তিন তালাক পাওয়া স্ত্রীর প্রথম স্বামীর সহিত বিবাহ স্ত্রীকে তিন তালাকের পর পুনরায় বিয়ে করতে চাইলে করণীয়

হযরত আয়েশা (রা) হইতে বর্ণিত হইয়াছে, রিফায়া আল কুরাজীর স্ত্রী রাসূলে করীম (স)-এর নিকট আসিয়া বলিলঃ ইয়া রাসূল! রিফায়অ আমাকে তালাক দিয়াছে। আমার সে তালাক অকাট্য ও কার্যকর হইয়াছে। অতঃপর আমি আবদুর রহমান ইবনে জুবাইর আল কুরাজীকে বিবাহ করিয়াছি। কিন্তু তাহার নিকট যাহা আছে তাহা কাপড়ের ‘পাড়ের’ মত মাত্র। তখন রাসুলে করীম (স) বলিলেনঃ সম্ভবত তুমি রিফায়ার নিকট ফিরিয়অ যাইতে চাও। কিন্তু তাহা সম্ভব হইবে না যতক্ষণ সে (আবদুর রহমান) তোমার মধু পান না করিবে এবং তুমি তাহার মধু পান না করিবে।

 

(বুখারী, মুসলিম, তাবারানী)

 

ব্যাখ্যাঃ তাবারানীর বর্ণনা হইতে জানা গিয়াছে, এই স্ত্রী লোকটির নাম ছিল তমীমা বিনতে অহাব। সে প্রথমে কুরাজী বংশের রিফায়া নামক একটি লোকের স্ত্রী ছিল। কিন্তু সে পরে তালাক দেয়। সে তালাক অকাট্য ও চূড়ান্ত হইয়া যা। ********** ‘সে আমাকে সম্পূর্ণ রূপে বিচ্ছিন্ন করিয়া দেয়’। ইহার অর্থ দাঁড়া, সে হয়ত এক সঙ্গে তিন তালাক দিয়াছে; কিংবা একের পর এক করিয়া তিন তালাক দিয়াছে। এই তিন তালাকের কারণে সে তাহার জন্য সম্পূর্ণ হারাম হইয়া গিয়াছে ও পরে সে আবদুর রহমান ইবনে জুবাইর নামক কুরাজী বংশেরই অপর এক ব্যক্তিকে বিবাহ করে। মেয়ে লোকটি বলিলঃ তাহার সহিত যাহা আছে, তাহা কাপড়ের পাড়ের মত। এই কথা দ্বারা সে বুঝাইতে চাহিয়াছে যে, আবদুর রহমানের পুরুষাঙ্গ শক্তিহীন, কাপড়ের পাড় যতটা শক্ত, তাহার পুরুষাঙ্গও ততটা শক্ত। অর্থাৎ অত্যন্ত দুর্বল। (তাহা দিয়া সে তাহাকে পরিতৃক্ত পরিতে পারে না।) এই কথাটি শুনিয়াই নবী করীম (স) বুঝিতে পারিলেন যে, মেয়ে লোকটি আবদুর রহমানের পৌরুষের প্রতি যৌনতার দিক দিয়া মোটেই সন্তুষ্ট নয়। এই কারণে সে তাহার স্ত্রী হইয়া থাকিতে রাযী নয় এবং সে তাহার পূর্ববর্তী স্বাম রিফায়া- যে তাহাকে পূর্বে তালাক দিয়া ছাড়িয়া দিয়াছিল-এর নিকট যাইতে ও তাহাকে পুনরায় বিবাহ করিতে চাহে। কিন্ত্র প্রশ্ন হইল, এখন স্ত্রী লোকটি তাহার পূর্বের সেই তালাক দাতা স্বামীকে কি করিয়া পুনরায় বিবাহ করিতে পারে? নবী করীম (স) বলিলেনঃ তুমি তাহার নিকট যাইতে ও তাহাকে স্বামীরূপে বরণ করিতে পার না। সে তোমার জন্য হারাম হইয়া গিয়াছে।তবে তাহার একটি মাত্র পথ হইল, তুমি যদি তোমার বর্তমান স্বামীর সহিত সার্থক সঙ্গম কার্য করিতে পার এবং সে তোমাকে তালাক দেয় তবে তাহার পর তুমি তোমার সেই প্রথম স্বামী রিফায়াকে বিবাহ করিতে পারিবে- ‘মধুপান’ অর্থ সার্থক স্বামী-স্ত্রী সঙ্গম। মুসনাদে আহমাদের বর্ণনায় হযরত আয়েশার এই কথাটি উদ্ধৃত হইয়াছে।

 

রাসূলে করীম (স)-এর এই ঘোষণা কুরআন মজীদের স্পষ্ট ঘোষণার উপর ভিত্তিশীল। প্রথম কথাটি সম্পর্কে কুরআনের স্পষ্ট ঘোষণা হইলঃ

 

****************************************

 

বর্তমান স্বামী যদি স্ত্রীকে তালাক দেয়, তাহা হইলে সে স্ত্রী লোকটি ও তাহার পূর্ববর্তী স্বামী যদি মনে করে যে, তাহারা পুনরায় স্বামী-স্ত্রী হইয়া আল্লাহর সীমা সমূহ কায়েম ও রক্ষা করিতে পারিবে, তাহা হইলে তাহাদের দুইজনের পুনরায় স্বামী-স্ত্রী হইতে কোন দোষ নাই।

 

আর দ্বিতীয় কথাটি সম্পর্কে স্পষ্ট ঘোষণা হইলঃ

 

****************************************

 

স্বামী যদি তাহার স্ত্রীকে (তিন) তালাক দিয়া দেয়, তাহা হইলে এই স্ত্রী তাহার জন্য হালাল হইবে না যতক্ষণ না সে জন্য এক স্বামী ‘বিবাহ’ করিবে।

 

অন্য এক স্বামীকে ‘বিবাহ’ করিলে তাহার (সে স্বামীর তালাক বা মৃত্যুর পর) প্রথম স্বামীর জন্য এই স্ত্রী হালাল হইবে। ইহা কুরআনের আয়াতের বাহ্যিক অর্থ। এ অর্থে ***** শব্দের অর্থ করা হইয়াছে ‘বিবাহ’। কিন্তু এখানে এই ‘নিকাহ’ বা ‘বিবাহ’ বলিতে সত্যি-ই কি বুঝানো হইয়াছে, তাহা আলোচনা সাপেক্ষ।

 

বিবাহ বলিতে এখানে কি বুঝানো হইয়াছে ও কি কাজ হইলে প্রথম স্বামীর সহিত পুনরায় বিবাহিত হওয়া হালাল হইবে, এ বিষয়ে শরীয়াতবিদ লোকেরা নানা কথা বলিয়াছেন। সায়ীদ ইবনুল মুসাইয়্যিব এবং তাঁহার সমর্থকদের মত হইল, দ্বিতীয় একজনের সাথে শুধু বিবাহের আকদ (*****) হওয়াই যথেষ্ট। হাসান ইবনে আবুল হাসান বলিয়াছেনঃ কেবলমাত্র সঙ্গমই যথেষ্ট নয়। স্ত্রী অঙ্গে শুক্র নিষ্ক্রমণ হওয়া জরুরী। জমহুর আলেম ও বিপুল সংখ্যক ফিকাহবিদ বলিয়াছেন, শুধু যৌন সঙ্গমই যথেষ্ট। আর তাহা হইলে স্ত্রী অঙ্গের মধ্যে পুরুষাঙ্গের প্রবেশ করা- যাহার ফলে গোসল ওয়াজিব হয় এবং রোযা ও হজ্ব বিনষ্ট হয় এবং পূর্ণ মহরানা দিয়া দেওয়া ওয়াজিব হয়।

 

ইবনুল আরাবী বলিয়াছেন, আমার নিকট ফিকাহর এই মাসলাটি সর্বাপেক্ষা কঠিনও দুর্বোধ্য। ফিকাহর নিয়ম ও মূল নীতি একটা জিনিসের নামের প্রথম ভাগের সহিত সংশ্লিষ্ট, না উহার শেষ ভাগের সঙ্গে, ইহাই বড় প্রশ্ন। ‘বিবাহ’ কাজটির প্রথম ভাগ হইল শুধু আকদ হওয়া। আর উহার দ্বিতীয় ভাগ- উহার অনিবার্য পরিণতি স্ত্রী সঙ্গম। কুরআনের ‘নিকাহ’ শুদ্ধ হইতে উহার প্রথম ভাগ- অর্থাৎ আকদ- বুঝিলে সায়ীদ ইবনুল মুসাইয়্যিবের কথাকে সত্য মানিয়া লইতে হয়। আর শেষ ভাগ বুঝিলে, এই শর্ত করিতে হয় যে, দ্বিতীয় স্বামীর সহিত যৌন সঙ্গম ও তাহাতে শুক্র নিষ্ক্রমণ হওয়া জরুরী। কেননা ইহাই হইল স্বামী-স্ত্রীর মধু পানের সর্বশেষ পর্যায়।

 

ইবনুল মুনযির বলিয়াছেন, আয়াতের ‘নিকাহ’ অর্থ বিবাহ হওয়ার পর যৌন সুখ মাধুর্য লাভ করা। আর তাহা স্ত্রী সঙ্গমেই সম্ভব। অতএব প্রথম স্বামীর জন্য স্ত্রীর হালাল হওয়া নির্ভর করে দ্বিতীয় স্বামীর সহিত বিবাহের আকদ ও সার্থক যৌন সঙ্গম সংঘটিত হওয়ার উপর।

 

যে সব লোকের নিকট এই পর্যায়ের হাদীস পৌঁছায় নাই কিংবা পৌঁছিয়া থাকিলেও যাহারা এই পর্যায়ের হাদীসেকে সহীহ মনে করেন নাই, কেবলমাত্র তাহাকেই দ্বিতীয় স্বামীর সহিত শুধু ‘আকদ-নিকাহ’ হওয়াকেই প্রথম স্বামীর পক্ষে তাহার হালাল হওয়ার জন্য যথেষ্ট মনে করিয়াছেন। কিন্তু এই পর্যায়ের হাদীস সহীহ না হওয়ার কোনই কারণ নাই, হযরত আয়েশা (রা) হইতে বুখারী বর্ণিত হাদীসটি উপরে উদ্ধৃত হইয়াছে। এই পর্যায়ে আরও একটি হাদীস হযরত আয়েশা (রা) হইতে বর্ণিত। উহার ভাষা এইরূপঃ

 

****************************************

 

রাসূলে করীম (স) বলিয়াছেন, এক ব্যক্তি তাহার স্ত্রীকে তিন তালাক দিলে ও স্ত্রী তাহার জন্য হালাল হইবে না যতক্ষণ না সে তাহার ছাড়া অন্য এক স্বামী গ্রহণ করিবে এবং তাহাদের দুইজনের প্রত্যেকের পরস্পরের মধুপান করিবে।

 

বুখারী উদ্ধৃত অপর একটি হাদীস হইতেও এই কথা জানা যায়। হাদীসটি এইঃ

 

****************************************

 

হযরত আয়েশা (রা) হইতে বর্ণিত হইয়াছে, এক ব্যক্তি তাহার স্ত্রীকে তালাক দিল। পরে সে স্ত্রী অন্য এক স্বামী গ্রহণ করিল। পরে সেও তাহাকে তালাক দিল। এই সময় নবী করীম (স)কে জিজ্ঞাসা করা হইল, এই স্ত্রী লোকটি কি তাহার প্রথম স্বামীর জন্য হালাল? জওয়াবে রাসূলে করীম (স) বলিলেন, না যতক্ষণ না এই দ্বিতীয় স্বামী তাহার মধু পান করিয়াছে, যেমন করিয়াছে প্রথম স্বামী।

 

এই দুইটি হাদীস হইতে কুরআনে ব্যবহৃত ****** যতক্ষণ না বিবাহ করিবে কথাটির সঠিক তাৎপর্য স্পষ্ট ভাবে জানা যায়। আর তাহা হইলে, দ্বিতীয় স্বামীর সহিত বিবাহের আকদ হওয়ার পর যৌন সঙ্গম শুধু সঙ্গম নয়, সার্থক সঙ্গম হইতে হইবে এবং তাহাতে এই দুইজনের সমান ভাবে যৌন মাধুর্য লাভ করিতে হইবে। নতুবা অতঃপর এই স্বামী তাহাকে তালাক দিলে সে তাহার পূর্ববর্তী স্বামীর জন্য হালাল হইবে না। নবী করীম (স)-এর কথা এই ব্যাপারে সুস্পষ্ট, অকাট্য ও বলিষ্ঠ।

FOR MORE CLICK HERE

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]