এক বোন কর্তৃক অপর বোনের তালাক চাওয়া

হযরত আবূ হুরায়রা (রা) হইতে বর্ণিত হইয়াছে, তিনি এই বাক্যটি রাসূলে করীম (স) পর্যন্ত পৌঁছাইতে ছিলেন, নবী করীম (স) বলিয়াছেনঃ কোন মেয়ে লোক-ই তাহার ভগিনীর তালাক চাহিতে পারিবে না- এই উদ্দেশ্যে যে, তাহার পাত্রে যাহা আছে তাহার সবটুকুই সে একাই ঢালিয়া লইবে।

 

(তিরমিযী, ইবনে হাব্বান, বুখারী, মুসলিম)

 

ব্যাখ্যাঃ উপরের হাদীসটি তিরমিযী গ্রন্হ হইতে উদ্ধৃত হইয়াছে। ইবনে হাব্বান এই হাদীসটিই নিজ গ্রন্হে উদ্ধৃত করিয়াছেন ভিন্নতর ভাষায়। উহার ভাষা এইঃ

 

****************************************

 

কোন মেয়ে লোক-ই তাহার ভগিনীর তালাকের দাবি করিতে পারিবে না- এই উদ্দেশ্যে যে, সে তাহার (ভগিনীর) পাত্রের সব কিছুই সে নিজে নিঃশেষ করিয়া লইবে। কেননা মুসলিম মহিলা অপর মুসলিম মহিলার ভগিনী।

 

আসলে এই কথাটি দৃষ্টান্তমূলক। কোন মহিলার স্বামী যখন অপর একজন মহিলাকে বিবাহ করার ইচ্ছা প্রকাশ করে, তখন এই (দ্বিতীয়) মহিলা সেই পুরুষটিকে বলেঃ তোমার বর্তমান স্ত্রীকে যদি আগেই তালাক দিতে পার এবং তাহা দিয়া দাও, তাহা হইলেই আমি তোমাকে বিবাহ করিতে রাযী হইব। ইহা যেমন তদানীন্তন আরব সমাজে একটা অনাচার হিসাবে প্রচলিত ছিল, বর্তমানেও ইহার দৃষ্টান্ত নিতান্ত বিরণ নয়। কিন্তু ইহা একটি চরম অবিচার ছাড়া আর কিছুই নয়। কেননা, এই পুরুষটি হয়ত একজন কুমারী কিংবা অধিক সুন্দরী যুবতী বা ধনবতী মেয়েকে বিবাহ করার লোভে পড়িয়া নিজের বর্তমান স্ত্রীকে তালাক দিয়া বসে। অথচ সে স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার যুক্তি সংগত কোন কারণই নাই। আর বিনা কারণে-বিনা দোষে স্ত্রীকে তালাক দেওয়অর মত অন্যায় অবিচার ও জুলুম আর কিছুই হইতে পারে না। যে মেয়েটি এইরূপ কথা বলে- তাহাকে বিবাহ করিতে ইচ্ছুক ব্যক্তিকে তাহার বর্তমান স্ত্রীকে তালাক দিতে প্ররোচিত করে, সে তো একজন মুসলিম মেয়ে লোক, যাহাকে তালাক দিবার জন্য এই প্ররোচনা, সেও একজন মুসলিম মহিলা। আর এই দুইজন মুসলিম মিল্লাতের লোক হিসাবে পরস্পরের বোন ছাড়া কিছুই নয়। অনুরূপভাবে কোন পুরুষের যদি এক সঙ্গে একাধিক স্ত্রী থাকে এবং তাহাদের একজন স্বামীকে বলে যে, তুমি তোমার অন্য বা অন্যান্য স্ত্রীদের তালাক দিলে আমি তোমাকে বেশী ভালবাসিব। এই ধরনের কথা-বার্তা প্রায়ই হইয়া থাকে এবং অনেক ক্ষেত্রে পুরুষটি তাহার কথা মত তাহার আগের বা অপর স্ত্রীকে তালাক দিয়া দিতে উদ্যত হইয়া যায়। উপরোক্ত হাদীস এই প্রেক্ষিতেই প্রযোজ্য। বুখারী শরীফে এই হাদীসটির শেষাংশের ভাষা এই রূপঃ

 

****************************************

 

একজন মেয়ে লোক অপর এক মেয়ে লোককে তালাক দিবার জন্য তাহার স্বামীকে প্ররোচিত করে এই উদ্দেশ্যে যে, তাহার পাত্রটি সে নিজে নিঃশেষ করিয়া লুটিয়া লইবে। এইরূপ করা নিস্ফল, কেননা সে তো ততটুকুই পাইবে যতটুকু তাহার জন্য নির্ধারিত হইয়াছে।

 

এই হাদীসের আর একটি ভাষা হইলঃ

 

****************************************

 

কোন মেয়ে লোকের জন্যই কল্যাণকর নয় যে, সে তাহারই এক বোনকে তালাক দানের শর্ত করিবে এই উদ্দেশ্যে যে, সে নিজে তাহার পাত্রটি একাই লুটিয়া পুটিয়া খাইবে।

 

ইমাম নববী এই হাদীসের তাৎপর্য লিখিয়াছেনঃ

 

****************************************

 

এই হাদীসের তাৎপর্য হইল, অপরিচিত বা সম্পর্কহীন মেয়েলোক একজন পুরুষকে তাহার স্ত্রীকে তালাক দিতে প্ররোচিত করিবে- যেন সে তাহাকে তালাক দিয়া সেই মেয়েলোককে বিবাহ করে- এই কাজ হইতে বিরত রাখা।

 

ইবনে আবদুল বার এই হাদীস হইতে যে মৌলনীতি গ্রহণ করা যায় বলিয়া মত প্রকাশ করিয়াছেন, তাহা হইলঃ

 

****************************************

 

কোন মেয়ে লোক তাহার সতীনকে তালাক দিবার জন্য স্বামীকে বলিবে এই উদ্দেশ্যে যে, অতঃপর সে একা-ই থাকিয়া যাইবে ও সব কিছু একাই ভোগ দখল করিবে- ইহা কিছুতেই সমীচীন হইতে পারে না।

 

ইবনে হাজার আল-আসকালীন বলিয়াছেনঃ ইবনে আবদুল বার লিখিত তাৎপর্য হইতে পারে সেই হাদীসটির, যাহাতে বোনের তালাকের দাবি করার কথা বলা হইয়াছে। কিন্তু যে হাদীসটিতে তালাক দেওয়ার শর্ত করার কথা বলা হইয়াছে, তাহাতে নিশ্চয়ই কোন সম্পর্কহীন মেয়ে লোক প্রসংগে কথা। আসল কথা হইল, এই ধরনের কথা বলা যায় যে ধরনের মন-মানসিকতা থাকিলে, তাহা নিতান্তই স্বার্থপরতা, পরশ্রীকাতরতা ও হীন জিঘাংসাবৃত্তি ছাড়া আর কিছুই নয়। একজন মেয়েলোক তাহারই মত অপর একজন মেয়ে লোককে স্বামী বঞ্চিতা করার কুটিল ষড়যন্ত্র পাঁকাইবে, ইসলাম ইহা কোনক্রমেই পছন্দ করিতে পারে না। মুসলমান হইয়া অপর একজন অবলা মুসলমানের কপাল ভাঙার জন্য এইরূপ কার্যকলাপ করিবে, রাসূলে করীম (স) আলোচ্য হাদীসের মাধ্যমে ইহা হইতে পরিষ্কার কণ্ঠে নিষেধ করিয়াছেন।

 

এই প্রেক্ষিতে বক্তব্য হইল, ইসলামে তালাক কোন অবস্থাতেই কাম্য নয়। উহা কোন আনন্দ বা খুশীর ব্যাপারও নয়। ইহা কোন ছেলে খেলাও নয়। ইহা অত্যন্ত জটিল ও সাংঘাটিত ব্যাপার। কথায় কথায় রাগ করিয়া সাময়িক ঝগড়া-ঝাটির দরুন উত্তেজিত হইয়া কখনই তালাক দেওয়া উটিত হইতে পারে না। তালাক দিবার পূর্বে শতবার ভাবিতে হইবে। ইহার পরিণতি নিজের জীবনে, পারিবারিক ক্ষেত্রে ও সন্তানাদির জীবনে কি রূপ দেখা দিবে, তাহা সুস্থ ও সূক্ষ্ম দৃষি।টতে বিবেচনা করিয়া দেখিতে হইবে।

 

(*************)

 

এই প্রসঙ্গে আরও একটি কথা স্মরণীয়। তাহা হইল, কোন স্ত্রীর পক্ষে নিজের স্বামীর নিকট নিজের তালাক চাওয়া বা দাবি করাও কি কোনক্রমে উচিত হইতে পারে? স্ত্রী স্বামীকে বলিবে, ‘তুমি আমাকে তালাক দিয়া ছাড়িয়া দাও’, এই কথা সাধারণভাবেই অকল্পনীয়। কোন বিশেষ কারণ যদি না-ই থাকে এবং দাম্পত্য জীবনকে অব্যাহত অক্ষুণ্ন রাখার জন্য সর্বশেষ চেষ্টা করিয়াও যদি ব্যর্থতা হয়, তবে স্বতন্ত্র কথা। কিন্তু তাহার পূর্বেই সেরূপ কোন কারন ছাড়-ই তালাক দাবি করাকে ইসলাম আদৌ সমর্থন করে না। এই পর্যায়ে নিম্নোদ্ধৃত হাদীসটি স্মরণীয়ঃ

 

****************************************

 

হযরত সাওবান (রা) হইতে বর্ণিত হইয়াছে, তিনি বলিয়াছেন, হযরত রাসূলে করীম (স) বলিয়াছেনঃ যে মেয়ে লোকই স্বামীর নিকট তাহার নিজের তালাক চাহিবে- স্বামীকে বলিবে- তাহাতে তালাক দিতে কোনরূপ কঠিন ও অসহ্য কারণ ব্যতীতই- তাহার জন্য জান্নাতের সুগন্ধি- সৌরভ সম্পূর্ণ হারাম।

 

(তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, আবূ দায়ূদ, দারেমী, ইবনে হাব্বান, মুসনাদে আহমাদ)

 

ব্যাখ্যাঃ তালাক অত্যন্ত ঘৃণ্য কাজ। কোন স্ত্রী-ই নিজের স্বামীর নিকট নিজের তালাক চাহিতে পারে না, বলিতে পারে নাঃ ‘তুমি আমাকে তালাক দাও’। তবে কয়েমটি ক্ষেত্রে ইহারও অনুমতি দেওয়া যাইতে পারে। উপরোদ্ধৃত হাদীসের শব্দ ******* ‘কোনরূপ কঠোরতা ব্যতীত’ হইতেই এই কথা জানিতে ও বুঝিতে পারা যায়। ***** শব্দের অর্থ ***** কঠিন অবস্থা, কঠোরতা, চূড়ান্ত ভাবে ঠেকিয়া যাওয়া। এমন অবস্থা, যাহা মানুষকে তালাক চাহিতে বাধ্য করে, যখন চূড়ান্ত বিচ্ছেদ- ছাড়া কোন গতিই থাকে না এমন কোন বাস্তব কারণ যদি দেখা দেয়, কেবলমাত্র তখনই স্ত্রী স্বামীকে বলিতে পারে আমাকে তালাক দাও। এইরূপ অবস্থায় পড়িয়া স্ত্রী যদি স্বামীর নিকট তালাক চাহে, তবে তাহাতে গুনাহ হইবে না।

 

কিন্তু এইরূপ অবস্থার উদ্ভব না হওয়া সত্ত্বেও যদি কোন স্ত্রী স্বামীর নিকট তালাক পাইতে চাহে, তাহা হইলে তাহার জন্য আলোচ্য হাদীসে বলা হইয়াছেঃ

 

****************************************

 

সেই স্ত্রীলোকটির জন্য জান্নাতের সুগন্ধি সম্পূর্ণ হারাম হইয়া যাইবে।

 

কিছু সংখ্যক হাদীস বিশেষজ্ঞ এই কথাটুকুর ব্যাখ্যায় বলিয়াছেনঃ ইহা ইংগিতমূলক কথা। ইহা হইতে বুঝানো হইয়াছে যে, সে মেয়ে লোকটি জান্নাতে যাইতে পারিবে না। কেননা সুগন্ধি পাওয়া যায় নিকটে গেলে, ভিতরে প্রবেশ করিলে। আর ভিতরে প্রবেশ করিলে সুগন্ধি না পাওয়ার কোন কথা হইতে পারে না। অতএব যখন বলা হইয়াছে যে, সে সুগন্ধি পাইবে না, তখন বুঝিতেই হইবে যে, সে জান্নাতে যাইতেই পারিবে না, এই কথাই বলা হইয়াছে।

 

অবশ্য কেহ কেহ এই কথাটুকুকে উহার শাব্দিক ও সীমাবদ্ধ অর্থে গ্রহণ করিয়াছেন। তাঁহারা বলিয়াছেন, এইরূপ মেয়েলোক জান্নাতে গেলেও জান্নাতে গেলেও জান্নাতের সৌরভ লাভ করিতে পারিবে না। আর এই মোট কথাটির তাৎপর্য হইল, সে জান্নাতে প্রথম চোটে প্রবেশকারী লোকেদের সঙ্গে প্রবেশ করিতে পারিবে না। কেননা সে স্বামীর নিকট তালাক চাহিয়া একটা অত্যন্ত বড় গুনাহ করিয়াছে। আর এই কথাটা দ্বারা এরূপ স্ত্রী লোককে খুব বেশী সাবধান ও সতর্ক করিয়া দেওয়া হইয়াছে মাত্র।

 

আল্লামা ইবনে হাজার আল-আসকালানী লিখিয়াছেন, যে সব হাদীসে স্ত্রীলোকদিগকে তাহাদের স্বামীর নিকট তালাক চাওয়ার দরুন ভয় দেখানো হইয়াছে, তাহা কেবলমাত্র সেই অবস্থায়ই প্রযোজ্য, যদি কোনরূপ কঠিন কারণ ব্যতীতই তালাক চাওয়া হয়।

FOR MORE CLICK HERE

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]