গর্ভকালীন সময়ে রক্তপাত হলে কী করবেন গর্ভাবস্থায় রক্তক্ষরণ কী? এর কারণ এবং প্রতিকার গর্ভাবস্থায় প্রাথমিক পর্যায়ে রক্তক্ষরণ কেন হয়? |

গর্ভকালীন সময়ে গর্ভবতী মায়ের শরীরে নানা রকমের হরমন ও শারীরিক পরিবর্তন শুরু হয়। স্বাভাবিক ভাবেই এই সময় মায়েরা একটু বেশি দুর্বল , ক্লান্ত এবং অস্বস্তির মাঝে ডুবে থাকেন। এই সময় শারীরিক আকৃতি পরিবর্তনের বিভিন্ন শারীর বৃত্তিয় কার্যকলাপের পরিবর্তনের কারনে বিভিন্ন রকমের উপসর্গ দেখা দিতে পারে। গর্ভকালীন অবস্থায় যেকোন সময়ে সামান্য পরিমানে অথবা অনেক বেশি পরিমানে রক্তপাত হতে পারে। কখনো কখনো দু এক ফোঁটা রক্ত সাদা স্রাবের সাথে মিশে বাদামি বর্ণের খুব সামান্য পরিমানের রক্তপাত হতে পারে। গর্ভকালীন সময়ে কখন কিরুপ রক্তপাত হলে কি হবার সম্ভাবনা থাকে আর সেই মুহূর্তে আপনার করনীয় কি সে সম্পর্কেই এখানে আলোচোনা করা হবে।

 

১ম ট্রাইমেস্টারে সামান্য পরিমানে রক্তপাত

 

গর্ভকালীন ১ থেকে ৩ মাস ( ১ থেকে ১২ সপ্তাহ) পর্যন্ত সময় কে ১ম ট্রাইমেস্টার বলে। এই সময়ে সামান্য রক্তপাত বা স্পটিং হওয়া খুবই স্বাভাবিক ব্যপার। ইমপ্লান্টেশন অর্থাৎ ভ্রূণ যখন গর্ভাশয়ে সংযুক্ত হয় তখন এই সামান্য রক্তপাত হতেই পারে। সাধারনত এই অবস্থায় গর্ভবতী মায়েরা তাদের অন্তর্বাসে সামান্য রক্ত লেগে থাকতে দেখতে পারেন অথবা কোন টিস্যু দিয়ে যখন মোছা হয় তখন টিস্যুতে হালকা রক্ত লেগে থাকতে দেখা যায়। প্রায় অর্ধেক গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রেই এটা সম্পূর্ণ আসংকা মুক্ত এবং তারা পরবর্তীতে সুস্থ্য স্বাভাবিক সন্তান প্রসব করে থাকেন।

 

করনীয়ঃ

 

যেহেতু রক্তপাত মিস্ক্যারেজের একটি পূর্বাভাষ , তাই নিশ্চিন্ত হতে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহন করতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে।। রক্তপাত সামান্য হলেও সব কাজ রেখে বিছানায় বাম কাত হয়ে শুয়ে থাকতে হবে এবং যতটা পারা যায় বেড রেস্টে থাকতে হবে। ভারি কাজ, হাঁটাহাঁটি , যানবাহনে যাতায়াত করা যাবেনা। বেশি টেনশন করা যাবে না এতে ব্লাড প্রেসার বেড়ে যাবে এবং ভ্রূণের উপরে খারাপ প্রভাব পরবে ।

 

১ম ট্রাইমেস্টারে প্রচুর পরিমানে রক্তপাত

 

১৫ থেকে ২০ শতাংশ গর্ভবতী মায়েরা এই সমস্যার সম্মুখিন হয় এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মিস্ক্যারেজ পূর্ব লক্ষন হিসেবে অতিরিক্ত রক্তপাত হয়ে থাকে। যদি রক্তপাতের পরিমান সামান্য থেকে বেশি পরিমানের দিকে পরিবর্তন হতে থাকে এবং রক্তের রঙ লাল হয় তাহলে দেরি না করে নিকটস্থ্য স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিৎ ।রক্তপাতের সাথে যদি তিব্র তলপেট ব্যথা, মাথা ঘোরা, রক্তের সাথে জমাট স্রাব নির্গত হয় তাহলে বুঝতে হবে এগুলো মিস্ক্যারেজের লক্ষন। ৫০ শতাংশ গর্ভবতী মায়েদের এই সমস্যার ক্ষেত্রে তার তাদের গর্ভস্থ সন্তান হারান অর্থাৎ মিস্ক্যারেজ হয়ে যায়। কিন্তু এতে ভয় পাবার কিছু নেই কারন এর অরথ হল বাকি ৫০ শতাংশ গর্ভবতী মা তাদের সন্তানকে রক্ষা করতে সমরথ্য হন এবং পরবর্তীতে সুস্থ্য সন্তান প্রসব করে থাকেন।

 

এছাড়াও ১ম ট্রাইমেস্টারে সহবাসের কারনে, ইনফেকশনের কারনে বা এক্টপিক প্রেগ্নেন্সির কারনেও ব্লিডিং হয়ে থাকে।

 

করনীয়ঃ

 

খুব বেশি রক্তপাত হলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ ও HPC ইঞ্জেকশন নিতে হবে। সম্পূর্ণ বেড রেস্টে থাকতে হবে। স্বাভাবিক হাটাচলা করা যাবে কিন্তু, এক নাগারে ২০ মিনিট হাঁটাহাঁটি করা যাবে না, ভারি কাজ করা যাবেনা, ভাঙ্গা রাস্তায় রিক্সায় চলাচল করা যাবে না, দুরের যাত্রায় অংশ গ্রহন করতে পারবে না। গর্ভকালীন সময়ের নিশিদ্ধ খাবার গুলি একেবারেই খেতে পারবে না।

 

২য় ট্রাইমেস্টারে রক্তপাত

 

৪ থেকে ৬ মাস (১৩ থেকে ২৭ সপ্তাহ) পর্যন্ত এই সময় কে ২য় ট্রাইমেস্টার বলে। বিভিন্ন কারনে ২য় ট্রাইমেস্টারে রক্তপাত হতে পারে, কোন কারনই ফেলনা নয়। ২য় ট্রাইমেস্টারে রক্তপাত খুবই ঝুঁকিপূর্ণ এবং রক্তপাত লক্ষ্য করার সাথে সাথে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

 

প্রায় ২০০ জন গর্ভবতী মায়ের মাঝে ১ জন প্লাসেন্টা প্রিভিয়ার কারনে রক্তপাতের স্বিকার হন। প্লাসেন্টা প্রিভিয়া হল , গর্ভাশয়ের নিচের দিকে প্লাসেন্টার অবস্থান । এই অবস্থায় রক্তপাত ব্যাথা মুক্ত হতে পারে।

 

ইউটেরাস থেকে প্লাসেন্টার সংযোগ স্থল খুলে গেলে বা আলাদা হয়ে গেলেও রক্তপাত হতে পারে, একে প্লাসেন্টা এবরাপশন (Plasenta abruption) বলা হয়। তলপেটে ব্যাথা, স্রাবের সাথে জমাট রক্ত পিন্ড, ইউটেরাস নরম অনুভব করা এবং কমরে ব্যাথা থাকে।

 

ইউটেরাসের মুখ খুলে গেলেও রক্তপাত হতে পারে। একে ইউটেরাইন রাপচার (uterine rupture) বলে। এই অবস্থা মা ও শিশুর জন্য জীবনের ঝুঁকি বহন করে। সাধারনত ডাক্তাররা এই সময় জরুরি ভিত্তিতে সিজারিয়ান অপারেশন করে থাকেন। ইউটেরাইন রাপচারের রক্তপাতের সাথে তলপেটে ব্যাথা হয় ।

 

করনীয়ঃ

 

দ্বিতিয় ট্রাইমেস্টারে রক্তপাত খুবই চিন্তার বিশয়। যত দ্রুত সম্ভব দাক্তারের সাথে জোগাজোগ করে পরামর্শ নিন ।

 

৩য় ট্রাইমেস্টারে রক্তপাত

 

যদি মিউকাস প্লাগ খুলে যায় বা বেরিয়ে আসে তাহলে মিউকাস প্লাগের সাথে কিছু রক্তপাত হতে পারে। এই রক্তপাত কে ব্লডি শো বলা হয় । ৩৭ সপ্তাহের আগে এরকম দেখা দিলে জরুরি ভাবে ডাক্তার দেখানো উচিত কারন এটি প্রি ম্যাচুর বেবি হওয়ার লক্ষন ।

 

করনীয়ঃ

 

তৃতীয় ট্রাইমেস্টারে প্রি ম্যাচুর বেবি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। রক্তপাত হলে জরুরি ভিত্তিতে দাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী পদক্ষেপ নিন।

আমরা আপনাকে কোন পথ্য বা ডাক্তারি পরামর্শ দেই না শুধুমাত্র সম্ভাব্য কারন গুলো জানিয়ে থাকি। আপনার সমস্যার সঠিক সমাধান একমাত্র ডাক্তারই পরিক্ষা নিরিক্ষার মাধ্যমে দিতে পারে। গর্ভকালীন সময়ে রক্তপাত আবশ্যই একটি চিন্তার বিশয় তাই দেরি না করে অতি সত্বর ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

FOR MORE CLICK HERE

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]