হযরত আবূ সায়ীদ খুদরী (রা) হইতে বর্ণিত হইয়াছে, হযরত রাসূলে করীম (স) ইরশাদ করিয়াছেনঃ আল্লাহর নিকট কিয়ামতের দিন মান-মর্যাদার দিক দিয়া নিকৃষ্টতম ব্যক্তি হইবে সেই পুরুষ, যে স্ত্রীর সহিত মিলন ও সঙ্গম করে এবং স্ত্রী স্বামীর নিকট হইতে সঙ্গম সুখ উপভোগ করে। অতঃপর ইহার গোপন কথ প্রকাশ ও প্রচার করিয়া দেয়।
(মুসনাদে আহমাদ, মুসলিম)
ব্যাখ্যাঃ স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক সম্পর্ক অতীব গোপনীয় ব্যাপার। ইহা প্রকাশ্যে লোক চক্ষুর সম্মুখে কখনও সাধিত হইতে পারে না, হওয়া শোভন ও বাঞ্ছনীয় নয়। শুধু তাহাই নয়, সম্ভবত লোকদের সম্মুখে এই কার্য সাধিত হইলে তাহাতে বাঞ্ছিত চূড়ান্ত সুখ লাভ করাও সম্ভবপর নয়। তাই ইহা সম্পূর্ণ গোপনে সাধিত হইতে হইবে। শুধা তাহই নয়। ইহা সাধিত হইতে হইবে এমনভাবে, যাহাতে অন্য কেহ টেরও না পায়। বস্তুত স্বামী-স্ত্রী মিলনের সমস্ত মাধুর্য ও পবিত্রতা সম্পূর্ণরূপে এই গোপনীয়তায়ই নিহিত।
কিন্তু স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক লীলা খেলা গোপনে সাধিত হওয়ার পর স্বামী বা স্ত্রী যদি উহার তত্ত্ব রহস্য অন্যদের নিকট প্রকাশ করিয়া দেয়, তাহা হইলে তাহার মত নির্লজ্জতা- অতএব নিতান্ত পশু শোভন কাজ আর কিছুই হইতে পারে না। কেননা তাহাতে সেই গোপনীয়তার সমস্ত পবিত্রতা ও মাধুর্য ইহাতে নিঃশেষ হইয়া যায়।
এই পর্যায়ে হযরত আবূ হুরায়রা (রা) হইতে বর্ণিত হইয়াছেঃ
****************************************
রাসূলে করীম (স) একদা সাহাবায়ে কিরামের প্রতি মুখ ফিরাইয়া বসিলেন এবং বলিলেনঃ তোমরা সকলে নিজ নিজ আসনে বসিয়া থাক। তোমাদের মধ্যে কি এমন কোন পুরুষ আছে, যে তাহার স্ত্রীর নিকট আসে, ঘরের দুয়ার বন্ধ করিয়া দেয় এবং পর্দা ঝুলাইয়া দেয়--- অতঃপর বাহির হইয়া বলিতে শুরু করে, ‘আমি আমার স্ত্রীর সহিত এই এই করিয়াছি’। ‘আমি আমার স্ত্রীর সহিত এই—এই করিয়াছি? সাহাবীগণ এই প্রশ্নে সম্পূর্ণ চূপ করিয়া থাকিলেন। ইহার পর নবী করীম (স) মহিলাদের দিকে আগাইয়া গেলেন এবং জিজ্ঞাসা করিলেনঃ তোমাদের মধ্যে এমন কেহ আছে কি, যে এই রূপ বলিয়া বেড়ায়? তখন একজন যুবতদী তাহার এক হাঁটুর উপর ভয় দিয়া উচ্চ হইয়া বসিল, যেন রাসূলে করীম (স) তাহাকে দেখিতে পান ও তাহার কথা শুনিতে পারেন। অতঃপর সে বলিলঃ আল্লাহর কছম, এই পুরুষেরা এইরূপ নিশ্চয়ই বলে এবং এই মেয়েরও এইরূপ বলিয়া বেড়ায়। তখন নবী করীম (স) বলিলেনঃ এই রূপ যাহারা করে তাহাদিগকে কিসের সহিত দৃষ্টান্ত দেওয়া হইয়াছে তাহা কি তোমরা জান? এইরূ কাজ যে যে করে তাহাকে পুরুষ শয়তান ও নারী শয়তানী বলিয়া দৃষ্টান্ত দেওয়া হইয়াছে। যাহাদের একজন অপর জ নের সহিত রাজপথে মিলিত হয় ও নিজের যৌন প্রয়োজন স্বীয় সঙ্গী হইতে পুরণ করিয়া লয়। আর লোকেরা সব উহার দিকে চক্ষু মেলিয়া তাকাইয়া থাকে ও কাজ হইতে দেখিতে পারে।
(মুসনাদে আহমাদ, আবূ দায়ূদ, নাসায়ী, তিরমিযী)
ব্যাখ্যাঃ এই হাদীসটিতে পুরুষ শয়তান ও নারী শয়তানের প্রকাশ্যে রাজপথে যৌন প্রয়োজন পূরণ করার যে দৃষ্টান্তটি রাসূলে করীম (স) দিয়াছেন তাহা সেই স্বামী স্ত্রীর দৃষ্টান্ত যাহারা গোপনে যৌন প্রয়োজন পূরণের পর অনুষ্ঠিত লীলা খেলার কথা লোকদের নিকট বলিয়া বেড়ায়। এই হাদীসটিতে যে মজলিসের উল্লেখ রহিয়াছে, সম্ভবত তাহা কোন নামাযের পরবর্তী মজলিস। রাসূলের যুগে মেয়ে পুরুষ উভয়ই মসজিদে নামাযের জামায়াতে শরীক হইতেন যদিও তাহাদের স্থান হইত ভিন্ন ভিন্ন। উভয় শ্রেণীর লোকদের নিকট জিজ্ঞাসা করার পর রাসূলে করীম (স) যে কথা গুলি বলিয়াছেন, তাহা উভয়ই শুনতে পাইতেছিল। কেননা ইহাদের মধ্যে দূরত্ব খুব বেশী ছিল না।
শেষোক্ত হাদীস হইতে ইহাও জানা যায় যে, স্বামী-স্ত্রীর মিলন হইবার সময় ঘরের দ্বার ভিতর হইতে বন্ধ করিয়া লওয়া উচিত, যেন হঠাৎ করিয়া কেহ ঘরে প্রবেশ করিয়া না বসে। সেই সঙ্গে ভিতর হইতে পর্দাও ঝুলাইয়া দেওয়া উচিত। যেন বাহির হইতে কেহ চেষ্টা করিলেও যৌন মিলন কার্য প্রত্যক্ষ করিতে না পারে।
এই দুইটি হাদীস হইতেই অকাট্য স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, স্বামী স্ত্রীর মধ্যে যৌন মিলন সক্রান্ত ঘটনাবলীর বিবরণ অন্য লোকদের নিকট বর্ণনা করা ও উহার প্রচার করা ঠিক তাহাদের সম্মুখে প্রকাশ্যভাবে যৌন কর্ম করার মত ব্যাপার এবং এই কাজ যাহারা করে, তাহারা নিকৃষ্টতম লোক। বস্তুত এইরূপ হীন জঘন্য ও বীভৎস কাজ আর কিছু হইতে পারে না। ইহা নিতান্তই শয়তানের মত নির্লজ্জ কাজ। এই কাজটি যদি খুব ছোট মানের খারাপ হইত, তাহা হইলে এই কাজ যাহারা করে তাহাদিগকে রাসূলে করীম (স) নিশ্চয়ই ****** ‘নিকৃষ্টতম’ বলিয়া অভিহিত করিতেন না।লোকদের দেখাইয়া যৌন কার্য সমাধা করাও অনুরূপভানে নিকৃষ্টতম জঘন্যতম কাজ। ইহার হারাম হওয়ার একবিন্দু সন্দেহ নাই।
হযরত আবূ সায়ীদ বর্ণিত প্রথমোক্ত হাদীসটিতে কেবল পুরুষ বা স্বামীকেই নিকৃষ্টতম লোক বলা হইয়াছে। স্ত্রীলোক সম্পর্কে উহাতে কিছুই বলা হয় নাই। ইহার কারণ এই যে, এই ধরনের কাজ প্রধানত পুরুষদের দ্বারাই সংঘটিত হইয়া থাকে। আর স্ত্রী লোকদের তুলনায় পুরুষরা যে একটু বেশী নির্লজ্জ, তাহা তো সকলেরই জানা। কেহ কেহ বলিয়াছেন, স্ত্রী সঙ্গম সুখের ব্যাপার সমূহ- যাহা স্বামীতে-স্ত্রীতে ঘটিয়া থাকে তাহা- স্ত্রী যেরূপ আচরণ করে, যে সব কথা বলে ও কাজ করে, তাহার যে অবস্থা দেখা দয়ে সেই সবের বর্ণনা দেওয়াই হারাম। শুধু স্ত্রী সঙ্গমের কথা উল্লেখ করিলে তাহা হারাম হইবে না। তবে তাহা মকরূহ অবশ্যই হইবে। কেননা ইহা মানুষের শালীনতা বিরোধী। ইহার বর্ণনা অর্থহীনও বটে। অর্থহীন নিস্ফল কথা বলা পরিহার করা ইসলামী সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য। নবী করীম (স) বলিয়াছেনঃ
****************************************
যে লোক আল্লাহর প্রতি ও পরকালের প্রতি ঈমান রাখে, তাহার উচিত ভাল ও কল্যাণময় কথা বলা। আর তাহা না বলিলে বা বলিতে না পারিলে তাহার চুপ করিয়া থাকা উচিত।
তবে ইহার উল্লেক যদি প্রয়োজনীয় হইয়া পড়ে কোন কারণে, তাহা হইলে তাহার উল্লেক করায় কোন দোষ নাই। যেমন স্ত্রী যদি স্বামীর যৌন সঙ্গমকে অস্বীকার করে বা বলে যে, সে ইহাতে অক্ষম, ইত্যাদি কারণে ইহার উল্লেখের প্রয়োজন দেখা দিতে পারে। স্বয়ং নবী করীম (স)-ও বলিয়াছেনঃ *********** ‘হ্যাঁ, আমি নিজেই এই কাজ করি, আর সেও করে। তিনি হযতর আবূ তালহাকে জিজ্ঞাসা করিয়াছিলেনঃ ****** ‘তুমি কি রাত্রিবেলা স্ত্রীর সহিত যৌন মিলন করিয়াছ’। ইত্যাদি। তবে নিছক উল্লেখ এককথা, আর উহার বিস্তারিত ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ বিবরণ দেওয়া বা রসময় কাহিনী বানাইয়া বলা সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা। প্রথমটি সম্পূর্ণ হারাম নয়, দ্বিতীয়টি সম্পূর্ণ হারাম।
(*********)
এইরূপ নিষেধ বাণীর মূল উদ্দেশ্য হইল, পরিবেশকে পবিত্র ও যৌন পংকিলতা মুক্ত রাখা। ইসলামের দৃষ্টিতে ইহা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই কারণে ইসলামী সমাজে নগ্নতা ও অশ্ললতা সব সময়ই বর্জনীয়। নারী পুরুষের উচ্ছৃঙ্খল চলা ফিরা, অবাধ মেলা-মেশা পথে-ঘাটে, পার্কে, বিপনীতে, ক্লাবে, থিয়েটারে এবং পত্র-পত্রিকা ও প্রচার মাধ্যমের সাহায্যে যৌন আবেদন উদ্বোধনমূলক কোন অনুষ্ঠান প্রচার এই কারণে সম্পূর্ণ নিষেধ।