স্বামী - স্ত্রীর সম্পর্ক

হযরত আবূ হুরায়রা (রা) হইতে বর্ণিত হইয়াছে, হযরত রাসূলে করীম (স) বলিয়াছেনঃ স্বামী নিকটে উপস্থিত থাকা অবস্থায় তাহার অনুমতি ব্যতীত স্ত্রীর রোযা রাখা জায়েয নয়। স্বামীর অনুমতি ব্যতীত তাহার ঘরে স্ত্রী কাহাকেও প্রবেশের অনুমতি দিবে না। অনুমতি দেওয়া তাহার জন্য জায়েয নয়। আর স্বামীর নির্দেশ ছাড়াই স্ত্রী যে যে ব্যয় করিবে, উহার অর্ধেক স্বামীর প্রতি প্রত্যার্পিত হইবে।

 

(বুখারী, মুসলিম, নাসায়ী)

 

ব্যাখ্যাঃ এই হাদীসটিতে স্ত্রীর জন্য তিনটি বিধান দেওয়া হইয়াছে। প্রথম ‘স্বামীর নিকটে উপস্থিত থাকার সময় তাহার অনুমতি ব্যতীত রোযা রাখিতে পারিবে না। রাখিলে তাহা তাহার জন্য হালাল হইবে না’।

 

ইহার দুইটি কথা বিশ্লেষণ সাপেক্ষ। একটি স্বামীর বিনা অনুমতিতে রোজা রাখিতে পারিবে না বলিতে বুঝাইয়াছে নফল রোযা। ফরয রোযা রাখা স্বামীর অনুমতির অপেক্ষা রাখে না। এমন কি, স্বামী নিষেধ করিলেও- কোন বিশেষ কারণ ছাড়া ফরয রোযা রাখিতে হইবে। কেননা ইহা আল্লাহর নির্দেশ। স্বামীর কথা শুনা ও পালন করা কর্তব্য আল্লাহর হুকুক পালন করার পরে, তাঁহার নাফরমানী করিয়া নয়। এই রূপ অবস্থা হইলে স্ত্রী স্পষ্ট কণ্ঠে স্বামীকে বলিয়া দিবে, আমি আল্লাহর বান্দী, তোমার নহি।

 

দ্বিতীয় কথা, স্বামী উপস্থিত থাকার সময় বা অবস্থায়ও অর্থাৎ স্বামী বাড়িতে ও নিকটে উপস্থিত থাকাকালে যে কোন সময় সে তাহাকে সংগমের জন্য আহবান করিতে পারে এবং তাহা করিলে সে আহবানে তাহাকে সাড়া দিতে হইবে। কিন্তু রোযাদার হইলে তাহা সম্বব হইবে না। এই কারণে স্বামীল বিনানুমতিতে রোযা রাখা স্ত্রীর জন্য জায়েয নয়। তবে পূর্বে অনুমতি লইয়া নফল রোযা রাখিলে সাধারণতঃ আশা করা যায় যে, দিনের বেলা রোযা থাকা অবস্থায় রোযা ভংগকারী কোন কাজে সে নিশ্চয়ই আহবান জানাইবে না।

 

আবূ দায়ূদে এই হাদীসটির ভাষা এই রূপঃ

 

****************************************

 

রমযান মাস ব্যতীত স্বামীর উপস্থিতিতে তাহার অনুমতি ছাড়া কোন স্ত্রী কক্ষণই কস্মিণকালেও রোযা রাখিবে না।

 

আর তিরমিযী উদ্ধৃত হাদীসের ভাষা হইলঃ

 

****************************************

 

রমযাস মাস ছাড়া কোন একটি দিনও স্বামীর উপস্থিত থাকা সময়ে তাহার অনুমতি ব্যতীত কোন স্ত্রী রোযা রাখিবে না।

 

‘স্বামী উপস্থিত থাকা সময়ে’ বলিয়া এই সুযোগ বাহির করা হইয়াছে যে, স্বামী বাড়িতে উপস্থিত না থাকিলে- বাহিরে সফরে চলিয়া গিয়া থাকিলে তখন নফল রোযা রাখা সম্পূর্ণ জায়েয এবং তাহাতে স্বামীর অনুমতি লওয়ার কোন প্রয়োজন হইবে না। কেননা স্বামী বাহিরে চলিয়া গিয়া থাকিলে তখন দিনের বেলা ফিরিয়া আসিয়াই সঙ্গম কাজে ডাকিবে না। ইহার সম্ভাবনাও থাকে না।

 

হাদীস ব্যাখ্যাকারী আল্লামা কিরমানী বলিয়াছেনঃ এখানে রোযা রাখিতে যে নিষেধ করা হইয়াছে ইহা হইতে উহা অর্থাৎ স্বামীর উপস্থিতিতে তাহার অনুমতি না লইয়া নফল রোযা রাখা হারাম হইয়া গিয়াছে। ইমাম নববী বলিয়াছেনঃ ইহা মাকরূহ। বিনানুমতিতে কোন স্ত্রী যদি রোযা রাখেই তবে এই রোযা সহীহ হইবে। তবে সে গুনাহগার হইবে। আর মুহাল্লাব বলিয়াছেন, এই নিষেধে মাকরূহ তানজীহ প্রমাণিত হয়। অর্থাৎ ইহা সম্পূর্ণ হারাম করিয়া দেওয়া হয় নাই। পছন্দ করা হয় নাই এইটুকুই মাত্র। এতদসত্ত্বেও রোযা রাখা হইলে তাহাতে গুনাহগার হওয়ার কোন কারণ নাই।

 

দ্বিতীয় বিধান, স্বামীর অনুমতি ব্যতীত ঘরে কোন লোককে আসিবার অনুমতি দেওয়া সম্পর্কে হাদীসের ভাষা হইলঃ *************** স্ত্রী স্বামীর অনুমতি ব্যতীত কাহাকেও তাহার স্বামীর অনুমতি দিবে না, সেই মেয়ে লোককেও নয়। কেননা এইরূপ করা হইলে স্বামীর মনে মন্দ ধারণা ও খারাপ সন্দেহ সৃষ্টি হইতে পারে এবং স্বামীর মনে অপমান বোধ জাগিতে পারে। আর তাহা হইলে দাম্পত্য জীবনে চরম ভাঙ্গন ও বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। মুসলিম শরীফের বর্ণনায় এখানকার ভাষা হইল ******** ‘স্বামী বাড়িতে উপস্থিত থাকা কালে তাহার অনুমতি ছাড়া’। কিন্তু এখানেও স্বামী উপস্থিত থাকার কথাটা অবান্তরও অর্থহীন মনে হয়। কেননা ইহার দরুন অর্থ দাঁড়ায় এই যে, স্বামীর উপস্থিতিতে তাহার অনুমতি ব্যতীত কাহাকেও ঘরে আসিতে দেওয়া নিষেধ আর স্বামীর অনুপস্থিতিতে তাহার অনুমতি ব্যতীরেকে কাহাকেও ঘরে আসিতে দেওয়া জায়েয। অথচ ইহা মোটেই যথার্থ কথা নয়। স্বামীর উপস্থিতিতে কাহাকেও আসিতে দিলে যতটা অন্যায় হওয়ার আশংকা স্বমীর অনুপস্থিতিতে কাহাকেও আসিতে দিলে  তাহার অপেক্ষা অনেক বেশী অন্যায়- অনেক বেশী সন্দেহের কারণ হওয়া অবশ্যম্ভাবী। স্বামী যদি জানিতে পারে- জানিতে পারা খুবই স্বাভাবিক যে, অমুককে তাহার উপস্থিতিতে ঘরে প্রবেশ করিতে দেয় না; কিন্তু তাহার অনুপস্থিতিকালে খুব আসিতে দেয়, তাহা হইলে অবস্থাটা কি দাঁড়ায়, তাহা বুঝিতে কষ্ট হওয়ার কথা নয়। এই কারণে স্বামীর অনুমতি ব্যতীত তাহার অনুপস্থিতি কালে তো কাহাকেও ঘরে আসিতে দেওয়া উচিত নয়- এই সময় তো আরও বেশী সতর্কতা অবলম্বন করা আবশ্যক। কেননা যে ঘরে বাড়ীর মালিক অনুপস্থিত, সে ঘরে ভিন পুরুষের প্রবেশ করার নিষেধ কুরআন মজীদে এবং সহীহ হাদীসে উদ্ধৃত হইয়াছে। কিন্তু বিশেষ কোন প্রয়োজন দেখা দিলে সেই প্রয়োজন যাহার, অনুমতিক্রমে তাহার প্রবেশ করা ও প্রয়োজন পূর্ণ হওয়া মাত্র চলিয়া যাওয়ায় কোন দোষ নাই। এইরূপ সাময়িক ও আকস্মিক কারণে কাহাকেও প্রবেশ করিতে দিলে স্বামীর বিনানুমতিতে হইলেও কোন দোষ হইবে না। কেননা নিতান্ত ও আকস্মিক কাজের প্রয়োজনে ঘরে প্রবেশ করার দরকার হইয়া পড়িয়াছে বিধায় ইহার পূর্বে অনুমতি লওয়া তো সম্ভবপর নয়।

 

আর তৃতীয় কথা, স্বামীর আদেশ কিংবা স্বামীর কাজ ছাড়া অপর কোন কাজে অর্থ ব্যয় করিলে অর্থাৎ কোন দান খয়রাত করিলে তাহার অর্ধেক সওয়াব স্বামীকে দেওয়া হইবে। এই কথাটির সঠিক তাৎপর্য বুঝিতে পারা যায় হযরত আবু হুরায়রা (রা) বর্ণিত অপর একটি হাদীস হইতে। তাহা এইঃ

 

****************************************

 

স্ত্রী যদি স্বামীর উপার্জন হইতে কিচু দান-সদকা নিজস্বভাবেও স্বামীর আদেশ ব্যতিরেকে করে, তাহা হইলে স্বামী উহার অর্ধেক সওয়াব পাইবে।

 

ইহা হইতে একথা স্পষ্ট হয় যে, স্বামীর উপার্জনের উপর স্ত্রীর যথেষ্ট অধিকার আছে। অধিকার আছে তাহা হইতে তাহার অনুমতি ব্যতীতই দান-সদকা করার। সে দান-সাদকার সওয়াব কেবল স্ত্রীই পাইবে না, পাইবে না কেবল স্বামীই। বরং উভয়ই আধা-আধি হারে পাইবে। স্বামী পাইবে এই জন্য যে, উহা তাহারই উপার্জন। আর স্ত্রী পাইবে এই জন্য যে, সে উহা দান করিল। আবূ দায়ূদের বর্ণনার ভাষা হইলঃ

 

****************************************

 

স্ত্রী এই দান-সাদকার সওয়াবের অর্ধেক পাইবে।

 

কিন্তু ইমাম খাত্তাবী হাদীসের ***** কথাটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করিয়াছেন ব্যয় করা সম্পদের দৃষ্টিতে। স্ত্রী যদি স্বামীর আদেশ ব্যতীত মূল কর্তব্যের অধিক মাত্রায় ব্যয় করিয়া বসে, তবে উহার অর্ধেক পরিমাণ ক্ষতি পূরণ করিতে ও তাহা স্বামীকে আদায় করিয়া দিতে বাধ্য হইবে। কেননা উহা অতিরিক্ত ব্যয় রূপে গণ্য। আল্লাম কিরমানী বলিয়াছেন, স্ত্রী যদি স্বামীর ধন-মাল হইতে তাহার অনুমতি ব্যতীত যথা নিয়মে ও প্রচলিত পরিমাণের অধিক নিজের জন্যও ব্যয় করে তাহা হইলে নির্দিষ্ট পরিমাণের অতিরিক্ত যাহা করিবে তাহা স্বামীকে ফিরাইয়া দিতে সে বাধ্য হইবে। এই কারণে যে, তাহার জন্য যাহা নির্দিষ্ট তাহার অপেক্ষা বেশীখরচ করিয়া বসিয়াছে। ****** গ্রন্হকার বলিয়াছেন *******র অর্থ দান-সাদককার সওয়াব যতটা দাতা স্ত্রী পাইবে ততটাই পাইবে তাহার স্বামী। সওয়াব পাওয়ার ক্ষেত্রে দুইজন আধা-আধি ভাগে সমান পাইবে। ইহার দলীল হইল; নবীকরীম (স) বলিয়াছেনঃ

 

****************************************

 

ন্যায় পথ প্রদর্শকও ন্যায় কাজের কর্মীর মতই সওয়ার পাওয়ার অধিকারী।

 

ইহা হইতে সওয়াব পাওয়ার ব্যাপারে স্বামীতে স্ত্রীতে পূর্ণ সাম্য ও সমতা বুঝা যায়। দানটি স্বামীর ধন-মাল হইতে হইলেও দান করার পথটাতে স্ত্রী-ই দেখাইয়াছেন।

 

ইবনুল মুরাবিত বলিয়াছেনঃ হাদীসের এই কথাগুলিতে সেই ব্যয় সম্পর্কে বলা হইয়াছে, যাহা প্রচলিত ব্যয়ের বহির্ভূত- সাধারণ নিয়মের অতিরিক্ত। মুয়াবীয়ার স্ত্রী হিন্দার ব্যাপারে রাসূলে করীম (স) এই ফয়সালাই দিয়াছিলেন। হাদীসে বলা হইয়াছেঃ

 

****************************************

 

খাজাঞ্জী বা ক্যাশ রক্ষাকারী যাহা যাহা ব্যয় করিবে তাহাতে সে একটা সওয়াব পাইতে। স্ত্রীর জন্যও এই রূপ সওয়াব রহিয়াছে। তবে তাহা প্রচলিত নিয়মে ও পরিমাণে হইতে হইবে।

 

এই অর্ধেক সওয়াব তাহারই যাহা দান করার প্রচলিত নিয়মে স্ত্রীর অধিকার রহিয়াছে। কিরমানী ইহাও বলিয়াছেন যে, বুখারী বর্ণিত অপর একটি হাদীস এই কথার পরিপন্হী। সে হাদীসটি এইঃ

 

****************************************

 

স্ত্রী যদি স্বামীর উপার্জন হইতে তাহার আদেশ ব্যতীতই ব্যয় বা দান করে তাহা হইলে সেই স্বামী উহার অর্ধেক সওয়াব পাইবে।

 

ইহার কারণ এই যে, স্ত্রী নিজে যে পরিমাণ ব্যয় করার অধিকারী, স্বামীর মালে উহার সহিত দান করা জিনিস সংমিশ্রিত করিয়া ফেলিয়াছে। ফলে তাহাতে দুইটি অংশ দুই জনের আছে বলিয়া ধরিয়া লইতে হইবে। ইহার বিপরীত কথা এই বলা যায় যে, তাহা যদি হইয়াও থাকে, তাহা হইলেও স্ত্রী যে অতিরিক্ত পরিমাণ ব্যয় করিয়াছে উহার ক্ষতিপূরণ দিতে হইবে না- যদিও স্বামী তাহার এই ব্যয়ে সন্তুষ্ট বা রাযী না হয়। উপরোক্ত ব্যাখ্যায় ইহা প্রমাণিত হয় না। হযরত ইবনে উমর ও ইবনে আব্বাস (রা) হইতে যুগপৎ ভাবে বর্ণিত হাদীস এইঃ রাসূলে করীম (স) বলিয়াছেনঃ

 

****************************************

 

স্ত্রী স্বামীর ঘর হইতে তাহার অনুমতি ব্যতীত কোন দান-সদকাই করিবে না। যদি করে, তাহা হইলে উহার সওয়াব স্বামী পাইবে, আর স্ত্রীর উপর গুনাহের বোঝা চাপিবে। অনুরূপভাবে স্বামীর অনুমতি ব্যতীত একটি দিনও নফল রোযা রাখিবে না। যদি রাখে তবে সে গুনাহগার হইবে। রোযার কোন শুভ ফলই সে পাইবে না।

 

আর হযরত আবূ হুরায়রা (রা) বর্ণিত অপর একটি হাদীস হইলঃ

 

****************************************

 

স্ত্রী স্বামীল ধন-মাল হইতে দান-সাদকা করিবে কিনা এই বিষয়ে তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করা হইলে তিনি বলিলেন, না। তবে তাহার জন্য দেওয়া বরাদ্ধকৃত সম্পদ হইতে করিতে পারে। তাহা করিলে উহার সওয়াব স্বামী-স্ত্রী দুইজনের মধ্যে বিভক্ত হইবে। কিন্তু স্বামীরমাল হইতে স্ত্রী কিছুই ব্যয় করিবে না।

 

শেষে উদ্ধৃত করা এসব হাদীসের আলোকে প্রথমোদ্ধৃত হাদীসটির সঠিক তাৎর্প বুঝিতে হইবে।

 

(******************)

স্ত্রীর পক্ষে উত্তম ব্যক্তি

 

****************************************

 

হযরত আবূ হুরায়রা (রা) হইতে বর্ণিত হইয়াছে, তিনি বলিয়াছেন, হযরত রাসূলে করীম (স) বলিয়াছেনঃ মু’মিনদের মধ্যে পরিপূর্ণ ঈমানদার সেই লোক, যে লোক চরিত্রের দিকদিয়া তাহাদের মধ্যে সর্বোত্তম। আর তোমাদের যে সব লোক তাহাদের স্ত্রীদের জন্য সর্বোত্তম কল্যাণকর, তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ও কল্যানময় লোক তাহারাই।

 

(তিরমিযী, ইবনে মাজা, মুসনাদে আহমাদ)

 

ব্যাখ্যাঃ হাদীসটিতে দুইটি কথা বলা হইয়াছে। প্রথম কথায় ঈমান ও চরিত্রের সম্পর্কের প্রতি ইংগিত করা হইয়াছে। দ্বিতীয় কথাটি নারী ও পুরুষের পারস্পরিক সম্পর্ক পর্যায়ের। এই দুইটি কথার মধ্যে বাহ্যতঃ কোন সম্পর্ক আছে মনে না হইলেও মূলত এই দুইটির মধ্যে গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান।

 

প্রথম কথাটি হইলঃ চরিত্রের বিচারে যে লোক সর্বোত্তম- সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী যে লোক, ঈমানের পূর্ণত্বের দিকদিয়া সেই লোক সর্বাধিক অগ্রসর- সেই অন্যান্যদের তুলনায় অধিক পূর্ণাঙ্গ ঈমানের অধিকারী। ইহার কারণ এই যে, পূর্ণাঙ্গ ঈমান সর্বোত্তম চরিত্র সৃষ্টি করে। সর্বোত্তম চরিত্র পূর্ণাঙ্গ ঈমানের ফসর। পূর্ণাঙ্গ ঈমান যেখানে বর্তমান, সর্বোত্তম চরিত্র সেখানে অবশ্যম্ভাবী। কাহারও চরিত্র মন্দ বা ক্রটিযুক্ত দেখিতে পাইলে নিঃসন্দেহে বোঝা যাইতে পারে যে, তাহার ঈমানে ক্রটি রহিয়াছে, তাহা পূর্ণাঙ্গ নয়। আর এই পূর্ণাঙ্গ ঈমান ও উন্নত উত্তম চরিত্রই নির্বিশেষে সমস্ত মানুষের কল্যাণ কামনা ও মঙ্গল সাধনে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে। এই তাৎপর্যের প্রেক্ষিতেই রাসূলে করীম (স)-এর দ্বিতীয় কথাটি অনুধাবনীয়।

 

তাই হইল তোমাদের মধ্যে যে সব লোক তাহাদের স্ত্রীদের প্রতি অধিকক কল্যাণকারী ও মংগলকারী, তাহারাই তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক উত্তম লোক। ইহার কারণ হইল, পূর্ণাঙ্গ ঈমান মানুষকে সর্বাধিকক চরিত্রবান বানায়। সর্বাধিক উত্তম চরিত্রের একটা বিশেষ বাস্তব প্রতিফলন ঘটে নির্বিশেষে সমস্ত মানুষের কল্যাণ সাধনে। আর মানব সমাজের দুর্বলতম অংশ হইল নারী সমাজ। কাজেই তাহাদের কল্যাণ কামনায় ও মংগল সাধনে সেই ঈমান ও উন্নত চরিত্রের তাকীদে অধিকতর তীব্র সচেষ্টা ও সদা তৎপর হওয়া স্বাভাবিক। অন্য কথায় নারীগণকে দুর্বল ভাবিয়অ তাহাদের প্রতি যাহারা অসদাচরণ করে, দুর্ব্যবহার ও নির্যাতন নিষ্পেষণ চালায়, তাহারা পূর্ণাঙ্গ ঈমানদার নয়। পূর্ণাঙ্গ ঈমানদার নয় বলিয়াই তাহারা উত্তম চরিত্রের অধিকারী নয়, নয় ভাল মানুষ। বরং তাহারা নরাধম, পাষণ্ড।

 

এই পর্যায়ে হযরত আয়েশা (রা) বর্ণিত আর একটি হাদীস উল্লেখ্য। রাসূলে করীম (স) ইরশাদ করিয়াছেনঃ

 

****************************************

 

তোমাদের মধ্যে উত্তম ব্যক্তি সে, যে লোক উত্তম ও অধিক কল্যাণ সাধক তাহার পরিবার বর্গের জন্য। আর আমি তোমাদের মধ্যে তুলনামুলকভাবে আমার পরিবার বর্গের জন্য অধিক কল্যাণকামী ও মঙ্গল সাধক।

 

ইহা হইতেও স্পষ্ট জানা গেল যে, কল্যাণের মর্যাদা ও উহাতে অভিষিক্ত হওয়া সম্বব তাহার পক্ষে, যে লোক নিজ পরিবার বর্গের প্রতি অন্যান্যের তুলনায় অধিক কল্যাণবহ। কেননা ব্যক্তির নিকট হইতে হাসি খুশী, উত্তম চরিত্র, আচার-আচরণ, দয়া-সহানুভূতি, কল্যাণ লাভ ও অকল্যাণ প্রতিরোধ ইত্যাদি পাওয়ার অন্যান্যদের তুলনায় বেশী অধিকারী হইতেছে তাহার পরিবারবর্গ। কাজেই কেহ যদি এইরূপ হয় তবে সেই যে সকল মানুষের তুলনায় অতীব উত্তম ব্যক্তি, তাহাতে আর সন্দেহ কি? কিন্তু ইহার বিপরীত হইলে- সে তুলনামূলকবাবে অধিক নিকৃষ্ট ব্যক্তি হইবে। বস্তুত বহু মানুষই এই আবর্তের মধ্যে পড়িয়া হাবুডুবু খাইতেছে। এমন দেখা যায়, একটি লোক তাহার পরিবার বর্গের ব্যাপারে নিকৃষ্ট আচার-আচরণ অবলম্বন করিতেছে। নিকৃষ্ট চরিত্র ও অধিক লোভী বা কৃপণ হওয়ার প্রমাণ দিতেছে; কিন্তু বাহিরের লোকদের সহিত তাহার আচার আচরণ অতিশয় মধূর, কল্যাণবহ। হাসিমূখে তাহাদিগকে বরণ করিতেছে, কথা বার্তা বলিতে ও আদর আপ্যাযন করিতেছে। এইরূপ ব্যক্তি প্রকৃত মানুষত্ব ও কল্যাণ বঞ্চিত, পথ ভ্রষ্ট।

 

(************)

 

বস্তুত রাসূলে করীম (স) এই সব বাণীর মাধ্যমে যে আদর্শ সমাজ গঠন করিতে সচেষ্ট ছিলেন, সেখানে নারী জাতি সর্বদিক দিয়াই সুখী ও মর্যাদাবতী এবং পুরুষ ও নারীর বৈধ দাম্পত্য জীবন কেন্দ্রিক পরিবার ইসলামের অধিকতর গুরুত্বের অধিকারী। রাসূলে করীম (স) আদর্শ ও উন্নত সমাজজ গঠনের জন্য উহার পূর্বে আদর্শ ও শান্তিপূর্ণ পরিবার গঠন এবং উহারও পূর্বে আদর্শ ঈমানদার চরিত্রবান ব্যক্তি- পুরুষ ও নারী তৈরী করার বাস্তব প্রক্রিয়া অবলম্বন করিয়াছিলেন।

 

উদ্ধৃত হাদীস সমূহ এই পর্যায়েরই পবিত্র ভাধারায় সমন্বিত।

FOR MORE CLICK HERE

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]