যারা কুরবানী ওয়াজীব বলেন তাদের দলিল- যারা কুরবানী সুন্নাত বলেন তাদের দলিল-

কোরবানি কি ফরজ ওয়াজিব নাকি সুন্নত
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম, কোরবানি কি ফরজ ওয়াজিব নাকি সুন্নত: কুরবানী বিধেয় হওয়ার ব্যাপারে সকল মুসলিম একমত। এ ব্যাপারে কোন দ্বিমত নেই। তবে কুরবানীর হুকুম কি? ওয়াজীব না সুন্নাত? এ বিষয়ে ইমাম ও ফকীহদের মাঝে দুটো মত রয়েছে।

প্রথম মত – কুরবানী ওয়াজীব। ইমাম আওযায়ী, ইমাম লাইস, ইমাম আবু হানিফা, ইমাম মালেক, ইমাম আহমাদ (র) প্রমুখের মত এটাই।

দ্বিতীয় মত – কুরবানী সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ; এটা অধিকাংশ উলামাদের মত; ইমাম মালেক ও ইমাম শাফেয়ী (র) এর প্রসিদ্ধ মত এটি; কিন্তু এ মতের প্রবক্তারা আবার বলেছেন সামর্থ্য থাকা অবস্থায় কুরবানী পরিত্যাগ করা মাকরুহ; যদি কোন জনপদের লোকেরা সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও সম্মিলিতভাবে কুরবানী পরিত্যাগ করে; তবে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হবে; কেননা কুরবানী হল ইসলামের একটি মহান নিদর্শন।
যারা কুরবানী ওয়াজীব বলেন তাদের দলিল-
১.আল্লাহ তায়ালা নির্দেশ দিয়েছেন –

তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় কর ও পশু যবেহ কর।(সুরা কাওসার:২)

আর আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নির্দেশ পালন ওয়াজিব হয়ে থাকে।

২. রাসুল (স) বলেছেন –

যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানী করে না সে যেন আমাদের ঈদগাহের ধারে না আসে।(মুসনাদ আহমাদ, হাকেম, ইবনে মাজাহ)

যারা কুরবানী পরিত্যাগ করে তাদের প্রতি এ হাদিস একটি সতর্কবাণী। তাই কুরবানী ওয়াজীব।

৩. রাসুল (স) বলেছেন-

হে মানব সকল! প্রত্যেক পরিবারের দায়িত্ব হল প্রতি বছর কুরবানী দেয়া।(মুসনাদে আহমাদ, ইবনে মাজাহ)

যারা কুরবানী সুন্নাত বলেন তাদের দলিল-
১.রাসুল (স) বলেছেন-

তোমাদের মাঝে যে কুরবানী করতে চায়; যিলহজ্জ মাসের চাঁদ দেখার পর সে যেন কুরবানী সম্পন্ন করার আগে তার কোন চুল ও নখ না কাটে।

সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৯৭৭।

এ হাদিসে রাসুল (স) এর ‘যে কুরবানী করতে চায়’ কথা দ্বারা বুঝা যায় এটা ওয়াজীব নয়।

২.রাসুল (স) তার উম্মতের মাঝে যারা কুরবানী করেনি তাদের পক্ষ থেকে কুরবানী করেছেন; তার এ কাজ দ্বারা বুঝে নেয়া যায় যে; কুরবানী ওয়াজিব নয়।

ফায়সালা
আমার মতে কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার মতটিই সঠিক; কারন আল্লাহ তায়ালা রাসুল (স) কে নির্দেশ দিয়েছেন কুরবানী পেশ করতে; এবং রাসুল (স) আমাদেরকে কুরবানীর তাকিদ দিয়েছেন ও সতর্কবাণী পেশ করেছেন।

অপরদিকে, কুরবানী সুন্নাত হওয়ার ব্যাপারে যে দুইটি দলিল পেশ করা হয়েছে; তার প্রথমটিতে বলা হয়েছে; রাসুল (স) বলেছেন- তোমাদের মাঝে যে কুরবানী করতে চায়; যিলহজ্জ মাসের চাঁদ দেখার পর সে যেন কুরবানী সম্পন্ন করার আগে তার কোন চুল ও নখ না কাটে; আসলে এই হাদিসে কুরবানীর বিধান বর্ণনা করা মূল উদ্দেশ্য নয়; বরং মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে যিলহজ্জ মাসের শুরু থেকে কুরবানী সম্পন্ন করা পর্যন্ত নির্দিষ্ট একটি আমলের কথা বর্ণনা করা; কুরবানী করা বা না করা, কুরবানী কে করবে বা কে না করবে এটা আলোচ্য বিষয় নয়; আলোচ্য বিষয় ঐ নির্দিষ্ট আমল; আর সবার কুরবানী পেশ করার  সামর্থ্য থাকে না, থাকলেও সবাই করে না , যে কুরবানী পেশ করার ইচ্ছা করছে সে যেন ঐ নির্দিষ্ট আমলটি করে, হাদিসের মূল আলোচনা এটাই; অতএব এই হাদিস দ্বারা কুরবানীর বিধানের দলিল দেয়া যায় না।

আর দ্বিতীয় দলিলে বলা হয়েছে, রাসুল (স) তার উম্মতের মাঝে যারা কুরবানী করেনি তাদের পক্ষ থেকে কুরবানী করেছেন।  এখানে যারা সামর্থ্য না থাকার কারনে দেয়নি আর রাসুল (স) তাদের পক্ষ থেকে কুরবানী দিয়েছেন যদি এমনটা হয়ে থাকে তবে এটা কুরবানীর বিধানের দলিল হয় না কারন যাদের সামর্থ্য নেই তাদের উপর বিধান নেই।

আর যদি এমনটাই হবে যে; রাসুল (স) তাদের পক্ষ থেকে কুরবানী করেছেন যারা সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানী করেনি; তাহলে তিনি তাদেরকে ঈদগাহে আসতে নিষেধ করলেন কেন; যেমনটি ঈদগাহে আসতে নিষেধ করেছেন তাদেরকে যারা রামাযানের একমাস সিয়াম পালন না করবে। অতএব যাদের সামর্থ্য আছে; কুরবানী পেশ করা তাদের উপর ওয়াজিব; এই মতটিই সঠিক। তাই যারা কুরবানীর বিধান শিথিল মনে করেন বা ঐচ্ছিক মনে করেন; তারা এই ধারণা ছুড়ে ফেলে দিয়ে কুরবানী পেশ করার জন্য প্রস্তুত হয়ে যান; ঈদুল আযহার দিনে সর্বউত্তম ইবাদাত হল কুরবানী পেশ করা; অর্থাৎ পশুর রক্ত প্রবাহিত করা।

FOR MORE CLICK HERE

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]