করীম (স)- এর সাহাবী এবং তাঁহাদের পর তাবেয়ী ও তাবে’তাবেয়ীগণ এই হাদীস অনুযায়ী আমল করিতেন। অর্থাৎ হাদীসটি তাঁহাদের নিকট গ্রহীত হইয়াছিল এবং এই হাদীসটির সত্যতায় তাঁহাদের মনে কোন আপত্তি ছিল না। এই হাদীসটিকে রাসূলে করীমের কথা হিসাবে তাঁহারা মানিয়া লইয়াছিলেন।

 

আর ইমরান ইবনে হুসাইন (রা) বর্ণিত হাদীসের ভাষা এইঃ

 

****************************************

 

অভিভাবক এবং দুইজন বিশ্বস্ত নির্ভরযোগ্য সাক্ষীর উপস্থিতি ছাড়া বিবাহ হইতে পারে না।

 

অর্থাৎ অভিভাবক ও সাক্ষী ছাড়া বিবাহ হইলে তাহা শরীয়াত মুতাবিক বিবাহ হইবে না। আর শরীয়াত মুতাবিক বিবাহ না হইলে নারী-পুরুষের যৌন মিলন ব্যভিচার ছাড়া আর কিছুই নয়।

 

দারে কুতনী এই হাদীসটি উদ্ধৃত করিয়া বলিয়াছেন, আবদুল্লাহ ইবনে মুহাররর ইহার একজন বর্ণনাকারী। কিন্তু সে মতরুক, তাহার বর্ণিত হাদীস পরিত্যাক্ত, অগ্রহণযোগ্য। ইমাম জায়লায়ী বলিয়াছেন, বিবাহে সাক্ষী-প্রমাণের অপরিহায্যতা পর্যায়ে বিভিন্ন শব্দ ও ভাষায় মোট এগারজন সাহাবী হইতে হাদীস বর্ণিত হইয়াছেন।

 

হযরত আয়েশা (রা) বর্ণিত হাদীসটি এইঃ

 

****************************************

 

অভিভাবক ও দুইজন বিশ্বস্ত নির্ভরযোগ্য সুবিচারক সাক্ষী ব্যতীত বিবাহ হয় না। যে বিবাহ ইহা ছাড়া হইবে, তাহা বাতিল।

 

আর যে বিবাহ বাতিল, অশুদ্ধ, তাহার পর নারী-পুরুষের যৌন মিলন সুস্পষ্ট ব্যভিচার।

 

দারে কুতনী উদ্ধৃত অপর একটি হাদীস বর্ণিত হইয়াছে এই ভাষায়ঃ

 

****************************************

 

অভিভাবক, বর এবং দুইজন সাক্ষী- এই মোট চারজন ব্যক্তি বিবাহ অনুষ্ঠানে অপরিহার্য।

 

আল্লামা ইবনে হাজার আল-আসকালানীর মতে এই হাদীসের একজন বর্ণনাকারী- আবূ হাবীব নাফে ইবনে মায়সারাতা- ************ অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তি।

 

ইমাম শাফেয়ী হাসান হইতে ‘মুরসাল’ হিসাবে প্রথমোদ্ধৃত হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন। তিনি বলিয়াছেন, এই হাদীসটির সনদ যদিও বিচ্ছিন্ন (**********), তবুও অধিকাংশ মুহাদ্দিস ও ফিকাহবিদ এই হাদীসটি গ্রহণ করিয়াছেন।

 

হযরত আনাস ও হযরত আবূ হুরায়রা (রা) বর্ণিত আর একটি হাদীসের ভাষা এইরূপঃ

 

****************************************

 

চার ব্যক্তি ছাড়া বিবাহ হয় না। তাহারা হইলঃ প্রস্তাবকারী, অর্থাৎ বিবাহেচ্ছু বর, অভিভাবক এবং দুইজন সাক্ষী।

 

এই হাদীসের সনদে মুগীরা ইবনে শু’বা একজন বর্ণনাকারী। ইমাম বুখারীর মতে সে ************* তাহার বর্ণিত হাদীস অগ্রহণযোগ্য।

 

হাদীসের প্রখ্যাত ব্যাখ্যাতা তাইয়্যেবী বলিয়াছেন, প্রথমোক্ত হাদীসে যে  ********** -এর কথা বলা হইয়াছে, ইহার অর্থ সাক্ষী। ইহা ছাড়া কেবল ব্যভিচারিনীরাই বিবাহ করে বলিয়া ঘোষণা দেওয়া হইয়াছে। এই ধরনের বিবাহ মূলত ব্যীভচারী- ব্যভিচারিণীর যৌন সঙ্গমের জন্য পারস্পরিক চুক্তি বিশেষ, ইহা বিবাহ নয়। ইমাম শাফেয়ী ও ইমাম আবূ হানীফাও এই কথাই বলিয়াছেন। ইহার অর্থ ****** বা অভিভাবকও হইতে পারে। তখন হাদীসের তাৎপর্য হইবে, অভিভাবকের মতে অনুমতি ও উপস্থিতি ব্যতীত যে বিবাহ, তাহা কখনই শুভ, সুন্দর ও শোভন হইতে পারে না। সাক্ষী বা অভিভাবক ব্যতীত ‘বিবাহে’র প্রতি রাসূলে করীম (স)-এর অত্যন্ত কঠোর মনোভাব প্রকাশিত হইয়াছে। এই ধরনের ‘বিবাহ’কে তিনি ‘বিবাহ’ বলিয়া মানিয়া লইতেই প্রস্তুত নহেন। কেননা বাহ্যত উহা জ্বেনা বা ব্যভিচার ছাড়া আর কিছুই নয়।

 

হাদীসে দুইজন বিশ্বস্ত নির্ভরযোগ্য সাক্ষীর উপস্থিতির কথা জোরালোভাবে বলা হইয়াছে। এই সাক্ষীদ্বয় দুইজন পুরুষ হওয়াই বাঞ্ছনীয়। দুইজন পুরুষ পাওয়া না গেলে- বিশেষজ্ঞদের মতে- একজন পুরুষ ও দুইজন মহিলার উপস্থিতিতেও বিবাহ অনুষ্ঠিত হইতে পারে। ইমাম আবূ হানীফা, ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল ও ইসহাক রাহওয়াই এই মত দিয়াছেন। ইমাম শাফেয়ী বলিয়াছেন, সাক্ষীদ্বয়কে অবশ্যই পুরুষ হইতে হইবে। পুরুষ সাক্ষী ছাড়া বিবাহ শুদ্ধ ও সহীহ হয় না।

 

‘হেদায়া’ গ্রন্হে বলা হইয়াছে, বিবাহ অনুষ্ঠানে সাক্ষী জরুরী। কেননা হাদীসে বলা হইয়াছে ****************** ‘একাধিক সাক্ষী ছাড়া বিবাহ হইতে পারে না’। কিন্তু ইমাম মালিক বিবাহে সাক্ষীর শর্ত করেন নাই। শর্ত করিয়াছেন প্রচারের- জানান দেওয়ার। হানাফী-ফিকাহর একটি মতে সাক্ষ্য দেওয়ার বা সাক্ষী হওয়ার ব্যাপারে পুরুষ ও নারীর মধ্যে কোন পার্থক্য নাই। পুরুষ বা মেয়ে যে-কোন দুইজন সাক্ষীর উপস্থিতিতেই বিবাহ হইতে পারে।

 

ইমাম শাওকানী এই পর্যায়ের সবকয়টি হাদীস উদ্ধৃত করার পর লিখিয়াছেনঃ

 

বিবাহে সাক্ষীর প্রয়োজনীয়তা অবশ্যই স্বীকার্য। এই মত যাঁহারা প্রকাশ করিয়াছেন, তাঁহাদের মত-ই যর্থাথ। কেননা এই পর্যায়ে বর্ণিত হাদীস সমূহ পরস্পরের পরিপূরক ও সমর্থক। হাদীসে যে ************** বলা হইয়াছে, ইহার অর্থ ‘বিবাহ শুদ্ধ হয় না’। এই কথাটি স্পষ্ট জানাইয়া দেয়া যে, বিবাহে সাক্ষ্য শর্তরূপে গণ্য। কেননা যাহা না হইলে কোন কিছু শুদ্ধ হয় না তাহা উহার শর্ত মনে করিতে হইবে।

 

এই সাক্ষীর বিশ্বস্ত ও ন্যায়বাদী-সাত্যবাদী হওয়া পর্যায়ে দুইটি মত রহিয়াছে। কাসেমীয়া ও ইমাম শাফেয়ী বলিয়াছেন, ইহার গুরুত্ব অবশ্যই স্বীকৃতব্য। আর জায়দ ইবনে আলী, আহমদ ইবনে ঈসা ও ইমাম আবূ হানীফা ইহার উপর তেমন গুরুত্ব আরোপ করেন নাই। কিন্তু শেষোক্ত মতটি গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা হযতর ইমাম ইবনে হুসাইন ও হযরত আয়েশা (রা) প্রমুখ সাহাবী বর্ণিত হাদীসে বিশ্বস্ত নির্ভরযোগ্য সত্যবাদী সাক্ষীর উপ উপস্থিতিকে জরুরী বলিয়া ঘোষণা করা হইয়াছে।

FOR MORE CLICK HERE

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]