বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম; আজকে আলোচনা করব লাইলাতুল কদর বা শবে কদরের রাতের দোয়া সম্পর্কে। শবে কদরের রাত পেয়ে গেলে যে দোয়া করতে রাসুল সঃ আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন তা আলোচনা করতে চাই। লায়লাতুল কদরের দুআ, laylatul qadr dua
১. লাইলাতুল কদরের দোয়া বা লায়লাতুল কদরের দুআ. laylatul qadr dua
২. লাইলাতুল কদর অর্থ কি
৩. লাইলাতুল কদরের ফজিলত
৪. লাইলাতুল কদরের নামাজ
৫. লাইলাতুল কদর কোন রাতে
১. লাইলাতুল কদরের দোয়া বা লায়লাতুল কদরের দুআ. laylatul qadr dua
আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ সঃ আমি যদি কদরের রাত পেয়ে যাই তবে কি দুআ’ পড়বো? তিনি বলেনঃ তুমি বলবে,
اللهم إنك عفو تحب العفو فاعف عني.
উচ্চারণঃ- আল্লা-হুম্মা ইন্নাকা আফুউবুন তুহিব্দুল আফওয়া, ফা’ফু আন্নী।
অর্থঃ হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমাকারী, তুমি ক্ষমা করতেই ভালোবাসো। অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও।
ইবনে মাজাহ ৩৮৫০
আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল সঃ যদি আমি লাইলাতুল ক্বদর জানতে পারি তাহলে সে রাতে কি বলব? তিনি বললেনঃ তুমি বলবে,
اللهم إنك عفو كريم تحب العفو فاعف عني.
উচ্চারণঃ- আল্লা-হুম্মা ইন্নাকা আফুউবুন কারীমুন তুহিব্দুল আফওয়া, ফা’ফু আন্নী।
অর্থঃ হে আল্লাহ! তুমি সম্মানিত ক্ষমাকারী, তুমি মাফ করতেই পছন্দ কর, অতএব তুমি আমাকে মাফ করে দাও।
তিরমিযী ৩৫১৩
মহান আল্লাহ এই রাতে কুরআন অবতীর্ণ করেছেন এবং সে রাতের মাহাত্ম্য ও ফজিলত বর্ণনা করার জন্য কুরআন মাজীদের পূর্ণ একটি সূরা অবতীর্ণ করেছেন এবং সেই সূরার নামকরণও হয়েছে তারই নামে। মহান আল্লাহ বলেন,
অর্থাৎ, নিশ্চয় আমি ঐ কুরআনকে শবে কদরে অবতীর্ণ করেছি। তুমি কি জান, শবে কদর কি? শবে কদর হল হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। (কুঃ ৯৭/১-৩)
এক হাজার মাস সমান ৩০ হাজার রাত্রি। অর্থাৎ এই রাতের মর্যাদা ৩০,০০০ গুণ অপেক্ষাও বেশী! সুতরাং বলা যায় যে, এই রাতের ১টি তাসবিহ অন্যান্য রাতের ৩০,০০০ তসবীহ অপেক্ষা উত্তম; অনুরূপ এই রাতের ১ রাকআত নামাজ অন্যান্য রাতের ৩০,০০০ রাকআত অপেক্ষা উত্তম। বলা বাহুল্য, এই রাতের আমল শবে কদর বিহীন অন্যান্য ৩০ হাজার রাতের আমল অপেক্ষা অধিক শ্রেষ্ঠ; সুতরাং যে ব্যক্তি এই রাতে ইবাদত করল, আসলে সে যেন ৮৩ বছর ৪ মাস অপেক্ষাও বেশি সময় ধরে ইবাদত করল।
লাইলাতুল কদর অর্থ কি? লাইলাতুল কদরের ব্যাখ্যা
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম; রমজান মাসের শেষ দশকের বিজোড় সংখ্যার রাত্রিগুলোতে শবে কদর অনুসন্ধান করা মুস্তাহাব। মহানবী সঃ লাইলাতুল কদর পাওয়ার জন্য উক্ত রাত্রিগুলোতে বড় মেহনত করতেন। রমযানের শেষ দশক এসে উপস্থিত হলে আল্লাহর রাসূল সঃ (ইবাদতের জন্য) নিজের কোমর (লুঙ্গি) বেঁধে নিতেন, সারা রাত্রি জাগরণ করতেন এবং আপন পরিজনকেও জাগাতেন। তাছাড়া শবে কদরের সন্ধানে ও আশায় তিনি ঐ শেষ দশকের দিবারাত্রে ইতিকাফ করতেন। আসুন! আমরা দেখি লাইলাতুল কদর বা শবে কদর অর্থ কি? তার কদর কতটুকু? এবং তার আহকাম কি?
১. লাইলাতুল কদর অর্থ কি
২. লাইলাতুল কদরের ফজিলত
৩. লাইলাতুল কদরের নামাজ
৪. লাইলাতুল কদরের দোয়া
৫. লাইলাতুল কদর কোন রাতে
১. লাইলাতুল কদর অর্থ কি
আরবি লাইলাতুল ক্বাদর শব্দের ফারসি, উর্দু, হিন্দী ও বাংলা অর্থ হলো শবে কদর। আরবিতে ‘লাইলাহ’ এবং ফারসীতে ‘শব’ শব্দের মানে হল রাত। কিন্তু ক্বাদর শব্দের মানে বিভিন্ন হতে পারে। আর সে জন্যই এর নামকরণের কারণ ও বিভিন্ন। যেমনঃ
১। ক্বাদর মানে তকদীর। সুতরাং লাইলাতুল ক্বাদর বা শবে কদরের মানে তকদীরের রাত বা ভাগ্য-রজনী। যেহেতু এই রাতে মহান আল্লাহ আগামী এক বছরের জন্য সৃষ্টির রুযী, মৃত্যু ও ঘটনা ঘটনের কথা লিপিবদ্ধ করে থাকেন। যেমন তিনি এ কথা কুরআনে বলেন,
এই রজনীতে প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয়। (কুঃ ৪৪/৪)
আর এই তকদীর; যা বাৎসরিক বিস্তারিত আকারে লেখা হয়। এ ছাড়া মাতৃগর্ভে ভ্রূণ থাকা অবস্থায় লেখা হয় সারা জীবনের তকদীর। আর আদি তাকদীর; যা মহান আল্লাহ আসমান যমীন সৃষ্টি করার ৫০ হাজার বছর পূর্বে লাওহে মাহফুজ-এ লিখে রেখেছেন।
২। ক্বাদরের আর একটি অর্থ হল, কদর, শান, মর্যাদা, মাহাত্ম্য ইত্যাদি। যেমন বলা হয়ে থাকে, সমাজে অমুকের বড় কদর আছে। অর্থাৎ, তার মর্যাদা ও সম্মান আছে। অতএব এ অর্থে শবে কদরের মানে হবে মহিয়সী রজনী।
৩। উক্ত কদর যে রাত জেগে ইবাদত করে তারই। এর পূর্বে যে কদর তার ছিল না, রাত জেগে শবে কদর পাওয়ার পর আল্লাহর কাছে সে কদর লাভ হয় এবং তার কাছে তার সম্মান ও মর্যাদা বৃদ্ধি হয়। আর তার জন্যই একে শবে কদর বলে।
৪। লাইলাতুল কদরের রাতে আমলেরও বড় মর্যাদাও মাহাত্ম রয়েছে। সে জন্যও তাকে লাইলাতুল কদর বলা হয়।
৫। ক্বদরের আর এক মানে হল সংকীর্ণতা; এ রাতে আসমান থেকে জমিনে এত বেশি সংখ্যক ফেরেশতা অবতরণ করেন যে, পৃথিবীতে তাদের জায়গা হয় না; বরং তাদের সমাবেশের জন্য পৃথিবী সংকীর্ণ হয়; তাই এ রাতকে শবেকদর বা সংকীর্ণতার রাত বলা হয়।
লাইলাতুল কদরের ফজিলত. শবে কদর এর ফজিলত সম্পর্কে হাদিস
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম; লাইলাতুল কদর সম্পর্কে হাদিস: আজকের আলোচনার বিষয় হচ্ছে লাইলাতুল কদরের ফজিলত ও গুরুত্ব বা শবে কদর এর ফজিলত। কুরআন ও হাদিসে লাইলাতুল কদরের বিশেষ কিছু ফজিলতের কথা বর্ণিত হয়েছে।
১. লাইলাতুল কদরের ফজিলত
১। শবে কদরের রয়েছে বিশাল মর্যাদা ও মাহাত্ম
২। শবে কদরের রাত হল মুবারক রাত, অতি বরকতময়, কল্যাণময় ও মঙ্গলময় রাত
৩। লাইলাতুল কদর ভাগ্য রজনী
৪। ফেরেশতা নাযিল হয়
৫। এ রাত হল সালাম ও শান্তির রাত
৬। এ রাত্রি হল কিয়াম ও গুনাহ-খাতা মাফ করাবার রাত্রি
২. লাইলাতুল কদর অর্থ কি
৩. লাইলাতুল কদরের নামাজ
৪. লাইলাতুল কদরের দোয়া
৫. লাইলাতুল কদর কোন রাতে
১. লাইলাতুল কদরের ফজিলত
১। শবে কদরের রয়েছে বিশাল মর্যাদা ও মাহাত্ম
মহান আল্লাহ এই রাতে কুরআন অবতীর্ণ করেছেন এবং সে রাতের মাহাত্ম্য ও ফজিলত বর্ণনা করার জন্য কুরআন মাজীদের পূর্ণ একটি সূরা অবতীর্ণ করেছেন এবং সেই সূরার নামকরণও হয়েছে তারই নামে। মহান আল্লাহ বলেন,
অর্থাৎ, নিশ্চয় আমি ঐ কুরআনকে শবে কদরে অবতীর্ণ করেছি। তুমি কি জান, শবে কদর কি? শবে কদর হল হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। (কুঃ ৯৭/১-৩)
এক হাজার মাস সমান ৩০ হাজার রাত্রি। অর্থাৎ এই রাতের মর্যাদা ৩০,০০০ গুণ অপেক্ষাও বেশী! সুতরাং বলা যায় যে, এই রাতের ১টি তাসবিহ অন্যান্য রাতের ৩০,০০০ তসবীহ অপেক্ষা উত্তম; অনুরূপ এই রাতের ১ রাকআত নামাজ অন্যান্য রাতের ৩০,০০০ রাকআত অপেক্ষা উত্তম। বলা বাহুল্য, এই রাতের আমল শবে কদর বিহীন অন্যান্য ৩০ হাজার রাতের আমল অপেক্ষা অধিক শ্রেষ্ঠ; সুতরাং যে ব্যক্তি এই রাতে ইবাদত করল, আসলে সে যেন ৮৩ বছর ৪ মাস অপেক্ষাও বেশি সময় ধরে ইবাদত করল।
২। শবে কদরের রাত হল মুবারক রাত, অতি বরকতময়, কল্যাণময় ও মঙ্গলময় রাত
মহান আল্লাহ বলেন, অর্থাৎ, আমি এ কুরআনকে বরকতময় রজনীতে অবতীর্ণ করেছি। (কুঃ ৪৪/৩)
উক্ত বরকতময় রাত্রি হল ‘লাইলাতুল ক্বাদর’ বা শবে কদর; আর শবে কদর নিঃসন্দেহে রমজানে। বলা বাহুল্য, ঐ রাত্রি শবে বরাতের রাত্রি নয়; যেমন অনেকে মনে করে থাকে এবং ঐ রাত্রে বৃথা মনগড়া ইবাদত করে থাকে; কারণ, কুরআন (লাওহে মাহফুজ থেকে) অবতীর্ণ হয়েছে (অথবা তার অবতরণ শুরু হয়েছে) রমজান মাসে। কুরআন বলে,
রমজান মাস; যে মাসে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। (কুঃ ২/১৮৫)
আর তিনি বলেন,
নিশ্চয় আমি ঐ কুরআনকে শবে কদরে অবতীর্ণ করেছি। (কুঃ ৯৭/১-৩)
আর এ কথা বিদিত যে, শবে কদর হল রমজানে; শাবানে নয়।
৩। লাইলাতুল কদর ভাগ্য রজনী
এই রাত সেই ভাগ্য-রাত; যাতে প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয়। (কুঃ ৪৪/৪)
৪। ফেরেশতা নাযিল হয়
এটা হল সেই রাত; যে রাতে প্রত্যেক কাজের জন্য ফেরেশতাকুল তাদের প্রতিপালকের আদেশে অবতীর্ণ হন। অর্থাৎ, যে কাজের ফয়সালা ঐ রাতে করা হয় তা কার্যকর করার জন্য তারা অবতরণ করেন।
৫। এ রাত হল সালাম ও শান্তির রাত
মহান আল্লাহ বলেন,
সে রজনী ফজর উদয় পর্যন্ত শান্তিময়। পূর্ণ রাতটাই শান্তিতে পরিপূর্ণ, তার মধ্যে কোন প্রকার অশান্তি নেই। রাত্রি জাগরণকারী মুমিন নারী-পুরুষের জন্য এ হল শান্তির রাত্রি। শয়তান তাদের মাঝে কোন প্রকার অশান্তি আনয়ন করতে পারে না। অথবা সে রাত্রি হল নিরাপদ। শয়তান সে রাত্রে কোন প্রকার অশান্তি ঘটাতে পারে না। অথবা সে রাত হল সালামের রাত। এ রাতে অবতীর্ণ ফেরেশতাকুল ইবাদতকারী মুমিনদেরকে সালাম জানায়।
৬। এ রাত্রি হল কিয়াম ও গুনাহ-খাতা মাফ করাবার রাত্রি
মহানবী সঃ বলেন,
যে ব্যক্তি ঈমান রেখে ও নেকী লাভের আশা করে শবে কদরের রাত্রি কিয়াম করে (নামায পড়ে), সে ব্যক্তির পূর্বের গুনাহ সমূহ মাফ হয়ে যায়।
বুখারী ৩৫, মুসলিম ৭৬০
বলা বাহুল্য, এ রাত্রি হল ইবাদতের রাত্রি। এ রাত্রি ধুমধাম করে পান-ভােজনের, আমােদখুশীর রাত্রি নয়। আসলে যে ব্যক্তি এ রাত্রের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয়, সেই সকল প্রকার কল্যাণ থেকে বঞ্চিত।
শবে কদর কবে ২০২২? লাইলাতুল কদর কবে? laylatul qadr 2022. কদরের রাত কবে
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম; শবে কদর কবে 2022 বা লাইলাতুল কদর কত তারিখে ২০২২: আজকে আলোচনার মূল বিষয় হচ্ছে শবে কদর কবে অর্থাৎ লাইলাতুল কদর কত তারিখে। রমজান মাস এলে মুসলিমগণ শবে কদরের ফজিলত লাভের আশায় এই বরকতময় রাত্রি তালাশ করে থাকেন। তাই শবে কদরের রাতটি কবে এবং কিভাবে বুঝবো যে আজ শবে কদর, সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ। laylatul qadr 2022. কদরের রাত কবে
রমযান মাসের শেষ দশকের যে কোন একটি রাত্রি শবে কদরের রাত্রি।
শেষ দশকের মধ্যে শেষ সাত রাত্রিগুলো অধিক আশাব্যঞ্জক।
মুআবিয়া রাঃ মহানবী সঃ এর নিকট থেকে বর্ণনা করে বলেন, ‘২৭শের রাত্রি হল শবে কদরের রাত্রি।
শবে কদরের সওয়াব অর্জনের জন্য শবে কদর কোন রাতে হচ্ছে তা জানা বা দেখা শর্ত নয়।
২. শবে কদরের আলামত
১। শবে কদরের রাতের আকাশ অস্বাভাবিক উজ্জ্বল থাকে
২। অন্যান্য রাতের তুলনায় শবে কদরের রাতে মুমিন তার হৃদয়ে এক ধরনের প্রশস্ততা, স্বস্তি ও শান্তি বোধ করে।
৩। অন্যান্য রাতের তুলনায় মুমিন শবে কদরের রাতে কিয়াম বা নামাযে অধিক মিষ্টতা অনুভব করে।
৪ এই রাতের বাতাস নিস্তব্ধ থাকে। অর্থাৎ, সে রাতে ঝােড়াে বা জোরে হাওয়া চলে না। আবহাওয়া অনুকূল থাকে।
৫। শবে কদরের রাতে উল্কা ছুটে না।
৬। এ রাতে বৃষ্টি হতে পারে।
৭। শবে কদর কোন নেক বান্দা স্বপ্নের মাধ্যমেও দেখতে পারেন
৩. লাইলাতুল কদর অর্থ কি
৪. লাইলাতুল কদরের ফজিলত
৫. লাইলাতুল কদরের নামাজ
৬. লাইলাতুল কদরের দোয়া
১. শবে কদর কোন রাত্রি বা শবে কদর কবে ২০২২
রমযান মাসের শেষ দশকের যে কোন একটি রাত্রি শবে কদরের রাত্রি।
একদা মহানবী সঃ শবে কদরের অন্বেষণে রমজানের প্রথম দশকে ইতেকাফ করলেন। অতঃপর মাঝের দশকে ইতিকাফ করে ২০শের ফজরে বললেন, আমাকে শবে কদর দেখানাে হয়েছে; কিন্তু পরে ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে; অতএব তোমরা শেষ দশকের বিজোড় রাত্রে তা অনুসন্ধান কর; আর আমি দেখেছি যে, আমি পানি ও কাদাতে সিজদা করছি।
বুখারী ২০১৬ মুসলিম ১১৬৭
অতঃপর ২১শের রাত্রে বৃষ্টি হয়েছিল। অতএব সে বছরে ঐ ২১শের রাতেই শবে কদর হয়েছিল।
পূর্বোক্ত হাদীসের ইঙ্গিত অনুসারে শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোতে শবে কদর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সুতরাং ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯ এই ৫ রাত হল শবে কদর হওয়ার অধিক আশাব্যঞ্জক রাত। অবশ্য এর মানে এই নয় যে, বিজোড় রাত্রি ছাড়া জোড় রাত্রে শবে কদর হবে না; বরং শবে কদর জোড়-বিজোড় যে কোন রাত্রিতেই হতে পারে। তবে বিজোড় রাতে শবে কদর সংঘটিত হওয়াটাই অধিক সম্ভাবনাময় ও আশাব্যঞ্জক।
শেষ দশকের মধ্যে শেষ সাত রাত্রিগুলো অধিক আশাব্যঞ্জক।
মহানবী সঃ বলেন, আমি দেখছি যে, তােমাদের সবারই স্বপ্ন শেষ সাত রাতের ব্যাপারে একমত হয়েছে। সুতরাং যে ব্যক্তি শবে কদর অনুসন্ধান করতে চায়, সে যেন শেষ সাত রাতগুলোতে করে।
বুঃ ২০১৫, মুঃ ১১৬৫
অবশ্য এর অর্থ যদি ‘কেবল ঐ বছরের রমজানের শেষ সাত রাতের কোন এক রাতে শবে কদর হবে এবং আগামী প্রত্যেক রমজানে হবে না এমনটা হয় তাহলে। কারণ, এরূপ অর্থ হওয়ার সম্ভাবনাও নাকচ করা যায় না। তাছাড়া যেহেতু মহানবী সঃ তার শেষ জীবন অবধি রমজানের শেষ দশকের পুরােটাই ইতিকাফ করে গেছেন এবং এক বছর শবে কদর ২১শের রাত্রিতেও হয়েছে – যেমন এ কথা পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। শেষ দশকের বিজোড় রাত্রি গুলোর মধ্যে ২৭শের রাত্রি শবে কদরের জন্য অধিক আশাব্যঞ্জক। কেননা, উবাই বিন কা’ব রাঃ ‘ইনশাআল্লাহ’ না বলেই কসম খেয়ে বলতেন, শবে কদর রাত্রি হল ২৭শের রাত্রি; ঐ রাত্রিতে কিয়াম করতে আল্লাহর রাসুল সঃ আমাদেরকে আদেশ করেছেন।
মুসলিম ৭৬২
মুআবিয়া রাঃ মহানবী সঃ এর নিকট থেকে বর্ণনা করে বলেন, ‘২৭শের রাত্রি হল শবে কদরের রাত্রি।
সহীহ আদাবুল মুফরাদ ১২৩৬
কিন্তু ঐ রাতে হওয়াই জরুরী নয়। কারণ, এ ছাড়া অন্যান্য হাদীস রয়েছে, যার দ্বারা বুঝা যায় যে, শবে কদর অন্য তারিখের রাতেও হয়ে থাকে। বলা বাহুল্য, শবে কদরের রাত প্রত্যেক বছরের জন্য একটি মাত্রই রাত নয়। বরং তা বিভিন্ন রাত্রে সংঘটিত হতে পারে। সুতরাং কোন বছরে ২৯শে, কোন বছরে ২৫শে, আবার কোন বছরে ২৪শের রাতেও শবেকদর হতে পারে। আর এই অর্থে শবেকদর প্রসঙ্গে বর্ণিত সমস্ত হাদীসের মাঝে পরস্পর-বিরােধিতা দূর হয়ে যাবে।
শবেকদর একটি নির্দিষ্ট রাত না হয়ে এক এক বছরে শেষ দশকের এক এক রাতে হওয়ার পশ্চাতে হিকমত এই যে, যাতে অলস বান্দা কেবল একটি রাত জাগরণ ও কিয়াম করেই ক্ষান্ত না হয়ে যায় এবং সেই রাতের মর্যাদা ও ফযীলতের উপর নির্ভর করে অন্যান্য রাতে ইবাদত ত্যাগ না করে বসে। পক্ষান্তরে অনির্দিষ্ট হলে এবং প্রত্যেক রাতের মধ্যে যে কোন একটি রাতের শবে কদর হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে বান্দা শেষ দশকের পুরােটাই কিয়াম ও ইবাদত করতে আগ্রহী হবে। আর এতে রয়েছে তারই লাভ।
ঠিক হুবহু একই যুক্তি হল মহানবী সঃ এর হৃদয় থেকে শবে কদর (তারিখ) ভুলিয়ে দেওয়ার পিছনে; আর এতে রয়েছে সেই মঙ্গল; যার প্রতি ইঙ্গিত করে মহানবী সঃ বলেছেন, আমি শবে কদর সম্বন্ধে তােমাদেরকে খবর দেওয়ার জন্য বের হয়ে এলাম; কিন্তু অমুক ও অমুকের কলহ করার ফলে শবে কদরের সে খবর তুলে নেওয়া হল; এতে সম্ভবতঃ তোমাদের জন্য মঙ্গল আছে। সুতরাং তোমরা নবম, সপ্তম এবং পঞ্চম রাত্রে তা অনুসন্ধান কর।
বুখারী ২০২৩
শবে কদরের সওয়াব অর্জনের জন্য শবে কদর কোন রাতে হচ্ছে তা জানা বা দেখা শর্ত নয়।
তবে ইবাদতের রাতে শবে কদর সংঘটিত হওয়া এবং তার অনুসন্ধানে সওয়াবের আশা রাখা শর্ত; শবে কদর কোন রাতে ঘটছে তা জানা যেতে পারে। আল্লাহ যাকে তাওফিক দেন, সে বিভিন্ন লক্ষণ দেখে শবে কদর বুঝতে পারে; সাহাবাগণ ও একাধিক নিদর্শন দেখে জানতে পারতেন শবে কদর ঘটার কথা; তবে তা জানা বা দেখা না গেলে যে তার সওয়াব পাওয়া যাবে না তা নয়; বরং যে ব্যক্তি ঈমান ও সওয়াবের আশা রেখে সে রাত্রিতে ইবাদত করবে; সেই তার সওয়াবের অধিকারী হবে; চাহে সে শবে কদর দেখতে পাক বা না-ই পাক।
বলা বাহুল্য, মুসলিমের উচিত, সওয়াব ও নেকী অর্জনের উদ্দেশ্যে মহানবী সঃ এর আদেশ ও নির্দেশ মত রমযানের শেষ দশকে শবেকদর অন্বেষণ করতে যত্নবান ও আগ্রহী হওয়া। অতঃপর দশটি রাতে ঈমান ও নেকীর আশা রেখে ইবাদত করতে করতে যে কোন রাতে যখন শবেকদর লাভ করবে, তখন সে সেই রাতের অগাধ সওয়াবের অধিকারী হয়ে যাবে, যদিও সে বুঝতে না পারে যে, ঐ দশ রাতের মধ্যে কোন রাতটি শবে কদর রূপে অতিবাহিত হয়ে গেল।
মহানবী সঃ বলেন,
যে ব্যক্তি ঈমান রেখে ও নেকী লাভের আশা করে শবে কদরের রাত্রি কিয়াম করে (নামায পড়ে), সে ব্যক্তির পূর্বের গুনাহ সমূহ মাফ হয়ে যায়।
বুখারী ৩৫, মুসলিম ৭৬০
অন্য এক বর্ণনায় আছে, যে তার খোঁজে কিয়াম করল এবং সে তা পেতে তাওফিক লাভ করল তার পূর্বের গুনাহ সমূহ মাফ হয়ে গেল।
আঃ ৫/৩ ১৮, ২২৬১২
আর একটি বর্ণনায় আছে, যে ব্যক্তি শবে কদরে কিয়াম করবে এবং সে তা ঈমান ও নেকীর আশা রাখার সাথে পেয়ে যাবে, তার গুনাহসমূহ মাফ হয়ে যাবে।
মুসলিম ৭৬০
আর এ সব সেই ব্যক্তির ধারণা কে খন্ডন করে, যে মনে করে যে, যে ব্যক্তি শবে কদর মনে করে কোন রাতে কিয়াম করবে, তার শবে কদরের সওয়াব লাভ হবে; যদিও সে রাতে শবে কদর না হয়।
২. শবে কদরের আলামত
শবে কদরের কিছু লক্ষণ আছে যা রাত মধ্যেই দেখা যায় এবং আর কিছু লক্ষণ আছে যা রাতের পরে সকালে দেখা যায়। যে সব লক্ষণ রাতে পরিলক্ষিত হয় তা নিম্নরূপঃ
১। শবে কদরের রাতের আকাশ অস্বাভাবিক উজ্জ্বল থাকে
অবশ্য এ লক্ষণ শহর বা গ্রামের ভিতর বিদ্যুতের আলোর মাঝে থেকে লক্ষ্য করা সম্ভব নয়; কিন্তু যারা আলো থেকে দুরে মাঠে-ময়দানে থাকে, তারা সে ঔজ্জ্বল্য লক্ষ্য করতে পারে।
২। অন্যান্য রাতের তুলনায় শবে কদরের রাতে মুমিন তার হৃদয়ে এক ধরনের প্রশস্ততা, স্বস্তি ও শান্তি বোধ করে।
৩। অন্যান্য রাতের তুলনায় মুমিন শবে কদরের রাতে কিয়াম বা নামাযে অধিক মিষ্টতা অনুভব করে।
৪ এই রাতের বাতাস নিস্তব্ধ থাকে। অর্থাৎ, সে রাতে ঝােড়াে বা জোরে হাওয়া চলে না। আবহাওয়া অনুকূল থাকে।
মহানবী সঃ বলেন, শবে কদরের রাত উজ্জ্বল। অন্য এক বর্ণনায় তিনি বলেন, নাতিশীতোষ্ণ; না ঠান্ডা, না গরম।
আঃ, ত্বাবঃ, ইখুঃ ২১৯২, প্রমুখ, সজাঃ ৫৪৭২, ৫৪৭৫
৫। শবে কদরের রাতে উল্কা ছুটে না।
৬। এ রাতে বৃষ্টি হতে পারে।
মহানবী সঃ বলেন, আমাকে শবে কদর দেখানাে হয়েছিল; কিন্তু পরে ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। অতএব তোমরা শেষ দশকের বিজোড় রাত্রে তা অনুসন্ধান কর; আর আমি দেখেছি যে, আমি পানি ও কাদাতে সিজদা করছি। বুঃ ২০ ১৬, মুঃ ১১৬৭
অতঃপর ২১শের রাত্রিতে সত্যই বৃষ্টি হয়েছিল।
৭। শবে কদর কোন নেক বান্দা স্বপ্নের মাধ্যমেও দেখতে পারেন
যেমন কিছু সাহাবা রাঃ তা দেখেছিলেন; পক্ষান্তরে যে সব লক্ষণ রাতের পরে সকালে দেখা যায় তা হল এই যে, সে রাতের সকালে উদয় কালে সূর্য হবে সাদা; তার কোন কিরণ থাকবে না। (মুসলিম ৭৬২) অথবা ক্ষীণ রক্তিম অবস্থায় উদিত হবে; (সজাঃ ৫৪৭৫ নং) ঠিক পূর্ণিমার রাতের চাঁদের মতো। অর্থাৎ, তার রশ্মি চারিদিকে বিকীর্ণ হবে না।
আর লােক মুখে যে সব লক্ষণের কথা প্রচলিত; যেমন সে রাতে কুকুর ভেকায় না বা কম ভেকায়; গাছ-পালা মাটিতে নুয়ে পড়ে আল্লাহকে সিজদা করে; সমুদ্রের লবণাক্ত পানি মিঠা হয়ে যায়; নুরের ঝলকে অন্ধকার জায়গা আলোকিত হয়ে যায়; নেক লোকেরা ফেরেশতাদের সালাম শুনতে পান ইত্যাদি লক্ষণ সমূহ কাল্পনিক। এগুলো শরয়ী দলীল দ্বারা প্রমাণিত নয়; তাছাড়া এসব কথা নিশ্চিতরূপে অভিজ্ঞতা ও বাস্তববিরােধী।
লাইলাতুল কদরের নামাজ কিভাবে পড়বো. শবে কদর নামাজের নিয়ম ও নিয়ত
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম; লাইলাতুল কদরের নামাজ কিভাবে পড়বো, শবে কদর নামাজের নিয়ম ও নিয়ত: আজকে আলোচনা করব লাইলাতুল কদরের ফজিলত লাভের আশায় রমজানের শেষ দশকে বিশেষ করে বেজোড় রাতে কিয়ামুল লাইল বা রাতের নফল সালাত বা নামাজ আদায় করার নিয়ম ও নিয়ত সম্পর্কে। লাইলাতুল কদর নামাজ কত রাকাত, লাইলাতুল কদর নামাজ কিভাবে পড়তে হয়।
১. লাইলাতুল কদরের নামাজ কিভাবে পড়বো বা শবে কদর নামাজের নিয়ম
লাইলাতুল কদরের নামাজের পদ্ধতি সমূহ. শবে কদরের নামাজ কত রাকাত
লাইলাতুল কদরের নামাজের কেরাত
লাইলাতুল কদরের নামাজের নিয়ত
তাড়াহুড়া না করে সুন্দরভাবে নামাজ পড়া
বিতর সালাত
২. লাইলাতুল কদর অর্থ কি
৩. লাইলাতুল কদরের ফজিলত
৪. লাইলাতুল কদরের দোয়া
৫. লাইলাতুল কদর কোন রাতে
১. লাইলাতুল কদরের নামাজ কিভাবে পড়বো বা শবে কদর নামাজের নিয়ম
লাইলাতুল কদরের নামাজের পদ্ধতি সমূহ. শবে কদরের নামাজ কত রাকাত
সহিহ হাদিস থেকে রাতের সালাত আদায়ের মোট ছয়টি পদ্ধতি পাওয়া যায়। তার যে কোনটিই অবলম্বন করা বৈধ। পদ্ধতিসমূহ আলোচনা করা হলোঃ
প্রথম পদ্ধতি: ১৩ রাকাত
হালকাভাবে দু’রাকআত পড়ে এর সূচনা করবে। সর্বাগ্রগণ্য মত অনুযায়ী এ দুই রাকআত হল এশার ফরজ সালাত পরবর্তী দুই রাকাত সুন্নাত অথবা ঐ নির্দিষ্ট দু’রাকাত ছালাত, যার মাধ্যমে রাসূল (ছাঃ) রাতের সালাত শুরু করতেন। যেমনটি গত হয়েছে। অতঃপর অত্যন্ত দীর্ঘ দু’রাকআত আদায় করবে। অতঃপর এর চেয়ে কম দীর্ঘ দু’রাকআত পড়বে। অতঃপর পূর্বের চেয়ে কম দীর্ঘ দু’রাকআত পড়বে। অতঃপর তদপেক্ষা কম দীর্ঘ দু’রাকআত পড়বে। অতঃপর এর চেয়ে কম দীর্ঘ দুই রাকাত পড়বে। অতঃপর এক রাকাত বিতর পড়বে।
দ্বিতীয় পদ্ধতি : ১৩ রাকাত
তন্মধ্যে দুই দুই করে আট রাকাত পড়বো এবং প্রত্যেক দুই রাকাত পর সালাম ফিরাবে। অতঃপর পাঁচ রাকাত বিতর পড়বে। শুধুমাত্র পঞ্চম রাকাতে বসবে এবং সালাম ফিরাবে।
তৃতীয় পদ্ধতি : ১১ রাকাত
প্রত্যেক দুই রাকাতের মাঝখানে সালাম ফিরাবে এবং এক রাকাত বিতর পড়বে।
চতুর্থ পদ্ধতি : ১১ রাকাত
এর মধ্যে প্রথম চার রাকাত এক সালামে অতঃপর পরের চার রাকাত এক সালামে পড়বে। অতঃপর তিন রাকাত বিতর পড়বে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এই চার ও তিন রাকাতের দুই রাকাতের মাঝখানে কি বসতেন? এ ব্যাপারে আমরা কোন সন্তোষজনক জবাব পাই না। তবে তিন রাকাত বিতর সালাতে দুই রাকাত পর বসা শরীআত সম্মত নয়।
পঞ্চম পদ্ধতি : ১১ রাকাত
এর মধ্যে একটানা আট রাকাত আদায় করে ৮ম রাকাতে বসবে এবং তাশাহুদ ও নবী সঃ এর দরূদ পড়ে সালাম না ফিরিয়ে দাঁড়িয়ে যাবে। অতঃপর এক রাকআত বিতর পড়ে সালাম ফিরাবে। এই হল নয় রাকাত। অতঃপর বসে দুই রাকাত আদায় করবে।
ষষ্ঠ পদ্ধতি : ৯ রাকাত
তার মধ্যে ছয় রাকাত একটানা পড়ে ষষ্ঠ রাকাতে বসবে অতঃপর তাশাহুদ ও নবী (ছাঃ)-এর উপর দরূদ পড়ে পূর্বের মতাে সালাম না ফিরিয়ে দাঁড়িয়ে যাবে। অতঃপর এক রাকাত বিতর পড়ে সালাম ফিরাবে। এই হল সাত রাকআত। অতঃপর বসে দুই রাকাত পড়বে।
এই পদ্ধতি গুলো রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) থেকে সুস্পষ্ট নছ বা দলিলের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। উক্ত পদ্ধতিগুলোর উপর আরো অন্যান্য প্রকার এভাবে বৃদ্ধি করা যেতে পারে যে, প্রত্যেক প্রকার থেকে ইচ্ছামতো রাকআত সংখ্যা কমিয়ে এক রাকাত বিতরে সীমাবদ্ধ করবে। রাসূল (ছাঃ)-এর নিম্নোক্ত বাণীর প্রতি আমল করণার্থে। তিনি বলেন, যে চায় সে পাঁচ রাকাত বিতর পড়ুক, যে চায় সে তিন রাকাত বিতর পড়ুক এবং যে চায় সে এক রাকাত বিতর পড়ুক।
তাহাবী, হা/১৬০৩; হাকেম, হা/১১২৮; দারাকুতনী, হা/১৬৬০; বায়হাকী, হা/৪৭৭৬
এই পাঁচ ও তিন রাকাত বিতর চাইলে এক বৈঠকে ও এক সালামে আদায় করবে; যেমনটি দ্বিতীয় পদ্ধতিতে বর্ণিত হয়েছে; আর চাইলে প্রত্যেক দুই রাকাত পর সালাম ফিরাবে; যেমনটি তৃতীয় ও অন্যান্য পদ্ধতিতে বর্ণিত হয়েছে। আর এটাই সর্বোত্তম।
ইবনু খুযায়মা তার সহীহ গ্রন্থে (২/১৯৪, হা/১১৬৮, ‘ছালাত অধ্যায়) উল্লিখিত পদ্ধতিগুলোর কোন একটিতে আয়েশা (রাঃ) ও অন্যদের বর্ণিত হাদিস উদ্ধৃত করার পর বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হতে যত রাকাত রাতের সালাত আদায় করা ও যেভাবে আদায় করা বর্ণিত হয়েছে, তার মধ্যে যে সংখ্যাটা পছন্দনীয় তা মানুষের জন্য পড়া জায়েয। উহার যেকোন সংখ্যা আদায় করা কারাে জন্য নিষেধ নেই। (আলবানী বলেন) আমার বক্তব্য হল, রাসূল (ছাঃ) থেকে যত রাকাত আদায় করা সহীহ প্রমাণিত হয়েছে তাকে আবশ্যকীয়ভাবে আঁকড়ে ধরা ও তার চেয়ে রাকআত সংখ্যা বেশি না করার যে সিদ্ধান্তকে আমরা পছন্দ করেছি, তা সম্পূর্ণরূপে ইবনে খুযায়মার এ মতের অনুকূলে। তাওফীক দেয়ার জন্য মহান আল্লাহর যাবতীয় প্রশংসা। আমি তার আরো অধিক অনুগ্রহ কামনা করছি।
পক্ষান্তরে পাঁচ ও তিন রাকাত বিতর সালাতের প্রত্যেক দুই রাকাত অন্তর বসা ও সালাম না ফিরানাের বিষয়টি রাসূল (ছাঃ) থেকে আমরা প্রমাণিত পাইনি। তবে মূল বিষয়টি জায়েয। কিন্তু যখন নবী (ছাঃ) মাগরিবের ন্যায় তিন রাকাত বিতর পড়তে নিষেধ করেছেন এবং এর কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন, তোমরা বিতর সালাতকে মাগরিবের সাথে সাদৃশ্য প্রদান করাে না
তাহাবী, হা/১৭৩৮, ‘বিতর’ অনুচ্ছেদ; দারাকুতনী, হা/১৬৬৯; সহীহ ইবনে হিব্বান, হা/২৪২৯ ‘বিতর’ অনুচ্ছেদ।
যে ব্যক্তি তিন রাকাত বিতর পড়বে তাকে অবশ্যই এই সাদৃশ্য থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আর এটা দুভাবে হতে পারে :
১. জোড় ও বিজোড়ের মাঝখানে সালাম ফিরানো। এটাই অধিক শক্তিশালী ও সর্বোত্তম।
২. জোড় ও বিজোড়ের মাঝখানে না বসা। আল্লাহই সর্বাধিক অবগত।
লাইলাতুল কদরের নামাজের কেরাত
রাসুল সঃ এর রাতের সালাতের কেরাত কেমন ছিল সে সম্পর্কে কয়েকটি হাদিস পেশ করতে চায়।
আবু সালামা ইবনে আবদুর রহমান রাঃ বলেন,
তিনি একদা আয়েশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেন যে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর রমজানের রাতের সালাত কেমন ছিল। উত্তরে তিনি বলেন, রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রামাযান মাসে এবং রামাযানের বাইরে ১১ রাকাতের বেশি সালাত আদায় করতেন না। তিনি প্রথমে (২+২) চার রাকাত পড়তেন। তুমি (আবু সালামা) তার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করাে না। অতঃপর তিনি (২+২) চার রাকাত পড়তেন। তুমি তার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করাে না। অতঃপর তিনি তিন রাকাত (বিতর) পড়তেন।
সহীহ মুসলিম ২০১৩
নুআয়ম ইবনে যিয়াদ আবূ তালহা থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নুমান ইবনে বশীর (রাঃ)-কে হিম্স নামক স্থানের মিম্বরে দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছি, আমরা একবার রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে রমযান মাসের তেইশতম রাত্রের প্রথম এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত তারাবীহ্র সালাত আদায় করলাম। অতঃপর পঁচিশতম রাত্রে তাঁর সাথে অর্ধ রাত্রি পর্যন্ত তারাবীহ্র সালাত আদায় করলাম। আবার তাঁর সাথে সাতাইশতম রাত্রেও তারাবীহ্র সালাত আদায় করতে লাগলাম। এমন কি আমরা আশংকা করলাম যে, “ফালাহ” পাব না। সাহাবীগণ সাহরীকে ফালাহ বলতেন।
সুনানে আন নাসায়ী ১৬০৬
হুযায়ফা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি একরাত্রে রাসূল্লুলাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে সালাত আদায় করলাম; তিনি সূরা বাকারা শুরু করলেন, আমি মনে মনে বললাম যে, হয়তো তিনি একশত আয়াত পরিমাণ তিলাওয়াত করে রুকূতে যাবেন; কিন্তু তিনি তিলাওয়াত চালিয়েই যেতে থাকলেন, আমি মনে মনে বললাম, হয়তো তিনি দু’শত আয়াত পরিমাণ তিলাওয়াত করে রুকূতে যাবেন, কিন্তু তিনি তিলাওয়াত চালিয়েই যেতে থাকলেন। আমি মনে মনে বললাম, হয়তো তিনি পূর্ণ সূরা এক রাকআতেই তিলাওয়াত করে ফেলবেন। কিন্তু তিনি তিলাওয়াত চালিয়েই যেতে থাকলেন এবং সূরা “নিসা” শুরু করে তাও তিলাওয়াত করে ফেললেন। তারপর সূরা “আলে-ইমরান” ও শুরু করে তাও তিলাওয়াত করে ফেললেন।
তিনি ধীরে ধীরে তিলাওয়াত করতেন। যদি তিনি এমন কোন আয়াত তিলাওয়াত করে ফেলতেন যাতে কোন তাসবীহ্ রয়েছে তবে তাসবীহ পাঠ করতেন, যদি কোন যাঞ্ছা করার আয়াত তিলাওয়াত করে ফেলতেন তবে যাঞ্ছা করতেন। যদি কোন বিতাড়িত শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনার আয়াত তিলাওয়াত করে ফেলতেন, তবে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। তারপর রুকূ করতেন এবং বলতেন, “সুবাহানা রাব্বিয়াল আজীম” তাঁর রুকূ প্রায় তাঁর কিয়ামের সমান হত। পরে তাঁর মাথা উঠাতেন এবং বলতেন “সামিআল্লাহু লিমান হামিদা”। তাঁর দাঁড়ানো প্রায় তাঁর রুকূর সমান হত। তারপর সিজদা করতেন এবং বলতেন, “সুবহানা রাব্বিয়াল আ‘লা”। তাঁর সিজদা প্রায় তাঁর রুকূ’র সমান হত।
সুনানে আন নাসায়ী ১৬৬৪
লাইলাতুল কদরের নামাজের নিয়ত
লাইলাতুল কদরের নামাজের নিয়ত
নিয়ত মানে মনের সংকল্প। আর তার স্থান হল অন্তর; মুখ নয়। মহানবী সঃ ও তার সাহাবীদের কেউই কোন নির্দিষ্ট শব্দ মুখে উচ্চারণ করতেন না; তাই তা মুখে উচ্চারণ করা বিদআত; তাছাড়া নিয়তের জন্য কোন বাধা-ধরা শব্দাবলীও নেই।
মহান আল্লাহ বলেন,
তাদেরকে এছাড়া কোন নির্দেশ করা হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর এবাদত করবে, নামায কায়েম করবে এবং যাকাত দেবে; এটাই সঠিক ধর্ম।
কুরআন ৯৮/৫
আর মহানবী সঃ বলেন,
সমস্ত কর্ম নিয়তের উপর নির্ভরশীল এবং মানুষের তাই প্রাপ্য হয় যার সে নিয়ত করে।
সহীহ বুখারী হাদিস নং ১
জ্ঞাতব্য যে, নামাজের শুরুতেই কেউ যদি সমস্ত নামাযের একবার নিয়ত করে নেয়, তাহলে তাই যথেষ্ট; প্রত্যেক ২ রাকাতে নিয়ত করা জরুরী নয়; অবশ্য নামাজ পড়তে পড়তে কেউ কোন প্রয়োজনে তা ছেড়ে দিয়ে পুনরায় পড়তে লাগলে নতুন নিয়তের দরকার; সতর্কতার বিষয় যে, নিয়ত করা জরুরী; কিন্তু পড়া বিদআত।
তাড়াহুড়া না করে সুন্দরভাবে নামাজ পড়া
মহানবী সঃ ও সাহাবায়ে কেরাম রাতের নামাজকে খুবই লম্বা করে পড়তেন; যেমন পূর্বে এ কথা আলোচিত হয়েছে। মহানবী সঃ এর রুকু ও সিজদাহ প্রায় তার কিয়ামের মতই দীর্ঘ হত; আর এত লম্বা সময় ধরে তিনি সিজদায় থাকতেন যে, সেই সময়ে প্রায় ৫০টি আয়াত পাঠ করা যেতে পারে।
বুখারী ১১২৩
সুতরাং এ কথা আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করে যে, আমরা আমাদের রাতের নামাযকে তাদের নামাজের কাছাকাছি করার যথাসাধ্য চেষ্টা করব; আমরাও কেরাত লম্বা করব, রুকু, সিজদা ও তার মাঝে কওমা ও বৈঠকে তাসবীহ ও দুআ অধিকাধিক পাঠ করব; যাতে আমাদের মনে কিঞ্চিৎ পরিমাণ হলেও যেন বিনয়-নম্রতা অনুভূত হয়; যে বিনয়-নম্রতা হল নামাযের প্রাণ ও মস্তিষ্ক; আমাদের উচিত, এই নামাযের সুন্নতকে তার পদ্ধতি, বৈশিষ্ট্য ও পরিমাণ (কোয়ালিটি ও কোয়ান্টিটি) উভয় দিক থেকেই গ্রহণ করা; অতএব আমরা আমাদের সাধ্য অনুযায়ী নামাজের সৌন্দর্য ও দৈর্ঘ্য অবলম্বন করব; যেমন গ্রহণ করে থাকি রাকআত সংখ্যা। বলা বাহুল্য, বিনয়-নম্রতা, মনের উপস্থিতি ও ধীর-স্থিরতা ছাড়া কেবল রাকাত আদায়ের কর্তব্য পালন করাই মুখ্য উদ্দেশ্য নয়।
পক্ষান্তরে নামাযে অতিরিক্ত তাড়াহুড়া বৈধ নয়। তাছাড়া তাড়াহুড়া করতে গিয়ে যদি নামাযের কোন ওয়াজিব বা রুকন সঠিকরূপে আদায় না হয়, তাহলে তাে নামাযই বাতিল হয়ে যাবে।
নামাযে ধীরতা ও স্থিরতা অবলম্বন করা ফরয ও অপরিহার্য; যে তা বর্জন করবে, তার নামায বাতিল গণ্য হবে; যেহেতু একদা মহানবী সঃ এক ব্যক্তিকে অধীর ও অস্থির হয়ে নামায পড়তে দেখে তাকে নামায ফিরিয়ে পড়তে আদেশ করলেন এবং শিক্ষা দিলেন যে, নামাজে রুকু, সিজদা, কওমা ও দুই সিজদার মাঝখানে ধীরতা ও স্থিরতা অবলম্বন করা ওয়াজেব।
বুঃ ৭৫৭, মুঃ ৩৯৭
মহানবী সঃ বলেন, সে নামাযীর নামায যথেষ্ট নয়, যে রুকু ও সিজদায় তার পিঠ সোজা করে না।
আদাবুল মুফরাদ ৮৫৫
রাসুল সঃ বলেন, সবচেয়ে নিকৃষ্ট চোর হল সেই ব্যক্তি, যে তার নামাজ চুরি করে; লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসূল সঃ নামায কিভাবে চুরি করবে? তিনি বললেন, পূর্ণরূপে রুকূ ও সিজদাহ না করে।
ইবনে আবী শায়বা ২৯৬০, ত্বাবারানী ১২২৯
তিনি আরো বলেন, আল্লাহ সেই বান্দার নামাজের প্রতি তাকিয়েই দেখেন না, যে রুকু ও সিজদায় তার মেরুদন্ড সোজা করে না।
ইআশাঃ ২৯৫৭, ইমাঃ আঃ, সিসঃ ২৫৩৬ নং
বিতর সালাত
তিন রাকাত বিতরের কেরাত
তিন রাকাত বিতরের প্রথম রাকাতে সূরা আ’লা, দ্বিতীয় রাকাতে সূরা কাফিরুন এবং তৃতীয় রাকাতে সূরা ইখলাস পড়া সুন্নাত।
নাসাঈ, হা/১৭২৯-৩১, রাত ও দিনের নফল সালাত অধ্যায়-২০, অনুচ্ছেদ-৪৭;
হাকেম, হা/১১৪৪ ‘বিতর’ অধ্যায়।
হাকেম হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।
কখনো কখনো এর সাথে সুরা ফালাক ও নাস পড়বে।
তিরমিযী, হা/৪৬৩, ‘বিতর’ অধ্যায়-৩, ‘বিতরের কিরাআত’ অনুচ্ছেদ-৯;
হাকেম, হা/১১৪৪।
হাকেম হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন এবং যাহাবী তাকে সমর্থন করেছেন।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) থেকে সহীহ সূত্রে বর্ণিত আছে যে, তিনি একবার বিতরের এক রাকাতে সূরা নিসার একশত আয়াত পড়েছিলেন।
নাসাঈ, হা/১৭২৮, রাত ও দিনের নফল সালাত অধ্যায়-২০, বিতরের ক্বিরাআত অনুচ্ছেদ-৪৬;
আহমাদ, হা/১৯৭৭৫,
সনদ ছহীহ।
দোয়া কুনূত ও তা পাঠের স্থান
কেরাত শেষ করে রুকুর পূর্বে কখনো কখনাে ঐ দুআর মাধ্যমে কুনুত পড়বে, যেটি রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁর নাতি হাসান বিন আলী (রাঃ)-কে শিখিয়ে দিয়েছিলেন। দু’আটি হলঃ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মাহদিনী ফীমান হাদায়তা, ওয়া আ-ফিনী ফীমান ‘আ ফায়তা, ওয়া তাওয়াল্লানী ফীমান তাওয়াল্লায়তা, ওয়া বা-রিকলী ফীমা ‘আত্বায়তা, ওয়া কিনী শাররা মা ক্বাযায়তা; ফাইন্নাকা তাকৃযী ওয়া লা ইয়ুকৃযা ‘আলায়কা, ওয়া ইন্নাহু লা ইয়াযিলু মাঁও ওয়া-লায়তা, ওয়া লা ইয়াইযঝ মান ‘আ-দায়তা, তাবা-রকতা রব্বানা ওয়া তাআ-লায়তা।
অনুবাদ : হে আল্লাহ! তুমি যাদেরকে সুপথ দেখিয়েছ, আমাকে তাদের মধ্যে গণ্য করে সুপথ দেখাও। যাদেরকে তুমি ক্ষমা করেছ, আমাকে তাদের মধ্যে গণ্য করে ক্ষমা করে দাও। তুমি যাদের অভিভাবক হয়েছ, তাদের মধ্যে গণ্য করে আমার অভিভাবক হয়ে যাও। তুমি আমাকে যা দান করেছ, তাতে বরকত দাও। তুমি যে ফায়সালা করে রেখেছ, তার অনিষ্ট হতে আমাকে বাঁচাও। কেননা তুমি সিদ্ধান্ত দিয়ে থাক, তোমার বিরুদ্ধে কেউ সিদ্ধান্ত দিতে পারে না। তুমি যার সাথে বন্ধুত্ব রাখ, সে কোনদিন অপমানিত হতে পারে না। আর তুমি যার সাথে শত্রুতা পোষণ কর, সে কোনদিন সম্মানিত হতে পারে না। হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি বরকতময় ও সর্বোচ্চ।
আবু দাউদ, হা/১৪২৫, ছালাত অধ্যায়-২, ‘বিতরের কুনূত’ অনুচ্ছেদ-৩৪০;
তিরমিযী, হা/৪৬৪, ‘বিতর’ অধ্যায়-৩, অনুচ্ছেদ-১০;
নাসাঈ, হা/১৭৪৫, রাত ও দিনের নফল সালাত অধ্যায়-২০, ‘বিতরের দু’আ অনুচ্ছেদ-৫১;
কখনো কখনো রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর উপর দরুদ পাঠ করবে।
রুকুর পরে কুনুত পড়া এবং রমজানের দ্বিতীয়ার্ধে কুনুত এর দোয়ার সাথে কাফেরদের প্রতি লানত (অভিসম্পাত), রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর উপর দরূদ পাঠ এবং মুসলমানদের জন্য দু’আ বৃদ্ধি করাতে কোন সমস্যা নেই। উমার (রাঃ)-এর যুগে এরূপ করা ইমামগণ থেকে প্রমাণিত রয়েছে। আব্দুর রহমান বিন আব্দুল কারী বর্ণিত হাদীসের শেষাংশে এসেছে। তারা রমজানের দ্বিতীয়ার্ধে কাফেরদেরকে লানত করতাে এ দোয়া বলেঃ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা কৃাতিলিল কাফারাতাল্লাযীনা ইয়াছুদূনা ‘আন সাবীলিকা, ওয়া ইয়ুকাযিবৃনা রুসুলাকা, ওয়ালা ইয়ুমিনূনা বিওয়াদিকা ওয়া খা-লিফ বায়না কালিমা তিহিম, ওয়া আলকি ফী কুবিহিমুর রুবা, ওয়া আলকি আলাইহিম রিজযাকা ওয়া আযাবাকা ইলাহাল হাক।
অনুবাদ : হে আল্লাহ! আপনি কাফেরদেরকে ধ্বংস করুন। যারা আপনার রাস্তা বন্ধ করে, আপনার প্রেরিত রাসূলগণকে অবিশ্বাস করে এবং আপনার অঙ্গীকারের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে না। আপনি তাদের দলের মধ্যে ভাঙ্গন সৃষ্টি করে দিন, তাদের অন্তরে ভীতি সঞ্চার করুন এবং হে সত্যের উপাস্য! তাদের প্রতি আপনার শাস্তিকে অবধারিত করে দিন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর প্রতি দরূদ পাঠ করতেন এবং সাধ্যানুযায়ী মুসলমানদের জন্য কল্যাণ প্রার্থনা করতেন। অতঃপর মুমিনদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতেন।
বর্ণনাকারী বলেন, কাফেরদের প্রতি লা’নত, নবী (ছাঃ)-এর প্রতি দরূদ পাঠ, মুমিন নর-নারীর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা এবং নিজের জন্য চাওয়ার পর তিনি (উবাই বিন কাব) বলতেনঃ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইয়্যা-কা না’বুদু, ওয়ালাকা নুছল্লী ওয়া নাসজুদু, ওয়া ইলাইকা নাস’আ ওয়া নাহফিদু, ওয়া নারজু রহমাতাকা রব্বানা, ওয়া নাখা-ফু ‘আযা-বাকাল জিদ্দা, ইন্না ‘আযা-বাকা লিমান ‘আদায়তা মুলহাক।
অনুবাদ : হে আল্লাহ! আমরা একমাত্র আপনারই ইবাদত করি, আপনার জন্যই ছালাত আদায় করি ও সিজদাহ করি। আমরা আপনার নিকটে ফিরে যাওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করি। হে আমাদের প্রভু! আমরা আপনার রহমত কামনা করি এবং আপনার কঠিন শাস্তি কে ভয় করি। আপনার সাথে যে শত্রুতা পোষণ করেছে, আপনার আযাব তার প্রতি অর্পিত হৌক। অতঃপর তিনি তাকবীর দিয়ে সেজদায় চলে যেতেন।
সহীহ ইবনে খুযায়মা, ২/১৫৫-১৫৬, হা/১১০০।
বিতরের শেষে পঠিতব্য দোয়া
বিতরের শেষে (সালামের পূর্বে বা পরে) এই দু’আটি পড়া সুন্নাতঃ
উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আউযুবিকা বিরিকা মিন সাখাত্বিকা, ওয়া বিমুআফাতিকা মিন উক্বাতিকা, ওয়া আ’ঊযু বিকা মিন কা, লা উহছী ছানাআন আলায়কা, আনতা কামা আছনায়তা ‘আলা নাফসিকা। অনুবাদ : হে আল্লাহ! আমি আপনার সন্তুষ্টির মাধ্যমে আপনার ক্রোধ থেকে এবং আপনার ক্ষমার মাধ্যমে আপনার শাস্তি থেকে আশ্রয় চাচ্ছি। আমি আপনার মাধ্যমে আপনার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি। আমি আপনার প্রশংসাকে গণনা করতে পারব না। আপনি আপনার যেভাবে প্রশংসা করেছেন, তেমনটিই আপনার জন্য প্রযোজ্য।
আবু দাউদ, হা/১৪২৭, ‘বিতরের কুনূত’ অনুচ্ছেদ-৩৪০;
ইবনু মাজাহ, হা/১১৭৯, অধ্যায় ৫, ‘বিতরের কুনূত’ অনুচ্ছেদ-১১৭;
ইরওয়াউল গালীল, হা/৪৩০, হাদীছ ছহীহ।
বিতরের সালাম ফিরানোর পর (তিনবার) স্বরবে বলবে ‘সুবহানাল মালিকিল কুদ্দুস’ এবং তৃতীয়বার দীর্ঘ টানে বলবে।
আবু দাউদ, হা/১৪৩০, ‘বিতরের পরের দুআ অনুচ্ছেদ-৩৪১; নাসাঈ, হা/১৬৯৯,১৭০১, অধ্যায়-২০, অনুচ্ছেদ-৩৭, হাদীছ ছহীহ।