শিশুর ত্বকের যত্ন করে নিন ১০টি উপায়ে! - শিশুদের হাত, পা এবং মুখের রোগ কী? জেনে নিন ১০টি কার্যকর ঘরোয়া সমাধান।

একটি সুস্থ শিশু যখন আপনার ঘরে হেসে খেলে বেড়াবে, তখন সেটা সত্যই মনোমুগ্ধকর একটি বিষয়। কিন্তু ঠিক একই ভাবে যখন শিশুটি রোগাক্রান্ত হয় বাবা মায়েদের তখন উদ্বেগের শেষ থাকে না। আজ আমরা কথা বলব এমন একটি সংক্রামক রোগ সম্পর্কে যেটা শিশুদেরকেই বেশীরভাগ সময় ভুগতে দেখা যায়। এই সংক্রমণ জনিত রোগটির নাম হল ‘হ্যান্ড, ফুট এন্ড মাউথ ডিজিস’ অর্থাৎ হাত, পা ও মুখের রোগ। রোগটিকে সংক্ষেপে “এইচএফএমডি” নামে বলা হয়।  

 

হাত, পা ও মুখের রোগ বলতে কি বুঝায়? 

হাত, পা ও মুখের রোগ (এইচএফএমডি) একটি ভাইরাল সংক্রমণ যা মুখের ঘা এবং হাত ও পায়ে ফুসকুড়ি দ্বারা চিহ্নিত করা হয়।

সাধারণত দশ বছরের কম বয়সী বিশেষত পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুরা এই রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকলেও—বড়দের মধ্যেও এই রোগটি দেখা যেতে পারে। তবে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে এই রোগটি কম দেখা যায়, কেননা বড়দের মধ্যে বেশীরভাগ সময়েই এই ধরণের ভাইরাসের ‘রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা’ তৈরি হয়ে যায়। 

বসন্ত, গ্রীষ্ম এবং শরত কালেই এই রোগের সংক্রমণ হতে বেশী দেখা যায়। আক্রান্ত ব্যক্তির মুখে ঘা এবং হাতে পায়ে লাল র‍্যাশ দেখা যায়। শিশুরা সাধারণত এক সপ্তাহ থেকে দশ দিন পর্যন্ত এই ভাইরাসে ভোগার পর কোন ধরণের চিকিৎসা ছাড়াই ভালো হয়ে যায়। তবে মাঝেমধ্যে এই ভাইরাসটি আরো বড় ধরণের রোগ যেমন ‘মেনিজিটিস’ অথবা ‘এনসেফেলাইটিস’ নামক মস্তিষ্কে প্রদাহ জনিত রোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। 

 

লক্ষণগুলো কি কি? 

হাত, পা ও মুখের রোগে আক্রান্ত হলে শিশুর মধ্যে যে লক্ষণগুলো দেখা যেতে পারে, সেগুলো নিম্নরূপ: 

দুই একদিন হালকা জ্বর হওয়ার পর শিশুর মুখের মধ্যে, বিশেষ করে জিহ্বার আশেপাশে এবং মুখের ভিতরের অংশে প্রদাহ অর্থাৎ জালাপোড়া শুরু হতে পারে। কখনো কখনো এর পাশাপাশি শিশুর দাঁতের মাড়িও ফুলে যেতে দেখা যায়।  এছাড়া এই ভাইরাস সংক্রমণের কয়েকদিনের মধ্যেই শিশুর হাতে, পায়ে এবং যৌনাঙ্গের আশেপাশে র‍্যাশ হয়ে ফুলে যেতে দেখা যায়। প্রাথমিক অবস্থায় এই র‍্যাশগুলো হালকা থাকলেও সময়ের সাথে সাথে এগুলো ফুলে যেতে পারে।  

শিশুর মধ্যে উপরোক্ত লক্ষণগুলো যদি তীব্র আকার ধারণা করে, তাহলে তাৎক্ষণিক ভাবে ডাক্তারের শরণাপন্ন হন। লক্ষণগুলো কম দেখা গেলে প্রয়োজনে ডাক্তারের সাথে ফোনে আলাপ করে নিতে পারেন। 

 

কারণ সমূহ

হাত, পা এবং মুখের রোগের সর্বাধিক সাধারণ কারণ হ'ল “কক্সস্যাকিভাইরাস-এ১৬” সংক্রমণ। ‘কক্সস্যাকিভাইরাস’গুলি “নন-পোলিও এন্টারোভাইরাস” নামে এক ধরণের ভাইরাস গ্রুপের অন্তর্গত। অন্যান্য ধরণের এন্টারোভাইরাস কখনও কখনও হাত, পা এবং মুখের রোগ সৃষ্টি করে।

কক্সস্যাকিভাইরাস এর সংক্রমণ এবং হাত, পা ও মুখের রোগের মূল উৎস হচ্ছে মৌখিক ইনজেশন অর্থাৎ মুখের মাধ্যমে ছড়ায়। এই রোগটি আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে অন্য ব্যক্তি সংস্পর্শে আসলে ছড়িয়ে পড়ে। ছড়ানোর মাধ্যমগুলি হলঃ

 

হাত, পা এবং মুখের রোগটি কতটা ছোঁয়াচে? 

এই ভাইরাসটি বেশ দ্রুত সংক্রমণ করতে পারে। শিশুর মধ্যে যখন এই ভাইরাসের লক্ষণ দেখা যাওয়া শুরু করে ঠিক সেই সপ্তাহে এই ভাইরাসটি অন্যকে খুব দ্রুত সংক্রমণ করে থাকে। তবে সেই সপ্তাহ পার হওয়ার পরেও একদম সুস্থ হওয়ার আগ পর্যন্ত সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনাটি থেকেই যায়।

আর তাই আপনার শিশুর দ্বারা যাতে অন্য শিশুর মধ্যেও এই ভাইরাসটি ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য লক্ষণগুলো দেখা গেলেই শিশুকে স্কুলে যাওয়া বন্ধ রাখুন অথবা অথবা অন্য শিশুদের সাথে না মিশতে দিয়ে বরং বাসায় আলাদা ভাবে নিরাপদে রাখুন। প্রয়োজনে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

 

কীভাবে শিশুর যত্ন নিবেন?

শিশুর মধ্যে এই ভাইরাসটি সংক্রমণের লক্ষণগুলো যদি তীব্র আকার ধারণ না করে তাহলে খুব একটা দুশ্চিন্তার কিছু নেই। শিশুর পরিমিত খাবার এবং পানীয় পান করছে কি না সেদিক একটু লক্ষ্য রাখলেই হবে। তবে শিশুর মধ্যে যদি লক্ষণগুলো তীব্র আকারে দেখা যেতে থাকে, তাহলে শিশুর খুবই কষ্ট হতে পারে। আর তখন শিশুকে পরিমিত খাবার এবং পানীয় দেয়ার জন্য আপনাকে যথেষ্ট পরিমাণ বেগ পেতে হবে। 

আর যেহেতু এই সময়ে শিশুর মুখের মধ্যে ঘা থাকতে পারে, তাই শিশুকে লবণাক্ত এবং ঝাল কোন ধরণের খাবার না দেয়াই ভালো। ঠাণ্ডা কোমল পানীয় বা আইসক্রিম জাতীয় খাবার শিশুকে সাময়িক ভাবে কিছুটা হলেও শান্ত রাখতে পারবে। 

ডাক্তার যদি মনে করেন তাহলে শিশুকে ওষুধ সেবন করানোর প্রয়োজন হতে পারে। এছাড়া শিশুর বয়স যদি ১২ মাসের উপর হয় তাহলে শিশুর মুখের ঘা এবং ব্যথা নিরোধক বিভিন্ন ধরণের লিকুইড থেরাপি নিয়ে ডাক্তারের সাথে আলাপ করতে পারেন। 

 

হাত, পা এবং মুখের ভাইরাসজনিত রোগের ১০টি ঘরোয়া সমাধান 

ভাইরাস সংক্রমণের লক্ষণগুলো যদি তীব্র আকার ধারণা না করে তাহলে নিম্ন বর্ণীত ঘরোয়া পদ্ধতিতেই আপনি শিশুকে ভালো রাখতে পারেনঃ 

১) ঠাণ্ডা নারিকেলের পানি পান করালে শিশুর মুখের জ্বলুনি ভাব কিছুটা কমতে পারে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে এতে শিশু পানিশুণ্যতা থেকে মুক্তি পাবে।

২) যে কোন ধরণের খাবারের ঠাণ্ডা স্যুপ দেয়া যেতে পারে। এতে শিশু তার প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাবে। তবে লবণাক্ত, ঝাল এবং এসিড জাতীয় খাবারের স্যুপ পরিহার করতে হবে।

৩) খাওয়ার পর ভালো করে কুলকুচি করাতে হবে। মখের জ্বলুনি কমানোর জন্য কসুম গরম পানিতে আধা চা চামচ হিমালয়ান লবণ মিশ্রিত করে কল্কুচি করতে হবে। এই আশ্চর্যজনক লবণটি পিএইচ স্তরের ভারসাম্য বজায় রেখে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।

৪) আক্রান্ত জায়গায় ভালো মানের নারিকেল তেল লাগিয়ে দিলে শিশু কিছুটা আরাম পাবে। নারকেল তেলে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এবং অ্যান্টিভাইরাল গুনাগুণ রয়েছে যা রোগের বিস্তার রোধ করতে সহায়তা করতে পারে।

৫) শিশুকে ঠাণ্ডা আদা চা খাওয়াতে পারেন, কেননা আদা চা এর মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে। একটি সতেজ শীতল পানীয়ের জন্য, খোসা ছাড়ানো আদার ১ ইঞ্চি টুকরা নিন এবং ২০ মিনিটের জন্য ১ লিটার পানি দিয়ে সিদ্ধ করুন।

৬) এই সময়ে যষ্টিমধু খাওয়াতে পারেন। বিভিন্ন রকম প্রাকৃতিক গুণাগুণে ভর্তি এই যষ্টিমধু ঘরোয়া পদ্ধতির মধ্যে অন্যতম একটি সহজ সমাধান। গবেষণায় দেখা যায় যে যষ্টিমধুতে উচ্চ কার্যক্ষম অ্যান্টিভাইরাল গুনাগুণ রয়েছে যা হাত, পা ও মুখের রোগ সহ বিভিন্ন ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য উপযুক্ত করে তোলে।

৭) ঠাণ্ডা লবণাক্ত পানি দিয়ে শিশুকে ভালো করে গোসল করাতে পারেন। এতে করে শিশুর শরীরে হওয়া ফুসকুড়ি ও র‍্যাশ খুব দ্রুত মিলিয়ে যাবে। 

৮) এলোভেরার মধ্যে জীবাণু প্রতিরোধক রয়েছে। এছাড়াও এলোভেরা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে থাকে। তাই শরীরের আক্রান্ত জায়গায় এলোভেরা লাগিয়ে নিতে পারেন, এতে শিশু বেশ আরাম পাবে। 

এমনকি শিশুকে নিয়মিত এলোভেরার জ্যুসও খাওয়াতে পারেন, এতে শিশু সুস্থ থাকবে এবং তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।  

৯) অ্যাপল সাইডার ভিনেগারে ভিটামিন বি এবং সি রয়েছে। এছাড়াও এটা শরীরের শ্বেত কণিকা বৃদ্ধির জন্য বেশ উপকারী। এক গ্লাস হালকা কুসুম গরম পানিতে দুই চামচ এপল সাইডার ভিনেগার মিশিয়ে শিশুকে কুলকুচি করতে বলুন। এটা শিশুর মুখের জ্বলুনি কমাতে সাহায্য করবে।  

১০) তুলসী এমন একটি গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ যাতে বেশ কয়েকটি ঔষধি গুণ রয়েছে। এটি ক্ষতিকারক জীবাণুগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করে, প্রদাহ হ্রাস করে এবং ব্যথা থেকে মুক্তি দেয়। আপনার শিশুকে তুলসী পাতায় চিবিয়ে খেতে দিন অথবা পাতার রস তৈরি করে পানিতে মিশ্রিত করুন এবং দ্রুত পরিত্রাণের জন্য দিনে কয়েকবার এটি পান করতে বলুন।

 

গর্ভকালীন সময়ে শিশু ভাইরাসে আক্রান্ত হলে করণীয়

আপনার শিশুর মধ্যে এই ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা গেলে, সেই সময়ে যদি আপনি গর্ভবতী থাকেন তাহলে আপনাকে কিছুটা সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। যদিও গর্ভের শিশুর মধ্যেও এই ভাইরাস সংক্রমণের সম্ভাবনা একদমই কম, তবুও নিরাপত্তা অবলম্বন করার জন্য বিষয়টি আপনার ডাক্তারকে জানিয়ে রাখুন। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলুন এবং নিয়মিত সাবান দিয়ে হাত ধৌত করুন।  

বিশেষ করে আপনার অসুস্থ শিশুর ডায়পার পরিবর্তন করার পর ভালোভাবে সাবান দিয়ে হাত দিয়ে নিন এবং প্রয়োজনে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন। সর্বচ্চ নিরাপত্তা অবলম্বন করার জন্য চাইলে আপনি হ্যান্ড গ্লাভস পরে নিতে পারেন। 

 

ভাইরাস সংক্রমণ থেকে প্রতিরোধের উপায় 

 

এই ভাইরাসের লক্ষণগুলো শিশুর জন্য অনেক কষ্টদায়ক একটি বিষয় হয়ে উঠতে পারে। কেননা সারা শরীরে ফুসকুড়ি এবং মুখে ঘা হতে পারে। তাই এই সময়ে শিশুকে যথেষ্ট সময় দিন এবং স্বাস্থ্যসম্মত ভাবে শিশুর যত্ন নিন।

FOR MORE CLICK HERE

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]