টিনিটাস বা কানে শোঁ শোঁ শব্দ হলে কি করবেন কানে ফরফর শব্দ কানে ভোঁ ভোঁ শব্দ কান দিয়ে বাতাস বের হয় কেন

অনেকেই কানে বিভিন্ন ধরনের অস্বাভাবিক শব্দ শুনতে পান, আদতে এই ধরনের শোঁ শোঁ শব্দের বাহ্যিক কোন কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। কোন ধরনের কারণ ছাড়াই কানের মধ্যে এই অস্বাভাবিক শব্দ শুনতে পাওয়াকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় “টিনিটাস” বলা হয়ে থাকে। “টিনিটাস” শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে ল্যাটিন “টিনিয়ার” শব্দ থেকে, যার অর্থ “ঘণ্টার শব্দ”। “টিনিটাস” আসলে কোন রোগ নয় তবে বিভিন্ন রোগের উপসর্গ হিসেবে এই সমস্যাকে অভিহিত করা যেতে পারে।

টিনিটাসে ভোগা ব্যক্তি যে ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকেন 

প্রথমেই একটি বিষয় তো আমরা ইতোমধ্যেই বুঝতে পেরেছি, আর সেটা হল রোগী কানের মধ্যে অস্বাভাবিক শব্দ শুনে থাকেন। তবে কানে শুনতে পাওয়া এই শব্দগুলো একেক জনের ক্ষেত্রে ভিন্ন রকম হতে দেখা যায়। যেমন কেউ কেউ শুনে থাকেন ঝিঁঝিঁ পোকার ডাকের মত শব্দ আবার কেউ শুনে থাকেন ঘণ্টার শব্দ। আবার অনেকেই হিসহিস, সমুদ্রের গর্জন, স্টিমারের শব্দও শুনে থাকেন। 

শব্দগুলোর তীব্রতা মৃদু থেকে তীক্ষ্ণ হতে পারে। কখনো কখনো দুই কানেই এই শব্দ অনুভূত হয় আবার কখনো এক কানেও হতে পারে। কানের এই অস্বাভাবিক শব্দগুলোকে সাধারণত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথমটি সাবজেকটিভ শব্দ এবং দ্বিতীয়টি অবজেকটিভ শব্দ। 

আসুন তাহলে এই দুই ধরনের শব্দ সম্পর্কে একটু ধারনা নেয়া যাক, এরপর না হয় এই সমস্যার সমাধান নিয়ে একটু ভাবা যাবে! 

১) সাবজেকটিভ

এই সাবজেকটি ধরনের সময় বাইরের কোন উৎস ছাড়াই কানের ভেতর অস্বাভাবিক শব্দ শোনা যেতে পারে। এর তীব্রতা ও স্থায়িত্বের মধ্যে কারণ ভেদে ভিন্নতা দেখা যায়। কেউ কেউ একটানা অনেকক্ষণ ধরেই এই শব্দ শুনতে পান আবার কেউ কেউ নির্দিষ্ট সময় পরপর এই শব্দ শুনে থাকেন। 

আর সারাক্ষণ কানের মধ্যে এই শব্দ একজন মানুষের উপর কি ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে? হ্যাঁ! ঠিকই ধরেছেন, এই সমস্যার কারণে রোগী প্রথমত কোন কাজে মনোযোগী হতে পারে না। রাতে ঘুমানোর সময় যদি এমন শব্দ হয় তাহলে তো ঘুমের সমস্যা হবেই, এক্ষেত্রে আবার রোগী দীর্ঘদিন ধরে ঘুমের জটিলতায় ভুগলে মানসিক ভাবেও ভেঙে যেতে পারেন।

২) অবজেকটিভ

ধারনা করা হয় যে, এই ধরনের শব্দ সাধারণত উৎপত্তি রোগীর দেহের অভ্যন্তর থেকে হয়। কান ও মাথার ভেতরের মাংসপেশির সংকোচন, হাড়ের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি সহ এই ধরনের নানা কারণে শব্দ হতে পারে। সাধারণত যারা প্রতিনিয়ত নাক কান ও গলার সমস্যায় ভুগেন তাদের মধ্যে এই সমস্যার তীব্রতা দেখা যায়। 

শব্দের প্রকারভেদ তো বুঝা গেল, আসুন তাহলে এখন জেনে নেই ঠিক কি কি কারণে একজন ব্যক্তির মধ্যে এই ধরনের সমস্যা দেখা যেতে পারে। 

যে কারণে টিনিটাস হতে পারে 

টিনিটাস নামক এই অদ্ভুত সমস্যাগুলোর কারণও যে অদ্ভুত তা কিন্তু নয়। আমাদের বাস্তবিক জীবনের নানা সমস্যার কারণেই এই ধরনের শব্দ শোনা যেতে পারে। আসুন জেনে নেই সাধারণত যে বিষয়গুলো টিনিটাস নামক সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। 

সর্দি বা কানের সংক্রমণ 

কনজেশন সহ কান এবং সাইনাসের সংক্রমণ কানের ভিতরের অংশে চাপ সৃষ্টি করতে পারে। একই জিনিস ঘটতে পারে যদি কানে খুব বেশি পরিমাণ ওয়াক্স বা খৈল থাকে। এই চাপের কারণে টিনিটাস হতে পারে।

কান অপরিষ্কার থাকা

আমরা বেশীরভাগ সময়ই শরীর পরিষ্কার রাখার ক্ষেত্রে যতটা মনোযোগী হয়ে থাকি, কানের ব্যাপারে ঠিক ততটাই বেখেয়ালি হয়ে পরি। তবে বেশিরভাগ চিকিৎসকই কিন্তু আমাদের পরামর্শ দিয়ে থাকেন আমরা যাতে কানের খৈল পরিষ্কার না করি। অর্থাৎ কানের মধ্যে কোন সরু কাঠি অথবা কটনবাড ঢুকিয়ে কান পরিষ্কার করা।

এদিকে হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের এক প্রতিবেদনে কানের খৈল পরিষ্কার না করার জন্য অনুৎসাহিত করা হয়েছে। কিন্তু কখনো কখনো কানে অতিরিক্ত খৈল জমে কানের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে, ফলে কানের ভেতর অস্বাভাবিক শব্দ বা টিনিটাস হতে পারে। এক্ষেত্রে কোন ফিজিশিয়ানের কাছে গিয়ে কানের ময়লা পরিষ্কার করে ফেললে টিনিটাস সমস্যাটির সমাধান পাওয়া যেতে পারে।

মাথায় আঘাত পাওয়া

মাথায় আঘাত পেলে টিনিটাস হতে পারে। টিনিটাসকে মাথায় আঘাত অথবা কনকাশনের অন্যতম উপসর্গ হিসেবে ধরা হয়। বিশেষ করে মাথার একপাশ আঘাত প্রাপ্ত হলে টিনিটাস হতে পারে। এজন্য খেলাধুলা কিংবা ঝুঁকিপূর্ণ কাজের সময় মাথায় হেলমেট ব্যবহার করা উচিত।

মাইগ্রেনের ব্যথা  

মাইগ্রেনের মাথাব্যথাগুলি সাধারণত থরথর করে ব্যথা, বমি বমি ভাব এবং হালকা সংবেদনশীলতার সাথে আসে। তবে তাদের কান সম্পর্কিত উপসর্গও থাকতে পারে যেমন, কান বন্ধ হয়ে আসা, শ্রবণশক্তি কম হওয়া এবং টিনিটাস।

টেম্পোরাম্যান্ডিবুলার জয়েন্ট ডিসঅর্ডার

যে জয়েন্ট খুলির সাথে চোয়ালকে সংযুক্ত করেছে তাকে টেম্পোরাম্যান্ডিবুলার জয়েন্ট বলা হয়। এই জয়েন্ট আঘাতপ্রাপ্ত বা ক্ষতিগ্রস্ত হলে টেম্পোরাম্যান্ডিবুলার ডিসঅর্ডার (টিএমডি) হতে পারে। টিএমডির ফলে কেবল চোয়াল না কানও প্রভাবিত হতে পারে। টিএমডির কারণেও কানের ভেতর টিনিটাস হতে পারে। 

যদি টিনিটাসের সাথে দাঁত বা চোয়ালে অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করে থাকেন তাহলে আগে ডেন্টিস্টের পরামর্শ নিন, যদি টিনিটাস ঠিক না হয় তাহলে টিনিটাসের জন্য একজন ভালো নাক কান ও গলা বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন। আশাকরি এতে উপকৃত হবেন।

ওষুধের প্রভাব

আমরা বিভিন্ন সময়ে নানা কারণেই ওষুধ খেয়ে থাকি। এমনকি ডাক্তারের পেসক্রিপশন ছাড়াই নিজ থেকেও ওষুধ সেবন করতে কখনো পিছপা হই না। কিন্তু ওষুধের নানা ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে, সেগুলো সম্পর্কে তেমন একটা সাবধানতা অবলম্বন করা হয়ে উঠে না। 

কিছু ওষুধ সেবনের পর কানের ভেতর টিনিটাস তথা অস্বাভাবিক শব্দ অনুভূত হতে পারে। উচ্চ মাত্রার ওষুধ সেবন করলে কখনো কখনো এটা হতে পারে। এছাড়াও অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টিডিপ্রেস্যান্ট ও অ্যাসপিরিনের উচ্চ ডোজ এর কারণে টিনিটাস অনুভূত হতে পারে। তাই কোন ওষুধ ব্যাবহারে পূর্বে ডাক্তারের কাছে তার প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জেনে নিন। এছাড়া ডাক্তারের পেসক্রিপশন ছাড়া কোন ধরনের ওষুধ সেবন থেকে বিরত থাকুন।

হাড়ের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়া

অটোস্ক্লেরোসিস নামক ব্যাধির কারণে মধ্যকানে হাড়ের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি হতে পারে। মধ্যকানে হাড়ের এই অস্বাভাবিক বৃদ্ধি শ্রবণশক্তি কমে যাওয়া ও কানের ভেতর অদ্ভুত শব্দ অনুভূত হওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। সাধারণত এই সমস্যাটা শুরু হতে দেখা যায় ৩০ বছর বয়সের পর থেকে। তবে চিন্তার কিছু নেই, অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে এই রোগের চিকিৎসা করা সম্ভব।

মানসিক চাপ

মানসিক চাপের কারণেও কানের ভেতর অদ্ভুত শব্দ অনুভূত বা টিটিনাস হতে পারে। গ্যান্ডার, নিউফাউন্ডল্যান্ডের ক্লিনিকাল অডিওলজিস্ট ডা, কিন্ডেন এর মতে, “ মানসিক চাপের কারণে টিটিনাস হতে পারে। মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তা বাড়ার সাথে সাথে টিটিনাসও আরো তীব্র হতে পারে।” কারো কারো ক্ষেত্রে অতিরিক্ত মাত্রায় অথবা নিয়মিত ক্যাফেইন খেলেও টিটিনাস শোনা যেতে পারে।

অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা

অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার জন্যও কানের ভেতর টিনিটাস বা অদ্ভুত শব্দ অনুভূত হতে পারে। যেমন-

আপনার যদি এসকল সমস্যা থেকে থাকে এবং কানের ভেতর টিনিটাস হয় তাহলে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। প্রয়োজনীয় পরীক্ষার মাধ্যমে প্রকৃত কারণ শনাক্তকরণে চিকিৎসা নিতে হবে।

টিনিটাস হওয়ার ঝুঁকিসমূহ

যে কারো টিনিটাস হতে পারে, তবে নিম্নোক্ত কারণগুলি ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে-

উচ্চ শব্দ ও শব্দ দূষণ

উচ্চ শব্দের কারণে কানে টিনিটাস হতে পারে। বেশিরভাগ লোকের ক্ষেত্রেই দেখা যায় উচ্চ শব্দের কারণে তাদের মধ্যে টিনিটাস নামক সমস্যাটি দেখা যায়। ভারী যন্ত্রপাতি, চেইন করাত ও আগ্নেয়াস্ত্র থেকে উৎপন্ন শব্দ, উচ্চ শব্দপ্রবণ কারখানায় কাজ করা,  অতিরিক্ত লাউড মিউজিক শোনার কারণে টিনিটাসের ঝুঁকি বাড়ে। এছাড়াও আমাদের নাগরিক জনজীবনে রাস্তায় বের হলে তো শব্দ দূষণের প্রকোপ থেকে বাঁচার উপায় নেই। তবুও আমাদের উচিত যতটুকু সম্ভব উচ্চ শব্দ এড়িয়ে চলা। 

বয়স 

বয়স বাড়ার সাথে সাথে কানের কার্যকরী স্নায়ু তন্তুর সংখ্যা হ্রাস পায়। যার কারণে টিনিটাসের মত বিভিন্ন ধরণের শ্রবণ সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।

সেক্স

নারীদের তুলনায় পুরুষদের টিনিটাস হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

তামাক এবং অ্যালকোহল ব্যবহার

ধূমপায়ীদের টিনিটাস হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। অ্যালকোহল পান করলেও টিনিটাসের ঝুঁকি বাড়ে।

কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা

স্থূলতা, কার্ডিওভাসকুলার সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ এবং আর্থ্রাইটিস বা মাথার আঘাতের ইতিহাস সবই টিনিটাসের ঝুঁকি বাড়ায়।

টিনিটাস হলে যেসব জটিলতা দেখা দিতে পারে

টিনিটাস মানুষকে ভিন্নভাবে প্রভাবিত করে। কিছু লোকের জন্য, টিনিটাস জীবনের মানকেও উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করতে পারে। টিনিটাস হলে যে জটিলতাগুলি দেখা দিতে পারে-

টিনিটাস সমস্যায় আক্রান্ত হলে করণীয় কি

টিটিনাস বা কানে অদ্ভুত শব্দ অনুভূত হওয়ার ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা অত্যন্ত ফলপ্রসূ। ফিজিওথেরাপিতে কোন ধরনের সাইড এফেক্ট নেই এবং এটি আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি। ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে টিটিনাস সম্পূর্ণ ঠিক হয়ে যায়। টিটিনাসের ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপিউটিক এক্সারসাইজ মধ্যে অন্যতম হলো- 

সাধারণত আমরা নাগরিক জীবনে প্রত্যহ নানা ধরনের শব্দ দূষণের শিকার হয়ে থাকি। উচ্চ শব্দ টিটিনাস এর অন্যতম কারণ। তাই যতটা সম্ভব উচ্চ শব্দ এড়িয়ে চলা উচিত। উচ্চ শব্দ পুরোপুরি এড়ানো না গেলে প্রয়োজনীয় প্রটেকশন ব্যবহার করা উচিত এবং সঠিক খাদ্যভাস এর পাশাপাশি ধূমপানের মত বদভ্যাস বাদ দেওয়া উচিত। টিটিনাসের স্থায়িত্ব বেশি হলে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।

FOR MORE CLICK HERE

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]