সন্তানের নামকরণ শিশুর নামকরণ; ইসলামের যে বিষয়গুলো মনে রাখা উচিত

হযরত আবু মুসা (রা) হইতে বর্ণিত হইয়াছে, তিনি বলিয়াছেন, আমার একটি পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করিলে আমি তাহাকে লইয়া নবী করীম (স)-এর নিকট উপস্থিত হইলাম। তিনি তাহার নাম রাখিলেন ইবরাহীম এবং একটি খেজুর দিয়া তিনি তাহার ‘তাহনীক’ [খেজুর মুখে চিবাইয়া নরম করিয়া সদ্যজাত শিশুর মুখের ভিতরে উপ রের তালুতে লাগাইয়া দেয়াকে পরিভাষায় ‘তাহনীক’ (********) বলা হয়।] করিলেন। আর তাহার জন্য বরকতের দোয়া করিলেন। অতঃপর তাহাকে আমার কোলে ফিরাইয়া দিলেন। ইবরাহীম ছিল হযরত আবূ মুসার বড় সন্তান।

 

(বুখারী, মুসলিম)

 

ব্যাখ্যাঃ এই হাদীসটিতে দুইটি কথা বলা হইয়াছে। একটি হইল, সদ্যজাত শিশুর নামকরণ। আর দ্বিতীয়টি হইল, সদ্যজাত শিশুর ‘তাহনীক’ করা।

 

নামকরণ সম্পর্কে হাদীসের ভংগী হইতে স্পষ্ট বুঝিতে পারা যায়, এই নাম করণে বিলম্ব করা বাঞ্ছনীয় নয়। বরং কিছুমাত্র বিলম্ব না করিয়া সদ্যজাত শিশুর নাম রাখঅ আবশ্যক। হযরত আবূ মুসা (রা)-এর পুত্র সন্তান প্রসূত হওয়ার পর পরই অনতিবিলম্বে তাহাকে লইয়া নবী করীম (স)-এর খেদমতে হাজির হইলেন এবং তিনি তাহার নাম রাখিলেন ইবরাহীম। ইমাম বায়হাকী বলিয়াছেন, সদ্যজাত শিশুর নামকরণ পর্যায়ে দুই ধরনের হাদীস বর্ণিত হইয়াছে। এক পর্যায়েল হাদীস হইতে জানা যায়, সপ্তম দিনে আকীকাহ করা কালে নামকরণ করিতে হইবে। আর দ্বিতীয় পর্যায়ের হাদীসে বলা হইয়ছে, শিশুর জন্মের পর-পরই অবলিম্বে নাম রাখিতে হইবে। কিন্তু প্রথম পর্যায়ের তুলনায় এই দ্বিতীয় পর্যায়ের হাদীস সমূহ অধিক সহীহ।

 

ইহার বিপরীত কথা প্রমাণিত হয় হযরত আয়েশা (রা) বর্ণিত হাদীস হইতে। তিনি বলিয়াছেনঃ

 

****************************************

 

নবী করীম (স) হযরত হাসান ও হুসাইনের (রা) আকীকাহ কারিলেন, জন্মের সপ্তন দিনে এবং তাহাদের দুইজনের নাম রাখিলেন।

 

(আল-বাজ্জার, ইবনে হাব্বান, হাকেম)

 

আমর ইবনে শুয়াইব- তাঁহার পিতা হইতে- তাঁহার দাদা হইতে বর্ণিত হইয়াছে, তিনি বলিয়াছেনঃ

 

****************************************

 

রাসূলে করীম (স) আমাকে সন্তান জন্মের সপ্তম দিনে তাহার নামকরণ করিতে আদেশ করিয়াছেন।

 

(তিরমিযী)

 

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) হইতে বর্ণিত হইয়াছে, তিনি নিজে বলিয়াছেনঃ

 

****************************************

 

সাতটি কাজ সুন্নাত। সপ্তম দিনে সদ্যজাত শিশুর নামকরণ করিতে হইবে, খাতনা করিতে হইবে, তাহার দেহের ময়লা দূল করিতে হইবে, কানে ক্ষুদ্র ছিদ্র করিতে হইবে। তাহার নামে আকীকাহ করিতে হইবে, তাহার মাথা মুন্ডন করিতে হইবে এবং আকীকায় যবেহ করা জন্তুর রক্ত শিশুর মাথায় মাখিতে হইবে ও তাহার চুলের ওজন পরিমাণ স্বর্ণ বা রৌপ্য সাদকা করিতে হইবে।

 

(দারে কুতনী- আল-আওসাত)

 

আলামা বদরুদ্দীন আইনী লিখিয়াছেন, এই বর্ণনাটির সনদ যয়ীফ। এই পর্যায়ে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা) হইতে নিম্নোদ্ধৃত মরফু হাদীসটি বর্ণিত হইয়াছেঃ

 

****************************************

 

সদ্যজাত সন্তানের সপ্তম দিন হইলে তাহার নামে রক্ত প্রবাহিত কর, তাহার দেহের ময়লা আবর্জনা দূর কর এবং তাহার নাম ঠিক কর।

 

(দারে কুতনী- আল-আওসাত)

 

এই হাদীসটির সনদ ***** ‘উত্তম’।

 

ইমাম খাত্তাবী বলিয়াছেনঃ

 

****************************************

 

বহু বিশেষজ্ঞের মত হইল সদ্যজাত শিশুর নাম রাখা সপ্তম দিনের পূর্বেও জায়েয।

 

মুহাম্মদ ইবনে শিরীন, কাতাদাহ ও ইমাম আওজায়ী বলিয়াছেনঃ

 

****************************************

 

একটি সন্তান যখন জন্মগ্রহণ করে, তখন বুঝিতে হইবে তাহার সৃষ্টি পূর্ণতা প্রাপ্ত হইয়াছে। অতএব ইচ্ছা করিলে তৎক্ষণাত নামকরণ করা যাইতে পারে।

 

মুহাল্লাব বলিয়াছেনঃ সদ্যজাত শিশুর নামকরণ জন্মগ্রহণ সময়ে এবং উহার এক রাত্র বা দুই রাত্র পর শিশুর পিতা যদি সপ্তম দিনে আকীকাহ করার নিয়্যত না করিয়া থাকে, তবে তাহা জায়েয হইবে। আর যদি সপ্তম দিনে আকীকা করার নিয়্যত থাকে, তাহা হইলে সপ্তম দিন পর্যন্ত নামকরণ বিলম্বিত করা যাইতে পারে।

 

নামকরণ পর্যায়ে রাসূলে করীম (স) বলিয়াছেনঃ

 

****************************************

 

কিয়ামতের দিন তোমাদিগকে তোমাদের ও তোমাদের বাপ-দাদার নামে ডাকা হইবে। অতএব তোমরা তোমাদের জন্য উত্তম নাম ঠিক কর।

 

বস্তুত উত্তম-তথা ইসলামী ভাবধারা সম্বলিত নামকরণ ইসলামী সভ্যতা ও সংস্কৃতির গুরুত্বপুর্ণ অংশ। নামের পরিচয়টা কোন অংশেই হেলাফেলার নয়। কাজেই সদ্যজাত শিশুর নাম যেমন উত্তম হইতে হইবে, তেমনি উহা ইসলামী ভাবধারা সম্পন্নও হইতে হইবে। নাম দ্বারাই বুঝাইতে হইবে যে, লোকটি মুসলমান, ইসলামে বিশ্বাসী।

 

প্রথমোক্ত হাদীসের দ্বিতীয় কথা হইল, সদ্যজাত শিশুর ‘তাহনীক’ করা। এ সম্পর্কে ইতিপূর্বে বিস্তারিত আলোচনা করা হইয়াছে। এখানে যে প্রশ্নটি আলোচিতব্য, তাহা হইল, ‘তাহনীক’ করার যৌক্তিকতা ও ইহাতে নিহিত ফায়দাটা কি? কেহ কেহ বলিয়াছেন, এইরূপ করিয়া উহাকে খাওয়ার অভ্যস্ত করা হয়। কিন্তু ইহা যে কত হাস্যকর, তাহা বলার অপেক্ষা রাখে না। কেননা সদ্যজাত শিশুর ‘তাহনীক’ করার সময় তাহাকে খাওয়ার অভ্যাস করানোর কোন যৌক্তিকতা থাকিতে পারে না। শিশুর খাদ্য গ্রহণের ক্ষমতা হয় জন্মের দুই বছর কিংবা তাহার কিছু কম বেশী সময় অতিবাহিত হওয়ার পর।

 

এই কাজের একটা তাৎপর্যই বলা চলে। তাহা হইল, এইরূপ করিয়া তাহার দেহের অভ্যন্তরে ঈমানের রস পৌঁছাইবার ব্যবস্থা হইয়া থাকে। কেননা এই কাজে খেজুর ব্যবহার করাই বিধেয়। আর খেজুর এমন গাছের ফল, রাসূলে করীম (স) যাহার সহিত মু’মিনের সাদৃশ্য আছে বলিয়া ঘোষণা করিয়াছেন। উহার মিষ্টতা এই ধরনেরই জিনিস। বিশেষ করিয়া এই কাজটি যখন দ্বীনদার খোদাভীরু মুরব্বী পর্যায়ের লোকদের দ্বারা করারই নিয়ম তখন তাহার মুখের পানি শিশুর উদরে প্রবেশ করানোর একটা শুভ ক্রিয়া অবশ্যম্ভাবী। রাসূলে করীম (স) যখন আবদুল্লাহ ইবনে জুবাইরের এই কাজ করিয়াছিলেন, তখন ইহা তাঁহার একটা বিশেষ মর্যাদার ব্যাপার হইয়াছিল। তিনি খুব ভাল কুরআন পড়িতেন এবং পবিত্র ইসলামী জীবন যাপন করিয়াছেন, ইহা তো সামান্য কথা নয়। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আবূ তালহারও ‘তাহনীক’ তিনি করিয়াছিলেন। ফলে দেখা যায়, ইবনে আবূ তালহা পরিণত জীবনে অতীব জ্ঞানের অধিকারী, বড় আলেম ও মর্যদা সম্পন্ন হইয়াছিলেন। তিনি জীবনে সকল নেক কাজের অগ্রবর্তী ভূমিকা পালন করিতেন। ইহা যে, রাসূলে করীম (স)-এর মুখের পানি তাঁহার উদরে প্রবেশ করার শুভ ক্রিয়া নয়, তাহা কি কেহ জোর করিয়া বলিতে পারে?

FOR MORE CLICK HERE

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]