ইসলামের দৃষ্টিতে তালাক

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা) হইতে বর্ণিত হইয়াছে, তিনি রাসূলে করীম (স) হইতে বর্ণনা করিয়াছেন, তিনি বলিয়াছেন, মহীয়ান, গরীয়ান আল্লাহ তা’আলার নিকট সমস্ত হালাল কাজের মধ্যে ঘৃণ্যতম কাজ হইতেছে তালাক।

 

(আবূ দায়ূদ, ইবনে মাজাহ)

 

ব্যাখ্যাঃ উপরোদ্ধৃত হাদীসটিতে তালাক সম্পর্কে ইসলঅমের দৃষ্টিকোণ তুলিয়া ধরা হইয়াছে। হাদীসটির ভাষ্য হইতে স্পষ্ট বুঝা যায়, তালাক আল্লাহর নিকট হালাল বটে; কিন্তু ইহা নিকৃষ্টতম ও ঘৃণ্যতম হালাল। হালাল-হারাম আল্লহ তা’আলাই নির্ধারিত করিয়া দিয়াছেন। হারাম হইল তাহা যাহা করিতে আল্লাহ তা’আলা স্পষ্ট ভাষায় নিষেধ করিয়াছেন এবং যাহা করিলে আল্লাহ তা’য়ালা সন্তুষ্ট ও ক্রদ্ধ হন। কুরআন বা রাসূলে করীম (স)-এর মাধ্যমে জানাইয়া দিয়াছেন এবং যাহা অকাট্য দলীল (******) দ্বারা প্রমাণিত।

 

আর হালাল তাহা যাহা করিলে আল্লাহ তা’আলা অসন্তুষ্ট হন না, ক্রব্ধ হন না; বরং সন্তুষ্ট হন বলিয়া জানাইয়া দেওয়া হইয়াছে। কিন্তু তালাক হইল এমন একটা কাজ যাহা করিলে আল্লাহ তা’আলা কিছু মাত্র সন্তুষ্ট হন না;দ বরং অত্যন্ত বেশী অসন্তুষ্ট ও ক্রুব্ধ হন, যদিও তাহা হারাম করিয়া দেওয়া হয় নাই। ইহার পিছনে নিশ্চয়ই কারণ নিহিত রহিয়াছে। সে কারণের বিশ্লেষণের পূর্বে ‘তালাক’ বলিতে কি বুঝায়, তাহার ব্যাখ্যা প্রয়োজন।

 

ইমাম নববী বলিয়াছেনঃ ‘তালাক ****** শব্দের অর্থঃ ***** ছড়িয়া দেওয়া ত্যাগ করা বা বন্ধন খুলিয়া দেওয়া। আরবী ভাষায় বলা হয় **** ‘আমি শহর ত্যাগ করিয়াছি’। শহর ছাড়িয়া চলিয়া গিয়াছে। (******)

 

আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী লিখিয়াছেনঃ

 

‘তালাক” শব্দের অভিধানিক অর্থঃ ****** বাধঁন খুলিয়া ফেলা। জন্তু-জানোয়ার রশি দিয়া বাঁধিয়া রাখার পর রশি খুলিয়া উহাকে মুক্ত করিয়া দিলে বলা হয় *****: ‘উহার গলার রশির বাঁধন খুলিয়া ফেলিয়াছি’। উহাকে ছাড়িয়া দিয়াছি, উহাকে অন্যত্র চলিয়া যাইতে দিয়াছি। আর শরীয়অতের পরিভাষায় ‘তালাক’ হইলঃ ********* বিবাহের বন্ধন তুলিয়া ও খুলিয়া দেওয়া। (*******)

 

ইমাম মুহাম্মদ ইবনে ইসমাইল আল-কাহলানী ছানয়ানী ও ইবনে হাজার আল-আসকালানী লিখিয়াছেনঃ তালাক শব্দের অভিধানিক অর্থঃ ******* ‘শক্ত রজ্জুর বাঁধন খুলিয়া ফেলা’। এই শব্দটি গ্রহীত হইয়াছে ৮*** হইতে। ইহার অর্থ ছাড়িয়া দেওয়া, ত্যাগ করা। আর শরীয়াতের পরিভাষায় ইহার অর্থঃ ****** বিববাহের শক্ত বাঁধন খুলিয়া দেওয়া’। ইসলামরে পূর্বেও এই শব্দের ব্যাপক ব্যবহাররের কথা বিশেষজ্হগণ স্বীকার করিয়াছেন।

 

বস্তুত বিবাহ একটা বন্ধন। ইহাতে দুই বিচ্ছিন্ন ও পরস্পরের জন্য হারাম ব্যক্তিসত্তা ও একজন পুরুষ ও একজন মেয়েকে-ঈজাব ও কবুলের শক্ত রশি দিয়া সামাজিক সমর্থনের মাধ্যমে বাঁধিয়া দেওয়া হয়। এক দেহ এক প্রাণ হইয়া একত্র জীবন যাপন, জৈবিক উদ্দেশ্যে ও কামনা-বাসনা পরিপূরণ এবং এক সঙ্গে থাকিয়া পারিবারিক দায়িত্ব পালন করার উদ্দেশ্যেই এই বাঁধন সংস্থাপিত করা হয়। এই বাঁধনকে ছিন্ন করা, এক সঙ্গে থাকিয়া দাম্পত্য জীবন যাপনের সিদ্ধানন্তকে বাতিল করিয়া পরস্পরিক বিচ্ছিন্ন হইয়া যাওয়া এবং শরীয়অতের বিধান অনুযায়ী স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে মুক্ত ও পরিত্যাগ করাকেই বলা হয় ‘তালাক’। এই হিসাবে বিবাহ পরিবার গঠন করে। আর তালাক পরিবার সংস্থাকে চুর্ণ করে।

 

ইসলামে বিবাহের ব্যবস্থা করা হইয়াছে পরিবার গঠন, পারিবারিক জীবন যাপনের মাধ্যমে বৈধ উপায়ে যৌন প্রবৃত্তি ও বাসনা-কামনা পরিপূরণ ও সন্তান উৎপাদন- সর্বোপরি পিতৃ-মাতৃ স্নেহে সন্তান উৎপাদন ও প্রকৃত মানুষরূপে তাহাদিগকে গড়িয়া তোলার উদ্দেশ্যে।

 

বস্তুত স্বামী-স্ত্রীর কঠিন দুশ্ছেদ্য প্রতিশ্রুতি বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া একটি পবিত্রমত ব্যাপার। ইহা ভাঙিয়া ও ছিন্ন হইয়া যাওয়অ আল্লাহর নিকট কিছুতেই পছন্দনীয় হইতে পারে না। একজন পুরুষ ও একজন মেয়ে লোক যখন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়, তখন ইহার সম্ভাবনার দ্বার উম্মুক্ত হয়। তাই আল্লাহ তা’আলা ইহাতে যার পর নাই সন্তুষ্ট হন। কিন্তু যখন ‘তালাক’ সংঘটিত হয়, তখন ইহার সম্ভাবনা তিরোহিত হইয়া যায়। কুরআন মজীদে আল্লাহ তা’আলা বিবাহ বন্ধনকে কঠিন দুশ্ছেদ্য প্রতিশ্রুতি বলিয়া উল্লেখ করিয়াছেন। ইরশাদ করিয়াছেনঃ

 

****************************************

 

এবং মেয়েরা তোমাদের নিকট হইতে শক্ত ও দুশ্ছেদ্য প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করিয়াছে।

 

এই প্রতিশ্রুতি ভঙ করায় আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টির অনিবার্য পরিণতি। কেননা প্রথম কাজটি-  অর্থাৎ বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া- আল্লাহ তা’আলারই ইচ্ছার বাস্তবতা। আর দ্বিতীয় কাজটি অর্থাৎ তালাক দেওয়া- আল্লাহর ইচ্ছা ও সন্তুষ্টির সম্পূর্ণ পরপন্হী। আল্লাহ তা’আলা গঠন ও সংযোজন পছন্দ করেন এবং ভাঙন ও বিচ্ছেদ করেন অপছন্দ, ইহা তো সকলেরই জানা কথা। কুরআনে ঘোষণা করা হইয়াছেঃ ******************** আল্লাহ বিপর্যয় ভাঙন ও অশান্তি পছন্দ করেন না। ‘তালাক’ যে পারিবারিক জীবনের একটা প্রচণ্ড ভাঙন, ও বিপর্যয় তাহাতে কোনই সন্দেহ থাকিতে পারে না। তাই হাদীসের কথাঃ ‘তালাক’ হালাল বটে, কিন্তু ইহা নিকৃষ্টতম ঘৃণ্যতম এবং আল্লাহর রোষ ক্রোধ উদ্রেককারী হালাল কাজ। ইহা খুবই তাৎপর্যপুর্ণ কথা।

 

রাসূলে করীম (স) অপর একটি হাদীসে তালাক-এর ভয়াবহ পরিণতির কথা ঘোষনা করিয়াছেন। তিনি বলিয়াছেনঃ

 

****************************************

 

তোমরা বিবাহ কর, কিন্তু তালাক দিও না। কেননা তালাক সংঘটিত হইলে আল্লাহর আরশ কাপিয়া উঠে।

 

‘তালাক’ স্বামী স্ত্রীর পবিত্র বন্ধন ছিন্ন করিয়া দেয়। এই কাজের উদ্যোগ গ্রহণকারী আসলে পারিবারিক জীবনে বিপর্যয় সৃষ্টিকারী। ইসলামের দৃষ্টিতে সে মহা অপরাধী।

 

পরিবার গঠনের সূচনা হয় পুরুষ ও নারীর পারস্পরিক ইচ্ছা, সম্মতি, মানসিক প্রস্তুতি ও আগ্রহ-উদ্যোগের ফলে। ইহার স্থিতি ও স্থায়ীত্বও নির্ভর করে পারস্পরিক আস্থা বিশ্বাস ও ঐকান্তিকতার উপর। কিন্তু সে ইচ্ছা ও আগ্রহ যখন বিলুপ্ত হইয়া যায়, যখন একজন অপর জনের নিকট অসহনীয় হইয়া উঠে- উহার কারণ যাহাই হউক না কেন- তখন তাহাদের মধ্যে বিচ্ছেদ অনিবার্য হইয়া উঠে। পরস্পর হইতে মুক্তি ও নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্য পাগল হইয়া উঠে। এই সময় উভয়ের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক হইয়া পড়ে। একত্রে ও মিলিত হইয়া থাকা যখন সম্পূর্ণ অসম্ভব হইয়া পড়ে তখন মুক্তির একটা বিধিসম্মত পথ উম্মক্ত থাকাও বাঞ্ছনীয়। অন্যথায় স্বামী বা স্ত্রী কারো পক্ষেই সুখ সাচ্ছদ্য সহাকারে বাঁচিয়া থাকা সম্ভব হয় না, ঠিক এই কারণেই ইসলামে এই তালাক-এর ব্যবস্থা রাখা হইয়াছে। যে সব ধর্মে তালাক দেওয়ার- উক্তরূপ অবস্থায় পরস্পর হইতে নিষ্কৃতি পাওয়ার- কোন পথ বরবাদ নির্দিষ্ট হয় নাই, সেই ধর্মাবলম্বীদের জীবন অনিবার্যভাবে দুর্বিসহ হইয়া পড়ে। স্বামীর ঘর-সংসার বরবাদ হইয়া যায়। স্ত্রী সম্পূর্ণ অরক্ষিত অবস্থায় পড়িয়া যায় ইহা অনস্বীকার্য। তাই ইসলামে তালাক ঘৃণ্য অপছন্দনীয় ও আল্লাহর ক্রোধ উদ্রেককারী হইলেও স্বামী-স্ত্রীর জন্য মুক্তির এই উপায়টিকে বিধিবদ্ধ করা হইয়াছে। এই দৃষ্টিতেইহা এক স্বভাব-সম্মত ব্যবস্থা। যখন স্বামী-স্ত্রী হিসাবে জীবন সম্ভব নয়, তখন পরস্পর হইতে মুক্তি লাভ করিয়া অন্যত্র সুখী জীবন লাভের সন্ধান করা উভয়ের জন্য অবশ্যই মানবিক ব্যবস্থা এবং সর্বতোভাবে যুক্তি সংগত পন্হা। দাম্পত্য জীবনের উত্থান পতন এবং ভাঙা-গড়া সম্পর্কে যাহাদের বিন্দুমাত্র ধারণা আছে, তাহারা ইহা অবশ্যই স্বীকার করিবেন।

 

তালাক দেওয়ার ব্যবস্থা ইসলামে চূড়ান্ত নিরুপায়ের উপায় স্বরূপই বিধিবদ্ধ হইয়াছে। বিবাহিত জীবনের চরম লক্ষ্যই যখন বিঘ্নত হয় এবং একত্রের জীবন যাপন সম্পূর্ণ অসম্ভব, তখন বিধিসম্মত ভাবে পরস্পর হইতে বিচ্ছিন্ন হওয়া ছাড়া আর কি পথ থাকিতে পারে? তাই কুরআন মজীদে তালাক দেওয়ার ব্যবস্থা করা হইয়াছে। সে ‘তালাক’ যে কিছু মাত্র আনন্দ দায়ক ব্যাপার নয়, বরং অত্যন্ত দুঃখ-বেদনাময় ও হৃদয় বিদারক, তাহা রাসূলে করীম (স)-এর আলোচ্য ছোট্ট হাদীসটি হইতে জানা যায়।

 

অতএব পারস্পরিক মিলমিশ ও মিটমাট চূড়ান্ত মাত্রার চেষ্টা করিয়াও যখন একত্র ও স্বামী-স্ত্রী হিসাবে থাকা ও জীবন যাপন করা সম্ভব হইবে না বলিয়াই সিদ্ধান্ত হইবে, ঠিক সেই মুহূর্তে সর্বশেষ উপায় রূপে এই অস্ত্র প্রয়েঅগ করা যাইতে পারে, তাহার পূর্বে নয় এবং তাহা শরীয়াতের প্রদর্শিত পথে ও নিয়মেই তাহা ব্যবহার করিতে হইবে, খামখেয়ালীভাবে ও নিজ ইচ্ছামত নয়।

 

এই পর্যায়ে আর একটি হাদীস স্মরণীয়। হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা) বর্ণনা করিয়াছেনঃ

 

****************************************

 

নবী করীম (স) হযরত হাফসা (রা)-কে ‘তালাক’ দিয়াছেন, পরে তাহাকে ফিরাইয়া লইয়াছেন।

 

এই হাদীসটির ব্যাখ্যায় ইমাম শওকানী লিখিয়াছেন, এই হাদীসটি হইতে প্রমাণিত হয় যে, অপছন্দ না করিয়াও স্ত্রীকে কোন না কোন কারণে তালাক দেওয়া স্বামীর জন্য জায়েয। কেননা যে কাজ জায়েযের সীমার মধ্যে, সম্পূর্ণ হারাম নয়, রাসূলে করীম (স) সে কাজ অপছন্দ করা ছাড়াই করিতেন। ইহা তালাক ঘৃণ্য হওয়া সংক্রান্ত হাদীসের সহিত সংঘর্ষিত নয়। কেননা কোন কাজ ঘৃণ্য ও অপছন্দনীয় হইলেও যে তাহা হারাম হইবে, কিছুতেই করা যাইবে না, তাহা জরুরী নয়।

 

এই ঘটনা এই কথাও প্রমাণ করে যে, তালাক দিয়ও- যে তালাক স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ আনিয়অ দেয়- স্ত্রীকে স্ত্রী হিসাবে পুনরায় গ্রহণ করা যায়, ইহাও এক প্রকারের তালাক। এই রূপ তালাক হইলে স্ত্রীকে পুনরায় গ্রহণ করা শরীয়াত সম্মত কাজ। ইহা হইতে একথাও বুঝা যায় যে, কেহ যদি একান্ত নিরুপায় হইয়া স্ত্রীকে তালাক দেয়-ই তাহা হইলে সে যেন এমন ভাবে তালাক দেয়, যাহাতে তালাক দেওয়ার পরবর্তী সময়ে তাহাকে স্ত্রী হিসাবে পুনরায় গ্রহণ করার পথ উন্মুক্ত থাকে, সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হইয়া না যায়। রাসূলে করীম (স) হযরত হাফসা (রা) কে তালাক দেওয়ার পর  পুনরায় ফিরাইয়া লইয়া সেই পথই দেখাইয়াছেন।

 

আবূ দায়ূদ গ্রন্হে উদ্ধৃত বর্ণনায় এই মূল হাদীসটির ভাষা হইলঃ

 

****************************************

 

তালাক অপেক্ষা অধিক ঘৃণ্য জঘন্য ক্রোধ উদ্রেককারী অসন্তোষজনক আর কোন জিনিসকেই আল্লাহ তা’আলা হালাল করেন নাই।

 

আবূ দায়ূদে এই বর্ণনাটি ‘মুরসাল’ হইলেও হাকেম-‘মুস্তাদরাক’ গ্রন্হে ইহা মরফু মুত্তাছিল [‘মরফু’ বলিতে সেই হাদীস বুঝায় যাহা স্বয়ং রাসূলের কথা এবং ‘মুত্তাসিল’ বলিতে সেই হাদীস বুঝায় যাহার সনদের ধারাবাহিকতা অক্ষত, মধ্যখানে ছিন্ন হইয়া যায় নাই।] রূপে উদ্ধৃত হইয়াছে।

 

হাদীসটি হইতে একথা প্রমাণিত হইয়াছে যে, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ হইলে শয়তান যারপর নাই উল্লাসিত হয়। ইহার প্রেক্ষিতে বলা যায়, এই বিচ্ছেদ বা তালাক আল্লাহর নিকট আদৌ পছন্দনীয় কাজ হইতে পারে না।

 

এই পর্যায়ের আর একটি হাদীসঃ

 

****************************************

 

হযরত মুয়ায ইবনে জাবাল (রা) হইতে বর্ণিত হইয়াছে, তিনি বলিয়ানে, হযরত রাসূলে করীম (স) বলিয়াছেনঃ হে মুয়ায! দাস মুক্তি বা বন্দী মুক্তি অপেক্ষা অধিক প্রিয় ও পছন্দময় কাজ আল্লাহ তা’আলা ভূ-পৃষ্ঠে আর কিছু সৃষ্টি করেন নাই। অনুরূপভাবে তালাক অপেক্ষা অধিকতর ঘৃণ্য ও অপছন্দনীয় কাজ আল্লাহ তা’আলা পৃথিবীতে আর কিছুই সৃষ্টি করেন নাই।

 

(দারে কুতনী)

 

ব্যাখ্যাঃ দাস মুক্তি ও বন্দীমুক্তি এবং তালাক দুইটি কাজই আল্লাহর সৃষ্টি, আল্লাহর উদ্ভাবন। কিন্তু তন্ম্যে একটি অধিক পছন্দনীয় আর অপরটি অধিক ঘৃণ্য। একটি কাজে আল্লাহ খুবই খুশী হন। আর অপর কাজটিতে আল্লাহ হন অসন্তুষ্ট, রাগান্বিত ও ক্রুব্ধ। অথচ উভয় কাজের পরিণাম মুক্তি। ইহার কারণ কি?

 

ইহার কারণ সুস্পষ্ট। দাস বা বন্দী মুক্তিতে  মানুষ চরম মর্মান্তিক ও লাঞ্ছিত অপমানিত দুরবস্থা হইতে মুক্তি লাভ করে। অতঃপর মানুষের মত মাথা উঁচু করিয়া মুক্ত আলো-বাতাসে জীবন যাপন করিবার সুযোগ পায়। মানুষকে তো আল্লাহ তা’আলা মুক্তই সৃষ্টি করিয়াছেন। হযরত উমর ফারূক (রা)-এর ভাষায়। ************** ‘তাহাদের মায়েরা তাহাদিগকে মুক্ত ও স্বাধীন অবস্থায়ই প্রসব করিয়াছে’। দাসত্ব নিগড়ে কিংবা  কারাগারে মানুষকে বন্দী করে মানুষই। কাজেই ইহা মনুষ্যত্বের অপমান। ইহা হইতে মুক্তি পাইলে মানুষ তাহার আসল মর্যাদায় ফিরিয়া আসে। এর ফলে আল্লাহর অপেক্ষা অধিক সন্তুষ্টির উদ্রেক আর কাহার হইতে পারে।

 

তালাকেও মুক্তি। স্ত্রী স্বামীর এবং স্বামী  স্ত্রীর বন্ধন হইতে মুক্ত হয়। কিন্তু এই মুক্তি কাহারও কাম্য হওয়া উচিত নয়। এই মুক্তিতে সর্বাধিক উল্লাসিত হয় শয়তান। কেননা স্বামী-স্ত্রীর বৈধ যৌন মিলন ও পবিত্র যৌন জীবন শয়তান পছন্দ করিতে পারে না। উহার পছন্দ হইল জ্বেনা-ব্যভিচার। পরিবার দুর্গে দাম্পত্য বন্ধনের মধ্যে জীবন-যাপনকারী নারী-পুরুষের পক্ষে এই কাজে প্রবৃত্ত হওয়ার কোন সুযোগ থাকে না বলিলেই চলে। কিন্তু এই দুর্গ ভাঙিয়া গেল, নারী-পুরুষ মুক্ত জন্তু-জানোয়ারের ন্যায় অবাধ বিরচণ করিতে পারিলেই তাহাদের দ্বারা জ্বেনা-ব্যভিচার ধরনের দুর্ঘটনা সংঘটিত হওয়া অত্যন্ত সহজ হইয়া যায়। আর তখনই হয় শয়তানের উল্লাসের সূচনা।

 

কিন্তু এতদসত্বেও তালাক অনেক সময় অপরিহার্য হইয়া পড়ে। অনেক সময় শরীয়াতের দিক দিয়াই তালাক দেওয়া প্রয়োজন তীব্র হইয়া দেখা দেয়। যেমন স্ত্রী বা স্বামী যদি দ্বীন ও শরীয়াত অমান্যকারী হয়, শত বলা ও বুঝানো সত্ত্বেও যদি শরীয়াত পালন ও ফরযাদি যথারীতি পালন করিতে প্রস্তুত না হয় এবং শেষ পর্যন্ত যদি স্পষ্ট হইয়া যায় যে, সে শরীয়াত পালন করিবে না, তখন একজন দ্বীনদার মুসলমান পুরুষের পক্ষে তাহার সহিত একত্র দাম্পত্য জীবন যাপন করা সম্ভবপর হয় না। তখন তালাক দেওয়া শুধু অপরিহার্যই নয়, একান্তই বাঞ্ছনীয় হইয়া পড়ে। ইবনুল হুম্মম বলিয়াছেন, এইরূপ অবস্থায় স্ত্রীকে(বা স্বামীকে) তালাক দেওয়া মুস্তাহাব। আবূ হাফচ বুখারী বলিয়াছেন, বেনামাযী স্ত্রী (বা স্বামীর সহিত) সঙ্গম করা অপেক্ষা তাহাকে তালাক দিয়া তাহার  মহরানা (বা তালাক বাবদ দেয়) নিজ মাথায় চাপাইয়া লওয়া অধিক পছন্দনীয় কাজ।

 

এই কারণে তালাক সম্পর্কে শরীয়াত যে পথ ও পন্হা বাতলাইয়া দিয়াছেন তাহা অতীব স্বভাবসিদ্ধ ও মানবিক বলিয়া স্বীকার না করিয়া পারা যায় না। শরীয়াত মুতাবিক যদি কেহ স্ত্রীকে তালাক দেয় এবং পর মুহূর্তেই যদি তাহাকে পুনরায় গ্রহণ করার ইচ্ছা জাগে তবে তাহার সুযোগ উন্মুক্ত থাকে। শরীয়াতের দেখাইয়া দেওয়া নিয়ম লংঘন করিয়া তালাক দিতে স্পষ্ট ভাষায় নিষেধ করা হইয়াছে এই কারণেই। অনেক ক্ষেত্রে তালাক দাতার বা উদ্যোক্তার উপর অনেক অর্থনৈতিক দায়-দায়িত্ব চাপাইয়া দেওয়া হয়, যেন শেষ পর্যন্ত একটি পরিবারের এই ভাঙনটা রোধ করা সম্ভবপর হয়।

 

হাদীস-পারদর্শীদের মতে তালাক চার প্রকারের। তাহা হইল, হারাম, মাকরূহ, ওয়াজিব ও মুস্তাহাব। দুইটি অবস্থায় তালাক দেওয়া হালাল, দুইটি অবস্থায় তালাক দেওয়া হারাম। হালাল অবস্থা এই যে, স্ত্রী ঋতু হইতে পবিত্র হইয়াছে ও সঙ্গম হয় নাই, অথবা স্ত্রী গর্ভবর্তী হইয়াছে ও তাঁহার  গর্ভ প্রকাশ পাইয়াছে। স্ত্রীর ঋতুবতী অবস্থায় তালাক দেওয়া হারাম- অর্থাৎ তালাক তো সংঘটিত হইবে; কিন্তু হারাম কাজ করার গুনাহ হইবে। আর স্ত্রীর সহিত সঙ্গম চলিতেছে, গর্ভাধারে কোন গর্ভের সঞ্চার হইয়াছে কিনা স্বামী সে বিষয়ে অবহিত নয়, এইরূপ অবস্থায় তালাক দেওয়া হারাম। (*****-হযরত ইবনে আব্বাস-এর কথা)। ইহা অবস্থাগত বিবেচনা। স্বামী স্ত্রীর মধ্যে বিরোধ চরমপর্যায়ে পৌঁছিলে ও তালাকই সর্বশেষ উপায় হইয়া দাঁড়াইলে তখন তালাক দেওয়া ওয়াজিব। চারমাস পর্যন্ত স্বামী যদি স্ত্রীর সহিত সম্পর্ক না রাখে ও স্ত্রী তাহার অধিকার পাইবার দাবি জানায় আর স্বামী যদি সে অধিকার দিতে কিংবা তালাক দিয়া দিতে রাযী না হয়, তাহা হইলে তখন সরকার রিজয়ী তালাক দেওয়ার নির্দেশ দিবে। ইহাও ওয়াজিব। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ভাল থাকা সত্ত্বেও স্বামী যদি বিনা কারণে তালাক দিয়া বসে, তবে ইহা মাকরূহ।

 

যে তুহরে সঙ্গম হইয়াছে, সেই তুহরে তালাক দেওয়া হারাম। কাহারও একাধিক স্ত্রী থাকিলে ও একজনের জন্য নির্দিষ্ট রাত্রি আসিবার পূর্বেই তাহাকে তাহার পাওনা হইতে বঞ্চিত করা হারাম। দাম্পত্য জীবনে আল্লাহর নির্দিষ্ট সীমা রক্ষা করা সম্ভব না হইলে তখন তালাক দেওয়া মুস্তাহাব।

 

এই পর্যায়ে বিশেষ ভাবে স্বরণীয় যে, তালাক দেওয়ার অধিকার কেবলমাত্র স্বামীর। কুরআন মজীদে বলা হইয়াছে (****************** ‘পুরুষটির হাতেই নিবন্ধ রহিয়াছে বিবাহ বন্ধন’। তাই এই বন্ধন কেবল মাত্র সেই রাখিতে পারে এবং সে-ই তাহা খুলিয়া দিতে পারে। নবী করীম (স) বলিয়াছেনঃ (****************** যে উরু ধরিয়াছে অর্থাৎ স্বামী তালাক দেওয়ার অধিকার ও ক্ষমতা তাহারই। অন্য কাহারও নয়।[বিবাহে স্ত্রীর পক্ষ হইতে ইজাব হয়, আর স্বাম তাহা কবুল করে। ফলে যে বিবাহ বন্ধনটি হইয়া যায় উহার সূত্রের গোড়া স্বামীর হাইতে নিবন্ধ হয়। ফলে তালাক দেওয়ার ক্ষমতা স্ত্রীর থাকে না।]

 

ইসলামে তালাক দেওয়ার মৌলিক অধিকার কেবলমাত্র স্বামীকেই দেওয়া হইয়াছে। ইহার কারণও রহিয়াছে। স্বামী বিবাহে ধন-সম্পদ ব্যয় করে এবং নবগঠিন পরিবার সংস্থার যাবতীয় ব্যয়ভার কেবলমাত্র তাহাকেই বহন করিতে হয়। এই কারণে পরিবার সংস্থা অক্ষুন্ন রাখার ব্যাপারে স্বাভাবিক ভাবে সে-ই যে অধিক আগ্রহী ও সচেষ্ট হইবে এবং কোন মতেই তাহা ভাঙ্গিয়া ফেলিতে রাযী হইবে না- চূড়ান্তভাবে নিরূপায় হওয়া ছাড়া, তাহা বলাই নিষ্প্রয়োজন। তাহাকেই ভাবিতে হইতে হয় যে, স্ত্রীকে তালাক দিয়া পরিবার সংস্থা চূর্ণ করিয়া দিলে পুনরায় আর একটি বিবাহ করিয়া এই পরিবার সংস্থাকে নূতন করিয়অ পোহাইতে হইবে তাহাতেও সন্দেহ নাই। আর পরবর্তী বিবাহিত স্ত্রী বর্তমানের চেয়ে যদি ভালো না হয় তাই শেষ পর্যন্ত পরিবার সংস্থা রক্ষা করা ও উহাকে কোনরূপ চূর্ণ হইতে না দেওয়ার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করা স্বামীর পক্ষেই স্বাভাবিক। উপরন্তু তালাক দেওয়ার পর স্ত্রীর পাওনা অবশিষ্ট মহরানা ও জরুরী দ্রব্য সামগ্রী দেওয়া এবং স্ত্রী-ইদ্দৎকালীন থাকা-খাওয়া-পরার ব্যবস্থায় অর্থ ব্যয় করার দায়িত্বও তাহাকেই পালন করিতে হইবে। এই সব দিক দিয়া স্ত্রীর কোন দায়-দায়িত্ব থাকে না। কাজেই তালাক দেওয়ার ক্ষমতা চূড়ান্তভাবে স্বামীতের হাতে অর্পন কিছুমাত্র অস্বাভাবিক নয়, পক্ষপাতিত্বও নয় এবং স্ত্রীর প্রতি নয় কোনরূপ অবিচার। বিবাহরে আকদ করার সময় স্ত্রী ‘ইজাব’ করিয়া সেই নিজের অধিকার স্বামীকে দিয়াছে। তাই উহা ছাড়া না-ছাড়ার ইখতিয়ার স্বামীর-স্ত্রীর নয়।

 

দ্বিতীয়তঃ স্বামী স্ত্রীর তুলনায় অধিক ধৈর্যশীলও হইয়া থাকে। তাই আশা করা যায় যে, সে সামান্য ও খুটিনাটি ব্যাপারে ক্রুব্ধ হইয়া সহসা তালাক দিয়া বসিবে না। পক্ষান্তরে স্ত্রী সহসা ও কারণে-অকারণে ক্রোধান্ধ হইয়া পড়িতে পারে। তাহার সহ্য শক্তিও সীমিত, সামান্য। তালাকের পর তাহাকে কোন দায়-দায়িত্ব বা ঝামেলাও পোহাইতে হয় না। এই কারণে সে খুব সহজেই এবং অতি তাড়াতাড়িই তালাক দানে উদ্যত হইতে পারে। এই জন্যই আল্লাহ তা’আলা তালাক দানের মৌলিক ও চূড়ান্ত ক্ষমতা স্ত্রীর হাতে দেন নাই। বাস্তবতার নিরিখেও এই ব্যবস্থা সুষ্ঠু ও নিভুর্ল। ইউরোপে এই ক্ষমতা স্ত্রীকেও দেওয়া হইয়াছে বলিয়া তথায় তালাকের হার বহুগুণ বৃদ্ধি পাইয়াছে। মুসিলম সমাজে যত না তালাক সংঘটিত হয়, তাহা অপেক্ষা বহুগুণ বেশী তালাক সংঘটিত হয় ইউরোপীয় সমাজে।

 

তালাক দেওয়ার ক্ষমতার যথার্থ প্রয়োগের জন্য স্বামীর পূর্ণ বয়স্ক সুস্থ বিবেক-বুদ্ধির অধিকারী ও স্বাধীন বা স্বেচ্ছাধিকারী হওয়া পূর্বশর্ত। এইরূপ স্বামী তালাক দিলেই সেই তালাক সংঘটিত ও কার্যকর হইবে। পক্ষান্তরে স্বামী পাগল, অপ্রাপ্ত বয়স্ক বা চাপে বাধ্য হইলে তাহার দেওয় তালাক সংঘটিত ও কার্যকর হইবে না। কেননা তালাক এমন একটা কাজ যাহার একটা পরিণাম-পরিণতি সংঘটিত হইয়া থাকে স্বামী-স্ত্রীর জীবনে। এই কারণেই তালাক দাতাকে সর্বদিক দিয়া যোগ্যতা সম্পন্ন হইতে হইবে। তিরমিযী ও বুখারী মওকুফ বর্ণিত হাদীসে হযরত আবূ হুরায়রা (রা) নবী করীম (স) হইতে বর্ণনা করিয়াছেনঃ

 

****************************************

 

সর্বপ্রকারের তালাকই কার্যকর-বিবেক-বুদ্ধি রহিত ব্যক্তির তালাক ব্যতীত।

 

অর্থাৎ বিবেক-বুদ্ধিশূণ্য ব্যক্তির তালাক কার্যকর হইবে না। চোর-ডাকাতের জবরদস্তিতে মজবুর ও বাধ্য হইয়া তালাক দিলে- হযরত ইবনে আব্বাস (রা) বলিয়াছেনঃ ********* ‘উহা গণনার যোগ্য নয়’। (বুখারী)। জোর জবরদস্তি করিয়া কাহাকেও মুসলিম বানাইলে সে প্রকৃত মুসলিম হয় না। জোর পূর্বক কাহাকেও কুফরি কালেমা বলিতে বাধ্য করা হইলে সেও কাফির হইয়া যায় না। কুরআন মজীদে বলা হইয়াছেঃ

 

****************************************

 

যে লোককে কাফির হওয়ার জন্য বলপ্রয়োগে বাধ্য করা হইয়াছে তাহার দিল যদি ঈমানে অবিচল থাকে, তবে (সে কাফির হইয়া যাইবে না।)

 

অনুরূপভাবে কাহাকেও যদি বলপ্রয়োগে তালাক দিতে বাধ্য করা হয় তবে তাহার তালাকও কার্যকর হইবে না। নবী করীম (স) বলিয়াছেনঃ

 

****************************************

 

আমার উম্মতের ভূল-ভ্রান্তি ও বলপ্রয়োগে জবরদস্তি করানো কাজ ক্ষমা করিয়া দেওয়া হইয়াছে।

 

ইমাম মালিক, শাফেয়ী, আহমাদ ও দায়ূদ জাহেরী এই মত গ্রহণ করিয়াছেন। হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব, আবদুল্লাহ ইবনে উমর, আলী ইবনে আবূ তালিব ও ইবনে আব্বাস প্রমুখ সাহাবী (রা) গণও এই মত প্রকাশ করিয়াছেন। ইমাম আবূ হানীফা বলিয়াছেনঃ *********** যাহাকে বল প্রয়োগে বাধ্য করা হইয়াছে তাহার দেওয়া তালাক কার্যকরী হইবে। কিন্তু ইহার সমর্থনে কোন দলীল পাওয়া যায় নাই।

 

তবে বেহুশ ও ক্রোধান্ধ ব্যক্তির দেওয়া তালাক সম্পর্কে ফিকাহবিদগণ বিভিন্ন রকমের সিদ্ধান্তে পৌঁছিয়াছেন।

 

স্বামী যদি স্ত্রীকে বলেঃ তুমি আমার উপর হারাম – ইহাতে স্বামী যদি স্ত্রীকে নিজের জন্য হারাম মনে করিয়া লয়, তবে তাহাতে সে প্রকৃতপক্ষেও হারাম হইয়া যাইবে না। কেননা হালাল কে হারাম করার কধিকার বা ক্ষমতা কাহারও নাই। এক ব্যক্তি হযরত ইবনে আব্বাস (রা)-এর নিকট আসিয়া বলিলঃ ************* ‘আমি আমার স্ত্রীকে আমার উপর হারাম করয়াছি’। তখন তিনি বলিলেনঃ ************** ‘না সে তোমার উপর হারাম নয়’।

 

আর সে যদি এই কথা তালাক দেওয়ার উদ্দেশ্যে বলে এবং এই শব্দ দ্বারা তালাক বুঝিয়া থাকে, তবে সে তালাক সংঘটিত হইবে। তখন ইহা ইংগিতমূলক কথা বিবেচিত হইবে। বোবা-বাকশক্তিহীন ব্যক্তি স্পষ্ট ইশারা করিয়া স্বামী-স্ত্রী সম্পর্ক ছিন্ন করিতে পারে। প্রতিনিধির মাধ্যমেও স্ত্রীকে তালাক দেওয়া যাইতে পারে, চিঠি লিখিয়া তালাক দিলে তাহাও সংঘটিত হইবে। তবে তাহা স্ত্রীকে সম্বোধন করিয়া স্পষ্টভাষায় লিখিত হইতে হইবে।

 

কুরআন মজীদে সূরা *****-এর ২ নং আয়াতে তালাক সংক্রান্ত নির্দেশ প্রসঙ্গে বলা হইয়াছেঃ

 

এবং তোমরা সাক্ষী বানাও তোমাদের মধ্য থেকে সুবিচার ও ন্যায়পরতা সম্পন্ন দুইজন লোককে এবং আল্লাহর জন্য তোমরা সাক্ষ্য প্রতিষ্ঠিত কর।

 

তালাক দেওয়া এবং উহার পর স্ত্রীকে ফিরাইয়া লওয়া হইলে উভয় ক্ষেত্রেই সাক্ষী বানানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হইয়াছে। ইহা উভয় ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। ইমাম আবূ হানীফার মতে ইহা মুস্তাহাব। আর এক তালাক দেওয়ার পর স্ত্রীকে ফিরাইয়া আনা হইলে তখন সাক্ষী বানানো ইমাম শাফেয়ীর মতে ওয়াজিব। ইমাম আহমাদের একটি মত ইহার সমর্থক এই পর্যায়ে কোন হাদীস বর্ণিত বা উদ্ধৃত হয় নাই- না নবী করীম (স)-এর কোন উক্তি, না সাহাবীদের কোন কথা। তবে একটি বর্ণনায় দেখা যায়, হযরত ইমরন ইবনে হুসাইন (রা)-এর নিকট জিজ্ঞাসা করা হইয়াছিলঃ এক ব্যক্তি তাহার স্ত্রীকে তালাক দিয়াছে পরে তাহাকে ফিরাইয়া লইয়াছে; কিন্তু কোন ক্ষেত্রেই সে সাক্ষী বানায় নাই। এ সম্পর্কে আপনার মত কি? তিনি বলিয়াছিলেনঃ

 

****************************************

 

সুন্নাতের নিয়ম ব্যতীতই তালাক দিয়াছে, সুন্নাতের নিয়ম ব্যতীতই তাহাকে ফিরাইয়া লইয়াছে। তালাক দান ও ফিরাইয়া লওয়া উভয় ক্ষেত্রেই সাক্ষী বানাও।

FOR MORE CLICK HERE

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]