বর্তমান সময়ে এমন একটি মহামারী চলাকালীন সময় আমাদের উপলব্ধি করতে শিখিয়েছে যে সবসময় ওষুধ এর মাধ্যমেও সুস্থ হওয়া বা কোন রোগকে প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়ে উঠে না। এর জন্য প্রকৃতিগত আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে যত বেশি সম্ভব শক্তিশালী করে তৈরি করা প্রয়োজন। কেননা করোনা ভাইরাসের মত ভয়াবহ মরনঘাতি ভাইরাসকেও আমাদের শরীরের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার মাধ্যমে রুখে দেয়া সম্ভব। এমন হাজারো ভাইরাসের বিরুদ্ধে নিজের শরীরকে প্রস্তুত রাখার জন্য সঠিক খাদ্যাভ্যাস খুবই জরুরী।
আসুন তাহলে দেখে নেই এমনই কিছু খাবার সম্পর্কে, যে সুপারফুডগুলো আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে যে কোন ধরণের রোগের বিরুদ্ধে আমাদের শরীরকে প্রস্তুত করে তোলে।
লেবু এবং লেবু জাতীয় বিভিন্ন ফলগুলো ভিটামিন সি সমৃদ্ধ হয়ে থাকে। আর এই ভিটামিন সি এমন একটি উপাদান যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। ভিটামিন সি আমাদের ত্বক, দাঁত এবং চুল ভালো রাখার পাশাপাশি আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও অনেক বৃদ্ধি করে থাকে। এমনকি হৃদরোগ এবং ক্যানসারের মত ভয়াবহ মরনঘাতি রোগের বিরুদ্ধেও লড়ার জন্য ভিটামিন সি আমাদের শরীরকে সাহায্য করে থাকে।
এই লেবু জাতীয় আরো খাবারগুলো হল- মালটা, কমলা, আমলকী, জাম্বুরা ইত্যাদি। উল্লেখ্য যে, করোনা ভাইরাসের মত মহামারী চলাকালীন সময়ে ডাক্তাররা বেশি করে লেবু খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।
বিভিন্ন ধরণের ভিটামিন এবং মিনারেল সমৃদ্ধ এই খাবারগুলো আমাদের নিয়মিত খাদ্য তালিকায় থাকা বাঞ্ছনীয়। ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই সহ অন্যান্য আরো অনেক এন্টিঅক্সাইড সমৃদ্ধ অন্যতম একটি স্বাস্থ্যকর খাবার হচ্ছে ব্রকলি । এর পাশাপাশি ফুলকপি এবং বাঁধাকপির মধ্যেও অনেক ধরণের এন্টিঅক্সাইড রয়েছে যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করতে পারে। এছাড়াও আমাদের ধমনী এবং শিরাগুলোতে যাতে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে তার জন্যও এই পুষ্টিকর খাবারগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
আপেল সম্পর্কে একটি বহুল প্রচলিত প্রবাদ হল “an apple a day keeps the doctor away” অর্থাৎ প্রতিদিন একটি আপেল খেলে আপনাকে আর ডাক্তারের কাছে যেতে হবে না। যদিও এই প্রবাদটি সম্পূর্ণ সত্য নয়। তবে, ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাশিয়াম সমৃদ্ধ এই খাবারটির অনেক গুণাগুণ রয়েছে। এই সুস্বাদু ফলটি যদি আপনি নিয়মিত খান তাহলে আপনার কেবল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাই বৃদ্ধি পাবে না বরং হৃদরোগ জনিত অনেক সমস্যা থেকে আপনি মুক্ত থাকতে পারবেন। এছাড়াও দীর্ঘায়ু লাভের জন্যও আপেলকে একটি সুপারফুড হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।
বাজার করার সময় অন্যান্য সবজি ক্রয়ের সময় এই সবজিটি প্রতিনিয়তই অবহেলার শিকার হয়। বিশেষ করে শুধুমাত্র সালাদ করার জন্য শসা বা গাজরের সাথে দুই এক পিস বিট আমরা হয়ত ক্রয় করে থাকি, তবে এই সুপারফুডের গুণাগুণ জানা থাকলে আমরা হয়ত এই সবজি আরো অনেক বেশি করে খেত। এমনকি জানা যায় যে প্রাচীন গ্রীক এবং রোমানরাও বিভিন্ন ধরণের রোগ জীবাণু থেকে বেঁচে থাকা এবং সুস্থ থাকার জন্য বিট খেতেন।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন বি৬, ভিটামিন সি, আয়রন, ক্লোরিন, সোডিয়াম সহ নানা পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এই খাবারটি ডায়াবেটিস, এনিমিয়া, উচ্চ রক্তচাপ এবং থায়রডের মত নানান জটিল রোগ নিরাময়ে অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
স্বাস্থ্যকর খাবার খান, হৃদরোগের ঝুকি কমান।
“যে সবজির কোন গুন নেই সেটা হল বেগুন” মজার ছলে এমন একটি কথা প্রচলিত থাকলেও আদতে ভিটামিন বি৬, ভিটামিন এ, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন সহ নানা পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এই সবজিটি আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি নানা জটিল রোগ নিরাময়ে আমাদের অজান্তেই ভূমিকা পালন করে থাকে। এছাড়াও আমাদের চোখের যাবতীয় রোগ বালাই এর বিরুদ্ধে বেগুন নিয়মিত যুদ্ধ করে থাকে এবং চোখের বিভিন্ন পুষ্টির জোগান দেয়।
এছাড়াও ছোট শিশুদের শরীরে জিংকের ঘাটতি পূরণে বেগুন খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। তবে হ্যাঁ! অনেকেরই বেগুনে এলার্জি রয়েছে, তাই যারা বিভিন্ন রকম এলার্জিতে ভুগছেন তারা ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া বেগুন না খাওয়াই ভালো।
প্রোটিনের একটি অন্যতম উৎস হিসেবে আমাদের দেশে মুরগী মাংস বহুল প্রসিদ্ধ। এর পাশাপাশি মুরগীর মাংসে আরো রয়েছে ভিটামিন বি৬, ভিটামিন এ, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম সহ অন্যান্য আরো প্রাকৃতিক পুষ্টিগুণ। আর এই ধরণের প্রাকৃতিক খনিজের কারণে আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় বলেও জানা গিয়েছে। যদিও বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণে ক্ষতিকারক এন্টিবায়োটিক ব্যবহারের কারণে ফার্মের মুরগীর মাংসের প্রতি অনেকের এক ধরণের ভীতি কাজ করে। তবে দেশীও মুরগীর মাংসের ক্ষেত্রে আপনি আবার এই বিষয়ে নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন।
প্রতিনিয়তই আমাদের কাঁচা মরিচ খাওয়া হয়ে থাকে। আমরা অনেকেই হয়ত এর স্বাস্থ্যগত উপকারগুলো সম্পর্কে জানিই না। কাঁচা মরিচ, লাল মরিচ অথবা মিষ্টি মরিচ (ক্যাপসিকাম) এই খাবারগুলোতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি,ভিটামিন বি-৬, ভিটামিন এ, ক্যালসিয়াম এবং আয়রন। এই চমৎকার খাবারটি বিশেষ করে আপনার হৃদযন্ত্র ভালো রাখার ব্যাপারে সাহায্য করে থাকে। এছাড়া উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ এবং কোলেস্টোরেল কমানোর জন্য এই খাবারের জুড়ি মেলা ভার।
সাধারণত আমাদের দেশে আদা মশলা বিশেষ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকলেও এই চমৎকার খাবারটি অনেক ধরণের গুণাবলির কারণেই একে সুপারফুড হিসেবেও বিবেচনা করা হয়ে থাকে। ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি-৬, ক্যালসিয়াম সহ অন্যান্য আরো অনেক প্রাকৃতিক খনিজে ভরপুর এই খাবারটির উপকারিতা সম্পর্কে রীতিমত বলে শেষ করা যাবে না।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি আপনার বিভিন্ন ধরণের হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে থাকে আদা। এছাড়াও আমাদের দেশে প্রায় আদি কাল থেকেই ঠাণ্ডা কাশির জন্য আদা চা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এছাড়াও আপনার পাকযন্ত্রের সুস্থতার পেছনেও আদা বেশ উপকারী ভূমিকা রাখে।
ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ভিটামিন কে, বায়োটিন, পটাশিয়ামের পাশাপাশি গাজরে রয়েছে বিটা ক্যারোটিন। আর এই বিটা ক্যারোটিন আপনার চোখের সুস্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। এমনকি আপনার চোখের স্নায়ুকে শক্তিশালী করতে এর জুড়ি মেলা ভার। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে যারা নিয়মিত খাদ্যাভ্যাসের মধ্যে গাজর রাখেন তাদেরকে চোখের অসুখে ভুগতে তুলনামূলক কম দেখা যায়। এছাড়াও ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে গাজরের রয়েছে কার্যকরী প্রভাব।
বিভিন্ন ধরণের ভিটামিন সমৃদ্ধ গাজর আপনার শারীরিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে হাজারো ভাইরাসের আক্রমণ থেকে আপনাকে সুস্থ রাখতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে। এছাড়াও কোষ্ঠকাঠিন্য দুরকরনের ক্ষেত্রেও গাজর বেশ উপকারী ভূমিকা রাখতে পারে।
বর্তমান সোশ্যাল মিডিয়ায় সচেতনতা এবং বিভিন্ন কোম্পানির ব্র্যান্ডিং এর কারণে শরীরের মেদ কমানোর জন্য এই খাবারের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ছে এবং এর জনপ্রিয়তাও বেড়ে চলছে প্রতিনিয়ত। আদতে এই গ্রিন টিতে প্রচুর পরিমাণ মিনারেল, পটাসিয়াম, জিংক এবং ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে যা আপনার শারীরিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে আপনাকে সুস্থ থাকতে সাহায্য করে থাকে। এছাড়াও প্রচুর পরিমাণে এন্টিঅক্সাইড থাকার কারণে গ্রিন টি পরিপাকতন্ত্রকে সচল করে হজম প্রক্রিয়াকে বাড়িয়ে তোলার পাশাপাশি আপনার ওজন কমাতে সাহায্য করে থাকে।
আমাদের এই আর্টিকেলের আগামী পর্বে আমাদের চারপাশে পাওয়া যায় এমনই সব চমৎকার সুপারফুড সম্পর্কে জানাব। যে খাবারগুলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে আমাদেরকে বিভিন্ন ভাইরাস ও রোগ জীবাণুর হাত থেকে রক্ষা করতে পারবে। আমাদের এই সিরিজের আগের পর্ব “যে খাবার খেলে বাড়বে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা (পর্ব - ১)” এ আমরা বলেছিলাম এমনই কিছু খাবার সম্পর্কে যেগুলোর পুষ্টিগত মান এতই বেশি যে অনেকেই এগুলোকে সুপারফুড বলে আখ্যায়িত করেন। আর তারই ধারাবাহিকতায় আজকে দ্বিতীয় পর্ব নিয়ে উপস্থিত হয়েছি। এই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার সাথে খাবারের সম্পর্ক নিয়ে আমরা একটু বেশিই গুরুত্ব দিচ্ছি, কেননা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাই পারে করোনা ভাইরাস বা এই ধরণের ভয়াবহ কোন মহামারী থেকে আমাদের রক্ষা করতে।
আসুন তাহলে দ্বিতীয় পর্বে আরো কিছু চমৎকার সুপারফুডের সাথে পরিচিত হয়ে নেই। আর শুধু পরিচিত হলেই হবে না বরং আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকার মধ্যে এই খাবারগুলো অবশ্যই রাখা উচিৎ।
আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার অন্যতম একটি সহকারী যোদ্ধা হল এই রসুন। এমনকি সাধারণ জ্বর সর্দি এবং ফ্লু এর বিরুদ্ধে রসুন খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে আমাদের সুস্থ করে তোলে। এছাড়াও রসূনে রয়েছে প্রাকৃতিক অ্যান্টিব্যাকটিরিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি, যা আপনাকে যে কোন ধরণের অসুস্থতা থেকে দ্রুত নিরাময় লাভে সাহায্য করবে। আবার আপনি যদি উচ্চ রক্তচাপে ভুগে থাকেন তাহলে রসুন আপনার জন্য উপশম হিসেবে কাজ করতে পারে।
শরীরকে ডি-টক্সিফাই করার ক্ষেত্রেও বিভিন্ন ধরণের ওষুধ থেকে রসুন বরং আরো অনেক বেশি কার্যকরী। একটু আগেই যেমনটা বলছিলাম যে দ্রুত নিরাময় লাভের ক্ষেত্রে রসুন বেশ উপকারী।
আমাদের দেশীয় প্রায় সব ধরণের তরকারির মধ্যেই মশলা হিসেবে ব্যবহার করা একটি পরিচিত নাম হল হলুদ। যে কোন ব্যথা উপশমের জন্য আমাদের এই অঞ্চলে সেই আদি কাল থেকেই হলুদ ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বাতরোগ, হাড় এবং জয়েন্টের বিভিন্ন ব্যথা সহ পেশীর ব্যথা উপশমের জন্য হলুদ বেশ কার্যকরী একটি ওষুধ। এছাড়াও শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে আপনার হৃদরোগ, যকৃৎ, শ্বাস প্রশ্বাস জনিত বিভিন্ন সমস্যা ও হজম শক্তিকে প্রাণবন্ত করে তোলে এই হলুদ।
পছন্দের অন্যতম খাবারের তালিকায় দই থাকলেও অনেকেরই হয়ত দইয়ের বিভিন্ন উপকারিতা সম্পর্কে তেমন একটা জানা নেই। ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে দই খেলে আপনার হাড় হবে মজবুত। এছাড়া অনেকের হজম জনিত বিভিন্ন সমস্যার কারণে দুধ খাওয়া হয়ে উঠে না, তারা দুধের যাবতীয় পুষ্টি এই দই থেকেই গ্রহণ করতে পারবেন। এতে আপনার হজমে সমস্যা তো হবেই না বরং খাবার হজম হতে দই বেশ উপকারী।
এছাড়া আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য আপনি যদি নিত্য খাবারের তালিকায় দই রাখেন তাহলে সেটা শরীরের জন্য বেশ উপকারী প্রভাব বিস্তার করবে। এমনকি ওজন কমানোর জন্যও দই বেশ উপকারী একটি খাবার।
আমাদের দেশে গ্রীষ্মকালীন ফল হিসেবে তরমুজ বেশ জনপ্রিয় ফল। প্রচণ্ড গরমের মধ্যে একটু খানি শান্তির পরশ পেতে অনেকেই তরমুজ পছন্দ করেন। গ্রীষ্মকালে আমাদের প্রিয় ফল অথবা ফলের জুসের তালিকায় এই ফলটি থাকলেও আমরা অনেকেই জানিনা যে এই ফল শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে খুবই কার্যকরী।
ভিটামিন এ, সি, বি১, বি২, লৌহ সহ অন্যান্য পুষ্টিগুণে ভরা এই তরমুজ। তরমুজের ৯৫% জলীয় অংশ বলেই গরমের আমাদের শরীরের পানির চাহিদা পূরণ করার জন্যও আমরা তরমুজ খেয়ে থাকি। এছাড়া তরমুজ হৃদরোগ, হাঁপানি, স্ট্রোক ও ক্যান্সার প্রতিরোধে আমাদের শরীরকে বিশেষ ভাবে সাহায্য করে থাকে।
প্রচুর মিষ্টি এবং সুস্বাদু একটি ফল হিসেবে পেঁপে পছন্দ করেন না এমন লোক খুঁজে পাওয়া মুশকিল। ভিটামিন সি, এ এবং ভিটামিন ই সমৃদ্ধ এই ফলটি আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করার পাশাপাশি শরীরের বিভিন্ন অসুবিধা দুরভিত করে থাকে। এছাড়া চোখের জন্য ভিটামিন এ খুবই প্রয়োজনীয় আর পেঁপের মধ্যে ভিটামিন এ রয়েছে প্রচুর পরিমাণে।
ওজন কমানোর জন্যও অনেকেই খাবারের অলটারনেটিভ হিসেবে পেঁপে খেয়ে থাকেন, কেননা পেঁপের মধ্যে ক্যালোরির পরিমাণ রয়েছে বেশ কম। আবার প্রাকৃতিক ফাইবার সমৃদ্ধ থাকার কারণে হজম শক্তি বৃদ্ধিতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে পেঁপে।
চা এর একটি চমৎকার বিষয় হল এর মধ্যে অনেক গুনাগুণ তো রয়েছেই এছাড়াও অন্যান্য খাবার থেকে সঠিক পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করার ক্ষেত্রেও চা আপনাকে অনেক বেশি সাহায্য করে থাকে। কেননা চা পাতার মধ্যে রয়েছে পলিফেনল যা কি না আপনার শরীরের ফ্যাট অক্সিডেশন প্রক্রিয়াকে সাবলীল রেখে বিভিন্ন খাবার থেকে পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করার ক্ষেত্রে শরীরের জন্য বিশেষ উপকারী ভূমিকা রাখে।
এমনকি একটি গবেষণায় পাওয়া গিয়েছে যে বিশেষ ধরণের কয়েক প্রকার চা আপনার ফ্যাট বার্ন করতে সহায়তা করে এবং এমনকি এক কাপ গ্রিন টি প্রায় ৭০ ক্যালোরি পর্যন্ত ফ্যাট বার্ন করে বলে জানা গিয়েছে। আবার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার পাশাপাশি অবসাদ বা ক্লান্তি এড়িয়ে সতেজ থাকতে চা এর কোন বিকল্প নেই। এর পাশাপাশি আমাদের দেশে আদা, লেবু দিয়ে রঙ চা খাওয়া হয় প্রচুর আর ডাক্তারদের মতে এই ধরণের আদা লেবু চা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে বিশেষ কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
মিষ্টি আলুর মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ব্যাটা ক্যারোটিন, এই পুষ্টি উপাদান আদতে একটি শক্তিশালী এন্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে থাকে। এছাড়া মিষ্টি আলুতে সাধারণ আলুর তুলনায় কার্বোহাইড্রেট এর পরিমাণ অনেক কম থাকে এবং এর পাশাপাশি এই আলু ভিটামিন এ সমৃদ্ধ। ব্যাটা ক্যারোটিন এবং ভিটামিন এ উভয় পুষ্টি উপাদানই এন্টি অক্সাইড হিসেব কাজ করে। এন্টি অক্সাইড সাধারণত আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং একই সাথে ত্বক সুস্থ রাখে এবং দৃষ্টি শক্তি রাখে জোরাল।
এছাড়াও মিষ্টি আলুতে আরো রয়েছে ভিটামিন সি এবং ভিটামিন বি৬। ভিটামিন সি এর উপকারিতা আর নতুন করে বলাই বাহুল্য এবং অপরদিকে ভিটামিন বি৬ এর সাথে ভিটামিন সি মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুর জন্য উপকারী ভূমিকা পালন করে। এর পাশাপাশি মিষ্টি আলু উচ্চ রক্তচাপ কমিয়ে আপনাকে সুস্থ রাখবে। টাইপ ২ ডায়াবেটিকস এর জন্যও মিষ্টি আলু একটি উপকারী সবজি।
টমেটোর মধ্যে রয়েছে লাইকোপেন, যা এক ধরণের ক্যারোটিন। আর এই পুষ্টি উপাদান এন্টি অক্সাইড হিসেবে কাজ করে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে থাকে। এমনকি টমেটো মরনঘাতি রোগ ক্যান্সার এর ঝুঁকিও কমিয়ে থাকে।
এছাড়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন ভিটামিন সি সমৃদ্ধ একটি সবজি হল টমেটো। এছাড়া পুষ্টিতে ভরপুর এই টমেটোর মধ্যে আরো রয়েছে ভিটামিন এ, ফলেট, কে এবং পটাশিয়াম। আবার ত্বকে যদি কোন ধরণের সমস্যা দেখা যায় সেটা প্রতিকার স্বরূপ আপনি সেখানে টমেটো ব্যবহার করতে পারবেন। কেননা মুখ ও ত্বকের সৌন্দর্য রক্ষার জন্য টমেটো বেশ চমৎকার ভাবে কার্যকর।
উপরোক্ত খাবারগুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সমৃদ্ধ বলে আপনাকে রাখতে সুস্থ এবং সুন্দর। প্রতিনিয়ত খাদ্যাভ্যাসের মধ্যে যদি এই খাবারগুলো যোগ করা সম্ভব হয় তাহলে নানা শারীরিক জটিলতা থেকে আপনি মুক্ত থাকতে পারবেন। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়ে আপনি বিভিন্ন ধরনের রোগ জীবাণু এমনকি প্রাণঘাতী ভাইরাস থেকেও নিজেকে সুস্থ রাখতে পারবেন।