শ্বাসকষ্ট এবং সিওপিডি (ক্রনিক অবস্ট্রাকটীভ পালমোনারী ডিজিজ) এর রোগীদেরকে ডাক্তাররা প্রতিনিয়তই ইনহেলার ব্যবহারের নির্দেশনা দিয়ে থাকেন। যারা অনেকদিন ধরেই এই দুটি রোগের যেকোনোটায় ভুগছেন তারা খুব সহজে ইনহেলার ব্যবহার করতে পারলেও নতুন রোগীদের ক্ষেত্রে দেখা যায় অনেকসময়ই তারা এটি সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারেন না। ফলশ্রুতিতে তাদের রোগ সহজে নিয়ন্ত্রণে আসতে চায় না বা আসলেও তার জন্য অনেক ওষুধ খরচ করা লাগে। তাই আজ আমরা ইনহেলার এর ধরণগুলো সম্পর্কে জানাবো এবং কোন ধরণের ইনহেলার কিভাবে ব্যবহার করতে হয় সে ব্যাপারে বিস্তারিত আলাপ করব।
ইনহেলার সাধারণত ৩ ধরণের হয়-
১. মিটারড ডোজ ইনহেলার (এমডিআই)
২. ড্রাই পাউডার ইনহেলার (ডিপিআই)
৩. নেবুলাইজার
এমডিআইতে ওষুধ গ্যাস ফর্মে থাকে, তাই এটি ব্যবহারের জন্য আর কিছুর প্রয়োজন হয় না। শুধু যখন আপনার ওষুধ নিতে হবে তখন নীচের ধাপগুলি অনুসরণ করুন।
ইনহেলারটি ভালোভাবে ঝাঁকিয়ে নিন।
ইনহেলারের ক্যাপ খুলে নিন।
চিবুক সোজা রেখে ইনহেলারের মাউথপিস মুখের মাঝে নিন।
ঠোঁট দিয়ে মাউথপিস এমনভাবে চেপে ধরুন যেন কোন ফাঁকা না থাকে।
ধীরে ধীরে শ্বাস ছেড়ে ফুসফুস খালি করে নিন।
এবার ক্যানিস্টারে চাপ দিয়ে ওষুধ রিলিজ করুন এবং সাথে সাথে মুখ দিয়ে টান দিয়ে ওষুধ ভিতরে নিয়ে নিন। নতুন্দের ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়াটা রপ্ত করতে একটু কঠিন হতে পারে, তবে চেষ্টা করতে হবে যেন যত বেশী সম্ভব ওষুধ ভিতরে নেয়া যায়।
মুখ থেকে আলতো করে টান দিয়ে ইনহেলার বের করে ফেলুন।
সম্ভব হলে ১০ সেকেন্ড শ্বাস বন্ধ রাখুন। ১০ সেকেন্ড পরে শ্বাস ছেড়ে দিন।
এভাবে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী যে কয়বার প্রয়োজন হয় প্রক্রিয়াটি পুনরাবৃত্তি করুন।
ওষুধ নেয়া শেষ হলে ইনহেলারের ক্যাপটি লাগিয়ে দিন।
যেসব বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে-
অতিরিক্ত ব্যবহারে অথবা ময়লা জায়গা রাখলে ইনহেলারটি ধোয়ার প্রয়োজন পড়তে পারে। তখন ধাতব ক্যানিস্টারটি খুলে নিয়ে এল আকৃতির প্লাস্টিক বডিটি গরম পানিতে ভালোভাবে ধুয়ে নেয়া যায়। তবে ফুটন্ত গরম পানি ব্যবহার করা যাবে না। ধোয়ার পরে এটি শুকিয়ে নিয়ে পুনরায় ব্যবহার করা যাবে।
কখনও কখনও এমন হতে পারে যে অনেকদিন পর ইনহেলার ব্যবহার করতে যেয়ে দেখলেন ওষুধ ঠিকমতো বের হচ্ছে না। তাই দীর্ঘ বিরতির পরে ইনহেলার ব্যবহার করতে হলে এর মাউথপিস নিজের উল্টোদিকে ধরে পরপর ২/৩ বার চাপ দিয়ে ওষুধ বের করে দিতে হবে। তাহলে এটি পুনরায় কার্যকরভাবে ব্যবহার করা যাবে।
মিটারড ডোজ ইনহেলার এর ক্ষেত্রে রোগীর অবস্থার উপর ভিত্তি করে ডাক্তাররা অনেকসময় স্টেরয়েড জাতীয় ইনহেলার দিয়ে থাকেন। এ ধরণের ইনহেলার ব্যবহার করার পর মুখ অবশ্যই কুলি করে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে, নয়ত দাঁত, জিভ, এবং মুখের গহ্বরে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
এই ইনহেলারে আলাদা করে ওষুধ ব্যবহার করতে হয়। এটি ব্যবহারের জন্য নিম্নোক্ত ধাপগুলি অনুসরণ করুন-
ইনহেলারের নির্দিষ্ট স্থানে খুলে ওষুধটা বসিয়ে দিন।
ইনহেলার লাগিয়ে দুই পাশে থাকা লিভারে ভালোভাবে চাপ দিন যাতে ভিতরে থাকা ওষুধ ভালোভাবে ফুটো হয়ে যায়। এই প্রক্রিয়াটি খুব গুরুত্বপূর্ণ কারণ ওষুধ ভালোভাবে ফুটো না হলে ইনহেলার নেয়ার সময় টান দিলে কিছুই আসবে না। প্রয়োজনে কয়েকবার লিভার চেপে ভালো করে নিশ্চিত হয়ে নিন।
এবার মাউথপিস মুখের মধ্যে নিয়ে ঠোঁট দিয়ে চেপে ফাঁকা বন্ধ করে নিন।
নাক দিয়ে নিঃশ্বাস ছেড়ে ফুসফুস খালি করে ফেলুন।
এবার মুখ দিয়ে টান দিয়ে ওষুধ ভিতরে নিয়ে নিন।
ওষুধ নেয়া হয়ে গেলে ইনহেলারটি খুলে ভেতরে থাকা ওষুধের খালি খোসা ফেলে দিন।
এবার ইনহেলারটি আটকে নিরাপদ স্থানে রেখে দিন।
ইনহেলারের যতগুলো ধরণ আছে তার মধ্যে নেবুলাইজার ব্যবহার করা সবচেয়ে সহজ। নেবুলাইজারে তরল ওষুধের ভিতর দিয়ে বাতাস দ্রুত প্রবাহিত করা হয় যার ফলে সূক্ষ্ম শিশির কণার মতো ওষুধের কুয়াশা তৈরি হয়। রোগীকে শুধু একটা ফেসমাস্কের মাধ্যমে এই ওষুধের কুয়াশার মধ্যে নিঃশ্বাস নিতে হয়। নেবুলাইজার ব্যবহারের ধাপগুলি নিম্নরূপ।
নেবুলাইজার মেশিনটা একটা সমতল জায়গায় রাখুন। সবচেয়ে ভালো হয় একটা টেবিলের উপর রেখে তার সামনে আপনি চেয়ার নিয়ে বসলে।
ওষুধের পাত্রে ডাক্তারের নির্দেশিত পরিমাণ মতো ওষুধ ঢালুন।
মেশিনের নির্দিষ্ট অংশে মেশিনের সাথে দেয়া টিউবটি ঢোকান। টিউবের আরেকপ্রান্তে মাউথপিস বা ফেসমাস্ক লাগিয়ে নিন।
ইলেকট্রিক নেবুলাইজার মেশিন হলে এর প্লাগ সকেটে দিয়ে সুইচ অন করে মেশিন চালু করুন।
ফেসমাস্ক ভালোভাবে পরুন যেন নাক, ঠোঁট, মুখ, এবং থুতনি সম্পূর্ণ মাস্কের ভিতরে থাকে।
এবার স্বাভাবিকভাবে নিঃশ্বাস নেয়া শুরু করুন। ওষুধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত এভাবেই স্বাভাবিক নিঃশ্বাস নেয়া চালিয়ে যান।
ওষুধ শেষ হয়ে গেলে মাস্ক খুলে ফেলুন এবং নেবুলাইজার মেশিনটি বন্ধ করে দিন।
ফেসমাস্ক বা মাউথপিস কয়েকদিন পরপর গরম পানিতে ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিন।
ইনহেলার আপনার শ্বাসকষ্টে ঠিক কতখানি উপকারে আসবে তা নির্ভর করে আপনি কতটা ভালোভাবে ইনহেলার ব্যবহার করতে পারছেন তার উপর। তাই ইনহেলারের সঠিক ব্যবহার জানা এবং সে অনুযায়ী ব্যবহার করতে পারা অত্যন্ত জরুরী।