জোর পূর্বক তালাক লওয়া জোরপূর্বক তালাকের কাগজে সাইন করালেই কি তালাক হয়ে যায়?

হযরত আয়েশা (রা) হইতে বর্ণিত হইয়াছে, তিনি বলিয়াছেন, আমি রাসূলে করীম (স) কে বলিতে শুনিয়াছি যে, প্রতিবন্ধকতায় তালাকও হয় না, দাসমুক্ত করণও হয় না।

 

(আবূ দায়ূদ, ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমাদ, হাকেম)

 

ব্যাখ্যাঃ স্ত্রীকে তালাক দেওয়া ও দাসমুক্ত করার কাজটি অত্যন্ত দায়িত্বপূর্ণ ও সূদুর প্রসারী পরিণতি সম্বলিত কাজ। ইহা সার্বিকভাবে উম্মুক্ত পরিবেশের মধ্যে সম্পন্ন হওয়া বাঞ্ছনীয়। ইহার ব্যতিক্রম হইলে এই দুইটি কাজ হইল বলিয়া মনে করা যাইতে পারে না।

 

হাদীসের শব্দ **** ব্যাখ্যা সাপেক্ষ। ইহার মূল শব্দ হইল *****। অভিধানে ইহার কয়েকটি অর্থ লিখিত হইয়াছে। তাহা হইলঃ সংকীর্ণমনা হওয়া, ক্রোধান্ধ হওয়া, চরিত্রহীন হওয়া। ********** ‘তাহাকে এইকাজ করিতে সে বাধ্য করিয়াছে, ও ****** অর্থ, দরজা বন্ধ হওয়া। ***** অর্থ, তালা লাগানো। মুহাদ্দিসদের মতে **** অর্থ ***** জোর করিয়া কোন কাজ করিতে বাধ্য করা। কেননা যাহার উপর জোর প্রয়োগ করা হয় তাহাকে সাধারণত কোন কক্ষে বা ঘরে বন্দী করা হয়, বাহির হইতে তালা লাগানো হয়। কিংবা ঘরে, দরজা এমন ভাবে বন্ধ করিয়া দেওয়া হয় যে, আদিষ্ট কাজটি না করা পর্যন্ত উহা হইতে মুক্তি ও নিষ্কৃতি লাভ সম্ভবপর হয় না। এই প্রেক্ষিতে এ হাদীসটির মোটামুটি অর্থ দাঁড়ায়, জোর পূর্বক তালাক লওয়া হইলে সে তালাক গণ্য হইবে না। দাসমুক্ত করণের ব্যাপারটিও এইরূপ।

 

বস্তুত বিবাহ যেমন স্বেচ্ছাপ্রণোদিত ভাবে ও নিজস্ব ইচ্ছা ও উদ্যোগ সহকারে হইয়া থাকে, তালাকও অনুরূপ ভাবে স্বামীর ইচ্ছা ও সংকল্পের ভিত্তিতে হইতে হইবে। স্বামী নিজ ইচ্ছা ও সংকল্পে যখনই তালাক দিবে, তখনই তালাক সংঘটিত হইবে। ইহাতে যদি অন্য কাহারও চাপ প্রয়োগ হয়, কেহ যদি কাহারও নিকট হইতে জোর পূর্বক তালাক আদায় করিতে চাহে ও কাহাকেও আটক করিয়া- গলায় গামছা দিয়া তালাক দিতে বাধ্য করে, তবে তাহা সম্পূর্ণ ব্যর্থ ও নিষ্ফল চেষ্টা মাত্র, উহাতে তালাক হয় না। এই উপায়ে যে তালাক লওয়া হয়, ইসলামী শরীয়াতে তাহা তালাক বলিয়া গণ্য হয় না।

 

আল মুনযেরী বলিয়াছেন, কাহারও কাহারও মতে এই হাদীসে **** শব্দের অর্থঃ ******- ক্রোধ। আবূ দায়ূদ তাঁহার গ্রন্হে এই হাদীসটি উদ্ধৃত করিয়া লিখিয়াছেনঃ ************ এখানে ****** বা ***** অর্থ ক্রোধের বশঃবর্তি হইয়া তালাক দেওয়া। এই অর্থে কেহ যদি ক্রোধান্ধ হইয়া স্ত্রীকে তালাক দেয়, তবে সে তালাক সংঘটিত ও কার্যকর হইবে না।

 

কিন্তু এই হাদীস হইতে এরূপ অর্থ গ্রহণ সহীহ হইতে পারে না। কেননা যদি তাহাই হইবে তাহা হইলে দুনিয়ায় তালাক আদৌ সংঘটিত হইতে পারে না। কেননা স্ত্রীর প্রতি অসন্তুষ্ট ও ক্রুব্ধ না হইলে কেহই তাহার স্ত্রীকে তালাক দেয় না। কাজেই **** শব্দের অর্থ ***** ‘ক্রোধ’ করা সহীহ নয়।

 

এই হাদীস হইতে একথা অকাট্য ভাবে প্রমাণিত হয় যে, জোরপূর্বক কাহাকেও তালাক দিতে বাধ্য করা হইলে তাহাতে তালাক হইবে না। হযরত আলী, উমর, ইবনে আব্বাস, ইবনে উমর ও জুবাইর (রা) প্রমুখ সাহাবী এবং হাসান বসরী, আতা, মুজাহিদ, তায়ূস, শুরাইহ, আওজায়ী, হাসান ইবনে সালেহ, মালিক, শাফেয়ী প্রমুখ তাবেয়ী ও পরবর্তী ফিকাহবিদগণ এই মত প্রকাশ করিয়াছেন।

 

উপরোদ্ধৃত হাদীসটিই তাঁহাদের এই মতের দলীল। তাঁহারা দলীল হিসাবে আরও একটি হাদীস উল্লেখ করিয়াছেন, তাহা হইল, নবী করীম (স) বলিয়াছেনঃ

 

****************************************

 

আমার উম্মতের লোক ভূল-ভ্রান্তি ও বাধ্যতার কারণে যাহা করে তাহা মাফ করিয়া দেওয়া হইয়াছে।

 

অর্থাৎ ইহার কোন কার্যকারিতা নাই। সে জন্য আল্লাহ কাহাকেও দায়ী করিবেন না। পক্ষান্তরে নখয়ী, সায়ীদ ইবনুল মুসাইয়্যিব, সওরী, উমর ইবনে আবদুল আজীজ এবং ইমাম আবূ হানীফা ও তাহার সঙ্গীদ্ব মত প্রকাশ করিয়াছেন যে, কেহ বাধ্য হইয়া অনিচ্ছা সত্ত্বেও যদি তালাক দেয় তাহা হইলে তাহা সংঘটিত হইবে ইহাদের প্রথম দলীল কুরআন মজীদের আয়াত ******* ‘তোমরা যখন তোমাদের স্ত্রীদের তালাক দিবে, তখন তাহাদিগকে তালাক দিবে তাহাদের ইদ্দতের জন্য’। এখানে তালাক দেওয়ার ব্যাপারটি সম্পূর্ণ শর্তহীন। তালাক দিলেই হইল কোন কারণে ও কি অবস্থায় তালাক দিয়াছে সে দিকে লক্ষ্য রাখা হয় নাই।

 

দ্বিতীয় দলীল হইব, রাসূলে করীম (স) বলিয়াছেনঃ

 

****************************************

 

সব তালাকই সংঘতি হইবে- বালক ও পাগল- বেহুঁশ লোকের তালাক ছাড়া।

 

কুরআন ও হাদীস উভয় স্থানেই তালাক শর্তহীন ভাবেই সংঘটিত হওয়ার কথা ঘোষিত হইয়াছে। কাজেই তালাক যে অবস্থায়ই দেওয়া হউক না কেন তাহা অবশ্যই সংঘটিত হইবে। জোর পূর্বক তালাক লওয়া হইলে- কাহারও চাপে পড়িয়া তালাক দিতে বাধ্য হইয়া তালাক দিলেও তাহা কার্যকর হইবে। ইহার স্বপক্ষে যুক্তিও রহিয়াছে। যে লোক কোন চাপে বাধ্য হইয়া তালাক দেয়, প্রকৃতপক্ষে সে তালাক উচ্চারণ করিতে প্রস্তুত হয় বলিয়াই উহার শব্দ মুখে উচ্চারণ করে। আর এই উচ্চারণেই তালাক কার্যকর হইয়া যায়। উপরোদ্ধৃত হাদীসটি হইতে যে অর্থ গ্রহণ করা হইতেছে তাহা উহার প্রকৃত অর্থ নয়। যে লোক ***** এর অর্থ ****** করে সে মারাত্মক ভূল করে।

 

তাহা হইলে আলোচ্য হাদীসটির কি অর্থ দাঁড়ায়? এই হাদীসটির অর্থ হইল, ******** ‘কুফরির উপর জরবদস্তি’। যে লোকদের সামনে এই হাদীসটি ঘোষিত হইয়াছিল, তাহারা নূতন নূতন ইসলাম কবুল করিয়াছিলেন। এ সময় কুফরির উপর জোর প্রয়োগ ছিল একটা সাধারণ ও নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। আর তাঁহাদের মুখে ভূল ও ভ্রান্তি বশতঃ কুফরি কালামও প্রায়ই উচ্চারিত হইত। এই কারণে আল্লাহ তা’আলা তাহা মাফ করিয়া দেওয়ার কথা ঘোষণা করিয়াছেন।

 

আমর ইবনে শারাহীল হইতে বর্ণিত হইয়াছে, একটি স্ত্রীলোক তাহার স্বামীকে তালাক দিতে জোর পূর্বক বাধ্য করিল। সে তালাক দিয়া দিল। পরে এই মামলা হযরত উমর ফারূক (রা)-এর সমীপে উপস্থিত করা হয়। তিনি সে তালাককে কার্যকর করিয়া দেন।

FOR MORE CLICK HERE

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]