বিবাহে মুবারকবাদ দেওয়া শুভ কামনার দোয়া নব দম্পতির জন্য শুভ কামনা

হযরত আবূ হুরায়রাতা (রা) হইতে বর্ণিত হইয়াছে, কোন লোক যখন বিবাহ করিত, তখন নবী করীম (স) সেই লোকের জন্য আন্তরিকভাবে পূর্ণ আনুকূল্য ও সুন্দর সুখের একত্রিত জীবনের জন্য দোয়া করিতেন এবং বলিতেনঃ আল্লাহ তোমাকে মুবারক করুন, তোমার উপর বরকত নাযিল করুন এবং তোমাদের দুইজনকে প্রকৃত মহা ও বিপুল কল্যাণের মাধ্যমে একত্রিত রাখুন।

 

(মুসনাদে আহমাদ, তিরমিযী, ইবনে খুজাইমা, আবূ দায়ূদ, ইবনে হাব্বান)

 

ব্যাখ্যাঃ বিবাহ মানব জীবনের একটি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ইহা যেমন একজনের জীবনের একটা নবতর অধ্যায়ের সূচনা তেমনি ইহা জীবনের ধারাবাহিকতায় একটি মৌলিক মোড়-ও। জীবনের অবিবাহিত অধ্যায় অতিক্রম করার পর ইহা দ্বিতীয় অধ্যায়ের আরম্ভ। এতদিন পর্যন্ত সে একক নিঃসঙ্গ জীবন যাপন করিতেছিল। বিবাহ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই একক জীবনের অবসান হইয়া যৌথ- স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক সম্মিলিত জীবন সূচিত হইল। এখন আর সে একা নয়, তাহার হৃদয়-মন ও জীবনের প্রতিটি ব্যাপারের সহিত জড়িত হইয়াছে অন্য একটি মেয়ের জীবন। সে মেয়ে ভিন্ন পরিবার ও পরিবেশ হইতে আসিয়াছে। দুই জনেরই একক জীবন আলাদা আলাদা ধারায় চলিয়া আসিয়াছে। প্রায় দুইজনের মধ্যে মন-মেজাজের মিল-মিশ ও পূর্ণ সামঞ্জস্য একান্তই অপরিহার্য। যদি তাহা হয়, তাহা হইলে উভয়েল জীবন শান্তি সুখে মধুময় হইয়া চলিবে। আর যদি কোন একটি দিকেও একবিন্দু ব্যতিক্রম ঘটে, তাহা হইলে চরম দুঃখ লাঞ্ছনা এবং পরিণতিতে দুইটি জীবনের চরম ব্যর্থতা অবশ্যম্ভাবী হইয়া পড়িবে। যাহা কিছুতেই বাঞ্চনীয় হইতে পারে না।

 

এই অবস্থায়-স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক চেষ্টায় ও সতর্কতার যেমন প্রয়োজন রহিয়াছে, তেমনি পরিপার্শ্বের বিশেষ করিয়া মুরব্বী শ্রেণীর লোকের আন্তরিক দোয়া ও শুভেচ্ছারও একান্তই প্রয়োজন।

 

বিশ্বমানবতার প্রকৃত কল্যাণকামী হযতর মুহাম্মদ (স) এই ব্যাপারে যে নীতির প্রবর্তন করিয়াছেন তাহা হইল, বিবাহের আকদ হইয়া গেলেই মজলিসে উপস্থিত সকল লোকদের উচিত দম্পতির জন্য দোয়া করা, বর ও কনেকে মুবারক দেওয়া। আলোচ্য হাদীসে সেই কথাই বলা হইয়াছে।

 

বলা হইয়াছে, কোন লোক বিবাহ করিলে ও তথায় নবী করীম (স) উপস্থিত থাকিলে তাৎক্ষণিকভাবে বরকে তিনি বর-কনের আনুকূল্যপূর্ণ জীবনের জন্য দোয়া করিতেন। আর মুখে বলিতেনঃ আল্লাহ তোমাকে মুবারক-বরকত ও কল্যাণপূর্ণ করুন, আল্লাহ তোমার উপর বরকত বর্ষণ করুন, পরম গভীর কল্যাণে তোমাদেরকে আল্লাহ তা’আলা একত্রিত রাখুন।

 

বস্তুত দোয়ার একটা দিক সরাসরি আল্লাহর নিকট। আর আল্লাহ এক মুসলমান ভাইয়ের কল্যাণের জন্য অপর মুসলিম ভাইয়ের নিঃস্বার্থ দোয়া কবুল করেন। কেননা মানুষের জীবনের সব জটিলতা ও সমস্যার সমাধানকারী তো একমাত্র আল্লাহ। আল্লাহই দিতে পারেন কল্যাণ, সুখ ও শান্তি। আল্লাহই যদি না দেন, তাহা হইলে তাহা পাওয়ার কোন আশাই করা যাইতে পারে না।

 

এই দোয়ার আর একটি দিক শুভেচ্ছা ও সহৃদয়তা। ইহার মূল্য ব্যক্তিগতভাবে বর ও কনের জন্য এবং সামষ্টিকভাবে গোটা সমাজের জন্য অত্যন্ত মূল্যবান।

 

মূলত ইহা ইসলামী সংস্কৃতির অঙ্গীভূত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ইহা কার্যকর হওয়া  একান্তই জরুরী এবং ইহার প্রতি  একবন্দু উপেক্ষা প্রদর্শন কোনক্রমেই বাঞ্ছনীয় হইত পারে না। বনু তামীম-এর এক ব্যক্তি বলিয়াছেন, জাহিলিয়াতের যূগে বিবাহ হইয়া গেলে আমরা বরকে খুব বেশী পুত্র সন্তান হওয়ার জন্য আর্শিবাদ করিতাম। কিন্তু রাসূলে করীম (স) উহার পরিবর্তে এই কথা বলিবার শিক্ষা দিয়াছেন যাহা এই হাদীসে বলা হইয়াছে।

 

(********************)

 

মুয়াত্তা ইমা মালিক গ্রন্হে জায়দ ইবনে আসলাম (রা) বর্ণিত হাদীস উদ্ধৃত হইয়াছে। তাহাতে বলা হইয়াছে, রাসূলে করীম (স) ইরশাদ করিয়াছেনঃ

 

****************************************

 

তোমাদের কেহ যখন (কোন মেয়ে লোক) বিবাহ করিবে, তখন সেই মেয়ে লোকটির কপোল ধারণ করিবে এবং বরকতের জন্য দোয়া করিবে।

 

ইহা রাসূলে করীম (স)-এর একটা নির্দেশ বিশেষ। তবে এ নির্দেশ প্রধানত স্বামীর পক্ষেই পালনীয়। কেননা স্বামীর পক্ষেই স্ত্রীর কপোল স্পর্শ করা সম্ভব এবং তাহা সম্ভব প্রথম ফুলশয্যার রাত্রে। এই হাদীসটির ব্যাখ্যায় শাহ ওয়ালীউল্লাহ দেহলভী লিখিয়াছেনঃ ************************* ইসলামের বিশেষজ্ঞ মনীষীদের দৃষ্টিতে ইহা একটি অতীব উত্তম ও সুনদ্র আচরণ এবং রীতি। নিকটাত্মীয় মহিলারাও কনেকে এইভাবে বরকতের দোয়া করিতে পারে।

 

জাহিলিয়াতের যুগে লোকেরা নব বিবাহিত দম্পতিকে বিবাহের সম্বর্ধনা জানাইয়া বলিতঃ **************** তোমার সুখ হউক, তোমার অনেক পুত্র সন্তন হউক’। কিন্তু নব দম্পতিকে সম্বর্ধনা জানাইবার এই ভাষা ও শব্দ ইসলামে পছন্দ ও গ্রহণ করা হয় নাই। বিশেষতঃ এই ভাষায় ও কথায় কেবলমাত্র পুত্র সন্তান হওয়ার দোয়া করার রীতি রহিয়াছে। ইহাতে কন্যা সন্তানের প্রতি স্বাভাবিকভাবেই ঘৃণা ও বিদ্বেষের ভাবধারা প্রকাশিত হয়। আর ইহাই ছিল জাহিলিয়াতের যুগের বিশেষ ভাবধারা। এই কারণে এই বিদ্বেষাত্মক কথা ইসলাম পরিহার করিয়াছে এবং উহার পরিবর্তে ইসলামী ভাবধারা সম্পন্ন কথা বলার শিক্ষাদান করা হইয়াছে। নবী করীম (স) এই দোয়া করার শিক্ষা দিয়াছেনঃ

 

****************************************

 

আল্লাহ তোমর জন্য এই বিবাহকে বরকত পূর্ণ করুক, তোমার উপর বরকত বর্ষিত হউক এবং আল্লাহ তোমাদের স্বামী-স্ত্রী দুইজনকে পরম ও বিপুল কল্যাণের মধ্যে একত্রিত করিয়া রাখুন।

 

হযরত আয়েশা (রা) বর্ণিত একটি হাদীস হইত নব বিবাহিতা কন্যাকে সম্বর্ধনা জানাইবার ইসলামী পদ্ধতি জানা যায়। হাদীসটি হইলঃ

 

****************************************

 

হযরত আয়েশা (রা) হইতে বর্ণিত, তিনি বলিয়াছেন, নবী করীম (স) আমাকে বিবাহ করিলেন। অতঃপর আমার মা আমার নিকট আসিলেন ও আমাকে নির্দিষ্ট একটি ঘরে লইয়া গেলেন। সেখানে ঘরের মধ্যে বহু সংখ্যক আনসার বংশীয় মহিলা উপস্থিত ছিলেন। তাহারা আমাকে লক্ষ্য করিয়া বলিলেনঃ কল্যাণ ও বরকতের উপর প্রতিষ্ঠিত হউক এবং সুদীর্ঘকালীন কল্যাণ হউক।

 

ইহা হইতে জানা গেল যে, আনসার বংশীয় মহিলারা আরব জাহিলিয়াতে প্রচলিত বিবাহকালীন সংবর্ধনার কথা ও ভাষা পরিহার করিয়া রাসূলে করীম (স) প্রদত্ত শিক্ষা অনুযায়ী বিবাহকালীন সম্বর্ধনার কথা ও ভাষা আয়ত্ত করিয়া লইয়াছিলেন এবং তাহা বলিতেই অভ্যস্ত হইয়াছিলেন।

 

একালে আমাদের সমাজে বিবাহকালীন সম্বর্ধনার ভাষা ও কথা এখনও রাসূলের সুন্নাত অনুযায়ী চালু হয় নাই। ইসলামের পদ্ধতি হিসাবে তাহা চালূ করা মুসলমানদের কর্তব্য। বর-কনেকে সম্বর্ধনা জানাইবার জন্য ইহাপেক্ষা উত্তম ও তাৎপর্যপূর্ণ কথা ও ভাষা-অন্য কিছুই হইতে পারে না।

FOR MORE CLICK HERE

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]