পিতা-মাতার নির্দেশে স্ত্রীকে তালাক দেওয়া

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা) হইতে বর্ণিত হইয়াছে, তিনি বলিয়াছেন, আমার এক স্ত্রী ছিল, আমি তাহাকে ভাল বাসিতাম, কিন্তু আমার পিতা উমর (রা) তাহাকে অপছন্দ করিতেন। এই কারণে উহাকে তালাক দেওয়ার জন্য আমাকে আদেশ করিলেন। কিন্তু আমি তাহা করিতে অস্বীকার করিলাম। তখন তিনি নবী করীম (স)-এর নিকট উপস্থিত হইয়া বলিলেনঃ ইয়া রাসূল! আমার পুত্র আবদুল্লাহর একজন স্ত্রী আছে, আমি উহাকে তাহার জন্য অপছন্দ করি। এই কারণে উহাকে তালাক দেওয়ার জন্য আমি তাহাকে আদেশ করিয়াছি। কিন্তু সে আদেশ পালন করিতে অস্বীকার করিয়াছে। অতঃপর রাসূলে করীম (স) আবদুল্লাহকে বলিলেনঃ হে আবদুল্লাহ! তুমি তোমার স্ত্রীকে তালাক দাও। ফলে আমি তাহাকে তালাক দিয়া দিলাম।

 

(আবূ দায়ূদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিযী, নাসায়ী)

 

ব্যাখ্যাঃ হাদীসটির মূল কথা হইল, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমরের একজন স্ত্রী ছিল, তিনি তাহাকে খুবই ভালবাসিতেন। কিন্তু হযরত উমর (রা) তাহাকে পছন্দ করিতেন না বলিয়া তাহাকে তালাক দেওয়ার নির্দেশ দিলেন। হযরত উমরের পছন্দ না করার কারণ কি ছিল তাহা হাদীসে বলা হয় নাই। ইহার একটা শরীয়াত সম্মত কারণ নিশ্চয়ই ছিল। নতুবা অযথা ও শুধু শুধুই তিনি পুত্রবধুকে তালাক দিতে বলিতে পারেন না। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা) পিতার আদেশ মানিয়া স্ত্রীকে তালাক দিতে রাযী হইলেন না। হয়ত যে কারণে হযরত উমর (রা) তালাক দিতে বলিয়াছিলেন, সে কারণটি তাঁহার নিকট স্পষ্ট ছিল না। অথবা তিনি হয়ত সে কারণে এতটা গুরত্ব দেন নাই যে, তাহার জন্য স্ত্রীকে তালাকই দিতে হইবে।

 

উপরোদ্ধৃত হাদীসের ভাষায় বলা হইয়াছে, হযরত উমর (রা) নবী করীম (স)-এর নিকট এই ব্যাপারটিকে একটি মামলা হিসাবে পেশ করিলেন। নবী করীম (স) হযরত উমরের কথার যৌক্তিকতা স্বীকার করিয়া তিনিও স্ত্রীকে তালাক দিবার জন্য ইবনে উমর (রা) কে নির্দেশ দিলেন। অতঃপর তিনি এই নির্দেশ মত তালাক দিয়া দিলেন।

 

তিরমিযী শরীফে উদ্ধৃত হাদীসটির ভাষা ইহাপেক্ষা সংক্ষিপ্ত। হযরত উমর (রা) এই ব্যাপারটি নবী করীম (স)-এর নিকট পেশ করিয়াছেন, তাহাতে এই কথার উল্লেখ নাই। তাহাতে বলা হইয়াছে, হযরত আবদুল্লাহ ইব নে উমর (রা) নিজই এই ব্যাপারটি রাসূলে করীম (স)-এর নিকট পেশ করিয়াছিলেন। হইতে পারে পিতা পুত্র উভয়ই ব্যাপারটি নবী করীম (স)-এর নিকট পেশ করিয়াছেন। কিন্তু একজন বর্ণনাকারী হযরত উমর (রা)-এর পেশ করার কথা উল্লেখ করিয়াছেন এবং অন্য বর্ণনাকারী হযরত আবদুল্লাহর নিজেরই পেশ করার কথা উল্লেখ করিয়াছেন। কিন্তু ইহাতে মূল ব্যঅপারে কোনই তারতম্য হয় নাই। এই হাদীসটি সহীহ সনদে বর্ণিত হইয়াছে। ইহা হইতে প্রমাণিত হয় যে, পিতার আদেশ হইলে পুত্রকে প্রিয়তমা স্ত্রীকে তালাক দিতে হইবে। ইহা পিতৃ আদেশ পালন করার ব্যাপারে পুত্রের বাধ্যবাধকতা প্রমাণ করে। ইসলামে আল্লাহর পরই পিতা-মাতার স্থান আদেশ মান্যতার দিক দিয়া। অতএব পুত্রের প্রিয়তমা স্ত্রীকে তালাক দিতে পিতা আদেশ করিলে তাহা অবশ্যই পালন করিতে হইবে।

 

হযরত উমরের নির্দেশ মত স্ত্রীকে তালাক দিতে রাযী না হওয়ার একটা কারণই ছিল বলা যায়। আর তাহা হইল তিনি তাহাকে ভালবাসিতেন। কিন্তু কেবলমাত্র ভালবাসার কারণেই কোন মেয়ে লোক স্ত্রী হওয়ার মর্যাদা পাইবে, এমন নাও হইতে পারে। এই ভালবাসা থাকা সত্ত্বেও এমন শরীয়ত সম্মত কারণ থাকিতে পারে, যাহার দরুন স্ত্রীকে ত্যাগ করাই কর্তব্য ও বাঞ্ছনীয় হইয়া পড়ে।

 

এক কথায় বলা যায়, পিতা-মাতার আদেশক্রমে স্ত্রীকে তালাক দেওয়া পুত্রের জন্য কর্তব্য। হাদীসে কেবল পিতার কথা উদ্ধৃত হইয়াছে। কিনউত সন্তানের নিকট পিতার তুলনায় মাতার স্থান যে অনেক উপরে সে কথা বহু কয়টি হাদীস হইতেই অকাট্যভাবে জানা গিয়াছে। কাজেই পিতার ন্যায় মায়ের নির্দেশ  হইলেও স্ত্রীকে তালাক দিতে হইবে। আল্লাহর নিকট এই ঘৃণ্যতম কাজটিও পিতা কিংবা মাতার নির্দেশে করিতে হয়। ইহাই আলোচ্য হাদীসটির বক্তব্য।

FOR MORE CLICK HERE

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]