বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম; আজকে আলোচনা করব তারাবির নামাজের দোয়া সম্পর্কে। তারাবির প্রত্যেক দুই রাকাত বা চার রাকাতে সালাম ফিরে তসবীহ, ইস্তিগফার বা দুআ পড়া দোষাবহ নয়। তবে এ সময় উচ্চস্বরে সে সব পড়া উচিত নয়। কারণ, তার কোন দলিল নেই।
প্রকাশ থাকে যে, ঐ সকল যিকর বা দোয়া যা ফরয নামাযের পর পড়া হয়ে থাকে। পক্ষান্তরে এই নামাজের প্রত্যেক ২ রাকাত অথবা চার রাকাত পরপর সালাম ফিরে নির্দিষ্ট যিকর; যেমন “সুবহানা যিল মুলকি অল-মালাকুত, সুবহানা যিল ইয্যাতি অল-আযামাহ” পড়া বিদআত। এ স্থলে মহানবী সঃ অথবা তার কোন সাহাবী কর্তৃক কোন নির্দিষ্ট দুআ বা যিকর বর্ণিত হয়নি।
তারাবির নামাজ শেষে অথবা প্রত্যেক ২ রাকাত পর পর অথবা প্রত্যেক চার রাকাত পর পর নিয়মিত কোন নির্দিষ্ট জামাআতী জিকির; যেমন সমস্বরে জামাআতী দরুদ পড়া বিদআত। মসজিদে এই শ্রেণীর চিৎকার ঘৃণ্য আচরণ এবং তা মসজিদে অন্যান্য নিষিদ্ধ কথা বলারই শ্রেণীভুক্ত।
প্রত্যেক চার রাকাত পর পর বিশ্রাম করার কথা হাদিস থেকে বুঝা যায় কিন্তু তখন কোন নির্দিষ্ট জিকির করতে হবে এটা হাদিস দ্বারা প্রমাণিত নয়।
তবে বিতর সালাতে দোয়ায়ে কুনুত এবং বিতর সালাতের পরে বেশকিছু দোয়া করার ব্যাপারে হাদিস রয়েছে এবং সাহাবায়ে কেরামগণ আমল করতেন বলেও প্রমাণ রয়েছে। এখন সে বিষয়ে কিছু বর্ণনা করতে চায়।
দোয়ায়ে কুনূত ও তা পাঠের স্থান
কখনো কখনো রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর উপর দরুদ পাঠ করবে
বিতরের শেষে পঠিতব্য দোয়া
দোয়ায়ে কুনূত ও তা পাঠের স্থান
কিরাআত শেষ করে রুকুর পূর্বে কখনো কখনাে ঐ দুআর মাধ্যমে কুনুত পড়বে, যেটি রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁর নাতি হাসান বিন আলী (রাঃ)-কে শিখিয়ে দিয়েছিলেন। দু’আটি হলঃ
اللَّهُمَّ اهْدِنِي فِيمَنْ هَدَيْتَ وَعَافِنِي فِيمَنْ عَافَيْتَ وَتَوَلَّنِي فِيمَنْ تَوَلَّيْتَ وَبَارِكْ لِي فِيمَا أَعْطَيْتَ وَقِنِي شَرَّ مَا قَضَيْتَ إِنَّكَ تَقْضِي وَلاَ يُقْضَى عَلَيْكَ وَإِنَّهُ لاَ يَذِلُّ مَنْ وَالَيْتَ وَلاَ يَعِزُّ مَنْ عَادَيْتَ تَبَارَكْتَ رَبَّنَا وَتَعَالَيْتَ
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মাহদিনী ফীমান হাদায়তা, ওয়া আ-ফিনী ফীমান ‘আ ফায়তা, ওয়া তাওয়াল্লানী ফীমান তাওয়াল্লায়তা, ওয়া বা-রিকলী ফীমা ‘আত্বায়তা, ওয়া কিনী শাররা মা ক্বাযায়তা; ফাইন্নাকা তাকৃযী ওয়া লা ইয়ুক্বযা ‘আলায়কা, ওয়া ইন্নাহু লা ইয়াযিলু মাঁও ওয়া-লায়তা, ওয়া লা ইয়াইযঝু মান ‘আ-দায়তা, তাবা-রকতা রব্বানা ওয়া তাআ-লায়তা।
অনুবাদ: হে আল্লাহ! তুমি যাদেরকে সুপথ দেখিয়েছ, আমাকে তাদের মধ্যে গণ্য করে সুপথ দেখাও; যাদেরকে তুমি ক্ষমা করেছ, আমাকে তাদের মধ্যে গণ্য করে ক্ষমা করে দাও; তুমি যাদের অভিভাবক হয়েছ, তাদের মধ্যে গণ্য করে আমার অভিভাবক হয়ে যাও; তুমি আমাকে যা দান করেছ, তাতে বরকত দাও, তুমি যে ফায়সালা করে রেখেছ, তার অনিষ্ট হতে আমাকে বাঁচাও; কেননা তুমি সিদ্ধান্ত দিয়ে থাক, তোমার বিরুদ্ধে কেউ সিদ্ধান্ত দিতে পারে না; তুমি যার সাথে বন্ধুত্ব রাখ, সে কোনদিন অপমানিত হতে পারে না; আর তুমি যার সাথে শত্রুতা পোষণ কর, সে কোনদিন সম্মানিত হতে পারে না; হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি বরকতময় ও সর্বোচ্চ।
আবু দাউদ, হা/১৪২৫, ছালাত অধ্যায়-২, ‘বিতরের কুনূত’ অনুচ্ছেদ-৩৪০;
তিরমিযী, হা/৪৬৪, ‘বিতর’ অধ্যায়-৩, অনুচ্ছেদ-১০;
নাসাঈ, হা/১৭৪৫, রাত ও দিনের নফল সালাত অধ্যায়-২০, ‘বিতরের দু’আ অনুচ্ছেদ-৫১;
কখনো কখনো রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর উপর দরুদ পাঠ করবে
রুকুর পরে কুনুত পড়া এবং রমজানের দ্বিতীয়ার্ধে কুনুত এর দোয়ার সাথে কাফেরদের প্রতি লানত (অভিসম্পাত), রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর উপর দরূদ পাঠ এবং মুসলমানদের জন্য দু’আ বৃদ্ধি করাতে কোন সমস্যা নেই; উমার (রাঃ)-এর যুগে এরূপ করা ইমামগণ থেকে প্রমাণিত রয়েছে; আব্দুর রহমান বিন আব্দুল কারী বর্ণিত হাদীসের শেষাংশে এসেছে; তারা রমজানের দ্বিতীয়ার্ধে কাফেরদেরকে লানত করতাে এ দোয়া বলেঃ
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ক্বাতিলিল কাফারাতাল্লাযীনা ইয়াছুদূনা ‘আন সাবীলিকা, ওয়া ইয়ুকাযিবনা রুসুলাকা, ওয়ালা ইয়ুমিনূনা বিওয়াদিকা ওয়া খা-লিফ বায়না কালিমা তিহিম, ওয়া আলকি ফী কুবিহিমুর রুবা, ওয়া আলকি আলাইহিম রিজযাকা ওয়া আযাবাকা ইলাহাল হাক।
অনুবাদ: হে আল্লাহ! আপনি কাফেরদেরকে ধ্বংস করুন; যারা আপনার রাস্তা বন্ধ করে, আপনার প্রেরিত রাসূলগণকে অবিশ্বাস করে এবং আপনার অঙ্গীকারের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে না; আপনি তাদের দলের মধ্যে ভাঙ্গন সৃষ্টি করে দিন, তাদের অন্তরে ভীতি সঞ্চার করুন এবং হে সত্যের উপাস্য! তাদের প্রতি আপনার শাস্তিকে অবধারিত করে দিন।
অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর প্রতি দরূদ পাঠ করতেন এবং সাধ্যানুযায়ী মুসলমানদের জন্য কল্যাণ প্রার্থনা করতেন। অতঃপর মুমিনদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতেন।
বর্ণনাকারী বলেন, কাফেরদের প্রতি লা’নত, নবী (ছাঃ)-এর প্রতি দরূদ পাঠ, মুমিন নর-নারীর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা এবং নিজের জন্য চাওয়ার পর তিনি (উবাই বিন কাব) বলতেনঃ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইয়্যা-কা না’বুদু, ওয়ালাকা নুছল্লী ওয়া নাসজুদু, ওয়া ইলাইকা নাস’আ ওয়া নাহফিদু, ওয়া নারজু রহমাতাকা রব্বানা, ওয়া নাখা-ফু ‘আযা-বাকাল জিদ্দা, ইন্না ‘আযা-বাকা লিমান ‘আদায়তা মুলহাক।
অনুবাদ: হে আল্লাহ! আমরা একমাত্র আপনারই ইবাদত করি, আপনার জন্যই ছালাত আদায় করি ও সিজদাহ করি; আমরা আপনার নিকটে ফিরে যাওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করি; হে আমাদের প্রভু! আমরা আপনার রহমত কামনা করি এবং আপনার কঠিন শাস্তি কে ভয় করি; আপনার সাথে যে শত্রুতা পোষণ করেছে, আপনার আযাব তার প্রতি অর্পিত হৌক।
অতঃপর তিনি তাকবীর দিয়ে সেজদায় চলে যেতেন।
সহীহ ইবনে খুযায়মা, ২/১৫৫-১৫৬, হা/১১০০।
বিতরের শেষে পঠিতব্য দোয়া
বিতরের শেষে (সালামের পূর্বে বা পরে) এই দু’আটি পড়া সুন্নাতঃ
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِرِضَاكَ مِنْ سَخَطِكَ وَبِمُعَافَاتِكَ مِنْ عُقُوبَتِكَ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْكَ لاَ أُحْصِي ثَنَاءً عَلَيْكَ أَنْتَ كَمَا أَثْنَيْتَ عَلَى نَفْسِكَ
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ইন্নী আউযুবিকা বিরিকা মিন সাখাত্বিকা, ওয়া বিমুআফাতিকা মিন উক্বাতিকা, ওয়া আ’ঊযু বিকা মিন কা, লা উহছী ছানাআন আলায়কা, আনতা কামা আছনায়তা ‘আলা নাফসিকা।
অনুবাদ: হে আল্লাহ! আমি আপনার সন্তুষ্টির মাধ্যমে আপনার ক্রোধ থেকে এবং আপনার ক্ষমার মাধ্যমে আপনার শাস্তি থেকে আশ্রয় চাচ্ছি; আমি আপনার মাধ্যমে আপনার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি, আমি আপনার প্রশংসাকে গণনা করতে পারব না; আপনি আপনার যেভাবে প্রশংসা করেছেন, তেমনটিই আপনার জন্য প্রযোজ্য।
আবু দাউদ, হা/১৪২৭, ‘বিতরের কুনূত’ অনুচ্ছেদ-৩৪০;
ইবনু মাজাহ, হা/১১৭৯, অধ্যায় ৫, ‘বিতরের কুনূত’ অনুচ্ছেদ-১১৭;
ইরওয়াউল গালীল, হা/৪৩০, হাদীছ ছহীহ।
বিতরের সালাম ফিরানাের পর (তিনবার) স্বরবে বলবে سُبْحَانَ الْمَلِكِ الْقُدُّوسِ ‘সুবহানাল মালিকিল কুদ্দুস’ এবং তৃতীয়বার দীর্ঘ টানে বলবে।
আবু দাউদ, হা/১৪৩০, ‘বিতরের পরের দুআ অনুচ্ছেদ-৩৪১; নাসাঈ, হা/১৬৯৯,১৭০১, অধ্যায়-২০, অনুচ্ছেদ-৩৭, হাদীছ ছহীহ।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে বিষয়গুলো সঠিকভাবে বুঝার ও আমল করার তাওফীক দান করুক। আল্লাহুম্মা আমীন।