হযরত উম্মে আতায়াতা (রা) হইতে বর্ণিত হইয়াছে, তিনি বলিয়াছেন, হযরত নবী করীম (স) বলিয়াছেনঃ আল্লাহ ও পরকারের প্রতি ঈমানদার কোন স্ত্রীলোকের পক্ষে তিন দিনের বেশী কাল কাহারও জন্য শোক পালন করা হালাল নয়। তবে স্বামীর জন্য স্বতন্ত্র কথা। এই সময় সে সুর্মা লাগাইবে না, কোন রঙীন কাপড় পরিবে না, তবে মোটা সুতীর কাপড় (পরিবে)।
(বুখারী)
ব্যাখ্যাঃ নিকটাত্মীয়ের মৃত্যুতে স্ত্রীলোককে শোক পালন করিতে হয়। আত্মীতার নিকটত্ব বিশেষ এই শোকের মেয়াদের মধ্যে তারতম্য হইয়া থাকে। হাদীসটিতে বলা হইয়াছে, আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমানদার- অর্থাৎ মুসলমান স্ত্রীলোক পিতা-মাতা বা ভাই বোন কিংবা অন্য কোন নিকটাত্মীয়ের মৃত্যুতে যে শোক পালন করিবে, উহার মেয়াদ হইল মাত্র তিন দিন। তিন দিনের অধিক কাল কোন মৃত্যুর জন্য শোক পালন করা কোন মুসলমান স্ত্রীলোকের জন্যই জায়েয নয় তবে স্বামীল কথা স্বতন্ত্র। কেননা স্ত্রীলোকের পক্ষে তাহার স্বামীর তুলনায় অধিক নিকটাত্মীয় ও অতি আপনজন কেহ হইতে পারে না। এই কারণে স্বামীর জন্য শোক করার মেয়াদ মাত্র তিন দিন নয়। ইহা হইতে অনেক বেশী। আর তাহা হইল চার মাস দশ দিন। এই শোক কাল নির্ধারণের মূল্যে আরও একটি উদ্দেশ্যে নিহিত আছে।
এই শোক কালকে ইসলামী পরিভাষায় বলা হয় ‘ইদ্দাত’ ****। ‘ইদ্দাত’ শব্দের শাব্দিক ও অভিধানিক অর্থ ‘গণনা’ করা। এই দিনগুলি বিশেষ ভাবে গণিয়া গণিয়া শেষ করা হয়। এবং কবে যে তাহা শেষ হইবে সে জন্য উদগ্রীব হইয়া অপেক্ষা করা হয়। এই কারণেই ইহাকে ‘ইদ্দাত’ বলা হয়। মুহাদ্দিস কাহলানী সানয়ানী লিখিয়াছেনঃ
****************************************
ইদ্দাত হইল সেই মেয়াদের নাম, যে কালে স্ত্রী তাহার স্বামী গ্রহণ হইতে বিরত থাকে ও প্রতীক্ষায় বসিয়া থাকে। ইহা পালন করা হয় সন্তান প্রজনন দ্বারা কিংবা তুহর গণনা দ্বারা অথবা মাস গণনার দ্বারা।
আল্লামা বদরুদ্দনি আইনী লিখিয়াছেনঃ
****************************************
শরীয়াতের দৃষ্টিতে ইদ্দাত হইল অপেক্ষা কাল- অর্থাৎ স্ত্রীলোকের বিবাহ শেষ হইয়া যাওয়ার পর যে সময়টা তাহাকে পুনর্বিবাহের জন্য অপেক্ষা করিয়া কাটাইতে হয় তাহারই নাম ইদ্দাত।
স্ত্রীকে এই ইদ্দাত বা অপেক্ষাকাল কিভাবে অতিবাহিত করিতে হইবে এবং তখন তাহার জীবন ধারা কি রূপ হইবে, তাহাই আলোচ্য হাদীসটির বক্তব্য। নবী করীম (স) বলিয়াছেন, স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রীর এই অপেক্ষাকাল অত্যন্ত সাদাসিদা ভাবে কাটাইতে হইবে। এই সময় সে সুর্মা লাগাইতে পারিবে না। কোন রঙীন বা রেশমী চকচকে পোশাক পরিধান করিতে পারিবে না। এই সময় সে সুতার মোটা কাপড় পরিধান করিবে। হাদীসের পরিভাষায় বিধবা স্ত্রীর এইরূপ করাকে বলা হয় *****।
ইবনুল মুনযির বলিয়াছেন, শোকাতুরা স্ত্রীর পক্ষে রঙীন চকচকে কাপড় পরা জায়েয নয়। তবে কালো বর্ণের বা কালো রঙ করা কাপড় পরিতে পারিবে। হযরত ওরওয়া ইবনে জুবাইর, ইমাম মালিক ও ইমাম শাফেয়ী কালো রঙের কাপড় পরা জায়েয বলিয়াছেন। ইমাম জুহরী কালো রঙের কাপড় পরা মাকরূহ বলিয়াছেন। ওরওয়া বলিয়াছেন, লাল বর্ণের কাপড় পরিতে পারিবে না।
ইমাম শাফেয়ী বলিয়াছেন, যে বর্ণে ও রঙেই চাকচিক্য বা সৌন্দর্য আছে, তাহা পরা যাইবে না, উহা মোটা কাপড়ই হউক, কিংবা পাতল। হালকা সাদা কাপড় পরাই বিধেয়। ইমাম নববী লিখিয়াছেনঃ
****************************************
স্বর্ণ ও রৌপ্যের বা মূল্যবান পাথরের-মণি-মুক্তার অলংকার এই সময় ব্যবহার করা হারাম।
উম্মে আতীয়াতার অপর একটি বর্ণনায় বলা হইয়াছেঃ
****************************************
এই পর্যায়ে নবী করীমের এই নিষেধবাণী বর্ণিত হইয়াছেঃ সে (বিধবা স্ত্রী) সুগন্ধী স্পর্শ করিতে পারিবে না। তবে হায়য হইত যখন পবিত্র হইয়া উঠিবে, ঠিক সেই শুরুতে পবিত্রতা লাভের প্রাথমিক সময় কুশত ও আজগার সুগন্ধী সামান্য মাত্রায় ব্যবহার করিতে পারিবে।
ইমাম নববী বলিয়াছেনঃ ইহা সুগন্ধীর উদ্দেশ্যে ব্যবহার করিবেনা, ব্যবহার করিবে হায়য জনিত দুর্গন্ধ দূল করার উদ্দেশ্যে।
আবূ হাতেম আর-রাযী বর্ণনাটি এই ভাষায় বর্ণনা করিয়াছেনঃ
****************************************
রাসূলে করীম (স) স্ত্রীলোককে তিন দিনের অধিক কাহারও জন্য শোক কারিতে নিষেধ করিয়াছেন। তবে স্বামীর মৃত্যুতে সে শোক করিবে চার মাস দশ দিন। আর এই সময় সে রঙীন কাপড় করিবে না, পরিবে মোটা সুতীর কাপড়। সুর্মা লাগাইবে না এবং সুগন্ধি স্পর্শ করিবে না। নাসায়ীর বর্ণনায় অতিরিক্ত শব্দ হইতেছেঃ ***** মাথায় চিরুনী চালাইবে না। মাথা আচড়াইবে না।