মৃত পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের কর্তব্য মা বাবার মৃত্যুর পর তাদের জন্য করণীয় আমলসূমহ

হযরত আবূ আসীদ মালিক ইবনে রবীয়াতা আস-সায়দী হইতে বর্ণিত হইয়াছে, তিনি বলিয়াছেন, আমি রাসূলে করীম (স)-এর নিকট বসা ছিলাম, এই সময় আনসার বংশের একজন লোক আসিয়া উপস্থিত হইল। অতঃপর বলিলঃ ইয়া রাসূল! আমার পিতা-মাতার মৃত্যুর পর তাহাদের সহিত সিলায়ে রেহমীও ভাল ব্যবহার করার এমন আর কোন কাজ অবশিষ্ট থাকিয়া গিয়াছে কি যাহা আমি করিতে পারি? রাসূলে করীম (স) জবাবে বলিলেনঃ হ্যাঁ, অবশ্যই করার মত কাজ আছে এবং তাহা মোটামুটি চারটি ভাগের কাজ। তাহা হইলঃ তাহাদের দুইজনের জন্য পরিপূর্ণ রহমতের জন্য দোয়া করিতে থাকা ও তাহাদের জন্য আল্লাহর নিকট মাগফিরাত চাওয়া, তাহাদের দুইজনের ওয়াদা প্রতিশ্রুতি পূরণ ও কার্যকর করা, তাহাদের দুইজনের বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং সেই রেহম সম্পর্ক রক্ষা করিয়া চলা যাহা তাহাদের দুইজনের সম্পর্কের দিক ছাড়া অন্য কোন দিক দিয়া তোমার উপর বর্তায় না।…. তাহাদের দুইজনের মৃত্যুর পর তাহাদের জন্য করনীয় শুভ আচারণের মোটামুটি এই কয়টি কাই অবশিষ্ট থাকে।

 

(আবূ দায়ূদ, ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমাদ)

 

ব্যাখ্যাঃ পিতা-মাতর সহিত সদ্ব্যবহার ও তাহাদের অধিকার আদায় করা সন্তানের অবশ্য কর্তব্য। কিন্তু এই কর্তব্য কেবল মাত্র তাহাদের জীবন্তকাল পর্যন্তই সীমাবন্ধ নহে। তাহাদের মৃত্যুর পর তাহাদের প্রতি   করনীয় কর্তব্য নিঃশেষ হইয়া যায় বলিয়া মনে করা যে সম্পূর্ণ ভূল, তাহা এই হাদীস হইতে স্পষ্ট ভাবে জানা যায়। মুসনাদে আহমাদ উদ্ধৃত হাদীসটির ভাষায় এই কথা জানা গিয়াছে জনৈক আনসার ব্যক্তির জিজ্ঞাসার জবাবে রাসূলে করীম (স)-এর বলা কথা হইতে। কিন্তু আবূ দায়ুদ ও ইবনে মাজার উদ্ধৃত বর্ণনায় *****- এর পরিবর্তে **** বলা হইয়াছে। ইহাতে মূল কথায় কোনই পার্থক্য হয় না। শুধু এতটুকুই পার্থক্য হয়, এই বর্ণনানুযায়ী প্রশ্নকারী আনসার বংশের নয়, সালেমা বংশের।

 

রাসূলে করীম (স)-এর জওয়াব হইতে জানা গেল, পিতা-মাতার মৃত্যুর পরও সন্তানের পক্ষে তাহাদেরই জন্য  চারটি কাজ করনীয় রহিয়াছে। প্রথমঃ

 

****************************************

 

তাহাদের দুইজনের জন্য পরিপুর্ণ রহমতের দোয়া করা এবং তাহাদের দুইজনের জন্য আল্লাহর নিকট গুনাহ মাফ চাওয়া।

 

এখানে *******অর্থ ‘রহমতের কালেমা’- পরিপুর্ণ রহমত নাজিল হওয়ার জন্য দোয়া করা। সম্ভবত এই দোয়াই আল্লাহ তা’আলা কুরআন মজীদে শিক্ষা দিয়াছেন এই বলিয়াঃ

 

****************************************

 

হে রব! পরোয়অর দিগার, আমার পিতা-মাতা দুই জনের প্রতি রহমত নাযিল কর ঠিক তেমনই যেমন তাহারা দুই জনে মিলিত হইয়া আমার শৈশব অবস্থায় থাকাকালে আমাকে লালন-পালন করিয়াছেন।

 

দ্বিতীয় কাজ হইলঃ ************* ‘পিতা-মাতা দুইজনের করা ওয়াদা প্রতিশ্রুত পরিপূরণ ও কার্যকর করণ’। পিতা-মাতা তাহাদের জীবদ্দশায় কাহারও সহিত কোন ভাল কাজের ওয়াদা করিয়া থাকিতে পারে। কিন্তু জীবনে বাঁচিয়া থাকা অবস্থায় তাহারা নিজেরা তাহা পূরণ করিয়া যাইতে পারে নাই। এইরূপ ওয়াদা প্রতিশ্রুতি পরিপূরণ সন্তানের দায়িত্ব। পিতা-মাতার গ্রহণ করা ঋণও এই পর্যায়ের জিনিস। কেননা তাহাও তো তাহারা গ্রহন করিয়াছিল ফিরাইয়া দিবার ওয়াদা করিয়া। কিন্তু জীবদ্দশায় তাহা তাহারা ফিরাইয়অ দিয়া যাইতে পারে নাই।

 

তৃতীয় হইল, পিতা-মাতার ইন্তিকালের পর তাহাদের আত্মীয় স্বজন ও বন্ধু বান্ধনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন। অন্য একটি হাদীসে এই পর্যায়ে নবী করীম (স) এই কথাটি উদ্ধৃত হইয়াছেঃ

 

****************************************

 

পিতা-মাতার চলিয়া যাওয়া ও সন্তানের তাহাদের স্থলাভিষিক্ত হওয়ার পর পিতা-মাতার বন্ধু পরিবার ও ব্যক্তিদের সহিত সম্পর্ক রক্ষা করিয়া চলা পিতা-মাতার সহিত সিলায়ে রেহমী করার অতীব গুরুত্বপুর্ণ কাজ।

 

স্বয়ং নবী করীম (স) তাঁহার প্রথম বেগম হযরত খাদীজাতুল কুবরা (রা)-এর আত্মীয়-স্বজনের সহিত তাঁহার ইন্তেকালের  পরও সিলায়ে রেহমী রক্ষা করিয়া চলিয়াছেন। ইহা তাঁহার আমল। তাহা হইলে পিতা বন্ধুদের সহিত যে অতি জরুরী ভাবে সিলায়ে রেহমী রক্ষা করিয়াছেন, তাহাতে আর সন্দেহ কি।

 

আর চতুর্থ হইল, কেবল মাত্র পিতা-মাতার দিক দিয়া ও পিতা-মাতার কারণে যাহাদের সহিত রেহমী সম্পর্ক রহিয়াছে, তাহাদের সহিত সিলায়ে রেহমী করিয়া যাওয়া।

 

এই হাদীসটি ইবনে হাব্বান ও তাঁহার সহীহ হাদীস গ্রন্হেও উদ্ধৃত করিয়াছেন। তাহাতে শেষে একটু বেশী কথা রহিয়াছে। তাহা হইলঃ

 

****************************************

 

রাসূলে করীম (স)-এর কথা শুনার পর লোকটি বলিলঃ এই কাজগুলি তো খুব বেশী নয় বরং ইহা অতীব উত্তম কাজ। তখন নবী করীম (স) বলিলেনঃ তাহা হইলে তুমি এই অনুযায়ী আমল করিতে থাক।

 

(*********)

 

রাসূলে করীম (স)-এর উপরোক্ত কথা হইতে তাঁহার নেতৃত্বে গঠিত সমাজের বৈশিষ্ট্য ও বিশেষত্ব স্পষ্ট বুঝা যায়। সে সমাজের লোকদের পারস্পরিক শুভেচ্ছা পোষণ, ওয়াদা প্রতিশ্রুতি সংরক্ষণ,  পারস্পরিক বন্ধুতা-প্রীতি ও ভালবাসার সম্পর্ক স্থাপন এবং রক্ত সম্পর্কের হক আদায় করা এবং উহার অব্যাহত ধারাবাহিকতা রক্ষা করা। একজন মরিয়া গেলে তাহার জীবদ্দশায় এই পর্যায়ের কৃত যাবতীয় কাজ বন্ধ হইয়া না যাওয়া বরং উহার ধারাবাহিকতা রক্ষা করার বংশানুক্রমিক দায়িত্বশীলতা। বস্তুত সন্তান যেমন পিতা-মাতার পরিত্যাক্ত বস্তুগত সম্পদ-সম্পত্তির উত্তরাধিকার পাইয়া থাকে, তেমনি তাহাদের অ-বস্তুগত ন্যায়-কাজ সমূহ করার দায়িত্বের উত্তরাধিকারও পাইয়া থাকে। অ-ইসলামী সমাজে এই মহৎ ব্যবস্থার কোন দৃষ্টান্তই খুঁজিয়অ পাওয়া যাইতে পারে না।

FOR MORE CLICK HERE

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]