এক সঙ্গে তিন তালাক এক সাথে তিন তালাক দেওয়ার হুকুম কি - একটি দালিলিক বিশ্লেষণ

লাইস নাফে হইতে বর্ণনা করিয়াছেন, হযরত ইবনে উমর (রা) কে যখনই কোন তিন তালাক দাতা ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হইত, তখনই তিনি সেই লোককে বলিতেনঃ তুমি যদি এক তালাক বা দুই তালাক দিতে (তাহা হইলে তোমার পক্ষে খুবই ভাল হইত); কেননা নবী করীম (স) আমাকে এইরূপ করিতে আদেশ করিয়াছেন। বস্তুত যদি কেহ তাহার স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়া দেয় তাহা হইলে সে (স্ত্রী) তাহার জন্য হারাম হইয়া গেল। যতক্ষণ না সে অন্য কোন স্বামী গ্রহণকরে।

 

ব্যাখ্যাঃ হযরত ইবনে উমর (রা)-এর কথা ‘তুমি যদি এক তালাক বা দুই তালাক দিতে’-ইহা অসম্পূর্ণ কথা। ইহার সম্পূর্ণরূপ হইতে পারে দুইটি কথা শামিল করিলে। একটি উপরে দুই বেষ্টনীর মধ্যে লিখা হইয়াছে। ইহার দ্বিতীয় কথা হইলঃ তাহা হইলে তুমি স্ত্রীকে ফিরাইয়া লইবার অধিকারী হইতে। ইহার তাৎপর্য হইল, এক সঙ্গে তিন তালাক দেওয়ার পরিবর্তে যদি এক বা দুই তালাক দেওয়া হয়, তাহা হইলে স্বামী স্ত্রীকে ফিরাইয়া স্ত্রী হিসাবেই গ্রহণ করিতে পারে। তখন কোন ঝামেলায পড়িতে হয় না। কিন্তু যদি এক সঙ্গে তিন তালাকই দিয়া থাকে, তাহা হইলে দুঃখে মাথা কুটিয়া মরিলেও স্ত্রীকে গ্রহণ করিতে পারে না। তাহাকে পুনরায় স্ত্রী হিসাবে পাইতে হইলে অনির্দিষ্ট কালের জন্য অপেক্ষায় থাকিতে হইবে এবং কার্যত তাহা সম্ভব হইবে, স্ত্রী যদি অন্য কোন স্বামী গ্রহণ করে, স্বামী স্ত্রী সঙ্গম হয়, তাহার পর সেই স্বামী মরিয়া যায় কিংবা তিন তালাক দিয়া তাহাকে বিদায় করিয়া দেয়, কেবল তখন।

 

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বস (রা) হইতে বর্ণিত হইয়াছে, আবদে ইয়াজীদের পুত্র বনু মুত্তালিবের ভাই রুকানা তাহার স্ত্রীকে একই বৈঠকে তিন তালাক দিয়াছিলেন। ফলে এজন্য তিনি খুব সাংঘাতিক ভাবে দুঃখ ভারাক্রান্ত হইয়া পড়িলেন। তখন- হযরত ইবনে আব্বাস বলেন- রাসূলে করীম (স) তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলেনঃ তুমি কিভাবে তোমার স্ত্রীকে তালাক দিলে? রুকানা বলিলেনঃ আমি তাহাকে তিন তালাক দিয়াছি। হযরত ইবনে আব্বাস বলেন- রাসূলে করীম জিজ্ঞাসা করিলেনঃ একই বৈঠকে দিয়াছ কি? বলিলেনঃ হ্যাঁ। তখন রাসূলে করীম (স) বলিলেনঃ ইহা তো মাত্র এক তালাক। কাজেই তুমি তোমার স্ত্রীকে ফিরাইয়া লওযদি তুমি ইচ্ছা কর। হযরত ইবনে আব্বাস (রা) বলিয়াছেন, অতঃপর রুকানা তাঁহার স্ত্রীকে ফিরাইয়া লইলেন। ইহা হইতে হযরত ইবনে আব্বাস (রা) এই মত গ্রহণ করিলেন যে, তালাক কেবলমাত্র প্রত্যেক তুহরে দেওয়া বাঞ্ছনীয়।

 

(মুসনাদে আহমাদ, আবূ ইয়ালা)

 

ব্যাখ্যাঃ হাদীসটিতে তালাক সংক্রান্ত ঘটনার বিস্তারিক উল্লেখ রহিয়াছে। কিন্তু এখানে মুসনাদে আহমাদ হইতে হাদীসের যে ভাষা উদ্ধত হইয়াছে, উহাতে অন্যান্য হাদীস গ্রন্হে উদ্ধৃত ভাষার মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য দেখা যাইতেছে। তিরমিযী শরীফে আবদুল্লাহ ইবনে ইয়াজীদ ইবনে রুকানা তাঁহার পিতা হইতে তাঁহার দদা অর্থাৎ রুকানা হইতে এই সূত্রে যে হাদীসটি বর্ণনা হইয়াছে, তাহার ভাষা এইরূপঃ

 

****************************************

 

রুকানা বলিলেনঃ আমি রাসূলে করীম (স)-এর নিকট উপস্থিত হইয়া বলিলাম, ইয়া রাসূল! আমি আমার স্ত্রীকে ‘বাত্তা’ তালাক দিয়াছি। নবী করীম (স) জিজ্ঞাসা করিলেনঃ তুমি ইহার দ্বারা কি নিয়্যত করিয়াছ। বলিলেনঃ আমি বলিলাম এক তালাক, নবী করীম (স) বলিলেন, আল্লাহর কসম? বলিলাম, হ্যাঁ, কসম। রাসূলে করীম (স) বলিলেন, তাহা হইলে তুমি যাহা নিয়্যাত করিয়াছ, তাহাই হইবে। **** অর্থ চূড়ান্তভাবে কর্তন করা, দৃঢ় সংকল্প কার্যকর করা।

 

এই বর্ণনাটি পূর্বোদ্ধৃত বর্ণনা হইতে সম্পূর্ণ ভিন্নতর। ‘নেছায়া’ গ্রন্হে বলা হইয়াছে? ‘রুকানার কথা **** অর্থ, তাহাকে আমি কর্তনকারী তালাক দিয়াছি। এই কথাটির অর্থ তিনি তিন তালাক দিয়াছেন এইরূপ গ্রহণ করা হাদীসের বর্ণনাকারীর নিজের মত মাত্র এবং নিজের এই মতের প্রতিফলন ঘটাইয়া মুসনাদে আহমাদ গ্রন্হের প্রথমোদ্ধৃত হাদীসটিতে তিন তালাকের কথা স্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করিয়া দিয়াছেন। অথচ মূলত রুকানা তিন তালাক নয়, ‘আল-বাত্তা’ তালাক দিয়াছিলেন। কাজেই এক সঙ্গে তিন তালাক দিলেও তাহাতে এক তালাক রিজয়ী হইবে, হাদীসটি হইতে এইরূপ মত গ্রহণ করা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও ভিত্তিহীন।

 

ইমাম তিরমিযী এই হাদীসটির উল্লেখ করার পর বলিয়াছেনঃ এই বর্ণনার সনদে জুবাইর ইবনে সায়ীদ আল হাশেমী একজন বর্ণনাকারী রহিয়াছেন। বহু কয়জন মুহাদ্দিস তাঁহাকে ‘যয়ীফ’ বলিয়াছেন। ইমাম বুখারীও তাঁহার সম্পর্কে বলিয়াছেনঃ ****** ‘তিনি হাদীসের কথাগুলি ওলট-পালট করিয়া দিয়া থাকেন’। কখনও উহাতে তালাক বলেন, কখনও বলেন, এক তালাক। আর আসলে সহীহতম কথা হইল, রুকানা ‘আল-বাত্তা’ তালাক দিয়াছিলেন, তিন তালাক দেওয়ার কথা বলা হইয়াছে উহার ভাবার্থ হিসাবে। তিনি নিজে তাহা বলেন নাই।

 

রুকানার স্ত্রীর নাম ছিল ‘সুহাইমা’।

 

তিরমিযী হইতে উদ্ধৃত এই হাদীসটিতে রাসূলে করীম (স)-এর কথা হিসাবে বলা হইয়াছেঃ ******* ‘উহা তাহাই যাহার তুমি নিয়্যত বা ইচ্ছা করিয়াছ’। আবূ দায়ূদের বর্ণনা ইহার পরিবর্তে রাসূল সম্পর্কে উদ্ধৃত হইয়াছেঃ ******* ‘রাসূলে করীম (স) রুকানার স্ত্রীকে তাঁহার নিকট ফিরাইয়া আনিয়াছিলেন’ ইহার ভিত্তিতেই ইমাম খাত্তাবী লিখিয়াছেনঃ

 

****************************************

 

তালাক দিয়া চূড়ান্তভাবে কাটিয়া ছিন্ন করিয়া ফেলার কথা বলিলে এক তালাক হইবে- যদি এইরূপ বলিয়া এক তালাকের বেশী দেওয়ার নিয়্যত না করিয়া থাকে এবং এইরূপ তালাকে রিজয়ী তালাক হইয়া থাকে, স্ত্রীকে ফিরাইয়া লওয়া যায়। সম্পূর্ণ হারাম হইয়া যায় না।

 

কেহ যদি তাহার স্ত্রীকে বলেঃ *********** ‘তুমি তালাক চূড়ান্তভাবে’ তাহা হইলে ইহার ফলে কয়টি তালাক হইবে, সে বিষয়ে বিভিন্ন কথা বলা হইয়াছে। হযরত উমর (রা)-এর মতে ইহাতে এক তালাক হইবে, আর যদি তিন তালাকের নিয়্যত করে তবে তাহাই হইবে। ইমাম আবূ হানীফা ও ইমাম শাফেয়ী এই মত গ্রহণ করিয়াছেন। কিছু লোক বলিয়াছেন, আল-বাত্তা তালাক দিলে তিন তালাক হয়। হযরত আলী, ইবনে উমর, ইবনুল মুসাইয়্যিব, ওরওয়া, জুহরী, ইবনে আবূ লাইলা, ইমাম মালিক, আওজায়ী ও আবূ উবাইদ প্রমুখ ফিকাহবিদগণ এইমত দিয়াছেন বলিয়া বর্ণনা হইয়াছে।

 

মুল্লা আলী আল-ক্বারী বলিয়াছেনঃ আল-বাত্তা তালাকে ইমাম শাফেয়ীর মতে এক তালাক রিজয়ী হয়-দুই বা তিন তালাকের নিয়্যত করিলে তাহাই হইবে। ইমাম আবূ হানীফার মতে এক তালাক বাঈন হইবে, তবে তিন তালাকের নিয়্যত করিলে তিন তালাকই হইবে। ইমাম মালিকৈর মতে সম্পূর্ণভাবে তিন তালাক হইবে।

 

অন্যান্য বিশেষজ্ঞগণ বলিয়াছেনঃ এ ব্যাপারে ব্যক্তির নিয়্যতই আসল। যেমন নিয়্যত হইবে তালাক ততটাই হইবে।

 

(*****************)

 

উপরে উদ্ধৃত এই বর্ণনা দুইটি মূলত একই ঘটনা সম্পের্কে। এই ঘটনার আসল কথা হইল, রুকানা তাঁহার স্ত্রীকে এক সঙ্গে তিন তালাক দেন নাই। তিনি আল-বাত্তা তালাকা দিয়াছেন। আর এইরূপ তালাকে তালাক দাতার নিয়্যতই সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। নিয়্যত যে কয় তালাকের হইবে, সেই কয় তালাকই সংঘটিত হইবে।

 

রুকানা বলিয়াছেনঃ ‘একই বৈঠকে তালাক দিয়াছি’, সম্ভবতঃ ইহার অর্থ এক শব্দে বা একবাক্যে তালাক দিয়াছি- একই তালাক শব্দের বার বার উল্লেখ না করিয়া। যেমন বলা হইয়াছেঃ তোমাকে তিন তালাক দিয়াছি। যদি কেহ বলেঃ তুমি তালাক, তুমি তালাক, তুমি তালাক এবং ইহাতে যদি একই কথার তাকীদ মনে না করা হইয়া থাকে ও এই বাক্য কয়টি ভিন্ন ভিন্নভাবে উচ্চারণ করা হয়, তাহা হইলে উহার ফলে তিন তালাক হইয়া যাইবে। তাহা এক মজলিসে বলিলেও ফলে কোন পার্থক্য হইবে না।

 

****************************************

 

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) হইতে বর্ণিত হইয়াছে, তিনি বলিয়াছেন, রাসূলে করীম (স) হযরত আবূ বকর (রা)-এর যুগে এবং হযরত উমর (রা)-এর খিলাফতের প্রথম দুই বৎসর তালাকের অবস্থা এই ছিল যে, তিন তালাক দিলে এক তালাক সংঘটিত হইত। পরবর্তী কালে হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা) বলিলেনঃ যে ব্যাপারে লোকদের জন্য বিশেষ মর্যাদা, ধৈর্যসহ অপেক্ষা ও অবকাশ ছিল, তাহাতে লোকেরা খুব তাড়াহুড়া করিয়া ফেলিয়াছে। কাজেই আমরা উহা তাহাদের উপর কার্যকর করিব না কেন! অতঃপর তিনি উহাকে তাহাদের উপর কার্যকর করিয়া দিলেন।

 

(মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ)

 

ব্যাখ্যাঃ হাদীসের মুল বক্তব্যটি রাসূলে করীম (স)-এর নয়, বরং হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা)-এর কথা। আর তিনি একজন সাহাবী বিধায় হাদীস বিজ্ঞানের নীত অনুযায়ী ইহা একটি মরফু হাদীসের মর্যাদা পায়।

 

হাদীসটি অত্যন্ত বিতর্কমূলক এবং হাদীসের ব্যাখ্যাকারী ও ফিকাহবিদগণ এই হাদীসটি লইয়া যথেষ্ট পর্যালোচনা করিয়াছেন। ইহার সনদ যাচাই পরীক্ষা করিয়াছেন এবং ইহার তাৎপর্য লইয়া যথেষ্ট তর্ক-বিতর্ক ও সওয়াল জওয়াব করা হইয়াছে।

 

মুসলিশ শরীফে উদ্ধৃত এই বর্ণনাটির প্রথম বর্ণনাকারী (হযরত ইবনে আব্বাস (রা) হইতে) হইলেন তায়ূস তাবেয়ী। মুসলিশ শরীফে উদ্ধৃত এই হাদীসেরই আরও দুইটি বর্ণনার প্রথম বর্ণনাকারী হইলেন চাহবা তাবেয়ী। সে বর্ণনা দুইটি এখানে পরপর উদ্ধৃত করা যাইতেছে। প্রথমটি এইঃ

 

****************************************

 

আবূ চাহবা হযরত আব্বাস (রা) কে জিজ্ঞাসা করিলেনঃ ‘আপনি কি জানেন, রাসূলে করীম (স)’  হযরত আবূ বকর (রা) এবং হযরত উমর (রা)-এর খিলাফতের প্রথম তিন বছর তিন তালাককে এক তালাক গণ্য করা হইত? ইবনে আব্বাস (রা) বলিলেনঃ হ্যাঁ।

 

দ্বিতীয়টি এইঃ

 

****************************************

 

আবূ চাহবা আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) কে বলিলেনঃ আপনার জ্ঞান তথ্য হইতে কিছু প্রকাশ করুন। রাসূলে করীম (স) ও হযরত আবু বকর (রা)-এর যুগে তিন তালাক কি এক তালাক ছিল না? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ, তাহাই ছিল বটে; কিন্তু হযরত উমর (রা)-এর সময়ে লোকেরা পরপর তালাক দিতে শুরু করিলে তিনি তাহাদের উপর তাহাই কার্যকর করিয়া দিলেন।

 

মসলিম শরীফের বর্ণনা এই পর্যন্তই। কিন্তু এই হাদীসটিই আবূ দায়ূদ গ্রন্হে আবূ চাহবা কর্তৃক ইবনে আব্বাস (রা) হইতে বর্ণিত হইয়াছে। উহার ভাষায় যে পার্থক্য আছে তাহা এইরূপঃ

 

****************************************

 

হযরত ইবনে আব্বাস (রা) বলিলেন, এক ব্যক্তি যখন তাহার স্ত্রীকে বিবাহের পর সঙ্গম করার পূর্বেই তালাক দিত, তখন লোকেরা তিন তালাককে এক তালক গণ্য করিত।

 

উপরোদ্ধৃত চার প্রকারের বর্ণনা হইতে স্পষ্ট বোঝা যায়, একটি মূল ঘটনার বর্ণনা চার ভাবেই হইয়াছে এবং ইহাতে মূল হাদীসের ভাষায় যথেষ্ট পার্থক্য দেখা দিয়াছে। প্রথম উদ্ধৃত হাদীসটির ভাষা হইতে বাহ্যত মনে হয়, সাধারণভাবে তিন তালাক দেওয়া হইলেই এক তালাক গণ্য করা হইত এবং নবী করীম (স), হযরত আবূ বকর, হযরত উমর (রা)-এর খিলাফতের শুরু জামানা পর্যন্ত এইরূপ হইতে থাকে। তখন স্বামী স্ত্রীকে সহজেই ফিরাইয়া লইতে পারিত। কিন্তু হযরত উমর (রা) তাহার খিলাফতের দুই বৎসর অতিক্রান্ত হওয়ার পর তিন তালাককে তিন তালাকই কার্যকর করিয়া দিতে লাগিলেন। ইহা তাঁহার নিজের করা কাজ। তাঁহার এই কাজটির পশ্চাতে রাসূলে করীম (স)-এর কোন উক্তি বা কুরআন মজীদে কোন আয়াতের সমর্থন ছিল এমন কথা বর্ণনার বাহ্যিক ভাষা হইতে বুঝা-ই যায় না। ইহার অর্থ এই দাঁড়ায় যে, শরীয়াতের একটা ব্যাপারে রাসূলে করীম (স) ও প্রথম খলীফার আমলে এক রকমের রায় দেওয়া হইত। হযতর উমর (রা) নিজের খিলাফতের আমলে সে রায় নিজ ইচ্ছামত পরিবর্তন করিয়া ভিন্নভাবে কার্যকর করিতে লাগিলেন। কিন্তু এইরূপ করার কি তাঁহার কোন ইখতিয়ার ছিল?

 

কিন্তু আবূ দায়ূদের বর্ণনাটি পাঠ করিলে এই প্রশ্নের কোন অবকাশ থাকে না। আবূ দায়ূদের বর্ণনা হইতে জানা যায়, তিন তালাক দেওয়া সত্ত্বেও তাহাতে মাত্র এক তালাক সংঘটিত হওয়ার প্রচলন সাধারণ ভাবে সর্বক্ষেত্রে ছিল না। ইহা হইতে কেবলমাত্র তখন, যদি কেহ বিবাহ করার পর স্ত্রীর সহিত সঙ্গম করার পূর্বেই তাহাকে এক সঙ্গে তিন তালাক দিয়া দিত, তখন। সঙ্গমকৃত স্ত্রীকে একসঙ্গে তিন তালাক দেওয়া হইলে তাহাতে তিন তালাকক-ই সংঘটিত হইত, এক তালাক নয়। হাদীসের উদ্ধৃত বর্ণনা সমুহের ভিত্তিতে ইহা হইল একটা মোটামুটি পর্যালোচনা।

 

ইমাম নববী লিখিয়াছেন, স্ত্রীকে এক সঙ্গে তিন তালাক দেওয়া হইলে তখন শরীয়াতের ফয়সালা কি, এই বিষয়ে ফিকাহবিদণ বিভিন্ন মত প্রকাশ করিয়াছেন। কেহ যদি তাহার স্ত্রীকে বলেঃ *********** ‘তুমি তিন তালাক, এই বিষয়ে ইমাম আবূ হানীফা, ইমাম মালিক, ইমাম শাফেয়ী, ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল এবং একালের ও সেকালের জমহুর শরীয়াতবিদগণ বলিয়াছেন, তিন তালাক সংঘটিত হইবে। আর তায়ূস ও জাহেরী মাযহাবের কিছু সংখ্যক আলেমের মতে ইহাতে মাত্র এক তালাক হইবে, তিনি তালাক নয়। হাজ্জাজ ইবনে আরতাত ও মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক হইতেও এইমতই বর্ণিত হইয়াছে। কিন্তু তাহা সত্ত্বেও হাজ্জাজ ইবনে আরতাতের প্রখ্যাত মত হইল, এইরূপ বলা হইলে তাহাতে কোন কিছুই হয় না। ইবনে মুক্কাতিল ও মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক হইতেও এইরূপ মতের বর্ণনা জানা যায়। ইহারা সকরে হযরত ইবনে আব্বাস (রা)-এর উদ্ধৃত হাদীসকেই দলীল হিসাবে গ্রহণ করিয়াছেন। কোন কোন বর্ণনায় হযরত ইবনে উমর (রা) সম্পর্কে উদ্ধৃত হইয়াছে যে, তিনি তাঁহার স্ত্রীকে হায়য অবস্থায় তিন তালাক দিয়া দিলেন; কিন্তু তাহা গণ্য হয় নাই। দ্বিতীয়তঃ রুকানা সম্পর্কেও বর্ণনা উদ্ধৃত হইয়াছে যে, তিনি তাঁহার স্ত্রীকে এক সঙ্গে তিন তালাক দিয়াছিলেন, কিন্তু তাহা সত্ত্বেও নবী করীম (স) তাঁহাকে তাহার স্ত্রীকে ফিরাইয়া গ্রহণ করিবার জন্য নির্দেশ দিলেন। এই দুইটি বর্ণনাও এই শেষোক্ত লোকদের মত গঠনের সাহায্য করিয়াছে, এই দুইটি হাদীসও তাহাদের দলীল।

 

আহলি সুন্নাত আল-জামায়াতের চারজন শ্রেষ্ট ইমাম ও জমহুর ফিকাহবিদদের মতের প্রধান উৎস হইল কুরআন মজীদের আয়াতঃ

 

****************************************

 

ইহাই হইল আল্লাহর নির্ধারিত সীমা। যে লোক আল্লাহর নির্দিষ্ট সীমা লংঘন করিবে, সে নিজের উপর জুলুম করিবে। তুমি জান না, হয়ত আল্লাহ তা’আলা ইহার পর কোন ব্যাপার ঘটাইতেহ পারেন।

 

আল্লাহর সীমা অর্থ, আল্লাহর দেওয়া আইন বিধান। তিনি ইহা বান্দাহদের পালন করা ও মানিয়া লওয়ার জন্য ব্যাখ্যা করিয়া বরিয়া দিয়াছেন। ইহা লংঘত করিতে তিনি নিষেধ করিয়া দিয়াছেন। তাই যে লোক ইহা লংঘন করে সে নিজের উপর নিজে জুলূম করে। নিজেকে ধ্বংসকেন্দ্রে পৌঁছাইয়া দেয়।

 

যে ব্যাপারটি আল্লাহ ত’আলা পরে ঘটাইতে পারেন বলিয়া জানানো হইয়াছে, তাহা হইল আল্লাহ তা’আলা তালাক দাতার মনের পরিবর্তন ঘটাইতে পারেন। তাহাতে ক্রোধ ও অসন্তুষ্টির পরিবর্তে প্রেম ভালবাসা ও সন্তুষ্টি জানাইয়া দিতে পারেন। অনীহার পরিবর্তে আগ্রহ ও আকর্ষণ সৃষ্টি করিয় দিতে পারেন। তালাক দেওয়ার দৃঢ় ইচ্ছাকে হরণ করিয়া অনুতাপ ও লজ্জা জাগাইয়া দিতে পারেন। আর তাহার পর লোকটি এই তালাক দেওয়া স্ত্রীকে পুনরায় গ্রহণ করিতে প্রস্তুত হইতে পারে। এই আয়াতে ****** শব্দ বলিয়া আল্লাহ তা’আলা ‘স্ত্রীকে ফিরাইয়া লওয়ার ইচ্ছা ও আগ্রহ’ বুঝাইয়াচেন। এ ব্যাপারে সমস্ত তাফসীরকারই সম্পূর্ণ একমত। আর সমস্ত কথার সার ইল, এক তালাক দেওয়ার উৎসাহ দান এবং তিন তালাক দিতে নিষেধ করণ ও বিরত রাখা। তাহা সত্ত্বেও যদি কেহ এক সঙ্গে তিন তালাক দেয়, তাহা হইলে সে নিজেরই ক্ষতি সাধন করে। কেননা ইহার ফলে স্ত্রী বিচ্ছিন্ন হইয়া যায় ও তাহাকে ফিরাইয়া লওয়ার আর কোন পথ উন্মুক্ত পায় না।

 

ইমাম নববী লিখিয়াছেন, উপরোদ্ধৃত আয়াতের ভিত্তিতে জমহুর ফিকাহবিদগণ বলিয়াছেন, তালাক দাতা যেহেতু এক সঙ্গে তিন তালাক বাঈন দিয়াছে, এই কারণে তাহার মনে অনুতাপ ও অনুশোচনা জাগা স্বাভাবিক। এই কথা-ই উক্ত আয়াতের শেষাংশে বলা হইয়াছে। উহাতে যদি তিন তালাক সংঘটিত না হয়, তাহা হইলে উহাতে রিজয়ী তালাক হইবে। আর রিজয়ী তালাক হইলে তাহাতে অনুতাপ অনুশোচনার কোন প্রশ্ন থাকে না। রুকানার হাদীস সম্পর্কে তাঁহাদের বক্তব্য হইল, রুকানা তো আল-বাত্তাতা’ তালাক দিয়াছিলেন, সুস্পষ্ট ভাষায় তিন তালাক দেন নাই। আর ‘আল-বাত্তাতা’ তালাকে এক  বা তিন- যাহারই নিয়্যাত করা হইবে তাহাই সংঘটিত হইতে পারে। নবী করীম (স) তাঁহাকে বলিয়াছেনঃ ********** ‘আল্লাহর নামে শপথ করিয়া বল যে, তুমি এক তালাকেরই নিয়্যত করিয়াছিলে’? রুকানা বলিলেন ******* আল্লাহর নামে শপথ করিয়া বলিতেছি, আমি এক তালাক ছাড়া আর কিছুরই নিয়্যত করি নাই। এই কথোপকথন হইতেই প্রমাণিত হয় যে, রুকানা তিন তালাকের নিয়্যত করিলে তিন তালাকই হইতে পারিত। নতুবা এইরূপ শপথ করানোর কোন তাৎপর্য থাকিত না। এক কথায় ইহাত অকাট্যভাবে প্রমাণিত হইল যে, এক সঙ্গে তিন তালাক দিলে তাহা সংঘটিত ও কার্যকর হইবে। রুকানা তিন তালাক দিয়া ছিলেন; কিন্তু নবী করীম (স) উহাকে এক তালাক হিসাবে কার্যকর করিয়া ছিলেন বলিয়া বিপরীত মতের লোকেরা দলীল বর্ণনা করিয়াছে। এই বর্ণনাটির আসল ও যথার্থ কথা হইল, রুকানা তিন তালাক দেন নাই, দিয়াছিলে ‘আল-বাত্তাতা’ তালাকা। আর ‘আল-বাত্তাতা’ তালাকে এক ও তিন উভয় ধরনের তালাক অর্থ করা যাইতে পারে। ফলে এই যয়ীফ বর্ণনাটি বর্ণনাকারী মনে করিয়াছেন যে, উহাতে তিন তালাক হইয়াছে এবং তাহার  এই ধারণাটিকেই সে হাদীসের বর্ণনা হিসাবে চালাইয়া দিয়াছে। আর ইহাতেই সে মারাত্মক ভূল করিয়া বসিয়াছে।

 

হযরত ইবনে উমর (লা) সংক্রান্ত হাদীস সম্পর্কে বক্তব্য এই যে, উহার সহীহ বর্ণনা হইল, তিনি মাত্র এক তালাক দিয়াছিলেন, তিন তালাক নয়। কাজেই তিন তালাক এক তালাক করা হইয়াছে, উহার ভিত্তিতে এইরূপ কথা বলা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও ভিত্তিহীন।

 

তৃতীয়, হযরত ইবনে আব্বাস (রা)-এর বর্ণিত আলোচ্য হাদীসটি সম্পর্কে বক্তব্য এই যে, ইহার সঠিক তাৎপর্য ও জওয়াব দান পর্যায়ে হাদীস বিশারদগণ বিভিন্ন কথা বলিয়াছেন। তবে যথার্থ ও সহীহতম কথা এই যে, ইসলামের প্রথম দিকে একজন লোক যদি স্ত্রীকে বলিতঃ তুমি তালাক, তুমি তালাক, তুমি তালাক এবং সে এইরূপ বলিয়া একই কথার তাকীদ ও প্রত্যেকটি কথা নূতন অর্থে না বলার নিয়্যত করিত, তাহা হইলে উহাতে এক তালাক সংঘটিত হওয়ার ফয়সালা-ই দেওয়া হইত। কেননা এই বাক্যগুলি নূতন করিয়া এক-একটি তালাক সংঘটনের উদ্দেশ্যে বলা হইত না। তখন সাধারণত মনে করা হইত যে, সে আসলে মাত্র এক তালাক দিয়াছে ও সেইটির তাকীদের উদ্দেশ্যেই পরবর্তী বাক্য দুইটি উচ্চারণ করিয়াছে মাত্র। কিন্তু উত্তর কালে হযরত উমর ফারুক (রা)-এর খিলাফত আমলে লোকেরা তালাক দিতে গিয়া এই রকমেই তিনটি বাক্য বলিত ও প্রত্যেকটি বাক্য নূতন করিয়া উচ্চারণ করিতে লাগিল। ফলে সাধারণত বুঝা যাইতে লাগিল যে, লোকটি আলাদা-আলাদা ভাবে তিনটি তালাক-ই দিয়াছে। এই কারণে তখন উহার দ্বারা তিন তালাকই সংঘটিত করানোহইল। হযরত উমর (রা)-এর উক্ত কথার প্রকৃত তাৎপর্য ইহাই। কাজেই হযরত উমর (রা) শরীয়াতের আইন পরিবর্তন করিয়া দিয়াছিলেন এমন কথা কিছুতেই বলা যাইতে পারে না। কেহ কেহ এইরূপ তাৎপর্যও বলিয়াছেন যে, ইসলামের প্রথম দিকে নবী করীম (স) ও হযরত আবূ বকর (রা)-এর আমালে লোকেরা সাধারণত এক তালাকই দিত উচ্চারণ যতটারই করা হউক না কেন। এই কারণে তখন এক তালাকই সংঘটিত করানো হইত। আর হযরত উমর (রা)-এর আমলে লোকেরা এক সঙ্গেই তিন তালাক দিতে শুরু করিয়াছিল বিধায় তাহাতে তিন তালাকই সংঘটিত করানো উচিত হইয়া পড়িয়াছিল। ফলে হযরত উমর (রা)-এর কথাটি হইতেছে লোকদের অভ্যাস পরিবর্তিত হওয়ার সংবাদ দান পর্যায়ের। তিনি নিজে শরীয়াতের হুকু পরিবর্তন করিয়াছেন তাঁহার উক্ত কথাটি সেই পর্যায়ের নয়।

 

আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী লিখিয়াছেন, তাবেয়ীন ও তৎপরবর্তী কালের জমহুর আলেমগণ ইমাম আওজায়ী, নখয়ী, সওরী, আবূ হানীফা, ও তাঁহার সঙ্গীদ্বয়, ইমাম মালিক, ইমাম শাফেয়ী, আহমাদ ইবনে হাম্বল এবং তাঁহাদের সঙ্গী-সাথীগণ, ইসহাক, আবূ সওর, আবূ উবই ও অন্যান্য বহু সংখ্য বড় বড় ফিকাহবিদ এই মত দিয়াছেন যে, কোন লোক যদি তাহার স্ত্রীকে এক সঙ্গে তিন তালাক দেয়, তবে তাহা অবশ্যই সংঘটিত হইবে। যদিও সে লোকটি গুনাহগার হইবে। ইহারা এই কথাও বলিয়াছেন যে, এই মতের বিপরীত মত পোষণকারীদের সংখ্যা খুবই নগণ্য। আর তাহারা আহলূস সুন্নাত আল-জামায়াতের বহির্ভূত, তাহারা আলে বিদয়াতপন্হী। তাহাদের মতের কোন মূল্য নাই। সেইকে ভ্রুক্ষেপও করা যাইতে পারে না। উপরন্তু যে জামায়াত কুরআন ও সুন্নাতে কোনরূপ রদবদল করিয়াছে বলিয়া ধারণাও করা যায় না- সেই সুন্নাত আল জামায়াত হইত তাহারা বাহির হইয়া গিয়াছে।

 

ইমাম তাহাভী হযরত উমর (রা-এর বক্তব্যটি নিম্নোদ্ধৃত ভাষায় উল্লেখ করিয়াছেনঃ

 

****************************************

 

হে জনগণ! তালাকের ব্যাপারে তোমাদের জন্য একটা মহা সুযোগ ও অবকাশ দেওয়া হইয়াছিল। যে লোক আল্লাহর দেওয়া এই সুযোগকে তালাকের ক্ষেত্রে সংক্ষিপত্ ও ত্বরান্বিত করিবে, আমরা তাহাকে উহার জন্য বাধ্য করিয়া দিব।

 

ইহা ইমাম তাহাভী’র সহীহ সনদে উদ্ধৃত বর্ণনা। হযরত উমর (রা) এই ভাষণ দিয়াছিলেন সেই লোকদের সম্মুখে, যাঁহারা নবী করীম (স)-এর যুগে কি বিধান ছিল তাহা ভাল করিয়াই জানিতেন। কিন্তু তাঁহাদের কেহই হযরত উমর (রা)-এর এই কথার প্রতিবাদ করেন নাই। কাজেই ইহা একটা অতিবড় ও অকাট্য প্রমাণ-ইহা সাহাবীদের ইজমা (*******)। নবী করীম (স)-এর যুগে অনেক ব্যাপারের এক রকমের তাৎপর্য ছিল, তাঁহারই সঙ্গী-সাথীগণ সেই সবেরই ভিন্ন তাৎপর্য বাতিল করিয়া দিয়াছে। সাহাবীদের ইজমা কুরআনের অকাট্য সুস্পষ্ট ঘোষণার- **** -এর মতই ইলমে ইয়াকীন দেয়। কাজেই এই ব্যাপারে কোনই সন্দেহ বা মত-বিরোধের অবকাশ থাকিতে পারে না। সাহাবীদের ইজমা ‘মশহুর হাদীস’ হইতেও অধিক বলিষ্ঠ। উহার ভিত্তিতে অকাট্য দলীল- ********-এর উপর বৃদ্ধি সাধন ও জায়েয।

 

হযরত ইবনে আব্বাস (রা)-এর অন্য একটি কথা হইতেও তাঁহার উপরোদ্ধৃত বর্ণনা বাতিল হইয়া গিয়াছে। তাহা হইলে, একটি লোক আসিয়া হযরত ইবনে আব্বাস (রা)কে বলিলঃ আমার চাচা তাহার স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়াছে। তখন হযরত ইবনে আব্বাস (রা) বলিলেনঃ

 

****************************************

 

তোমার চাচা আল্লাহর নাফরমানী করিয়াছে ও শয়তানের আনুগত্য করিয়াছে।

 

কিন্তু অতঃপর তিনি তাঁহার জন্য কোন উপায় বলিয়া দেন নাই। একথা বলেন নাই যে, ‘ইহাতে এক তালাক হইয়াছে- চিন্তার কারণ নাই’।

 

ইহার পর বলা হইয়াছেঃ ‘যে লোক তিন তালাক দেওয়া স্ত্রীকে তাহার জন্য হালাল মনে করে তাহার সম্পর্কে আপনার মত কি? তিনি বলিলেনঃ

 

****************************************

 

যে লোক আল্লাহকে ধোঁকা দিবে, আল্লাহও তাহাকে ধোঁকায় ফেলিয়া রাখিবেন।

 

ইহার অর্থ, তিন তালাক দিয়াও স্ত্রীকে  হালাল মনে করা আল্লাহর সহিত ধোঁকাবাড়ি করার সমান অপরাধ। মুজাহিদদের সূত্রের একটি বর্বণাও ইহার সমর্থন রহিয়াচে। এক ব্যক্তি ইবনে আব্বাস (রা)-এর নিকট আসিয়া বলিল; সে তাহার স্ত্রীকে এক সঙ্গে তিন তালাক দিয়া ফেলিয়াছেন। এই কথা শুনিয়া তিনি চুপ থাকিলেন। মনে হইল যেন তিনি ইহা প্রত্যাখ্যান করিবেন। পরে বলিলেনঃ

 

****************************************

 

তুমি তাহাকে ভয় কর নাই। কাজেই আমি তোমার জন্য মুক্তির কোন পথ দেখিতেছি না। তুমি তোমার আল্লাহর নাফরমানী করিয়াছ এবং তোমার স্ত্রী তোমার হইতে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হইয়া গিয়াছে। অর্থাৎ হারাম হইয়া দিয়াছে।

 

(******)

 

বস্তুত হাদীসের বর্ণনাকারীই যদি সেই হাদীসের মূল প্রতিপাদ্যের বিপরীত ফতোয়া দেন তাহা হইলে তাঁহার বর্ণনা অপেক্ষা তাঁহার ফতোয়া-ই গ্রহণের দিক দিয়া অগ্রাধিকার পাইবে, ইহা সর্বজনমান্য নীতি।

 

ইমাম শাফেয়ী বলিয়াছেন, তিনি হয়ত পরে সঠিক কথা জানিতে পারিয়া তাঁহার পূর্ববর্তী কথাকে তিনি নিজেই বাতিল করিয়া দিয়াছেন। কেননা তিনি রাসূলে করীম (স)-এর নামে এক রকমের বর্ণনা কারিয়া উহার বিপরীত কাজ করিতে পারেন না।

 

আল্লাম আবূ বকর আল-জাসসাস বলিয়াছেন, হযরত ইবনে আব্বাস যদি মনে করিয়াও থাকেন যে, তিন তালাক এক সঙ্গে দিলে তাহাতে এক তালাকই হয়, তবুও তাহা বাতিল মনে করিত হইবে কুরআনের আয়াতের ভিত্তিতে। কুরআনের আয়াত হইলঃ * ********  ‘তালাক মাত্র দুইবার’। অর্থাৎ আয়াত অনুযায়ী দুই তালাক পর পর দেওয়া হইলে যদি কার্যকর হইতে পারে তাহা হইলে এক সঙ্গে তিন তালাক দিলে তাহা কার্যকর হইবে না কেন? আর ****** ‘ভালভাবে ছাড়িয়া দেওয়া’ কুরআনের কথাটি হইতেও এক সঙ্গে তিন তালাক দেওয়ার ও তাহা কার্যকর হওয়ার কথাই বুঝায়। এই দীর্ঘ আলোচনা হইতে নিঃসন্দেহে জানা গেল যে, এক সঙ্গে তিন তালাক দিলে তাহাতে তিন তালাকই সংঘটিত ও কার্যকর হইবে এক তালাক নয়। এই কথাটি খোদ কুরআন হইতেই প্রমাণিত।

FOR MORE CLICK HERE

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]