ঋতুবতী স্ত্রীর সহিত সঙ্গম মাসিকের কতদিন পর সহবাস করা যায়েজ মাসিকের সময় সীমা মাসিকের সময় সহবাস ইসলাম কি বলে

হযরত আনাস (রা) হইতে বর্ণিত হইয়াছে, তিনি বলিয়াছেন? ইয়াহুদী সমাজে মেয়েলোক যখন ঋতুবতী হয়, তখন তাহারা তাহাদর সহিত একত্রে খাওয়া-দাওয়াও করে না এবং যৌন সঙ্গমও করে না। ইহা জানিয়া নবী করীম (স)-এর সাহাবীগণ এই বিষয়ে তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন। এই সময় কুরআন মজীদের এই আয়াতটি নাযিল হয়ঃ ‘লোকেরা তোমাকে ঋতুবতী স্ত্রীলোকদের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করে। তুমি বল, ইহা একটা রোগ বিশেষ। অতএব তোমরা ঋতুবতী স্ত্রী হইতে বিচ্ছন্ন হইয়া থাক। নবী করীম (স) নিজে এই প্রসঙ্গে বলিলেনঃ শুধু যৌনসঙ্গম ছাড়া অন্যসব কিছুই করিতে পার।

 

(মুসলিম)

 

ব্যাখ্যাঃ স্ত্রীর ঋতু বা হায়য হইলে তাহার সহিত কিরূপ আচরণ কতটা গ্রহণ করা যাইতে পারে, সে সম্পর্কে এই হাদীসে স্পষ্ট বলা হইয়াছে। প্রথম কথা, ঋতুবতী স্ত্রীর সহিত সঙ্গম করা যাইবে না। ইহা হাদীসের কথা নয়। ইহা কুরআনের স্পষ্ট ঘোষণায় বলিয়া দেওয়া হইয়াছে। কুরআনের আয়াতে ঋতুবতী স্ত্রী সম্পর্কে বলা হইয়াছে ******************* ‘ঋতু অবস্থায় পতিত স্ত্রীকে বর্জন বা পরিহার কর’। কিন্তু পরিহার বা বর্জনের ধরন কি এবং সীমা কতদূর, তাহা কুরআন হইতে জানা যায় না- কুরআনে তাহা বলা হয় নাই। তাহা হাদীস হইতে জানা যায়। এই কারণে আলোচ্য হাদীসটি কুরআনের এ আয়াতটির যথার্থ ব্যাখ্যাও। কুরআনের সঠিক অর্ত হাদীসের সাহায্য ব্যতীত যথাযথভাবে বোঝা যায় না, আলোচ্য হাদীসটি এই কথার অকাট্য দলীলও।

 

তদানীন্তন আরবের ইয়াহুদী সমাজের রীতি এই ছিল যে, তাহারা ঋতুবতী স্ত্রীকে সম্পূর্ণ বয়কট করিত। তাহাদের সহিত একত্রে খাওয়া-দাওয়া, উঠা-বসা ও একসঙ্গে এক শয্যায় শয়ন করা পর্যন্ত তাহারা বাদ দিয়া চলিত। শুধু তাহাই নয়, আবূ দায়ূদের বর্ণনায় বলা হইয়াছেঃ **************** ‘ঋতুবতী স্ত্রীকে তাহারা ঘর হইতে বহিষ্কৃত করিত’। এ বিষয়ে মুসলমানদের করণীয় কি, সাহাবায়ে কিরাম তাহাই জানিতে চাহিয়াছিলেন রাসূলে করীম (স)-এর নিকট। ইহার প্রথম জবাব কুরআন মজীদের আয়াত। আয়াতটিতে প্রথমে ঋতু বা হায়যকে রোগ বা কষ্ট বা আবর্জনা ময়লা পংকিলতা বলিয়া অভিহিত করা হইয়াছে এবং পরে এই ঋতুবতী মেয়েলোক সম্পর্কে বলা হইয়াছে, ************** অর্থাৎ **** কর। এখানে এই ****অর্থ দুই মিলিত জিনিসের সাময়িক ও ক্ষণস্থায়ী বিচ্ছিন্নতা। কিন্তু এই বিচ্ছিন্নতা কি ইয়াহুদীদের মত করিতে হইবে? ইহার জবাব কুরআনে নাই। আলোচ্য হাদীসটিতে ইহারাই জবাবে নবী করীম (স) বলিয়াছেনঃ ************ ‘যৌন সঙ্গম ছাড়া আর সব কিছুই কর’।

 

আবূ দায়ূদের বর্ণনার ভাষা এইঃ

 

****************************************

 

রাসূলে করীম (স) বলিলেন, তোমরা তাহাদের সহিত ঘরে একত্র বসবাস, কর, মেলা-মেশা কর, ছোয়া ছুয়ি কর, ধরাধরি কর, কোলাকূলি কর এবং যৌন সঙ্গম ছাড়া আর সব কিছুই কর।

 

এই সব কিছুরই ব্যাখ্যা পাওয়া যায় এই হাদীসটিরই অপর এক উদ্ধৃতিতে। তাহাতে বলা হইয়াছেঃ

 

রাসূলে করীম (স) সাহাবায়ে কিরাম (রা) কে নির্দেশ দিলেন যে, ঋতুবতী স্ত্রীদের সহিত একত্রে পানাহার করিবে, তাহাদের সহিত একই ঘরে বসবাস করিবে এবং যৌন সঙ্গম ছাড়া তাহাদের সহিত আর সব কিছুই করিবে।

 

হযরত আয়েশা (রা) বলিয়াছেনঃ

 

****************************************

 

আমি হায়য অবস্থায় থাকিলেও নবী করীম (স) আমার সঙ্গে একই শয্যায় শয়ন করিতেন। আমাদের দুইজনের মাঝে শুধু একখানি কাপড়েরই ব্যবধান থাকিত।

 

হযরত আয়েশা (রা) বর্ণিত অপর একটি হাদীসে বলা হইয়াছেঃ

 

****************************************

 

রাসূলে করীম (স)-এর বেগমগণের মধ্যে কেহ ঋতুবতী হইলে তিনি তাঁহাকে হায়যের স্থানে শক্ত করিয়া কাপড় বাঁধিতে এবং তাহাকে লইয়া একত্রে শয়ন করিতেন।

 

হাদীসের শব্দ ***** হইতে বোঝা যায় যে, এই অবস্থায় স্ত্রীর সহিত কেবলমাত্র সঙ্গম ছাড়া আর সব কিছুই করা যাইতে পারে।

 

হারেস কন্যা হযরত মায়মুনা ও উমর ফারুকক কন্যা হযরত হাফসা (রা)- রাসূলের দুই বেগম হযরত ইবনে আব্বাসের মুক্তি দেওয়া দাসী বদরাকে হযরত ইবনে আব্বাসের স্ত্রীর নিকট কোন কাজের জন্য পাঠইয়াছিলেন। সে আসিয়া দেখিল, তাহার বিছানা হযরত ইবনে আব্বাসের বিছানা হইতে ভিন্ন ও স্বতন্ত্র রাখা হইয়াছে। জিজ্ঞাসা করিলে হযতর ইবনে আব্বাসের বেগম বলিলেনঃ *********** ‘আমি ঋতুবতী হইলে আমার বিছানা আমি আলাদা করিয়া লই ও স্বতন্ত্র শয্যায় শয়ন করি’। এই কথা যখন রাসূলের বেগমদ্বয় জানিতে পারিলেন, তখন তিনি হযরত ইবনে আব্বাসের নিকট বলিয়া পাঠাইলেনঃ

 

****************************************

 

‘তোমার মা’ [১] বলিতেছেন, তুমি কি রাসূলে করীম (স)-এর সুন্নাত পালন হইতে বিমুক হইয়া গিয়াছ? রাসূলে করীম (স)-এর নিয়ম তো এই ছিল যে, তাঁহার বেগমদের মধ্যে কেহ ঋতুবতী হইলে তিনি তাঁহার সহিত একত্রে শয়ন করিতেন এবং এই দুইজনের মধ্যে একখানা কাপড় ছাড়া পার্থক্য বা বিভেদকারী আর কিছুই থাকিত না। অবশ্য পরণের সেই কাপড় কখনও হাঁটুর উপর উঠিত না।

 

রাসূলে করীম (স) এক প্রশ্নের জবাবে বলিয়াছিলেনঃ

 

****************************************

 

ঋতুবতী স্ত্রী তাহার পরনের কাপড় শক্ত করিয়া বাঁধিয়া লইবে। অতঃপর উপর দিয়া যাহা কিচু করিতে চায় করিতে পারে।

 

ঋতুবতী স্ত্রীর প্রতি ইয়াহুদীদের আচরণ অমানবিক। আর খৃস্টানদের আচরণ সীমালংঘনকারী- তাহারা যৌন সঙ্গম পর্যন্ত করিত এই অবস্থায়ও। কিন্তু ইসলাম এই সীমালংঘনমূলক আচরণের মাঝে মধ্যম নীতি অবলম্বন করিয়াছে।

 

এই সবের ভিত্তিতে জমহুর ফিকাহবিদদের মত হইলঃ

 

****************************************

 

কাপড়র উপর দিয়া যত পার সুখ সম্ভোগ ও আনন্দ লাভ কর। কাপড়ের নীচে যাইবে না।

 

ইমাম আবূ হানীফা, মালিক ও শাফেয়ীও এই মত প্রকাশ করিয়াছেন।

FOR MORE CLICK HERE

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]