যৌন মিলনের প্রাক্কালীন দোয়া সহবাসের দোয়া ও নিয়ম কানুন সহবাসের আগে ও পরে করণীয়

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) হইতে বর্নিত হইয়াছে, তিনি বলিয়াছেন, হযরত রাসূলে করীম (স) বলিয়াছেনঃ তোমাদের কেহ যখন তাহার স্ত্রীর নিকট যৌন মিলনের উদ্দেশ্যে আসে, তখন যে যেন বলেঃ হে আমাদের আল্লাহ, শয়তানকে আমাদের হইতে দূরে সরাইয়া দাও এবং তুমি আমাদেরকে যে সন্তান রিযিক হিসাবে দান করিবে, তাহার হইতেও শয়তানকে দূরে সরাইয়া রাখ। এই দোয়ার পর যৌন মিলনের ফলে আল্লাহ তা’আলা যদি কোন সন্তান দেন, তাহা হইলে শয়তান তাহার কোন ক্ষতি করিতে পারিবে না।

 

(তিরমিযী, বুখারী, মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ)

 

ব্যাখ্যাঃ হাদীসটির প্রথম বাক্যের অংশ ************ অর্থঃ ********** ‘যখন স্ত্রী সঙ্গম করার সংকল্প করিবে ও সেজন্য প্রস্তুত হইবে’। অর্থাৎ উহা শুরু করার পূর্বে রাসূলের শিখানো এই দোয়াটি পাঠ করিবে। মুসলিম ও আবূ দায়ূদের বর্ণনার ভাষা হইতেছে ******* ‘যখন স্ত্রীর নিকট সঙ্গম উদ্দেশ্যে যাইবার ইচ্ছা করিবে’। এই বাক্যটি এই পর্যায়ে বর্ণিত অন্যান্য হাদীসের ব্যাখ্যাকারী। আর যে ব্যাখ্যা এই যে, সঙ্গম কার্য করার সময় নয়, উহার ইচ্ছা ও সংকল্প গ্রহণের সময় এই দোয়া পড়িতে হইবে। যেমন কুরআন মজীদের আয়াত **************** ‘তুমি যখন কুরআন পড় তখন আয়ূযুবিল্লাহ বল’- ইহার অর্থ হইল, যখন তুমি কুরআন পড়ার ইচ্চা করিবে বা পড়িতে শুরু করিবে, তখন শুরু করার পূর্বে আউযুবিল্লাহ বলিবে। হাদীসের এই কথাটিও তেমনি।

 

হাদীসের বক্তব্য হইল, স্ত্রী সঙ্গম শুরু করার পূর্বে এই দোয়া পড়িলে সঙ্গমের পর যে সন্তান হইবে, শয়তান তাহার কোন ক্ষতি করিতে পারিবে না। এই কথা বলার বিশেষ কারণ এই যে, সন্তান জন্ম হওয়ার পর হইতেই শয়তান তাহার উপর প্রভাব বিস্তার করিতে, তাহাকে নিজেকে অনুসারী ও ‘চেলা’ বানাইবার জন্য চেষ্টা শুরু করিয়া দেয়। কিন্তু এই সন্তানের জন্ম হইয়াছে যে স্বামী-স্ত্রীর যৌন সঙ্গমের ফলে তাহারা যদি উহার পূর্বে এই দোয়া পাঠ করিয়া থাকে, তাহা হইলে এই সন্তানের উপর শয়তানের কোন প্রভাব পড়িবে না। সে নেক আমলকারী হইতে পারিবে তাহার নেক আমল করার পথে শয়তান বাধা দান করিতে পারিবে না। মুসলিম শরীফ ও মুসনাদে আহমাদের উদ্ধৃত হাদীসে এখানকার ভাষা হইলঃ ********* শয়তান তাহার উপর প্রভাব প্রতিপত্তি প্রতিষ্ঠিত করিতে পারিবে না।

 

আর বুখারী ও মুসলিমের বর্ণনার ভাষা হইলঃ ********** ‘শয়তান কক্ষণ-ই তাহার ক্ষতি করিতে পারিবে না’। ‘শয়তান তাহার কোন ক্ষতি করিতে পারিবে না’ এই কথার প্রকৃত তাৎপর্য কি? ক্ষতি বলিতে কোন ধরনের ক্ষতি বুঝানো হইয়াছে? ইহা কি সাধারণ অর্থে? না ইহা বিশেষ কোন ক্ষতির প্রতি ইংতি করা হইয়াছে? এই পর্যায়ে হাদীস ব্যখ্যাকারীগণ বিভিন্ন কথা বলিয়াছেন। সেই সব কিছু মিলাইয়া একত্র করিয়া বলিলে বলা যায়, এইরূপ সঙ্গম কার্যের ফলে জন্ম নেওয়া সন্তানের কোনরূপ ক্ষতিই শয়তান করিতে পারিবে না। না দৈহিক দিক দিয়া, না মানসিক দিক দিয়া, না দ্বীন পালনের দিক দিয়া। অতএব সব পিতা-মাতা- অর্থাৎ সব স্বামী-স্ত্রীরই ইহা কাম্য হওয়া উচিত।

 

এই দোয়া পাঠ করার পর অনুষ্ঠিত যৌন মিলনের ফলে যে সন্তান হয়, সে সেই লোকদের মধ্যে গণ্য হইয়া যায় যাহাদের সম্পর্কে স্বয়ং আল্লাহ তা’আলা শয়তাদের চ্যালেঞ্জের জওয়াবে বলিয়াছেনঃ

 

****************************************

 

আমার বান্দাহ যাহারা, তাহাদের উপর- হে শয়তান তোমার কোন কর্তৃত্ব চলিবে না।

 

এই কথার সমর্থন পাওয়া যায় অপর একটি বর্ণনা হইতে। বর্ণনাটি হাসান হইতে বর্ণিত। উহাতে বলা হইয়াছেঃ

 

****************************************

 

এই দোয়া পড়ার অনুষ্ঠিত সঙ্গম কর্যের ফলে স্ত্রী যদি গর্ভবতী হয়, তাহা হইলে নেককার সন্তান পাওয়ার আশা করা যায়।

 

এই বর্ণনাটি ‘মুরসাল’। কেননা হাসান তো তাবেয়ী। তাহা সত্ত্বেও- ইহা নবী করীম (স)-এর কথা নয়-কেহ নিজে চিন্তা করিয়া বলিয়াছেন, এমন কথা কনে করার কোনই কারণ নাই।

 

কিন্তু এই দোয়া পাঠের পর ভূমিষ্ঠ সন্তান মা’সুম বা নির্দোষ- নিষ্পাপ হইবে, এমন কথা কিন্তু কোন হাদীসেই বলা হয় নাই, কেননা ‘মা’সুম’ হওয়ার গুণ কেবল মাত্র নবী-রাসূলগণের। ইহার অধিকার আর কাহারও নাই। নবী-রাসূলগণ মহান আল্লাহর পূর্ণ সংরক্ষণ পাইয়া থাকেন। এই কারণে তাঁহারা মানুষ হইয়াও সর্বপ্রকারের গুনাহ হইতে রক্ষা পাইয়া থাকেন। কিন্তু মানুষ- সে যত বড় ওলী-দরবেশ-পীর হউক না কেন, তাহা নয়।

 

ইহা হইতে আরও স্পষ্টভাবে জানা গেল যে, সকল কাজের শুরুতেই যেমন ‘বিসমিল্লাহ’ বলিতে হইবে, তেমনি স্ত্রী সঙ্গম হওয়ার পূর্বেও ইহা বলা মুস্তাহাব।

 

(*****************)

 

হাদীসে সন্তানকে রিযিক বলা হইয়াছে। বস্তুত আল্লাহ মানুষকে যাহা কিছু দিয়াছেন, তাহা সবই তাঁহার দেওয়া রিযিক। মানুষের যাহা কিছুই আছে, তাহা সবই আল্লাহর দেওয়া এবং তাহা সবই আল্লাহর দেওয়া রিযিক ছাড়া আর কিছুই নয়। তাই সন্তানও আল্লাহর দেওয়া রিযিক মাত্র। এই রিযিক লাভের উদ্দেশ্য লইয়াই স্ত্রীসঙ্গমের প্রবৃত্ত হইতে হইবে। কুরআন মজীদে স্ত্রীকে স্বামীর জন্য ক্ষেত বিশেষ বলা হইয়াছে। চাষী যেমন ফসল ফলাইবার ও ফসল পাওয়ার উদ্দেশ্য লইয়াই জমি চায় করে, ফসল পাওয়া ছাড়া জমি চাষের মূলে তাহার আর কোন উদ্দেশ্যেই থাকে না। চাষ করিবে, হাড় ভাঙা পরিশ্রম করিবে, অথচ ক্ষেত্রে ফসল ফলিবে না, চাষী তাহা কল্পনাও করিতে পারে না। স্বামীরও ঠিক সেই উদ্দেশ্য লইয়াই অর্থাৎ সন্তান পাওয়ার উদ্দেশ্য লইয়া সঙ্গমে লিপ্ত হওয়া উচিত এবং সন্তান পাওয়া, গেলে তাহাকে আল্লার রিযিক হিসাবেই সাদরে গ্রহণ করা উচিত। এই সন্তানের প্রতি কোনরূপ অনীহা উপেক্ষা বা অসন্তুষ্টি আল্লাহর রিযিক দানেরই অবমাননা এবং তাহা আল্লাহ কখনই বরদাশত করেন না।

FOR MORE CLICK HERE

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]