হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা) হইতে বর্ণিত হইয়াছে, তিনি হযরত নবী করীম (স) হইতে বর্ণনা করিয়াছেন, তিনি বলিয়াছেনঃ আল্লাহর সন্তুষ্টি জন্মদাতার সন্তুষ্টিতে নিহিত এবং আল্লাহর ক্রোধ ও রোষ জন্মদাতার রোষ-অসন্তুষ্টিতে নিহিত।
(তিরমিযী, ইবনে হাব্বান, হাকেম)
ব্যাখ্যাঃ হাদীসটির বক্তব্য সুস্পষ্ট। পিতা সন্তুষ্ট হইলে আল্লাহও সন্তুষ্ট হন এবং পিতা অসন্তুষ্ট হইলে আল্লাহও অসন্তুষ্ট হন, ইহাই হাদীসটির কথা ও ঘোষণা।
হাদীসের শব্দ ***** অর্থা সাধারণতঃ পিতা। এই হাদীসে শুধু পিতার কথা বলা হইয়াছে, অথচ মা’র অধিকার সর্বাগ্রগণ্য, ইহা কিরূপ কথা?
ইহার জওয়াবে বলা যায়, এই হাদীসটিতে যদি শুধু পিতার কথাই বলা হইয়া থাকে এবং মার কথা নাও বলা হইয়া থাকে, তবুও তাহাতে কোন দোষ নাই। কেননা পিতার মর্যাদা সন্তানের নিকট যদি এতটা নাজুক হইয়া থাকে, তাহা হইলে মা’র মর্যাদা সন্তানের নিকট ইহা হইতেও অনেক গুণ- অতন্তঃ তিনগুণ-বেশী হইবে, তাহা তো এই হাদীস হইতেই বুঝা যায়।
কিন্তু মুল কথায় রাসূলে করীম (স) শুধু পিতার কথা বলিয়াছেন এমন মনে হয় না। বরং তিনি পিতা-মাতার উভয়ের কথাই বলিয়াছেন, এই কথা বিশ্বাস করার অনেক কারণ আছে। বিশেষ করিয়া এই হাদীসটিরই যে বর্ণনা তাবারানী উদ্ধৃত করিয়াছেন তাহাতে পিতা-মাতা উভয়ের কথাই আছে। উহার ভাষা এইঃ
****************************************
আল্লাহর সন্তুষ্টি পিতা-মাতা দুইজনের সন্তুষ্টি এবং আল্লাহর রোষ-অসন্তষ্টি পিতা-মাতা উভয়ের অসন্তুষ্টিতে নিহিত।
কিন্তু কেন এই কথা? আল্লাহর সন্তুষ্টি অসন্তুষ্টির সহিত পিতা মাতার সন্তুষ্টি অসন্তুষ্টির এই গভীর সম্পর্ক এবং প্রথমটির দ্বিতীয়টির উপর এই নির্ভরশীলতার মুল কারণ কি?
ইহার কারণ হইল, আল্লাহ তা’আলার আদেশ নিষেধ পালন করিলে যে আল্লাহ সন্তুষ্ট হন এবং তাঁহাকে অমান্য-অগ্রাহ্য করিলে যে তিনি অসন্তুষ্ট ও ক্রদ্ধ হন ইহা তো সকলেরই জানা কথা। আর ইহাই যদি জানা কথা হইয়া থাকে, তাহা হইলে এই কথাটুকুও জানিয়া রাখা উচিত যে, স্বয়ং আল্লাহ তা’আলাই পিতা-মাতার হক আদায় করিতে ও সম্মান শ্রদ্ধা ভক্তি করিতে আদেশ দিয়াছেন। এমতাবস্থায় যে লোক পিতা-মাতার প্রতি কর্তব্য পালন করিবে-ইহা আল্লাহর আদেশ মনে করিয়া, সে ঠিক আল্লাহরই আদেশ পালন করিল এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের কারণ সৃষ্টি করিল। পক্ষান্তরে যদি কেহ পিতা-মাতার প্রতি উপেক্ষা প্রদর্শণ করিল- আল্লাহর নিষেধ থাকা সত্ত্বেও সে কেবল পিতা-মাতারই অপমান করিল না, সে আল্লাহরও অমান্য করিল। কাজেই সে অবস্থায় যে আল্লাহর রোষ-অসন্তুষ্টি বর্ষিত হইবে, তাহা কে রোধ করিবে?.... কাজেই রাসূলে করীম (স)-এর এই কথাটিতে একটি কঠোর কঠিন সতর্কবাণী- অশুভ অকল্যাণের ঘোষণা- উচ্চারিত হইয়াছে। ইহাপেক্ষা কঠোর কঠিন বাণী আর কিছুই হইতে পারে না্
হযরত আবুদ দারদা (রা) বর্ণিত একটি হাদীসে বলা হইয়াছে, রাসূলে করীম (স) বলিয়াছেনঃ
****************************************
পিতা (এবং মাতাও) জান্নাতের দরজা সমূহের মাধ্যম।
মুসনাদে আহমাদের একটি বর্ণনায় ****** এর পরিবর্তে **** শব্দটি বলা হইয়াছে। অর্থাৎ জান্নাতে যাওয়ার এবং উহাতে উচ্চতর মর্যাদা লাভ করার সর্বোত্তম অসীলা ও উপায় হইতেছে পিতা-মাতা। কেহ কেহ বলিয়াছেন, জান্নাতের বহু কয়টি দরজা পথ আছে। প্রবেশ করার জন্য উহাদের মধ্যে সর্বোত্তম দ্বার-পথ হইল মধ্যবর্তী দরজা। আর এই মধ্যবর্তী দ্বারপথে প্রবেশ লাভের প্রধান উপায় হইল পিতা-মাতার অধিকার ও মর্যাদা রক্ষা। এই কারণে পিতা-মাতার অধিকার হরণ ও তাহাদের সহিত সম্পর্কচ্ছেদ করা ও তাহাদের প্রতি অমর্যাদা দেখানো- রাসূলে করীম (স)-এর ঘোষণা মতে-কবীরা গুনাহ। রাসূলে করীম (স) সাহাবীদের লক্ষ্য করিয়া বলিলেনঃ
****************************************
পিতা (এবং মতও) জান্নাতের দরজা সমূহের মাধ্যম।
মুসনাদে আহমাদের একটি বর্ণনায় ***** এর পরিবর্তে ***** শব্দটি বলা হইয়াছে। অর্থাৎ জান্নাতে যাওয়অর এবং উহাতে উচ্চতর মর্যাদা লাভ করার সর্বোত্তম অসীলা ও উপায় হইতেছে পিতা-মাতা। কেহ কেহ বলিয়াছেন, জান্নাতের বহু কয়টি দরজা পথ আছে। প্রবেশ করার জন্য উহাদের মধ্যে সর্বোত্তম দ্বার-পথ হইল মধ্যবর্তী দরজা। আর এই মধ্যবর্তী দ্বারপথে প্রবেশ লাভের প্রধান উপায় হইল পিতা-মাতার অধিকার ও মর্যাদা রক্ষা। এই কারনে পিতা-মাতার অধিকার হরণ ও তাহাদের সহিত সম্পর্কচ্ছেদ করা ও তাহাদের প্রতি অমর্যাদা দেখানো- রাসূলে করীম (স)-এর ঘোষণা হতে- কবীরা গুনাহ। রাসূলে করীম (স) সাহাবীদের লক্ষ্য করিয়া বলিলেনঃ
****************************************
কবীরা গুনাহ সমূহের মর্ধে অধিক বড় গুনাহ কোনটি তাহা কি আমি তোমাদিগকে বলিব? সাহাবীদগণ বলিলেন, হ্যাঁ, অবশ্যই আমাদিগকে বলুন। অতঃপর তিনি বলিলেনঃ তাহা হইলঃ আল্লাহর সহিত শিরক করা এবং পিতা-মাতার সহিত সম্পর্কচ্ছেদ, অধিকার অনাদায় ও দুর্ব্যবহার করা।
******** ইসলামী বিধানের একটা বিশেষ পরিভাষা। ইহার অর্থঃ সন্তানের এমন সব কাজ করা বা কথা বলা কিংবা আচরণ গ্রহণ করা, যাহার ফলে পিতা-মাতার মনে ও দেহে কোন রূপ কষ্ট পায়।
****** ইসলামী বিধানের একটা বিশেষ পরিভাষা। ইহার অর্থঃ সন্তানের এমন সব কাজ করা বা কথা বলা কিংবা আচরণ গ্রহণ করা, যাহার ফলে পিতা-মাতা মনে ও দেহে কোন রূপ কষ্ট পায়।
হযরত মুগিরা ইবনে শুবা (রা) হইতে বর্ণিত হইয়াছে যে, রাসূলে করীম (স) বলিয়াছেনঃ
****************************************
নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা’আলা মা (সেই সঙ্গে পিতা)র সহিত সম্পর্কচ্ছেদ ও দুর্ব্যবহাররের অপরাধ করাহে হারাম করিয়া দিয়াছেন।
(বুখারী, মুসলিম)
পিতা-মাতার সহিত দুর্ব্যবহার, সম্পর্কচ্ছেদ ও অধিকার আদায় না করার আচরণের পরিণতি সম্পর্কে হাদীসে আরও কঠোর বাণী উচ্চারিত হইয়াছে। হযরত আবূ বাকরাতা (রা) হইতে বর্ণিত হইয়াছে, তিনি বলিয়াছেনঃ
****************************************
রাসূলে করীম (স) ইরশাদ করিয়াছেনঃ সমস্ত গুনাহ-ই এমন যে, তাহা হইতে আল্লাহ যাহা এবং যতটা ইচ্ছা মাফ করিয়া দিবেন। কিন্তু পিতা-মাতার সহিত সম্পর্কচ্ছেদ করণ, দুর্ব্যবহার করা, অধিকার আদায় না করার গুনাহ তিনি মাফ করিবেন না। বরং যে লোক এই গুনাহ করে তাহার জীবদ্দশায় ও মৃত্যুর পূর্বেই তাহার শাস্তি ত্বরান্বিত করেন।
(মিশকাত)
এই পর্যায়ে কুরআন মজীদে নিম্নোদ্ধৃত আয়াতটি অবশ্যই স্মার্তব্য; আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করিয়াছেনঃ
****************************************
তুমি তাহাদের (পিতা-মাতার) জন্য উহ বলিও না। তাহাদের দুই জনকে ভৎসনা করিও না। তাহাদের দুইজনের জন্য সর্বদা দয়ার্দ্র হৃদয়ে বিনয়ের হস্ত অবনত করিয়া রাখ এবং বলঃ হে রব! এই দইজনের প্রতি রহমত বর্ষণ কর, যেমন তাহারা দুইজন আমাকে বাল্যবস্থায় লালন পালন করিয়াছেন।
আল্লাম কুরতুবী এই আয়াতটির তাফসীরে এই পর্যায়ের কতিপয় হাদীস উদ্ধৃত করিয়াছেন। একটি হাদীসে হযরত আবদুল্লাহ (রা) রাসূলে করীম (স) কে জিজ্ঞাসা করিলেনঃ
****************************************
মহান আল্লাহ তা’আলার নিকট বান্দাহর কোন কাজ অধিক প্রিয়, পছন্দনীয়”
নবী করীম (স) বলিলেনঃ ************* সময় মত ফরয নামায আদায় করা। জিজ্ঞাসা করিলেনঃ ইহার পর কোন টি? নবী করীম (স) বলিলেনঃ ******* অতঃপর পিতা মাতার সহিত ভাল-সম্ভ্রমপূর্ণ আচার আচরণ অবলম্বন।
এই হাদীসে নবী করীম (স) বলিয়াছেন, ইসলামের সর্বাধিকক গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ নামাযের পরই পিতা-মাতার সহিত সদ্ব্যবহার করার গুরুত্ব।
পরিভাষা হিসাবে ******** এরই বিপরীত অর্থজ্ঞাপক শব্দ হইল ******- হাদীস অনুযায়ী পিতা-মাতাকে গালাগাল করা ***** এর অন্তর্ভুক্ত এবং অন্যতম কবীরা গুনাহ। একজন সাহাবী বলিলেন ****** ইয়া রাসূল! পিতা-মাতাকেও কি কোন লোক গালাগাল করে? তিনি জওয়াবে বলিলেনঃ ************ হ্যাঁ, একজন লোক অপর এক লোকের পিতাকে গাল দেয়, তখন সে-ও তাহার পিতাকে গাল দেয়, একজন অপর জনের মা’কে গাল দেয়, সেও তাহার মা’কে গাল দেয়। আর এই ভাবেই একজন তাহার নিজের পিতা-মাতাকে গালাগাল করে।
পিতা-মাতার বৈধ ইচ্ছা-বাসনার বিরুদ্দতা করা *******- এর মধ্যে গণ্য। যেমন তাহা পূরণ করা ও পিতা-মাতার কথা মত কাজ করা ******* মধ্যে গণ্য।
আলোচ্য হাদীস সমূহ এবং এই পর্যায়ের আরও বহু হাদীস উপরোক্ত আয়াতটিরই ব্যাখ্যা মাত্র। উক্ত আয়াতের ভিত্তিতেই নবী করীম (স) এই সব কথা ইরশাদ করিয়াছেন। অতএব কুরআন ও হাদীস যে পরস্পর সম্পৃক্ত, ওতোপ্রোত জড়িত তাহাতে একবিন্দু সন্দেহ থাকে না।