ঘুম
একটা নবজাতক শিশু দিনে পনের থেকে আঠারো ঘন্টা ঘুমায়। কিন্তু কখনোই টানা দুই থেকে তিন ঘণ্টা ধরে ঘুমাতে দেওয়া উচিৎ নয়। ঘুমের জন্য আরাম দায়ক বিছানা হতে হবে। ঘরের তাপমাত্রা অনুকূল হতে হবে, শিশুর গায়ে ভারী কম্বল বা কাঁথা দেওয়া উচিৎ নয়। শিশুকে সূতী কাপড় পরে ঘুমাতে দিন। এক পাশে কাত হয়ে শোয়া স্বাস্থ্যের জন্যে খুব খারাপ এমন কি শিশুর বৃদ্ধি ব্যহত হতে পারে। তাই শিশু কে চিত করে শোয়ার অভ্যাস করুন।
দুধপান
মায়ের দুধের প্রথম পাতলা অংশকে Foremilk বলে আর শেষের ভারী ক্রিম এর মত ঘন অংশকে বলে Hindmilk. শিশু দুধ পান করার সময় এই foremilk আর hindmilk এর ভারসাম্য ঠিক না থাকলে সবুজ বর্ণের মল হতে পারে। আবার মায়ের তালিকায় এমন কোন খাবার যদি থাকে, যেমন গরুর দুধের তৈরী কোন খাবার, যাতে বাচ্চা সংবেদনশীল হয় তাহলেও শিশুর সবুজ রঙের মল হতে পারে। পজিশন চেঞ্জ করে শিশুকে দুধ খাওয়ালে foremilk ও hindmilk এর ভারসাম্য ঠিক থাকে। এছাড়া দুধ পরিপূর্ণ ভাবে তৈরি হবার পর দুধ খাওয়ালে এবং শিশুর খাবার shesh হওয়ার আগেই দুধ পানে বিরতি না দিয়ে ধৈর্য্য ধরে খাওয়ালে শিশু foremilk এবং hindmilk উভয়েই পর্যাপ্ত পরিমাণে পাবে আর ভারসাম্য ও ঠিক থাকবে।
প্রত্যেক নবজাতক শিশু দিনে দশ থেকে বারো বার দুধ পান করবে। প্রতি বার দুধ পান করার দুই থেকে তিন ঘণ্টা পর আবার দুধ পান করবে। শিশুর খিদে লাগলে ই খাওয়াতে হবে। এক্ষেত্রে কিছু ব্যপারে লক্ষ রাখতে হবে, যেমন শিশু বারবার হাত মুখের দিকে নিবে, হাতের আঙুল বা কব্জি চাটবে, ঠোঁট জ্বিব দিয়ে ভেজাবে। এগুলো শিশুর খিদে পাবার লক্ষণ। কান্নাকাটি শিশুরা অনেক পরে করে যখন তারা খিদে সহ্য করতে পারে না, তাই লক্ষণ দেখেই শিশুকে খেতে দিতে হবে।ছয় মাস পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধের বিকল্প নেই।
নবজাতক শিশুদের গ্যাস অনেক বেশী হয়। কারণ তারা দুধ খাবার সময় এবং কান্না করার সময় প্রচুর বাতাস ভিতরে টেনে নেয়। তাই প্রতিবার খাওয়ার পর ভালো করে burp করতে হয়। শিশুদের পরিপাক তন্ত্র অপরিপক্ক হওয়ায় তারা প্রচুর গ্যাস ছাড়ে। এতে ঘাবরানোর কিছু নেই। বেশির ভাগ শিশুর তিন মাস বয়সের পর গ্যাসের সমস্যা ঠিক হয়ে যায়। প্রয়োজনে ডাঃ এর পরামর্শ অনুযায়ী pediatric medicine দেওয়া যেতে পারে।
র্যাশ
নবজাতক এর র্যাশ খুবই সাধারণ একটি ব্যাপার। এর জন্য কোন আলাদা চিকিৎসার প্রয়োজন নেই, শুধু সময়ের ব্যাপার। গলার র্যাশ দুই তিন দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়, মুখেরটা ঠিক হয় দশ থেকে চৌদ্দ দিন এর মধ্যে। এছাড়াও বুকে, পায়ে, হাতে র্যাশ বারবার হতে পারে। ছয় মাস পর্যন্ত এর আসা যাওয়া হতে পারে। এটা নিয়ে আলাদা দুশ্চিন্তার কোন কারণ নেই।
হেঁচকি
হেচকি ছোট শিশুদের মধ্যে প্রায়ই লক্ষ্য করা যায়। কখনও কখনও একশ বারের ও বেশি ওঠে। খুব বেশি হেচকি উঠলে শিশুরা ক্লান্ত ও অস্বস্তি অনুভব করে। ঠিক মতো burp করতে না পারলে এরকম হয়। তাই খাওয়ার পর ভালো মত burp করতে হবে। বুকে জমে থাকা অতিরিক্ত গ্যাস বের করে দিলে হেচকি থেমে যেতে পারে। অনেক সময় এক চামচ পানি খাইয়ে দিলেও থেমে যায়। সাধারণত হেচকি কোন ক্ষতি করে না কিন্তু অতিরিক্ত হেচকি শ্বাস কষ্টের কারণ হতে পারে।
ঝাঁকি
শিশুকে কখনো দোল বা ঝাঁকি দিবেন না সেটা খেলার ছলেই হোক আর কান্না থামানোর জন্যই হোক । এতে শিশুর মস্তিষ্কে রক্ত ক্ষরন হতে পারে এমন কি মৃত্যু ও হতে পারে। শিশু ঘুমিয়ে থাকলে ঝাঁকি দিয়ে না ডেকে পায়ের তলায় সুরসুরি দিয়ে বা গালে আলতো স্পর্শ করে শিশুর ঘুম ভাঙাতে হয়।
ওজন
ওর পূর্ণ বিকাশে প্রয়োজন সঠিক পুষ্টি কি করে বুঝবেন নবজাতক যথেষ্ট পরিমাণ পুষ্টি পাচ্ছে কিনা? দুধ খেয়ে শিশু সন্তুষ্ট,জন্মের পর প্রত্যেক সপ্তাহ ৬০০ গ্রাম করে ওর ওজন বাড়ছে, দিনে যে কয়বার দুধ খায় সেই কয়বারই প্রস্রাব করে।
শিশুরা ঘুমের মাঝে হাসে কেনো?
জন্মের দুই থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে শিশু ঘুমের মাঝে হাসলে বুঝতে হবে শিশু ওই সময় গ্যাস ছাড়ছে। পাঁচ সপ্তাহ থেকে শিশুর তিন মাস বয়স পর্যন্ত শিশুরা সামাজিক যোগাযোগ শিখতে আরম্ভ করে। যেমন, পরিচিত কন্ঠ শুনে, আদর পেলে, গান শুনলে শিশু হাসে। এই সময় শিশুরা এই কারণে ঘুমের মাঝে স্বপ্নে পরিবারের সদস্যদের দেখে হাসে।
হাঁচি
শিশুরা অনেক বেশি হাচি দেয়, এর মানে এই নয় যে তাদের ঠান্ডা লেগেছে। তারা হাচি দেয় নাক পরিষ্কার করতে, বন্ধ নাক খুলতে অথবা ধুলো বালি আর জীবাণু শরীর থেকে বের করতে। দুধ খাবার পর শিশুরা নিঃস্বাস ছাড়ে বা হাচি দেয় পুনরায় বন্ধ নাক খোলার জন্য।
কান্না
কান্না-ই নবজাতকের একমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম । শিশু যদি দিনে ৩ ঘন্টার বেশি কান্না করে, তাহলে বুঝতে হবে ওর হজম করতে কষ্ট হচ্ছে!
শরীর গরম
মাথা, হাতের তালু, পায়ের পাতা, গলা ছাড়া শিশুরা খুব বেশি ঘামে না। তাই খুব দ্রুত তাদের শরীর গরম হয়ে যায় যা heat stroke এর কারণ হতে পারে। শিশুকে আরাম দায়ক পরিবেশ সুনিশ্চিত করতে হবে আর বেশি করে তরল খাবার দিতে হবে। অতিরিক্ত গরমে শিশুকে রাখা যাবে না। গরমে শিশুকে রোজ গোসল করান।
দাঁত
আপনার শিশুর বয়স যদি এক বছর পার হয়ে যায় তবুও দাঁত না উঠে তাহলে চিন্তার কিছু নেই। অনেক সময় বংশ গত ভাবে অনেকের দেরিতে দাঁত উঠে থাকে। শিশুর দাদা দাদী, নানা নানী কে এ ব্যপারে জিজ্ঞেস করুন। কিন্তু আঠারো মাস পরেও যদি দাঁত না ওঠে তাহলে দ্রুত dentist এর সাথে যোগাযোগ করুন।
এই বিষয় গুলো আমরা প্রায়ই গড়মিল করে ফেলি ।তাই আমাদের উচিত শিশুকে বুঝতে অ জানতে চেষ্টা করা এবং সে অনুযায়ী শিশুর সেবা নিশ্চিত করা।
তথ্যসুত্র ( InfantFashionbd )