ইশরাকের নামাজ পড়ার নিয়ম, চাশতের নামাজের সময় কখন, চাশতের নামাজের নিয়ম, চাশত নামাজের সময়, ইশরাক ও চাশতের নামাজের সময়, ইশরাকের নামাজের সময়, ইশরাকের নামাজ কত রাকাত, আওয়াবিন নামাজ পড়ার নিয়ম ও নিয়ত, Ishraq Namaz time.
চাশতের নামাজের নিয়ম. ইশরাকের নামাজ পড়ার নিয়ম
শুরূক্ব অর্থ সূর্য উদিত হওয়া। ইশরাক অর্থ চমকিত হওয়া। দোহা অর্থ সূর্য গরম হওয়া। এই সালাত সূর্যোদয়ের পরপরই প্রথম প্রহরের শুরুতে পড়লে একে সালাতুল ইশরাক বলা হয় এবং কিছু পরে দ্বিপ্রহরের পূর্বে পড়লে তাকে সালাতুত দোহা বা চাশতের সালাত বলা হয়। এই সালাত বাড়িতে পড়া মুস্তাহাব। এটি সর্বদা পড়া এবং আবশ্যিক গণ্য করা ঠিক নয়। কেননা আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) কখনো পড়তেন, কখনাে ছাড়তেন।
মিরআত শরহে মিশকাত ‘সালাতুত দোহা’ অনুচ্ছেদ-৩৮; ৪/৩৪৪-৫৮।
ইশরাকের নামাজ পড়ার ফজিলত
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি ফজরের সালাত জামাতে পড়ে, অতঃপর সূর্য ওঠা পর্যন্ত আল্লাহর যিকরে বসে থাকে, অতঃপর দুই রাক’আত ছালাত আদায় করে, তার জন্য পূর্ণ একটি হজ্জ ও উমরার নেকী হয়।
তিরমিযী হা/৫৮৬, মিশকাত হা/৯৭১ সালাতের পর যিকির’ অনুচ্ছেদ-১৮।
ইমাম নববী বলেন, ইবনু উমর (রাঃ) সালাতুত দোহা কে বিদআত বলেছেন তার অর্থ হল, এটি নিয়মিত মসজিদে পড়া বিদআত।
মিরআত ৪/৩৪৬।
বুরাইদা আসলামী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, মানুষের শরীরে ৩৬০ টি জোড় রয়েছে। অতএব মানুষের কর্তব্য হল প্রত্যেক জোড়ের জন্য একটি করে ছাদাক্বা করা। সাহাবীগণ বললেন, কার শক্তি আছে এই কাজ করার, হে আল্লাহর নবী (স)? তিনি বললেন, চাশতের দুই রাকাত সালাতই এটার জন্য যথেষ্ট।
আবু দাউদ, মুসলিম, মিশকাত হা/১৩১৫, ১৩১১ সালাতুত দোহা’ অনুচ্ছেদ-৩৮।
ইশরাক বা চাশতের নামাজের নিয়ম
এই সালাত সাধারণ নফল সালাতের মতোই পড়তে হয়। এর জন্য আলাদা কোন নিয়ম নেই বা এর জন্য নির্দিষ্ট কোন সূরা নেই। হাদিসে এই সালাতের রাকাত সংখ্যা ২, ৪, ৮, ১২ পর্যন্ত পাওয়া যায়। প্রতি দুই রাকাত অন্তর সালাম ফিরাতে হয়। মক্কা বিজয়ের দিন দুপুরের পূর্বে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) হযরত আলী (রাঃ)-এর বোন উম্মে হানীর গৃহে খুব সংক্ষিপ্তভাবে ৮ রাকাত পড়েছিলেন।
মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/১৩০৯ ‘সালাতুত দোহা’ অনুচ্ছেদ-৩৮।
উল্লেখ্য যে, দুপুরের পূর্বের এই সালাতকেই সালাতুল আওয়াবীন বলে।
মুসলিম, মিশকাত হা/১৩১২; মিরআত ৪/৩৫১।
মাগরিবের পর ছয়, বিশ বা যে কোন পরিমাণ নফল সালাতকে সালাতুল আওয়াবীন বলার হাদিস গুলো যঈফ।
তিরমিযী, মিশকাত ১১৭৩-৭৪, সিলসিলা যঈফাহ হা/৪৬৯, ৪৬৭, ৪৬১৭।
FAQ
প্রশ্ন: সালাতুদ-দুহার বিধান কী?
উত্তর: শাইখ আব্দুল আযীয ইবন আবদুল্লাহ ইবন বায রহ. বলেন, সালাতুদ-দুহা গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে তা পালন করেছেন এবং সাহাবীগণকে তা পালন করার নির্দেশ দিয়েছেন। (মাজমুউল ফাতওয়া: ৩৯৬/১১)
প্রশ্ন: সালাতুদ-দুহা ফজিলত কী?
উত্তর: রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমাদের শরীরের প্রতিটি হাড় ও জোড়া সদকা করার দাবি নিয়ে সকালে উপনীত হয়। তোমাদের প্রতিটি তাসবীহ (সুবহানাল্লাহ বলা) সদকা, প্রতিটি তাহমিদ (আলহামদুলিল্লাহ বলা) সদকা, প্রতি তাহলীল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু বলা) সদকা এবং সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করা সদকা। আর দুই রাকাত সালাতুত-দোহা আদায় করা উল্লিখিত সব কর্মের সমান হবে। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭২০)।
প্রশ্ন: সালাতুদ-দুহার সময় কোনটি?
উত্তর: শাইখ আব্দুল আযীয ইবন আবদুল্লাহ ইবন বায রহ. বলেন, সূর্য এক ধনুক পরিমাণ উপরে উঠা থেকে নিয়ে পশ্চিম আকাশে হেলে পড়ার আগ পর্যন্ত। উত্তম হলাে, এ সালাত পূর্ণ গরম হওয়ার পরপরই পড়ে নেওয়া। আর একেই বলে আওয়াবীনের সালাত। (মাজমুউল ফাতাওয়া: ৩৯৬/১১)।
প্রশ্ন: সালাতুদ-দুহার সময় কখন শুরু হয় এবং কখন শেষ হয়?
উত্তর: শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ ইবন উসাইমীন রহ. বলেন, সূর্য এক ধনুক পরিমাণ উঁচু হওয়ার পর থেকে অর্থাৎ সূর্য উদয়ের পনের বা ত্রিশ মিনিট পর থেকে সূর্য ঢলে পড়ার পাঁচ-দশ মিনিট পূর্ব পর্যন্ত। (মাজমুউল ফাতাওয়া: ৩০৬/১৪)
প্রশ্ন: সালাতুদ-দুহা রাকাত সংখ্যা কত?
উত্তর: শাইখ আব্দুল আযীয ইবন আবদুল্লাহ ইবন বায রহ. বলেন, সর্বনিম্ন রাকাত সংখ্যা দুই রাকাত। আর যদি চার, ছয় বা আট রাকাত বা তার চেয়েও বেশি কেউ স্বীয় সামর্থ্য অনুযায়ী আদায় করে, তাতে কোন অসুবিধা নেই। এ সালাতের রাকাত সংখ্যার সুনির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা নির্ধারিত নয়। (মাজমুউল ফাতাওয়া: ৩৯৯/১১)
শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ ইবন উসাইমীন রহ. বলেন, সর্বনিম্ন দুই রাকাত। আর বেশির কোনো সীমা নেই। মানুষ তার সামর্থ্য অনুযায়ী আদায় করবে। (মাজমুউল ফাতাওয়া: ৩০৫/১৪)।
সর্বনিম্ন দুই রাকাত। বেশির কোনো সীমা নেই। তবে উত্তম হলাে, আট রাকাতের অধিক না হওয়া। উচিত হলাে, প্রতি দুই রাকাতে সালাম ফিরানো। এক সালামের একসাথে পড়া উচিৎ নয়। (আল-লাজনাহ আদ-দায়িমাহ: ১৪৫/৬)
প্রশ্ন: প্রতিদিন সালাতুদ-দুহা সুন্নাত কিনা?
উত্তর: শাইখ আব্দুল আযীয ইবন আবদুল্লাহ ইবন বায রহ. বলেন, সালাতুদ-দুহা প্রতিদিনের সুন্নাত। (মাজমুউল ফাতাওয়া: ৩০-৫৯)। শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ ইবন উসাইমীন রহ. বলেন, সবচেয়ে স্পষ্ট কথা হলাে, সালাতুদ-দুহা সবসময় সুন্নাত। (আশ-শারহুল মুমতি’: ৪-৮৩)।
প্রশ্ন: ইশরাক সালাত ও সালাতুদ-দুহার মধ্যে পার্থক্য কী?
উত্তর: শাইখ আব্দুল আযীয ইবন আবদুল্লাহ ইবন বায রহ. বলেন, ইশরাকের সালাত ও সালাতুদ-দুহা একই সালাত। প্রথম ওয়াক্তের মধ্যে সালাতুদ-দুহা আদায় করাকে ইশরাক বলে। (মাজমুউল ফাতাওয়া: ৪০১/১১)
শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ ইবন উসাইমীন রহ. বলেন, ইশরাকের সালাতই হলো সালাতুদ-দুহা, তবে যদি তুমি তা সূর্য উজ্জ্বল হওয়া ও এক ধনুক পরিমাণ উপরে উঠার পর সকাল সকাল আদায় কর, তবে তা হবে ইশরাকের সালাত। আর যদি তা শেষ ওয়াক্তে বা মাঝামাঝি সময়ে আদায় করা হয় তখন তা হবে সালাতুত দোহা। (লিকায়ুল বাব আল-মাফাতীহ)।
প্রশ্ন: সালাতুদ-দুহার উত্তম সময় কোনটি?
উত্তর: সালাতুদ-দুহার উত্তম সময়, উট (বা গাে) বাছুরের গা যখন সূর্যের তাপে গরম হতে শুরু করে। আর তা হলো, সূর্যের আলো পরিপূর্ণ ছড়ানো ও উজ্জ্বল হওয়ার পর থেকে নিয়ে সূর্য মাথা বরাবর হওয়ার আগ পর্যন্ত। (ফতোয়া বিষয়ক আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ: ১৪৮/৬)
প্রশ্ন: নফল সালাত যেমন সালাতুদ-দুহা জামাতে পড়ার বিধান কী?
উত্তর: শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ ইবন উসাইমীন রহ. বলেন, একাধিক ব্যক্তি একত্রিত হলে কোন কোন নফল সালাত জামাতে পড়লে কোন অসুবিধা নেই, তবে এটি এমন সুন্নাতে রাতেবা নয় যে, যখনই সুন্নাত সালাত পড়বে তা জামাতের সাথে পড়তে হবে। (মাজমুউল ফাতাওয়া: ৩৩৫/১৪)
প্রশ্ন: ঈদ অথবা বৃষ্টির সালাত সালাতুদ-দুহার স্থলাভিষিক্ত হবে কিনা?
উত্তর: ঈদ অথবা বৃষ্টির সালাত সালাতুদ-দুহার স্থলাভিষিক্ত হবে না, তা আলাদা সালাত। (আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ: ২৫৬/৭)
প্রশ্ন: সালাতুদ-দুহা পড়া সারা জীবনের জন্য সুন্নাতই থাকে নাকি একবার পড়া দ্বারা তা ফরয হয়ে যায়?
উত্তর: সালাতুদ দুহা একবার বা একাধিকবার পড়ার কারণে সে সুন্নত আদায় সব সময়ের জন্য বাধ্যতামূলক বা ফরয হয়ে যায় না; বরং তা আগের মতো সুন্নাত থাকে। (আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ: ২৫৭/৭)
প্রশ্ন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে, তিনি বলেন,
যে ব্যক্তি ফযরের সালাত জামাতে আদায় করে, তারপর একই জায়গায় বসে সূর্য উদয় হওয়া পর্যন্ত আল্লাহর যিকির করে অতঃপর দুই রাকাত সালাত আদায় করে সে ব্যক্তি একটি হজ ও একটি পূর্ণ উমরার সওয়াব পাবে। (তিরমিযী, হাদীস নং ৫৮৬) এ দুই রাকাত সালাতুদ দুহা কিনা?
উত্তর: হাদীসে উল্লিখিত দুই রাকাত সালাত সালাতুদ-দুহা, তবে এ দুই রাকাত সালাতের আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। কারণ, এ দুই রাকাত সালাত ফজরের সালাত আদায়ের পর থেকে সূর্য ওপরে উঠার আগ পর্যন্ত স্বীয় সালাত আদায় করার স্থানে বসে থাকার সাথে সম্পৃক্ত। (আল লাজনা আদ-দায়িমাহ: ১৪৮/৬)
প্রশ্ন: মুসাফিরের জন্য সালাতুদ দুহা আছে কিনা?
উত্তর: সালাতুদ-দুহা মুসাফির ও মুকিম সবার জন্য সুন্নাত। (আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ: ১৫১/৬)।
প্রশ্ন: সালাতুল আওয়াবীন নামে কোন সালাত আছে কিনা?
উত্তর: সালাতুল আওয়াবীন নামে আলাদা কোন সালাত নেই, তবে সূর্যের রশ্মি প্রখর হওয়ার সময় থেকে নিয়ে সূর্য ডলার পূর্ব পর্যন্ত যে সালাতুদ-দুহা পড়া হয় তাকেই হাদিসে সালাতুল আওয়াবীন বলা হয়েছে। (আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ: ১৫৪/৬)
প্রশ্ন: আইয়ামে বীযের সাওম সফরে না রাখলে তখন তার বিনিময়ে মাসের অন্য দিনগুলোতে রাখতে হবে কি না? অনুরূপ সালাতুদ-দুহা আদায় করতে না পারলে অন্য সময় আদায় করতে হবে কি না?
উত্তর: আইয়ামে বীযের সাওম এবং সালাতুদ-দুহা সবই নফল ইবাদত। সফরে থাকা বা বাড়িতে থাকা কোনো অবস্থায় এ ধরনের ইবাদত বাধ্যতামূলক নয়। সুতরাং যে এ সব ইবাদতগুলো পালন করবে, তাকে সওয়াব দেওয়া হবে। আর যে পালন করবে না মুকীম হোক বা মুসাফির হোক তার কোনো গুনাহ নেই। (আল-লাজনা আদ দায়িমাহ: ১৫৬/৬)
প্রশ্ন: সালাতুদ-দুহায় কেরাত উচ্চস্বরে পড়বে নাকি নিম্নস্বরে পড়বে?
উত্তর: শাইখ আব্দুল আযীয ইবন আবদুল্লাহ ইবন বায রহ. বলেন, দিনের সালাত যেমন সালাতুদ-দুহা ও অন্যান্য সালাতে কিরাত আস্তে পড়া সুন্নাত। (মাজমুউল ফাতাওয়া: ১২৭/১১)
প্রশ্ন: সালাতুদ-দুহা যখন ছুটে যায় তখন তা কাযা করা হবে কিনা?
উত্তর: সালাতুদ-দুহা ছুটে গেলে তার কোন কাযা নেই। কারণ, তা যে সময় পড়ার কথা সেই সময়েই পড়তে হবে। পরে পড়ার কোনো বিধান নেই। (মাজমুউল ফাতাওয়া: ৩০৫/১৪)।
চাশতের নামাজের নিয়ম. ইশরাকের নামাজ পড়ার নিয়ম
ইশরাকের নামাজ পড়ার নিয়ম, ইশরাক ও চাশতের নামাজের সময়, ইশরাকের নামাজের সময়, ইশরাকের নামাজ কত রাকাত, ইশরাকের নামাজ পড়ার সময়, ইশরাকের নামাজ কোন সূরা দিয়ে পড়তে হয়,