স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক অধিকার আদর্শিক স্বামী-স্ত্রীর দায়িত্ব ও কর্তব্য

সুলাইমান ইবনে আমর ইবনুল আহওয়াচ হইতে বর্ণিত হইয়াছে, তিনি বলিয়াছেন, আমার পিতা আমর ইবনুল আহওয়াচ (রা) আমার নিকট হাদীস বর্ণনা করিয়াছেনঃ তিনি রাসূলে করীম (স)-এর সঙ্গে বিদায় হজ্জে উপস্থিত ও শরীক ছিলেন। সেই সময়ে এক ভাষণ প্রসঙ্গে রাসূলে করীম (স) সর্বপ্রথম আল্লাহর হামদ ও সানা উচ্চারণ করিলেন। অতঃপর অনেক ওয়ায ও নছীহত করিলেন। এই ভাষণেই তিনি বলিলেনঃ লোকগণ! সাবধান হও। নারীদের প্রতি তোমরা কল্যাণকামী হও এবং তাহাদের কল্যাণ প্রসঙ্গে যে নছীহত করিতেছি তাহা কবুল কর। মনে রাখিও, অবস্থা এই যে, অবস্থা এই যে, তাহারা তোমাদের হাতে বাঁধা। তোমরা তাহাদের নিকট হইতে উহা ছাড়া আর কিছুই পাইবার অধিকারী নও। তবে যদি তাহারা কোন রূপ স্পষ্ট প্রকট নির্লজ্জতার কাজ করে তাহা হইলে-। যদি তাহারা এইরূপ কিছু করে, তাহা হইলে শয্যায় তাহাদের সহিত সম্পর্ক ছিন্ন কর। আর শেষ পর্যন্ত প্রয়োজন হইলে তাহাদিগকে মার- তবে জঘন্য ও বীভৎস ধরনের নয়। ইহার পর তাহারা যদি তোমাদের অনুগত হয়, তাহা হইলে তাহাদের ব্যাপারে একবিন্দু সীমালংঘন করিবে না। তোমরা জানিয়া রাখ, তোমাদের জন্য তোমাদের স্ত্রীদের উপর অধিকার আছে। আর তোমাদের স্ত্রীদেরও অধিকার আছে তোমাদের উপর। তোমাদের স্ত্রীদের উপর তোমাদের যে অধিকার আছে, তাহা এই যে, তোমরা যাহাদিগকে অপছন্দ কর তাহারা তোমাদের শয্যা মাড়াইবে না। অনুরূপভাবে যাহাদিগকে তোমরা পছন্দ কর না, তাহাদিগকে তোমাদের ঘরে প্রবেশ করার অনুমতি দিবে না। আরও জানিয়া লও, তোমাদের উপর তাহাদের অধিকার হইল, তাহাদের খাওয়া ও পারর ব্যাপারে তাহাদের প্রতি তোমরা অধিক মাত্রায় মহানুভবতা ও অনুগ্রহ মূলক আচরণ গ্রহণ করিবে।

 

(তিরমিযী, ইবনে মাজাহ।

 

ব্যাখ্যাঃ এই দীর্ঘ হাদীসটির আসল বক্তব্য সুস্পষ্ট। ইতিপূর্বে উদ্ধৃত এতৎসংক্রান্ত হাদীস সমূহের প্রেক্ষিতে ইহার তাৎপর্য অনুধাবন করিতে হইবে।

 

এই হাদীসটির একটি বৈশিষ্ট্য এই যে, ইহাতে রাসূলে করীম (স)-এর বিদায় হজ্জে দেওয়া ভাষণের অংশ উদ্ধৃত হইয়াছে এবং ইহাতে স্বামী ও স্ত্রী উভয়ের পারস্পরিক অধিকারের কথা একই সঙ্গে বলা হইয়াছে। শুধু তাহাই নয়, এই হাদীসটিতে স্ত্রীদের প্রতি গ্রহণীয় আচরণ পর্যায়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথাও উদ্ধৃত হইয়াছে। রাসূলে করীম (স) এই পর্যায়ের কথা, শুরু করিয়াছেন এই বলিয়াঃ

 

****************************************

 

এই কথাটির বিস্তারিত ব্যাখ্যা ইতিপূর্বে- নারী প্রকৃতির রহস্য- আলোচনায় পেশ করা হইয়াছে।

 

কিন্তু এই বাক্য হইতে একথা স্পষ্ট হয় যে, রাসূলে করীম (স) অতঃপর যাহা কিছু বলিয়াছেন, তাহা সবই বলিয়াছেন নারী সমাজে সঠিক মর্যাদা নির্ধারণ এবং তাহাদের কল্যাণ সাধনের উদ্দেশ্যে।

 

নারীদের মর্যাদা বুঝাইবার জন্য প্রথমেই বলিয়াছেনঃ হে পুরুষরা! তাহারা তোমাদের নিকট বাঁধা পড়িয়াছে। তোমরা এতদ্ব্যতীত আর কোন কেরণেই তাহাদের প্রতি কড়া শাসনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে বা তাহাদের গায়ে হাত দিতে পার না যে, তাহারা কোন প্রকাশ্য অসদাচরণ ও নির্লজ্জতা মূলক কাজ করিয়া বসিবে। অর্থাৎ তাহারা তোমাদের নিকট বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হইয়াছে বলিয়া এবং অসহায় ও অক্ষম দুর্বল পাইয়া তোমরা তাহাদের প্রতি কোন রূপ খারপ ব্যবহার করিতে পারনা। কেননা তাহারাও মানুষ এবং তাহাদের আত্মমর্যাদা ও সম্মান রহিয়াছে। সাধারণভাবে তাহারা তোমাদের প্রতি অতীব উত্তম মর্যাদাপূর্ণ ও সম্মানজনক আচরণ পাইবার অধিকারী। তবে যদি কোন সময় তাহারা কোন নির্লজ্জতামূলক অশ্লীল কাজ করিয়া বসে; তবেই তোমরা কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের অধিকারী, তাহারা পূর্বে নয়। আর তেমন কোন কাজ করিলে (কি কি কাজ করিলে তাহা ইতিপূর্বেএক হাদীসের ব্যাখ্যায় সবিস্তারে বলা হইয়াছে।) তোমরা সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করিতে পারিবে।

 

এই পর্যায়ে প্রথম পদক্ষেপ গ্রহণের কাজ হইল, শয্যা বা বিছানায় স্ত্রীর সহিত সম্পর্ক ছিন্ন করা। আর সর্বশেষে নিরূপায়ের উপায় হিসাবে তাহাদিগকে কিছুটা হালকা ধরনের দৈহিক শাসন দান। এ সম্পর্কে ব্যবহৃত শব্দ হইল ****** ইহার অর্থঃ ****** ‘অতীব কষ্ট দায়ক, সহ্যাতীত ও কঠোর নয় এমন। ইহার ফলে তাহারা যদি পথে আসে ও তোমাদের অনুগত হয়, তাহা হইলে পূর্বের সেই ব্যাপারের জের হিসাবে অতঃপর তাহাদের সহিত একবিন্দু খারাপ ব্যবহার করিতে পারিবে না। পারিবে না কোনরূপ রুঢ় কড়া কথা বলিতে বা দৈহিক কষ্ট ও পীড়ন দিতে।

 

ইহার পর পারস্পরিক অধিকারে কথা বলা হইয়াছে। এক বাক্যেই এই পারস্পরিক অধিকারের কথা বলিয়া দেওয়া হইয়াছে। বাক্যের প্রথম অংশে বলা হইয়াছে, তোমাদের স্ত্রীদের উপর তোমাদের অধিকার আছে এবং দ্বিতীয় অংশে বলা হইয়াছে, তোমাদের উপরও তোমাদের স্ত্রীদের অধিকার আছে। যেহেতু এই কথাগুলি বলা শুরু হইয়াছিল পুরুষদের সম্বোধন করিয়া। আর ইসলামের দৃষ্টিতে পুরুষরাই সমাজে ও পরিবারের প্রধান। সামাজিক ও পারিবারিক ভাল মন্দের জন্য প্রধানত পুরুষরাই দায়ী। পুরুষরা যেমন ভাল করিতে পারে তেমনি পারে মন্দ করিতেও। রাসূলে করীম (স) তাঁহার ইসলামী সমাজ ও পরিবার গঠনের জন্য দেওয়া নীতি ও আদর্শের বাস্তবায়নের জন্য পুরুষদিগকেই দায়ীত্বশীল বানইয়া দিলেন এই ভাষণে।

 

স্ত্রীদের উপর পুরুষদের অধিকার পর্যায়ে এই হাদীসে মাত্র দুইটি মৌলিক কথা বলা হইয়াছে। প্রথম *************** ইহার অর্থঃ ‘কোন ভিন পুরুষকে তাহাদের সহিত কথা ব লিতে দিবে না’। বস্তুত তদানীন্তন আরব সমাজে সাধারণ প্রচলন অনুযায়ী সব পুরুষ সব মেয়েলোকের সহিতই অবাধে কথা বলিত। ইহাত সেই স্ত্রীদের স্বামীরা কোন দোষ দেখিতো না এবং ইহাতে তাহাদের মনে কোনরূপ সন্দেহ বা সংশয় জাগিত না। ইহা পর্দা ব্যবস্থা প্রবর্তিত হওয়ার পূর্ববর্তী অবস্থা। যাহা আরব জাহিলিয়াতের সময় হইতেই চলিয়া আসিতেছিল। বাক্যটির শব্দ ******* অর্থ ‘ব্যভিচার নয়’। কেননা তাহা তো চিরন্তন হারাম। তাহাতে ******* ‘যাহাকে তোমরা পছন্দ কর না- অপছন্দ কর’ এই কথার তো কোন প্রশ্ন উঠে না। ইহার সঠিক অর্থ হইল, স্বামী পছন্দ করে না এমন কোন  পুরুষ বা মেয়ে লোককে ঘরে প্রবেশ করিতে, ঘরে আসিয়া বিছানায় বসিতে ও কথাবার্তা বলার অনুমতি দিবে না। সে পুরুষ মহররম হইলেও না। তবে স্বামী নারাজ হইবে না বা আপত্তি করিবে না এমন মুহররম পুরুষ সম্পর্কে কোন নিষেধ নাই। পরবর্তী বাক্যটি ইহারই ব্যাখ্যা দেয়।

 

আর স্বামীদের উপর স্ত্রীদের অধিকার পর্যায়ে এখানে শুধু একটি কথাই বলা হইয়াছে। তাহা হইল, খাওয়া পরার ব্যাপারে তাহাদের প্রতি শুভ ও উদার আচরণ গ্রহণ করিতে হইবে।

 

বস্তুত যেখানে যাহা কিছু অধিকার, সেখানেই তাহার সেই পরিমাণ কর্তব্য। অনুরূপ ভাবে যেখানে যাহার যতটা কর্তব্য, সেখানেই তাহার ততটা অধিকার। ইহা আধুনিক সমাজ-বিজ্ঞান কর্তৃক নিজস্ব ভাবে স্বীকৃত ও ঘোষিত হইলেও মূলক ইহা শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (স) কর্তৃক প্রচারিত। তাহা উক্ত কথা হইতেই সুন্দর ভাবে প্রতিভাত।

 

প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য, মুসলিম শরীফে নবী করীম (স)-এর ভাষণের এই অংশটি উদ্ধৃত হইয়াছে এই ভাষায়ঃ

 

****************************************

 

তোমরা স্ত্রীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর। কেননা তোমরা তাহাদিগকে আল্লাহর বাণী ও বিধানের ভিত্তিতে গ্রহণ করিয়াছ এবং তাহাদের স্ত্রী অঙ্গ হালাল পাইয়াছ আল্লাহরই বিধান অনুযায়ী। আর তাহাদের উপর তোমাদের এই অধিকার প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে যে, তাহারা তোমাদের শয্যাকে এমন কাহারও দ্বারা দলিত হইতে দিবে না যাহাদিগকে তোমরা অপছন্দ কর। তাহারা যদি তাহা করে তাহা হইলে তোমরা তাহাদিগকে মারিতে পার অ-তীব্র অ-কঠোর হালকা মার। কিন্তু সর্বাবস্থায়। প্রচলিত মানে ও নিয়মে তাহাদের খোরাক-পোশাক বাসস্থান অর্থাৎ রিযিক দেওয়া তোমাদের কর্তব্য ও তোমাদের উপর তাহাদের হক-অধিকার।

 

বর্ণনাটি এই ভাষায় প্রথম দুইটি বাক্য অভিনব ও অতীব গুরুত্বপূর্ণ এবং তাৎপর্যবহ। তাহা হইল, পুরুষরা স্ত্রীদের গ্রহণ করে আল্লাহর কালেমার ভিত্তিতে এবং তাহাদের স্ত্রী অঙ্গ নিজেদের জন্য হালাল বানাইয়া লয় কেবলমাত্র আল্লাহর বিধান অনুযায়ী। বস্তুত পুরুষরা-স্বামীরা- এই কথা বিস্মৃত না হইলে স্ত্রীদের অধিকার  হরণ ও তাহাদের মান-মর্যাদার প্রতি উপেক্ষা প্রদর্শন করিতে পারিত না। আল্লাহর ভয়ে তাহাদের হৃদয়-মন মদা কম্পিত থাকাই হইত স্বাভাবিক।

স্ত্রীর প্রতি স্বামীর কর্তব্য

 

****************************************

 

হযরত মুয়াবিয়া আল কুশাইরী (রা) হইতে বর্ণিত হইয়াছে, তিনি বলিয়াছেন; আমি বলিলাম, হে রাসূল আমাদের স্ত্রীদের কোন অংশ আমরা ব্যবহার করিব, আর কোন অংশ ছাড়িয়া দিব? জওয়াবে রাসূলে করীম (স) বলিলেনঃ তুমি তোমার ক্ষেত যে ভাবে ও যেদিক দিয়াই ইচ্ছাকর আসিতে ও ব্যবহার করিতে পার। তাহাকেও খাইতে দিবে যখন তুমি খাইবে, তাহাকে পরিতে দিবে যখন তুমি পরিবে। আর তাহার মুখমণ্ডল কুৎসিত বীভৎস করিবে না, মারিবে না। (আবূ দায়ূদ)

 

ব্যাখ্যাঃ এই হাদীসটি বর্ণনাকারী হযরত মুয়াবীয়া আল কুশাইরী হইতে বর্ণিত। এই পর্যায়েরই আরও একটি হাদীস ইতিপূর্বৈ উদ্ধৃত হইয়াছে। এখানে উদ্ধৃত হাদীসটিতে সাহাবীর প্রশ্ন ছিল স্ত্রীর কোন অঙ্গ যৌন উদ্দেশ্য পূরণার্থে ব্যবহার করিব এবং কোন অংশ নয়। সেই সম্পর্কে রাসূলে করীম (স) প্রশ্নের জওয়াবে যাহা বলার তাহাতো বলিয়াছেনই। সেই সঙ্গে স্ত্রীর প্রতি স্বামীর কর্তব্যের কথাও বলিয়া দিয়াছেন। বস্তুত রাসূলে করীম (স)-এর কথা বলার ধরণই ছিল এই। তিনি শুধু জিজ্ঞাসিত বিষয়ের জওয়াব দিয়াই ক্ষান্ত থাকিতেন না, প্রসঙ্গত আরও যাহা বলার এবং প্রশ্নকারীর মনস্তত্বের প্রেক্ষিতে ও আনুসাঙ্গিক দায়িত্ব হিসাবে যাহা বলা তিনি জরুরী মনে করিতেন তাহাও তিনি বলিয়া দিতেন।

 

সাহাবী জিজ্ঞাসা করিয়াছিলেন শুধু একটি কথাঃ স্ত্রীর কোন অঙ্গ যৌন প্রবৃত্তি চরিতার্থ করিবার উদ্দেশ্যে ব্যবহার করিব, আর কোন অঙ্গ ব্যবার করিব না? জওয়াবে নবী করীম (স) বলিলেনঃ স্ত্রীর যৌন অঙ্গই তোমার জন্য নির্দিষ্ট ক্ষেত। এই ক্ষেত্রে চাষাবাদ করা ও সেই চাষাবাদের ফলে উহা হইতে ফসল পাইতে চাওয়া ও ফসল যাহা হয় তাহা সানন্দচিত্তে গ্রহণ করাই কৃষকের কাজ। স্ত্রীর যৌন অঙ্গে চাষাবাদ করার জন্য কোন ধরাবাঁধা নিয়ম বা পদ্ধতি নাই। কৃষকের নিকট ক্ষেতই হয় আসল লক্ষ্য। নির্দিষ্ট ক্ষেত ছাড়া সে অন্যত্র লাঙ্গল চালায় না, পরিশ্রম করে না। স্বামীর নিকট স্ত্রীর যৌন অঙ্গও ঠিক অনুরূপ সন্তানের ফসল ফলাইবার ক্ষেত বিশেষ। রাসূলে করীম (স) এই কথাটিতে কুরআন মজীদের ভাষা হুবহু অনুসৃত ও প্রতিফলিত হইয়াছে। কুরআন মজীদে বলা হইয়াছেঃ

 

****************************************

 

তোমাদের স্ত্রীরা তোমাদের জন্য ক্ষেত। তোমরা তোমাদের সেই ক্ষেতে গমন কর যেভাবে যে দিক দিয়াই তোমরা ইচ্ছা কর।

 

অর্থাৎ স্ত্রীর যৌন অঙ্গ ছাড়া তাহার দেহের অন্য কোন অঙ্গ যৌন উদ্দেশ্যে চরিতার্থ করার জন্য ব্যবহার করা জায়েয নয়- নয় স্বাভাবিক। ইহা ছিল সাহাবীর জিজ্ঞাসিত বিষয়। আর ইহা নিছক স্বামীর অধিকার ও ভোগ সম্ভোগ সম্পর্কিত বিষয়। কিন্তু রাসূলে করীম (স) এই কথাটুকু বলিয়া ও স্বামীর অধিকারের কথাটুকু জানাইয়া দিয়াই ক্ষান্ত থাকিলেন না। তিনি সেই সঙ্গে স্ত্রীর প্রতি স্বামীর কর্তব্যের কথাও বলিয়া দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করিলেন এবং বলিলেনঃ স্ত্রীর খাওয়া পরা যথাযথ জোগাইয়া দেওয়া স্বামীর প্রধান কর্তব্য। ইহার প্রতি কোনরূপ উপেক্ষা অবহেলা প্রদর্শন এবং কেবল নিজের অধিকারটুকু যেমন ইচ্ছা আদায় করিয়া লওয়া মানবিক ও মানবোচিত কাজ হইতে পারে না। অধিকার আদায় করার সঙ্গে সঙ্গে স্বীয় কর্তব্যটুকুও যথাযথ পালন করিতে হইবে।

 

এই সঙ্গে আবূ দায়ূদ উদ্ধৃত ও হযরত মুয়াবীয়া আল-কুশাইরী বর্ণিত অপর একটি বর্ণনাও উল্লেখ্য। হাদীসটি এইঃ

 

****************************************

 

আমি রাসূলে করীম (স)-এর নিকট আসিলাম এবং তাঁহাকে বলিলামঃ আপনি আমাদের স্ত্রীদের ব্যাপারে কি বলেন? তিনি বলিলেনঃ তোমরা তাহাদিগকে খাইতে দিবে যাহা তোমরা খাও তাহা হইতে, তাহাদিগকে পরিতে দিবে যাহা কিছু তোমরা পরিধান কর তাহা হইতে। আর তাহাদিগকে কখনও মারধর করিবে না এবং তাহাদিগকে কখনও কুৎসিত ও বীভৎস করিবে না।

 

মুসনাদে আহমাদ, আবূ দায়ূদ ও ইবনে মাজাহ গ্রন্হে এই হাদীসটির ভাষা এই রূপঃ

 

****************************************

 

নবী করীম (স) কে এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করিল, স্বামীর উপর স্ত্রীর কি অধিকার? তিনি বলিলেনঃ তুমি তাহাকে খাওয়াইবে যখন তুমি খাইবে, তাহাকে পোশাক পরিতে দিবে যেমন তুমি পরিধান করিবে। মুখমণ্ডলের উপর আঘাত হানিবে না, কুৎসিতও করিবে না, অশ্লীল গাল-মন্দ করিবে না এবং ঘরের মধ্যে ছাড়া তাহাকে ত্যাগ করিবে না- তাহার সহিত সম্পর্ক ছিন্ন করিবে না।

 

স্ত্রীর খাওয়া-পরা প্রয়োজন ও মান অনুযায়ী সংগ্রহ ও পরিবেশন করা স্বামীর দায়িত্ব ও কর্তব্য এবং ইহা স্ত্রীর অধিকার। স্ত্রীদের আদব-কায়দা শিক্ষাদান ও শরীয়াত পালন করিয়া চলিতে বাধ্য করার উদ্দেশ্যে যদি কখনও কিছুটা প্রহরও করিতে হয়, তবুও সে মার-এ মুখ মণ্ডলের উপর কোন রূপ আঘাত হানিতে পারিবে না। স্ত্রীর প্রতি কোন রূপ সন্দেহ বা অসন্তুষ্টির উদ্রেক হইলে শয্যাতেই তাহার সহিত সম্পর্ক ছিন্ন করা যাইবে। অর্থাৎ ঘুমাইবে যথারীতি একই শয্যায়; কিন্তু স্বামী-স্ত্রী সম্পর্ক স্থাপন করিবে না। স্ত্রীকে শাসন করার ইহা একটা বিশেষ নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতি। তাহাকে ত্যাগ করিতে হইলে করিবে ঘরের মধ্যেই, ঘরের বাহিরে নয়, উপরোক্ত কথাটির তাৎপর্য ইহাই। ক্রোধান্ধ হইয়া না নিজে ঘর ছাড়িয়া অন্যত যাইবে, না স্ত্রীকে ঘরের বাহিরে যাইতে বাধ্য করিবে। স্ত্রীকে নিয়ন্ত্রণে আনিবার জন্য ইহাই সর্বশেষ পদ্ধতি। ইহার ওপাশে স্বামীর আর কিছু করিবার নাই।

 

একটি বর্ণনা হইতে অবশ্য জানা যায়, নবী করীম (স) তাঁহার বেগমদের সহিত সম্পর্ক ত্যাগ করিয়া তাঁহার মসজিদ সন্নিহিত হুজরায় চলিয়া গিয়াছিলেন।

 

আলোচ্য মূল হাদীসে স্ত্রীদের প্রতি স্বামীদের কর্তব্যের কথা সুস্পষ্ট ও বলিষ্টভাবে বলা হইয়াছে। ইমাম খাত্তাবী লিখিয়াছেনঃ স্ত্রীর খাওয়া-পরা ও যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করা স্বামীর পক্ষে ওয়াজিব-একান্তই কর্তব্য। ইহার কোন উচ্চ সীমা নির্ধারিত নয়। ইহা করিতে হইবে প্রচলিত নিয়মে ও প্রচলিত মান অনুযায়ী, করিতে হইবে স্বামীর আর্থিক সামর্থ্যানুপাতে। রাসূলে করীম (স) ইহা স্বামীর উপর স্ত্রীর অধিকাররূপে নির্দিষ্ট করিয়া দিয়াছেন। স্বামী বাড়ীতে উপস্থিত থাকুক, আর না-ই থাকুক, সর্বাবস্থায়ই ইহার ব্যবস্থা করা স্বামীর কর্তব্য। ইহা যদি যথা সময়ে স্বামী না করে, তবে ইহা স্ত্রীর নিকট তাহার ঋণ রূপে গণ্য হইবে ও স্ত্রীকে আদায় করিয়া দেওয়া স্বামীর কর্তব্য হইবে। স্ত্রীর প্রতি স্বামীর এই কর্তব্য অন্যান্য কর্তব্যের মতই গুরুত্বপূর্ণ ও অবশ্যপূরণীয়। স্বামীর নিকট হইতে স্ত্রীর এইসব পাওয়া অধিকার অন্যান্য অধিকারের মতই। স্বামীর অনুপস্থিতির দরুন সরকার কর্তৃক ইহা ধার্য হউক আর না-ই হউক, আদায় করার বাধ্যবাধকতার ক্ষেত্রে কোনই পার্থক্য সুচিত হইবে না। ইহা স্ত্রীর পাওনা, অতএব যে ভাবেই হউক স্বামীকে ইহা অবশ্যই আদায় করিতে হইবে।

 

অন্যান্য হাদীসে কেবল মুখমণ্ডলের উপর মারিতে নিষেধ করা হইয়াছে। আর উপরোক্ত হাদীসে বলা হইয়াছেঃ তাহাদিগকে মারিও না, মারধর করিও না। ইহা সাধারণ নিয়ম। সাধারণ অবস্থায় স্ত্রীকে কথায় কথায় মারধর করার কোন অধিকার স্বামীর নাই। ইহা নিতান্তই অমানুষিক। আর অন্যান্য হাদীসে বিশেষ অবস্থার কথা বলা হইয়াছে। সে বিশেষ অবস্থা হইল, শরীয়াতের দেওয়া অধিকারে যে যে কারণে স্ত্রীকে হালকা ধরনের মার-ধর করার অনুমতি দেওয়া হইয়াছে, তাহা। কিন্তু স্ত্রীকে অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করা যাইবে না কক্ষণই- কোন অবস্থায়ই। এই হাদীসে সাধারণ পুরুষ প্রকৃতির ক্রটির প্রতি ইংগিত  রহিয়াছে। তাহা হইল, স্ত্রীর উপর নিজের পাওনাটুকু পুরোমাত্রায় আদায় করিয়া লওয়া; কিন্তু তাহার প্রতি স্বীয় কর্তব্য পালেন অবহেলা করা। হাদীসটিতে বলিয়া দেওয়া হইয়াছে, কেবল নিজের পাওনার কথা ভাবিলে চলিবে না, স্ত্রীর প্রতি কর্তব্যের কথাও মনে রাখিতে হইবে।

FOR MORE CLICK HERE

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]